Powered By Blogger

০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আরো কিছু দুর্বল কবিতা


দৃষ্টিপাঠ

নতশিরে নিজের
গভীরে নিবিষ্ট
যে দৃষ্টি প্রগাঢ়;
নমিত সে চাহনি
পড়ে নিতে পারো।
অবনত হয়—
নত হতে আরো;
মিশে যাওয়ার
অপেক্ষায় রয়;
দ্রবীভূত মন কারো।

জীবন্মৃত

যখন কিছু ভাবতে আর ইচ্ছে না করে
তখনও মনমরা দিনগুলো মনে পড়ে;
গ্লানিবিষে মরেছি কতবার বাঁচার তরে
বহু মানুষই এক জীবনে বারবার মরে!

মৃত্যু

বুকের ভিতর শুনেছি যার পদধ্বনি
ক্রমাগত আসছে কাছে প্রতিক্ষণই
সে ছাড়া কেই-বা এত কাছে আসে
সদাই যে ঘন্টা বাজায় শ্বাসে শ্বাসে
তাল-বেতালে মনে বাজে আগমনী
আনচান তার সুরটা খুব কাছে শুনি
ডানা মেলে দূরাকাশে আনমনা চোখ
আর কতটা সময় বাকি করতে পরখ
না থাকার মানে বোঝার অপেক্ষাতে
অজানার স্বর গাঢ় হয় রাত-প্রভাতে
যেন শেষ হতে চায় সুদীর্ঘ গান কোনো
কোথাও যা কেউ সত্যি গায়নি কখনো

আফটারলাইফ

সহস্র ছায়াপথ পেরিয়ে আসা সংকেতের মতো হারিয়ে যাচ্ছি। ঘুম ভাঙার পর নিজেকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। সেচ্ছায় নড়তেও পারছি না। অথচ বাতাসে ভাসছি। কিছুতেই কিছু পাচ্ছি না, হাত-পা-চোখ-মুখ, কিচ্ছু না। একসময় মনে হলো ঘুমের মধ্যই হয়তো মরে গেছি। ভাবনাটা আসতে না আসতে নিজেকে বেমালুম ভুলে গেলাম। আমি কে তা কোনোভাবেই আর মনে করতে পারলাম না। শুধু টের পাচ্ছিলাম, দ্রুত গলে যাচ্ছে মন; বিস্ময় বা বেদনায়!

বধভেদ

কেবল কোরবানির ঈদেই নয়,
বছর জুড়ে গ্রাম থেকে শহরে
জবাই হতে আসে অজস্র প্রাণ।
যার মধ্যে গরু, ছাগল, এমনকি
মহিষেরাও নিমেষে মুক্তি পায়!
শুধু মানুষ কাটা হয় খুব ধীরে—
রসিয়ে রসিয়ে তাদের জান
নিংড়ে খায় বিবিধ বিজ্ঞান।

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তানজিমদের কাছে টানা জরুরি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বল
করছেন তানজিম হাসান সাকিব। [ছবি: বিসিবি]
আলোচিত তরুণ ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিব আমাদের সমাজের অংশ, তাঁকে সমর্থনকারীরাও। অতএব, কোনো একক ব্যক্তির নয়, বাঙালী মুসলিম সম্প্রদায়ের সমকালীন নারীবিদ্বেষী মনোভাবই প্রকট হয়ে ফুটে উঠেছে তাদের আচরণে। ইসলামি উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর সাফল্য নিঃসন্দেহে অনেক দেশের জন্যই ঈর্ষনীয় ও শিক্ষনীয়। তবে জঙ্গিরাষ্ট্র কায়েমের বাসনা প্রতিরোধ আর মৌলবাদের মুলোৎপাটন নিশ্চয়ই এক নয়। এক্ষেত্রে শুধু রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক উদ্যোগের ঘাটতির পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্বহীনতা দৃশমান হয়ে রয়েছে ২০ বছর বয়সী তানজিমের অপ্রাপ্ত বয়সের ফেসবুক পোস্টগুলোতে।

তাই সহনশীল বা উদার সমাজ বিনির্মাণে আত্মসমালোচনাচর্চার কোনো বিকল্প নেই। তানজিমদের বিবিধ ‘ট্যাগ’ দিয়ে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেয়ে কাছে টেনে এনে আলাপ করাটা জরুরি। তাদের বলতে চাই, নারীর প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মান প্রকাশের আজাদীকে আপনি বাকস্বাধীনতা ভাবতেই পারেন। আবার আপনার পাশেরই কেউ এটাকে কুশিক্ষার প্রকাশ বা কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ভেবে নিতে পারে। কারণ প্রতিটি মত আমাদের ধারণা মাত্র। যাতে লেখা থাকে আমরা কী শিখেছি, বা জীবনের পাঠশালায় কে কেমন ছাত্র। প্রতিটি মানুষ নিজ বোধ অনুযায়ী তা বুঝে নেয়। এক্ষেত্রে সবাই একভাবে ভাববেন না, সেটাই স্বাভাবিক। ব্যক্তিভেদে সনে নানা দ্বন্দ্ব তৈরী হবে, কোথাও ধন্দ। তবে অভিমত ও অসূয়া সর্বত্রই আলাদা; যেমন কোনোভাবেই এক নন ধার্মিক ও ধর্মান্ধ।

২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তানজিমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া পোস্টের ভাষ্য, “স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।” শায়খ আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া (হাফিযাহুল্লাহ) নামের এক ব্যক্তির বরাত দিযে সেখানে আরো বলা হয়েছে, “আজ ছেলেদের বেকারত্বের বড় কারণ হচ্ছে, মেয়েরা এগিয়ে আসছে, ছেলেরা কোনো চাকরি পাচ্ছে না।”

বই বিক্রির ওয়েবসাইট রকমারির তথ্যানুয়ায়ী, সেই আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও শরী’আহ অনুষদের আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ১৯৮৮ সালে সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়া ঢাকার অধীন অনুষ্ঠিত কামিল (হাদীস) পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। পরে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স, এম-ফিল ও পিএইচ.ডি (আকিদাহ) অর্জন করেন।

তাঁর ‘আল কুরআনুল কারীমের অর্থানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর’ গ্রন্থটি কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং প্রেস সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে রকমারি। দৃশ্যত এমন একজন জ্ঞানী মানুষের কথা তরুণদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়াটা খুব অস্বাভাবিক নয়। জানি না তিনি তাঁর কোনো লেখা বা বয়ানে খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদের কথা, অর্থাৎ তিনি ইসলামের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা কখনো বলেছেন কি না। আবু বকর সাহেব নিশ্চয়ই জানেন, দুনিয়ায় এই ধর্মের প্রবর্তনকারী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম স্ত্রী এবং প্রথম অনুসারী ছিলেন একজন কর্মজীবী নারী। কিংবা সূরা আল-ইমরানে আল্লাহ বলেছেন, “আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক।”

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে
বল করছেন তানজিম হাসান সাকিব। [ছবি: বিসিবি]
পুরানো ব্লগ:
রাষ্ট্রধর্মের মূলে ভোটের রাজনীতি
সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বৈধ করেছে রাষ্ট্র!
সংখ্যালঘু নয় ক্ষমতাই বিষয়..
অসাম্প্রদায়িক ছিলো বলা যাবে না!
..কিভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দাবি করবে..
কতটা স্বাধীন হয়েছে বিচার বিভাগ?
ধর্মের কল নড়ে রাষ্ট্রের বাতাসে..
সন্দেহপ্রবণ, বাঙালী মুসলমানের মন!
হুমকীতে ভারতবর্ষের সুফিভাব
দমনে দৃঢ় রাষ্ট্র কাঠামো
অস্ত্রবাজ সময় ও সমাজে ...
পুলিশ ছাড়া কেউ থাকবে না ...
ভয় পেও না, সাবধান থেকো ...
পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব নেবে কে?
ওই বেতনের কেতন উড়ে
হেফাজতের পথে ওলামা লীগ !
সানিকে ঠেকাবে হেফাজত !
নুরুলদ্বয়ের মহালোচিত পুত্রেরা
প্রবীর প্রকৃত প্রতিবাদী অগ্রজ
সময় হুমকী আর হত্যালীলার
মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...
সর্বোচ্চ সংকর জাতের সঙ্কট
ক্রিকেটের মওকায় সাম্প্রদায়িকতা !
সাংবিধানিক পিতা আইনে অনাত্মীয় !
রাষ্ট্রীয় শিশ্ন - ধর্ষন, খুন এবঙ ...
বাংলা জাগবেই জাগবে...
ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ
বর্ষবরণে বস্ত্রহরণ কী পরিকল্পিত !

০৫ জানুয়ারি ২০২৩

তিনটি দুর্বল কবিতা | ঈয়ন


ঘ্রাণ

শীতগন্ধা ছাতিম ও হিজলের
বর্ষাতুর সুবাসের ব্যবচ্ছেদ
করতে করতে যখন মনে পড়ে
মৃত কুকুর বা বিড়ালের চেয়ে
জ্যান্ত মানুষ পঁচা গন্ধের তীব্রতা
কত বেশি তখন নিজের ঘ্রাণ
সহ্য করি কী করে তা—
বুঝে নিতে খুঁড়ে যাই মম
যাবতীয় টিকে থাকার কৌশল
তামাম ব্যস্ততায় টেনে ছেদ
থাকি অন্তরের অন্দরে তাকিয়ে

এজমালি

প্রতিটি মানুষের মন
লুকিয়ে রাখে যে বন
বিচিত্র রঙ ও পাহাড়
তার বিবর্ণতার ভার
বইতে পারে কি কেউ
সইতে পারে কে ঢেউ
নিরাকার সরলতার—
মৃদু মৌসুমী হাওয়া;
না চাইতেই পাওয়া
অবসাদের হিমবাহ
বা মা পাখির প্রদাহ—
ঘোচাতে পারে সে জন
যার ধীরায়নের ক্ষণ
জানে সব সত্তার সত্য
আদতে যা একীভূত
প্রেম দরিয়ার মতো
প্রবাহিত হর্ষ-বিষাদ;
পরমের চরম সাধ—
আশ্রিত সুবর্ণ ক্ষতও
সভ্যতার আয়ুর ঋণ;
সদাই তা খুঁড়ছে খাদ
সুচতুর— সার্বজনীন!

মাযহাব 

যারা—
ফিতনায় গুলিয়ে ধর্মের ঘোল
খেয়ে সুচতুর ফতোয়ার ডিম
ভাবে বিধর্মী হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল
জব্দে পাবে সিরাতুল মুস্তাকিম
তারা—
জেনে ঠিক কোন আয়াতের মর্ম
দৃঢ় ঈমানে পরে গোঁড়ামির বর্ম
চেনে আগ্রাসী অসদয় ইসলাম
হোসেন না এজিদ তার ইমাম
সেই—
প্রশ্নের কোনো মানে নেই জানি
যা খুঁড়ছে মুমিন কাল্বের ক্ষত
নীরবে হাঁসফাঁস করে ঐশীবাণী
মুসলিম মানে সেচ্ছায় অনুগত
এই—
বিশ্বাসে আঘাত তখনই সহজ
যুক্তিবাদ যখন বিচার্য অপরাধ
জামিন অযোগ্য দ্বীনের বিবাদ
বাড়ায় প্রেমহীন পূণ্যের গরজ

০৪ জানুয়ারি ২০২৩

ঢাকা লিট ফেস্ট কী বা কেন?

ঢাকা লিট ফেস্টের নবম আয়োজনের একটি অধিবেশনের দৃশ্য।

প্রথমবারের মতো সর্বজনের বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে শুরুর আগেই বেশ হইচই ফেলে দিয়েছে দশম ঢাকা লিটারারি ফেস্ট, যা লিট ফেস্ট নামেেই বেশি পরিচিত। শুধু নবজাতক থেকে ১২ বছর বয়সী ছাড়া বাকি দর্শনার্থীদের জন্য টিকিট ক্রয় বাধ্যতামূলক।
টিকিটের মূল্য দৈনিক জনপ্রতি পাঁচশ টাকা। তবে একসঙ্গে চার দিনের টিকিট নিলে ছাড় মিলবে পাঁচশ টাকা। শিক্ষার্থীরা দু্ইশ টাকায় একদিনের টিকিট কিনতে পারবেন। আর তারা একসঙ্গে চার দিনের টিকিট কিনলে লাগবে ৫০০ টাকা। এছাড়া কেউ তিন হাজার টাকা মূল্যের টিকিট কিনলে তিনি উৎসবের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিবেচিত হবেন বলেও উল্লেখ করেছে আয়োজকরা। এক্ষেত্রে একসঙ্গে চার দিনের টিকিট পাওয়া যাবে ১০ হাজার টাকায়। সাথে ফ্রি পার্কিং সুবিধা, ভিআইপি আইডি কার্ডসহ ঢাকা লিট ফেস্টের বিশেষ লাউঞ্জে প্রবেশের সুযোগ, যেখানে থাকছে লাঞ্চের ব্যবস্থা।
কোভিড মহামারির কারণে তিন বছর স্থগিত থাকার পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হতে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি সাহিত্য-সংস্কৃতির এই আসর। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ২০২১ সালে নোবেলজয়ী তাঞ্জানীয় ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহ, ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য সমালোচক অমিতাভ ঘোষ সকালে উৎসবটি উদ্বোধনের পর চার দিনে এই আয়োজনে অংশ নেবেন পাঁচ মহাদেশের পাঁচ শতাধিক বক্তা। যার মধ্যে থাকবেন ২০২২ সালের বুকারজয়ী শ্রীলঙ্কার কথাশিল্পী শেহান কারুনাতিলাকা এবং হিন্দি ভাষার ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্পকার গীতাঞ্জলি শ্রী।

নিঃসন্দেহে বিশাল আয়োজন। এর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে লিট ফেস্টের নবম আয়োজনে আমার যাওয়া হয়েছিল পেশাগত কারণে। সেবার উৎসবের শতাধিক অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন পাঁচ মহাদেশের ১৮ দেশের প্রায় তিনশ লেখক-সাহিত্যিক-চিন্তাবিদ, যার প্রায় একশজন ছিলেন ভিন্নভাষী।
“মুক্তচিন্তা প্রকাশের ভীতি কাটাবে লিট ফেস্ট” শিরোনামে তখন যে প্রতিবেদনটি তৈরী করেছিলাম, তারই কিয়দাংশ আজ এই ব্লগে টুকে রাখছি। শুরুটা ছিল এমন- “চলতি দশকে উগ্রবাদীদের হাতে লেখক-প্রকাশক খুন, রাষ্ট্রীয় চাপসহ সামাজিক নানা কারণে বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতাচর্চা ও মুক্তচিন্তা প্রকাশের ক্ষেত্রে যে ভীতি তৈরী হয়েছে তা কাটাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে ঢাকা লিটার‌্যারি ফেস্টিভ্যাল (ঢাকা লিট ফেস্ট); এমনটাই মনে করছেন আয়োজকরা।”
বিষয়টি নিয়ে উৎসব প্রাঙ্গণেেই আলাপ হয়েছিল ঢাকা লিট ফেস্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ও পরিচালক কবি সাদাফ সায্‌ সিদ্দিকীর সাথে। “এ রকম আয়োজন নিয়মিত করতে পারলে ওই (শঙ্কামুক্ত) জায়গায় অবশ্যই পৌঁছানে যাবে,” উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, “আশাকরি, আমরা এই উৎসব অব্যাহত রাখতে পারবো।” সেবার বাক স্বাধীনতা, বহুত্ববাদ, রাজনীতির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও মুক্তচিন্তাকে গুরুত্ব নিয়ে সাজানো হয়েছিল ফেস্টের বিভিন্ন অধিবেশন।

“এই উৎসবে আমরা বিভিন্ন ধরনের মতামত তুলে ধরার চেষ্টা করি। নির্দিষ্ট একটি বিষয়কে এখানে বিভিন্ন দিক থেকে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। এটি একটি নিরপেক্ষ মঞ্চ। এখানে স্বাধীনভাবে কথা বলা যায়,” বলছিলেন সাদাফ। “যখন আমরা মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারবো, তখনই আমাদের নিজস্ব মতামত তৈরী হবে,” উল্লেখ করে তিনি দাবি করেছিলেন, বাংলাভাষী বুদ্ধিজীবীরা এই আয়োজনের সুফল পাচ্ছেন।
যদিও সেসময় বাংলাদেশি কবি ব্রাত্য রাইসুর ভাষ্য ছিল, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এমন বার্তা দেওয়ার সরকারি উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করছে লিট ফেস্ট। তিনিও উৎসব প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন, “এ ধরনের আয়োজনের মধ্যে যখন আপনি বাকস্বাধীনতার চর্চা করেন, তখন এর অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে; সরকার কারো বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে না। এই বার্তাটিই আন্তর্জাতিকভাবে পৌঁছানো হচ্ছে।”
“সরকারের সংস্থাগুলো আরো শক্তিশালী এবং কৌশলী হয়েছে। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্রোহী বা লেখকরা খুব বেশী আগাতে পারেনি। সরকার এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গিয়েছে,” ‍উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, “বাকস্বাধীনতাচর্চার কোনো জায়গাতো তৈরী করছেই না, বরং দেশে বাকস্বাধীনতা যে কম আছে, সেটাও বুঝতে দিচ্ছে না এই লিট ফেস্ট।” রাইসু আরো বলেছিলেন, “যে রাষ্ট্রে ক্রসফায়ারে হত্যার উদাহরণ আছে, সেখানে একজন লেখক বা সাহিত্যিক যখন কথা বলতে পারেন না, তাঁর ভীতিকে অমূলক বা ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ বলা যায় না। এটা রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপেরই বহিঃপ্রকাশ।”

উৎসবে অংশ নেওয়া ইন্ডিয়ান স্টাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং ভাষা অধিকার আন্দোলনের কর্মী গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের সাথেও তখন আলাপ হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, আবার এই যে ঢাকা লিট ফেস্টে কয়েকবছর ধরে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আসছি; তারই প্রেক্ষিতে বলতে পারি পূর্ণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কোথাও নেই।”
“এর মধ্যে এটাই বীর বুদ্ধিজীবীর চ্যালেঞ্জ যে সে কোন রূপক ব্যবহার করবে, বা কোন প্রতিস্পর্ধা দেখাবে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতে রূপক আর প্রতিস্পর্ধা শানিত না করে যদি শুধু নালিশ ঠোকা হয়, সেটাও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্বকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে একভাবে বৈধতা দেওয়া,” যোগ করেছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মস্তিষ্ক বিজ্ঞানে পিএইচডি করা এই তাত্ত্বিক। পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে ‘জনসম্পৃক্ততাই প্রতিস্পর্ধিতার সবচেয়ে বড় অস্ত্র’ উল্লেখ করে গর্গ বলেছিলেন, “বর্তমানের সাহিত্যিকরা নিজেদের জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন। তাদের লেখায় বাঙালী গণমানুষের ইস্যুগুলো ব্যাপকভাবে উঠে আসছে না।”
“মূলত বাংলা সাহিত্য কার প্রতিনিধিত্ব করবে তার সাথেই জড়িত, এখানকার লেখক-সাহিত্যিক নানাভাবে আক্রান্ত হলে কে তাদের রক্ষা করবে,” বলছিলেন বাংলা ও বাঙালীর অধিকার আদায়ে সক্রিয় অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন বাংলা পক্ষের এই অন্যতম নেতা। “পশ্চিমবঙ্গে বাংলা সাহিত্য হেরে যাচ্ছে না, হারিয়ে দেওয়া হচ্ছে,” উল্লেখ করে তিনি এজন্য হিন্দী পুঁজির আগ্রাসনকে দায়ী করছিলেন।

সেবার বরিশাল থেকে এই উৎসবে অংশ নিতে আসা কবি হেনরী স্বপন বলেছিলেন, “আমরা যারা বাংলায় লেখালেখি করি, এই উৎসবের আমাদের অবস্থানও আসলে খুবই গৌন। এখানে যারা আসেন, পাঠক বা উৎসুক দর্শক; তারা আমাদের ধারেকাছেও ঘেঁষে না।”
“এটা নিঃসন্দেহে ‘এলিটদের ফেস্ট’ নিঃসন্দেহে। ইংরেজী সাহিত্য আমরা কজনই-বা পড়তে চাই বা পড়ি। ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলগুলোতেও আমাদের এলিটদের ছেলেমেয়েরাই পড়ে। যে কারণে এই উৎসবে ওদের আধিপাত্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক,” বলছিলেন তিনি। হেনরীর দাবি, “প্রতিনিয়ত এই আয়োজনের ব্যাপ্তি বাড়ছে। দেশী-বিদেশী লেখকদের সম্মিলন এবং উৎসাহী পাঠক, বিশেষ করে ইংরেজীমাধ্যমে পড়ুয়া অতি তরুণদের আগ্রহও বাড়ছে। তারা সাহিত্যের নানাকিছু জানতে বা বুঝতে চাচ্ছে।”
“ইংরেজী সাহিত্যের বড় বড় লেখকরা, যারা ইতিমধ্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, কিংবা আগামীতে পাঁচ বছরে পাবেন, এমন লেখকরাও এই উৎসবে এসেছেন। এর গ্রহণযোগ্যতাও দারূনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে,” যোগ করে তিনি বলেছিলেন, “বিভিন্ন দেশের উঁচুমাপের এই লেখক-সাহিত্যিকদের সাথে ভাববিনিময় আমাদের সমৃদ্ধ ও উজ্জীবিত করছে।”

কথাসাহিত্যিক কাজী আনিস আহমেদ, কবি সাদাফ সায্ সিদ্দিকী ও কবি আহসান আকবরের পরিচালনায় ২০১১ সালে ‘হে ফেস্টিভ্যাল’ নাম দিয়ে এ উৎসবের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে এটি ঢাকা লিট ফেস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে

নবম লিট ফেস্টের একটি অধিবেশনে কথা বলছেন গর্গ চট্টোপাধ্যায়।

০৮ মার্চ ২০২২

ট্রান্সদের কি নারী ভাবেন নারীবাদীরা?

সাদ বিন রাবী ওরফে সাদ মুআ
ঈষৎ সম্পাদনা করে শিরোনামে উল্লেখিত প্রশ্নটির মুখোমুখি হই গত ২৪ জানুয়ারি, সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে। তখন দেশের প্রথম ‘নন-বাইনারি বিউটি ব্লগার’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া ‘ট্রান্সজেন্ডার’ বা রূপান্তরিত লিঙ্গের মানবী সাদ বিন রাবী ওরফে সাদ মুআকে জিম্মি করে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘাঁটছি। এই ইস্যুতে দেশের নারীবাদমানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর নিস্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাদকে আইনি পদক্ষেপ নিতে সহায়তাকারী ‘ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট’ হো চি মিন ইসলাম প্রশ্নটি তুলেছিলেন।
তাঁর ভাষ্যে, “এত সংগঠন, সংস্থা, নারীবাদী, মানবাধিকার কর্মী; তারা কি আমাদের মতো ‘ট্রান্সজেন্ডার নারীদের’ আদৌ নারী মনে করেন?” সাদের ঘটনায় তাদের জানিয়েও সহায়তা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সাদের সাথে এত বড় অন্যায়ের ঘটনায় কেউ একটি বিবৃতি দিয়েও প্রতিবাদ জানালো না। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়নি।”
“তারা কিসের নারীবাদী, কিসের মানবাধিকার কর্মী?”- ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে এমন প্রশ্নও তোলেন হো চি মিন। সেদিনই এ ব্যাপারে জানতে চাই মুক্তিযোদ্ধা ও নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী রোকেয়া কবিরের কাছে। তিনি অকপটেই বললেন, “ট্রান্সজেন্ডারদের এই অভিযোগটা কিন্তু ঠিকই আছে, মিথ্যা নয়, অস্বীকারও করছি না। এটা আমাদের অক্ষমতা। আসলে এখানে এত বেশি ঘটনা ঘটছে যে, প্রতিটি ইস্যুতে সাধারণ নারীদের পাশেও অনেক সময় আমরা দাঁড়াতে পারি না। যদিও সাধারণ নারীদের চেয়েও তারা অনেক বেশি বঞ্চিত।” বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) এই নির্বাহী পরিচালক জানিয়েছিলেন, মহিলা পরিষদ ছাড়া দেশের প্রায় সবগুলো নারী সংগঠনই ছোট পরিসরে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে অর্থ ও লোকবলের সংকটের কারণেও তাদের নিষ্ক্রিয় থাকতে হয়।
ঘটনাটি মাথায় নিয়েই আজ (৮ মার্চ) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলোয় নারী দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত বাণী, বক্তব্য, বিশ্লেষণ আর মন্তব্যগুলো মনযোগ দিয়ে দেখলাম; বাদ দেইনি সামাজিক মাধ্যমগুলোও। ঢাকায় ‘নো পাসপোর্ট ভয়েস’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া রূপান্তরিত নারীদের জন্য আর কোনো আয়োজন বা তাদের অধিকার সম্পর্কিত ভাষ্য পেলাম না।
তবে গত বছরের এই দিনে ‘রূপান্তরিত নারীদের পেছনে ফেলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস নয়’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ ট্রাস্ট্রের গবেষক শারমিন আকতার বলেছেন, “আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে দেশের সব নারীর পাশাপাশি এসব রূপান্তরিত নারীর অর্জনচিত্র বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হলে পরিবার ও সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।”

ধান ভানতে শিবের গীত

গাইতেই হচ্ছে, অর্থাৎ স্থানীয় সমাজে লৈঙ্গিক সংখ্যালঘুদের অবস্থান সহজে বোঝাতে গত জানুয়ারির ঘটনায় ফিরতে হচ্ছে। ওই সময় রূপান্তরিত লিঙ্গের নারী পরিচয়ে ‘মামলা করার সুযোগ পেয়েই খুশি’ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ঢাকায় বসবাসকারী ২২ বছর বয়সী সাদ মুআ। ভাটারা থানায় তাঁর দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের তিন সদস্যকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গ্রেফতার করায়ও তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। মুঠোফোনে দেওয়া সাক্ষাতকারে সাদ বলছিলেন, “র‌্যাব অভিযোগটি এত গুরুত্ব দেওয়ায় আমি নিজেই বেশ বিষ্মিত। তারা যতটা সম্মান দিয়ে আন্তরিকভাবে সব শুনেছেন ও বুঝেছেন তা-ও প্রশংসনীয়। আসলে আমি আশা করিনি, বাংলাদেশের কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে এমন আচরণ পাবো।”

সাদ বিন রাবী ওরফে সাদ মুআ
র‌্যাব কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে আশ্বস্ত করায় এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ‘খুবই সন্তুষ্ট’ সাদ বলেন, “প্রথমে আমি পুলিশের কাছে (ভাটারা থানায়) গিয়েছিলাম। তাদের আচার-ব্যবহারও ভালোই লেগেছে। কিন্তু তারা আসলে খুব একটা তৎপর হননি। যে কারণে আমি হতাশ ছিলাম। পরে র‌্যাবের কাছে যাই।” র‌্যাব সক্রিয় হওয়ার পরই ঘটনার মোড় ঘুরে যায় বলেও উল্লেখ করেন সাদ। সংস্থাটির দুটি ব্যাটালিয়ন ২২ জানুয়ারি রাত থেকে ২৩ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত ঢাকার ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় যৌথ অভিযান চালায়। তারা ঘটনার মূলহোতা ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি (২১), সহযোগী সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা (২৩) ও আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশুকে (১৯) গ্রেফতার করে। ভাটারা থানায় ২১ জানুয়ারি সাদের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতারের কথা জানিয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। ইশতিয়াক এই চক্রের মূলহোতা এবং নীরা ও রিশু তার অন্যতম সহযোগী। তারা বিগত দুই বছর ধরে নানা কৌশলে মানুষকে জিম্মি ও প্রতারণা করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষদের অর্থ হাতিয়ে আসছিল। তারা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর কৌশলে বিভিন্ন সময়ের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তাদের ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে। তারা অপকর্মের জন্য নিজেদের ভাড়া নেওয়া বাসা ব্যবহার করতো। গত ১০ জানুয়ারি তাদের প্রতারণার জালে ফেঁসেছিলেন সাদ। এসব অপরাধ করার সময় তারা নিজেদেরকে সেনা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিল বলেও জানায় র‌্যাব।

সর্বশেষ ২৪ জানুয়ারি দুপুরে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমানের সাথে কথা হয়েছিল এ বিষয়ে। তিনি জানান তিনজনের মধ্যে শুধুমাত্র নীরাকে তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। “রোববারই তাঁকে আদালতে সোপর্দ করে তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। তবে আবেদন মঞ্জুর না করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক,” বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে গ্রেফতার হওয়ার আগেই ‘ফেসবুক স্ট্যাটাসে’ নীরা দাবি করেছিলেন, তিনি পরিস্থিতির স্বীকার।

কেন ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ?

এ বিষয়ে হো চি মিন বলেছিলেন, “ঘটনাটি শুধু সাদের, মানে একজন ব্যক্তি মানুষের ঘটনা হলেও এখানে একটি বড় বিষয় হচ্ছে যে তিনি একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী। এটার সাথে পুরো বাংলাদেশের প্রান্তিক অবদমিত একটি সম্প্রদায় সংযুক্ত। গত ২১ তারিখে যে মামলাটি দায়ের হয়েছে, সেখানে সাদের পরিচয় লেখা আছে ‘ট্রান্সজেন্ডার নারী’। এটা বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য বড় একটি ঘটনা। এ ঘটনা পুরো সম্প্রদায়ের আইনি সহায়তা ও বিচারের পথ সুগম করবে।” তাঁর দাবি, বাংলাদেশের ইতিহাসে থানায় বা আদালতে এর আগে ‘ট্রান্সজেন্ডার নারী’ হিসেবে কেউ মামলা করেনি, এমন পরিচয়ে কারো মামলা নেয়া হয়নি। ওই সময় সাদ বলেছিলেন, “প্রথমত আমি নিজেও এরকম পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস পাইনি। তবে আমি অনেক মানুষকে আমি পাশে পেয়েছি, যার মধ্যে হো চি মিন একজন। সে-ই আমাকে সব কিছুতে সাহায্য করেছে।”

কাণ্ডারী হতে চান সাদ

বিউটি ব্লগার হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়া সাদের ইউটিউবে ৫৭ লাখ ছয় হাজার, ইন্সটাগ্রামে ৩৩ লাখ আট হাজার এবং ফেসবুকে ২৪ লাখ হয় হাজার ফলোয়ার ছিল গত জানুয়ারিতেই, যা এখন হয়তো আরো বেড়েছে। তিনি বলছিলেন, “এই ‘ক্যারিয়ার বা জার্নি’ আমার জীবনকে একদম বদলে দিয়েছে। মনে হয় না, আমি যদি এখানে এই অবস্থানে না থাকতাম তবে আমি এত সহজে আইনি সহায়তা পেতাম। ‘সোশ্যাল মিডিয়া’-য় অজস্র মানুষের ‘সাপোর্ট’ আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।”

সাদ বিন রাবী ওরফে সাদ মুআ
সাদ মনে করেন, তাঁর এই কর্মকাণ্ডের কারণে স্থানীয় সমাজে হিজড়া সম্প্রদায়ের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। তিনি বলেন, “আমার আসলে আরো আগানোর ইচ্ছে আছে। আমি আগামীতে মেয়েদের একটি ‘মেকাপ ব্র্যান্ড’ খুলতে চাই। আর আমার কমিউনিটির জন্যও কাজ করতে চাই। আমি চাই, আমার মতো যারা আছে, তারা যাতে আমার মাধ্যমে আরো সাবলম্বী ও শক্তিশালী হয়।। আমি চাই না আমার পরের প্রজন্মের ‘ট্রান্সজেন্ডার’-রা আমার মতো করে ‘সাফার’ করুক। আমি তাদের জন্য জীবনযাপনের পথটা একটু সহজ করে দিতে চাই।”

দেশের ‘ট্রান্সজেন্ডার কমিউটিনিটি’-ও সাদকে নিয়ে আশাবাদী বলে জানিয়েছিলেন হো চি মিন। তাছাড়া সাদকে ‘খ্যাতনামা বিউটি ব্লগার ট্রান্সজেন্ডার নারী’ ও ‘প্রতিষ্ঠিত কর্মজীবী’ উল্লেখ করে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈনও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “তিনি নিজ যোগ্যতা ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে কর্মদক্ষতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।”

সাদ বিন রাবী ওরফে সাদ মুআ

০৩ জানুয়ারি ২০২২

পাঁচটি ‘দুর্বল কবিতা’ | ঈয়ন

ছবি: ঈয়ন

অনাগত সময়ের গান
পাখির ভাষায় লিখতে চেয়ে গান
হরিণেরা সব দুলে উঠেছিল খুব
শনির ডানায় ভর করে ডাংগুলি
খেলতে খেলতে হয়েছে যারা চুপ
নোনাবনের মাছেরাই শুধু জানে
কতটুকু সুর হারিয়েছে স্বাদুজলে
আর কতটা রয়েছে গেঁথে জিনে
টিকে থাকার অসুর ক্ষমতাবলে
থেমেছে কবে উভচর মহামারী
সহস্র যুগ কেটে গেছে কিভাবে
ভাবার জন্য নতুন কোনো প্রাণ
আবার যখন দুনিয়ায় জন্মাবে
তখনও কেউ লিখবে কবিতা
শিশিরে আদ্র হবে পাতার মন
দুর্বল গেছো সাপেরও বিশ্বাসে
উঠবে কেঁপে নলখাগড়ার বন

দেবাদ্রিতা দরিয়া
নিশ্চয় তুমি সেই সামগ্রিক মহাসত্তার সন্তান;
যাকে নিযুত ঈয়নে ভগবান, আল্লাহ, ঈশ্বরসহ
আরো নানা নামে ডেকেছে তোমার স্বজাতি;
যার বাইরে কেউ নেই, কিছু নেই— আমিও না।
জীবন তোমার শিক্ষক, পিতামাতা বাহক মাত্র
জেনে নিও— আমৃত্যু সব মানুষই নির্ঘাত ছাত্র;
আর স্মরণে রেখো হে কন্যা দেবাদ্রিতা দরিয়া
—এই নীল গ্রহে তুমিই আমার পিতৃসত্তার মা।

বার্ষিক প্রত্যাশা
নতুন ভোরটা উঠবে হেসে
কবে মীন শিকারীর দেশে
মহামারীও কাঁপবে কেশে
থুরথুরে এক বুড়ির বেশে
নয়া হাওয়া-জল-মমতায়
অনাচার বাড়বে কোথায়
কী গনিতে কোন সমতায়
কারা কেন কত ক্ষমতায়
কিংবা বছর কেমন যাবে
কে বেশি ও কে কম খাবে
কার ফানুসে জ্বলে আলো
কারা বলে আঁধারি ভালো
ভাবলে কি-তা দোষের হবে
কেই-বা ভাবনা মুক্ত কবে—
কার খেলা কে কেন পুতুল
না জেনে সাঁতারে কী ভুল
লোভে ডুবে আটকে জালে
ভয়ের কুমির মনের খালে
খেয়ে দেবে প্রতিবাদী ভাষা
অদরকারি বার্ষিক প্রত্যাশা
বিলবিলাস
কখনো বিলবিলাস হয়নি যাওয়া
দাদাজানের মুখে শুনেছি শুধু নাম
তিনি জেনেছেন তাঁর দাদার বয়ানে
ওটাই আমাদের পূর্বসূরীদের গ্রাম
ঠিক চিনি না বিলবিলাসের মাটি
জানি না মোটে কেমন তার হাওয়া
নদ-নদী আছে নাকি আশোপাশে বা
সাগরটাকে যায় কি দেখতে পাওয়া
তবুও কখনো নামটা পড়লে মনে
ছুটোছুটি করে অগোছালো দৃশ্যরা
অপরিচিত সময়ের ধ্বনি শুধায়
বিলবিলাস ছেড়েছিলি কেন তোরা
প্রাককলন
কোন মিজানে যে মাপতেছ প্রেম
বা কবে কতটা প্রেমিক ছিলেম
প্রেম যে পুরানো মদিরার মতো
-বয়সে বাড়ে তার স্বাদ ও ক্ষত

ছবি: ঈয়ন

১২ মে ২০২১

পরকীয়ার কারণে বাদি থেকে আসামি

বাম থেকে ছালমা, বাবুল ও মিন্নি
বাবা বা মায়ের পরকীয়ার বলি হওয়া, তথা অবৈধ সম্পর্কে কথা জেনে যাওয়ায় খুন হওয়া সন্তানদের একটি তালিকা তৈরী শুরু করেছিলাম 
গত দশকে; শেষ করতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে পরকীয়ার কারণে বাদি থেকে আসামি হওয়া স্বামী-স্ত্রীদের একটি তালিকাও তৈরী করা যেতে পারে। 
২০১৬ সালের মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার বাদি নিহতের স্বামী চট্টগ্রামে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার প্রায় পাঁচ বছর পর আজ তাঁর শ্বশুরের দায়ের করা নতুন মামলায় প্রধান আসামি হলেন। ঘটনাটি ২০১৯ সালের বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির এক নম্বর সাক্ষী থেকে সাত নম্বর আসামি হওয়ার ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয়। একই বছর ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।তাঁর স্ত্রী উম্মে ছালমা মরদেহটি শনাক্ত করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ঠিক এক বছর নতুন মামলা দায়ের করে আসামি হিসেবে সেই ছালমাকে আটক করে পুলিশ।
এই তিন হত্যাকাণ্ডই পরকীয়া প্রসূত; কীয়েক্টাবস্থা!

০৫ মার্চ ২০২১

সেনারা ব্যারাকে ফিরেছে!

আজ  ৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পঞ্চম দিনের মত হরতাল পালনকালে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে টঙ্গী শিল্প এলাকায় চার শ্রমিক শহীদ হন এবং ২৫ জন শ্রমিক আহত হন। এ সংবাদে ঢাকায় জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যায় সরকারিভাবে ঘোষনা করা হয়, আজ ঢাকায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হরতালের পর ব্যাংক খোলা থাকে। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদানের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। 

লাহোরে দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত শহীদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের সংহতির জন্য বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড এ ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে পাঁচ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন। অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান বিকেলে করাচী থেকে ঢাকায় পৌঁছোন। তিনি রাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। 

রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশী বেতারে প্রচারিত ‘শেখ মুজিব জনাব ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ বাটোয়ারা করতে রাজি আছেন’ সংক্রান্ত সংবাদকে ‘অসদুদ্দেশ্যমূলক’ ও ‘কল্পনার ফানুস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধিকার আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিকেলে কবি-সাহিত্যিক ও শিক্ষকবৃন্দ মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। ড. আহমদ শরীফের নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবী এবং পেশাজীবীরা স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে শপথ গ্রহণ করেন।

ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম থেকে লাঠি মিছিল বের হয়।  নিহতদের স্মরণে তারা গায়েবানা জানাজা পড়ে। আওয়ামী লীগ কর্মিরাও লাঠি হাতে বিক্ষোভ করে। 

এগার দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমদ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি রিলে করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান।

রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ, শ্রমিক কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।

রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে পিপলস পার্টির প্রধান জেড. এ. ভুট্টোর আলোচনা বৈঠক শেষে পার্টির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা মন্তব্য করেন, জাতীয পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাবেই বিচার করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত এবং আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়।

০৪ মার্চ ২০২১

ভেঙ্গে পড়ে প্রাদেশিক শাসন

সংগ্রহিত
আজ ৪ মার্চ। একাত্তরের এই দিনে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকা-সহ সারা বাংলায় সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দু্ইটা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। প্রদেশের বেসামরিক শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। হরতাল চলাকালে খুলনায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ছয় জন শহীদ হন। চট্টগ্রামে আজ নিয়ে দু’দিনে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২১ জনে।
বঙ্গবন্ধুর আহবানের পর স্বাধিকার আন্দোলনে গুলিতে আহত মুমূর্ষু বীর সংগ্রামীদের প্রাণরক্ষার্থ শত শত নারী-পুরুষ ও ছাত্র-ছাত্রী ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।
রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ এবং পাকিস্তান টেলিভিশন ‘ঢাকা টেলিভিশন’ হিসেবে প্রচার শুরু করে। বেতার টেলিভিশন শিল্পীরা ঘোষণা করেন, যতদিন পর্যন্ত দেশের জনগণ ও ছাত্রসমাজ সংগ্রামে লিপ্ত থাকবেন ততদিন পর্যন্ত বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেবেন না।

এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, চরম ত্যাগ স্বীকার ছাড়া কোনদিন কোন জাতির মুক্তি আসেনি। উপনিবেশবাদী শোষণ ও শাসন অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বানে সাড়া দেয়ায় তিনি বীর জাতিকে অভিনন্দন জানান। তিনি ৫ ও ৬ মার্চ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেসব সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কর্মচারীরা এখনো বেতন পান নি, শুধু বেতন প্রদানের জন্য সেসব অফিস আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
একই দিনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী অনতিবিলম্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তিনি লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাঙালির অধিকার দাবি করেন।
পিডিপি প্রধান নূরুল আমিন ঢাকায় এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ ঢাকায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করে প্রেসিডেন্টের প্রতি অবিলম্বে জাতীয পরিষদের অধিবেশন ঢাকায় আহ্বান করার দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক পৃথক পৃথক বিৃবতিতে ঢাকার ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার গণ-বিরোধী ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দেশের সংহতির জন্য তাঁর দল যদ্দুর সম্ভব ছয় দফার কাছাকাছি হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের বিষ্ফোরন্মুখ পরিস্থিতির অবসানের জন্য তিনি এখন জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে রাজি হবেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে ভুট্টো বলেন, ‘ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত ঘটছে। এ সম্পর্কে অবহিত করার জন্য আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করবো।’ একই দিন করাচী প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।

০৩ মার্চ ২০২১

শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করবো: বঙ্গবন্ধু

ছবি: সংগ্রহিত
আজ ৩ মার্চ। অগ্নিঝড়া একাত্তরের এই দিনটিও উত্তাল ছিল আন্দোলনে। এটিই ছিল জাতীয় পরিষদ অধিবেশন বসার পূর্ব ঘোষিত দিন। কিন্তু এই দিন সমগ্র বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রদেশে) জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রথম দিনের জন্য সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এ সময় দেশের সব শহরের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। হরতাল চলাকালে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ও বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়। ঢাকা ছাড়াও রংপুর এবং সিলেটে কারফিউ জারি করা হয়।

রংপুওে এই দিন পাক সেনাবাহিনী ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে দুপুর আড়াইটা থেকে ২৪ ঘন্টাব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়। সিলেটে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। ঢাকায় কারফিউয়ের মেয়াদ শিথিল করে রাত ১০টা থেকে সকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত বলবৎ করা হয়।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক ঘোষণায় ১০ মার্চ ঢাকায় নেতৃবৃন্দের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণা করা হয়, এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। 
ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানী নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রণীত এক শাসনতন্ত্র যদি না চান তাহলে আপনাদের শাসনতন্ত্র আপনারা রচনা করুন। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই দিন বটতলায় জমায়েত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে তাদের একাত্মতা ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন এবং ৭ মার্চ পর্যন্ত সংগ্রামের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কিন্তু জনতা তার কাছে তাৎক্ষণিক এবং সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার দাবি জানায়। 

এদিন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ‘স্বাধীনতার ইশতাহার’ ঘোষণা করে। ছাত্রনেতা এএসএম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী এবং শাহজাহান সিরাজের যৌথ নেতৃত্বের এই পরিষদ ইস্তেহারও বিলি করে। ইস্তেহারে বলা হয়েছিল ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এত দ্বারা ঘোষণা করা হলো। বাংলাদেশ এখন এক স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ।’ এতে এর তিনটি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ ছিল। এগুলো হচ্ছে বাঙালির ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পূর্ণ বিকাশ, বৈষম্যের নিরসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। একইসঙ্গে এতে আন্দোলনের ধারা হিসেবে খাজনা ট্যাক্স বন্ধ এবং সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বলা হয়।

এর আগে সমাবেশের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বুলেটে আহতদের জীবন রক্ষার জন্য জনগণের প্রতি ব্লাড ব্যাংকে রক্তদানের উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বাংলার স্বাধিকার বিরোধী বিশেষ মহল নিজস্ব এজেন্টদের দিয়ে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটাচ্ছে। স্বাধিকার আন্দোলন বিপথগামী করার এ অশুভ চক্রান্ত রুখতেই হবে।

০২ মার্চ ২০২১

কারফিউ ভঙ্গ করে বাঙালীর ব্যারিকেড

আলোকচিত্রঃ জগলুল হায়দার

আজ ২ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিন। একাত্তরের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। 

ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলেন। এ ঘটনা তখন সামরিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডকে নাড়িয়ে দেয়। সেদিন রবের সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফায়েল আহমদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং নূরে আলম সিদ্দিকী। বিশাল সেই সভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ অবধি সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়।

সভার শুরুতে সমবেত ছাত্রসমাজ বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করে। সভা শেষে এক বিরাট শোভাযাত্রা স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে দিতে বায়তুল মোকাররম গমন করে।

একই দিন দুপুরে সচিবালয়ের পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ানো হয়। এরই জেরে গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসানের পরিবর্তে প্রাদেশিক সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেনেন্ট-জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সরকার সামরিক আইন বিধি জারি করে সংবাদপত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এছাড়া সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। রাতে হঠাৎ বেতার মারফত ঢাকা শহরে কারফিউ জারির ঘোষণা করা হয়।

কারফিউ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শ্রমিক এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা কারফিউ-বিরোধী প্রবল শ্লোগান তুলে সরকারি নির্দেশ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। তাদের শ্লোগান ছিলো ‘সান্ধ্য আইন মানি না’, ‘জয় বাংলা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর”।

এমন সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে পরদিন থেকে সকল সরকারি অফিস, সচিবালয়, হাইকোর্ট ও অন্যান্য আদালত, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পিআইএ, রেলওয়ে এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠনে হরতাল ঘোষিত হয়। শেখ মুজিবের উদ্দেশ্যে একটি প্রচারপত্রে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার আহবান জানায়।

সমস্ত শহরে কারফিউ ভঙ্গ করে ব্যারিকেড রচনা করা হয়। ডিআইটি এভিনিউর মোড়, মনিং-নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে নয়টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। বিরাট এক জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে গভর্নর হাউজের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও গুলি চালানো হয়। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চলে।

এর আগে আ স ম আবদুর রব যে পতাকা উত্তোলন করেন তা মূলত ১৯৭০ সালেন ৭ জুন ‘নিউক্লিয়াস’-এর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘জয়বাংলা বাহিনী’র ফ্ল্যাগ হিসেবে নকশা তৈরি করে পরিকল্পনাকারীরা, যা পরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে গৃহীত হয় এ পরিকল্পনায়। ‘নিউক্লিয়াস’-এর সিদ্ধান্তেই পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা উত্তোলনের সময় রব ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এই পতাকাই আজ থেকে স্বাধীন বাংলা দেশের পতাকা।’

এছাড়া এই দিন ন্যাপ, জাতীয় শ্রমিক লীগ আন্দোলনে একাত্মতা জানায়। ন্যাপ (মো) পল্টনে এবং জাতীয় লীগ বায়তুল মোকাররমে প্রতিবাদ সভা করে।

০১ মার্চ ২০২১

ইয়াহিয়ায় ঘোষণায় ঢাকায় প্রতিরোধ

বঙ্গবন্ধু’১৯৭১ / সূত্র: mujib100.gov.bd
বছর ঘুরে আবারো এসেছে বাঙালীর গৌরবজ্জল সংগ্রামের মাস। একাত্তরের এই মার্চে হাজার বছরের ঔপনিবেশিক পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার জোয়ার এনেছিল নদীমাতায়। তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনার মতো শ্লোগানগুলো ছড়িয়ে পড়েছিলো সারাবাংলায়। কী এক যাদুর পরশে বাংলাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন এক অগ্নিপুরুষ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ মাসেই তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্য রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। রাত ১২টার পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহওে গ্রেফতার হবার একটু আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন, যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ইপিআর -এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। 

ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।’

এই ঘোষণাপত্রটি প্রথমে বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেমসহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান প্রচার করেন। পরে বাঙালি সেনা অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

জিয়ার ভাষ্য ছিল, ‘আমি, মেজর জিয়া। বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমান্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

জিয়া আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। 

এর আগে একাত্তরের এই দিনে, অর্থাৎ পহেলা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকায় প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ হোটেল পূর্বানীর সামনে জমায়েত হয়। সেখানে তখন বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল বৈঠক চলছিল। উত্তেজিত জনতা বঙ্গবন্ধুর কাছে অবিলম্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি জানান। তিনি এই এ সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দেন এবং এর প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহবান করেন। বঙ্গবন্ধু জনতাকে সংযত থাকতে উপদেশ দেন এবং ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেন যে, ৭ মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী ঘোষণা দেবেন। 

পরে ১৯৭৩ সালের ১ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জয় লাভ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। 

১০ জানুয়ারি ২০২১

দীনেশ দাসকে মনে পড়ে

দেখতে দেখতে নয়টি বছর হয়ে গেছে। ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকার কাকরাইল মোড়ে বাস চাপায় নিহত হন সাংবাদিক দীনেশ দাস। ফেসবুকের ফিরে দেখা কর্মসূচীর কল্যাণে আজ ফের মনে এলো সেই সময়টা। যেখানে নিজের বৃত্তান্তে নিজের সম্পর্কে দাদা লিখে রেখেছিলেন, ‘আই অ্যাম রোমান্টিক পারসন।’ তাঁর মৃত্যুর চারদিন পর ‘নিশ্চিন্ত দীনেশদা’ শিরোনামে লিখেছিলাম -
হয়ত মৃত্যুই দীনেশদাকে নিশ্চিন্ত করেছে। তবে তিনি আদৌ তৃপ্ত হবেন কি? অর্থ সংকটে পরিবারের ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রীক যত উদ্বিগ্নতা তাকে মৃত্যুর পূর্ব-মুহুর্ত পর্যন্ত তাড়া করে বেড়িয়েছে; তা থেকে কি তিনি এভাবে মুক্ত হতে চেয়েছেন? এত শুভাকাঙ্খী, এত পরিচিত জন। কেউ কি তাকে একটি চাকরি দিতে পারতেন না? একজন সৎ সংবাদকর্মির ২৫ বছরের অভিজ্ঞতার কি কোনো মূল্যই ছিলো না? অথচ এখন তাঁর মৃত্যু কত মূল্যবান হয়ে গেল। সরকার দীনেশদার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বৌদিকে একটি চাকরি দেয়ার পাশাপাশি তার মেয়ের পড়াশুনার দায়িত্বও নিয়েছে। আবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, এমনকি জামায়াত নেতারাও টাকা দেয়ার কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ইতিমধ্যেই টাকা দিয়েছেন। অথচ শেষ কটা দিন কী অর্থ কষ্টেই না তাঁর কেটেছে। সদাহাস্যোজ্জল শিশুমনা মানুষটার মুখে হাসিও দেখিনি কত দিন। এখন হয়ত তিনি সবই দেখছেন। আর বৌদির কাছে গিয়ে বলছেন, 'বলেছিলাম না, একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। অথৈর পড়াশুনা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।'
তাঁর মৃত্যুর চার বছর পর দিনটি স্মরণ করিয়ে দেওয়ায় লেখক ও সাংবাদিক মাহফুজ জুয়েল বলেছিলেন, “চোখে পড়ার মতো মেঠো-বিচরণ ছিলো দিনেশদার। একসময় যেখানেই যেতাম সেখানেই তাঁকে দেখতে পেতাম! মাঠে-ঘাটে দেখতে দেখতেই পরিচয়। তারপর টুকটাক গল্প হয় রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে, কর্মসূচিতে, পল্টনে, প্রেসক্লাবে, মুক্তাঙ্গনে, মুক্তিভবনে, বামপন্থীদের সংবাদসন্ধানী সাংবাদিক; শ্যামসুন্দর মায়াময় নিরীহ মুখের দিনেশদা। মনে পড়িয়ে মন খারাপ করে দিলে।আহা, দিনেশদা।” আরো দুই বছর পর কবি ও সাংবাদিক রুদ্রাক্ষ রহমান লিখেছিলেন, “দীনেশ আমার তুই-তুইবন্ধু ছিলো। আমরা অনেকটা সময় এই শহরে ভাতের জন্য হেঁটেছি। সাক্ষী আশিস সৈকত! এবং আমরা এতোটাই ব্যর্থমানুষ যে দীনেশের জন্য কিছুই করতে পারিনি! অতএব ওর কাছে ক্ষমা চাই, বার বার।”
পলিটিক্যাল রিপোর্টিং, মূলত ইসলামি ও বামদলগুলো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল দাদার সাথে। তিনি ছাড়াও শ্রদ্ধেয় সেলিম জাহিদ,  ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ, রাশিদুল হাসান রাশেদ, বন্ধুপ্রতীম রাজীব আহমদ তখন ওই অঙ্গনের ডাকসাইটে প্রতিবেদক। দাদার সাথে আমার চেয়ে ঢের বেশী স্মৃতি আছে ওই তিনজনের। তবুও আজ এখানে ফের টুকে রাখছি নয় বছর আগের লেখাটির কিয়দাংশ। 

সত্যি কথা বলতে কি, দীনেশ'দা মারা যাওয়ার আগে নিজেও কখনো বুঝিনি যে তাকে কতটা ভালোবাসি। হয়ত আমার মত আরো অনেক সহকর্মিই তা বুঝতে পারেননি। গত বছরে (২০১১ সালে)বন্ধ হয়ে যাওয়া শীর্ষ নিউজ ডটকম ও শীর্ষ কাগজে কাজ শুরুর সময়ে ‘পলিটিক্যাল বিটের রিপোর্টার’ ছিলাম। আমাকে জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ বাম ও ইসলামী মিলিয়ে ৩৭টি দলের খবর রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এরই বদৌলতে ওই সরল প্রাণ মানুষটির সাথে আমার পরিচয় হয়। জামায়াত-শিবিরের অফিস, মুক্তাঙ্গন, পল্টন, মুফতী আমিনীর ডেরা থেকে শুরু করে কমিউনিষ্ট পার্টির অফিস। কত জায়গায়ই না এক সাথে কত সময় কেটেছে। এরপরও ওই বিটে যতদিন ছিলাম তা ঘনিষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে প্রথম দিনেই আপন করে নেয়ার গুনটি দাদার মাঝে বেশ ভালো মত ছিল। আর তাঁর রসিক চরিত্রের সচ্ছতায় মুগ্ধ না হওয়াটাই ছিল অস্বাভাবিক। যে কারণে ‘পার্লামেন্ট রিপোর্টিং’ শুরু করার পরও দাদার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়নি কখনো। ফেসবুকে খুব একটা সক্রিয় না হলেও তাঁর ইয়াহু মেইলটি প্রায় নিয়মিতই খোলা থাকত। মাঝেই মাঝেই ‘চ্যাটবক্সে’ হাজির হতেন দাদা। খুব বেশী সময়ের জন্য না হলেও বেশ জমজমাট আলাপ হতো। অবশ্য গত দেড়-দুই মাস ধরে সেখানও অনিয়মিত ছিলেন তিনি। হয়ত  দৈনিক আমাদের সময় থেকে চাকরি চলে যাওয়ার পর আর ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগটাই পাননি। আসলে দীনেশ'দার বহুপুরানো সহকর্মী সালাম ফারুক ভাইয়ের একটি লেখা শেয়ার করার জন্য বসেছিলাম; কিন্তু নিজেই কত কিছু বলে ফেললাম। আর শুধু একটি কথাই বলি। এখন বুঝি, দাদাকে অনেক ভালোবাসি।

চাকরির টেনশনমুক্ত দীনেশদা’ শিরোনামে একটি অনলাইনে লিখেছিলেন ফারুক ভাই; যা হুবুহু তুলে দিচ্ছি -
মৃত্যুর মাত্র ১৪ ঘণ্টা আগে শনিবার রাত সাতটায় ঘনিষ্ঠজন, কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার আজিজুল পারভেজকে বলেছিলেন, 'পকেটে মাত্র ২০ টাকা আছে।' রোববার সকালে মাটির ব্যাংক ভেঙে জমানো টাকা থেকে ১০০ টাকা হাতে দিয়েছিলেন স্ত্রী। জানা গেছে তিন মাসের বাড়িভাড়াও বাকি। ২৫ বছরের সাংবাদিকতার জীবনের এই পর্যায়ে এসে এমন হালেই দিন কাটছিল তাঁর। তিনি দৈনিক আমাদের সময় থেকে 'অন্যায়ভাবে' সদ্য চাকরিচ্যুত হওয়া দীনেশ দাশ, আমার দীনেশদা। এখন আর তার সেই টাকার চিন্তা নেই, নেই বাড়িভাড়ার টেনশন, জমানো টাকা থেকে তাকে দিনের খরচ দিতে হবে না বৌদির। সাংবাদিকতা করে অর্জন করা একমাত্র সম্বল মোটরসাইকেলটি নিয়ে তাকে আর ঘুরতে হবে না কাজের খোঁজে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গত নির্বাচনের আগের রাতে তার মোটারসাইকেলে উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'দাদা, পাওনা টাকাগুলো আমাদের সময় পে (পরিশোধ) করেছে কি-না।' জবাবে তিনি বলেছিলেন, 'না, টাকা-পয়সা তো কিছু দিলো না। তবে আমাদের সময় থেকে লোন নিয়ে হলেও এ মোটরসাইকেলটাই এখন আমার একমাত্র সম্বল।' সেই একমাত্র সম্বলটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। রোববার সকালে একমাত্র মেয়ে অথৈকে ভিকারুননিসা স্কুলে নামিয়ে দিয়ে ডিআরইউ’র দিকে যাওয়ার পথেই বাসের চাপায় নিভে গেল তার প্রাণপ্রদীপ। তার আর যাওয়া হলো না প্রিয় প্রাঙ্গণটিতে।

গত বছর আমি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর থেকে অমর একুশে বইমেলা কাভার করেছিলাম। দাদার ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে কালের কণ্ঠের আজিজুল পারভেজ ভাই, সমকালের মুন্না ভাই আর আমি ছিলাম নিয়মিত। তাই কখনো আসতে দেরি হলে দাদা ফোন করে বলে দিতেন, তার জন্যও যেন বইয়ের কাভার, বই ইত্যাদি কালেক্ট করে নিই। আমরা তা করতাম। মাঝেমধ্যে দাদার মোটারসাইকেলে চড়ে ফিরতাম অফিসে। আর মাত্র ২৩ দিন পরই শুরু হবে এবারের বইমেলা। দাদাকে ছাড়া বইমেলা- এখনই বিশ্বাস হতে চাইছে না। আমাদের সময়ে দীর্ঘ সময় কাজ করার সুবাদে দীনেশদা’র সান্নিধ্য পেয়েছিলাম খুব ভালোভাবেই।

শুরুতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে খানিকটা দুর্বল দাদাকে প্রায়ই সাহায্য করতে হতো আমার। ক’দিন আগেও ফেসবুকে দাদার আইডি নিয়ে একটি জটিলতার সমাধান করে দিয়েছিলাম। দাদার স্নেহমিশ্রিত আবদারে কখনোই বিরক্ত হতাম না। ঠাট্টা-মশকরা করতে করতেই তার কাজটুকু করে দিতাম। ডিআরইউ’র মিডিয়া সেন্টারে বসে দাদার সেইসব আবদার আর পূরণ করতে হবে না। বয়সে ১০/১২ বছরের বড় হতে পারেন। কিন্তু কথাবার্তা, আচার-আচরণ কোনো দিক থেকেই সেই পার্থক্য বুঝতে দিতেন না দীনেশদা। নানান ঢঙের টিটকারি, দুষ্টুমি সবই চলত তার সঙ্গে। যেন বাল্যকালের বন্ধু।

জ্ঞানপিপাসু দীনেশ দাশের সংগ্রহে ছিল দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দলিলের অনুলিপি। সামান্য বেতনে চাকরি করেও খুঁজে খুঁজে এসব যোগাড় করতেন তিনি। অনুকরণীয় চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের স্মৃতি ধরে রাখতে তিনি গঠন করেছিলেন মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি সংসদ। প্রতি বছর এ সংসদ থেকে সেরা রিপোর্টার বাছাই করে পুরস্কৃত করা হতো। সর্বশেষ আয়োজনটি ছিল গত ২৯ ডিসেম্বর। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও তিনি প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকতেন জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সংবাদ সংগ্রহে। নিজ ধর্মের প্রতি প্রবল ঝোঁকও অসাম্প্রদায়িক এই মানুষটিকে দায়িত্ব থেকে টলাতে পারেনি। ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাই তার হয়ে উঠেছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। আর তাই অনেকেই মজা করে তার নাম উচ্চারণের সময় আগে ‘মাওলানা’ শব্দটি জুড়ে দিতেন।

আমি আমাদের সময় ছেড়েছি বছর তিনেক আগে। কিন্তু গুটি কয়েক সমবয়সী সহকর্মীর মতো দীনেশদা’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বিলীন হয়ে যায়নি। একবার বৌদি’র অসুস্থতায় রক্তের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন আমাকেই। ছুটে গিয়েছিলাম। সব সেরে রাতে ফিরেছিলাম দুইটায়। সেই থেকে দাদার স্নেহের মাত্রা যেনে বেড়ে গিয়েছিল অনেক। 

কিছুদিন আগে আমরা সহকর্মী বন্ধু বেলাল হোসেনকে হারালাম, নিখিল ভদ্রকে পঙ্গু হতে দেখলাম। আর এবার হারালাম শান্ত-নিরীহ, বিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ বন্ধুজন দীনেশদাকে। ভুয়া লাইসেন্সেধারী অদক্ষ ও বেপরোয়া বাসচালকদের হাতে আর কতো সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ খুন হলে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়বে? আর কতো প্রাণহানি ঘটলে বিআরটিএ তার দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে?

০৮ নভেম্বর ২০২০

ফের বিষবাষ্পে ভারী বাংলার বাতাস

"জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই; বিন খালিদের (সম্ভবত মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে বোঝানো হচ্ছে) হাতিয়ার/বীর শহীদের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার," এমন নানা শ্লোগান তুলে সেদিন একপক্ষকে 'মূর্তি ভাঙ্গার আন্দোলন' ঘোষণা করতে দেখেছি। যার রেশ না কাটতেই বীরদর্পে প্রতিপক্ষের গালে জুতা মারার বাসনা জানান দিয়ে আরেকপক্ষকে আজ বলতে শুনছি, "জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো; কুরুক্ষেত্রের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার।" ধর্মযুদ্ধের এই দামামা বাংলায় ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোর ইতিহাস মনে করিয়ে দিচ্ছে। দমবন্ধ লাগছে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে ফের ভারী হয়ে উঠছে বাংলার বাতাস। একদিকে “নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার,” অন্যদিকে "জয় শ্রী রাম, জয় জয় শ্রীরাম;" ধ্বনি তুলে বিদ্বেষপূর্ণ আচারণকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার আদি চেষ্টাও চলছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাষ্ট্রকে এখনই সতর্ক হতে হবে। একইসঙ্গে সাধারণ মুসলমান ও হিন্দুদের মনে রাখতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ জন্ম নেওয়ারও হাজার বছর আগে থেকে পারস্পরিক সহাবস্থানে অভ্যস্ত এই ভূমির নানা মত ও পথের মানুষ। তাদের উদার নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো যতগুলো ঘটনা এখানে ঘটেছে, প্রত্যেকটিতে এমন কেউ লাভবান হয়েছে, যারা এই ভূমির কেউ নন। ধর্মপ্রাণ বাঙালীর ভাবাবেগকে পুঁজি করে এই মুহুর্তে কে বা কারা লাভবান হতে চাইছে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন; খুব খেয়াল।

১৬ আগস্ট ২০২০

Are we all homicides?

Dhaka 2020
Abusing police is the trend of this time in Bangladesh. Maybe it's an expression of people's long-held resentment. Surely there is a lot to criticize the police force. They have been strongly condemned on social media for the past few days. Meanwhile, several police officers are giving counter explanations. Many such responses are increasing negative attitude of people. 

In doing so, we may be forgetting how humanely this force appeared during the COVID epidemic. As of August 14, a total of 67 policemen have died from the virus. Yet they are being bullied on social media. Cause now it's very easy to just blame them. But they are not the only culprits. 

Rapid Action Battalion (RAB) has started a full investigation into the alleged murder of former army officer (retd) Sinha Mohammad Rashed Khan, who was killed by the police. But in the case of extrajudicial killings, the police and the RAB are rivals. It is even more ridiculous to see who is writing about the police than what is being written. Why were they silent for so long? Even after so many extrajudicial killings, would people have been aware, if the latest victim was not a former army officer? 
Why do we forget that these policemen are our relatives? None of them came from another planet. How many of us are questioning that social system or political situation, which forces a law enforcer to be a murderer? 
A total of 287 people have been killed in alleged gunfights with members of various government law enforcement agencies in Cox's Bazar since the start of the country's anti-drug campaign on May 4, 2018, and until July 31 this year. Of these, 174 were killed in clashes with police, 62 with BGB (Border Guard Bangladesh) and 51 with RAB. Between 2001 and June 2020, some 4,002 people were killed in extrajudicial killings by law enforcement. More than half of them, 2,173 were killed by police and 1,224 by RAB. 
Extrajudicial killings are an extreme violation of human rights. Domestic and foreign human rights organizations have repeatedly raised questions about such killings. However, such unconstitutional activities of the law enforcement agencies are not near to stop. There are also allegations against them for making countless people disappear. 
But the question is, are only the law enforcement agencies responsible for these? Can other organs of the state avoid their liability? Aren't people equally responsible for this situation?

২৮ এপ্রিল ২০২০

গণমাধ্যম: বিনিয়োগের চরিত্র বিশ্লেষণ

কয়েকজন বাংলাদেশি সংবাদকর্মী।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের করোনাকালীন সংকট বিষয়ক সাম্প্রতিক আলোচনায় রাষ্ট্রের অসহযোগীতা, সাংবাদিকদের অনৈক্যসহ আরো নানা বিষয় আলোচনায় আসছে। ঘাঁটতে গিয়ে মনে হলো, এক্ষেত্রে বিনিয়োগের চরিত্র বা মালিকদের স্বভাব বিশ্লেষণ সবচেয়ে জরুরী।

প্রবীণ সাংবাদিক আফসান চৌধুরীর মতে, দেশের গণমাধ্যমের বেশিরভাগ মালিকই এদিক সেদিক করে পয়সা বানায়, সরকারের সাথে খাতির করে। তাদের সঙ্গে বাজারের সম্পর্ক নেই। স্রেফ ইজ্জত বাড়াতে বা নানা উপায়ে অর্জিত সম্পদ নিরাপদে রাখার জন্য গণমাধ্যম চালু রাখে। 
“তারা গণমাধ্যম দিয়ে মুনাফা করতে চান না, বরং সেখানে উপরি আয়টা ব্যবহার করতে চান। সেই আয় কমে গেলে তারা আর এটা টানতে আগ্রহী হন না। মালিকের দুইশ কোটি টাকা থাকলেও তখন তিনি বেতন দেবেন না। এটা আমাদের গণমাধ্যমের কাঠামোগত সমস্যা,” বলেন আফসান চৌধুরী। 
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই খণ্ডকালীন শিক্ষকের দাবি, “স্রেফ ক্ষমতাচর্চার জন্য এত গণমাধ্যম চালু রাখার বিপদটা কী হতে পারে এবার তারই বড় একটি প্রমাণ পেলাম আমরা। মূলত এ কারণেই করোনাভাইরাস জনিত সঙ্কটের প্রথম ধাক্কাতেই আক্রান্ত গণমাধ্যম।” 

এ ব্যাপারে গণমাধ্যম বিশ্লেষক খন্দকার আলী আর রাজি বলেন, “করোনা না এলেও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের জন্য এই পরিণতি এড়ানো কঠিন ছিল। কারণ মানুষের সংবাদ কেনার সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে এগুলো গড়ে ওঠেনি। আবার যে ধরনের সংবাদের জন্য মানুষ মূল্য দিতে রাজি, সে ধরনের সংবাদ পরিবেশন করে না তারা।” 

“ভোক্তার চাহিদার সাথে সম্পর্কহীন সংবাদমাধ্যম যে টিকে থাকার কথা না তা এ মুহূর্তে কিছুটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যদিও ইতিহাস বলে কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম সরকারকে বিবিধ সেবা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের অস্তিত্ব একভাবে রক্ষা করে চলবে,” যোগ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই সহকারী অধ্যাপক।

সম্পর্কিত পোস্টঃ

২৭ এপ্রিল ২০২০

করোনা কালের সাংবাদিকতা

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিচ্ছন্নতা 
কর্মী সুফিয়া বেগম; কাজ শেষে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে 
ফুটপাতে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। কোভিড-১৯ সামলাতে 
সরকার ঘোষিত বাধ্যতামূলক ছুটির কালেও প্রতিদিন জঞ্জাল 
পরিস্কার করতে বের হয়েছেন। যদিও সাথে থাকা ব্যাগে 
ডিএনসিসির ‘ইউনিফর্ম’ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। 
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বা পিপিই কী তা জানেন-ই 
না তিনি। ছবিটির ঢাকার এক সাংবাদিকের তোলা। 
চাকরি আর বেতনের অনিশ্চয়তা গা সওয়া হয়ে গেছে আমাদের, মানে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের। যদিও বিশ্বব্যাপী সংক্রমিত করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কায় এই সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এর সাথে নতুনতর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি-তো আছেই। তবে ইদানীং সবচেয়ে ভয়াবহভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষমতাধরদের রোষানল। যে কারণে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাংবাদিকতা ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। 

এই মহামারীর কালে দেশের প্রথম সাঁড়ির অনলাইন পোর্টাল বিডি নিউজের প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং জাগো নিউজের সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মহিউদ্দিন সরকারসহ মোট আটজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে ২২ এপ্রিল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি। 

সংগঠনটির দাবি, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে দুর্নীতি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষনা থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকরা যখন এমন দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন কিংবা প্রকাশের জন্য অনুসন্ধান করছেন, তখন তারা নিপীড়নমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ নানারকম হয়রানি, শারীরিক হামলা, ভয়ভীতি-হুমকি এবং হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। 

“মামলাগুলো অবিলম্বে তুলে নেয়ার আহবান জানিয়েছি আমরা। আমাদের দাবি নিপীড়নমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অজুহাতে সরকার তাঁদের (সাংবাদিকদের) হয়রানি বা গ্রেফতার করা থেকে বিরত থাকবে,” বলা হয় বিবৃতিতে। 

এর আগে ২১ এপ্রিল সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের পক্ষে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম এক বিবৃতিতে বলেন, “করোনাভাইসের মহামারি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম যখন শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে, তখন এই ধরনের হয়রানি ও ভয় দেখানোর চেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক।” 

একইদিন প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স (ডব্লিউপিএফআই), তথা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিষয়ক বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের একধাপ অবনতি হয়েছে। ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন ১৫১ তম। টানা ছয় বছর এই অবস্থান ১৪৪ থেকে ১৪৬-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করার পর গত বছর এক ধাক্কায় চার ধাপ নেমে ১৫০ হয়েছিল। 

এ নিয়ে আলাপের জন্য যোগাযোগ করা হলে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান জানান, তিনি এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। সূচকের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে আরএফএস যা বলেছে, তা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য চাওয়া হলে বেনারকে তিনি বলেন, “পরে আমি এ সম্পর্কে মন্তব্য করব।” পরবর্তীতে পুনরায় যোগাযোগের পর তিনি এনিয়ে কথা বলতেই অস্বীকৃতি জানান। 

সূচকের বিশ্লেষণে আরএফএস বলেছে, ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রহণ করা কঠোরতর নীতির অন্যতম প্রধান ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে সাংবাদিকরা রয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের ওপর রাজনৈতিক কর্মীদের হামলা, নিউজ ওয়েবসাইট বন্ধ এবং সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনা বেড়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে বিচারিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে নির্বাহীরা। এই আইনে নেতিবাচক প্রচারণার শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড। ফলস্বরূপ, স্ব-সেন্সরশিপ অভূতপূর্ব স্তরে পৌঁছেছে কারণ সম্পাদকরা কারাবন্দি বা তাদের মিডিয়া আউটলেট বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি নিতে নারাজ। এছাড়া যেসব সাংবাদিক এবং ব্লগাররা সমাজে ধর্মনিরপেক্ষ মত ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চান তারা উগ্রবাদী ইসলামপন্থীদের হয়রানি, এমনকি হত্যার শিকার হচ্ছে। 

সার্বিক সূচক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আরএসএফ মহাসচিব ক্রিস্টোফ ডিলোয়ার বলেন, “আমরা সাংবাদিকতার জন্য এমন একটি অবধারিত দশকে প্রবেশ করছি, যা এর ভবিষ্যতের ওপর প্রভাবসঞ্চারী সঙ্কটের সাথে যুক্ত। করোনাভাইরাস মহামারীটি নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার অধিকারকে হুমকীতে ফেলা নেতিবাচক কারণগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে এবং এটি নিজেই একটি উদ্বেগের কারণ। ২০৩০ সালে তথ্য, বহুত্ববাদ এবং নির্ভরযোগ্যতার স্বাধীনতা কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তর আজেই নির্ধারিত হচ্ছে।” 

ঠিক তখনই এই সূচকটি প্রকাশিত হলো যখন করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কাতেই নজিরবিহীন সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে দেশের সংবাদ শিল্প ও সাংবাদিকরা। কয়েকদিন আগে ঢাকার মূলধারার বেশ কিছু জাতীয় দৈনিকের মুদ্রণ বন্ধের ঘটনাসহ শীর্ষস্থানীয়পত্রিকাগুলোর কলেবর আর প্রচার কমিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে লিখেছিলাম। ততোদিনে সরকারের কাছে সাংবাদিকদের জন্য প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে। তখনই জেনেছিলাম, আয় সঙ্কটে সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়েও জটিলতাতৈরী হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। বাড়ছে সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র বিতরণকারীদের বেকারত্ব। 

“আমার ৪৭ বছরের সাংবাদিকতার জীবনে এমন পরিস্থিতি কখনও দেখিনি। যেসব জায়গায় আমি লেখি, কেউই গত তিন মাসে পয়সা দিতে পারেনি। অনেক নামিদামি পত্রিকাও লেখক সম্মাণী দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু গণমাধ্যম হয়ত বন্ধই হয়ে যাবে,” বলেছিলেন ৬৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি গবেষক ও সাংবাদিক আফসান চৌধুরী। তাঁর মতে, “এটা শুধু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়, বেসরকারি খাতের সকল পেশার ক্ষেত্রে হচ্ছে। এই ধরণের পরিস্থিতি কেউ কোনোদিন পড়েনি। এবারের সঙ্কটটা সবার। তবে আমাদের গণমাধ্যমগুলোর ক্ষেত্রে এটা আরো তীব্র, কারণ এগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিকে সাংঘাতিক রকম ভর্তুকি দিয়ে চালানো হয়।”
  
এসব নিয়ে আরও লিখতে হবে, মানে লিখবো নিশ্চয়।। আজ শুধু সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা টুকে রাখছি।
২৩ এপ্রিল : নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জে চাল আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য আনতে গেলে হামলার শিকার হন এসএ টিভির প্রতিনিধি সজল ভূঁইয়া।ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়।  
২১ এপ্রিল : প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে নাম উল্লেখ না করায় ব্যবসায়ী নেতার বিরুদ্ধে সাংসদপন্থীদের বিক্ষোভ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় নরসিংদীর স্থানীয় নিউজ পোর্টাল সময়নিউজ ডটকমের সম্পাদক হৃদয় খান ও প্রকাশক শফিকুল ইসলাম মতির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এই দুই সাংবাদিক সম্পর্কে বাবা-ছেলে। হৃদয় খান বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ ‍টুয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন।  
একইদিন ঠাকুরগাঁওয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটুকে পৌর শহরের দুরামারী নামক স্থানে সদর থানার টহল পুলিশ মারধর করে। এছাড়া সিলেটের জৈন্তাপুরে সারীঘাটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি রেজওয়ান করিম সাব্বিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।  
১৯ এপ্রিল : গলাচিপা পৌর এলাকার কয়েকজন ছেলে কাঁটাখালী বাজার আওয়ামী লীগ অফিসে যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ খলিফার পুলিশের ওপর হামলা চালানোর ছবি তুলতে গেলে এতে মাই টিভি ও এশিয়ান টিভির প্রতিনিধিকে মারধর করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।  
১৮ এপ্রিল : চাল চুরির সংবাদ প্রকাশের জেরে অনলাইন নিউজপোর্টাল বিডিনিউজ ও জাগোনিউজের সম্পাদকসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি থানায় মামলা দায়ের করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম ভাসানী। এজাহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ারও অভিযোগ আনা হয়েছে।  
একইদিন সাভারে মারধারের শিকার হন দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রতিনিধি ওমর ফারুক, শরীয়তপুরে অনলাইন জয়যাত্রা টিভি ও অগ্রযাত্রা পত্রিকার জেলা প্র‌তি‌নি‌ধি মহসিন রেজা ও দৈ‌নিক আমা‌দের কন্ঠ পত্রিকার সোহাগ খান সুজন এবং বরিশালে বাংলাভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান কামাল হাওলাদার।  
জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার নঈম মিয়ার বাজারে ইত্তেফাক পত্রিকার সংবাদদাতা এম শাহীন আল আমীন ছবি তুলতে গেলে পৌর মেয়রের লোকজন মারধর করে তাঁর ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেয়। তবে পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর মারধরের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, “ছবি তুলতে নিষেধ করার পরও তিনি ছবি তুলেছিলেন। তাই ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।” 
এছাড়া এই দিন সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করায় দৈনিক যুগান্তরের সাভার প্রতিনিধি মতিউর রহমান ভান্ডারিকে ফোনে হুমকি দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব। তিনি সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। সাংবাদিককে শাসিয়ে বলেন, “তোমার পেছনে আজকে থেকে মনে করবা আবার অন্য ধরনের কিছু সাংবাদিক ঘুরবে। তোমার সম্পাদককে বইলা রাখো তুমি।”
১৬ এপ্রিল : রাজধানীর দক্ষিণখান থানার মাজার এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবীতে ইনসাফ গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মালিক পক্ষের হামলার শিকার হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ক্রাইম অনুসন্ধানের সাংবাদিক তমা। ওই গার্মেন্টসের বিষয়ে কোনও সংবাদ প্রকাশ করলে মেরে লাশ গুম করে দেওয়ারও হুমকী দেওয়া হয় তাঁকে। 
১৫ এপ্রিল : লকডাউনের মধ্যেও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা শ্রমিকদের ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ অব্যাহত থাকায় ডিসি-এসপিসহ জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আল মামুন নামের এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করেন ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার এসআই মো. জহুরুল ইসলাম । 
১৪ এপ্রিল : গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল ওজনে কম দেয়ার প্রতিবাদ করায় আনন্দ টিভির সাংবাদিক খোরশেদ আলম খানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাপাসিয়া থানা পুলিশ ওএমএস ডিলার মাসুদ সরকারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।  
একইদিন মুন্সীগঞ্জে ১০ টাকা মুল্যের চাল বিক্রিতে অনিয়মের খবর ফেসবুকে দেওয়ায় দৈনিক অধিকার পত্রিকার মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি আরফি রিয়াদ এবং তাঁর পরিবারের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।  
এছাড়া এইদিন সাতক্ষীরার তালায় খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক খুলনাঞ্চলের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি খান নাজমুল হুসাইন (২৯), এবং তাঁর ছোট ভাই দৈনিক আজকের সাতক্ষীরার তালা উপজেলা প্রতিনিধি খান আল-মাহবুব (২০) কে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্ত্বরা।  
১২ এপ্রিল : নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নের বড় হোসেনপুর গ্রামে ক্রাইম নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কমের সাংবাদিক মো. পলাশ উদ্দিনের উপর স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন চড়াও হন, তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি ও দেওয়া হয়।  
১০ এপ্রিল : চাল চুরির প্রতিবেদন করায় যুবলীগ নেতার হুমকীতে সস্ত্রীক পালাতে বাধ্য হন আনন্দ টিভির জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রতিনিধি মো. নাসিম উদ্দিন। পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন তিনি।  
৯ এপ্রিল : নারায়ণগঞ্জ থেকে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে ফিরে আসা ১৯ ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় এশিয়ান টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মো. গোলাম মোস্তফাকে মারধর করে তাঁর ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। একই দিন ফতুল্লা থানার কাশিপুর ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় নিম্নআয়ের মানুষদের বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় মেম্বার আমির হোসেনের দুর্ব্যবহারের শিকার হন সাংবাদিকরা।  
৩ এপ্রিল : হামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি নাজমুল সাঈদ সোহেল ও তাঁর পরিবার। 
১ এপ্রিল : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সংবাদ প্রচার করায় সাংবাদিক শাহ সুলতান আহমেদকে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পেটান স্থানীয় চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হন আরও দুই সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান ও বুলবুল আহমেদ।  
৩১ মার্চ : চাল চুরির খবর ফাঁস করায় ভোলায় সাংবাদিক সাগর চৌধুরীর ওপর মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালায় বোরহানউদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বড় মানিকা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম হায়দারের ছেলে নাবিল হায়দার। ক্ষোভ মেটাতে মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারী অপবাদ দিয়ে ওই সাংবাদিককে পেটানোর সময় ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করেছিল সে। 
২৭ মার্চ : প্রশাসনের করোনা সংক্রামণ বিষয়ক সচেতনতা তৈরীর প্রচার-প্রচারণার ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটার শিকার হন বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক দেশ জনপদ পত্রিকার শাফিন আহমেদ রাতুল ও দৈনিক দখিনের মুখ পত্রিকার নাসির উদ্দিন। এদের মধ্যে রাতুল বরিশাল ফটো সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ।
এরই মধ্যে করোনা ভাইরাস বিষয়ক গুজব ঠেকানোর কথা বলে বেশকিছু ওয়েবসাইটের সম্প্রচার বন্ধ করেছে সরকার। সামগ্রিকভাবে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, অনলাইন ও বার্তা সংস্থায় কর্মরতদের কর্তব্য পালন হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। এরই মধ্যে একের পর এক গণমাধ্যমকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাচ্ছি।

২১ এপ্রিল ২০২০

২৮ দিনে প্রথম ৫০, পরের ৫ দিনে ৫১ মৃত্যু!

পঙ্গুত্ব বরণের কারণে গত আট-নয় বছর ধরে সোহরাব উদ্বাস্তু, ভিক্ষুক।
তবুও এই কোভিড কালের মতো দুর্দশার সম্মুখীন হননি কখনও।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছুঁয়েছিল গত ১৫ এপ্রিল। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ৪৪ দিনের মধ্যে ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিষয়ক অনলাইন বুলেটিনে সোমবার জানানো হয়, মোট মৃত এখন ১০১, আর আক্রান্ত দুই হাজার ৯৪৮ জন। 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম ৫০ জন মারা গিয়েছে ২৮ দিনে এবং পরের পাঁচদিনে ৫১ জন। 

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা এক থেকে একশ ছাড়াতে, অর্থাৎ ১০১ হতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩৩ দিন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. রুহুল ফুরকান সিদ্দিক এই প্রতিবেদককে বলেন, “সংখ্যাটা এখন আস্তে আস্তে আরও বাড়বে। জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধির স্বভাবটা এমনই। প্রথমে কম সংখ্যায় বাড়লেও পরে শত শত, হাজার হাজার বা হাজারেরও বেশী হারে বাড়তে থাকে।” 

“করোনাভাইরাসে মৃত্যুর আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে নজর দিলেও বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে,” যোগ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের এই অধ্যাপক। 

বৈশ্বিক হিসাবে করোনায় মৃতের সংখ্যা এক থেকে প্রথম ৫০ হাজারে পৌঁছাতে লেগেছে ৮২ দিন, আর পরবর্তী ১৫ দিনে মারা গেছে লক্ষাধিক। গত ১১ জানুয়ারি প্রথম মৃত্যুর পর ২ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ায়; ১৭ এপ্রিলে যা এক লাখ ৫১ হাজার ছয়ে পৌঁছে যায়। 

“তবে হা-হুতাশের বা ভয় দেখানোর দরকার নেই। এখনও সময় আছে। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়াটাই অনেক বেশী জরুরী। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং সরকারের নির্দেশাবলীগুলো এখন ধর্মীয় শিস্টাচারের মতো পালন করতে হবে,” বলেন ড. রুহুল। 

গত ২৪ ঘন্টায় ৪৯২ জন ভাইরাস আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে বুলেটিনে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ৭২ ঘন্টায় এক হাজার ১১০ জন নতুন কোভিড আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে, মারা গিয়েছেন ২৬ জন।

“আমরা আসলেই একটা বিপদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা যেন ঘরে থাকি, ‘মাস্ক’ ব্যবহার করি, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখি এবং স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলি। তাহলে তা না হলে সংক্রমণ আর মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারবো না,” বলেন তিনি। 

সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আট জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। অযথা ঘোরাঘুরি করে নিজেকে এবং অন্যের জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ড. রুহুলের দাবি, “আমরা করোনার প্রবেশই ঠেকিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু সেটি পারিনি। তবে সারা বিশ্ব বা ইউরোপ-আমেরিকার তূলণায় আমাদের অবস্থা এখনও অনেক ভালো আছে।” 

“সরকারের ভুল-ভ্রান্তি বা সমন্বয়হীনতা নিয়ে সমালোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু জনগণেরও ভুল আছে। ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে আমাদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। অনেক বেশী সাবধান হতে হবে,” বলেন তিনি। 

“আরেকটু সচেতন হলেই বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে,” উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য সারাদেশে ৫০৭ প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। বুলেটিনে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে মোট হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮০ হাজার ৪০২ জন, যার মধ্যে ৭৫ হাজার ৭৪৭ জনই বাসায়। 

গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনসহ মোট সুস্থ হয়েছেন ৮৫ জন। প্রতিনিয়ত নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার হার বেড়েছে বলেও বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়। এর আগে রবিবার ৩১২ এবং শনিবার ৩০৬ জনকে শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

গাজীপুরে আক্রান্তের হার বেশী : “গাজীপুরে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা প্রায় ২০ (১৯ দশমিক পাঁচ) শতাংশ। এছাড়া কিশোরগঞ্জে ১৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং নরসিংদীতে ছয় শতাংশ। ঢাকায় এবং নারায়ণগঞ্জেও আগের মতোই অনেক বেশী আছে,” বুলেটিনে বলেন ডা.নাসিমা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুরের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত ওই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭৩। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৬ জন শনাক্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২৭৯। এর মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ নয় চিকিৎসক, ১২ নার্স ও ৩৪ স্বাস্থ্য কর্মীসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগেরই মোট ৫৭ জন।

ড. রুহুল বলেন, “ডাক্তার-নার্সদের ঢাল-তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধে পাঠালে শুধু তারাই যে মরবে তা নয়, তাদের মাধ্যমেও অনেকে আক্রান্ত হবেন।” এর আগে শনিবারই স্বাস্থ্য বুলেটিনে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছিলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে গাজীপুর।

জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার পুলিশ সুপার ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “যে কারখানাগুলো খোলা রয়েছে তারা কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী) বানানোর কথা বলে শ্রমিকদের ডেকে এনে অন্য পণ্য বানাচ্ছেন।”

“অনেক মালিক রয়েছেন যারা বেতন দেবেন বলে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে আসছেন। কিন্তু বেতন দিতে পারছেন না। তারা শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে। এটা ‘লকডাউন’ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেক বড় অন্তরায়,” যোগ করেন তিনি। 

পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। আমি পরবর্তীতে গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বসব। ‘লকডাউন’ নিশ্চিত করে সীমিত পর্যায়ে হলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এজন্য ডব্লিউএইচও’র শর্ত মেনেই কাজ করতে হবে।”

প্রসঙ্গত, বেতন-ভাতার দাবিতে লকডাউন ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে বারবার বিক্ষোভ করেছেন গাজীপুরের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

সিএমএসডিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং কেন্দ্রীয় ওষধাগারের (সিএমএসডি) কর্মকর্তাদেরদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিভিন্ন মেডিকেল সামগ্রী বুঝে নেওয়ার সময় কেবল মোড়ক না দেখে ভেতরের সবকিছু যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সিএমএসডির পরিচালককে উদ্দেশ্যে করে ভিডিও কনফারেন্সের তিনি বলেন, “লেখা আছে এন-৯৫ কিন্তু ভেতরের জিনিস (মাস্ক) সবসময় সঠিকটা যাচ্ছে না। এর সাপ্লাইয়ার কে? বাবুবাজারের মহানগর হাসপাতালে এগুলো যাচ্ছে। এটা তো করোনাভাইরাসের জন্য ‘ডেডিকেটেড’। এ রকম যদি কিছু কিছু জায়গায় হয়, এটা তো ঠিক নয়।”

“আমি আমাদের মন্ত্রীর কাছে কিছু ছবি পাঠিয়েছি,” যোগ করেন তিনি। তবে বুলেটিনে হাজির হয়ে সিএমএসডি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ দাবি করেন, মহানগর হাসপাতালের এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের জন্য তারা কাউকে অনুমোদন দেননি। 

“বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান মাস্ক সরবরাহ করে, তাদের স্বাভাবিক মাস্ক সরবরাহ করার জন্য কার্যাদেশ দিয়েছি। যার মান ও যার মূল্য ওধুষ প্রশাসন নির্ধারণ করে,” বলেন তিনি। 
newsreel [সংবাদচিত্র]