Powered By Blogger
গার্মেন্টস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
গার্মেন্টস লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২১ এপ্রিল ২০২০

২৮ দিনে প্রথম ৫০, পরের ৫ দিনে ৫১ মৃত্যু!

পঙ্গুত্ব বরণের কারণে গত আট-নয় বছর ধরে সোহরাব উদ্বাস্তু, ভিক্ষুক।
তবুও এই কোভিড কালের মতো দুর্দশার সম্মুখীন হননি কখনও।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছুঁয়েছিল গত ১৫ এপ্রিল। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ৪৪ দিনের মধ্যে ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিষয়ক অনলাইন বুলেটিনে সোমবার জানানো হয়, মোট মৃত এখন ১০১, আর আক্রান্ত দুই হাজার ৯৪৮ জন। 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম ৫০ জন মারা গিয়েছে ২৮ দিনে এবং পরের পাঁচদিনে ৫১ জন। 

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা এক থেকে একশ ছাড়াতে, অর্থাৎ ১০১ হতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩৩ দিন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. রুহুল ফুরকান সিদ্দিক এই প্রতিবেদককে বলেন, “সংখ্যাটা এখন আস্তে আস্তে আরও বাড়বে। জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধির স্বভাবটা এমনই। প্রথমে কম সংখ্যায় বাড়লেও পরে শত শত, হাজার হাজার বা হাজারেরও বেশী হারে বাড়তে থাকে।” 

“করোনাভাইরাসে মৃত্যুর আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে নজর দিলেও বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে,” যোগ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের এই অধ্যাপক। 

বৈশ্বিক হিসাবে করোনায় মৃতের সংখ্যা এক থেকে প্রথম ৫০ হাজারে পৌঁছাতে লেগেছে ৮২ দিন, আর পরবর্তী ১৫ দিনে মারা গেছে লক্ষাধিক। গত ১১ জানুয়ারি প্রথম মৃত্যুর পর ২ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ায়; ১৭ এপ্রিলে যা এক লাখ ৫১ হাজার ছয়ে পৌঁছে যায়। 

“তবে হা-হুতাশের বা ভয় দেখানোর দরকার নেই। এখনও সময় আছে। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়াটাই অনেক বেশী জরুরী। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং সরকারের নির্দেশাবলীগুলো এখন ধর্মীয় শিস্টাচারের মতো পালন করতে হবে,” বলেন ড. রুহুল। 

গত ২৪ ঘন্টায় ৪৯২ জন ভাইরাস আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে বুলেটিনে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ৭২ ঘন্টায় এক হাজার ১১০ জন নতুন কোভিড আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে, মারা গিয়েছেন ২৬ জন।

“আমরা আসলেই একটা বিপদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা যেন ঘরে থাকি, ‘মাস্ক’ ব্যবহার করি, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখি এবং স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলি। তাহলে তা না হলে সংক্রমণ আর মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারবো না,” বলেন তিনি। 

সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আট জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। অযথা ঘোরাঘুরি করে নিজেকে এবং অন্যের জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ড. রুহুলের দাবি, “আমরা করোনার প্রবেশই ঠেকিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু সেটি পারিনি। তবে সারা বিশ্ব বা ইউরোপ-আমেরিকার তূলণায় আমাদের অবস্থা এখনও অনেক ভালো আছে।” 

“সরকারের ভুল-ভ্রান্তি বা সমন্বয়হীনতা নিয়ে সমালোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু জনগণেরও ভুল আছে। ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে আমাদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। অনেক বেশী সাবধান হতে হবে,” বলেন তিনি। 

“আরেকটু সচেতন হলেই বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে,” উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য সারাদেশে ৫০৭ প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। বুলেটিনে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে মোট হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮০ হাজার ৪০২ জন, যার মধ্যে ৭৫ হাজার ৭৪৭ জনই বাসায়। 

গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনসহ মোট সুস্থ হয়েছেন ৮৫ জন। প্রতিনিয়ত নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার হার বেড়েছে বলেও বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়। এর আগে রবিবার ৩১২ এবং শনিবার ৩০৬ জনকে শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

গাজীপুরে আক্রান্তের হার বেশী : “গাজীপুরে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা প্রায় ২০ (১৯ দশমিক পাঁচ) শতাংশ। এছাড়া কিশোরগঞ্জে ১৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং নরসিংদীতে ছয় শতাংশ। ঢাকায় এবং নারায়ণগঞ্জেও আগের মতোই অনেক বেশী আছে,” বুলেটিনে বলেন ডা.নাসিমা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুরের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত ওই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭৩। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৬ জন শনাক্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২৭৯। এর মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ নয় চিকিৎসক, ১২ নার্স ও ৩৪ স্বাস্থ্য কর্মীসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগেরই মোট ৫৭ জন।

ড. রুহুল বলেন, “ডাক্তার-নার্সদের ঢাল-তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধে পাঠালে শুধু তারাই যে মরবে তা নয়, তাদের মাধ্যমেও অনেকে আক্রান্ত হবেন।” এর আগে শনিবারই স্বাস্থ্য বুলেটিনে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছিলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে গাজীপুর।

জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার পুলিশ সুপার ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “যে কারখানাগুলো খোলা রয়েছে তারা কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী) বানানোর কথা বলে শ্রমিকদের ডেকে এনে অন্য পণ্য বানাচ্ছেন।”

“অনেক মালিক রয়েছেন যারা বেতন দেবেন বলে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে আসছেন। কিন্তু বেতন দিতে পারছেন না। তারা শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে। এটা ‘লকডাউন’ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেক বড় অন্তরায়,” যোগ করেন তিনি। 

পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। আমি পরবর্তীতে গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বসব। ‘লকডাউন’ নিশ্চিত করে সীমিত পর্যায়ে হলেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এজন্য ডব্লিউএইচও’র শর্ত মেনেই কাজ করতে হবে।”

প্রসঙ্গত, বেতন-ভাতার দাবিতে লকডাউন ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে বারবার বিক্ষোভ করেছেন গাজীপুরের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

সিএমএসডিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং কেন্দ্রীয় ওষধাগারের (সিএমএসডি) কর্মকর্তাদেরদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিভিন্ন মেডিকেল সামগ্রী বুঝে নেওয়ার সময় কেবল মোড়ক না দেখে ভেতরের সবকিছু যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সিএমএসডির পরিচালককে উদ্দেশ্যে করে ভিডিও কনফারেন্সের তিনি বলেন, “লেখা আছে এন-৯৫ কিন্তু ভেতরের জিনিস (মাস্ক) সবসময় সঠিকটা যাচ্ছে না। এর সাপ্লাইয়ার কে? বাবুবাজারের মহানগর হাসপাতালে এগুলো যাচ্ছে। এটা তো করোনাভাইরাসের জন্য ‘ডেডিকেটেড’। এ রকম যদি কিছু কিছু জায়গায় হয়, এটা তো ঠিক নয়।”

“আমি আমাদের মন্ত্রীর কাছে কিছু ছবি পাঠিয়েছি,” যোগ করেন তিনি। তবে বুলেটিনে হাজির হয়ে সিএমএসডি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ দাবি করেন, মহানগর হাসপাতালের এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের জন্য তারা কাউকে অনুমোদন দেননি। 

“বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান মাস্ক সরবরাহ করে, তাদের স্বাভাবিক মাস্ক সরবরাহ করার জন্য কার্যাদেশ দিয়েছি। যার মান ও যার মূল্য ওধুষ প্রশাসন নির্ধারণ করে,” বলেন তিনি। 
newsreel [সংবাদচিত্র]