“চেনা যায়, শিশ্নোত্থিত রাষ্ট্র আর তার ব্যবস্থাপনাকে? চেনা যায়?”-সময়ের এ প্রশ্নটির উত্থাপক বন্ধু বাঁধন অধিকারী। |
লেখাটি শুরু করেছিলাম এক দিন আগে (১০ মে, ২০১৫)। মূল ফোকাস ছিলো – যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের চালানো নিষ্পেষনে। মূলত ব্যক্তিগত নানা কারণেই এটি শেষ হয়নি। এরই মধ্যে সামনে নতুন ইস্যু। কিঙবা নতুন নয়, এটাকে পুরানোও বলা যায়। আজ (১২ মে, ২০১৫) আরেক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় খুন হয়েছেন। অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর বাবুর মতো তাকেও প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে হত্য করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত তিন মাসের মধ্যে তৃতীয় নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখলো বাংলাদেশ। যৌন পীড়নের ঘটনার পুনুরাবৃত্তির দু’দিন পরই ব্লগার হত্যার পুনুরাবৃত্তি একই সুঁতোয় গাঁথতে চায় না মন। কিন্তু পরিস্থিতির প্রয়োজনে কখনো কখনো এমন প্রশ্ন’তো মনে জাগতেই পারে – এই রাষ্ট্রই কি নিপীড়ক বা এই রাষ্ট্রই কি খুনি? নাহ, পুরানো প্রসঙ্গে ফিরি। নতুন ইস্যুতে পুরানো ইস্যুরে চাপা দেয়ার ফাঁদে পা না দেই। কারণ এম্নিতেই ব্লগার হত্যা নিয়ে আলাদা করে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
“আপনাকে সমর্থন করি মানে সবকিছুতেই সমর্থন করতে হবে তা কিন্তু নয় প্রিয় প্রধানমন্ত্রী.. পহেলা বৈশাখে নারীর সম্ভ্রমহানীর ঘটনা ঘটেছে.. আপনি তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নিলে প্রতিবাদ হবেই.. ওরা বাসে পেট্রলবোমা মারেনি.. ওরা পুলিশের মাথা গুড়িয়ে দেয়নি.. ওরা নারীর সম্মানহানীর প্রতিবাদে নেমেছে.. আপনি বিশ্বের সবচেয়ে নারীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী.. এই প্রতিবাদে আপনিও সামিল জানি.. আপনার পুলিশ যে আঘাত করেছে সে আঘাত আপনার গায়েও লাগার কথা.. আপনি অনুভব করতে পারছেন না কেনো?” –এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্যকার মাসুম রেজার সাম্প্রতিক (১০ মে, ২০১৫) ফেসবুক স্ট্যাটাস। নিউজ ফিডে গত ৪৮ ঘন্টা যাবত এ জাতীয় স্ট্যাটাসের আধিক্য যে হারে বেড়েছে, তাতে আমি শঙ্কিত। কারণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ‘ডিজিটাল’ সরকারের আমলেই সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো নিষিদ্ধ বা বন্ধ করে দেয়ার নজির রয়েছে। অবশ্য আজকের ব্লগার হত্যাকাণ্ডের পর নিউজ ফিডের চেহারা দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে।
ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী ইসমত জাহানের সেই পাল্টা আঘাত |
প্রিয় দাদীর সেই ‘শ্যাখের বেটি’ গত ছয় বছর যাবৎ আমাদের প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ আজ আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান একজন নারী। তবুও আজ রাষ্ট্রই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় নারী নিপীড়ক! নাহ - নিপীড়ন, অত্যাচার, বস্ত্রহরণ, পাষবিক আচরণ বলে এই অপরাধকে আর হালকা করবো না। আজ থেকে এ জাতীয় ঘটনাকে শুধু যৌন সন্ত্রাস বা ধর্ষনই বলবো। দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনও আমায় সে অধিকার দিয়েছে। সেখানে বলা রয়েছে – “যদি কোনো ব্যক্তিঅবৈধভাবে যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোন বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানী করেন, তাহলে তার এ কাজ হবে যৌন পীড়ন।” তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সব কিছু বাদ দিয়েও সর্বাগ্রে একজন নারী; যিনি কন্যা, জায়া, জননী – এ তিনটি স্তরই চেনেন। সেহেতু নিশ্চয়ই জানেন, নারীকে শুধু পুরুষাঙ্গ দিয়েই যৌন পীড়ন বা ধর্ষন করা হয় না। একজন কামুক পুরুষ তার প্রতিটি অঙ্গ ব্যবহার করে। অনেক সময় শুধু লোলুপ দৃষ্টিও যে কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে – তা বোধকরি দেশের প্রতিটি মেয়েরই জানা আছে।
ইসমতের উপর পুলিশী পীড়নের আরো চিত্র |
বৈশাখের সংঘবদ্ধ সেই যৌনসন্ত্রাসের প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলনরত ছাত্র ইউনিয়নের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য ইসমত জাহানের সাথে পুলিশ, মানে আইনের রক্ষকরা যে আচরণ করেছে, সেটা আইনানুযায়ীই ‘যৌন পীড়ন’। অর্থাৎ পুলিশ ভাইয়েরা পুনরায় প্রমাণ করলেন, তারা অর্থাৎ এ রাষ্ট্র শুধু যৌন পীড়নের সমর্থকই নয়, ক্ষেত্র বিশেষে নিজেই পীড়ক, ধর্ষক। অবস্থাদৃষ্টে আপন রাষ্ট্রকেই আজ যৌনসন্ত্রাসী বা ধর্ষক ভাবতে হচ্ছে হায়। শুধু আমাদের মা, বোনকে নয়; দেশমাতৃকাকেই ধর্ষন করছে রাষ্ট্রযন্ত্র। এতে অবাক হতাম না। কারণ হাজার বছর ধরে শোষণযন্ত্রের স্বভাবই যে এমন, তা সচেতন সকলেরই জানা আছে। কিন্তু ওই যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের চাবি এখন যার আঁচলে বাঁধা, তিনি সেই ‘শ্যখের বেটি’। তাকে বা আমাদের পুলিশ বাহীনিকে বিব্রত করার কোনো বাসনা নিয়ে এ্ই লেখা লিখতে বসিনি। শুধু রাষ্ট্রীয় প্রধানের কাছে আমার প্রশ্ন – পহেলা বৈশাখ ইস্যুতে আপনার ‘আনুষ্ঠানিক নিরাবতা’ কি নিপীড়কদের মানুসিক শক্তি বাড়ায়নি? এর পরবর্তী পুলিশী পীড়নের জন্যও কি পরোক্ষভাবে আপনিই দায়ী নন? এই দুটো প্রশ্নকে কারো বেয়াদবি মনে হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
মাসুম রেজার সেই স্ট্যাটাস |
এসব ভুলে যাইনি। শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীও ভুলে যাননি নিশ্চয়ই। কারণ আমরা জানি তার সরকারই নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩, ডিএনএ আইন ২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। মাতৃত্বকালীন ছুটিও ছয় মাসে উন্নীত করেছে এ সরকার। সেই সাথে মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করেছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোও এখন জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করছে। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, এসব কি তবে শুধুই কাগজপত্রে হচ্ছে? নাহ, এমনটা আমি অন্তত মনে করতে চাই না। তবে মনে পরে যায় শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদকে। কমপক্ষে ১০ বছর আগে নিজের “১০,০০০ এবং আরো একটি ধর্ষণ” উপন্যাসের মুখবন্ধে তিনি লিখেছিলেন - ‘বাঙলাদেশ এখন হয়ে উঠেছে এক উপদ্রুত ভূখণ্ড; হয়ে উঠেছে ধর্ষণের এক বিশাল রঙ্গমঞ্চ, ৫৬,০০০ বর্গমাইলব্যাপী পীড়নের এক বিশাল প্রেক্ষাগার। ধর্ষিত হচ্ছে মাটি মেঘ নদী রৌদ্র জোৎস্না দেশ, নারীরা।’
আন্দোলনরতদের ওপরে পুলিশের লাঠিচার্জের বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ গত ক’দিনে ঘেঁটে দেখলাম। পুলিশের লাঠিচার্জে আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলের অজস্র ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবেই। ওগুলো একটু খেয়াল করে দেখলেই দেখবেন - ক্ষুব্ধ ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী ইসমত জাহান জলকামানধারী দাঙ্গাগাড়ির গায়ে ঢিল ছুড়ে মারার সাথে সাথে তাকে পিছন থেকে এসে এক থাপ্পরে ফুটপাতে শুইয়ে ফেলে একজন সুঠার দেহের পুরুষ পুলিশ। তিনি কোনো মতে উঠে পাশে দাঁড়ানো এক আলোকচিত্রীর পেছনে লুকিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে – পুলিশ সদস্যরা তাকে ধটেনে হিঁচরে বের করে লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে ধাওয়া করে। এরপর তিনি দৌড়ে গিয়ে একটি গাছের আড়ালে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখান থেকেও তাকে চুলির মুঠি ধরে বের করে এনে পিটাতে পিটাতে আবারো শুইয়ে ফেলা হয়।
জানা হয়নি ওই পুলিশ সদস্য জানতেন কি’না, সেদিন ছিলো বিশ্ব মা দিবস। আর এই দিনে তিনি বা তারা যাকে পেটাচ্ছিলেন, তিনিও মায়েরই জাত। যে কি’না নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষার দাবিতেই আজ রাজপথে, নিপীরকদের শাস্তির দাবিতে। ওই সদস্য না জানুক, তার কর্তারা তো জানতেন- বৈকি। এ কারণেই সেদিন ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলাম। চিঠিটি এখানেও সংযুক্ত করছি -হে মহান বিজ্ঞ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), এ কথাগুলো সম্ভবত আপনার কান অবধি পৌছাবে না। তবুও বলছি, বিশ্ব মা দিবসে মায়ের জাতকে পিটানোর জন্য নারী পুলিশ ব্যবহারে আপনার গদি খুব একটা নরবরে হয়ে যেত না হয়ত। যৌনসন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন দমাতে নারী পুলিশদের কি ওপর ভরসা রাখতে পারছিলেন না? আন্দোলন দমাতে এসে তাদেরও প্রতিবাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিলো কি’না সে আলোচনা আপাতত উহ্য রাখছি। শুধু একটু জানিয়ে রাখছি, নিজ বাহীনির নারী সদস্যদের ওপর আপনার এই আস্থাহীনতা, তথা নারীদের শায়েস্তার জন্য পুরুষ পুলিশ ব্যবহার এই জাতিকে ফের সেই শামসুন্নাহার হলের ঘটনাকে মনে করিয়ে দিয়েছে। তবুও দেশের সুবোধ নাগরিকের মতো আমরা ট্যাক্সের পয়সায় আপনাদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করবো নিশ্চয়ই। পুনশ্চঃ পরে জেনেছি - “সেখানে পুলিশের নারী সদস্য থাকলেও তাঁরা নীরব ছিলেন।” লিখেছে দৈনিক প্রথম আলো।
খবরে দেখলাম নারী লাঞ্ছনার বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কনস্টেবলের নাম আনিস। গতকাল (১১ মে, ২০১৫) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখা থেকে সাংবাদিকদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একই দিনে ডিএমপি কার্যালয় থেকে পাঠানো আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা কীভাবে ব্যারিকেড পার হয়ে মিন্টো রোডের স্পর্শকাতর মন্ত্রিপাড়ায় এসে পুলিশের ওপর ‘হামলা চালিয়েছেন’ এবং পুলিশ কোন প্রেক্ষাপটে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করেছে তা ‘যাচাইয়ে’ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি)। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) বেলালুর রহমানকে। কমিটির দুই সদস্য হলেন ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) কৃষ্ণ পদ রায় ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখিত সংবাদ ভাষ্যগুলো পড়তে পড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আরো কিছু কথা মনে পরলো। এ দেশে অপরাধীদের মারা হলে মায়াকান্না করা হয় উল্লেখ করে ক’দিন আগেই তিনি বলছিলেন - “পুলিশের অধিকার আছে নিরপরাধ মানুষের জানমাল বাঁচানো। মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, বাসে-রেলে আগুন দেয়া হচ্ছে, রেললাইন তুলে ফেলছে, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে, কিছু করা যাবে না! কিছু করলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। এ হতে পারে না।”
সম্ভবত অনেকেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সেই বক্তব্য ভুলে যাননি। তিনি বলেছিলেন, “কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ পেলে পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। যে ফুটেজ পাওয়া গেছে, তাতে বিবস্ত্র করার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, “ পহেলা বৈশাখের এ ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটানো হয়েছে। যদি কারও কাছে কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য থাকে তাহলে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে তা পুলিশের কাছে জমা দিন।” এনিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ঘাঁটলেই জানবেন, সেদিনও পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিলো স্মারকলিপি নিয়ে সচিবালয়মুখী আন্দোলনকারীদের সাথে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলামের সেই সংবাদ সম্মেলনের কথাও নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, “নারীকে বিবস্ত্র করে যৌন হয়রানি করার কোন ঘটনা ঘটেনি, এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে বিবস্ত্র করে তার ছবি মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার করানো হচ্ছে।” তবে টিএসসির আশপাশের এলাকায় ঠেলাঠেলি হয়েছে বলে স্বীকার করে মনিরুল ইসলাম বলেন, “এখানে ঠেলা-ধাক্কা, হাতাহাতি হয়েছে। একেবারেই কিছু বিকৃতমনা যুবক এবং যারা অপুরুষসুলভ, তারাই হয়ত এ কাজটি করেছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ চলছে।”
অমি রহমান পিয়ালের স্ট্যাটাস |
বর্ষবরণ উৎসবে যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে লজ্জা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘সব নারীর কাছে’ ক্ষমা চেয়েছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। পুলিশের ‘লোক দেখানো’ ভূমিকা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, “নববর্ষের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানি ও এ ঘটনা আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- কী হিংস্রতা ও নগ্নতা আমাদের মনের গহিনে বাসা বেঁধেছে। কী ঘৃণ্য মানসিকতা আমাদের পেয়ে বসেছে।” এবার তিনি কী বলেন তা দেখারও অপেক্ষায় আছি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। নগর নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগদ খালেদা জিয়ার ওপর সরকার সমর্থকদের দফায় দফায় আক্রমণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই শুধু নন, তার সন্তান ও অবৈতনিক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা’ও সকলের মনে আছে আশাকরি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘৬৬৫ জন বিএনপি নেতা পেট্রোলবোমাসহ ধরা পড়েছে। ৭০ জনের মতো সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়েছে এবং তারা গণপিটুনির শিকার হয়েছে। বোমা বানাতে গিয়ে নিজেদের নেতাও মারা গেছে। বহু মায়ের বুক খালি করেছেন। বহু বোনকে বিধবা করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) এখনো প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তার কথায় আমি অবাক হয়ে যাই। এখন যদি সাধারণ মানুষ তার ওপর প্রতিশোধ নেয় তা হলে তিনি কী করবেন। তিনি দেশের মানুষকে এতো বোকা মনে করেন কেন?’ আর তার পুত্র জয় ফেসবুকে লিখলেন – “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে মানুষ আবারও পাথর এবং লাঠি নিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনাগুলোতে আসলে আওয়ামী লীগের তেমন কিছু করার নেই। দেশের মানুষ, বিশেষ করে ঢাকার মানুষ গত তিন মাসে বাস এবং গনপরিবহনে বিএনপির দ্বারা অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছেন। বিএনপি ১৬০ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, বহু মানুষ আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে শুয়ে আছেন। ক্ষোভটা সহজেই বোধগম্য।”
ক্ষমতার চূড়ান্তে থাকা এক মা বা তার ছেলের এমন বক্তব্য প্রতিহিংসায় আস্কারা দেয় কি’না – সে প্রশ্ন এখানে তুলবো না। কারণ এটা আমি মনে করি না যে ওনারা ভুলে গিয়েছিলেন যে বেগম খালেদা জিয়াও সর্বাগ্রে একজন নারী, দেশের এক সম্মানিত নাগরিক। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া একজন নারীর কতটা সম্মান পাওয়া উচিত, তা’ও বোধকরি ওনাদের অজানা নয়। এমন একজন নারীর ওপর হামলার পর অমন বক্তব্য আরো কতটা ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিতে পারে – সে শঙ্কায়ও ছিলাম। হয়ত ছিলেন আরো অনেকে। ক’দিনের মধ্যেই প্রমাণ পেলাম – শঙ্কা ভুল ছিলো না। নগর নির্বাচনের দিন সারা ঢাকাতেই সরকার বিরোধী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা যে পরিমাণ নিগ্রহের স্বীকার হয়েছেন, তার মধ্যে নারীর সংখ্যাও এক্কেবারে কম ছিলো না।
বেগম জিয়াও এই ইস্যুতে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ২৬ এপিল, ২০১৫ – এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন যৌন পীড়নের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। খালেদা জিয়া বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের যে বোনেরা ও মেয়েরা ন্যাক্কারজনকভাবে নির্যাতিত ও সম্মানহানির শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি। এসব ঘৃণ্য অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।” তিনি আরও বলেন, 'যে সরকার ও প্রশাসন কোনো সামাজিক উৎসবে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে পারে না এবং এমন ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিকার করতে পারে না, তাদের লজ্জিত হওয়া উচিৎ। ক্ষমা চেয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ।'
একই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রী আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। তাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উত্তরা, কারওয়ান বাজার, ফকিরেরপুলের কাছে ও বাংলামোটরে আমার গাড়িবহরে পরপর চারদিন হামলা করেছে। বাংলামোটরে আমাকে বহনকারী গাড়ির উপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেয় এবং হামলাকারীদের পুলিশ পুরোপুরি সহযোগিতা করে। সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে কারওয়ানবাজারে। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। বহরের অনেকগুলো গাড়ি ভেঙ্গে ফেলে। হামলার সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানো হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, 'সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আমি তখন সবেমাত্র গাড়িতে উঠে বসেছি। আমি যে-পাশে বসা ছিলাম, সেই পাশেই গাড়ির জানালার কাঁচে গুলি লাগে। এতে গাস ভেদ না করলেও তা ফেটে যায়। আলাহর রহমতে অল্পের জন্য আমার জীবন রক্ষা পায়। কতটা মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করলে বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ ফেটে যায়, তা সবাই বোঝে। এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।” প্রতিটি হামলার জন্য তিনি এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে বলেন, “প্রতিটি হামলার ঘটনাই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সরাসরি উস্কানির ফল এবং সুপরিকল্পিত। এসব হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অংশ নেয়।”
এদিকে যৌন সন্ত্রাস বিরোধী ‘পাল্টা আঘাত’ শীর্ষক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে যখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে দেশের সচেতন সমাজ, ঠিক তখনই ফের ব্লগার হত্যার মতো ইস্যুও তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একই দিনে নিখোঁজ এক জাতীয় নেতার (বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ) সন্ধান লাভ ও ফের ভূ-কম্পনের ঘটনাও এলোমেলো করে দিচ্ছে অনেক ভাবনার গতি-প্রকৃতি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মানসিক হাসপাতালে অবস্থানরত ওই নেতা বা নেপালে জন্ম নেয়া ভূমিকম্পের প্রভাব জনমনে কেমন হতে পারে তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এবারের বৈশাখে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছিলো জগন্নাথ আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়ায় টিএসসি’র ঘটনাতেও এই সংগঠনের নেতাকর্মিদের জড়িত থাকার গুজব ছড়িয়ে পরে। মূলত বিগত বছরগুলোতে তাদের এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের নজিরই এটি ছড়াতে সাহায্য করেছে। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মিদের মাধ্যমে পুলিশের হাতে আটক হওয়া নিপীড়কদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনা – এ গুজবকে আরো শক্তিশালী করেছে। এতে হাওয়া দিয়েছে খোদ ছাত্রলীগও। এনিয়ে ২২ এপ্রিল এক সংবাদ পরিবেশন করে দৈনিক মানবকণ্ঠ। “ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়ন : সপ্তাহ পেরুলেও কর্মসূচিহীন ছাত্রলীগ : কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারণায়” শিরোনামের ওই সংবাদে বলা হয়, রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। ঠিক তেমনি বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত বর্বরোচিত যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যেখানে একের পর এক কর্মসূচি পালন করছে, সেখানে প্রায় নিশ্চুপ ছাত্রলীগ। ঘটনার সাতদিন পেরুলেও নেই কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যস্ত আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগে। এ নিয়ে সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভেতরেও বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এ ধরণের সংবাদ এসেছে আরো একাধিক গণমাধ্যমে। ওইসব সংবাদে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বর্বর ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে নামমাত্র একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। তাও আবার তিনদিন পর। বিবৃতিতে ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে গত মঙ্গলবার বিকেলে ৩০-৩৫ জনের একদল বখাটে যুবক বেশ কয়েক নারীকে যৌন হয়রানি করেছে। তারা আগন্তুকদের সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করে। জাতির জনকের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ হীন ও ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। অতি দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতেই দাবি শেষ! এরপর নেই কোনো দৃশ্যমান কর্মসূচি। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে। প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ মনোনীত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের গণসংযোগে ব্যস্ত।
প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে আরেকটি অনলাইন। ‘ছাত্রলীগকে জড়ানো হচ্ছে গোষ্ঠীস্বার্থে : প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, “পহেলা বৈশাখের ঘটনায় দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নামে কুৎসা রটানোর অপপ্রয়াস রুখতে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন।” তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসটিও এখানে তুলে ধরা হলো -
গরু ঘাস খায় / আমি গরু খাই। সুতরাং আমি ঘাস খাই ... যুক্তি বিদ্যার যুক্তিগুলো এইরকমই। যা অবশেষে ভুল প্রমাণিত হয়। "যেহেতু সুশীলদের কাছে সব দোষের দোষী ছাত্রলীগ হয়। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতনের যে ঘটনা এটা ছাত্রলীগই করেছে।" কিছু অশিক্ষিত/অর্ধ শিক্ষিত মানুষ এই রকম যুক্তি দিয়েই ছাত্রলীগের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে কিছু পেইড পেশাজীবীও রয়েছেন। কারণ সামনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, সরকার সমর্থক প্রার্থীদের হারানোর জন্য এটা খুব বার্নিং ইস্যু। যেমন গত নির্বাচনে ছিল হেফাজত ইস্যু। অথচ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী, যিনি মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে দুস্কৃতিকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন তিনিও কিন্তু প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠন এর নাম বলেননি। নিশ্চয় দুস্কৃতিকারী কুলাঙ্গারগুলো ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক হলে তার জানার কথা। কারণ উদ্ধারকারীরাও ৭/৮ বছর ধরে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছেন। সুতরাং প্রতিপক্ষকে চেনার কথা। যারা কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া ছাত্রলীগকে দোষারোপ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা কি জানেন, আপনিও যে ওই "কুলাংগারদেরই একজন।" কারণ আপনি, আপনার গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে আসল কুলাঙ্গারদের বাঁচিয়ে দিচ্ছেন।
অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষের রাতে শাওন আকতার বাঁধন নামে এক নারীকে বিবস্ত্র করা হয়েছিলো। তখনও যে সোনার ছেলেরা এই অপকর্ম করেছিলো তারা ক্ষমতার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। আর তখনও বর্তমান ক্ষমতাসীনরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো। পুলিশ ছিলো নীরব। এ নিয়ে মামলা হলেও আসামিরা সবাই মুক্তি পেয়েছিলো। তাছাড়া প্রবল চাপের কারণে সেই বাঁধন নিজেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। ২০১৪ সালের এক খবরে বিবিসি বলছিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ওই বছরে কমপক্ষে ২০টি যৌন হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। বিগত ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল অবধি এ জাতীয় শত শত ঘটনার জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমেও এসেছে খুব কম সংখ্যক ঘটনা। তবে যেগুলো এসেছে, ব্যাপক আলোচিত হয়েছে - সেগুলোয় ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্টদের জড়িত থাকার প্রমাণই মিলেছে বার বার।
কার জানি এক লেখায় পেয়েছিলাম, সেই সুদূর অতীতে - বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেই (১৯৭৩ সালে) শহীদ মিনারে ছাত্রীদের ওপর হামলে পড়ার মতো ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে আছে। তাদের বর্তমান উত্তারাধিকারীরা সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রেখেছে। এই ছাত্রলীগ তৈরি করেছিলো সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষক। তাদের এ জাতীয় অনাচার নিঃসন্দেহে ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতিয়ার।
অনেকের হয়ত প্রাসঙ্গিক মনে না’ও হতে পারে। তবুও সাংবাদিক ও ব্লগার কল্লোল মুস্তফার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস এখানে হুবহু উল্লেখ করছি।
>> অভিজিৎ রায়ের খুনিরা এখনও ধরা পড়েনি/চিহ্নিত হয়নি, ওয়াশিকুর বাবুর খুনিরা জনগণের তৎপরতায় ঘটনাচক্রে ধরা পড়লেও পেছনের ব্যাক্তি বা সংগঠন এখনও ধরা পড়ে নি। হুমায়ুন আজাদ হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে নাস্তিক অভিযোগে যাদের উপরই হামলা হয়েছে, সেসবের কোন তদন্ত কাজেই সন্তুষ্ট হওয়ার মত কিছু দেখি না। ক্ষমতাবানরা বিপন্ন বোধ করলে যেভাবে পুলিশ কিংবা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী মাঠে নামে, অন্যান্য আরও ঘটনার মতো এই হত্যাকান্ডগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে মূল হোতা সনাক্ত করার ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ নেই। যে কারণে পেছনের মূল শক্তি তো দূরের কথা রেদোয়ান রানা কিংবা মাসুম ভাইদের মতো সামনের সারির সমন্বয়করা পর্যন্ত ধরা পড়েনা। এ রকম একটা বাস্তবতাই লেখক অনন্ত বিজয় দাসকে কুপিয়ে হত্যার পরিসর তৈরি করে দিয়েছে।
>> নাস্তিকতার কারনেই একের পর এক হত্যা কারা হচ্ছে বলে মনে হলেও নাস্তিকতাকে পুঁজি করে হত্যার পেছনে অন্য কোন মোটিভ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। ইতিহাস বলে, নাস্তিক আস্তিক হিন্দু মুসলিম ইত্যাদি বিভিন্ন দাঙ্গা হামলা আক্রমণ ইত্যাদির পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারলৌকিক বিষয়ের চেয়ে ইহলৌকিক নানান বিষয় কাজ করে। নাস্তিকতা বিষয়টি তো বাংলাদেশে নতুন নয় কিন্তু এভাবে চাপাতি সহ হামলা তুলনামূলক নতুন। কি এমন ঘটলো যে কিছু লোক ব্লগারদের উপর চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে? মাদ্রাসা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধর্মপ্রাণ কিশোর বা তরুণটি হামলা করছে, সে হয়তো ধর্ম রক্ষা করছে ভেবেই হামলাটি করছে, কিন্তু যারা তার ভেতরে থাকা ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাকে উসকে দিচ্ছে, চাপাতি সর্বরাহ করছে, ভিকটিমের নাম ঠিকানা ছবি হাতে ধরিয়ে হামলায় উদ্বুদ্ধ করছে- তারা স্রেফ ধর্মরক্ষার জন্য করছে এরকম আমার মনে হয় না। এর পেছনে ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর একেবারেই ইহজাগতিক স্বার্থসিদ্ধির বিভিন্ন কার্যকারণ থাকতে পারে।কিন্তু মূল হোতারা চিহ্নিত না হলে আসলে এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত কিছু বলা মুশকিল।
>> জঙ্গিবাদের উত্থানে সরকারের মুখের কথা আর কাজের মধ্যে কন্ট্রাডিকশান স্পষ্ট।মুখে জঙ্গিবাদ দমণের কথা বললেও এবং জঙ্গিবাদ বিরোধীতার কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা লূটলেও- প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানান উপায়ে নিজেরাই ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার করে, বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করে- যা ধর্মীয় জঙ্গিবাদ উত্থান ও লালন পালনের বাস্তব পরিসর তৈরী করে।
নিহত লেখক - ব্লগার অনন্ত বিজয় |
কয়েক বছর যাবৎ একটি নতুন সিরিজ লিখছি, কবিতার। নাম দিয়েছি ‘গাধার গয়না’। এই পরম্পরার একটি লেখা দিয়েই আজ শেষ করলাম।
- স্বজাতি বা মনুষ্যকূলকে
নিজেরাই ডেকে এনে বালা
সব্বাই খুব উদ্বিগ্ন শালা !!
এতেই করছো বাপ বাপ
কেবল তো খেলে তলঠাপ;
আসছে মহাদূর্যোগ মামা-
ক্ষেপেছে স্রষ্টা বা প্রকৃতি মা।
বলছি এই যে এত বোমা-
গুলি আর গোলার বিক্রিয়া
- বিচ্ছুরণ বাড়ন্ত যে তেজে
এড়াতে পারবে ভেবেছিলে?
নাকি এতই ব্যস্ত তোমরা
ভাবার সময় নেই কারো
ভারসাম্য নষ্টকারী কারা
ক্ষমতা লিপ্সায় পথভ্রষ্ট-
আর থাক, ভেবেছ যথেষ্ট।
এবার আসো তাদের দেখি
অভিশপ্ত মসনদে যারা -
হাতে হাত ধরে চলো যাই
দেই সিংহাসন ধরে নাড়া।
লেখাটি প্রকাশের আগেই এলো নতুন সংবাদ ! |
পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে নারীদের ওপর সংঘবদ্ধ যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে চার-পাঁচ জন যুবকের দুষ্টামির ছলে ঘটা ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এ ঘটনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা লিটন নন্দী ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। আজই দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ জাতীয় মন্তব্য করেন। আইজিপি বলেছেন, ‘বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে হাজার হাজার মানুষ ছিল। তাদের মাধ্যে মাত্র চার-পাঁচ জন যুবক ওরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সময় জনগণ কী করেছে? একজনও কেন তাদের ধরতে পারল না। জনগণেরও তো ক্ষমতা রয়েছে। দুষ্টামির ছলে চার-পাঁচ জন যুবক কী করেছে তা জনগণই প্রতিহত করতে পারত। এ ঘটনা নিয়ে লিটন নন্দী বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। এসব তথ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে আল-কায়েদা প্রসঙ্গে তিনি বলেনে, ‘বাংলাদেশে আল-কায়েদার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশের কোনো সংগঠন তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ একের পর এক ব্লগার হত্যা প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, কিছু ব্যক্তি ব্লগারদের হত্যার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে। কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না। ফলে হত্যাকাণ্ডের পর তাদের গ্রেফতারে নতুন করে কৌশলী হতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
অন্যান্য পোস্টঃ
বাংলা জাগবেই জাগবে...অন্যান্য পোস্টঃ
আহা কী অর্জন - কারচুপি, বর্জন ...
ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ
বর্ষবরণে বস্ত্রহরণ কী পরিকল্পিত !
এ কোন উগ্রবাদের মহড়া ...
যদি মনে শঙ্কা বিরাজে, সরকার লাগে কি কাজে ?
বিএম কলেজের একাংশে নারীরা নিষিদ্ধ !
বিশ্বের চেয়ে দেশের শান্তিরক্ষা কঠিন !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন