Powered By Blogger
eon's poetry লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
eon's poetry লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০১ এপ্রিল ২০১৭

দুটি বইয়ের দশটি কবিতা


দিনলিপি। ০১০৫০৯


বহুজাতিক কোম্পানির মোড়কে মোড়ানো কনসার্টের শ্রমিক দিবসকে পাশ কাটিয়ে প্রণয় উৎসবের তাড়াহুড়োয় এক যান্ত্রিক যাত্রা ‘ফুলার রোড টু সানরাইজ’। এরপর উৎসবকেও পাশ কাটিয়ে হাইরাইজ বাতাসের আমন্ত্রণে সমর্পিত মনের অতৃপ্তি ঘোচে না বা চাহিদা মেটে না। অবশেষে মনে হয়─ জাপটে ধরা শামুক স্মৃতি আর সুখ শীতল ফানুস শৈশব জীবন বা সময়ের ভুলেও আজ এক চিলতে আশ্রয়।

পরিশুষ্ক পরিশোধে রূপান্তরিত
আদুরে সোহাগ লুটে নিতে গিয়ে
কখনো কি কারো মনে প্রশ্ন জাগেনি─
‘প্রেম কি আদৌ পরিশোধ্য? বা ভালবাসার
পরীক্ষক আর পরিমাপক কে বা কি হতে পারে?’
বাধিত প্রেমের বাতুলতার কবলে তাই নিরবিচ্ছিন্ন অসুখ।

তবু সেই শিকারী চোখের মায়ায় সে বারে বার ফিরেছে ব্যবচ্ছেদের দেয়ালে। এক লাফে উঠে দাঁড়িয়েছে তার উপর; কেঁপে উঠেছে পাঁচ ইঞ্চি পুরু পুরো গাঁথুনি। দেয়ালের উপর বসেই দেখতে পেয়েছে মন্ট্রিলের সী-বিচ আর বেইলী রোডের দূরত্ব কতোটা কম। অথচ মাইগ্রেনের ব্যথায় কাতর শৈশবের টানে ওই দেয়াল ধরেই কাঁপতে কাঁপতে হেঁটেছিলো ফেলে আসা চন্দ্রদ্বীপের দিকে। ট্রেনের ভেঁপুরা লঞ্চের সাইরেন সেজে দাঁড়িয়েছিল কীর্তনখোলার পলিতে। অবশেষে অবসন্ন অবশিষ্টতার মঞ্চে কবি জ্বরে জ্বরাগ্রস্ত মন ভুতগ্রস্ত সংলাপ আওরে প্রলাপের মতো লিখেছিল─

কেমনও আঁধার করেছে ব্যাকুল ক্রোধ
বিস্মিত মননে শহুরে রোদের চুম,
ভাবার আগেই ফিরেছে ভোরের বোধ
বিষাদ নয়নে ফেরারি রাতের ঘুম।
এরপর ছন্নছাড়া ক্লান্ত প্রতিশোধ
কোলাহলের ভিড়েও করেছে নিস্তব্ধ,
বিক্ষুব্ধ ক্ষুধাতেই একাকীত্ব নির্বোধ
তবুও অট্টহাসিতে কাটানো নৈঃশব্দ...

পরিণামে নির্ভেজাল পাথুরে সংলাপে
কথামালা সাজানোর অভিপ্রায়ে মত্ত
ব্যস্ততারা ক্রমাগত মগ্ন নিরুত্তাপে
আর ঘুমঘোরে জেনেছিল সব সত্য।
এমনেই একা জন্মেছিল একাকীত্ব
অথচ বৈকালিক বোধে লীন সতীত্ব...

অবশেষে সব সীমায়িত করা ঘুম, ঘুমে গুম প্রহর আর অচেনা জনপদের মতো অপ্রকাশিত আস্থা গভীর-অগভীরতার খাঁজে। তবুও দ্বান্দ্বিক দৃষ্টি-বদ্ধ সেই ঘুম ঘুমিয়ে ছিল চিরনিদ্রা বা অন্তিম ঘুমের অপেক্ষায়।

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

শবাচ্ছন্ন রাত

বাড়ে শবাচ্ছন্ন রাত
সে বিষাদে কাঁদে চাঁদ
ভাঙা ইমারতে চাপা
গোঙানিময় বাতাসে
যমেরও প্রতিক্ষায়
কারা বাড়ায় দর্শক
অনুমেয় হয় চোখ
শুধু মৃত্যু গননায়
কী উন্নতি উত্তেজনা
সরাসরি সম্প্রচারে
অন্তিম জোৎস্নায় কাঁপা
মুমূর্ষু সাক্ষাৎকারে
খুন হয় খুন বয়
ফের এই বাঙলায়
আর শুনি ঘোষণায়
ঘটা করে হবে শোক
খুনীরাই আয়োজক
মেটাবে খুনের দায়
কালো ব্যাজ পতাকায়

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

বে-ঈমান

এক এবং
অদ্বিতীয়
আপনার
কীর্তি ম্লান
করে যায়
এমন কে
এ ধরার
কোন মর্মে
লুকায়িত
রয়েছে যে
অস্বীকার
করবেইে
এ অস্তিত্ব...

কারই বা
ঈমানে যে
আজ নেই
সে সম্মান;
যা সবাই
আপনাকে
দিয়ে যাচ্ছে
যুগ থেকে
যুগান্তর
ধর্ম থেকে
ধর্মান্তরে

কে'বা করে
অস্বীকার
আপনার
অবদান

অসুর বা
লুসিফর
যে রূপেই
ফরমান
লাভ ইউ,
হে মহান
শয়তান।

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

রেসপেক্ট সিভিলিয়ানস

লুটে নেয় যারা, তারা প্রভু বেশে
চেয়ে দেখে সব ভাগাভাগি শেষে
─ বাকি আছে আরো
─ কে কী নিতে পারো
─ দ্রুত বুঝে নাও
─ যতটুকু পাও
─ এসবই ফাও
আহারে এবার বাড়িয়েছে চান্স
জলপাইরঙা শীতল রোমান্স
চকচকে বুট আর বেয়নেট
পোড়া জনপদে
ভিনদেশী থ্রেট
চেনে অনুগামী সামরিক ঘ্রাণ
যায় যাক প্রাণ
গভীর শঙ্কায়
তব মন চায় ─ বলে দিয়ে যায়
রাঙা ক্ষেপণাস্ত্র বা সাঁজোয়া যান
আনে না যে শান্তি
চেনে না কে স্বস্তি
নয়া সেলফ প্রপেলড কামান
─ এবঙ কবিতা
─ বা ইশতেহার
যা পড়েছো বা পড়ছো এ কালে
সবটুকু ছিলো তোমার আমার
গ্লানিরই মতো
স্বচ্ছ সত্য ক্লান্ত
─ কারণ
স্বাধীন সঙ্গীতে মুখর শ্লোগান
মানে নাই একচোখা ফরমান
কখনো ─
মওকায় যদি অন্য কিছু হবে
নীরব জনতা নীরব না রবে
সব চিনে তারা ভাবে চুপচাপ
কার কোন শত্রু
কার বন্ধু বাপ
─ তবুও
মারপ্যাঁচে জমে রাজ-দুশমনি
বন্দুকের নলে বাহ বিরিয়ানি
দেখে এসবই─
কে যে গুম হয়
কবি না অকবি
কার লাগে ভয়
আবার কে কয়
সমর বিদ্বেষ, দেশদ্রোহ নয়
─ যদিও
বুকে সভ্য ত্রাস
ফেরে কি বিশ্বাস
ভরসা পাই না
বা কোনো আশ্বাস
─ হে বাঙাল সেনা
প্লিজ ─ রেসপেক্ট সিভিলিয়ানস

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

শহর দর্শন

এক.
উৎসবে বর্ণিল
চেনা এ শহর
অদ্ভুত রঙিন
বিরহে কাতর

দুই.
আমার শহরে
বেহেড সাপেরা
বাসা বাঁধে কবে
কার ইশারায়
সব যায় বোঝা
বোবা থাকা দায়
নাচে চেতনায়
বিষদাঁত ভাঙা
কথার ফোয়ারা
আর সব মেনে
কারা তারা যায়
রাজপুত্র সাজা
সাপের গুহায়
বড় অসহায়
সাদামাটা যারা
মৃত্যু ভয়ে চুপ
আশাহত খুব
হয়ে গেছে ভুলে
কে জেগে আজও
কার ঘুম নাই
প্রাণ খুলে বাঁচো
এই মন্ত্র জানা
কোন সর্বহারা
অস্ত্র আর দীক্ষা
জমা দেয় নাই

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)


***
যৌন জেহাদের যুগে
যে উত্তেজনায় ভুগে
লোভজ্বরে লালায়িত
মুজাহিদ মন খোঁজে
বেহেশতি আয়োজন
তার তরে বেলাগাম
আদিম অস্ত্র ফতোয়া
আরব্য ধর্ম বাণিজ্য
আধুনিকায়নে আহা
কতই না কার্যকরি─
জিহাদ আল নিকাহ।
কী অন্ধ ঈমানে হায়
তিউনিসিয়ার নারী
ধর্মের ঘোড়ায় চড়ে
সিরিয়াতে দেহদাসী;
না জানি─ ওরাই হুর
পূণ্যের হিসাব মাপে
হালাল যৌনাচার ও
জেহাদি জোশের ঠাঁপে
হয়ত তারাও জানে
এ যমানা নৃ’র নয়;
দ্বীনের বীর্যের তাপে
ইমাম পণ্ডিত কাঁপে
‘ধার্মিক’ মন্ত্রণালয়।

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

***
নিশ্চয় চেনে গুমকৌশল
জানে অন্ধ চাপাতির বল
তথাপি ভাববেন না প্রভু
সব মুখ বুঝে সয়ে কভু
─বাঙাল মন রবে দুর্বল

তামাম সাম্প্রদায়িক ছল
সংখ্যালঘু চোখের জল
মুছে দিতে ফিরবেই কভু
সাচ্চা মোজাদ্দেদি দেজা ভু

দুনিয়ার যে যে জনপদ
যুগ-যুগান্ত মেপে দেখছে
অনুদারতার সহবত
তারা জানে কেমনে মহৎ
মানুষ ঠেকেই সব শেখে
অসির মুখে দাঁড়ায় কারা
মসির ওপর আস্থা রেখে

যদিও এ যুগের যা দিন
মতপ্রকাশে রাখতে হবে
কবিরও মাজায় মেশিন

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

***
স্রষ্টার তরফে
বীর্যের হরফে
লেখে সোবাহান
মোল্লারা মহান
আর রাষ্ট্রধর্ম
ধর্ষকের চর্ম
মোটা করে খুব
─প্রতিবাদী চুপ
ভাবছে কি লাভ
করে ঘেউ ঘেউ
লাগে যদি ফেউ
─ও হিন্দুর বউ
আমার কী কেউ
মেরে থাকি ঝিম
আমি মুসলিম
সাচ্চা নাগরিক
সাংবিধানিক
সরকার জানে
কি ঠিক বেঠিক

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

***
যদি এক রাতে
দেখ অপঘাতে
মরে পড়ে আছি
খুব কাছাকাছি
পরিচিত কায়া
দেখে বড় ঠেকে
দেখিও না মায়া
ছায়ারও আগে
সরে যেও তুমি
জেনে নিও আমি
বলেছি নিশ্চিত
যে আমার খুনী
সে মূলত ছিলো
আত্মহত্যাকারী
গণিতের বীজ
নিয়ে ঘোরা কোনো
সন্দেহপ্রবণ
আগোছালো গল্প
নিছকই অল্প
ছকে যা লিখেছে
দিল্লি-পেন্টাগন
আর নির্যাতন
সইতে না পেরে
বোঝে যে অবুঝ
বাকিঙহাম বা
লাওহে মাফুজ
ক্ষমা করে সব
হত্যাকারীকেও
হতে পারে সে’ও
যে বেওয়ারিশ
তা’ও জেনে নিও

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)


***
─স্মরণে কৈবর্ত বিদ্রোহ

নিশ্চিত অনার্য আমি আদি কৈবর্তের ছেলে
সহস্র জনমে ছিলেম - মিঠে জলের জেলে
বার বার ফিরেছি বঙগে, ফিরিয়েছে মোহ
- মননে অনিবার্য আজও বরেন্দ্রী বিদ্রোহ।

অহিঙস ধর্মের নামে ক্ষিপ্ত সহিঙসতা-
রুখেছিলো যে কৌশলে এই নদীমাতৃকতা
যুগ-যুগান্তর ধরে যাচ্ছিলাম লিখে তারে
সেই অপরাধেই খুন হয়েছি বারে বারে।

গায়ের রঙটা কালো, গাই স্রোতস্বিনী সুরে
মোর রক্তে কত প্রাণ জানে পাল অন্তুপুরে।

মনে পরে সেবার - ছিলেম গঙ্গার উত্তরে
স্বর্ণকলসে বশীভূত লোভাতুর স্বীয়জাত
কী জলদি মিলিয়ে রামপালের হাতে হাত
প্রকাশ্যেই মদদ দিয়েছে আমার হত্যারে।

আরো কতবার মরেছি স্বজাতি সূত্রে ইস!
কখনো পলাশী, কখনো বা ধানমণ্ডি বত্রিশ
তবু ফিরেছি ফের কূটরুধির করতে হিম
আমি দিব্য, আমিই সেই রুদোকপুত্র ভীম।

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

১৪ মার্চ ২০১৭

নতুন তিনটি কবিতা

সাঙ্গুস্নান

বেদাগ বিবাগ

সব কথা থেমে গেলে বোতলের তলানিতে জমে থাকা মদ তূল্য সূত্রের ফসিল গলে ফিরে যায় দিনগুলো অতীতের চোরা পথে ফেলে আসা মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ যে বাঁকে, তামাম মায়ার বোঝা কাঁধে লয়ে সেখানে গিয়েছিলাম বোধকরি দেড় দশক আগে; নিজেরে দিয়ে বলি খুশী করতে ঠিক কাকে তা মনে পড়ছে না। [১৩ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

অপ্রমাদ
বীতনিদ্র প্রতীতির জলে
লিখে রাখে অবিমৃষ্য মন
‘বিরহের রাত ঘন হলে
কমে যায় ঘুমের ওজন’
[১২ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

নির্বেদ
ফাগুনের মধ্য দুপুরে চৈত্রের ঊষর মাঠের মতো খা খা করে ওঠে বুক, সুবিপুল খর জলরাশি মাঝে মিঠাপানিহীন ষোল রাত কাটানো হালভাঙা একলা মাঝির সমান ক্ষয়িত মনে কোনো কথা ফোটে না; পুত্রের আঘাতে নিহত পিতার গ্লানিতূল্য মানবিক কলুষতা জমছে জাগ্রত নৈরাশ্যের বেগতিক প্রার্থনায়। [১৪ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

* পড়ুন আরো দুটি লেখা
ভীমরতি / সৈয়দুন্নেছার সন্ধ্যা

১১ মার্চ ২০১৭

নতুন দুইটি কবিতা

ভীমরতি
সোনা রোদে পোড়া পৌঢ়া
আউশের সুবাস জড়িয়ে
ক্ষেতের শিথানে শোয়া
নদীমুখো মেঠো আল ধরে
- ছোটা শৈশবের
জমিনে সূচিত সব সাধ
আহ্লাদ হয়ে ঝুলছে।

১০ মার্চ ২০১৭
পল্লবী, ঢাকা।

সৈয়দুন্নেছার সন্ধ্যা
অদূরের প্রেমহার খালে জোয়ারের অপেক্ষায় থাকা নাইওরী নৌকাসম অলসতা ভর করা সন্ধ্যাগুলো যখন শতবর্ষী তেঁতুল গাছের ঘন ছায়ার মতো গাঢ় করে তোলে অতীতের অবয়ব, ঠিক তখন-ই উত্তরমুখী মাস্তুলে দাঁড়িয়ে কলা-বাড়ির সাঁকোর তল দিয়ে চাচৈরের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় বহু বর্ষ পূর্বে প্রয়াত এক বৃদ্ধা সৈয়দজাদীর ততোধিক পুরানো প্রতীক্ষা; তথা শরীফ বাড়ির সুন্দরী বালিকা বধূর অপেক্ষাক্রান্ত হিজলরঙা সায়াহ্নের দৃশ্যাবলী।

১০ মার্চ ২০১৭
পল্লবী, ঢাকা।

১৫ এপ্রিল ২০১৫

ঘুমঘোরে কথোপকথন

২০১৩’র ফেব্রুয়ারিতে শাহরিয়ার শাওনের তোলা ছবি
ঘুমঘোর~কবিতার কাফে মূলত একটি ফেসবুক গ্রুপ, যাদের চর্চা কবি ও কবিতা নিয়ে । বিগত একুশে বইমেলা চলাকালে এই গ্রুপের এক বিশেষ আয়োজনের অংশ হিসেবে নিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলাপ হয়েছিলো কবি শাহ মাইদুল ইসলাম -এর সাথে।  তিনি গ্রুপটির এডমিনদের একজন। অন্যান্য এডমিনরা হলেন সৌরভ পথবাসী, শাফিনূর শাফিন ও ইয়াসীন ফিদা হোসেন।  তাদের সেই আয়োজন এই ব্লগের পাঠকদের জন্য পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
কবি ঈয়ন এবং তাঁর 'ভাবনাংশ' নিয়ে ঘুমঘোরের আজকের আয়োজন। 'ভাবনাংশ' প্রকাশিত হয়েছে 'কাদাথোঁচা' থেকে আর প্রচ্ছদ নামাঙ্কনে সাইদ র’মান। লিটলম্যাগ চত্বরের প্রান্তস্বর -এর স্টলে রয়েছে বইটি। চার ফর্মার এ গ্রন্থের দাম রাখা হয়েছে একশ ত্রিশ টাকা। বইমেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাবে মাত্র একশ টাকায়। কবি ঈয়নের সাক্ষাৎকার এবং তাঁর 'ভাবনাংশ' থেকে কিছু কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ।
ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : আমাদের আলোচনা শুরু হোক আপনার প্রকাশিতব্য বইটির শিরোনাম দিয়ে। কেনো এই কবিতাগ্রন্থের নাম নিলেন 'ভাবনাংশ'?
ঈয়ন : ১১.১১.১১ - শিরোনামে একটি পাণ্ডুলিপি সাজিয়েছিলাম ২০১০’র জুলাইয়ে। ২০১১ সালের ১১ নভেম্বরে ওই নামেই প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু তা আর হয়নি। নিজস্ব সময়ের অভাবে পাণ্ডুলিপি সম্পাদনাতেই কেটে গেছে পাঁচটি বছর। সম্পাদনা করতে গিয়েই ২০১২ সালে ‘ভাবনাংশ’ –নামটি মাথায় আসে। এটি মূলত নিজেরই আরেকটি সিরিজের শিরোনাম দ্বারা প্র্রভাবিত। সাত-আট বছর আগে ‘দ্বান্দিক ভাবনা বিষয়ক আজাইরা প্যাঁচাল’ নামে ওই সিরিজটি লেখা শুরু করেছিলাম। এই গ্রন্থে অবশ্য ওই সিরিজের কোনো কবিতা নেই।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : এই বইয়ের কবিতাগুলো মূল কী কী বিষয়কে কেন্দ্র করে সাজিয়েছেন। যেমন জীবনানন্দের কবিতায় ফিরে ফিরে মৃত্যুচেতনা আসে, ওয়ার্ডসোয়ার্থের কবিতায় আসে স্মৃতি ও প্রকৃতি। আপনি কোন কোন বিষয়ের কাছে ফিরে যান?
ঈয়ন : পুরাই ককটেল। মানুষ, সময়, সম্পর্ক, প্রকৃতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে সেক্স, ভায়োলেন্স- এমনকি আইটেম সঙও আছে এ গ্রন্থে। তবে হ্যাঁ, বার বার ফিরে এসেছি নিজের, তথা মানুষেরই কাছে।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : একটা নতুন কবিতার সন্ধান আপনি কীভাবে করেন? ছন্দ, প্রসোডিক্যাল এলেমেন্ট, ফর্ম ইত্যাদি ছাড়া আর কোনো অনুষঙ্গকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন কি? কখন মনে হয় একটি কবিতার সৃষ্টি পূরণ হয়েছে, এতে আর হাত দেবার নেই?
ঈয়ন : নতুন কবিতা সন্ধান করি না আর। এক সময় করতাম হয়ত। দিনভর কবিতা লেখার বাতিক ছিলো যখন। তখন ছন্দ, ফর্মসহ তাবৎ অনুষঙ্গকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হত। কিন্তু এখন আরোপিত কিছুই আর ভালো লাগে না। তাই কবিতা লেখার জন্য কোনো কিছুকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণও মনে হয় না। শুধু ভালোবাসি শব্দ, ছন্দের ঘোর মগ্নতা। তাতেই ডুবে থাকি। দৈনন্দিন ভাবনার পরম্পরাই এখন কবিতা হয়ে ওঠে। কখনো তা লেখা হয়, কখনো হয় না। তবে যেগুলো লেখা হয়, সেগুলো প্রকাশিত হওয়ার আগ মুহুর্ত অবধি সম্পাদনা করি। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কবিতাগুলো তামাম পূর্ণতা নিয়েই হাজির হয়। তবুও তা পাঠকের উদ্দেশ্যে প্রকাশের আগে সম্পাদনার টেবিলে ফালানো উচিত বলেই আমি মনে করি।

গ্রুপ পোস্টের স্ক্রীনসট

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে :
একজন কবির কখন তাঁর কবিতা গ্রন্থাকারে প্রকাশে উদযোগী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? অন্যভাবে বললে কবিতাগ্রন্থ প্রকাশে কেমন সময় নেয়া দরকার এবং কেন?
ঈয়ন : কবি ভেদে কবিতা লেখার উদ্দেশ্যই আলাদা। তাই আলাদা প্রকাশের তাড়নাও। আসলে কোন পাণ্ডুলিপি কখন প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে লেখা হচ্ছে তা কবি নিজেই ভালো জানেন। তবে প্রত্যেক কবির এটুকু অন্তত মনে রাখা উচিত – প্রকাশিতব্য গ্রন্থটি তার কাব্যচিন্তা, দর্শন ও প্রবণতার দলিল। তাই ওই যে বললাম, কবিতাগুলো পাঠকের উদ্দেশ্যে প্রকাশের আগে অবশ্যই সম্পাদনার টেবিলে বসুন। নিজের প্রতিটি কবিতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ুন। বিভিন্ন বয়স, শ্রেণী ও সময়ের পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েও কয়েকবার পড়া যেতে পারে। অর্থাৎ নিজের লেখার প্রথম বিচার নিজেই করুন। এরপর তা পাঠকের কাছে পাঠান।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : কবিতা কতটুকু কবির, কতটা পাঠকের? কোনো কোনো কবি বলে থাকেন লিখে ফেলার পর তাঁরা কবিতাটির দিকে ফিরেও তাকান না আর! এভাবে কি পাঠকের জন্য ছুঁড়ে ফেলা হয়?
ঈয়ন : পাঠকের উদ্দেশ্যে প্রকাশের আগ মুহুর্ত অবধি প্রতিটি কবিতা একান্তই কবির। কিন্তু প্রকাশের পর তা পাঠকের। আমার অমুক, আমার তমুক – জাতীয় যে আমিত্ব নিয়ে মানুষ ঘুরে বেড়ায়, তাকে হত্যা করে তামাম নিজস্বতাকে সার্বজনীন করার চেষ্টাই করে যায় কবিরা। আর সেই চেষ্টায় জন্ম নেয় কবিতা। যা কখনো ছুঁড়ে ফেলা যায় না। কারণ প্রকৃত পাঠক প্রত্যেক কবির সবচে আপন। তারা হতে পারে আশেপাশের বা দূরের, এখনকার বা আগামীর।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : আপনার কবিতায় কারো কবিতার কিংবা কোন কবির বা তত্ত্বের প্রভাব আছে বলে কি আপনি মনে করেন?
ঈয়ন : আশৈশব ‘মানুষ ও গ্রন্থ – দুটোই যে পাঠ্য’ ছিলো। তাই চিন্তায় ও প্রকাশে বিভিন্ন মানুষ ও গ্রন্থের প্রভাব অনিবারয। বাংলাদেশের সংবিধান থেকে আল-কোরআন, ডারউইন থেকে ভগবান- সবই প্রভাবিত করেছে আমায়। অতএব কাব্যচর্চার ক্ষেত্রেও আমার যে ভাষাভঙ্গী দাঁড়িয়েছে তা নিশ্চয়ই প্রভাবমুক্ত নয়। তবে কারো মতো করে কবিতা লেখার চেষ্টাও করি নাই কখনো। আবার খুব সচেতনভাবে নিজস্বতা আরোপেরও চেষ্টা করা হয় নাই। বাকিটা পাঠক, তাত্ত্বিকরাই ভালো বুঝবেন – বলতে পারবেন।

শাহ মাইদুল ইসলাম
ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : ছোট ছোট পংক্তি ও ছন্দিত তাল লয়ে লিখিত আপনার কবিতাগুলো বর্তমান স্রোতে থেকে অনেকটা ভিন্ন মাধুর্যময় এক আঙ্গিকের চর্চা। আঙ্গিকের এই নিজস্বতা নিয়ে আমাদের কিছু বলুন।
ঈয়ন : আগেই বলেছি, কবিতায় খুব সচেতনভাবে নিজস্বতা আরোপের চেষ্টা নেই আমার। তবে হ্যাঁ, এখন লেখার ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততাকে গুরুত্ব দেই আমি, স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজি। হয়ত এ কারণেই ইদানীংকার লেখায় সহজিয়া ভাষা, ছন্দের ব্যবহার বেড়েছে; কমেছে উপমা ও রূপকের ব্যবহার। আসলে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না আর। এখন চেষ্টা করছি সহজে বলার। যাতে একজন নিরক্ষর মানুষও কোনো লেখা শুনলে বুঝতে পারেন, কি বলতে চেয়েছি। আসলে কবিতাকে সাধারণের কাছে ফেরানোর তাগিদ অনুভব করছি খুব। এই মাটি ও মানুষের সাথে কবিতার সম্পর্ক কিন্তু আজকের নয়, বহু পুরানো। এক সময় ছন্দে ছন্দে কথা বলা ছিলো বাঙালের স্বাভাবিক প্রবণতা। পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শিক্ষা বা পাশ্চত্যের প্রভাব – বাংলার সাহিত্যকে একদিকে সমৃদ্ধ করেছে, অন্যদিকে করেছে বিভেদাক্রান্ত। অশিক্ষিত কবিয়ালদের সহজবোধ্য দেশজ ঢঙ বা ছন্দের চেয়ে শিক্ষিত মহাকবিদের গণবিচ্ছিন্ন দুর্বোধ্য উপমার সামাজিক কদর বাড়িয়েছে পশ্চিমা চেতনা। কিন্তু আমার মনে হয়, এই ‘কলোনিয়াল ট্রমা’ কাটিয়ে ওঠার সময় এসে গেছে। ফের মাটি ও মানুষের কাছেই ফিরতে হবে কবি ও কবিতাকে।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : “...আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ / তাড়া করে ফিরছে / বিতৃষ্ণা মিলছে / ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।” - এই যে জন্মানোর ক্রোধ বাড়ছে, এর থেকে কী পরিত্রাণ হয়, না হয় যদি, তাহলে কী চাইছি আমরা?
ঈয়ন : আমরা হয়ত পরিত্রাণের সেই উপায়ই হাঁতড়ে বেড়াই। কেউ খুঁজে পাই, কেউ পাই না।

'ভাবনাংশ' থেকে কিছু কবিতা

জ্বলে মা ─ পুড়ি আমরা
ক্ষমতার মমতায়
পাশবিক প্রতিবাদ
সন্ত্রাসের সমতায়
দগ্ধতার আর্তনাদ
কার কি’বা আসে যায়
কারা তারা কোন দায়
চাপানোর ব্যস্ততায়
জ্বালায় সে দাবানল
জ্বলে মায়ের আঁচল
তব নিরীহ বাঙাল
যে স্বভাব ভীরুতায়
লাশ নিয়ে রাজনীতি
নীরবেই সয়ে যায়

সে ভয় আসল খুনী
গনহত্যায় যে গুণী
হয় নির্বিঘ্নে বর্বাদ
_________

বে-ঈমান

এক এবং
অদ্বিতীয়
আপনার
কীর্তি ম্লান
করে যায়
এমন কে
এ ধরার
কোন মর্মে
লুকায়িত
রয়েছে যে
অস্বীকার
করবেইে
এ অস্তিত্ব...

কারই বা
ঈমানে যে
আজ নেই
সে সম্মান;
যা সবাই
আপনাকে
দিয়ে যাচ্ছে
যুগ থেকে
যুগান্তর
ধর্ম থেকে
ধর্মান্তরে

কে’বা করে
অস্বীকার
আপনার
অবদান

অসুর বা
লুসিফর
যে রূপেই
ফরমান
লাভ ইউ,
হে মহান
শয়তান।
_________

ইন্দ্র কাকুর মন্দা বচন
─ কবি মন্দাক্রান্তা সেন’কে

ওগো ও মামণি
সামলিয়ে রাখো
ও অঘ্রাত যোনি
কাতর নয়নে
চেয়ো না এ ক্ষণে
ভিজে যাবে সব
তোমারো অজ্ঞাতে
ঘুমাও বালিকা
স্তনের লতিকা
জাগায়ো না আর
সহজ সরলে
যদি যায় বলা
কেন শুধু তবে
করো ছলাকলা
কামাতুর কালে
অধর ও ধরে
কত কী যে চলে
কে’বা কয় কারে

যেদিন সজোড়ে
সিঁড়ির আড়ালে
ধরেছো জড়ায়ে
বুঝিনি প্রথমে
দিগ্বিদিক কে সে
ঝড়োশ্বাস তোলা
সাবধানী চুমো
নিয়েছো আঁধারে
চেটেপুটে লুটে
আলোতে অবাক
হয়েও নির্বাক

থাকতে হয়েছে
পারিনি বলতে
তোমার মা’ও যে
ওই সিঁড়ি ঘরে
বহু দিনে-রাতে
একই বিছের
কামড় খেয়েছে

বোঝো এই হাল
কি করি যে বাল
হয় নাই কাটা
হায় কত কাল
আর জ্বলে নাই
অপরাধ বোধ
কারণ তোমার
এ কাকু আসলে
পুরাই বাঞ্চোত

ধুরও বালিকা
ঘুমাও ঝটিকা
ভুলে যাও দ্রুত
অসম প্রেমের
সুখের সমতা
_________

নাগা

মগ্নতার কোন স্তরে পৌঁছে গেলে
অতটা নিশ্চিন্তে ছোটা যায়, তা’ই
বুঝতে কবেই যেন নাগা সন্ন্যাসীর
বেশে রাজ নগরের রাজপথ থেকে
শুরু হয় বর্ণিল নির্বাক তীর্থযাত্রা
_________

ধসে বশ

সময় ও শরীরের বন্দীত্বের ক্ষতে
বাড়ে ফরমায়েশি আর হিংসুটে যশ
রতিক্লান্ত অবসন্ন শিশ্নেরও মতো
তৃপ্ত লালসায় জমে বোধেরই ধস
তবু ভাবনার ঋণে সুখের দুর্বৃত্ত
সস্তা তারিফের বাণিজ্যে রয়েছে বশ
_________

বেজন্মা বোধ বা জন্মানোর ক্রোধ

ক্ষীণ মৌনতার স্থবিরতায় অস্থির
জৈবিকতার অদৃষ্ট অতৃপ্তি আর
প্রজাপতির অপেক্ষায় গোলাপেরা
মেঘগন্ধা অবসাদে স্থবির।

আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ
তাড়া করে ফিরছে
বিতৃষ্ণা মিলছে
ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।

সুপ্রীম কোর্টের খোদারাও
দল বেঁধে বিব্রত হয় দেখে
বেকারত্বের ফ্রেমে বন্দী প্রেমে
সব কটাক্ষ মেনে নেই আমরাও।

তবু...

আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ
তাড়া করে ফিরছে
বিতৃষ্ণা মিলছে
ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।

০৬ এপ্রিল ২০১৫

অলস দুপুরে আলাপ...

“কবিতা লিখতে কারো কাগজ-কলমই দরকার হয়, কারো স্মার্টফোনই যথেষ্ট:
ঈয়নের সাথে অনলাইন আলাপ” - এই ছিলো শিরোনাম।

শৈশব থেকেই কাব্যচর্চা ভালো লাগে। টুকটাক লেখালেখির শুরুও তখন। হয়ত কোনো শিশুতোষ বাসনাও ছিলো মনে। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে লেখার কারণ ও ধরণ বদলেছে বার বার। বস্তুত বহু বছর আমি পদ্য লেখার কোনো কারণই খুঁজে পাইনি। শুধু মনে হত - ভালো লাগছে, তাই  লিখছি। অমনই এক সময়ে এসব নিয়ে আলাপ হয়েছিলো দুপুর’দা, মানে দুপুর মিত্রের সাথে, এ প্রায় দু’বছর আগে। ২০১৩ সেপ্টেম্বরে অলস দুপুর ব্লগে প্রকাশিত হয় সে আলাপ। সেখান থেকেই টুকে এনে  press & pleasure - pap পাঠকদের জন্য এটি পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?
ঈয়ন: এ প্রশ্নটা জ্বালিয়েছে অজস্রবার, আর প্রতিবারই খুঁজে পাইনি কোন সদুত্তর। অবশেষে মেনে নিয়েছি হুদাই এই লেখা-লিখি বা বিতৃঞ্চাচ্ছন্ন ভালবাসার আশ্রয় এ ঘোর মগ্নতা। তাই যেতে যেতেই ফিরে আসতে হয় ছন্দ-শব্দের কাঁটা-কুঁটি খেলায়। কবিতার জন্য কবিতারা জন্মাক, সব কথক না হোক কবি আর পৃথিবী না হোক কাব্যময়; তবু কবিতারা জন্মাক। কবিতা দিয়ে দেশ উদ্ধারে নামিনি, চাইনি কোন বিপ্লব ঘটাতে। ডান বা বামপন্থি মতবাদে ভারাক্রান্ত বাহবা কুড়াঁনোর ইচ্ছেরা থাক স্বেচ্ছা নির্বাসনে। তবুও লিখে যাই, আজও বারে বার ফিরে যাই আপনার ঘোরে- আপন করে লুটে নিতে সব সুখ; কবি-জ্বরে জ্বরাগ্রস্ত মসী মুখ ডোবায় বারুদের শরবতে। অবশেষে স্বার্থপরের মত শুধু নিজেরই জন্য লিখে যাই।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?
ঈয়ন: এটা কবি ভেদে ভিন্ন। যেমন কারো কাগজ-কলমই দরকার হয়, কারো স্মার্টফোনই যথেষ্ট।

Dupur Mitra, is a poet and fiction writer
from Bangladesh. Studied PhD from
Jahangirnagar University, Dhaka in
biodiversity and forest management. His
published two books in Bangla, named
44 Kobeta (44 poetry) and
Doshovuza (collection of short stories).
দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন? সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?
ঈয়ন: সমসাময়িক যাদের কবিতা পড়া হয়েছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো কবিতা ভালো লেগেছে। আবার কোনো কোনোটা খারাপ লেগেছে। এটা মূলত পাঠকালীন সময়ের মানুসিকাবস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন। এই মুহুর্তে একটি লাইন আমাকে যে ইমেজ দেবে, একটু পরই তা ভিন্নতর হতে বাধ্য। এ কারণে একই কবিতা কখনো খুবই ভালো, আবার কখনো খুবই ফালতু লেগেছে।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
ঈয়ন: মূল্যায়নের স্বরূপই বোঝা হয়নি আজও।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?
ঈয়ন: কবি থেকে কবিতে যে ফারাক, এখানেও তাই।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?
ঈয়ন: শুধু ব্লগ কেনো, ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে নতুন যে কোনো কিছই সাহিত্যকে কিছু না কিছু দিচ্ছে। তবে তা বিশেষ কিছু হয়ে ওঠার বিষয়টি সময় ও ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?
ঈয়ন: লিটলম্যাগ বা ব্লগের গুরুত্বও সময় এবং ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন। গুরুত্বের মাপকাঠিও তো আর স্থির নয়।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
ঈয়ন: বোঝে নাই যে পর্যবেক্ষণ, আত্মমগ্ন ক্ষ্যাপাটের মন।

২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

আমার ‘ভাবনাংশ’

নামাঙ্কন : সাইদ র’মান
প্রথম বই প্রকাশের ঘটনায় যতটুকু উত্তেজিত বা আনন্দিত হওয়ার কথা ছিলো, মানে হবে বলে আশা করেছিলাম; ঠিক ততটা উত্তেজনা বা আনন্দ হচ্ছে না কেন জানি। এর জন্য কে দায়ী? সমকাল, না কোনো গুপ্তগ্লানি? ঠিক বুঝতে পারছি না।
গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিলো ২০১১’র নভেম্বরে। পাণ্ডুলিপির প্রথম খসড়া দাঁড়িয়েছিলো আগের বছর, মানে ২০১০’র জুলাইয়ে। কিন্তু এবার, মানে ২০১৫’তে এসে তা চূড়ান্ত এবং প্রকাশিত হয়েছে। পাওয়া যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।
মামার হাতে - অামার বই
কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। প্রেস থেকে সরাসরি লিটলম্যাগ চত্বরের প্রান্তস্বর -এর স্টলে এসেছে ‘ভা ব নাং শ’। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বইটির বিক্রি শুরু হয়েছে। চার ফর্মার এ গ্রন্থের দাম রাখা হয়েছে একশ ত্রিশ টাকা। মেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র একশ টাকায়।


হায়, কতটা অসহনশীল হয়ে উঠছি আমরা। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছ থেকে ক্রমশ দূরে সড়ে যাচ্ছি। বিচ্ছিন্নতা বোধ পিছু ছাড়ছে না কারো। তাবৎ অনুভূতিও ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। ভুলেছি হাসতে - কাঁদতে। নগর সভ্যতা যে হাসাতে আর কাঁদাতেই শেখাচ্ছে খুব। পুঁজির রাজ্যে মানুষ আর মানুষ নয়, ভাঁড় বা ভয়ংকর হতে চায়।

আহা, বিবর্তন। এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে এই যে গ্রন্থ প্রকাশ, এ নেহাত কোনো চাতুর্যতা নয়ত - এমনটা ভাবতেও কী মানা আছে কোনো। যদিও এখন জেনে গেছি কেন লেখি। এই বইতে তার কিছু পরোক্ষ ব্যাখ্যাও পাওয়া যাবে হয়ত। তবে নতুন পাঠকদের আগেই বলে রাখি - আমি কিন্তু ভাই ‘কবি নই, তবু শব্দ-ছন্দ বুনি’..।

ভা ব নাং শ - এর সূচি
অভিজিৎ দাস’কে খুব বেশী মনে পড়ছে ইদানীং। বিগত বছরগুলোয় মেলায় প্রকাশিত চারটি বই - কামরাঙা কেমন সবুজ, ভাঙা আয়নার প্রতিবিম্বগণ, মাটির চামচ মুখে এবং করপল্লবসঙ্গিনী - তিনি নিজ হাতেই দিয়েছিলেন আমায়। এর মধ্যে কোনটায় যেনো লিখেছিলেন - “প্রিয়বরেষু ঈয়ন’কে আদিগন্ত ভালোবাসা”। তাকে নিজের বই দেয়ার সময় কি লিখে দেবো, তা ভাবা হয়নি এখনো। তবে ভাবতে হবে। কারণ আশাকরি - খুব শিগগিরই দেখা হবে কবির সাথে।

>> অভিজিৎ দাস নিরুদ্দেশ, না গুম?

২০ অক্টোবর ২০১৪

পাপাত্মায় শুদ্ধতার গান

© avantgarde-metal.com
রচনাকালঃ জুন, ২০১১ (সম্ভবত)
পাপ না করলে; পাপবোধ কারো হয় না
পাপবোধ ছাড়া যে; শুদ্ধতা চেনা যায় না

পাপবোধ কারো হয় না; পাপ না করলে
শুদ্ধতা চেনা যায় না; পাপবোধ ছাড়া যে

শুদ্ধ হতে তাই; পাপী আগে হওয়া চাই
পাপী আগে হওয়া চাই; শুদ্ধ হতে তাই

পাপ, পাপ, খালি পাপ; পাপে পাপারণ্য
অবশেষে পাপবোধ জাগলেই তব ধন্য

পাপ যত করেছি অপরাধ বেড়েছে
অসুস্থ তাড়না সবই গিলে খেয়েছে
তবু পাপ করে যাই; হতে পাপীশ্বর
পাপ দেখে টলমল; শয়তানের ঘর

পাপ, পাপ, খালি পাপ; পাপে পাপারণ্য
অবশেষে পাপবোধ জাগলেই তব ধন্য

পাপী আগে হওয়া চাই; শুদ্ধ হতে তাই
শুদ্ধ হতে তাই; পাপী আগে হওয়া চাই

শুদ্ধতা চেনা যায় না; পাপবোধ ছাড়া যে
পাপবোধ কারো হয় না; পাপ না করলে

পাপবোধ ছাড়া যে; শুদ্ধতা চেনা যায় না
পাপ না করলে; পাপবোধ কারো হয় না

অস্থিরতাই স্থির করে দেয়; স্থির করে দেয় অস্থিরতাই
স্থির করে দেয় অস্থিরতাই; অস্থিরতাই স্থির করে দেয়
অস্থিরতাই স্থির করে দেয়; স্থির করে দেয় অস্থিরতাই
স্থির করে দেয় অস্থিরতাই; অস্থিরতাই স্থির করে দেয়
অস্থিরতাই স্থির করে দেয়; স্থির করে দেয় অস্থিরতাই

দ্রষ্টব্য:
‘এ ধরায় শুধু কবিরাই নবীর ফিলিংস বুঝবার পারে’
- এ’ও সদ্য প্রসূত এক ওহী; জন্মেছে কবির কাছে।

‘Becoming-Corpus’ Includes Dance and an Art Installation
© www.nytimes.com

২১ মে ২০১৪

দিনলিপি | ১৬১২১১

‘দেশ বা দশের কথা ভেবে কিচ্ছু হবে না, নিজে বাঁচলেই বাপের নাম’ -এই একটি বাক্যই কি আমার রাষ্ট্রের আপামরের দর্শন বুঝাতে যথেষ্ট নয়? নাকি এ কথায়ও দ্বিমত জানাবেন কেউ?

২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বরেও আমরা আত্মপ্রচার ছাড়া আর কিইবা করি? এসব রাষ্ট্রীয় দিবসে যে দেশপ্রেম প্রদর্শিত হয়, আদতে কি তা ধারণ করি কেউ?

রাজনীতিবিদদের সমালোচনায় মুখে ফেনা তুলে ফেলা ‘কথিত’ সুশীল বা প্রগতিশীলদের মাঝে তো দূরের কথা, আম-জনতার মাঝেও কি আমরা কোনো দেশপ্রেমিকের দেখা পাই?


© eon's photographyKuakata Guest House
নিরীহপনাকে বাঙালের দুর্বলতা ভেবে
সেই পর্তুগীজ দস্যু থেকে শুরু করে
ওই পাকি-হায়েনারা যে বীজ এই
উর্বর ভূমিতে রোপণ করে গেছে;
তার জেরে শুধু অনাস্থাই বেড়েছে।
হয়ত এ কারণেই আজও নিশ্চিন্তে
স্বাধীন পতাকা দিয়ে মুখ বেঁধেই
তোর-মোর মাকে চুদে যায় ওরা
বাণিজ্যের কনডম লাগিয়ে, আর
আমরা দেখেও দেখি না তা। তাই
জন্মের ৪০ বছর পরবর্তী তারুণ্য
নিয়েও কতটুকুই বা আশাবাদী
হতে পারে এই দেশ? একটুও কি?

০১ মে ২০১৪

দিনলিপি | ০১০৫০৯


বহুজাতিক কোম্পানীর মোড়কে মোড়ানো কনসার্টের শ্রমিক দিবসকে পাশ কাটিয়ে প্রণয় উৎসবের তাড়াহুড়োয় এক যান্ত্রিক যাত্রা ‘ফুলার রোড টু সানরাইজ’। এরপর উৎসবকেও পাশ কাটিয়ে হাইরাইজ বাতাসের আমন্ত্রণে সমর্পিত মনের অতৃপ্তি ঘোচে না বা চাহিদা মেটে না। অবশেষে মনে হয় - জাপটে ধরা শামুক স্মৃতি আর সুখ শীতল ফানুস শৈশব জীবন বা সময়ের ভুলেও আজ এক চিলতে আশ্রয়।

পরিশুস্ক পরিশোধে রূপান্তরিত
আদুরে সোহাগ লুটে নিতে গিয়ে
কখনো কি কারো মনে প্রশ্ন জাগেনি-
“প্রেম কি আদৌ পরিশোধ্য? বা ভালবাসার
পরীক্ষক আর পরিমাপক কে বা কি হতে পারে?”
বাধিত প্রেমের বাতুলতার কবলে তাই নিরবিচ্ছিন্ন অসুখ।

তবু সেই শিকারী চোখের মায়ায় সে বারে বার ফিরেছে ব্যবচ্ছেদের দেয়ালে। এক লাফে উঠে দাঁড়িয়েছে তার উপর; কেঁপে উঠেছে পাঁচ ইঞ্চি পুরু পুরো গাঁথুনি। দেয়ালের উপর বসেই দেখতে পেয়েছে মন্ট্রিলের সী-বিচ আর বেইলী রোডের দূরত্ব কতোটা কম। অথচ মাইগ্রেনের ব্যথায় কাতর শৈশবের টানে ওই দেয়াল ধরেই কাঁপতে কাঁপতে হেঁটেছিলো ফেলে আসা চন্দ্রদ্বীপের দিকে। ট্রেনের ভেঁপুরা লঞ্চের সাইরেন সেজে দাঁড়িয়েছিল কীর্তনখোলার পলিতে। অবশেষে অবসন্ন অবশিষ্টতার মঞ্চে কবি জ্বরে জ্বরাগ্রস্থ মন ভুতগ্রস্থ সংলাপ আওরে প্রলাপের মতো লিখেছিলো-
কেমনও আঁধার করেছে ব্যাকুল ক্রোধ
বিস্মিত মননে শহুরে রোদের চুম,
ভাবার আগেই ফিরেছে ভোরের বোধ
বিষাদ নয়নে ফেরারী রাতের ঘুম।
এরপর ছন্নছাড়া ক্লান্ত প্রতিশোধ
কোলাহলের ভীড়েও করেছে নিস্তব্ধ,
বিক্ষুব্ধ ক্ষুধাতেই একাকীত্ব নির্বোধ
তবুও অট্টহাসিতে কাটানো নৈঃশব্দ...

পরিণামে নির্ভেজাল পাথুরে সংলাপে
কথামালা সাজানোর অভিপ্রায়ে মত্ত
ব্যস্ততারা ক্রমাগত মগ্ন নিরুত্তাপে
আর ঘুম ঘোরে জেনেছিল সব সত্য।
এমনেই একা জন্মেছিল একাকীত্ব
অথচ বৈকালিক বোধে লীন সতীত্ব...

অবশেষে সব সীমায়িত করা ঘুম, ঘুমে গুম প্রহর আর অচেনা জনপদের মত অপ্রকাশিত আস্থা গভীর - অগভীরতার খাঁজে। তবুও দ্বান্দ্বিক দৃষ্টি-বদ্ধ সেই ঘুম ঘুমিয়ে ছিলো চিরনিদ্রা বা অন্তিম ঘুমের অপেক্ষায়।

২৪ এপ্রিল ২০১৪

শবাচ্ছন্ন রাত

ছবিটি সংগ্রহিত
বাড়ে শবাচ্ছন্ন রাত
সে বিষাদে কাঁদে চাঁদ
ভাঙা ইমারতে চাপা
গোঙানিময় বাতাসে
যমেরও প্রতিক্ষায়
কারা বাড়ায় দর্শক
অনুমেয় হয় চোখ
শুধু মৃত্যু গননায়
কি উন্নতি উত্তেজনা
সরাসরি সম্প্রচারে
অন্তিম জোৎন্সায় কাঁপা
মুমুর্ষ সাক্ষাতকারে
খুন হয় খুন বয়
ফের এই বাঙলায়
আর শুনি ঘোষণায়
ঘটা করে হবে শোক
খুনীরাই আয়োজক
মেটাবে খুনের দায়
কালো ব্যাজ পতাকায়

রচনাকাল :২৪ এপ্রিল, ২০১৩
কাব্যগ্রন্থভা ব নাং শ (২০১৫)
newsreel [সংবাদচিত্র]