Powered By Blogger
রাষ্ট্র লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রাষ্ট্র লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৪ নভেম্বর ২০১৭

রাষ্ট্র তাকে ভয় না পেলে আশ্চর্য হতাম

ছবিটি ফেসবুক থেকে নেয়া 
সরকারি নথি সেলিম রেজা নিউটনকে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’ বলায় মোটেও অবাক হইনি। বরঙ মনে হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে তার বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি কানেকসন’ -এর অভিযোগও উঠতে পারে। একজন নিউটনকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ভাবা আসলে নতুন কিছু নয়। যে কোনো তাত্ত্বিককে সরকারের ‘বিপদজনক’ মনে হতেই পারে। এর আগে ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাক্যাম্প-স্থাপন ও সেনা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে রাষ্ট্রের রোষানলের শিকার হয়েছিলেন নিউটন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদী মৌন মিছিল করে জরুরি অবস্থা লঙ্ঘনের দায়ে সহকর্মীদের সাথে জেলও খেটেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক। তবে শঙ্কার কথা হচ্ছে ইদানীং এই রাষ্ট্রের, মানে বাংলাদেশের সরকার যদি কোনো নাগরিককে ভয় পায়, সে গুম হয়ে যায়। গত আড়াই মাসে সম্ভবত ১০ জন নিখোঁজ হয়েছেন শুধু রাজধানী থেকে। এর আগে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে একই পরিণতির শিকার হয়েছেন ৪২ জন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব মতে বাংলাদেশে গত বছর মোট ৯০ জন মানুষ ‘গুম’ হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র বা প্রকাশক। 

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ১০ নভেম্বর ‘রাবি ও রুয়েটে ইয়াবা ব্যবসায় ৪৪ শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মচারী’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘রাবি ঘিরে গড়ে ওঠা ইয়াবা ব্যবসা চক্রের ৩৪ জনকে শনাক্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখা, যা প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে ৭ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের (আরএমপি) হাতে পৌঁছেছে।’ তবে ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাদকাসক্ত চিহ্নিত করে কোনো তালিকা তৈরী করেনি। কারা করেছে তা’ও তিনি জানেন না। ওই তালিকাতেই রয়েছে সেলিম রেজা নিউটনের নাম। আরো ছয় শিক্ষককে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিউটনকে চিনি। জানি তার সহজিয়া প্রেমিক সত্ত্বার গান, কবিতা আর স্বাধীনচেতা ভাবনার গতিধারা। বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো তাকে ভয় না পেলেই হয়ত আশ্চর্য হতাম।
তথাপি রাষ্ট্র পরিচালকদের কাছে এ লেখার মাধ্যমে অনুরোধ জানাচ্ছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখায় কে বা কারা আছেন বা তারা কার নির্দেশে এই প্রতিবেদন তৈরী করে প্রধানমন্ত্রীল কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন তা একটু খতিয়ে দেখুন। নতুবা এ ঘটনা মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত করবে।তাছাড়া প্রতিবেদনটি কোনো যাচাইবাছাই না করেই রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান যখন বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে এটি গভীর পরিতাপের বিষয়, খুবই উদ্বেগজনক।কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’ তখন মনে আরো নানা প্রশ্ন জাগে। ভিসির এই অতি উৎসাহের উৎসও খুঁজে বের করা দরকার।
ইত্তেফাকের সেই প্রতিবেদন
পাঠকদের অনেকে হয়ত খেয়াল করেছেন ‘এটুআই প্রকল্পের একাধিক ব্যক্তির জঙ্গি কানেকশন : শিক্ষক মুবাশ্বারের নিখোঁজ রহস্যের নেপথ্যে’ - শিরোনামে ১১ নভেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক ইত্তেফাক। পরে তারা অনলাইন সংস্করণ থেকে সেটি তুলে নিলেও ততক্ষণে তা সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ভাইরাল হয়ে যায়। ওই প্রতিবেদনে ইত্তেফাকের সাংবাদিক আবুল খায়ের দাবি করেন গোয়েন্দাদের কল্যাণে তিনি জানতে পেরেছেন মুবাশ্বারের সাথে জঙ্গি সংযোগ রয়েছে। এদিকে যুগান্তরের পর আরো অজস্র গণমাধ্যম ইয়াবা ব্যবসা চক্রের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। এখানে সংযুক্ত করে রাখি - গণমাধ্যমে গত আড়াই মাসে যে দশ জন লাপাত্তা হওয়ার খবর এসেছে তার মধ্যে গত ২৭ অক্টোবর থেকে হদিস নেই বাংলাদেশে জনতা পার্টি (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন ঘোষ ও তার সহকর্মি আশিষ ঘোষের। সাংবাদিক উৎপল দাস ১০ অক্টোবর এবং আরাফাত নামের এক যু্বক ৭ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ। এর আগে ২২ থেকে ২৭ আগস্টের মধ্যে নিখোঁজ হন চারজন। এরা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, ব্যবসায়ী ও বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায় এবং কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) গভীর রাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন খিলগাঁও থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৪৭১) করলে তার খবরটিও গণমাধ্যমে আসে।পরদিন করিম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার তানভীর ইয়াসিন করিমকে সাদাপোশাকের লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে। তারও খোঁজ মিলছে না। 

নিউটনের সাথে সর্বশেষ সাক্ষাত হয়েছিলো চলচ্চিত্র নির্মাতা
রাসেল আহমেদের মৃত্যুর ক’দিন পর, গত মে বা জুনে।
যারা নিউটনকে চেনেন না তাদের জন্য বলে রাখি, ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি রাবিতে শিক্ষকতা করছেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। আশির দশকে সামরিক-শাসন-বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন এবং বলশেভিক-বামপন্থার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ‘রাজু ভাস্কর্য’ খ্যাত শহীদ মঈন হোসেন রাজু সন্ত্রাসবিরোধী যে ছাত্রমিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন, সেই মিছিলের অন্যতম মূথ্য সংগঠক ছিলেন নিউটন। ইউনিয়ন ছাড়ার পর ১৯৯১ সালের শেষ দিকে ‘শিক্ষা সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে ঢাবি’র ‘সাইনে ডাই’ (অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ) প্রথার বিরুদ্ধে স্বাধীন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন । সেটাই ছিলো ঢাবি'তে শেষ 'সাইনে ডাই'। নিউটন সক্রিয় ছাত্ররাজনীতি ছেড়েছেন মূলত নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে। তবে ১৯৯৮ সাল অবধি জড়িত ছিলেন সিপিবি (কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ) -এর সাথে। রাজশাহী জেলা কমিটির সহ-সভাপতিও ছিলেন। এরই মাঝে তিনি বিস্তৃত করেছেন লেখালেখির ক্ষেত্র। সম্পাদনা করছেন মানুষ ও প্রকৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ মানুষসহ আরো অজস্র পত্রিকা।

পূর্ববর্তী পোস্ট : 

প্রশ্নবিদ্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা

১৬ জুন ২০১৬

দমনে দৃঢ় রাষ্ট্র কাঠামো

সরকারি দরকার না মানা নাগরিকরা মূলত ‘রাষ্ট্রীয় বখাটে’। আর এ সংজ্ঞা পৃথিবীর সকল দেশের জন্যই প্রযোজ্য বলা চলে। প্রত্যেক রাষ্ট্রই বখাটে দমনে সদা বদ্ধ পরিকর।  এই যেমন ধরুন, আমাদের দেশে তারহীন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের পরিচয় নিশ্চিতে সরকার নির্দেশিত আঙুলের ছাপ বা টিপসই সংগ্রহের অভিযানে অংশ নেননি যে নাগরিকরা; তারাও এখন ‘রাষ্ট্রীয় বখাটে’ হিসেবে চিহ্নিত। ইতোমধ্যে তাদের ‘সাইজ’ করাও হয়ে গেছে। এক রাতের মধ্যে কোমায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের কথাযন্ত্রগুলোর আড়াই কোটি হৃদয় (সিম)।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল, ৩১ মে দিবাগত রাতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বর্তমানে সারাদেশেই তোলপাড় চলছে। মূলধারা গণমাধ্যম ও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় বিভিন্ন মানুষের নানান মত প্রকাশিত হচ্ছে। বাদ দেই সে আলাপ।
আমাদের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, ‘প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতারক্ষার অধিকার থাকবে।’ তবে তা অবশ্যই ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ’ মেনে। অর্থাৎ কমপক্ষে চারটি অজুহাতে আপনার যোগাযোগ মাধ্যমের গোপনীয়তা খর্বের অধিকার বাংলাদেশ সরকারের আছে। আদতে ধরার তামাম রাষ্ট্রনীতি প্রাণের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
আদতে ধরার তামাম রাষ্ট্রনীতি প্রাণের স্বাধীনতার পরিপন্থী। তাদের পিতা – ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান’ মূলত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের ফাঁদে বন্দী। প্রাণীকূলের অন্য কোনো পশুপাখিকে তা তোয়াক্কাও করে না। তারাও অবশ্য পাত্তা দেয় না মেরুদণ্ড সোজা করে চলা দো পেয়ে জীবদের কোনো নিয়ম-কানুন। হয়ত ভয় পায় কিছুটা। কারণ মহাপ্রকৃতির সকল প্রাণই জানে, মানুষ নামক এ প্রাণীর চেয়ে হিংস্র কোনো জীব দুনিয়াতে অন্তত নেই। তার ওপরে এদের হিংস্রতা আবার ক্রমবর্ধমান।

অতীতে শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের আক্রোশে এরা নিজেদেরও বিলীন করেছে বহুবার। অন্যান্য প্রাণীদের জিনেও নিশ্চয়ই লেখা রয়েছে সেই নৃশংস ইতিহাস। বস্তুত মনুষ্যকূলের পোশাক ঢাকা শরীরের নাজুকতা, অন্তরের কঠোরতাকে আড়াল করতে পারে না। স্বভাবগত ঐতিহাসিকতার কারণেই তারা এমন। ব্যাতিক্রমও আছে। কারণ মানুষ বিচিত্রও বটে। বস্তুত মনুষ্যকূলের পোশাক ঢাকা শরীরের নাজুকতা, অন্তরের কঠোরতাকে আড়াল করতে পারে না।

মূল কথা হচ্ছে, নিজেকে নির্দিষ্ট সীমানায় ঘেরা একটি জনপদের মানুষ ভেবে দুনিয়াতে কেউ স্বাধীন ও মুক্তমনা হতে পারে বলে আমার অন্তত মনে হয় না। পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকই তা নন। প্রত্যেকেই নিয়ন্ত্রণাধীন। রাষ্ট্রগুলোর শাসক শ্রেণী আপনার, আমার নিয়ন্ত্রক। বাঙালের দেশে বসে এ বাস্তবতা বেশ প্রকটাকারেই টের পাচ্ছি আজ। তবে আশার কথা হচ্ছে দেশের রাষ্ট্রীয় বখাটেরা এখনো কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ন্ত্রিত সংযুক্তির জালে তারা আটকে আছেন, সম্ভবত ব্যবসায়িক কারণে।

গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ আবার তাদের এক বার্তাও পাঠিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে- ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল অনিবন্ধিত সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আপনার সংযোগ পুনরায় চালু করতে জিপি বায়োমেট্রিক পয়েন্টে চলে আসুন। চার্জ প্রযোজ্য নয়।’ ওদিকে সরকারি সংস্থার বরাত দিয়ে দেশের প্রভাবশালী একটি পত্রিকা বলছে – ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া সিম আবার চালু করতে নতুন সিম কেনার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। বর্তমানে বায়োমেট্রিক উপায়ে নতুন সিম কিনতে অপারেটরভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দাম রাখা হয়। এর মধ্যে সরকার সিমকর হিসেবে পায় ১০০ টাকা।’

এখানে বলে রাখি, বায়োমেট্রিক পরীক্ষায় অংশ না নেয়ায় আমিও এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত দুষ্ট নাগরিক, মুঠোফোন সংযোগ বিচ্যুত। ভুগছি আরো নানা শাস্তির শঙ্কায়। কারণ এটি এমনই এক জনপদ, যেখানে ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়ালও ভালো’ টাইপের কথাও প্রচলিত আছে।  বায়োমেট্রিক পরীক্ষায় অংশ না নেয়ায় আমিও এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত দুষ্ট নাগরিক, মুঠোফোন সংযোগ বিচ্যুত।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান’ করা হয়েছে ঠিকই; তবে তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত- অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে ‘আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ’ মেনে।
অর্থাৎ সাংবিধানিকভাবে এই রাষ্ট্র আমাদের চিন্তা আর বিবেকেরও নিয়ন্ত্রক। সংবিধানের একই অনুচ্ছেদ বলে শর্তসাপেক্ষে ‘প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের এবং ‘সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা’ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে রাখা হয়েছে বাধা-নিষেধ অমান্যকারী বা শর্তভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ। এই সুযোগের ফাঁক গলেই চিন্তা, বিবেক, ভাব ও কথা নিয়ন্ত্রণকারী তামাম নিয়ম-কানুন, আইন তৈরী হচ্ছে, বিরাজ করছে এ বঙ্গে। এই সুযোগের ফাঁক গলেই চিন্তা, বিবেক, ভাব ও কথা নিয়ন্ত্রণকারী তামাম নিয়ম-কানুন, আইন তৈরী হচ্ছে, বিরাজ করছে এ বঙ্গে।

সামান্য ইস্যুতে এত কিছু বলা ঠিক হচ্ছে না সম্ভবত। যদিও জানি কোনো কিছুই সামান্য নয়। সামান্যেই অসামান্য নিহিত রয়। তবে আজকাল কখন যে গায়ে কোন সিল লেগে যায়, তা বোঝা দায়। এই লেখা পড়েই না আবার কেউ বলে ওঠে – ‘ব্যাটা বিএনপি-জামায়াতের দালাল নয়ত’। হয় না, এমনও হয়’তো। দমনে পোক্ত হয় রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো।

প্রথম প্রকাশঃ ১ জুন, ২০১৬
গণমাধ্যমঃ নিউজনেক্সটবিডি ডটকম

২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

পুলিশ ছাড়া কেউ থাকবে না ...

লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড
‘বইমেলায় মানুষ নাই -
খালি পুলিশ আর পুলিশ’
- অমর একুশে বইমেলায় অবস্থানরত এক কবিবন্ধু মাত্রই বললেন, মুঠোফোনালাপে। তল্লাশীর অতিরিক্ততায় বিরক্ত অনেকে মেলায় না ঢুকেই চলে যাচ্ছেন বলেও তিনি দাবি করলেন। আরেক অনুজ সাংবাদিকের অভিমত, ‘লেখক হত্যা আর প্রকাশক গ্রেফতারের বইমেলা আজ দৃশ্যতই নিরাপত্তার খোলসে বন্দী।’
মূহুর্তে মনে পরে যায় গত সন্ধ্যায় পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের মুখে শোনা কথাগুলো। তিনি অত্যন্ত বিনয় নিয়ে আমাদের বলেছিলেন, ‘আপনারা চলে যান। একটু পরই পুরো এলাকা পুলিশে পুলিশারণ্য হয়ে যাবে। আজ এখানে পুলিশ ছাড়া কেউ থাকবে না।’ অথচ বছরের পর বছর ধরে প্রতিটি ২০ ফেব্রুয়ারির বা মহান একুশের রাত আমরা - সমমনা বন্ধুরা টিএসসি এবঙ আশেপাশের এলাকায় কাটিয়েছি। গান, আড্ডা, শ্লোগান আর মানুষের দৃপ্ত মুখর থেকেছে পুরো এলাকা। এমনকী সেটা পাকিস্তানি ভাবাদর্শের ডানমনা (বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন) সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেও। এরপর সকালে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে, সারাদিন মেলায় কাটিয়ে রাতে বাসায় ফিরেছি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি - সে সাধ একদমই মিইয়ে দিলো।
পুলিশের সাথে তর্ক করতে ইচ্ছে হলো না। কারণ জানি সে রাষ্ট্রীয় নির্দেশের দাস মাত্র। অর্থাৎ এখন রাষ্ট্রই চাচ্ছে না একুশের রাতটা আমরা এভাবে উদযাপন করি। জানি না রাষ্ট্রের পরিচালকরা ভুলে গিয়েছেন কী’না, একুশ কেবলই আনুষ্ঠানিকতার বিষয় না। এর সঙ্গেই আছে জড়িয়ে আছে এ জাতির, মানে বাঙালের জাতীয়তা বোধের চেতনা।
বাসায় ফিরতে ফিরতে খুব মনে পরছিলো - শৈশবে কাদামাটি বা ইট, কাঠ দিয়ে গড়া শহীদ মিনার, আলপনা আঁকা, ফুল চুরি, খালি পায়ে ছুটোছুটি - আরো কত কী। শুধু বার বার ভুলতে চেয়েছি, এখন এ দেশ চালাচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘অফিসিয়ালি’ নেতৃত্বদানকারী দলটিই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই দল আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন ভাবাদর্শের ‘পারপাস সার্ভ’ করছে তা সত্যি, একদমই ভাবতে চাইনি। কারণ আজকাল ভাবতেও ভয় লাগে।
newsreel [সংবাদচিত্র]