Powered By Blogger
বিশ্ববিদ্যালয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বিশ্ববিদ্যালয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৪ নভেম্বর ২০১৭

রাষ্ট্র তাকে ভয় না পেলে আশ্চর্য হতাম

ছবিটি ফেসবুক থেকে নেয়া 
সরকারি নথি সেলিম রেজা নিউটনকে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’ বলায় মোটেও অবাক হইনি। বরঙ মনে হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে তার বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি কানেকসন’ -এর অভিযোগও উঠতে পারে। একজন নিউটনকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ভাবা আসলে নতুন কিছু নয়। যে কোনো তাত্ত্বিককে সরকারের ‘বিপদজনক’ মনে হতেই পারে। এর আগে ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাক্যাম্প-স্থাপন ও সেনা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে রাষ্ট্রের রোষানলের শিকার হয়েছিলেন নিউটন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদী মৌন মিছিল করে জরুরি অবস্থা লঙ্ঘনের দায়ে সহকর্মীদের সাথে জেলও খেটেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক। তবে শঙ্কার কথা হচ্ছে ইদানীং এই রাষ্ট্রের, মানে বাংলাদেশের সরকার যদি কোনো নাগরিককে ভয় পায়, সে গুম হয়ে যায়। গত আড়াই মাসে সম্ভবত ১০ জন নিখোঁজ হয়েছেন শুধু রাজধানী থেকে। এর আগে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে একই পরিণতির শিকার হয়েছেন ৪২ জন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব মতে বাংলাদেশে গত বছর মোট ৯০ জন মানুষ ‘গুম’ হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র বা প্রকাশক। 

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ১০ নভেম্বর ‘রাবি ও রুয়েটে ইয়াবা ব্যবসায় ৪৪ শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মচারী’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘রাবি ঘিরে গড়ে ওঠা ইয়াবা ব্যবসা চক্রের ৩৪ জনকে শনাক্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখা, যা প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে ৭ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের (আরএমপি) হাতে পৌঁছেছে।’ তবে ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাদকাসক্ত চিহ্নিত করে কোনো তালিকা তৈরী করেনি। কারা করেছে তা’ও তিনি জানেন না। ওই তালিকাতেই রয়েছে সেলিম রেজা নিউটনের নাম। আরো ছয় শিক্ষককে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিউটনকে চিনি। জানি তার সহজিয়া প্রেমিক সত্ত্বার গান, কবিতা আর স্বাধীনচেতা ভাবনার গতিধারা। বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো তাকে ভয় না পেলেই হয়ত আশ্চর্য হতাম।
তথাপি রাষ্ট্র পরিচালকদের কাছে এ লেখার মাধ্যমে অনুরোধ জানাচ্ছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখায় কে বা কারা আছেন বা তারা কার নির্দেশে এই প্রতিবেদন তৈরী করে প্রধানমন্ত্রীল কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন তা একটু খতিয়ে দেখুন। নতুবা এ ঘটনা মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত করবে।তাছাড়া প্রতিবেদনটি কোনো যাচাইবাছাই না করেই রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান যখন বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে এটি গভীর পরিতাপের বিষয়, খুবই উদ্বেগজনক।কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’ তখন মনে আরো নানা প্রশ্ন জাগে। ভিসির এই অতি উৎসাহের উৎসও খুঁজে বের করা দরকার।
ইত্তেফাকের সেই প্রতিবেদন
পাঠকদের অনেকে হয়ত খেয়াল করেছেন ‘এটুআই প্রকল্পের একাধিক ব্যক্তির জঙ্গি কানেকশন : শিক্ষক মুবাশ্বারের নিখোঁজ রহস্যের নেপথ্যে’ - শিরোনামে ১১ নভেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক ইত্তেফাক। পরে তারা অনলাইন সংস্করণ থেকে সেটি তুলে নিলেও ততক্ষণে তা সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ভাইরাল হয়ে যায়। ওই প্রতিবেদনে ইত্তেফাকের সাংবাদিক আবুল খায়ের দাবি করেন গোয়েন্দাদের কল্যাণে তিনি জানতে পেরেছেন মুবাশ্বারের সাথে জঙ্গি সংযোগ রয়েছে। এদিকে যুগান্তরের পর আরো অজস্র গণমাধ্যম ইয়াবা ব্যবসা চক্রের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। এখানে সংযুক্ত করে রাখি - গণমাধ্যমে গত আড়াই মাসে যে দশ জন লাপাত্তা হওয়ার খবর এসেছে তার মধ্যে গত ২৭ অক্টোবর থেকে হদিস নেই বাংলাদেশে জনতা পার্টি (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন ঘোষ ও তার সহকর্মি আশিষ ঘোষের। সাংবাদিক উৎপল দাস ১০ অক্টোবর এবং আরাফাত নামের এক যু্বক ৭ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ। এর আগে ২২ থেকে ২৭ আগস্টের মধ্যে নিখোঁজ হন চারজন। এরা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, ব্যবসায়ী ও বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায় এবং কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) গভীর রাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন খিলগাঁও থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৪৭১) করলে তার খবরটিও গণমাধ্যমে আসে।পরদিন করিম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার তানভীর ইয়াসিন করিমকে সাদাপোশাকের লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে। তারও খোঁজ মিলছে না। 

নিউটনের সাথে সর্বশেষ সাক্ষাত হয়েছিলো চলচ্চিত্র নির্মাতা
রাসেল আহমেদের মৃত্যুর ক’দিন পর, গত মে বা জুনে।
যারা নিউটনকে চেনেন না তাদের জন্য বলে রাখি, ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি রাবিতে শিক্ষকতা করছেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। আশির দশকে সামরিক-শাসন-বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন এবং বলশেভিক-বামপন্থার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ‘রাজু ভাস্কর্য’ খ্যাত শহীদ মঈন হোসেন রাজু সন্ত্রাসবিরোধী যে ছাত্রমিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন, সেই মিছিলের অন্যতম মূথ্য সংগঠক ছিলেন নিউটন। ইউনিয়ন ছাড়ার পর ১৯৯১ সালের শেষ দিকে ‘শিক্ষা সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে ঢাবি’র ‘সাইনে ডাই’ (অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ) প্রথার বিরুদ্ধে স্বাধীন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন । সেটাই ছিলো ঢাবি'তে শেষ 'সাইনে ডাই'। নিউটন সক্রিয় ছাত্ররাজনীতি ছেড়েছেন মূলত নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে। তবে ১৯৯৮ সাল অবধি জড়িত ছিলেন সিপিবি (কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ) -এর সাথে। রাজশাহী জেলা কমিটির সহ-সভাপতিও ছিলেন। এরই মাঝে তিনি বিস্তৃত করেছেন লেখালেখির ক্ষেত্র। সম্পাদনা করছেন মানুষ ও প্রকৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ মানুষসহ আরো অজস্র পত্রিকা।

পূর্ববর্তী পোস্ট : 

প্রশ্নবিদ্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব নেবে কে?

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এক শিক্ষালয়ের মাঠ
বাংলাদেশ, রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া একটি রাষ্ট্র। স্বাধীনতার চার দশক পরও এখানে পরবর্তী প্রজন্মের শারীরিক ও মানুসিক স্বাস্থ্য বিকাশের চেয়ে নগরের, তথা নগর কাঠামোর উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ । বিশ্বাস হচ্ছে না! লেখার সাথে সংযুক্ত ছবিটি কিন্তু তারই প্রমাণ। চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) প্রথম হপ্তায় তোলা এই ছবির মাজেজা বুঝতে একটু অতীত ঘাঁটতে হবে বৈকি। কারণ দৃশ্যত এখন কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই যে এটি দেশের রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এক শিক্ষালয়ের মাঠ।
মাঠটি মূলত সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল এন্ড কলেজের। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণে জড়িত এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আড়াই বছরেরও বেশী সময় ধরে (২০১৩ সালের জানুয়ারী মাস থেকে) অবৈধভাবে এটি দখল করে রেখেছে। উচ্চ আদালতকে তোয়াক্কা না করে তারা নির্মাণ সামগ্রী রেখেই ক্ষান্ত হয়নি। নিষেধাজ্ঞা না মেনে নির্মাণ করেছে আধাপাকা স্থাপনাও। অথচ এক সময় উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাশাপাশি এলাকার শত শত শিশু-কিশোর এই মাঠেই নিয়মিত খেলাধুলা করতো।
যদ্দুর মনে পরে স্থানীয়দের জানাজা, এমনকী দুই ঈদের নামাজও অনুষ্ঠিত হতো এখানে। বিভিন্ন উৎসব, পার্বণে বসতো মেলা। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশও হতো মাঝে মাঝে। কখনো কখনো কনসার্টও। বহু প্রজন্মের অজস্র আড্ডা, স্মৃতি-বিস্মৃতির এই মাঠকে এভাবে মরতে দেখতে খারাপই লাগছে। বস্তুত খারাপ লাগছে আগামী প্রজন্মের ব্যাপারে আপন রাষ্ট্রের অসংবেদনশীলতা দেখে। যে কারণে এ নিয়ে লেখার তাগিদও অনুভব করেছি।

ঘাঁটাঘাঁটি করে জানলাম, ২০১৩ সালে জুন মাসে এই মাঠ দখলমুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলো হাইকোর্ট। ওই বছরের মার্চে সিদ্ধেশ্বরী অ্যাপার্টমেন্ট ও বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। কিন্তু আজও তা দখল হয়ে আছে। দখলদার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির নাম তমা গ্রুপ। এর মালিক আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক নোয়াখালীর ধনকুবের হিসেবে পরিচিত।

সার্চইঞ্জিনগুলোর সহায়তায় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা খবর থেকে আরো জানলাম, ওই রিটের প্রেক্ষিতে দেয়া তলবের আদেশে আদালতে হাজির না হওয়ায় সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকা যুবলীগ নেতা শোয়েব চৌধুরীকে গ্রেফতার করে হাজির করার নির্দেশ পেয়েছিলো রমনা থানার পুলিশ। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের এই আদেশ দেয়া হয়েছিলো। একইসঙ্গে তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত। কিন্তু এই ঘটনার আর কোনো আপডেট খুঁজে পাইনি।

মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণের যন্ত্রপাতি রাখার কথা বলে দুই বছরের জন্য (২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি) ওই মাঠ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপকে ইজারা দেয়া হয়। অথচ বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পরিচালনা পরিষদের বিধি অনুসারে স্কুলের কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করার ক্ষমতা পরিচালনা পরিষদের কাউকে দেয়া হয়নি। যে কারণে ওই ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করেছিলো হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবি এ ব্যাপারে আদালতে বলেছিলেন - “ইজারা দেয়ার সময় কলেজের পরিচালনা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যের সম্মতি নেয়া হয়নি। পরে সরকার ‍ও সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেয়া হলেও এটি বাতিল হয়নি। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ” প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের শিক্ষা, যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার নিশ্চিত করা ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব’।
বিতর্কিত অবৈধ ইজারার মেয়াদও আরো আট মাস আগে শেষ হয়ে গেছে। তবুও মাঠটি দখল মুক্ত হয়নি। এর কারণ অনুসন্ধানে জানলাম আরো চমকপ্রদ তথ্য। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৭২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন খোদ প্রকল্প পরিচালক নাজমুল হাসান ।

অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নকশায় ত্রুটি ও পিলার স্থাপনের জটিলতার দেখিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়াতে বাধ্য করেছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে এক ঠিকাদার, তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান ‘মানিক গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমাদের কাজে কোনো ত্রুটি নেই। কোনো মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ উঠেনি।’ তার দাবি, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্লাই-ওভারের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে।
অনেকে নিশ্চয় জানেন, দেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পরিবারের ইতিহাসও জড়িয়ে আছে সিদ্ধেশ্বরীর মৃত প্রায় ওই মাঠটির সাথে। ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু টি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তাঁর নামে সেগুনবাগিচায় একটি বাসা বরাদ্দ করা হয়েছিলো। কিন্তু ওই বছরই সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করেন এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সেগুনবাগিচার বাড়িটি তিন দিনের মধ্যে ছেড়ে দিতে বলা হয়। ১৫ অক্টোবর বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। এ সময় বেগম মুজিব সন্তানদের নিয়ে সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল এন্ড কলেজের মাঠের পাশে মাসিক ২০০ টাকা ভাড়ায় একটি বাড়িতে ওঠেন। কিছুদিনের মধ্যেই শেখ মুজিবের পরিবার যে ওই বাড়িতে থাকে তা জানাজানি হয়ে যায়। বাড়ির মালিক বেগম মুজিবকে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেন। একান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িটি ছেড়ে দিয়ে মুজিব পরিবার আবার সেগুনবাগিচার একটি বাসার দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বাঙালীর মুক্তির প্রতীক হয়ে থাকা সেই নেতার, তথা বন্ধবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাই গত সাড়ে সাত বছর ধরে আমাদের রাষ্ট্রনায়ক (সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী)। তার শাসনামলে আগামী প্রজন্মের ব্যাপারে রাষ্ট্রের ঔদাসীন্য দেখে মেনে নিতে সত্যি কষ্ট হয়। যে দেশের প্রতিটি শিশু রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেয়া ১৩ হাজার ১৬০ টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্মায়, সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আগামী প্রজন্মের ব্যাপারে কেন আরো সংবেদনশীল হবেন না? - এমন প্রশ্নও মনে জাগে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি -এর উপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, “এই যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমণ্ডিতে এক বিল্ডিংয়ে কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশানে এক ছাদের নিচে কয়েকটি। বড় বড় নাম, গাল ভরা বুলি। এদের কোনো একাউন্টিবিলিটি নেই।”
অথচ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে পরিচালিত ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। খোদ ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, পুরনো অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না দিয়েই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মান্নান আরো বলেছেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অডিট রিপোর্টও জমা দেয় না। ক্ষমতা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ইউজিসি কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারে না।’

নীতিনির্ধারকরা এসব বলে আসলে কার বা কাদের ওপর দায় চাপাতে চাইছেন তা বুঝতে পারছেন কি? না পারলে ভাবুন, ভাবার প্রাকটিস্ করুন। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নিজেই যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‘একাউন্টিবিলিটি নেই’ বলছেন, সে প্রতিষ্ঠানগুলো লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর সুযোগ কেন, কিভাবে পাচ্ছে? কার, কোন স্বার্থে? প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না করে বা না শুধরে, খোদ রাষ্ট্রই কি পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যত অনিশ্চিত ও ঘোলাটে করে তুলছে না? অথচ আমাদের রাষ্ট্রনায়করা কি এর দায় নেবেন? নচেৎ তারা কি স্রেফ এটুকু অন্তত বলবেন, এই দায়িত্বটা আসলে কার? দায়টা মূলত কে নেবেন? দেশের আগামীকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারা কাকে দিয়েছে?
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এক জরিপের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার করা এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে - “বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন এমন ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১০টি মান ‘ভালো’। ২৬টির ‘মোটামুটি’, বাকিগুলোর মান 'খুব খারাপ'। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এগুলোর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ক্ষেত্রে একক কোন কাঠামো নেই। মাত্র ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাস রয়েছে।” অবস্থাদৃষ্টে কারো কারো মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, রাষ্ট্রযন্ত্র সব বুঝে চুপ থেকে প্রতিনিয়ত কি দেশের নাগরিকদেরই অপমান করছে না?
যেহেতু সংবিধানের সাত নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।’ সেহেতু কেউ কেউ আবার জনগণের ওপরই তামাম দায় চাপাতে চাইতে পারেন। নিশ্চয়ই তারা বললেন, জনতার অজ্ঞতা প্রসূত বিবেচনা আর নীরবতাই রাষ্ট্রের এই পরিণতির জন্য দায়ী। জন-আস্কারায় রাষ্ট্র পরিচালনাকারী গোষ্ঠী আজ যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে। না হয় মানলাম সে কথা। 

কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালকরা কি ভুলে গেছেন সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা। যেখানে বলা রয়েছে, রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবে৷ মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করার পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিতের জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদানে রাষ্ট্রই কার্যকর ব্যবস্থা নেবে৷

বিগত সরকারের ঘাড়ে সকল দোষ চাপানোর একটা ট্রেন্ড আমাদের দেশে বেশ চালু আছে। ঠিক বুঝতে পারি না, বিগতদের দোহাই দিয়ে নতুনরা সমস্যা না মিটিয়ে যদি এড়িয়েই যেতে থাকেন তবে সরকার বদলেই বা লাভ কী! যাক সে কথা, আশার আলাপ দিয়েই শেষ করছি।  গণভবনে আজ শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যেন প্রতিটি শিশু শিক্ষায়-দীক্ষায় উন্নত হতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হতে পারে।’ জয় হোক তার এই ভাবনার।
newsreel [সংবাদচিত্র]