Powered By Blogger
১/১১ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
১/১১ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৪ নভেম্বর ২০১৭

রাষ্ট্র তাকে ভয় না পেলে আশ্চর্য হতাম

ছবিটি ফেসবুক থেকে নেয়া 
সরকারি নথি সেলিম রেজা নিউটনকে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’ বলায় মোটেও অবাক হইনি। বরঙ মনে হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে তার বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি কানেকসন’ -এর অভিযোগও উঠতে পারে। একজন নিউটনকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ভাবা আসলে নতুন কিছু নয়। যে কোনো তাত্ত্বিককে সরকারের ‘বিপদজনক’ মনে হতেই পারে। এর আগে ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাক্যাম্প-স্থাপন ও সেনা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে রাষ্ট্রের রোষানলের শিকার হয়েছিলেন নিউটন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদী মৌন মিছিল করে জরুরি অবস্থা লঙ্ঘনের দায়ে সহকর্মীদের সাথে জেলও খেটেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক। তবে শঙ্কার কথা হচ্ছে ইদানীং এই রাষ্ট্রের, মানে বাংলাদেশের সরকার যদি কোনো নাগরিককে ভয় পায়, সে গুম হয়ে যায়। গত আড়াই মাসে সম্ভবত ১০ জন নিখোঁজ হয়েছেন শুধু রাজধানী থেকে। এর আগে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে একই পরিণতির শিকার হয়েছেন ৪২ জন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব মতে বাংলাদেশে গত বছর মোট ৯০ জন মানুষ ‘গুম’ হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র বা প্রকাশক। 

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ১০ নভেম্বর ‘রাবি ও রুয়েটে ইয়াবা ব্যবসায় ৪৪ শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মচারী’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘রাবি ঘিরে গড়ে ওঠা ইয়াবা ব্যবসা চক্রের ৩৪ জনকে শনাক্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখা, যা প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে ৭ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের (আরএমপি) হাতে পৌঁছেছে।’ তবে ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাদকাসক্ত চিহ্নিত করে কোনো তালিকা তৈরী করেনি। কারা করেছে তা’ও তিনি জানেন না। ওই তালিকাতেই রয়েছে সেলিম রেজা নিউটনের নাম। আরো ছয় শিক্ষককে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিউটনকে চিনি। জানি তার সহজিয়া প্রেমিক সত্ত্বার গান, কবিতা আর স্বাধীনচেতা ভাবনার গতিধারা। বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো তাকে ভয় না পেলেই হয়ত আশ্চর্য হতাম।
তথাপি রাষ্ট্র পরিচালকদের কাছে এ লেখার মাধ্যমে অনুরোধ জানাচ্ছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখায় কে বা কারা আছেন বা তারা কার নির্দেশে এই প্রতিবেদন তৈরী করে প্রধানমন্ত্রীল কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন তা একটু খতিয়ে দেখুন। নতুবা এ ঘটনা মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত করবে।তাছাড়া প্রতিবেদনটি কোনো যাচাইবাছাই না করেই রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান যখন বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে এটি গভীর পরিতাপের বিষয়, খুবই উদ্বেগজনক।কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’ তখন মনে আরো নানা প্রশ্ন জাগে। ভিসির এই অতি উৎসাহের উৎসও খুঁজে বের করা দরকার।
ইত্তেফাকের সেই প্রতিবেদন
পাঠকদের অনেকে হয়ত খেয়াল করেছেন ‘এটুআই প্রকল্পের একাধিক ব্যক্তির জঙ্গি কানেকশন : শিক্ষক মুবাশ্বারের নিখোঁজ রহস্যের নেপথ্যে’ - শিরোনামে ১১ নভেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক ইত্তেফাক। পরে তারা অনলাইন সংস্করণ থেকে সেটি তুলে নিলেও ততক্ষণে তা সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ভাইরাল হয়ে যায়। ওই প্রতিবেদনে ইত্তেফাকের সাংবাদিক আবুল খায়ের দাবি করেন গোয়েন্দাদের কল্যাণে তিনি জানতে পেরেছেন মুবাশ্বারের সাথে জঙ্গি সংযোগ রয়েছে। এদিকে যুগান্তরের পর আরো অজস্র গণমাধ্যম ইয়াবা ব্যবসা চক্রের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। এখানে সংযুক্ত করে রাখি - গণমাধ্যমে গত আড়াই মাসে যে দশ জন লাপাত্তা হওয়ার খবর এসেছে তার মধ্যে গত ২৭ অক্টোবর থেকে হদিস নেই বাংলাদেশে জনতা পার্টি (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন ঘোষ ও তার সহকর্মি আশিষ ঘোষের। সাংবাদিক উৎপল দাস ১০ অক্টোবর এবং আরাফাত নামের এক যু্বক ৭ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ। এর আগে ২২ থেকে ২৭ আগস্টের মধ্যে নিখোঁজ হন চারজন। এরা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, ব্যবসায়ী ও বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায় এবং কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) গভীর রাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন খিলগাঁও থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৪৭১) করলে তার খবরটিও গণমাধ্যমে আসে।পরদিন করিম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার তানভীর ইয়াসিন করিমকে সাদাপোশাকের লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে। তারও খোঁজ মিলছে না। 

নিউটনের সাথে সর্বশেষ সাক্ষাত হয়েছিলো চলচ্চিত্র নির্মাতা
রাসেল আহমেদের মৃত্যুর ক’দিন পর, গত মে বা জুনে।
যারা নিউটনকে চেনেন না তাদের জন্য বলে রাখি, ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি রাবিতে শিক্ষকতা করছেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। আশির দশকে সামরিক-শাসন-বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন এবং বলশেভিক-বামপন্থার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ‘রাজু ভাস্কর্য’ খ্যাত শহীদ মঈন হোসেন রাজু সন্ত্রাসবিরোধী যে ছাত্রমিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন, সেই মিছিলের অন্যতম মূথ্য সংগঠক ছিলেন নিউটন। ইউনিয়ন ছাড়ার পর ১৯৯১ সালের শেষ দিকে ‘শিক্ষা সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে ঢাবি’র ‘সাইনে ডাই’ (অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ) প্রথার বিরুদ্ধে স্বাধীন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন । সেটাই ছিলো ঢাবি'তে শেষ 'সাইনে ডাই'। নিউটন সক্রিয় ছাত্ররাজনীতি ছেড়েছেন মূলত নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে। তবে ১৯৯৮ সাল অবধি জড়িত ছিলেন সিপিবি (কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ) -এর সাথে। রাজশাহী জেলা কমিটির সহ-সভাপতিও ছিলেন। এরই মাঝে তিনি বিস্তৃত করেছেন লেখালেখির ক্ষেত্র। সম্পাদনা করছেন মানুষ ও প্রকৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ মানুষসহ আরো অজস্র পত্রিকা।

পূর্ববর্তী পোস্ট : 

প্রশ্নবিদ্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা
newsreel [সংবাদচিত্র]