Powered By Blogger
ঈয়নের পদ্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ঈয়নের পদ্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আরো কিছু দুর্বল কবিতা


দৃষ্টিপাঠ

নতশিরে নিজের
গভীরে নিবিষ্ট
যে দৃষ্টি প্রগাঢ়;
নমিত সে চাহনি
পড়ে নিতে পারো।
অবনত হয়—
নত হতে আরো;
মিশে যাওয়ার
অপেক্ষায় রয়;
দ্রবীভূত মন কারো।

জীবন্মৃত

যখন কিছু ভাবতে আর ইচ্ছে না করে
তখনও মনমরা দিনগুলো মনে পড়ে;
গ্লানিবিষে মরেছি কতবার বাঁচার তরে
বহু মানুষই এক জীবনে বারবার মরে!

মৃত্যু

বুকের ভিতর শুনেছি যার পদধ্বনি
ক্রমাগত আসছে কাছে প্রতিক্ষণই
সে ছাড়া কেই-বা এত কাছে আসে
সদাই যে ঘন্টা বাজায় শ্বাসে শ্বাসে
তাল-বেতালে মনে বাজে আগমনী
আনচান তার সুরটা খুব কাছে শুনি
ডানা মেলে দূরাকাশে আনমনা চোখ
আর কতটা সময় বাকি করতে পরখ
না থাকার মানে বোঝার অপেক্ষাতে
অজানার স্বর গাঢ় হয় রাত-প্রভাতে
যেন শেষ হতে চায় সুদীর্ঘ গান কোনো
কোথাও যা কেউ সত্যি গায়নি কখনো

আফটারলাইফ

সহস্র ছায়াপথ পেরিয়ে আসা সংকেতের মতো হারিয়ে যাচ্ছি। ঘুম ভাঙার পর নিজেকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। সেচ্ছায় নড়তেও পারছি না। অথচ বাতাসে ভাসছি। কিছুতেই কিছু পাচ্ছি না, হাত-পা-চোখ-মুখ, কিচ্ছু না। একসময় মনে হলো ঘুমের মধ্যই হয়তো মরে গেছি। ভাবনাটা আসতে না আসতে নিজেকে বেমালুম ভুলে গেলাম। আমি কে তা কোনোভাবেই আর মনে করতে পারলাম না। শুধু টের পাচ্ছিলাম, দ্রুত গলে যাচ্ছে মন; বিস্ময় বা বেদনায়!

বধভেদ

কেবল কোরবানির ঈদেই নয়,
বছর জুড়ে গ্রাম থেকে শহরে
জবাই হতে আসে অজস্র প্রাণ।
যার মধ্যে গরু, ছাগল, এমনকি
মহিষেরাও নিমেষে মুক্তি পায়!
শুধু মানুষ কাটা হয় খুব ধীরে—
রসিয়ে রসিয়ে তাদের জান
নিংড়ে খায় বিবিধ বিজ্ঞান।

০৩ জানুয়ারী ২০২২

পাঁচটি ‘দুর্বল কবিতা’ | ঈয়ন

ছবি: ঈয়ন

অনাগত সময়ের গান
পাখির ভাষায় লিখতে চেয়ে গান
হরিণেরা সব দুলে উঠেছিল খুব
শনির ডানায় ভর করে ডাংগুলি
খেলতে খেলতে হয়েছে যারা চুপ
নোনাবনের মাছেরাই শুধু জানে
কতটুকু সুর হারিয়েছে স্বাদুজলে
আর কতটা রয়েছে গেঁথে জিনে
টিকে থাকার অসুর ক্ষমতাবলে
থেমেছে কবে উভচর মহামারী
সহস্র যুগ কেটে গেছে কিভাবে
ভাবার জন্য নতুন কোনো প্রাণ
আবার যখন দুনিয়ায় জন্মাবে
তখনও কেউ লিখবে কবিতা
শিশিরে আদ্র হবে পাতার মন
দুর্বল গেছো সাপেরও বিশ্বাসে
উঠবে কেঁপে নলখাগড়ার বন

দেবাদ্রিতা দরিয়া
নিশ্চয় তুমি সেই সামগ্রিক মহাসত্তার সন্তান;
যাকে নিযুত ঈয়নে ভগবান, আল্লাহ, ঈশ্বরসহ
আরো নানা নামে ডেকেছে তোমার স্বজাতি;
যার বাইরে কেউ নেই, কিছু নেই— আমিও না।
জীবন তোমার শিক্ষক, পিতামাতা বাহক মাত্র
জেনে নিও— আমৃত্যু সব মানুষই নির্ঘাত ছাত্র;
আর স্মরণে রেখো হে কন্যা দেবাদ্রিতা দরিয়া
—এই নীল গ্রহে তুমিই আমার পিতৃসত্তার মা।

বার্ষিক প্রত্যাশা
নতুন ভোরটা উঠবে হেসে
কবে মীন শিকারীর দেশে
মহামারীও কাঁপবে কেশে
থুরথুরে এক বুড়ির বেশে
নয়া হাওয়া-জল-মমতায়
অনাচার বাড়বে কোথায়
কী গনিতে কোন সমতায়
কারা কেন কত ক্ষমতায়
কিংবা বছর কেমন যাবে
কে বেশি ও কে কম খাবে
কার ফানুসে জ্বলে আলো
কারা বলে আঁধারি ভালো
ভাবলে কি-তা দোষের হবে
কেই-বা ভাবনা মুক্ত কবে—
কার খেলা কে কেন পুতুল
না জেনে সাঁতারে কী ভুল
লোভে ডুবে আটকে জালে
ভয়ের কুমির মনের খালে
খেয়ে দেবে প্রতিবাদী ভাষা
অদরকারি বার্ষিক প্রত্যাশা
বিলবিলাস
কখনো বিলবিলাস হয়নি যাওয়া
দাদাজানের মুখে শুনেছি শুধু নাম
তিনি জেনেছেন তাঁর দাদার বয়ানে
ওটাই আমাদের পূর্বসূরীদের গ্রাম
ঠিক চিনি না বিলবিলাসের মাটি
জানি না মোটে কেমন তার হাওয়া
নদ-নদী আছে নাকি আশোপাশে বা
সাগরটাকে যায় কি দেখতে পাওয়া
তবুও কখনো নামটা পড়লে মনে
ছুটোছুটি করে অগোছালো দৃশ্যরা
অপরিচিত সময়ের ধ্বনি শুধায়
বিলবিলাস ছেড়েছিলি কেন তোরা
প্রাককলন
কোন মিজানে যে মাপতেছ প্রেম
বা কবে কতটা প্রেমিক ছিলেম
প্রেম যে পুরানো মদিরার মতো
-বয়সে বাড়ে তার স্বাদ ও ক্ষত

ছবি: ঈয়ন

৩১ জুলাই ২০১৯

সাম্প্রতিক দিনলিপি

© ঈয়ন

দেহের নদে দৌড়ে বেড়ায় বুভুক্ষু শুশুক

হিজলগন্ধা মাতাল সন্ধ্যায়— অরণ্যের মধ্যরাতসম নিস্তব্ধতা ঘনিয়ে আসে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে পরিণত হওয়া নগরে। শালুক দোলানো হাওয়ার কাঁধে মাথা রেখে, মৃত নক্ষত্রের মতো ঘুমিয়ে পড়ে —প্রতিটি ব্যর্থ প্রণয়ের অব্যর্থ নিরাশা। কায়মনোবাক্যে বাঁচার প্রত্যয়ে আবারও প্রেম খোঁজে দুরুদুরু বুক; আর— দেহের নদে দৌড়ে বেড়ায় বুভুক্ষু শুশুক। যারে পোষ মানাতে পারে শুধু কলাবতীর রাঙা ঠোঁটের চাবুক। [৩১ জুলাই ২০১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

হিতাকাঙ্ক্ষা

আর্মেনিয়ান বাঁশির মতো
বিরহী স্নায়ুর মরুদ্যানে—
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া
যে প্রাণবন্ত জোয়ান যাদুকর
নিগূঢ় খেয়ালের মতো নাচে
দৃঢ় ক্যানভাসে ক্যানভাসে,
মায়ারঙা নিখাদ প্রণয় এঁকে
তাঁর অবিদিত আমুদে বুকে
ডুবে যায় তৃষ্ণার্ত রাধিকা;
আহা কী কোমল প্রখর চুমুক
রমণীয় ভরাট চিবুকের ঢালে
আবারো ফিরলে তৃপ্তির টোল
মনমরা বিফল অতীত ভুলে
—প্রিয় প্রাক্তনও সুখে থাকুক
[৩০ জুলাই’১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

Journey to hell

Sometimes it seems
Life is pretty cheap
Although too deep
Like lover’s last kiss
Maybe it's a bad trip
But not in God's grip
I'm competing Devils
As an unmanned ship
[28 July 2019 / Mirpur - Dhaka.]

রোদন

বৃক্ষহীন পাথুরে উপত্যকায় বিকশিত
জন্মান্ধ কবির মাতাল মাদলের তালে
কেঁপে কেঁপে কেঁদে উঠলে নদী,
—সহস্র সেতার হয়ে বাজে
দুনিয়ার শেষ জলদস্যু মন;
আর ঠিক তখনই কোথাও
উদাসী সুরের বরষায়—
পলির মতো ভেসে যায় কথা,
নৈঃশব্দের বনে উড়ে যাওয়া
নামহীন রাতপাখির বুকেও
—খা খা করে ওঠে নীরব ক্রন্দন।..
[২৬ জুলাই’১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

উনপাঁজুরে

মনীষার একাংশে তপ্ত মরুভূমি
আর বাকিটায় শীতল জল নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা অমসৃণ পাহাড়—
জীবনের সব মেঘ জমিয়ে রাখে
—তাঁর নিরস নির্নিমেষ চোখে;
যা বরষা হয়ে ঝরেনি কোনোদিন
অরণ্যের সাথে দেখা না হওয়ার আক্ষেপে।
[২৫ জুলাই’১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

© শ্যামল শিশির

১৫ জুলাই ২০১৭

পিতৃদর্শন

পিতা শরীফ আলী আহমেদ’কে উৎসর্গকৃত
না কবিতা না চিঠি
বৈশ্বিক টানা-পড়েনের দহনে নিজেকে সযত্নে পুড়িয়ে প্রতিটি অন্যায় আবদারও অক্লান্ত মনে পূরণ করে যাওয়া মধ্যবিত্ত বাবাকে কবিতা লিখতে দেখিনি কখনো। তবে তার চোখেই প্রথম দেখেছি মহাকাব্যিক উদাসীনতা ভর করা নির্লিপ্ততা; যা অবলীলায় এক শৈশবকে চিনিয়েছে বিক্ষিপ্ত ভাবনার দ্বান্দ্বিকতায় বর্ণিল বিচ্ছিন্নতা। তাই পরে আর বুঝে নিতে কোনো ভুল হয়নি।
প্রিয় বাবা,
তুমিও আসলে তাদের মতোই বর্ণচোরা কবি
যাদের ললাটের ভাঁজে জমে থাকা কাব্যেরা
লুকনোই থাকে, কেউ ঠিক বুঝতে পারে না
হয়ত কবি নিজেও না; তবু তারা এমনই ...
পরিতাপ
হুট করে খুব নিতাইয়ের মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে, সাথে ফকির চাঁনের রুটি। আহা তাদের রসায়নে স্বাদের যে বিউটি তা লুটে নেয়া ফরজ, স্বর্গীয় ডিউটি। শৈশবে চেনা সে রস, স্মরণেও চিত্ত হয় অবশ, ছোটে চন্দ্রদ্বীপে। হারিয়ে যাওয়া ঘরবরণের মালাই আর কালোজাম বা দধিঘরের মাখনের স্বাদও লেগে আছে জিভে। ধুরও —কেমনে যে ফিরি ফের শৈশবে। কত দিন বসি নাই বাবার ফনিক্স সাইকেলের ক্যারিয়ারে। কি সব ব্যারিয়ারে আটকে বড় হয়ে গেছি, বা হতে বাধ্য হয়েছি ধীরে।
পিতার এ ছবিগুলো নানা সময়ে আমার-ই তোলা
নিরাধার
বাড়িয়ে আত্মার ঝড়
পৌঁছে মনের অন্দর
কাঁপিয়ে নামায় বৃষ্টি
পিতার বিষাদ দৃষ্টি
কুপুত্রের কাব্য
সময়ের পথ ধরে বয়স বেড়েছে আপনার। ভাবনার অনাচারে নাজুক হয়েছে দেহ। তবে মুছে যায়নি অতীত। মনে মনে ঠিকই জেগে আছে। যেজন্য প্রবীণ চোখের ভ্রমেও উজ্জল আত্মজ বধের রাগ। বাল্যকালে মননে গেঁথে যাওয়া এ নজরের মানে খুঁজতে গিয়েই ভাবতে শিখেছি। যা ভুলিনি, ভুলতে দেননি। খুনের দলিল লুকানো শরীরে আজও যখন জাগে বুনোগন্ধ নেয়ার সাধ; তখন আপনার প্রাণ যে ঘ্রাণ খোঁজে তা মূলত তাজা লাশের, স্বীয় সন্তানের। হয়ত সাবেক স্ত্রীর ওপর জমে থাকা ক্ষোভের অনলে সতত জ্বলছে আপনার অবচেতন। যারই জেরে সদা জ্বালাতে চেয়েছেন পুরানো সংসারের সব স্মৃতি, এমনকি একমাত্র জলজ্যান্ত প্রমাণও। আদতে এর নেপথ্যের তত্ত্ব মুছে দিতে চায় নিজস্ব কিছু অপ্রিয় সত্য। তবু আপনাকে ভালোবাসি অবিরত। কারণ আমি সন্তান, টানটা জন্মগত। এখন আবার একটু পরিণত; তাই অপরাধবোধও সজাগ। 
প্রিয় পিতা, আপনার হাতে লেগে আছে আমার শৈশব হত্যার দাগ!

০১ এপ্রিল ২০১৭

দুটি বইয়ের দশটি কবিতা


দিনলিপি। ০১০৫০৯


বহুজাতিক কোম্পানির মোড়কে মোড়ানো কনসার্টের শ্রমিক দিবসকে পাশ কাটিয়ে প্রণয় উৎসবের তাড়াহুড়োয় এক যান্ত্রিক যাত্রা ‘ফুলার রোড টু সানরাইজ’। এরপর উৎসবকেও পাশ কাটিয়ে হাইরাইজ বাতাসের আমন্ত্রণে সমর্পিত মনের অতৃপ্তি ঘোচে না বা চাহিদা মেটে না। অবশেষে মনে হয়─ জাপটে ধরা শামুক স্মৃতি আর সুখ শীতল ফানুস শৈশব জীবন বা সময়ের ভুলেও আজ এক চিলতে আশ্রয়।

পরিশুষ্ক পরিশোধে রূপান্তরিত
আদুরে সোহাগ লুটে নিতে গিয়ে
কখনো কি কারো মনে প্রশ্ন জাগেনি─
‘প্রেম কি আদৌ পরিশোধ্য? বা ভালবাসার
পরীক্ষক আর পরিমাপক কে বা কি হতে পারে?’
বাধিত প্রেমের বাতুলতার কবলে তাই নিরবিচ্ছিন্ন অসুখ।

তবু সেই শিকারী চোখের মায়ায় সে বারে বার ফিরেছে ব্যবচ্ছেদের দেয়ালে। এক লাফে উঠে দাঁড়িয়েছে তার উপর; কেঁপে উঠেছে পাঁচ ইঞ্চি পুরু পুরো গাঁথুনি। দেয়ালের উপর বসেই দেখতে পেয়েছে মন্ট্রিলের সী-বিচ আর বেইলী রোডের দূরত্ব কতোটা কম। অথচ মাইগ্রেনের ব্যথায় কাতর শৈশবের টানে ওই দেয়াল ধরেই কাঁপতে কাঁপতে হেঁটেছিলো ফেলে আসা চন্দ্রদ্বীপের দিকে। ট্রেনের ভেঁপুরা লঞ্চের সাইরেন সেজে দাঁড়িয়েছিল কীর্তনখোলার পলিতে। অবশেষে অবসন্ন অবশিষ্টতার মঞ্চে কবি জ্বরে জ্বরাগ্রস্ত মন ভুতগ্রস্ত সংলাপ আওরে প্রলাপের মতো লিখেছিল─

কেমনও আঁধার করেছে ব্যাকুল ক্রোধ
বিস্মিত মননে শহুরে রোদের চুম,
ভাবার আগেই ফিরেছে ভোরের বোধ
বিষাদ নয়নে ফেরারি রাতের ঘুম।
এরপর ছন্নছাড়া ক্লান্ত প্রতিশোধ
কোলাহলের ভিড়েও করেছে নিস্তব্ধ,
বিক্ষুব্ধ ক্ষুধাতেই একাকীত্ব নির্বোধ
তবুও অট্টহাসিতে কাটানো নৈঃশব্দ...

পরিণামে নির্ভেজাল পাথুরে সংলাপে
কথামালা সাজানোর অভিপ্রায়ে মত্ত
ব্যস্ততারা ক্রমাগত মগ্ন নিরুত্তাপে
আর ঘুমঘোরে জেনেছিল সব সত্য।
এমনেই একা জন্মেছিল একাকীত্ব
অথচ বৈকালিক বোধে লীন সতীত্ব...

অবশেষে সব সীমায়িত করা ঘুম, ঘুমে গুম প্রহর আর অচেনা জনপদের মতো অপ্রকাশিত আস্থা গভীর-অগভীরতার খাঁজে। তবুও দ্বান্দ্বিক দৃষ্টি-বদ্ধ সেই ঘুম ঘুমিয়ে ছিল চিরনিদ্রা বা অন্তিম ঘুমের অপেক্ষায়।

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

শবাচ্ছন্ন রাত

বাড়ে শবাচ্ছন্ন রাত
সে বিষাদে কাঁদে চাঁদ
ভাঙা ইমারতে চাপা
গোঙানিময় বাতাসে
যমেরও প্রতিক্ষায়
কারা বাড়ায় দর্শক
অনুমেয় হয় চোখ
শুধু মৃত্যু গননায়
কী উন্নতি উত্তেজনা
সরাসরি সম্প্রচারে
অন্তিম জোৎস্নায় কাঁপা
মুমূর্ষু সাক্ষাৎকারে
খুন হয় খুন বয়
ফের এই বাঙলায়
আর শুনি ঘোষণায়
ঘটা করে হবে শোক
খুনীরাই আয়োজক
মেটাবে খুনের দায়
কালো ব্যাজ পতাকায়

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

বে-ঈমান

এক এবং
অদ্বিতীয়
আপনার
কীর্তি ম্লান
করে যায়
এমন কে
এ ধরার
কোন মর্মে
লুকায়িত
রয়েছে যে
অস্বীকার
করবেইে
এ অস্তিত্ব...

কারই বা
ঈমানে যে
আজ নেই
সে সম্মান;
যা সবাই
আপনাকে
দিয়ে যাচ্ছে
যুগ থেকে
যুগান্তর
ধর্ম থেকে
ধর্মান্তরে

কে'বা করে
অস্বীকার
আপনার
অবদান

অসুর বা
লুসিফর
যে রূপেই
ফরমান
লাভ ইউ,
হে মহান
শয়তান।

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

রেসপেক্ট সিভিলিয়ানস

লুটে নেয় যারা, তারা প্রভু বেশে
চেয়ে দেখে সব ভাগাভাগি শেষে
─ বাকি আছে আরো
─ কে কী নিতে পারো
─ দ্রুত বুঝে নাও
─ যতটুকু পাও
─ এসবই ফাও
আহারে এবার বাড়িয়েছে চান্স
জলপাইরঙা শীতল রোমান্স
চকচকে বুট আর বেয়নেট
পোড়া জনপদে
ভিনদেশী থ্রেট
চেনে অনুগামী সামরিক ঘ্রাণ
যায় যাক প্রাণ
গভীর শঙ্কায়
তব মন চায় ─ বলে দিয়ে যায়
রাঙা ক্ষেপণাস্ত্র বা সাঁজোয়া যান
আনে না যে শান্তি
চেনে না কে স্বস্তি
নয়া সেলফ প্রপেলড কামান
─ এবঙ কবিতা
─ বা ইশতেহার
যা পড়েছো বা পড়ছো এ কালে
সবটুকু ছিলো তোমার আমার
গ্লানিরই মতো
স্বচ্ছ সত্য ক্লান্ত
─ কারণ
স্বাধীন সঙ্গীতে মুখর শ্লোগান
মানে নাই একচোখা ফরমান
কখনো ─
মওকায় যদি অন্য কিছু হবে
নীরব জনতা নীরব না রবে
সব চিনে তারা ভাবে চুপচাপ
কার কোন শত্রু
কার বন্ধু বাপ
─ তবুও
মারপ্যাঁচে জমে রাজ-দুশমনি
বন্দুকের নলে বাহ বিরিয়ানি
দেখে এসবই─
কে যে গুম হয়
কবি না অকবি
কার লাগে ভয়
আবার কে কয়
সমর বিদ্বেষ, দেশদ্রোহ নয়
─ যদিও
বুকে সভ্য ত্রাস
ফেরে কি বিশ্বাস
ভরসা পাই না
বা কোনো আশ্বাস
─ হে বাঙাল সেনা
প্লিজ ─ রেসপেক্ট সিভিলিয়ানস

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

শহর দর্শন

এক.
উৎসবে বর্ণিল
চেনা এ শহর
অদ্ভুত রঙিন
বিরহে কাতর

দুই.
আমার শহরে
বেহেড সাপেরা
বাসা বাঁধে কবে
কার ইশারায়
সব যায় বোঝা
বোবা থাকা দায়
নাচে চেতনায়
বিষদাঁত ভাঙা
কথার ফোয়ারা
আর সব মেনে
কারা তারা যায়
রাজপুত্র সাজা
সাপের গুহায়
বড় অসহায়
সাদামাটা যারা
মৃত্যু ভয়ে চুপ
আশাহত খুব
হয়ে গেছে ভুলে
কে জেগে আজও
কার ঘুম নাই
প্রাণ খুলে বাঁচো
এই মন্ত্র জানা
কোন সর্বহারা
অস্ত্র আর দীক্ষা
জমা দেয় নাই

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)


***
যৌন জেহাদের যুগে
যে উত্তেজনায় ভুগে
লোভজ্বরে লালায়িত
মুজাহিদ মন খোঁজে
বেহেশতি আয়োজন
তার তরে বেলাগাম
আদিম অস্ত্র ফতোয়া
আরব্য ধর্ম বাণিজ্য
আধুনিকায়নে আহা
কতই না কার্যকরি─
জিহাদ আল নিকাহ।
কী অন্ধ ঈমানে হায়
তিউনিসিয়ার নারী
ধর্মের ঘোড়ায় চড়ে
সিরিয়াতে দেহদাসী;
না জানি─ ওরাই হুর
পূণ্যের হিসাব মাপে
হালাল যৌনাচার ও
জেহাদি জোশের ঠাঁপে
হয়ত তারাও জানে
এ যমানা নৃ’র নয়;
দ্বীনের বীর্যের তাপে
ইমাম পণ্ডিত কাঁপে
‘ধার্মিক’ মন্ত্রণালয়।

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

***
নিশ্চয় চেনে গুমকৌশল
জানে অন্ধ চাপাতির বল
তথাপি ভাববেন না প্রভু
সব মুখ বুঝে সয়ে কভু
─বাঙাল মন রবে দুর্বল

তামাম সাম্প্রদায়িক ছল
সংখ্যালঘু চোখের জল
মুছে দিতে ফিরবেই কভু
সাচ্চা মোজাদ্দেদি দেজা ভু

দুনিয়ার যে যে জনপদ
যুগ-যুগান্ত মেপে দেখছে
অনুদারতার সহবত
তারা জানে কেমনে মহৎ
মানুষ ঠেকেই সব শেখে
অসির মুখে দাঁড়ায় কারা
মসির ওপর আস্থা রেখে

যদিও এ যুগের যা দিন
মতপ্রকাশে রাখতে হবে
কবিরও মাজায় মেশিন

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

***
স্রষ্টার তরফে
বীর্যের হরফে
লেখে সোবাহান
মোল্লারা মহান
আর রাষ্ট্রধর্ম
ধর্ষকের চর্ম
মোটা করে খুব
─প্রতিবাদী চুপ
ভাবছে কি লাভ
করে ঘেউ ঘেউ
লাগে যদি ফেউ
─ও হিন্দুর বউ
আমার কী কেউ
মেরে থাকি ঝিম
আমি মুসলিম
সাচ্চা নাগরিক
সাংবিধানিক
সরকার জানে
কি ঠিক বেঠিক

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

***
যদি এক রাতে
দেখ অপঘাতে
মরে পড়ে আছি
খুব কাছাকাছি
পরিচিত কায়া
দেখে বড় ঠেকে
দেখিও না মায়া
ছায়ারও আগে
সরে যেও তুমি
জেনে নিও আমি
বলেছি নিশ্চিত
যে আমার খুনী
সে মূলত ছিলো
আত্মহত্যাকারী
গণিতের বীজ
নিয়ে ঘোরা কোনো
সন্দেহপ্রবণ
আগোছালো গল্প
নিছকই অল্প
ছকে যা লিখেছে
দিল্লি-পেন্টাগন
আর নির্যাতন
সইতে না পেরে
বোঝে যে অবুঝ
বাকিঙহাম বা
লাওহে মাফুজ
ক্ষমা করে সব
হত্যাকারীকেও
হতে পারে সে’ও
যে বেওয়ারিশ
তা’ও জেনে নিও

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)


***
─স্মরণে কৈবর্ত বিদ্রোহ

নিশ্চিত অনার্য আমি আদি কৈবর্তের ছেলে
সহস্র জনমে ছিলেম - মিঠে জলের জেলে
বার বার ফিরেছি বঙগে, ফিরিয়েছে মোহ
- মননে অনিবার্য আজও বরেন্দ্রী বিদ্রোহ।

অহিঙস ধর্মের নামে ক্ষিপ্ত সহিঙসতা-
রুখেছিলো যে কৌশলে এই নদীমাতৃকতা
যুগ-যুগান্তর ধরে যাচ্ছিলাম লিখে তারে
সেই অপরাধেই খুন হয়েছি বারে বারে।

গায়ের রঙটা কালো, গাই স্রোতস্বিনী সুরে
মোর রক্তে কত প্রাণ জানে পাল অন্তুপুরে।

মনে পরে সেবার - ছিলেম গঙ্গার উত্তরে
স্বর্ণকলসে বশীভূত লোভাতুর স্বীয়জাত
কী জলদি মিলিয়ে রামপালের হাতে হাত
প্রকাশ্যেই মদদ দিয়েছে আমার হত্যারে।

আরো কতবার মরেছি স্বজাতি সূত্রে ইস!
কখনো পলাশী, কখনো বা ধানমণ্ডি বত্রিশ
তবু ফিরেছি ফের কূটরুধির করতে হিম
আমি দিব্য, আমিই সেই রুদোকপুত্র ভীম।

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

১৪ মার্চ ২০১৭

নতুন তিনটি কবিতা

সাঙ্গুস্নান

বেদাগ বিবাগ

সব কথা থেমে গেলে বোতলের তলানিতে জমে থাকা মদ তূল্য সূত্রের ফসিল গলে ফিরে যায় দিনগুলো অতীতের চোরা পথে ফেলে আসা মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ যে বাঁকে, তামাম মায়ার বোঝা কাঁধে লয়ে সেখানে গিয়েছিলাম বোধকরি দেড় দশক আগে; নিজেরে দিয়ে বলি খুশী করতে ঠিক কাকে তা মনে পড়ছে না। [১৩ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

অপ্রমাদ
বীতনিদ্র প্রতীতির জলে
লিখে রাখে অবিমৃষ্য মন
‘বিরহের রাত ঘন হলে
কমে যায় ঘুমের ওজন’
[১২ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

নির্বেদ
ফাগুনের মধ্য দুপুরে চৈত্রের ঊষর মাঠের মতো খা খা করে ওঠে বুক, সুবিপুল খর জলরাশি মাঝে মিঠাপানিহীন ষোল রাত কাটানো হালভাঙা একলা মাঝির সমান ক্ষয়িত মনে কোনো কথা ফোটে না; পুত্রের আঘাতে নিহত পিতার গ্লানিতূল্য মানবিক কলুষতা জমছে জাগ্রত নৈরাশ্যের বেগতিক প্রার্থনায়। [১৪ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

* পড়ুন আরো দুটি লেখা
ভীমরতি / সৈয়দুন্নেছার সন্ধ্যা

০৬ এপ্রিল ২০১৫

অলস দুপুরে আলাপ...

“কবিতা লিখতে কারো কাগজ-কলমই দরকার হয়, কারো স্মার্টফোনই যথেষ্ট:
ঈয়নের সাথে অনলাইন আলাপ” - এই ছিলো শিরোনাম।

শৈশব থেকেই কাব্যচর্চা ভালো লাগে। টুকটাক লেখালেখির শুরুও তখন। হয়ত কোনো শিশুতোষ বাসনাও ছিলো মনে। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে লেখার কারণ ও ধরণ বদলেছে বার বার। বস্তুত বহু বছর আমি পদ্য লেখার কোনো কারণই খুঁজে পাইনি। শুধু মনে হত - ভালো লাগছে, তাই  লিখছি। অমনই এক সময়ে এসব নিয়ে আলাপ হয়েছিলো দুপুর’দা, মানে দুপুর মিত্রের সাথে, এ প্রায় দু’বছর আগে। ২০১৩ সেপ্টেম্বরে অলস দুপুর ব্লগে প্রকাশিত হয় সে আলাপ। সেখান থেকেই টুকে এনে  press & pleasure - pap পাঠকদের জন্য এটি পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?
ঈয়ন: এ প্রশ্নটা জ্বালিয়েছে অজস্রবার, আর প্রতিবারই খুঁজে পাইনি কোন সদুত্তর। অবশেষে মেনে নিয়েছি হুদাই এই লেখা-লিখি বা বিতৃঞ্চাচ্ছন্ন ভালবাসার আশ্রয় এ ঘোর মগ্নতা। তাই যেতে যেতেই ফিরে আসতে হয় ছন্দ-শব্দের কাঁটা-কুঁটি খেলায়। কবিতার জন্য কবিতারা জন্মাক, সব কথক না হোক কবি আর পৃথিবী না হোক কাব্যময়; তবু কবিতারা জন্মাক। কবিতা দিয়ে দেশ উদ্ধারে নামিনি, চাইনি কোন বিপ্লব ঘটাতে। ডান বা বামপন্থি মতবাদে ভারাক্রান্ত বাহবা কুড়াঁনোর ইচ্ছেরা থাক স্বেচ্ছা নির্বাসনে। তবুও লিখে যাই, আজও বারে বার ফিরে যাই আপনার ঘোরে- আপন করে লুটে নিতে সব সুখ; কবি-জ্বরে জ্বরাগ্রস্ত মসী মুখ ডোবায় বারুদের শরবতে। অবশেষে স্বার্থপরের মত শুধু নিজেরই জন্য লিখে যাই।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?
ঈয়ন: এটা কবি ভেদে ভিন্ন। যেমন কারো কাগজ-কলমই দরকার হয়, কারো স্মার্টফোনই যথেষ্ট।

Dupur Mitra, is a poet and fiction writer
from Bangladesh. Studied PhD from
Jahangirnagar University, Dhaka in
biodiversity and forest management. His
published two books in Bangla, named
44 Kobeta (44 poetry) and
Doshovuza (collection of short stories).
দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন? সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?
ঈয়ন: সমসাময়িক যাদের কবিতা পড়া হয়েছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো কবিতা ভালো লেগেছে। আবার কোনো কোনোটা খারাপ লেগেছে। এটা মূলত পাঠকালীন সময়ের মানুসিকাবস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন। এই মুহুর্তে একটি লাইন আমাকে যে ইমেজ দেবে, একটু পরই তা ভিন্নতর হতে বাধ্য। এ কারণে একই কবিতা কখনো খুবই ভালো, আবার কখনো খুবই ফালতু লেগেছে।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
ঈয়ন: মূল্যায়নের স্বরূপই বোঝা হয়নি আজও।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?
ঈয়ন: কবি থেকে কবিতে যে ফারাক, এখানেও তাই।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?
ঈয়ন: শুধু ব্লগ কেনো, ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে নতুন যে কোনো কিছই সাহিত্যকে কিছু না কিছু দিচ্ছে। তবে তা বিশেষ কিছু হয়ে ওঠার বিষয়টি সময় ও ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?
ঈয়ন: লিটলম্যাগ বা ব্লগের গুরুত্বও সময় এবং ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন। গুরুত্বের মাপকাঠিও তো আর স্থির নয়।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
ঈয়ন: বোঝে নাই যে পর্যবেক্ষণ, আত্মমগ্ন ক্ষ্যাপাটের মন।

২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

আমার ‘ভাবনাংশ’

নামাঙ্কন : সাইদ র’মান
প্রথম বই প্রকাশের ঘটনায় যতটুকু উত্তেজিত বা আনন্দিত হওয়ার কথা ছিলো, মানে হবে বলে আশা করেছিলাম; ঠিক ততটা উত্তেজনা বা আনন্দ হচ্ছে না কেন জানি। এর জন্য কে দায়ী? সমকাল, না কোনো গুপ্তগ্লানি? ঠিক বুঝতে পারছি না।
গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিলো ২০১১’র নভেম্বরে। পাণ্ডুলিপির প্রথম খসড়া দাঁড়িয়েছিলো আগের বছর, মানে ২০১০’র জুলাইয়ে। কিন্তু এবার, মানে ২০১৫’তে এসে তা চূড়ান্ত এবং প্রকাশিত হয়েছে। পাওয়া যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।
মামার হাতে - অামার বই
কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। প্রেস থেকে সরাসরি লিটলম্যাগ চত্বরের প্রান্তস্বর -এর স্টলে এসেছে ‘ভা ব নাং শ’। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বইটির বিক্রি শুরু হয়েছে। চার ফর্মার এ গ্রন্থের দাম রাখা হয়েছে একশ ত্রিশ টাকা। মেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র একশ টাকায়।


হায়, কতটা অসহনশীল হয়ে উঠছি আমরা। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছ থেকে ক্রমশ দূরে সড়ে যাচ্ছি। বিচ্ছিন্নতা বোধ পিছু ছাড়ছে না কারো। তাবৎ অনুভূতিও ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। ভুলেছি হাসতে - কাঁদতে। নগর সভ্যতা যে হাসাতে আর কাঁদাতেই শেখাচ্ছে খুব। পুঁজির রাজ্যে মানুষ আর মানুষ নয়, ভাঁড় বা ভয়ংকর হতে চায়।

আহা, বিবর্তন। এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে এই যে গ্রন্থ প্রকাশ, এ নেহাত কোনো চাতুর্যতা নয়ত - এমনটা ভাবতেও কী মানা আছে কোনো। যদিও এখন জেনে গেছি কেন লেখি। এই বইতে তার কিছু পরোক্ষ ব্যাখ্যাও পাওয়া যাবে হয়ত। তবে নতুন পাঠকদের আগেই বলে রাখি - আমি কিন্তু ভাই ‘কবি নই, তবু শব্দ-ছন্দ বুনি’..।

ভা ব নাং শ - এর সূচি
অভিজিৎ দাস’কে খুব বেশী মনে পড়ছে ইদানীং। বিগত বছরগুলোয় মেলায় প্রকাশিত চারটি বই - কামরাঙা কেমন সবুজ, ভাঙা আয়নার প্রতিবিম্বগণ, মাটির চামচ মুখে এবং করপল্লবসঙ্গিনী - তিনি নিজ হাতেই দিয়েছিলেন আমায়। এর মধ্যে কোনটায় যেনো লিখেছিলেন - “প্রিয়বরেষু ঈয়ন’কে আদিগন্ত ভালোবাসা”। তাকে নিজের বই দেয়ার সময় কি লিখে দেবো, তা ভাবা হয়নি এখনো। তবে ভাবতে হবে। কারণ আশাকরি - খুব শিগগিরই দেখা হবে কবির সাথে।

>> অভিজিৎ দাস নিরুদ্দেশ, না গুম?

২০ অক্টোবর ২০১৪

পাপাত্মায় শুদ্ধতার গান

© avantgarde-metal.com
রচনাকালঃ জুন, ২০১১ (সম্ভবত)
পাপ না করলে; পাপবোধ কারো হয় না
পাপবোধ ছাড়া যে; শুদ্ধতা চেনা যায় না

পাপবোধ কারো হয় না; পাপ না করলে
শুদ্ধতা চেনা যায় না; পাপবোধ ছাড়া যে

শুদ্ধ হতে তাই; পাপী আগে হওয়া চাই
পাপী আগে হওয়া চাই; শুদ্ধ হতে তাই

পাপ, পাপ, খালি পাপ; পাপে পাপারণ্য
অবশেষে পাপবোধ জাগলেই তব ধন্য

পাপ যত করেছি অপরাধ বেড়েছে
অসুস্থ তাড়না সবই গিলে খেয়েছে
তবু পাপ করে যাই; হতে পাপীশ্বর
পাপ দেখে টলমল; শয়তানের ঘর

পাপ, পাপ, খালি পাপ; পাপে পাপারণ্য
অবশেষে পাপবোধ জাগলেই তব ধন্য

পাপী আগে হওয়া চাই; শুদ্ধ হতে তাই
শুদ্ধ হতে তাই; পাপী আগে হওয়া চাই

শুদ্ধতা চেনা যায় না; পাপবোধ ছাড়া যে
পাপবোধ কারো হয় না; পাপ না করলে

পাপবোধ ছাড়া যে; শুদ্ধতা চেনা যায় না
পাপ না করলে; পাপবোধ কারো হয় না

অস্থিরতাই স্থির করে দেয়; স্থির করে দেয় অস্থিরতাই
স্থির করে দেয় অস্থিরতাই; অস্থিরতাই স্থির করে দেয়
অস্থিরতাই স্থির করে দেয়; স্থির করে দেয় অস্থিরতাই
স্থির করে দেয় অস্থিরতাই; অস্থিরতাই স্থির করে দেয়
অস্থিরতাই স্থির করে দেয়; স্থির করে দেয় অস্থিরতাই

দ্রষ্টব্য:
‘এ ধরায় শুধু কবিরাই নবীর ফিলিংস বুঝবার পারে’
- এ’ও সদ্য প্রসূত এক ওহী; জন্মেছে কবির কাছে।

‘Becoming-Corpus’ Includes Dance and an Art Installation
© www.nytimes.com

৩১ আগস্ট ২০১৪

আরেকটি অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি

তালা - The Lock
© eon's photography
আমার আমাকে খুঁজে খুঁজে
বহুকাল আপনার মাঝে
ছুটে ছুটে জেনেছি আমিও
এমনই এক ধারনা যা
মহাবিশ্বের মতো
- ক্রমে বিবর্তিত

***
সুযোগসন্ধানী কে যে
ঘোলা জলে খেলে চলে
ছায়া তার কোথা পরে
রয় না তা’ও খেয়ালে,
নাচে গাধা আলাভোলা
তলে তলে কোন দলে
ভেড়ে খানকির পোলা
তা’ও জেনে যাবে সবে
তবুও ভয় পেওনা ।।

***
পুনরায় কবে হবে যে সহায়
কতটুকু আর করে অসহায়
তা’ই হয়ত দেখার অপেক্ষায়
জলেরই মত স্বচ্ছ ভুলগুলো
হয় না হায় কখনো পথভুলো
বার বার আসে
সেই টানে ফিরে
চেনাতে আবারো
অচেনা নিজেরে
জাগে কূট চালবাজ নর কীট
মাপে আইটেম সঙের যে বিট
নিয়মিত মারে হাত-
তাল কেটে হলে কাত
ভাবে সে কি একা একা
কবে যে হয়েছে ভুলে
ভুল রাজ্যে শান্তি শেখা
তা আন্দাজই করতে পারে নাই
বালিকাও আর দেয় নাই দেখা

***
স্বভাবের দোষে দুষ্ট
বাতেনী মননে পুষ্ট
বহুগামীতার বীজ;
ক্ষমাপ্রাপ্ত বোধ নষ্ট
হয়ে যে সে লক্ষ্যভ্রষ্ট
তা বুঝেও না বুঝিস!

না বুঝলেও জানিস-
এ অন্য কিছুই নয়
স্রেফ অপব্যবহার,
নিশ্চিন্ত ভালোবাসার।
মন থেকে বলি তাই
ক্ষমা করিস না আর।

সাবধানে সাধু সেজে
সকালেও সে ভেবেছে
অতি পিরিতের চাপে-
কেন কাঁপবে এভাবে;
কদাকার ইচ্ছেগুলো
বার বার পথভুলো
করে যদি করুক না।

তাই বলছি আবার
ক্ষমা করিস না আর।

***
নিপাট নির্লিপ্ত কালে
একঘেয়ে বেখেয়ালে
চেয়ে চেয়ে দেখেছিলে-
যা কিছু ছিলো অর্জিত
কাঙ্খিতরা ক্রমাগত
তারে দূরে ঠেলে দিলে
দূরে দূরেই পালায়
সব কথিত বান্ধব
আর বেহিসাবী বোধ
গ্রাস করে বিচ্ছিন্নতা
কে জানি জেনে নিয়ে তা
খুঁজে বুঝে নেয় প্রিয়
প্রেয়সীর পরোয়ানা
এবঙ নিজের মত
হেলায় বাড়ায় ক্ষত
জানে সাবধানী সে'ই
কেউ অপেক্ষায় নেই
পাওনাদারের মত
***
দৃশ্যত বুনো ধৃষ্টতা বাড়ে
চেনা পাতায় যার আঁচড়ে
বসন্ত দিন হয় মলিন
আর সমকালীন সঙ্কট
দৈন্যতার ভজঘট মেপে
ডুবিয়ে দেয় স্বপ্নের খেয়া
যার জীর্ণ অপেক্ষায় মায়া
ছিড়ে যাওয়া গ্রন্থির ঋণ
ভুলে সাজে খুব দৈনন্দিন
কারণ সে’ও যে বর্ণচোরা

coloured / © eon's photography

***
দিনের শেষে
লোকাল বাসে
ফিরছি মাঠে
ছবির হাটে
পাশের সিটে
যে মতলবী
খুব ঈমানী
জোশের বশে
মারলো কষে
বয়ান বোমা
আমলা মনে
জাওয়ানিকা
তুফান তোলা
আলাপ জমে
জমজমাট
ধর্মের ঘাঁট
পিচ্ছিলকারী
অজ্ঞানতার
সারমর্মে সে
মাওলানাই
চেঁচিয়ে বলে
এ শয়তানী
বড়ই ফানি
জেনেছে তারা
নষ্টের গোঁঢ়া
শাহাবাগই

***
বিজয় বিজয়া
খুনেরো হিন্দোলে
নাচিছে মাতিয়া
তাল ও বেতালে
হেলিয়া দুলিয়া
গোলাপের কোলে
নিজেরে ভুলিয়া
দেখিয়া তা ভুলে
অবাক না হয়া
মায়াময় বোলে
যাই যে বলিয়া
হে প্রিয় মহান
খেয়াল করিয়া
সেয়ানী চোদান

***
তাবৎ অসহায়ত্ব আর রাগ-ক্ষোভগুলো টের পেয়ে যাও হয়ত-
জেনে যাও সেই সব গোপনালাপও যা জানার ছিলো না কারো;
ফি জন্মে তাই খুন হও তুমি - জ্ঞানেরও অজ্ঞাতে লুকানো তন্ত্রে
আত্ম-সংবরণের সুযোগও পায় না খুনী মন, অতঃপর আবারো
উদ্যোগী হয় তোমায় সংগ্রহে - পুনরায় বুঝে নিতে খুনের স্বাদ।

[গ্রীষ্মের ক্রোধে খুন হওয়া সেলফোন সেট দুটিকে উৎসর্গকৃত]
***
ভাই, বন্ধু - দুটোই
ভেবেছিনু তোমারে
আহারে কি যতনে
ভাঙিয়া সে ভাবনারে
দূরেই ঠেলিয়া মনে প্রানে;
না জানি পাইলা কি সুখ
তোমার এ ভাঙার অসুখ
ভালো হউক - তা'ই চাই
কারন ওই যে,
ভেবেছিলেম - বন্ধু ও ভাই।

যদিও তুমি -
ছলেরই কারবারী
তবুও'তো সেজেছিলে
কত না উপকারী;
শুভকামণাও তাই
থাকিবে সব সময়
যদিও - আমাদের
পথ ও কৌশল, এক নয়।।

cordial / © eon's photography
***
কে সরাব হাতে
এ শবে-ব-রাতে
আয়াতের সুরে
ডাকে ইবাদাতে
কেবলায় জুড়ে
খুব ফুরফুরে
গ্রীষ্মের হাওয়া
কারে হেদায়াতে
কার তা চাওয়া
যায় না পাওয়া
সূরার শরীরে-
পারে কে জানাতে
এ ভেদ ভাঙাতে
ঠিক কোন পীরে
খুঁজে তারে ভীড়ে
পোষাবে কি তাতে
রোজ আখিরাতে
____________

শবে-ব-রাত
১৩ জুন ২০১৪
***
গুজরাট থেক্যা বাঙলায়
মৌলবাদ নয়া আয় নায়।

তর মনে নাই হেই কালে
ঝুলাইয়া অ-ধর্মের মূলা
আহা কি স্বর্গীয় ফরমুলা
ভারত ভাইঙ্গা নিরিবিলি
বাড়াইছিলো ক্যাগো সম্মান-

চেনাইছিলো হ্যাগোরেই গদি
যেয়ার লোভে, ভাবৌরসে
পয়দা লইছে শফী-মোদী।

আইজ আর কি কমু মামা
তাগো গায়ে ভরসার জামা
পরাই রাখছে জনগণ;
যাগোর বিভেদাক্রান্ত মন
বোঝে নাই ভাঙ্গার অসুখ
বা এক থাহনের মাজেজা-

হেয়া ক্যা, কারে জিগায় কেডা?
***
যদি এক রাতে
দেখ অপঘাতে
মরে পড়ে আছি
খুব কাছাকাছি
পরিচিত কায়া
দেখে বড় ঠেকে
দেখিও না মায়া
ছায়ারও আগে
সরে যেও তুমি
জেনে নিও আমি
বলেছি নিশ্চিত-
যে আমার খুনী
সে মূলত ছিলো
আত্মহত্যাকারী
গণিতের বীজ
নিয়ে ঘোরা কোনো
সন্দেহপ্রবণ
আগোছালো গল্প
নিছকই অল্প
ছকে যা লিখেছে
দিল্লী-পেন্টাগন
আর নির্যাতন
সইতে না পেরে
বোঝে যে অবুঝ
বাকিঙহাম বা
লাওহে মাফুজ
ক্ষমা করে সব
হত্যাকারীকেও
হতে পারে সে’ও
যে বেওয়ারিশ
তা’ও জেনে নিও

শিরোনামঃ
গাধার গয়না
রচনাকালঃ নিকট অতীত

প্রস্থান - The Departure
© eon's photography

৩০ আগস্ট ২০১৪

বেজন্মার গান

শুরুতেই সুরসহ মাথায় এসেছে - এমন লেখার সংখ্যা আমার খুব বেশী নয়। আর যা লিখেছি - তা প্রকাশেও লেগেছে ভয়, সব সময়।  তবু 'নিজের ঢোল নিজে পেটাও' নীতির সূত্রানুসারে বলতে হয় - গীতিকার ও সুরকার 'ঈয়ন' এক্কেবারে ভুয়াও নয়। রাসেল আহমেদের খণ্ড নাটক ‘ফ্লাই-ওভার’ এর ‘থিম সঙ’ হিসাবে ছ’লাইনের এ গানটি ব্যবহৃত হয়েছিলো ২০১০ সালে। তার প্রায় দেড় বছর আগে তৈরী ‘বেজন্মা বোধ বা জন্মানোর ক্রোধ’ - শিরোনামের পুরো লেখাটিও তুলে দিলাম নীচে। হয়ত কারো ভালো লাগবে, কারো লাগবে না। সবার জন্যই রইলো শুভেচ্ছা।

ক্ষীণ মৌনতার স্থবিরতায় অস্থির
জৈবিকতার অদৃষ্ট অতৃপ্তি আর
প্রজাপতির অপেক্ষায় গোলাপেরা
মেঘগন্ধা অবষাদে স্থবির।

আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ
তাড়া করে ফিরছে
বিতৃষ্ণা মিলছে
ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।

সুপ্রীম কোর্টের খোদারাও
দল বেঁধে বিব্রত হয় দেখে
বেকারত্বের ফ্রেমে বন্দী প্রেমে
সব কটাক্ষ মেনে নেই আমরাও।

তবু...

আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ
তাড়া করে ফিরছে
বিতৃষ্ণা মিলছে
ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।

২১ মে ২০১৪

দিনলিপি | ১৬১২১১

‘দেশ বা দশের কথা ভেবে কিচ্ছু হবে না, নিজে বাঁচলেই বাপের নাম’ -এই একটি বাক্যই কি আমার রাষ্ট্রের আপামরের দর্শন বুঝাতে যথেষ্ট নয়? নাকি এ কথায়ও দ্বিমত জানাবেন কেউ?

২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বরেও আমরা আত্মপ্রচার ছাড়া আর কিইবা করি? এসব রাষ্ট্রীয় দিবসে যে দেশপ্রেম প্রদর্শিত হয়, আদতে কি তা ধারণ করি কেউ?

রাজনীতিবিদদের সমালোচনায় মুখে ফেনা তুলে ফেলা ‘কথিত’ সুশীল বা প্রগতিশীলদের মাঝে তো দূরের কথা, আম-জনতার মাঝেও কি আমরা কোনো দেশপ্রেমিকের দেখা পাই?


© eon's photographyKuakata Guest House
নিরীহপনাকে বাঙালের দুর্বলতা ভেবে
সেই পর্তুগীজ দস্যু থেকে শুরু করে
ওই পাকি-হায়েনারা যে বীজ এই
উর্বর ভূমিতে রোপণ করে গেছে;
তার জেরে শুধু অনাস্থাই বেড়েছে।
হয়ত এ কারণেই আজও নিশ্চিন্তে
স্বাধীন পতাকা দিয়ে মুখ বেঁধেই
তোর-মোর মাকে চুদে যায় ওরা
বাণিজ্যের কনডম লাগিয়ে, আর
আমরা দেখেও দেখি না তা। তাই
জন্মের ৪০ বছর পরবর্তী তারুণ্য
নিয়েও কতটুকুই বা আশাবাদী
হতে পারে এই দেশ? একটুও কি?

০১ মে ২০১৪

দিনলিপি | ০১০৫০৯


বহুজাতিক কোম্পানীর মোড়কে মোড়ানো কনসার্টের শ্রমিক দিবসকে পাশ কাটিয়ে প্রণয় উৎসবের তাড়াহুড়োয় এক যান্ত্রিক যাত্রা ‘ফুলার রোড টু সানরাইজ’। এরপর উৎসবকেও পাশ কাটিয়ে হাইরাইজ বাতাসের আমন্ত্রণে সমর্পিত মনের অতৃপ্তি ঘোচে না বা চাহিদা মেটে না। অবশেষে মনে হয় - জাপটে ধরা শামুক স্মৃতি আর সুখ শীতল ফানুস শৈশব জীবন বা সময়ের ভুলেও আজ এক চিলতে আশ্রয়।

পরিশুস্ক পরিশোধে রূপান্তরিত
আদুরে সোহাগ লুটে নিতে গিয়ে
কখনো কি কারো মনে প্রশ্ন জাগেনি-
“প্রেম কি আদৌ পরিশোধ্য? বা ভালবাসার
পরীক্ষক আর পরিমাপক কে বা কি হতে পারে?”
বাধিত প্রেমের বাতুলতার কবলে তাই নিরবিচ্ছিন্ন অসুখ।

তবু সেই শিকারী চোখের মায়ায় সে বারে বার ফিরেছে ব্যবচ্ছেদের দেয়ালে। এক লাফে উঠে দাঁড়িয়েছে তার উপর; কেঁপে উঠেছে পাঁচ ইঞ্চি পুরু পুরো গাঁথুনি। দেয়ালের উপর বসেই দেখতে পেয়েছে মন্ট্রিলের সী-বিচ আর বেইলী রোডের দূরত্ব কতোটা কম। অথচ মাইগ্রেনের ব্যথায় কাতর শৈশবের টানে ওই দেয়াল ধরেই কাঁপতে কাঁপতে হেঁটেছিলো ফেলে আসা চন্দ্রদ্বীপের দিকে। ট্রেনের ভেঁপুরা লঞ্চের সাইরেন সেজে দাঁড়িয়েছিল কীর্তনখোলার পলিতে। অবশেষে অবসন্ন অবশিষ্টতার মঞ্চে কবি জ্বরে জ্বরাগ্রস্থ মন ভুতগ্রস্থ সংলাপ আওরে প্রলাপের মতো লিখেছিলো-
কেমনও আঁধার করেছে ব্যাকুল ক্রোধ
বিস্মিত মননে শহুরে রোদের চুম,
ভাবার আগেই ফিরেছে ভোরের বোধ
বিষাদ নয়নে ফেরারী রাতের ঘুম।
এরপর ছন্নছাড়া ক্লান্ত প্রতিশোধ
কোলাহলের ভীড়েও করেছে নিস্তব্ধ,
বিক্ষুব্ধ ক্ষুধাতেই একাকীত্ব নির্বোধ
তবুও অট্টহাসিতে কাটানো নৈঃশব্দ...

পরিণামে নির্ভেজাল পাথুরে সংলাপে
কথামালা সাজানোর অভিপ্রায়ে মত্ত
ব্যস্ততারা ক্রমাগত মগ্ন নিরুত্তাপে
আর ঘুম ঘোরে জেনেছিল সব সত্য।
এমনেই একা জন্মেছিল একাকীত্ব
অথচ বৈকালিক বোধে লীন সতীত্ব...

অবশেষে সব সীমায়িত করা ঘুম, ঘুমে গুম প্রহর আর অচেনা জনপদের মত অপ্রকাশিত আস্থা গভীর - অগভীরতার খাঁজে। তবুও দ্বান্দ্বিক দৃষ্টি-বদ্ধ সেই ঘুম ঘুমিয়ে ছিলো চিরনিদ্রা বা অন্তিম ঘুমের অপেক্ষায়।

২৪ এপ্রিল ২০১৪

শবাচ্ছন্ন রাত

ছবিটি সংগ্রহিত
বাড়ে শবাচ্ছন্ন রাত
সে বিষাদে কাঁদে চাঁদ
ভাঙা ইমারতে চাপা
গোঙানিময় বাতাসে
যমেরও প্রতিক্ষায়
কারা বাড়ায় দর্শক
অনুমেয় হয় চোখ
শুধু মৃত্যু গননায়
কি উন্নতি উত্তেজনা
সরাসরি সম্প্রচারে
অন্তিম জোৎন্সায় কাঁপা
মুমুর্ষ সাক্ষাতকারে
খুন হয় খুন বয়
ফের এই বাঙলায়
আর শুনি ঘোষণায়
ঘটা করে হবে শোক
খুনীরাই আয়োজক
মেটাবে খুনের দায়
কালো ব্যাজ পতাকায়

রচনাকাল :২৪ এপ্রিল, ২০১৩
কাব্যগ্রন্থভা ব নাং শ (২০১৫)
newsreel [সংবাদচিত্র]