Powered By Blogger
ঈয়নের কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ঈয়নের কবিতা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আরো কিছু দুর্বল কবিতা


দৃষ্টিপাঠ

নতশিরে নিজের
গভীরে নিবিষ্ট
যে দৃষ্টি প্রগাঢ়;
নমিত সে চাহনি
পড়ে নিতে পারো।
অবনত হয়—
নত হতে আরো;
মিশে যাওয়ার
অপেক্ষায় রয়;
দ্রবীভূত মন কারো।

জীবন্মৃত

যখন কিছু ভাবতে আর ইচ্ছে না করে
তখনও মনমরা দিনগুলো মনে পড়ে;
গ্লানিবিষে মরেছি কতবার বাঁচার তরে
বহু মানুষই এক জীবনে বারবার মরে!

মৃত্যু

বুকের ভিতর শুনেছি যার পদধ্বনি
ক্রমাগত আসছে কাছে প্রতিক্ষণই
সে ছাড়া কেই-বা এত কাছে আসে
সদাই যে ঘন্টা বাজায় শ্বাসে শ্বাসে
তাল-বেতালে মনে বাজে আগমনী
আনচান তার সুরটা খুব কাছে শুনি
ডানা মেলে দূরাকাশে আনমনা চোখ
আর কতটা সময় বাকি করতে পরখ
না থাকার মানে বোঝার অপেক্ষাতে
অজানার স্বর গাঢ় হয় রাত-প্রভাতে
যেন শেষ হতে চায় সুদীর্ঘ গান কোনো
কোথাও যা কেউ সত্যি গায়নি কখনো

আফটারলাইফ

সহস্র ছায়াপথ পেরিয়ে আসা সংকেতের মতো হারিয়ে যাচ্ছি। ঘুম ভাঙার পর নিজেকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। সেচ্ছায় নড়তেও পারছি না। অথচ বাতাসে ভাসছি। কিছুতেই কিছু পাচ্ছি না, হাত-পা-চোখ-মুখ, কিচ্ছু না। একসময় মনে হলো ঘুমের মধ্যই হয়তো মরে গেছি। ভাবনাটা আসতে না আসতে নিজেকে বেমালুম ভুলে গেলাম। আমি কে তা কোনোভাবেই আর মনে করতে পারলাম না। শুধু টের পাচ্ছিলাম, দ্রুত গলে যাচ্ছে মন; বিস্ময় বা বেদনায়!

বধভেদ

কেবল কোরবানির ঈদেই নয়,
বছর জুড়ে গ্রাম থেকে শহরে
জবাই হতে আসে অজস্র প্রাণ।
যার মধ্যে গরু, ছাগল, এমনকি
মহিষেরাও নিমেষে মুক্তি পায়!
শুধু মানুষ কাটা হয় খুব ধীরে—
রসিয়ে রসিয়ে তাদের জান
নিংড়ে খায় বিবিধ বিজ্ঞান।

০৫ জানুয়ারী ২০২৩

তিনটি দুর্বল কবিতা | ঈয়ন


ঘ্রাণ

শীতগন্ধা ছাতিম ও হিজলের
বর্ষাতুর সুবাসের ব্যবচ্ছেদ
করতে করতে যখন মনে পড়ে
মৃত কুকুর বা বিড়ালের চেয়ে
জ্যান্ত মানুষ পঁচা গন্ধের তীব্রতা
কত বেশি তখন নিজের ঘ্রাণ
সহ্য করি কী করে তা—
বুঝে নিতে খুঁড়ে যাই মম
যাবতীয় টিকে থাকার কৌশল
তামাম ব্যস্ততায় টেনে ছেদ
থাকি অন্তরের অন্দরে তাকিয়ে

এজমালি

প্রতিটি মানুষের মন
লুকিয়ে রাখে যে বন
বিচিত্র রঙ ও পাহাড়
তার বিবর্ণতার ভার
বইতে পারে কি কেউ
সইতে পারে কে ঢেউ
নিরাকার সরলতার—
মৃদু মৌসুমী হাওয়া;
না চাইতেই পাওয়া
অবসাদের হিমবাহ
বা মা পাখির প্রদাহ—
ঘোচাতে পারে সে জন
যার ধীরায়নের ক্ষণ
জানে সব সত্তার সত্য
আদতে যা একীভূত
প্রেম দরিয়ার মতো
প্রবাহিত হর্ষ-বিষাদ;
পরমের চরম সাধ—
আশ্রিত সুবর্ণ ক্ষতও
সভ্যতার আয়ুর ঋণ;
সদাই তা খুঁড়ছে খাদ
সুচতুর— সার্বজনীন!

মাযহাব 

যারা—
ফিতনায় গুলিয়ে ধর্মের ঘোল
খেয়ে সুচতুর ফতোয়ার ডিম
ভাবে বিধর্মী হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল
জব্দে পাবে সিরাতুল মুস্তাকিম
তারা—
জেনে ঠিক কোন আয়াতের মর্ম
দৃঢ় ঈমানে পরে গোঁড়ামির বর্ম
চেনে আগ্রাসী অসদয় ইসলাম
হোসেন না এজিদ তার ইমাম
সেই—
প্রশ্নের কোনো মানে নেই জানি
যা খুঁড়ছে মুমিন কাল্বের ক্ষত
নীরবে হাঁসফাঁস করে ঐশীবাণী
মুসলিম মানে সেচ্ছায় অনুগত
এই—
বিশ্বাসে আঘাত তখনই সহজ
যুক্তিবাদ যখন বিচার্য অপরাধ
জামিন অযোগ্য দ্বীনের বিবাদ
বাড়ায় প্রেমহীন পূণ্যের গরজ

২৫ অক্টোবর ২০১৯

বালের্জীবনামার | ঈয়ন

ফুরায়ে যাওয়া কবির অসম্পূর্ণ শেষ কবিতার মতো বিষণ্ন মদের পাত্রে লেগে আছে অজস্র জন্মের চূড়ান্ত চুম্বনের চিহ্ন। সঙসারের প্রতিটি অলস দুপুরে যা পাঠ করতে করতে জেনেছি—
না হলে পরিচর্যায় কোনো ভুল
মরা গাছেও ফুটতে পারে ফুল।
অথচ ভেজাকাকের মতো স্থবির বৃষ্টির দিনগুলোয় ইদানীঙ স্মৃতিপথে পায়চারী ছাড়া কিছুই তেমন করা হয় না। যে মায়ার সরণি ধরে খানিকটা আগালেই ইচ্ছাহীনতার ধুধু প্রান্তর। যেখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো না লাগার যাবতীয় কারণের দিকে তাকিয়ে মোহাবিষ্ট হওয়া মাত্রই মনে পড়ে—
নিজের কাছেও দুর্বহ
হয়েছি সেই কবে;
—শৈশবে!
যদিও শিশুতোষ মেঘ সদৃশ ঘন হতাশার কোনো রঙ থাকে না। বরঙ তা যেন বর্ণচোরা ছল ও কৌতূহল। মোহের জলে ডুবে নিতে গিয়ে শ্বাস, মিটেছে পিয়াস। ভুল, দুর্বলতা ও অতৃপ্তির বাতাসে দোদূল্যমান বিষণ্ণতার ক্লান্তিতে তামাম স্পৃহা পুরোপুরি ‘নাই’ হওয়ার বেদনায় তাই থমকে ভেবেছি—
ধুর, এ শরীরের ভার
আত্মায়—
বইতে পারছে না আর।
আপাতত কিছুই করার ক্ষমতা নেই হয়ত, কিছুই না। ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন অলিগলিতে আপোষ করতে করতে চূড়ান্তভাবে ভেঙে গেছি। সুস্থতা হারিয়েছে বিশ্বাস, কিঙবা হারিয়েই গেছে—
এবঙ ফের হারিয়ে ফেলছি সব
দেহের কাঁধে বুলছে মনের শব।

৩১ জুলাই ২০১৯

সাম্প্রতিক দিনলিপি

© ঈয়ন

দেহের নদে দৌড়ে বেড়ায় বুভুক্ষু শুশুক

হিজলগন্ধা মাতাল সন্ধ্যায়— অরণ্যের মধ্যরাতসম নিস্তব্ধতা ঘনিয়ে আসে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে পরিণত হওয়া নগরে। শালুক দোলানো হাওয়ার কাঁধে মাথা রেখে, মৃত নক্ষত্রের মতো ঘুমিয়ে পড়ে —প্রতিটি ব্যর্থ প্রণয়ের অব্যর্থ নিরাশা। কায়মনোবাক্যে বাঁচার প্রত্যয়ে আবারও প্রেম খোঁজে দুরুদুরু বুক; আর— দেহের নদে দৌড়ে বেড়ায় বুভুক্ষু শুশুক। যারে পোষ মানাতে পারে শুধু কলাবতীর রাঙা ঠোঁটের চাবুক। [৩১ জুলাই ২০১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

হিতাকাঙ্ক্ষা

আর্মেনিয়ান বাঁশির মতো
বিরহী স্নায়ুর মরুদ্যানে—
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া
যে প্রাণবন্ত জোয়ান যাদুকর
নিগূঢ় খেয়ালের মতো নাচে
দৃঢ় ক্যানভাসে ক্যানভাসে,
মায়ারঙা নিখাদ প্রণয় এঁকে
তাঁর অবিদিত আমুদে বুকে
ডুবে যায় তৃষ্ণার্ত রাধিকা;
আহা কী কোমল প্রখর চুমুক
রমণীয় ভরাট চিবুকের ঢালে
আবারো ফিরলে তৃপ্তির টোল
মনমরা বিফল অতীত ভুলে
—প্রিয় প্রাক্তনও সুখে থাকুক
[৩০ জুলাই’১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

Journey to hell

Sometimes it seems
Life is pretty cheap
Although too deep
Like lover’s last kiss
Maybe it's a bad trip
But not in God's grip
I'm competing Devils
As an unmanned ship
[28 July 2019 / Mirpur - Dhaka.]

রোদন

বৃক্ষহীন পাথুরে উপত্যকায় বিকশিত
জন্মান্ধ কবির মাতাল মাদলের তালে
কেঁপে কেঁপে কেঁদে উঠলে নদী,
—সহস্র সেতার হয়ে বাজে
দুনিয়ার শেষ জলদস্যু মন;
আর ঠিক তখনই কোথাও
উদাসী সুরের বরষায়—
পলির মতো ভেসে যায় কথা,
নৈঃশব্দের বনে উড়ে যাওয়া
নামহীন রাতপাখির বুকেও
—খা খা করে ওঠে নীরব ক্রন্দন।..
[২৬ জুলাই’১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

উনপাঁজুরে

মনীষার একাংশে তপ্ত মরুভূমি
আর বাকিটায় শীতল জল নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা অমসৃণ পাহাড়—
জীবনের সব মেঘ জমিয়ে রাখে
—তাঁর নিরস নির্নিমেষ চোখে;
যা বরষা হয়ে ঝরেনি কোনোদিন
অরণ্যের সাথে দেখা না হওয়ার আক্ষেপে।
[২৫ জুলাই’১৯ / মিরপুর-ঢাকা।]

© শ্যামল শিশির

১৫ জুলাই ২০১৭

পিতৃদর্শন

পিতা শরীফ আলী আহমেদ’কে উৎসর্গকৃত
না কবিতা না চিঠি
বৈশ্বিক টানা-পড়েনের দহনে নিজেকে সযত্নে পুড়িয়ে প্রতিটি অন্যায় আবদারও অক্লান্ত মনে পূরণ করে যাওয়া মধ্যবিত্ত বাবাকে কবিতা লিখতে দেখিনি কখনো। তবে তার চোখেই প্রথম দেখেছি মহাকাব্যিক উদাসীনতা ভর করা নির্লিপ্ততা; যা অবলীলায় এক শৈশবকে চিনিয়েছে বিক্ষিপ্ত ভাবনার দ্বান্দ্বিকতায় বর্ণিল বিচ্ছিন্নতা। তাই পরে আর বুঝে নিতে কোনো ভুল হয়নি।
প্রিয় বাবা,
তুমিও আসলে তাদের মতোই বর্ণচোরা কবি
যাদের ললাটের ভাঁজে জমে থাকা কাব্যেরা
লুকনোই থাকে, কেউ ঠিক বুঝতে পারে না
হয়ত কবি নিজেও না; তবু তারা এমনই ...
পরিতাপ
হুট করে খুব নিতাইয়ের মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে, সাথে ফকির চাঁনের রুটি। আহা তাদের রসায়নে স্বাদের যে বিউটি তা লুটে নেয়া ফরজ, স্বর্গীয় ডিউটি। শৈশবে চেনা সে রস, স্মরণেও চিত্ত হয় অবশ, ছোটে চন্দ্রদ্বীপে। হারিয়ে যাওয়া ঘরবরণের মালাই আর কালোজাম বা দধিঘরের মাখনের স্বাদও লেগে আছে জিভে। ধুরও —কেমনে যে ফিরি ফের শৈশবে। কত দিন বসি নাই বাবার ফনিক্স সাইকেলের ক্যারিয়ারে। কি সব ব্যারিয়ারে আটকে বড় হয়ে গেছি, বা হতে বাধ্য হয়েছি ধীরে।
পিতার এ ছবিগুলো নানা সময়ে আমার-ই তোলা
নিরাধার
বাড়িয়ে আত্মার ঝড়
পৌঁছে মনের অন্দর
কাঁপিয়ে নামায় বৃষ্টি
পিতার বিষাদ দৃষ্টি
কুপুত্রের কাব্য
সময়ের পথ ধরে বয়স বেড়েছে আপনার। ভাবনার অনাচারে নাজুক হয়েছে দেহ। তবে মুছে যায়নি অতীত। মনে মনে ঠিকই জেগে আছে। যেজন্য প্রবীণ চোখের ভ্রমেও উজ্জল আত্মজ বধের রাগ। বাল্যকালে মননে গেঁথে যাওয়া এ নজরের মানে খুঁজতে গিয়েই ভাবতে শিখেছি। যা ভুলিনি, ভুলতে দেননি। খুনের দলিল লুকানো শরীরে আজও যখন জাগে বুনোগন্ধ নেয়ার সাধ; তখন আপনার প্রাণ যে ঘ্রাণ খোঁজে তা মূলত তাজা লাশের, স্বীয় সন্তানের। হয়ত সাবেক স্ত্রীর ওপর জমে থাকা ক্ষোভের অনলে সতত জ্বলছে আপনার অবচেতন। যারই জেরে সদা জ্বালাতে চেয়েছেন পুরানো সংসারের সব স্মৃতি, এমনকি একমাত্র জলজ্যান্ত প্রমাণও। আদতে এর নেপথ্যের তত্ত্ব মুছে দিতে চায় নিজস্ব কিছু অপ্রিয় সত্য। তবু আপনাকে ভালোবাসি অবিরত। কারণ আমি সন্তান, টানটা জন্মগত। এখন আবার একটু পরিণত; তাই অপরাধবোধও সজাগ। 
প্রিয় পিতা, আপনার হাতে লেগে আছে আমার শৈশব হত্যার দাগ!

০১ এপ্রিল ২০১৭

দুটি বইয়ের দশটি কবিতা


দিনলিপি। ০১০৫০৯


বহুজাতিক কোম্পানির মোড়কে মোড়ানো কনসার্টের শ্রমিক দিবসকে পাশ কাটিয়ে প্রণয় উৎসবের তাড়াহুড়োয় এক যান্ত্রিক যাত্রা ‘ফুলার রোড টু সানরাইজ’। এরপর উৎসবকেও পাশ কাটিয়ে হাইরাইজ বাতাসের আমন্ত্রণে সমর্পিত মনের অতৃপ্তি ঘোচে না বা চাহিদা মেটে না। অবশেষে মনে হয়─ জাপটে ধরা শামুক স্মৃতি আর সুখ শীতল ফানুস শৈশব জীবন বা সময়ের ভুলেও আজ এক চিলতে আশ্রয়।

পরিশুষ্ক পরিশোধে রূপান্তরিত
আদুরে সোহাগ লুটে নিতে গিয়ে
কখনো কি কারো মনে প্রশ্ন জাগেনি─
‘প্রেম কি আদৌ পরিশোধ্য? বা ভালবাসার
পরীক্ষক আর পরিমাপক কে বা কি হতে পারে?’
বাধিত প্রেমের বাতুলতার কবলে তাই নিরবিচ্ছিন্ন অসুখ।

তবু সেই শিকারী চোখের মায়ায় সে বারে বার ফিরেছে ব্যবচ্ছেদের দেয়ালে। এক লাফে উঠে দাঁড়িয়েছে তার উপর; কেঁপে উঠেছে পাঁচ ইঞ্চি পুরু পুরো গাঁথুনি। দেয়ালের উপর বসেই দেখতে পেয়েছে মন্ট্রিলের সী-বিচ আর বেইলী রোডের দূরত্ব কতোটা কম। অথচ মাইগ্রেনের ব্যথায় কাতর শৈশবের টানে ওই দেয়াল ধরেই কাঁপতে কাঁপতে হেঁটেছিলো ফেলে আসা চন্দ্রদ্বীপের দিকে। ট্রেনের ভেঁপুরা লঞ্চের সাইরেন সেজে দাঁড়িয়েছিল কীর্তনখোলার পলিতে। অবশেষে অবসন্ন অবশিষ্টতার মঞ্চে কবি জ্বরে জ্বরাগ্রস্ত মন ভুতগ্রস্ত সংলাপ আওরে প্রলাপের মতো লিখেছিল─

কেমনও আঁধার করেছে ব্যাকুল ক্রোধ
বিস্মিত মননে শহুরে রোদের চুম,
ভাবার আগেই ফিরেছে ভোরের বোধ
বিষাদ নয়নে ফেরারি রাতের ঘুম।
এরপর ছন্নছাড়া ক্লান্ত প্রতিশোধ
কোলাহলের ভিড়েও করেছে নিস্তব্ধ,
বিক্ষুব্ধ ক্ষুধাতেই একাকীত্ব নির্বোধ
তবুও অট্টহাসিতে কাটানো নৈঃশব্দ...

পরিণামে নির্ভেজাল পাথুরে সংলাপে
কথামালা সাজানোর অভিপ্রায়ে মত্ত
ব্যস্ততারা ক্রমাগত মগ্ন নিরুত্তাপে
আর ঘুমঘোরে জেনেছিল সব সত্য।
এমনেই একা জন্মেছিল একাকীত্ব
অথচ বৈকালিক বোধে লীন সতীত্ব...

অবশেষে সব সীমায়িত করা ঘুম, ঘুমে গুম প্রহর আর অচেনা জনপদের মতো অপ্রকাশিত আস্থা গভীর-অগভীরতার খাঁজে। তবুও দ্বান্দ্বিক দৃষ্টি-বদ্ধ সেই ঘুম ঘুমিয়ে ছিল চিরনিদ্রা বা অন্তিম ঘুমের অপেক্ষায়।

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

শবাচ্ছন্ন রাত

বাড়ে শবাচ্ছন্ন রাত
সে বিষাদে কাঁদে চাঁদ
ভাঙা ইমারতে চাপা
গোঙানিময় বাতাসে
যমেরও প্রতিক্ষায়
কারা বাড়ায় দর্শক
অনুমেয় হয় চোখ
শুধু মৃত্যু গননায়
কী উন্নতি উত্তেজনা
সরাসরি সম্প্রচারে
অন্তিম জোৎস্নায় কাঁপা
মুমূর্ষু সাক্ষাৎকারে
খুন হয় খুন বয়
ফের এই বাঙলায়
আর শুনি ঘোষণায়
ঘটা করে হবে শোক
খুনীরাই আয়োজক
মেটাবে খুনের দায়
কালো ব্যাজ পতাকায়

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

বে-ঈমান

এক এবং
অদ্বিতীয়
আপনার
কীর্তি ম্লান
করে যায়
এমন কে
এ ধরার
কোন মর্মে
লুকায়িত
রয়েছে যে
অস্বীকার
করবেইে
এ অস্তিত্ব...

কারই বা
ঈমানে যে
আজ নেই
সে সম্মান;
যা সবাই
আপনাকে
দিয়ে যাচ্ছে
যুগ থেকে
যুগান্তর
ধর্ম থেকে
ধর্মান্তরে

কে'বা করে
অস্বীকার
আপনার
অবদান

অসুর বা
লুসিফর
যে রূপেই
ফরমান
লাভ ইউ,
হে মহান
শয়তান।

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

রেসপেক্ট সিভিলিয়ানস

লুটে নেয় যারা, তারা প্রভু বেশে
চেয়ে দেখে সব ভাগাভাগি শেষে
─ বাকি আছে আরো
─ কে কী নিতে পারো
─ দ্রুত বুঝে নাও
─ যতটুকু পাও
─ এসবই ফাও
আহারে এবার বাড়িয়েছে চান্স
জলপাইরঙা শীতল রোমান্স
চকচকে বুট আর বেয়নেট
পোড়া জনপদে
ভিনদেশী থ্রেট
চেনে অনুগামী সামরিক ঘ্রাণ
যায় যাক প্রাণ
গভীর শঙ্কায়
তব মন চায় ─ বলে দিয়ে যায়
রাঙা ক্ষেপণাস্ত্র বা সাঁজোয়া যান
আনে না যে শান্তি
চেনে না কে স্বস্তি
নয়া সেলফ প্রপেলড কামান
─ এবঙ কবিতা
─ বা ইশতেহার
যা পড়েছো বা পড়ছো এ কালে
সবটুকু ছিলো তোমার আমার
গ্লানিরই মতো
স্বচ্ছ সত্য ক্লান্ত
─ কারণ
স্বাধীন সঙ্গীতে মুখর শ্লোগান
মানে নাই একচোখা ফরমান
কখনো ─
মওকায় যদি অন্য কিছু হবে
নীরব জনতা নীরব না রবে
সব চিনে তারা ভাবে চুপচাপ
কার কোন শত্রু
কার বন্ধু বাপ
─ তবুও
মারপ্যাঁচে জমে রাজ-দুশমনি
বন্দুকের নলে বাহ বিরিয়ানি
দেখে এসবই─
কে যে গুম হয়
কবি না অকবি
কার লাগে ভয়
আবার কে কয়
সমর বিদ্বেষ, দেশদ্রোহ নয়
─ যদিও
বুকে সভ্য ত্রাস
ফেরে কি বিশ্বাস
ভরসা পাই না
বা কোনো আশ্বাস
─ হে বাঙাল সেনা
প্লিজ ─ রেসপেক্ট সিভিলিয়ানস

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)

শহর দর্শন

এক.
উৎসবে বর্ণিল
চেনা এ শহর
অদ্ভুত রঙিন
বিরহে কাতর

দুই.
আমার শহরে
বেহেড সাপেরা
বাসা বাঁধে কবে
কার ইশারায়
সব যায় বোঝা
বোবা থাকা দায়
নাচে চেতনায়
বিষদাঁত ভাঙা
কথার ফোয়ারা
আর সব মেনে
কারা তারা যায়
রাজপুত্র সাজা
সাপের গুহায়
বড় অসহায়
সাদামাটা যারা
মৃত্যু ভয়ে চুপ
আশাহত খুব
হয়ে গেছে ভুলে
কে জেগে আজও
কার ঘুম নাই
প্রাণ খুলে বাঁচো
এই মন্ত্র জানা
কোন সর্বহারা
অস্ত্র আর দীক্ষা
জমা দেয় নাই

কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)


***
যৌন জেহাদের যুগে
যে উত্তেজনায় ভুগে
লোভজ্বরে লালায়িত
মুজাহিদ মন খোঁজে
বেহেশতি আয়োজন
তার তরে বেলাগাম
আদিম অস্ত্র ফতোয়া
আরব্য ধর্ম বাণিজ্য
আধুনিকায়নে আহা
কতই না কার্যকরি─
জিহাদ আল নিকাহ।
কী অন্ধ ঈমানে হায়
তিউনিসিয়ার নারী
ধর্মের ঘোড়ায় চড়ে
সিরিয়াতে দেহদাসী;
না জানি─ ওরাই হুর
পূণ্যের হিসাব মাপে
হালাল যৌনাচার ও
জেহাদি জোশের ঠাঁপে
হয়ত তারাও জানে
এ যমানা নৃ’র নয়;
দ্বীনের বীর্যের তাপে
ইমাম পণ্ডিত কাঁপে
‘ধার্মিক’ মন্ত্রণালয়।

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

***
নিশ্চয় চেনে গুমকৌশল
জানে অন্ধ চাপাতির বল
তথাপি ভাববেন না প্রভু
সব মুখ বুঝে সয়ে কভু
─বাঙাল মন রবে দুর্বল

তামাম সাম্প্রদায়িক ছল
সংখ্যালঘু চোখের জল
মুছে দিতে ফিরবেই কভু
সাচ্চা মোজাদ্দেদি দেজা ভু

দুনিয়ার যে যে জনপদ
যুগ-যুগান্ত মেপে দেখছে
অনুদারতার সহবত
তারা জানে কেমনে মহৎ
মানুষ ঠেকেই সব শেখে
অসির মুখে দাঁড়ায় কারা
মসির ওপর আস্থা রেখে

যদিও এ যুগের যা দিন
মতপ্রকাশে রাখতে হবে
কবিরও মাজায় মেশিন

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

***
স্রষ্টার তরফে
বীর্যের হরফে
লেখে সোবাহান
মোল্লারা মহান
আর রাষ্ট্রধর্ম
ধর্ষকের চর্ম
মোটা করে খুব
─প্রতিবাদী চুপ
ভাবছে কি লাভ
করে ঘেউ ঘেউ
লাগে যদি ফেউ
─ও হিন্দুর বউ
আমার কী কেউ
মেরে থাকি ঝিম
আমি মুসলিম
সাচ্চা নাগরিক
সাংবিধানিক
সরকার জানে
কি ঠিক বেঠিক

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

***
যদি এক রাতে
দেখ অপঘাতে
মরে পড়ে আছি
খুব কাছাকাছি
পরিচিত কায়া
দেখে বড় ঠেকে
দেখিও না মায়া
ছায়ারও আগে
সরে যেও তুমি
জেনে নিও আমি
বলেছি নিশ্চিত
যে আমার খুনী
সে মূলত ছিলো
আত্মহত্যাকারী
গণিতের বীজ
নিয়ে ঘোরা কোনো
সন্দেহপ্রবণ
আগোছালো গল্প
নিছকই অল্প
ছকে যা লিখেছে
দিল্লি-পেন্টাগন
আর নির্যাতন
সইতে না পেরে
বোঝে যে অবুঝ
বাকিঙহাম বা
লাওহে মাফুজ
ক্ষমা করে সব
হত্যাকারীকেও
হতে পারে সে’ও
যে বেওয়ারিশ
তা’ও জেনে নিও

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)


***
─স্মরণে কৈবর্ত বিদ্রোহ

নিশ্চিত অনার্য আমি আদি কৈবর্তের ছেলে
সহস্র জনমে ছিলেম - মিঠে জলের জেলে
বার বার ফিরেছি বঙগে, ফিরিয়েছে মোহ
- মননে অনিবার্য আজও বরেন্দ্রী বিদ্রোহ।

অহিঙস ধর্মের নামে ক্ষিপ্ত সহিঙসতা-
রুখেছিলো যে কৌশলে এই নদীমাতৃকতা
যুগ-যুগান্তর ধরে যাচ্ছিলাম লিখে তারে
সেই অপরাধেই খুন হয়েছি বারে বারে।

গায়ের রঙটা কালো, গাই স্রোতস্বিনী সুরে
মোর রক্তে কত প্রাণ জানে পাল অন্তুপুরে।

মনে পরে সেবার - ছিলেম গঙ্গার উত্তরে
স্বর্ণকলসে বশীভূত লোভাতুর স্বীয়জাত
কী জলদি মিলিয়ে রামপালের হাতে হাত
প্রকাশ্যেই মদদ দিয়েছে আমার হত্যারে।

আরো কতবার মরেছি স্বজাতি সূত্রে ইস!
কখনো পলাশী, কখনো বা ধানমণ্ডি বত্রিশ
তবু ফিরেছি ফের কূটরুধির করতে হিম
আমি দিব্য, আমিই সেই রুদোকপুত্র ভীম।

কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)

১৪ মার্চ ২০১৭

নতুন তিনটি কবিতা

সাঙ্গুস্নান

বেদাগ বিবাগ

সব কথা থেমে গেলে বোতলের তলানিতে জমে থাকা মদ তূল্য সূত্রের ফসিল গলে ফিরে যায় দিনগুলো অতীতের চোরা পথে ফেলে আসা মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ যে বাঁকে, তামাম মায়ার বোঝা কাঁধে লয়ে সেখানে গিয়েছিলাম বোধকরি দেড় দশক আগে; নিজেরে দিয়ে বলি খুশী করতে ঠিক কাকে তা মনে পড়ছে না। [১৩ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

অপ্রমাদ
বীতনিদ্র প্রতীতির জলে
লিখে রাখে অবিমৃষ্য মন
‘বিরহের রাত ঘন হলে
কমে যায় ঘুমের ওজন’
[১২ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

নির্বেদ
ফাগুনের মধ্য দুপুরে চৈত্রের ঊষর মাঠের মতো খা খা করে ওঠে বুক, সুবিপুল খর জলরাশি মাঝে মিঠাপানিহীন ষোল রাত কাটানো হালভাঙা একলা মাঝির সমান ক্ষয়িত মনে কোনো কথা ফোটে না; পুত্রের আঘাতে নিহত পিতার গ্লানিতূল্য মানবিক কলুষতা জমছে জাগ্রত নৈরাশ্যের বেগতিক প্রার্থনায়। [১৪ মার্চ ২০১৭; পল্লবী, ঢাকা।]

* পড়ুন আরো দুটি লেখা
ভীমরতি / সৈয়দুন্নেছার সন্ধ্যা

১১ মার্চ ২০১৭

নতুন দুইটি কবিতা

ভীমরতি
সোনা রোদে পোড়া পৌঢ়া
আউশের সুবাস জড়িয়ে
ক্ষেতের শিথানে শোয়া
নদীমুখো মেঠো আল ধরে
- ছোটা শৈশবের
জমিনে সূচিত সব সাধ
আহ্লাদ হয়ে ঝুলছে।

১০ মার্চ ২০১৭
পল্লবী, ঢাকা।

সৈয়দুন্নেছার সন্ধ্যা
অদূরের প্রেমহার খালে জোয়ারের অপেক্ষায় থাকা নাইওরী নৌকাসম অলসতা ভর করা সন্ধ্যাগুলো যখন শতবর্ষী তেঁতুল গাছের ঘন ছায়ার মতো গাঢ় করে তোলে অতীতের অবয়ব, ঠিক তখন-ই উত্তরমুখী মাস্তুলে দাঁড়িয়ে কলা-বাড়ির সাঁকোর তল দিয়ে চাচৈরের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় বহু বর্ষ পূর্বে প্রয়াত এক বৃদ্ধা সৈয়দজাদীর ততোধিক পুরানো প্রতীক্ষা; তথা শরীফ বাড়ির সুন্দরী বালিকা বধূর অপেক্ষাক্রান্ত হিজলরঙা সায়াহ্নের দৃশ্যাবলী।

১০ মার্চ ২০১৭
পল্লবী, ঢাকা।
newsreel [সংবাদচিত্র]