Powered By Blogger
হত্যা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
হত্যা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০১ জুলাই ২০১৮

ঘুরে দাঁড়িয়েছে হোলি আর্টিজান

হোলি আর্টিজান বেকারির নতুন আউটলেট। ২৯ জুন ২০১৮।
ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে হোলি আর্টিজান বেকারি। দুই বছর আগের এই দিনে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসা এই প্রতিষ্ঠানের পরিসর অবশ্য ছোট হয়ে গেছে। এখনও চালু হয়নি এর অন্যতম অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও’চিকেন রেস্তোরাঁ। তবে হামলার পূর্বাবস্থার সাথে তূলণা করে বেকারির বিক্রয় বিভাগের কর্মচারী সাইদুল ইসলাম সাইদ এই প্রতিবেদককে বলেন, আগের তূলণায় বিদেশী ক্রেতার সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছ।
হামলার ১০ মাস পর গুলশান এভিনিউয়ের র‌্যাঙ্গস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় ছোট আয়োজনে পুনরায় চালু হয় এই বেকারি। গত শুক্রবার সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা  গেছে, ৫০০ বর্গফুট জায়গার বেকারিটিতে মাত্র ২০ জন অতিথি বসার জায়গা রয়েছে। অথচ আগে দুই হাজার বর্গফুট জায়গায় একসঙ্গে ৫০ জন অতিথি বসার ব্যবস্থা ছিল। তাছাড়া আগে বেকারির ঠিক পাশেই ছিল রেস্তোরাঁটি। 
ঘটনার ১১ দিন পর, ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ফেসবুক পেইজ থেকে পোস্ট দিয়ে তাদের আরেক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইজুমির মাধ্যমে ডেলিভারি (বিলি) সেবা চালুর ঘোষনা দেয় তারা। গুলশান দুই নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের পাঁচ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’চিকেন রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর তাদের ওই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একই এলাকার ১১৩ নম্বর রোডের ২৪/সি নম্বর বাড়িতে কার্যক্রম চালানো ইজুমির বিক্রয় কর্মী রাকিব আহমেদ রকি সেদিন এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন,  হামলার রাত থেকেই দোকানটি বন্ধ রাখা হয়েছিল।

হোলি আর্টিজান বেকারির নতুন আউটলেট। ২৯ জুন ২০১৮।
সেই রকি গত দেড় বছর ধরে হোলি আর্টিজান বেকারির নতুন আউটলেটে কাজ করছেন। তিনিও শুক্রবার বলেন, এখনও আমাদের দেশী ক্রেতার চেয়ে বিদেশী ক্রেতাই বেশী। যেহেতু বিভিন্ন দেশের মানুষ আসেন, তাই এখানে বেকারি পণ্যের  বৈচিত্রও কমেনি। অন্যদিকে সাইদ বলেন, আসলে আমাদের প্রতিটি আইটেমই জনপ্রিয়। একেক দেশের মানুষ একেক ধরণের খাবার বেশী পছন্দ করেন। তিনিও প্রায় তিন বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে এবং প্রায় ১০ বছর ধরে বেকারির অন্যতম অংশীদার সাদাত মেহেদী অধীনস্থ হিসাবে কাজ করছেন।
সাইদ, রকিসহ আরো একাধিক কর্মচারীর সাথে আলাপে জানা গেছে, হামলার আগে বেকারিতে ২৫ জন স্টাফ ছিল। এখন আছেন মাত্র আট জন। এর মধ্যে দুই জন নতুন, বাকি সবাই পুরানো। তাদের কেউই হামলার ঘটনা নিয়ে কথা বলতে চাননি। তাদের দাবি, মালিকের অনুমতি নেই।  
তবে বেকারির অন্যতম অংশীদার আলী আর্সেনাল বলেন, আমরা (মালিক পক্ষ) তো অনুমতি দিয়েই রেখেছি। ওদের (কর্মচারীদের) কারো কিছু বলার থাকলে গণমাধ্যমে বলতে পারে। মালিকের এমন বক্তব্য শুনে সাইদ বলেন, হামলার ঘটনা নিয়ে কথা বলতে আর ভালো লাগে না। ওই দিনটি আমরা মনে করতে চাই না। একই প্রতিক্রিয়া অন্যদেরও। ‘মর্মান্তিক ওই হামলার ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি,’ উল্লেখ করে আর্সেনালও বলেন, এ নিয়ে কথা বলতে আপত্তি নেই আমাদের। যদিও বারবার ওই দুর্বিসহ সময়টাকে স্মরণ আসলে-ই প্রচ- পীড়াদায়ক।” 

তালাবদ্ধ পুরানো আর্টিজান:  সরেজমিনে হোলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’চিকেন রেস্তোরাঁয় পুরানো আউটলেটে গিয়ে দেখা যায় সেটির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মী নুরুজ্জামান জানান, এটি মূলত তালাবদ্ধই থাকে। মালিকদের মধ্যে সাদাত মেহেদী  মাঝে মধ্যে আসেন। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার চলে যান। হামলার ঠিক এক মাস আগে এই বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন পটুয়াখালীর এই যুবক। 
এদিকে পুরানো হোলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’চিকেন রেস্তোরাঁ চত্ত্বরে গত বছরের মতো এবারও শোক উদযাপনে বিশেষ আয়োজন রাখা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরাসহ, বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলে সমবেত হবেন সেখানে। 
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, সেখানে সকাল ১০টা থেকে দুপুর দুইটা অবধি নিহতদের স্মরণের আয়োজন থাকবে। এছাড়া নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের স্মরণে এবার একটি বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিন মিয়া জানান, ওখানকার অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে গুলশানের পুরানো থানা এলাকায় হামলায় নিহত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খানের ম্যুরাল উন্মোচন করা করা হবে।  
আবু বকর সিদ্দিকী এবং মো. সালাহউদ্দিন মিয়া, দু’জনেই দাবি করেন, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুরো গুলশানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতটা সুরক্ষিত হয়েছে, আগে তেমনটা ছিল না। এখন পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে এই কূটনৈতিক এলাকায় ঢোকা বা বের হওয়া অসম্ভব।  বর্তমানে পুলিশ মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই গুলশানকে নিশ্চিদ্র করে ফেলার সামর্থ্য রাখে। গুলশান এভিনিউয়ে হোলি আর্টিজানের নতুন আউটলেটের সামনেও রয়েছে তাদের দুইটি চেকপোস্ট।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হোলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’চিকেন রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় মারা যান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিরা রেস্তোরাঁর ভেতর নিষ্ঠুর কায়দায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। পরে সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। 

হোলি আর্টিজান বেকারির পুরানো আউটলেট ভবন চত্ত্বর। ২৯ জুন ২০১৮।

০১ নভেম্বর ২০১৫

ভয় পেও না, সাবধান থেকো ...

ফয়সাল আরেফিন দীপন
‘ভয় পেও না, তবে সাবধান থেকো।’ - লেখার সুবাদে পাওয়া হুমকীর খবর জেনে ঠিক এভাবেই আমায় অভয় দিয়েছিলেন, গত আগস্টে । সর্বশেষ কথা হয়েছিলো দিন পনেরো আগে। জানতে চেয়েছিলাম - কেমন আছেন? তার জবাব ছিলো - ‘খুব বেশি খারাপ।’ পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম - কেন? শরীর মুষড়েছে, না মন? নাকি প্রকাশনীর অবস্থা? কোনো জবাব পাইনি আর। গত রাতে ঘরে ফিরেই মৃত্যুর খবর পেলাম তার। বিদায় শ্রদ্ধেয় ফয়সল আরেফিন দীপন। যদিও আপনাকে এভাবে বিদায় দিতে চাইছে না মন।

বঙগে ধর্মের দোহাই দিয়ে চলতে থাকা সিরিয়াল কিলিঙ এর সর্বশেষ শিকার প্রকাশনা সংস্থা ‘জাগৃতি’ - এর মালিক দীপন। পবিত্র জুম্মাবারের ঠিক পরদিন গতকাল (৩১ অক্টোবর) তিনি ছাড়াও জখমের শিকার হয়েছেন প্রকাশনা সংস্থা ‘শুদ্ধস্বর’ মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুল। তারা দু’জনেই উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের লেখা বই প্রকাশ করেছিলেন। নিজ নিজ প্রকশনালয়েই খুন হন তারা। দুই জায়গাতেই হামলার পর কার্যালয়ের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যায় খুনীরা। লালমাটিয়ায় টুটুলকে হত্যা করতে গেলে তাঁর সঙ্গে থাকা দুই ব্লগার তারেক রহিমরণদীপম বসুকেও দুষ্কৃতকারীরা কুপিয়ে দরজা বন্ধ করে রেখে যায়।

গত বছর কবি মিছিল খন্দকারকে সাথে নিয়ে গড়া প্রকাশনী কাদাখোঁচা চালুর ব্যাপারে যাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা ও সার্বক্ষণিক উৎসাহ পেয়েছি তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফয়সল আরেফিন দীপন। আমাদের সবগুলো গ্রন্থের পরিবেশক তারই প্রকাশনী। শাহাবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়  দীপন ভাইয়ের পুরানো অফিসে গল্প করতে গিয়ে তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সাথেও দেখা হয়েছে বেশ কয়েকবার। জ্ঞানী এই মানুষটির সামনে এ দেশের মিডিয়া, মানুষ এখন কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝতেও ইচ্ছে করছে না।

ছেলে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ, হতাশ এই বাবা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি কোনো বিচার চাই না। চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, যাঁরা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন, উভয় পক্ষ দেশের সর্বনাশ করছেন। উভয় পক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। এটুকুই আমার কামনা। জেল-ফাঁসি দিয়ে কী হবে।’ এমন পিতার সন্তানের রক্ত বৃথা যাবে না নিশ্চয়ই। কারণ এই বাঙালরা রক্ত দিয়ে মুক্তির গান লিখতে জানে।
ফেসবুকের ভেতরবাক্সে দীপন ভাইয়ের সাথে হওয়া কথোপকথন পড়ছিলাম রাতভর। কত কথা তার সাথে, কত না বিষয়ে। কখনো কখনো খুব সাধারণ কথাবার্তার মধ্যেও যে তিনি নানা ইশারা, ইঙ্গিত দিয়েছেন - তা এখন কিছুটা বুঝতে পারছি হয়ত। এই যেমন গত জুলাইয়ে কথা হচ্ছিলো -

- কেমন আছেন ভাই?
- চলছে। শরীর ভালো না।
- জ্বর নাকি?
- না। ব্লাড সুগার অনেক বেশি
- ওহ, এটা'তো ভালো না। হাঁটাহাঁটি করেন? খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল?
- হয়ে ওঠে না। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে!
- তা’ও যত দিন আছেন সুস্থ থাকতে হবে’তো। তিনতলায় আপনার অফিস কত নম্বরে?
- ১৩১, একদম পেছনের সারিতে।
- হুমম, আইসা পরুমনে।
- অবশ্যই।
সেই কবে, তিন মাস আগে বলেছিলাম যাওয়ার কথা। কিন্তু নাহ, তার নতুন অফিসে আর যাওয়া হয়নি। হবে হয়ত কখনো। কিন্তু তার সেই সদাহাস্যজ্জল মুখটা আর দেখা হবে না।  তবুও মনের সাহস বাড়াতে তার সেই কথাই ফের নিজেকে বলছি আজ; বলছি সমমনা সহযোদ্ধাদেরও - ‘ভয় পেও না, তবে সাবধান থেকো।’
আগামী ৫ নভেম্বর শুরু হবে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির শাহবাগ শাখা
আয়োজিত হেমন্তের বইমেলা। শাহাবাগের পাবলিক লাইব্রেরির উন্মুক্ত চত্বরে অনুষ্ঠিতব্য এই
মেলার আহবায়কও ছিলেন দীপন ভাই, মানে ফয়সল আরেফিন দীপন।


কতিপয় সংবাদের সংযোগঃ
>
তিনজনকে কুপিয়ে দরজায় তালা দিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা
> স্বজনেরা উদ্ভ্রান্ত
> সরকার হতভম্ব
> দরজা খুলে বাবা দেখলেন ছেলের রক্তাক্ত দেহ
> ‘আমি কোনো বিচার চাই না’
newsreel [সংবাদচিত্র]