হোলি আর্টিজান বেকারির নতুন আউটলেট। ২৯ জুন ২০১৮। |
হামলার ১০ মাস পর গুলশান এভিনিউয়ের র্যাঙ্গস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় ছোট আয়োজনে পুনরায় চালু হয় এই বেকারি। গত শুক্রবার সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০০ বর্গফুট জায়গার বেকারিটিতে মাত্র ২০ জন অতিথি বসার জায়গা রয়েছে। অথচ আগে দুই হাজার বর্গফুট জায়গায় একসঙ্গে ৫০ জন অতিথি বসার ব্যবস্থা ছিল। তাছাড়া আগে বেকারির ঠিক পাশেই ছিল রেস্তোরাঁটি।ঘটনার ১১ দিন পর, ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ফেসবুক পেইজ থেকে পোস্ট দিয়ে তাদের আরেক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইজুমির মাধ্যমে ডেলিভারি (বিলি) সেবা চালুর ঘোষনা দেয় তারা। গুলশান দুই নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের পাঁচ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’চিকেন রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর তাদের ওই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একই এলাকার ১১৩ নম্বর রোডের ২৪/সি নম্বর বাড়িতে কার্যক্রম চালানো ইজুমির বিক্রয় কর্মী রাকিব আহমেদ রকি সেদিন এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, হামলার রাত থেকেই দোকানটি বন্ধ রাখা হয়েছিল।
হোলি আর্টিজান বেকারির নতুন আউটলেট। ২৯ জুন ২০১৮। |
সেই রকি গত দেড় বছর ধরে হোলি আর্টিজান বেকারির নতুন আউটলেটে কাজ করছেন। তিনিও শুক্রবার বলেন, এখনও আমাদের দেশী ক্রেতার চেয়ে বিদেশী ক্রেতাই বেশী। যেহেতু বিভিন্ন দেশের মানুষ আসেন, তাই এখানে বেকারি পণ্যের বৈচিত্রও কমেনি। অন্যদিকে সাইদ বলেন, আসলে আমাদের প্রতিটি আইটেমই জনপ্রিয়। একেক দেশের মানুষ একেক ধরণের খাবার বেশী পছন্দ করেন। তিনিও প্রায় তিন বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে এবং প্রায় ১০ বছর ধরে বেকারির অন্যতম অংশীদার সাদাত মেহেদী অধীনস্থ হিসাবে কাজ করছেন।
সাইদ, রকিসহ আরো একাধিক কর্মচারীর সাথে আলাপে জানা গেছে, হামলার আগে বেকারিতে ২৫ জন স্টাফ ছিল। এখন আছেন মাত্র আট জন। এর মধ্যে দুই জন নতুন, বাকি সবাই পুরানো। তাদের কেউই হামলার ঘটনা নিয়ে কথা বলতে চাননি। তাদের দাবি, মালিকের অনুমতি নেই।
তবে বেকারির অন্যতম অংশীদার আলী আর্সেনাল বলেন, আমরা (মালিক পক্ষ) তো অনুমতি দিয়েই রেখেছি। ওদের (কর্মচারীদের) কারো কিছু বলার থাকলে গণমাধ্যমে বলতে পারে। মালিকের এমন বক্তব্য শুনে সাইদ বলেন, হামলার ঘটনা নিয়ে কথা বলতে আর ভালো লাগে না। ওই দিনটি আমরা মনে করতে চাই না। একই প্রতিক্রিয়া অন্যদেরও। ‘মর্মান্তিক ওই হামলার ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি,’ উল্লেখ করে আর্সেনালও বলেন, এ নিয়ে কথা বলতে আপত্তি নেই আমাদের। যদিও বারবার ওই দুর্বিসহ সময়টাকে স্মরণ আসলে-ই প্রচ- পীড়াদায়ক।”
তালাবদ্ধ পুরানো আর্টিজান: সরেজমিনে হোলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’চিকেন রেস্তোরাঁয় পুরানো আউটলেটে গিয়ে দেখা যায় সেটির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মী নুরুজ্জামান জানান, এটি মূলত তালাবদ্ধই থাকে। মালিকদের মধ্যে সাদাত মেহেদী মাঝে মধ্যে আসেন। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার চলে যান। হামলার ঠিক এক মাস আগে এই বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন পটুয়াখালীর এই যুবক।
এদিকে পুরানো হোলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’চিকেন রেস্তোরাঁ চত্ত্বরে গত বছরের মতো এবারও শোক উদযাপনে বিশেষ আয়োজন রাখা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরাসহ, বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলে সমবেত হবেন সেখানে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, সেখানে সকাল ১০টা থেকে দুপুর দুইটা অবধি নিহতদের স্মরণের আয়োজন থাকবে। এছাড়া নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের স্মরণে এবার একটি বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিন মিয়া জানান, ওখানকার অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে গুলশানের পুরানো থানা এলাকায় হামলায় নিহত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খানের ম্যুরাল উন্মোচন করা করা হবে।
আবু বকর সিদ্দিকী এবং মো. সালাহউদ্দিন মিয়া, দু’জনেই দাবি করেন, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুরো গুলশানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতটা সুরক্ষিত হয়েছে, আগে তেমনটা ছিল না। এখন পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে এই কূটনৈতিক এলাকায় ঢোকা বা বের হওয়া অসম্ভব। বর্তমানে পুলিশ মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই গুলশানকে নিশ্চিদ্র করে ফেলার সামর্থ্য রাখে। গুলশান এভিনিউয়ে হোলি আর্টিজানের নতুন আউটলেটের সামনেও রয়েছে তাদের দুইটি চেকপোস্ট।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হোলি আর্টিজান বেকারি এবং ও’চিকেন রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় মারা যান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিরা রেস্তোরাঁর ভেতর নিষ্ঠুর কায়দায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। পরে সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
হোলি আর্টিজান বেকারির পুরানো আউটলেট ভবন চত্ত্বর। ২৯ জুন ২০১৮। |