Powered By Blogger

১০ আগস্ট ২০১৫

মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...

আমি ঈয়ন, দাপ্তরিক নাম শরীফ খিয়াম আহমেদ। জন্ম খুলনা হলেও শেকড় ও বেড়ে ওঠা বরিশালে। হিজরত বা কর্মসূত্রে বর্তমান আবাস কোটি মানুষের শহর ঢাকায়। পেশা লেখালেখি, চিত্রগ্রহণ ও মুক্ত সাংবাদিকতা। এর আগে ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি অবধি ‘মেইনস্ট্রিম’ সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলাম। এরই মাঝে ২০০৮ সালে সামহোয়্যার ইন ব্লগ দিয়ে আমি ‘ব্লগিঙ’ শুরু করি। অর্থাৎ স্বাধীন সাংবাদিকতা শুরুর বেশ আগেই ব্যক্তিগত ব্লগগুলোয় আমি বিভিন্ন সংবাদ ও নিজস্ব অভিমত প্রকাশ করে আসছি। পরবর্তীতে স্বাধীন সাংবাদিকতার মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ব্লগকেই বেছে নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৯ জুলাই দিবাগত রাতে আমি অশালীন সংবাদ প্রকাশকারী সাইট নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করি। যার জেরে গত ১০ জুলাই সন্ধ্যায় ‘আধাঘন্টার মধ্যে তোরে খুঁইজা বাইর কইরা মাইরা ফালামু’ – টাইপ অজস্র হুমকী পেতে হয় আমায়।
হুমকীদাতা চটি সংবাদ নির্ভর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। নিজেকে ভারতের কোলকাতা রাজের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ভাগ্নি জামাই পরিচয় দিয়ে তিনি প্রথমত দাবি করেছিলেন, আমি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিতে চেয়েছি। তার অভিযোগ, ব্যক্তিগত ব্লগ প্রেস এন্ড প্লেজারে -‘মাহে রমজানে চটি সাংবাদিকতা’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করে আমি এই চেষ্টা করেছি।
সম্ভবত আমার ফটোগ্রাফীর পেইজ থেকে আমার মোবাইল নম্বর +880 1715 ****** সংগ্রহ করে প্রথমে +8801672 ****** এবং পরে +880 447-800 **** নম্বর দিয়ে তিনি তার অভিযোগ ও হুমকী প্রকাশ করেন। দুপুর থেকে রাত অবধি বেশ কয়েক দফা আলাপের পরও তিনি শান্ত না হওয়ায় একসময়ে আমি লেখাটি মুছে ফেলে তার ক্ষোভ কমানোর চেষ্টা করি।

ওই রাতেই পুরো ঘটনা বর্ণনা করে একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি)’র খসড়া তৈরী করি। কিন্তু সেটি পড়ে নিজেরই মনে হয় লেখার ধরণ বা হুমকীদাতার অতিরঞ্জনে বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে যে, এটির কপি যদি সরকার বিরোধী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে যায় তবে পুরো ঘটনাটি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। এমনকী আমি নিজেও স্রেফ গুটিতে পরিণত হতে পারি। এমন চিন্তা থেকে বিষয়টি কয়েকজন সিনিয়র লেখক, ব্লগার ও সাংবাদিক বন্ধুকে জানিয়ে নীরব হয়ে যাওয়াই স্রেয় মনে করি। তবে এর আগে উল্লেখিত লেখাটি মুছে ফেলার জন্য আমার ব্লগের পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সেখানে আরেকটি লেখা পোষ্ট করি। ‘পাঠক, ক্ষমা করবেন ... ’ - শিরোনামে ১৯ জুলাই প্রকাশিত ওই লেখায় নেপথ্যের কোনো ঘটনা উল্লেখ করা হয়নি। চেপে যাওয়া হয়েছে ওই অনলাইনের নামটিও। তবুও আবার হুমকী পেলাম। এবার কারণ - ব্লগ পাঠকদের কাছে ওই ‘ক্ষমা চাওয়া’।
গুম হওয়া লেখাটির শেয়ার করা সংযোগ
গত ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় সেই পুরানো হুমকীদাতা আমার মোবাইলে আবার ফোন করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি আবার ওই জায়গায় (ব্লগে) দুঃখ প্রকাশ করছেন। আমার ভাবতে ইচ্ছে করছে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আপনি, যে একটা দুঃখ প্রকাশ করলেন। বা আপনার ব্লগটা দেশের নাম্বার ওয়ান ব্লগ, আপনি সব ব্লগের সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু এইটা আসলে আপনি এখন নিজে একটু চিন্তা কইরা দ্যাখেন। আপনি আপনার ওয়েটটা চিন্তা করেন, আপনার ব্লগের মার্কেটিঙটা চিন্তা করেন, আপনার পপুলারিটি চিন্তা করেন। এই সবকিছু নিয়া আপনার যে পোস্টটা, সেটায় কয়টা লাইক, কয়টা কমেন্ট পরছে – সেটাও চিন্তা করেন। এইখানে দুঃখপ্রকাশ কইরা কি হইছে? আপনি কার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন?’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি একটু কষ্ট পাইলাম যে আপনি আবার ওইটা দিছেন। আপনার অনেক বড় ব্লগতো আসলে! আমরাও (*** বার্তা ডটকম) এমন দুঃখ প্রকাশ করি না। আমাগোও মাঝে মধ্যে একটু-আধটু ভুল হয়।’
এর আগে হুমকীদাতা জানান, কোনো একটি গোয়েন্দা সংস্থা তার নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। নির্দেশ পাওয়া মাত্র তারা আমাকে ‘সাইজ’ করে ফেলবে। এছাড়া তিনি আমাকে জামায়াত-শিবিরপন্থী আন্দাজ করে এটাও জানান যে, জামায়াত ও শিবিরের উচ্চমহলের সাথে তার খুবই ভালো যোগাযোগ আছে। তিনি চাইলে তারাই আমাকে একদম ‘ডলা’ দিয়ে দেবে।
১৯৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের দিকে ইঙ্গিত করে তার বক্তব্য- ‘যে কয়জনের ফাঁসি হইছে না, তার মধ্যে একজনের ছেলে আছে আমার বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। ভিতরে আছে এ রকম তিনজনের ছেলেও আমার বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড মানে কি জানেন? ওরা আমার বাড়িতে থাকে, আমার বাড়িতে খায়। আমি ওদের বাড়িতে থাকি, ওর বাড়িতে খাই। এরকম, বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। এমনকী আমি অনেক জায়গায় তাদের মিডিয়াপার্সন হিসাবেও কাজ করি। তাই ওদের নিয়া অনেস্টলি আমি ভয় পাইতেছি না।’ শিবিরের মাসুদ নামের কোনো এক ব্যক্তির সাথেও আমার ব্যাপারে আলাপ হয়েছে বলে তিনি জানান।

পরবর্তীতে এক চিত্রপরিচালকের স্ত্রীকে আমার ‘গডমাদার’ সন্দেহ করার কথাও জানান হুমকীদাতা। ওই পরিচালকের বউ তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে এসেছিলেন, কিন্তু তাকে চাকরি দেয়া হয়নি। এরই জেরে তার নির্দেশেও আমি - হুমকীদাতা এবঙ তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারি। তিনি আরো বলেন, ‘কালের কণ্ঠ পত্রিকার যে কোনো একজন আমাকে বলেছে, আমাকে নিয়ে করতে (লিখতে) তো সাহস পায় না। কারণ আমারে নিয়া করলে (লিখলে) তো জানে বসুন্ধরা গ্রুপের। আইনা যেখানে মাটি ভরাট করতেছে ওইখানে ফালাইয়া ভরাট কইরা দিবো।’
ব্লগিঙের কারণে এর আগেও আমি বহুবার হুমকী পেয়েছি। কখনো ভারতপন্থী দালাল, আবার কখনো পাকিস্তানপন্থী ছাগু আখ্যা দিয়ে আমাকে ভার্চুয়ালি আক্রমণ করা হয়েছে। বাস্তবিক হুমকী পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। অন্যকোনো ব্লগারকেও এভাবে দফায় দফায় ফোন করে হুমকী দেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যে কারণে পূর্বপর্তী (১০ জুলাই সন্ধ্যায় দেয়া) হুমকীর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোও আপনাদের, তথা আমার ব্লগের পাঠকদের জানিয়ে রাখা উচিত বলেই মনে করছি।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ অনলাইনটির সাথে বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী জড়িত জানিয়ে হুমকীদাতা বলেছিলেন- “খোদার কসম তোরে আমি জবই কইরা ফালামু কুত্তার বাচ্চা। এক্কারে জবাই কইরা ফালামু চোদানীর পোলা। তোর বউ, মা, বোন যা আছে তাগো সব ল্যাংটা কইরা ছবি তুইলা দিয়া দিমু খানকির পোলা। তুই চিনস আমারে? তরে এম্নেও ধরুম, অম্নেও ধরুম। তোর নয় বছরের জার্নালিজম গোয়া দিয়া ভইরা দিমু।” তার আগে কথা প্রসঙ্গে তাকে জানিয়েছিলাম আমি প্রায় নয় বছর মেইস্ট্রিম জার্নালিজম, মানে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা করেছি।

হুমকীদাতা আরো বলেছিলেন, “ভাই আমি আপনারে পরিস্কার কইরা কইলাম, খোদার কসম ঢাকা শহরে আপনি যে কোনায় থাকেন কুটি কুটি কুটি কইরা হালামু আমি আপনারে, পিটাইয়া। লোক দিয়া পিটামু না, প্রশাসন দিয়া পিটামু। আপনারে খুঁইজা কালকে সন্ধ্যার মধ্যে আপনারে আমি আমার হাতে লইয়া আমু। কাল ইফতারের আগে আপনি আমার হাতে থাকবেন এইটা আপনারে গ্যারান্টি দিয়া কইলাম।” এর আগে ব্লগের পোস্টটির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনি এটা লিখে প্রশাসনের নজরে চলে আসছেন। কারণ আমি একটা ‘ভাইটাল ইস্যু’ এ দেশে। গাঙ দিয়া ভাইসা আসি নাই। থানা, পুলিশ, মন্ত্রী, মিনিস্টার - সবই লবিঙ করা আছে আমার। আপনার ভিতর কি ভয় ডর নাই? চোখ বন্ধ কইরা একটু চিন্তা করেন তো আপনি একটা কি? কোন হ্যাডমডা?

minar & mandir | Barisal'06
হুমকীদাতা বলেছিলেন, “তোগো মতো বাল ছাড়া পোলাপান আমার কিছু করতে পারবো না খানকির পোলা। তোর চেহারা দেখলেই বোঝা যায় কি কইরা খাইতে পারবি। ফকিন্নির পোলা, বাপে বেঁচত আলু। আইছস ঢাকা শহরে, ধোন খুইলা খিঁচছস, ভাবছস ঢাকার প্রেসিডেন্ট। ফাজিল পোলাপান শালা। পুলিশের মাইর খাইলে কি বাঁচবি? তোর কি জীবন বাঁচব? তোর যা শরীর। চেহারা দেখলেই বোঝা যায় তুই ‘বাবাখোর। কাইলকা ইফতারের আগে আমি তোর সামনে আইতেছি। দেখুম তোর কত হ্যাডম হইছো। তুই কত লিখতে পারস, তোর ধোনে কত কালি হৈছে, আমি দেখুম।” এর আগে তিনি বলেন, “ভাই পাগলেও তো নিজের ভালো বোঝে। এত্ত মরার ইচ্চা থাকে গাড়ির তলে পইরা মইরা যান, ছাদ দিয়া পইড়া মইরা যান, পুলিশের মাইর খাইয়া মরনের দরকারডা কি?”
ক্ষিপ্ত হুমকীদাতা আরো বলেছিলেন, “এ্যাডাল্ট নিউজ তো আরো অনেকে দিতেছে। তাইলে বাইঞ্চোতের বাচ্চা তুই অন্যগুলোর কথা লেখছ নাই ক্যান? খানকির পোলা, *** বার্তা কি তোর মায়েরে চুদছে, না তোর বইনেরে রেপ করছে? তোর সোনা আমি আবার কাটুম। একবার কাটছে তর মন ভরে নাই। তুই আমারে চেনো শুয়োরের বাচ্চা? আরে খানকির পোলা তুই জানস বল্লার চাকায় ঢিল মারলে কি হয়? তুই নিজের পুটকি নিজেই মারছস। খালি *** বার্তা লইয়া নিউজ করছস। তার মানে এটা মার্কেট বুঝতে পারতেছে *** বার্তার লগে নিশ্চয়ই তোর কোনো কাহীনি আছে।” এরপর কি জানি একটা বলতে শুরু করতেই আমায় থামিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আরে ব্যাডা তুই তো জামাতের লোক, খানকির পোলা। তুই আবার কথা কস ব্যাটা, দাদা চোদাস আমারে। তরে সামনে যহন পামু তহন টের পাবি আমি কি জিনিস। তুই ডাইরেক্ট জামাতের লোক ফাজিল। আমি তোরে আধাঘন্টা সময় দিলাম, আধাঘন্টার মধ্যে তোর দোকান যদি আমি খুঁইজা পাই, তোরে আমি মাইরা ফালামু। তোর কোন বাপ আছে তারে লইয়া আইস।
এছাড়া নিজেকে পাশ্ববর্তী দেশের উল্লেখিত নেত্রীর (ভারতের কোলকাতা রাজের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর) নিকট স্বজন দাবি করে ওই হুমকীদাতা আরো যা বলেছেন, তা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে আমার সাহসই হচ্ছে না। কারণ মূলত দুটি।
০১. অনাকাঙ্খিত সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরী হতে পারে।
০২. আমার দেশের সার্বভৌমত্ত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
তবে জেনে রাখুন। দৃঢ় চিত্তে বুক ফুলিয়ে পর্ণোগ্রাফী আইন ভাঙা ওই মানুষটি, অর্থাৎ আমার হুমকীদাতা একজন দেশদ্রোহীও। কেউ চাইলে এর প্রমাণও আমি দিতে পারবো। লাল ফোনে কল আনানোর ক্ষমতাও আছে জানিয়ে তার দম্ভোক্তি কী ছিলো তা আজ না হয় নাই-বা বলি। তবে এখানে আরো কিছু বিষয় জানিয়ে রাখা উচিত।
প্রথম দফায় হুমকী দেয়ার সময়ই হুমকীদাতা বলেছিলেন, ইতিমধ্যেই তিনি আমার বিরুদ্ধে ঢাকার কোনো একটি থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরী) করেছেন। যদিও তিনি নিজে মামলা করার মতো কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। তবু কেন জানি ক্ষুদ্ধ হতে পারছি না। এত গালিগালাজ খেয়েও লোকটার কণ্ঠ শুনে বার বার বেশ করুণাই জেগেছে। কী ধরণের পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বেড়ে উঠলে একটা মানুষের অমন অসুস্থ চটিপন্থী মনন আর ভাষাভঙ্গী গড়ে ওঠে তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়। অবশ্য অবস্থাদৃস্টে এটাও মনে হয়েছিলো যে এই মুহুর্তে আমি ওর বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলেই আমায় হিন্দুবিদ্বেষী ও সরকারবিরোধী তমকা লাগিয়ে জামায়াতপন্থী, জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হতে পারে। আজীবন প্রগতিশীল আর সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলে এখন যদি তাদের বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত হতে হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিই-বা হতে পারে?

সবকিছু মিলিয়ে নিজের ওপরও রাগ লাগছে। এরচেয়ে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ছিলো। বস্তুত তেমন কাজের মধ্যেই ছিলাম। হুট করে ফেসবুক নোটিফিকেশন চেক করত গিয়ে ওই চটিসাইটের নিউজগুলো দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়েছিলো । আসলে গত পহেলা বৈশাখের সেই টিএসসি’র ঘটনার পর থেকে যৌন পীড়নের উৎসাহদানকারী যে কোনো কর্মকাণ্ডই আমার মাথা গরম করেছে। যে কারণে ওই দিনও আমি সামলাতে পারিনি নিজেকে। তার ওপর ওই সময়ে আবার পাকিদের ৭১’র ধর্ষনচিত্র নিয়ে পুরানো লেখা পড়ছিলাম।​ যাকগে, আপনারা বুঝতেই পারছেন - হুমকীদাতার সাথে কথোপকথনের কিয়দাংশের অডিও রেকর্ড আমার হাতে রয়েছে। তবুও আমি এখন কোনো মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে আমার চলমান কাজগুলোর মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে চাচ্ছি না। 
যে দেশে ছয় মাসের মধ্যে চারজন ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, সে দেশে কোনো ব্লগারকে কারো এভাবে মারধর বা হত্যার হুকমী দেয়ার ঘটনা হয়ত ‍খুবই নৈমিত্তিক এবঙ স্বাভাবিক। তবু গত ৮ আগস্ট কাফরুল থানায় একটি জিডি করলাম। আর আজ (১০ আগস্ট) ব্লগের মাধ্যমেই ঘটনাটি সবাইকে জানিয়েও রাখলাম। আরো একটি বিষয় জানিয়ে রাখি। যদি বেঁচে থাকি তবে আত্মজৈবনিক এ ঘটনার অবলম্বনে একটি ডকুফিল্ম তৈরী হবে, নাম - ‘আত্মরক্ষার্থে’।
এই লেখায় আরেকটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। উল্লেখিত ঘটনা চলাকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক সিনিয়র, জুনিয়র সাংবাদিক বন্ধুর কথা শুনে মনে হয়েছে আমি আদতে এখন আর তাদের বন্ধু নাই, স্রেফ পূর্বপরিচিততে পরিণত হয়েছি। বিচ্ছিন্নতায় বা যোগাযোগচর্চার অভাবে আমি তাদের হারিয়ে ফেলেছি, কিঙবা হারিয়ে গেছে আমার অজস্র পুরানো সম্পর্ক।  আরো খেয়াল করলাম, অনেকেই মুক্ত সাংবাদিকতাকে স্রেফ ‘সৌখিনতা’ ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। শুভাকাঙ্খীদের অনেকে আমাকে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হওয়ারও পরামর্শও দিয়েছেন।  কেন আমি কখনো ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) -এর সদস্য হইনি, তা নিয়েও আক্ষেপ করেছেন। তাদের এসব কথা শুনদে শুনতে আমার বার বার মনে পরেছে, হুমকীদাতাও আমাকে বহুবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে সামান্য ব্যক্তি হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখা আমার মোটেই উচিত হয়নি।

হে অপ্রিয় হুমকীদাতা, পুরো লেখাটি আপনিও যে পড়বেন তা আমি নিশ্চিত। এবঙ নিশ্চয়ই খেয়াল করবেন এর কোথাও আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ করা হয়নি। ভুলেও ভাববেন না হুমকীতে ভয় পেয়ে এভাবে লেখা হয়েছে।  মূলত আপনার বালক সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমি এখনো চাচ্ছি না আমার কারণে আপনার কোনো ক্ষতি হোক। তবে সকলকে আপনার মতো ব্যক্তিদের সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেয়ার তাগিদ অনুভব করেছি।  কারণ আপনারা শুধু মিডিয়াকে না সমগ্র সমাজকেই কলুষিত করছেন। 
এই লেখা পড়ার পরও যদি আপনার বোধদয় না ঘটে, আপন ক্ষমতা প্রদর্শনের স্বাদ জাগে - তবে আমার মোবাইলটা খোলাই আছে।  আবার ফোন করুন। গালাগালি করে আমার চৌদ্দগুষ্ঠীকে উদ্ধার করুন। নয়ত এবার খুনটা করিয়েই ফেলুন।  শুধু একটাই অনুরোধ, খুনটা করার বা করানোর আগে নীচের পদ্যটি একবার পড়ে নেবেন। আশাকরি তাতে আমারে হত্যার ইচ্ছা আরো তীব্র হবে। আমেন।
- স্মরণে কৈবর্ত বিদ্রোহ

নিশ্চিত অনার্য আমি আদি কৈবর্তের ছেলে
সহস্র জনমে ছিলেম - মিঠে জলের জেলে
বার বার ফিরেছি বঙগে, ফিরিয়েছে মোহ
- মননে অনিবার্য আজও বরেন্দ্রী বিদ্রোহ।

অহিঙস ধর্মের নামে ক্ষিপ্ত সহিঙসতা-
রুখেছিলো যে কৌশলে এই নদীমাতৃকতা
যুগ-যুগান্তর ধরে যাচ্ছিলাম লিখে তারে
সেই অপরাধেই খুন হয়েছি বারে বারে।

গায়ের রঙটা কালো, গাই স্রোতস্বিনী সুরে
মোর রক্তে কত প্রাণ জানে পাল অন্তুপুরে।

মনে পরে সেবার - ছিলেম গঙ্গার উত্তরে
স্বর্ণকলসে বশীভূত লোভাতুর স্বীয়জাত
কী জলদি মিলিয়ে রামপালের হাতে হাত
প্রকাশ্যেই মদদ দিয়েছে আমার হত্যারে।

আরো কতবার মরেছি স্বজাতি সূত্রে ইস!
কখনো পলাশী, কখনো বা ধানমণ্ডি বত্রিশ
তবু ফিরেছি ফের কূটরুধির করতে হিম
আমি দিব্য, আমিই সেই রুদোকপুত্র ভীম।

[কবিতাটি গাধার গয়না পরম্পরা থেকে নেয়া]

পুরানো লেখাঃ
>> ‘জার্নালিজম’ বনাম ‘ক্যাপিটালিজম’!
>> ‘সাংবাদিক মারলে কিচ্ছু হয় না’
>> খোলা চিঠি বা প্রতিক্রিয়া এবং স্ব-শিক্ষিত সাংবাদিকতা...

কোন মন্তব্য নেই:

newsreel [সংবাদচিত্র]