Powered By Blogger
সাক্ষাতকার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সাক্ষাতকার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২০ মার্চ ২০১৭

কথাবলি নির্বচন

একুশে বইমেলা’১৭ চলাকালে কথাবলি ডটকম প্রকাশিত
 সাক্ষাতকারটি ব্লগ পাঠকদের জন্য সংরক্ষিত রইলো
[ঈয়ন। মূলত একজন আপাদমস্তক কবি। পেশায় সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহক ও প্রকাশক। দাপ্তরিক নাম শরীফ খিয়াম আহমেদ। জন্মেছেন খুলনায়। শেকড় ও বেড়ে ওঠা বরিশালে। বর্তমানে থাকছেন ঢাকায়। ২০১৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভাবনাংশ’ প্রকাশিত হয়। আর এই বছর বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার নতুন কবিতার বই ‘গাধার গয়না’। তার সঙ্গে কথাবলির পক্ষ থেকে কথা হলো। — নির্ঝর নৈঃশব্দ্য।]
আপনার নতুন কবিতার বই ‘গাধার গয়না’ নিয়ে কিছু বলেন।
নিজস্ব প্রকাশনী কাদাখোঁচা প্রকাশিত আমার (গাধার) এ গ্রন্থের (গয়নার) সত্ত্ব উন্মুক্ত। অর্থাৎ যে কেউ এর যে কোনো লেখা যে কোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। বইটির মূল পরিবেশক র‌্যামন পাবলিশার্স। সাদাকালো মলাটের চার ফর্মার এ গ্রন্থটি ‘শ্রেষ্ঠত্বের প্রত্যাশাবিমুখ বিশ্বাসীদের উৎসর্গকৃত’। যেখানে একই পরম্পরার ৬২টি লেখা রয়েছে। ২০১৩ সালে শুরু করেছিলাম সিরিজটি । প্রাথমিক পাণ্ডুলিপি গুছিয়ে এই পরম্পরার ভূমিকা লিখেছিলাম ২০১৫-এর জুলাইয়ে। যেখানে বলছি ‘জ্ঞানকাঠামোর অনমনীয়তাই হচ্ছে মৌলবাদিতা। আর মৌলবাদিরা মূলত দু’প্রকার এক. ছাগু প্রকৃতির (ডান) দুই. চুতিয়া প্রকৃতির (বাম); অর্থাৎ লেফট-রাইট করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদ।’

নিজের বই নিয়ে অনুভূতি কী?
বই প্রকাশের পর নিজেকে সার্বজনীন, মানে সকলের মনে হয়। কারণ প্রতিটি বই আসলে এক একটা সময়ের চিন্তা, দর্শন ও প্রবণতার দলিল। পাঠকের উদ্দেশ্যে উত্থাপনের আগ মুহুর্ত অবধি যার সব লেখাই একান্ত নিজস্ব বা ব্যক্তিগত। তবে গ্রন্থাকারে প্রকাশের পর তা পাঠকের, মানে সবার হয়ে যায়। তখন যে কেউ সেই লেখার ভাব, দর্শন বা বোধ গ্রহন ও প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ পায়।

ছোটোবেলায় কিছু হতে চাইতেন?
অনেক কিছু। পাইলট, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, চকোলেট বা আইসক্রিম ব্যবসায়ি থেকে শুরু করে ক্রিকেটার, সন্ত্রাসী, রকস্টার, নেতা এমন আরো অনেক কিছুই হতে চেয়েছি।

আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে মানে কতোদিন ধরে লেখালিখি করছেন?
দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায়, মানে ১৯৯২ সালে প্রথম স্বপ্রণোদিত হয়ে লেখার ইচ্ছে জাগে। স্কুলের খাতার পেছনে লিখেছিলাম - ‘আসবে যত/যাবেও তত/কিছুই থাকবে না/তাই বলে কী/সেই কবুতর/ আর আসবে না.../কবুতরটি/এখন না হয়/ পরেও আসতে পারে/তাই বলে কী/বলবে তুমি/আর আসবে নারে...’। পরের বছর এ লেখাটি বরিশালের স্থানীয় পত্রিকা ‘দৈনিক প্রবাসী’-তে ছাপা হয়েছিলো ।

আপনার লেখালেখির শুরু কেনো বলে মনে হয়?
প্রথম লেখার ইচ্ছে জাগার ঠিক আগের বছর বাবা-মায়ের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ আমায় অজস্র কৌতূহলী দৃষ্টিসংকুল ও বহু প্রশ্নবহুল একটি কাল উপহার দেয়। বস্তুত ওই সময়টায় যে বোধ জন্ম নেয় তা আমায় হুট করেই কিছুটা বড় করে দেয়। সমবয়সী বন্ধু বা মুরুব্বী স্বজনেরা যা একদমই টের পায়নি। কারণ আমি সবার কাছে থেকে একটু লুকিয়ে - দূরে দূরে থাকতে পছন্দ করতাম। আবার কাছে থাকলেও তাদের কারো সাথে খুব একটা কথা বলতাম না। মনে মনে নিজের সাথেই শুধু কথা বলতাম, অনেক কথা। একদিন হঠাৎ সেই কথাগুলোই লিখতে ইচ্ছে হলো।

আপনি কি শেষ পর্যন্ত কবি হতে চান, নাকি অন্যকিছু?
সত্যি কথা বলতে আমি কখনোই শুধু কবি হতে চাইনি, বা অন্যকিছু। কাব্যচর্চা বা কবিতা লেখাকে একটি সহজাত প্রবণতা ছাড়া বিশেষ কিছু ভাবতে পারিনি। জীবনের বিস্তীর্ণকাল জুড়ে দৈনন্দিন ভাবনার পরম্পরাই মননে কবিতা আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে। কখনো তা লেখা হয়েছে, কখনো হয়নি। তবে হ্যাঁ, আমি কথা বলতে চেয়েছি। প্রথমের নিজের সাথে, পরবর্তীতে স্ব-জাতির তথা মানুষের সাথে। অনেক সময় অমানুষ, অপার্থিবতার সাথেও হয়ত। এমন তাগিদ থেকেই জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে স্রেফ কথা বলার মাধ্যম হিসেবেই কবিতা, গল্প, প্রতিবেদন, প্রবন্ধ, গান, চিত্রকলা, আলোকচিত্র বা চলচ্চিত্রের মতো নানা ভাষা ব্যবহার করেছি। নিশ্চিত থাকুন এর কিছুই বিশেষ কোনো দৃষ্টিভঙ্গী, চিন্তা বা বোধ প্রচার ও প্রসারের খায়েসে ব্যবহৃত হয়নি। ভাব আদান-প্রদানই মুখ্য আমার কাছে। আর এ কাজে যে কোনো শিল্পমাধ্যম বা ভাষাই দুর্দান্ত। আবারো বলি, আমি কবি বা কিছুই হতে চাই না আসলে । স্রেফ মন যখন যা চায় তাই-ই করতে চাই। মানে আমৃত্যু শুধু মনের কথাই শুনতে চাই।

আপনার কাছে কবিতা কী?
এটা আগেও এক সাক্ষাতকারে বলেছি। আমার অমুক, আমার তমুক – জাতীয় যে আমিত্ব নিয়ে মানুষ ঘুরে বেড়ায়, তাকে হত্যা করে তামাম নিজস্বতাকে সার্বজনীন করার চেষ্টাই করে যায় কবিরা। আর সেই চেষ্টায় জন্ম নেয় কবিতা।

আপনার মাথার মধ্যে কবিতার ইমেজ কেমন করে আসে?
বস্তুত নানাবিধ বোধ থেকে।

বিশেষ কারো কবিতা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?
আশৈশব ‘মানুষ ও গ্রন্থ – দুটোই যে পাঠ্য' ছিলো। তাই চিন্তায় ও প্রকাশে বিভিন্ন মানুষ ও গ্রন্থের প্রভাব অনিবার্য। বাঙলাদেশের সংবিধান থেকে কুরান, ডারউইন থেকে ভগবান—সবই প্রভাবিত করেছে আমাকে। অতএব কাব্যচর্চার ক্ষেত্রেও আমার যে ভাষাভঙ্গী দাঁড়িয়েছে তা নিশ্চয়ই প্রভাবমুক্ত নয়। তবে বিশেষ কারো মতো করে কবিতা লেখার চেষ্টা করি নাই কখনো। আবার খুব সচেতনভাবে নিজস্বতা আরোপেরও চেষ্টা করা হয় নাই। বাকিটা পাঠক, তাত্ত্বিকরাই ভালো বুঝবেন – বলতে পারবেন।

আপনার নিয়মিত কার কার কবিতা পড়তে ভালো লাগে, কেনো লাগে?
সবার কবিতাই ভালো লাগে। কারণ - ‘কোথায় আমি নাই/আমিই’তো সবাই।’

কবি এরং কবিতার দায় সম্পর্কে আপনার মত কী?
কবি ভেদে কবিতা লেখার উদ্দেশ্যই আলাদা; তাই আলাদা প্রত্যেকের দায়ভাবও । আমি কোনো দায়বোধ থেকে কবিতা লেখি না। এই ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততাকে গুরুত্ব দেই, স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজি। অবশ্য অন্যভাবেও ভাবা যায়। হয়ত বিভিন্ন দায়ের গ্লানিমুক্ত হতেই লেখি। লিখতে গিয়ে নিজের মাঝে লুকাই। মানবাত্মার জন্মদায় মেটাতেই হয়ত পয়দা হয় কবিতা। 

আপনার সমকালীন কবিদের লেখা কবিতা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
সমকালের যাদের কবিতা পড়া হয়েছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো কবিতা ভালো লেগেছে। আবার কোনো কোনোটা খারাপ লেগেছে। এটা মূলত পাঠকালীন সময়ের মানুসিকাবস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন। এই মুহুর্তে একটি লাইন আমাকে যে ইমেজ দেবে, একটু পরই তা ভিন্নতর হতে বাধ্য। এ কারণে একই কবিতা কখনো খুবই ভালো, আবার কখনো খুবই ফালতু লেগেছে।

এই সময়ে যারা কবিতা লিখেন তাদের কবিতা বিষয়ে বলেন। তাদের অনেকের মাঝে কি স্টান্টবাজি লক্ষ করেন না?
ব্যক্তিগতভাবে আমি কবিতাকে সাধারণের কাছে ফেরানোর তাগিদ অনুভব করেছি খুব। সমকালীন অসংখ্য কবির কবিতা আমায় এ ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে। যাদের লেখাগুলো পড়লেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা শূণ্যে ভাসছেন না।যারা জানেন এই মাটি ও মানুষের সাথে কবিতার সম্পর্ক আজকের নয়; বহু পুরানো। এক সময় ছন্দে ছন্দে কথা বলা ছিলো বাঙালের স্বাভাবিক প্রবণতা। পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শিক্ষা বা পাশ্চত্যের প্রভাব – বাংলার সাহিত্যকে একদিকে সমৃদ্ধ করেছে, অন্যদিকে করেছে বিভেদাক্রান্ত। অশিক্ষিত কবিয়ালদের সহজবোধ্য দেশজ ঢঙ বা ছন্দের চেয়ে শিক্ষিত মহাকবিদের গণবিচ্ছিন্ন দুর্বোধ্য উপমার সামাজিক কদর বাড়িয়েছে পশ্চিমা চেতনা। সমকালীন কবিতা পড়ে মনে হচ্ছে এই ‘কলোনিয়াল ট্রমা’ কাটিয়ে ওঠার সময়ট চলছে। ফের মাটি ও মানুষের কাছেই ফিরছে কবিতা; এবং তা এখনকার কবিদেরই হাত ধরে। যে কারণে আমার সময়ের কোনো কোনো কবি যদি স্টান্টবাজিও করেন, তাও আমার ভালো লাগে।

দশক বিভাজন বিষয়ে আপনার মত কী?
এটা সাহিত্য শিক্ষক, সমালোচক বা সম্পাদকদের ভাবার বিষয়, আমার মতো দায়হীন কাব্যচর্চাকারী কবি বা অকবির নয়। নিজেকে কখনো দশকাক্রান্ত দেখতে চাই না। 

শিল্প-সাহিত্যেক্ষেত্রে পুরস্কার প্রকৃতপক্ষে কী কোনো ভূমিকা রাখে?
যেহেতু আমরা এখন বাজার সভ্যতার বাসিন্দা সেহেতু অর্থ-পুরস্কার কোনো শিল্প-সাহিত্যচর্চাকারীর কয়েকটা দিন বা ঘন্টাকে আনন্দময় করে নিশ্চয়ই। তবে প্রকৃত শিল্প-সাহিত্যচর্চাকারী, অর্থাৎ যারা শুধু চর্চার আনন্দে শিল্প-সাহিত্য করেন; তাদের পুরস্কারের আশা করতে দেখিনি কখনো। 

সবশেষে আপনি আপানার এমন একটা স্বপ্নের কথা আমাদের বলেন, যেটা বাস্তবায়ন করতে আপনার চেষ্টা আছে।
আপাতত তামাম স্বপ্নেরা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা শিল্প কেন্দ্রীক। যেগুলো বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই মুহুর্তে মূলত চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে হাঁটছি। ইতিমধ্যে শুরু করেছি নিজের প্রথম সিনেমার কাজ। এছাড়া বেশ কিছু নতুন প্রকাশনার কাজও হাতে নিয়েছি। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা - দুটো ক্ষেত্রেই আমি মূলত শিশুদের জন্যই বেশী কাজ করতে চাই। আর এ জন্য শুধু চেষ্টা নয় - আমি যুদ্ধ করতেও রাজি।

পুরানো সাক্ষাতকার
ঘুমঘোরে কথোপকথন
অলস দুপুরে আলাপ...

১৫ এপ্রিল ২০১৫

ঘুমঘোরে কথোপকথন

২০১৩’র ফেব্রুয়ারিতে শাহরিয়ার শাওনের তোলা ছবি
ঘুমঘোর~কবিতার কাফে মূলত একটি ফেসবুক গ্রুপ, যাদের চর্চা কবি ও কবিতা নিয়ে । বিগত একুশে বইমেলা চলাকালে এই গ্রুপের এক বিশেষ আয়োজনের অংশ হিসেবে নিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলাপ হয়েছিলো কবি শাহ মাইদুল ইসলাম -এর সাথে।  তিনি গ্রুপটির এডমিনদের একজন। অন্যান্য এডমিনরা হলেন সৌরভ পথবাসী, শাফিনূর শাফিন ও ইয়াসীন ফিদা হোসেন।  তাদের সেই আয়োজন এই ব্লগের পাঠকদের জন্য পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
কবি ঈয়ন এবং তাঁর 'ভাবনাংশ' নিয়ে ঘুমঘোরের আজকের আয়োজন। 'ভাবনাংশ' প্রকাশিত হয়েছে 'কাদাথোঁচা' থেকে আর প্রচ্ছদ নামাঙ্কনে সাইদ র’মান। লিটলম্যাগ চত্বরের প্রান্তস্বর -এর স্টলে রয়েছে বইটি। চার ফর্মার এ গ্রন্থের দাম রাখা হয়েছে একশ ত্রিশ টাকা। বইমেলায় ২৫ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাবে মাত্র একশ টাকায়। কবি ঈয়নের সাক্ষাৎকার এবং তাঁর 'ভাবনাংশ' থেকে কিছু কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ।
ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : আমাদের আলোচনা শুরু হোক আপনার প্রকাশিতব্য বইটির শিরোনাম দিয়ে। কেনো এই কবিতাগ্রন্থের নাম নিলেন 'ভাবনাংশ'?
ঈয়ন : ১১.১১.১১ - শিরোনামে একটি পাণ্ডুলিপি সাজিয়েছিলাম ২০১০’র জুলাইয়ে। ২০১১ সালের ১১ নভেম্বরে ওই নামেই প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু তা আর হয়নি। নিজস্ব সময়ের অভাবে পাণ্ডুলিপি সম্পাদনাতেই কেটে গেছে পাঁচটি বছর। সম্পাদনা করতে গিয়েই ২০১২ সালে ‘ভাবনাংশ’ –নামটি মাথায় আসে। এটি মূলত নিজেরই আরেকটি সিরিজের শিরোনাম দ্বারা প্র্রভাবিত। সাত-আট বছর আগে ‘দ্বান্দিক ভাবনা বিষয়ক আজাইরা প্যাঁচাল’ নামে ওই সিরিজটি লেখা শুরু করেছিলাম। এই গ্রন্থে অবশ্য ওই সিরিজের কোনো কবিতা নেই।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : এই বইয়ের কবিতাগুলো মূল কী কী বিষয়কে কেন্দ্র করে সাজিয়েছেন। যেমন জীবনানন্দের কবিতায় ফিরে ফিরে মৃত্যুচেতনা আসে, ওয়ার্ডসোয়ার্থের কবিতায় আসে স্মৃতি ও প্রকৃতি। আপনি কোন কোন বিষয়ের কাছে ফিরে যান?
ঈয়ন : পুরাই ককটেল। মানুষ, সময়, সম্পর্ক, প্রকৃতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে সেক্স, ভায়োলেন্স- এমনকি আইটেম সঙও আছে এ গ্রন্থে। তবে হ্যাঁ, বার বার ফিরে এসেছি নিজের, তথা মানুষেরই কাছে।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : একটা নতুন কবিতার সন্ধান আপনি কীভাবে করেন? ছন্দ, প্রসোডিক্যাল এলেমেন্ট, ফর্ম ইত্যাদি ছাড়া আর কোনো অনুষঙ্গকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন কি? কখন মনে হয় একটি কবিতার সৃষ্টি পূরণ হয়েছে, এতে আর হাত দেবার নেই?
ঈয়ন : নতুন কবিতা সন্ধান করি না আর। এক সময় করতাম হয়ত। দিনভর কবিতা লেখার বাতিক ছিলো যখন। তখন ছন্দ, ফর্মসহ তাবৎ অনুষঙ্গকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হত। কিন্তু এখন আরোপিত কিছুই আর ভালো লাগে না। তাই কবিতা লেখার জন্য কোনো কিছুকে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণও মনে হয় না। শুধু ভালোবাসি শব্দ, ছন্দের ঘোর মগ্নতা। তাতেই ডুবে থাকি। দৈনন্দিন ভাবনার পরম্পরাই এখন কবিতা হয়ে ওঠে। কখনো তা লেখা হয়, কখনো হয় না। তবে যেগুলো লেখা হয়, সেগুলো প্রকাশিত হওয়ার আগ মুহুর্ত অবধি সম্পাদনা করি। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কবিতাগুলো তামাম পূর্ণতা নিয়েই হাজির হয়। তবুও তা পাঠকের উদ্দেশ্যে প্রকাশের আগে সম্পাদনার টেবিলে ফালানো উচিত বলেই আমি মনে করি।

গ্রুপ পোস্টের স্ক্রীনসট

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে :
একজন কবির কখন তাঁর কবিতা গ্রন্থাকারে প্রকাশে উদযোগী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? অন্যভাবে বললে কবিতাগ্রন্থ প্রকাশে কেমন সময় নেয়া দরকার এবং কেন?
ঈয়ন : কবি ভেদে কবিতা লেখার উদ্দেশ্যই আলাদা। তাই আলাদা প্রকাশের তাড়নাও। আসলে কোন পাণ্ডুলিপি কখন প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে লেখা হচ্ছে তা কবি নিজেই ভালো জানেন। তবে প্রত্যেক কবির এটুকু অন্তত মনে রাখা উচিত – প্রকাশিতব্য গ্রন্থটি তার কাব্যচিন্তা, দর্শন ও প্রবণতার দলিল। তাই ওই যে বললাম, কবিতাগুলো পাঠকের উদ্দেশ্যে প্রকাশের আগে অবশ্যই সম্পাদনার টেবিলে বসুন। নিজের প্রতিটি কবিতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ুন। বিভিন্ন বয়স, শ্রেণী ও সময়ের পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েও কয়েকবার পড়া যেতে পারে। অর্থাৎ নিজের লেখার প্রথম বিচার নিজেই করুন। এরপর তা পাঠকের কাছে পাঠান।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : কবিতা কতটুকু কবির, কতটা পাঠকের? কোনো কোনো কবি বলে থাকেন লিখে ফেলার পর তাঁরা কবিতাটির দিকে ফিরেও তাকান না আর! এভাবে কি পাঠকের জন্য ছুঁড়ে ফেলা হয়?
ঈয়ন : পাঠকের উদ্দেশ্যে প্রকাশের আগ মুহুর্ত অবধি প্রতিটি কবিতা একান্তই কবির। কিন্তু প্রকাশের পর তা পাঠকের। আমার অমুক, আমার তমুক – জাতীয় যে আমিত্ব নিয়ে মানুষ ঘুরে বেড়ায়, তাকে হত্যা করে তামাম নিজস্বতাকে সার্বজনীন করার চেষ্টাই করে যায় কবিরা। আর সেই চেষ্টায় জন্ম নেয় কবিতা। যা কখনো ছুঁড়ে ফেলা যায় না। কারণ প্রকৃত পাঠক প্রত্যেক কবির সবচে আপন। তারা হতে পারে আশেপাশের বা দূরের, এখনকার বা আগামীর।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : আপনার কবিতায় কারো কবিতার কিংবা কোন কবির বা তত্ত্বের প্রভাব আছে বলে কি আপনি মনে করেন?
ঈয়ন : আশৈশব ‘মানুষ ও গ্রন্থ – দুটোই যে পাঠ্য’ ছিলো। তাই চিন্তায় ও প্রকাশে বিভিন্ন মানুষ ও গ্রন্থের প্রভাব অনিবারয। বাংলাদেশের সংবিধান থেকে আল-কোরআন, ডারউইন থেকে ভগবান- সবই প্রভাবিত করেছে আমায়। অতএব কাব্যচর্চার ক্ষেত্রেও আমার যে ভাষাভঙ্গী দাঁড়িয়েছে তা নিশ্চয়ই প্রভাবমুক্ত নয়। তবে কারো মতো করে কবিতা লেখার চেষ্টাও করি নাই কখনো। আবার খুব সচেতনভাবে নিজস্বতা আরোপেরও চেষ্টা করা হয় নাই। বাকিটা পাঠক, তাত্ত্বিকরাই ভালো বুঝবেন – বলতে পারবেন।

শাহ মাইদুল ইসলাম
ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : ছোট ছোট পংক্তি ও ছন্দিত তাল লয়ে লিখিত আপনার কবিতাগুলো বর্তমান স্রোতে থেকে অনেকটা ভিন্ন মাধুর্যময় এক আঙ্গিকের চর্চা। আঙ্গিকের এই নিজস্বতা নিয়ে আমাদের কিছু বলুন।
ঈয়ন : আগেই বলেছি, কবিতায় খুব সচেতনভাবে নিজস্বতা আরোপের চেষ্টা নেই আমার। তবে হ্যাঁ, এখন লেখার ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততাকে গুরুত্ব দেই আমি, স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজি। হয়ত এ কারণেই ইদানীংকার লেখায় সহজিয়া ভাষা, ছন্দের ব্যবহার বেড়েছে; কমেছে উপমা ও রূপকের ব্যবহার। আসলে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না আর। এখন চেষ্টা করছি সহজে বলার। যাতে একজন নিরক্ষর মানুষও কোনো লেখা শুনলে বুঝতে পারেন, কি বলতে চেয়েছি। আসলে কবিতাকে সাধারণের কাছে ফেরানোর তাগিদ অনুভব করছি খুব। এই মাটি ও মানুষের সাথে কবিতার সম্পর্ক কিন্তু আজকের নয়, বহু পুরানো। এক সময় ছন্দে ছন্দে কথা বলা ছিলো বাঙালের স্বাভাবিক প্রবণতা। পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শিক্ষা বা পাশ্চত্যের প্রভাব – বাংলার সাহিত্যকে একদিকে সমৃদ্ধ করেছে, অন্যদিকে করেছে বিভেদাক্রান্ত। অশিক্ষিত কবিয়ালদের সহজবোধ্য দেশজ ঢঙ বা ছন্দের চেয়ে শিক্ষিত মহাকবিদের গণবিচ্ছিন্ন দুর্বোধ্য উপমার সামাজিক কদর বাড়িয়েছে পশ্চিমা চেতনা। কিন্তু আমার মনে হয়, এই ‘কলোনিয়াল ট্রমা’ কাটিয়ে ওঠার সময় এসে গেছে। ফের মাটি ও মানুষের কাছেই ফিরতে হবে কবি ও কবিতাকে।

ঘুমঘোর~কবিতার কাফে : “...আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ / তাড়া করে ফিরছে / বিতৃষ্ণা মিলছে / ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।” - এই যে জন্মানোর ক্রোধ বাড়ছে, এর থেকে কী পরিত্রাণ হয়, না হয় যদি, তাহলে কী চাইছি আমরা?
ঈয়ন : আমরা হয়ত পরিত্রাণের সেই উপায়ই হাঁতড়ে বেড়াই। কেউ খুঁজে পাই, কেউ পাই না।

'ভাবনাংশ' থেকে কিছু কবিতা

জ্বলে মা ─ পুড়ি আমরা
ক্ষমতার মমতায়
পাশবিক প্রতিবাদ
সন্ত্রাসের সমতায়
দগ্ধতার আর্তনাদ
কার কি’বা আসে যায়
কারা তারা কোন দায়
চাপানোর ব্যস্ততায়
জ্বালায় সে দাবানল
জ্বলে মায়ের আঁচল
তব নিরীহ বাঙাল
যে স্বভাব ভীরুতায়
লাশ নিয়ে রাজনীতি
নীরবেই সয়ে যায়

সে ভয় আসল খুনী
গনহত্যায় যে গুণী
হয় নির্বিঘ্নে বর্বাদ
_________

বে-ঈমান

এক এবং
অদ্বিতীয়
আপনার
কীর্তি ম্লান
করে যায়
এমন কে
এ ধরার
কোন মর্মে
লুকায়িত
রয়েছে যে
অস্বীকার
করবেইে
এ অস্তিত্ব...

কারই বা
ঈমানে যে
আজ নেই
সে সম্মান;
যা সবাই
আপনাকে
দিয়ে যাচ্ছে
যুগ থেকে
যুগান্তর
ধর্ম থেকে
ধর্মান্তরে

কে’বা করে
অস্বীকার
আপনার
অবদান

অসুর বা
লুসিফর
যে রূপেই
ফরমান
লাভ ইউ,
হে মহান
শয়তান।
_________

ইন্দ্র কাকুর মন্দা বচন
─ কবি মন্দাক্রান্তা সেন’কে

ওগো ও মামণি
সামলিয়ে রাখো
ও অঘ্রাত যোনি
কাতর নয়নে
চেয়ো না এ ক্ষণে
ভিজে যাবে সব
তোমারো অজ্ঞাতে
ঘুমাও বালিকা
স্তনের লতিকা
জাগায়ো না আর
সহজ সরলে
যদি যায় বলা
কেন শুধু তবে
করো ছলাকলা
কামাতুর কালে
অধর ও ধরে
কত কী যে চলে
কে’বা কয় কারে

যেদিন সজোড়ে
সিঁড়ির আড়ালে
ধরেছো জড়ায়ে
বুঝিনি প্রথমে
দিগ্বিদিক কে সে
ঝড়োশ্বাস তোলা
সাবধানী চুমো
নিয়েছো আঁধারে
চেটেপুটে লুটে
আলোতে অবাক
হয়েও নির্বাক

থাকতে হয়েছে
পারিনি বলতে
তোমার মা’ও যে
ওই সিঁড়ি ঘরে
বহু দিনে-রাতে
একই বিছের
কামড় খেয়েছে

বোঝো এই হাল
কি করি যে বাল
হয় নাই কাটা
হায় কত কাল
আর জ্বলে নাই
অপরাধ বোধ
কারণ তোমার
এ কাকু আসলে
পুরাই বাঞ্চোত

ধুরও বালিকা
ঘুমাও ঝটিকা
ভুলে যাও দ্রুত
অসম প্রেমের
সুখের সমতা
_________

নাগা

মগ্নতার কোন স্তরে পৌঁছে গেলে
অতটা নিশ্চিন্তে ছোটা যায়, তা’ই
বুঝতে কবেই যেন নাগা সন্ন্যাসীর
বেশে রাজ নগরের রাজপথ থেকে
শুরু হয় বর্ণিল নির্বাক তীর্থযাত্রা
_________

ধসে বশ

সময় ও শরীরের বন্দীত্বের ক্ষতে
বাড়ে ফরমায়েশি আর হিংসুটে যশ
রতিক্লান্ত অবসন্ন শিশ্নেরও মতো
তৃপ্ত লালসায় জমে বোধেরই ধস
তবু ভাবনার ঋণে সুখের দুর্বৃত্ত
সস্তা তারিফের বাণিজ্যে রয়েছে বশ
_________

বেজন্মা বোধ বা জন্মানোর ক্রোধ

ক্ষীণ মৌনতার স্থবিরতায় অস্থির
জৈবিকতার অদৃষ্ট অতৃপ্তি আর
প্রজাপতির অপেক্ষায় গোলাপেরা
মেঘগন্ধা অবসাদে স্থবির।

আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ
তাড়া করে ফিরছে
বিতৃষ্ণা মিলছে
ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।

সুপ্রীম কোর্টের খোদারাও
দল বেঁধে বিব্রত হয় দেখে
বেকারত্বের ফ্রেমে বন্দী প্রেমে
সব কটাক্ষ মেনে নেই আমরাও।

তবু...

আজন্ম; এক বেজন্মা বোধ
তাড়া করে ফিরছে
বিতৃষ্ণা মিলছে
ক্রমাগত বাড়ছে, জন্মানোর ক্রোধ।

০৬ এপ্রিল ২০১৫

অলস দুপুরে আলাপ...

“কবিতা লিখতে কারো কাগজ-কলমই দরকার হয়, কারো স্মার্টফোনই যথেষ্ট:
ঈয়নের সাথে অনলাইন আলাপ” - এই ছিলো শিরোনাম।

শৈশব থেকেই কাব্যচর্চা ভালো লাগে। টুকটাক লেখালেখির শুরুও তখন। হয়ত কোনো শিশুতোষ বাসনাও ছিলো মনে। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে লেখার কারণ ও ধরণ বদলেছে বার বার। বস্তুত বহু বছর আমি পদ্য লেখার কোনো কারণই খুঁজে পাইনি। শুধু মনে হত - ভালো লাগছে, তাই  লিখছি। অমনই এক সময়ে এসব নিয়ে আলাপ হয়েছিলো দুপুর’দা, মানে দুপুর মিত্রের সাথে, এ প্রায় দু’বছর আগে। ২০১৩ সেপ্টেম্বরে অলস দুপুর ব্লগে প্রকাশিত হয় সে আলাপ। সেখান থেকেই টুকে এনে  press & pleasure - pap পাঠকদের জন্য এটি পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?
ঈয়ন: এ প্রশ্নটা জ্বালিয়েছে অজস্রবার, আর প্রতিবারই খুঁজে পাইনি কোন সদুত্তর। অবশেষে মেনে নিয়েছি হুদাই এই লেখা-লিখি বা বিতৃঞ্চাচ্ছন্ন ভালবাসার আশ্রয় এ ঘোর মগ্নতা। তাই যেতে যেতেই ফিরে আসতে হয় ছন্দ-শব্দের কাঁটা-কুঁটি খেলায়। কবিতার জন্য কবিতারা জন্মাক, সব কথক না হোক কবি আর পৃথিবী না হোক কাব্যময়; তবু কবিতারা জন্মাক। কবিতা দিয়ে দেশ উদ্ধারে নামিনি, চাইনি কোন বিপ্লব ঘটাতে। ডান বা বামপন্থি মতবাদে ভারাক্রান্ত বাহবা কুড়াঁনোর ইচ্ছেরা থাক স্বেচ্ছা নির্বাসনে। তবুও লিখে যাই, আজও বারে বার ফিরে যাই আপনার ঘোরে- আপন করে লুটে নিতে সব সুখ; কবি-জ্বরে জ্বরাগ্রস্ত মসী মুখ ডোবায় বারুদের শরবতে। অবশেষে স্বার্থপরের মত শুধু নিজেরই জন্য লিখে যাই।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?
ঈয়ন: এটা কবি ভেদে ভিন্ন। যেমন কারো কাগজ-কলমই দরকার হয়, কারো স্মার্টফোনই যথেষ্ট।

Dupur Mitra, is a poet and fiction writer
from Bangladesh. Studied PhD from
Jahangirnagar University, Dhaka in
biodiversity and forest management. His
published two books in Bangla, named
44 Kobeta (44 poetry) and
Doshovuza (collection of short stories).
দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন? সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?
ঈয়ন: সমসাময়িক যাদের কবিতা পড়া হয়েছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো কবিতা ভালো লেগেছে। আবার কোনো কোনোটা খারাপ লেগেছে। এটা মূলত পাঠকালীন সময়ের মানুসিকাবস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন। এই মুহুর্তে একটি লাইন আমাকে যে ইমেজ দেবে, একটু পরই তা ভিন্নতর হতে বাধ্য। এ কারণে একই কবিতা কখনো খুবই ভালো, আবার কখনো খুবই ফালতু লেগেছে।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
ঈয়ন: মূল্যায়নের স্বরূপই বোঝা হয়নি আজও।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?
ঈয়ন: কবি থেকে কবিতে যে ফারাক, এখানেও তাই।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?
ঈয়ন: শুধু ব্লগ কেনো, ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে নতুন যে কোনো কিছই সাহিত্যকে কিছু না কিছু দিচ্ছে। তবে তা বিশেষ কিছু হয়ে ওঠার বিষয়টি সময় ও ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?
ঈয়ন: লিটলম্যাগ বা ব্লগের গুরুত্বও সময় এবং ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন। গুরুত্বের মাপকাঠিও তো আর স্থির নয়।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
ঈয়ন: বোঝে নাই যে পর্যবেক্ষণ, আত্মমগ্ন ক্ষ্যাপাটের মন।

১৩ নভেম্বর ২০১৪

বরিশালই ‘আপন’ নায়লার

ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সাথে
নিজের ব্যক্তিগত একাউন্টে অনুসারী ৭০ হাজার ৫৩১ জন আর অফিসিয়াল পেইজে দুই লাখ ৪০ হাজার ৪২৯ জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এই পরিসংখ্যান অবশ্য তার ‘উঠতি জশ’ বোঝানোর জন্য যথেস্ট নয়। পেশায় দন্ত চিকিৎসক হলেও স্বল্পবসনা বাংলাদেশী মডেল, আইটেম গার্ল বা নায়িকার পরিচয়ে আলোচনায় আসা এ তরুণীর পরিচিতি দিন দিনই বাড়ছে। সামাজিক গোঁঢ়ামীর পরাকাষ্ঠা ভাঙার সাহস দেখানোয় একদিকে যেমন সাধুবাদ পাচ্ছেন; অন্যদিকে আবার ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ’ ও ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ পরিপন্থী হিসাবেও অভিযুক্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ দেশ-বিদেশে ইতিবাচক ও নেতিবাচক, দু’ভাবেই প্রচার পাচ্ছেন তিনি। গত শতকের শেষ দশকে (১৪ ডিসেম্বর) বরিশালে জন্ম নেয়া এ তরুণীই এখন দেশী মিডিয়ার একমাত্র ‘সেক্সসিম্বল’। এতক্ষণে অধিকাংশ পাঠক তার নাম আন্দাজ করে ফেলেছেন নিশ্চয়ই। সময়ের আলোচিত চরিত্র, নায়লা নাঈম। বরিশাল থেকে পরিচালিত এক অনলাইন নিউজ পোর্টাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তার এ সাক্ষাতকারটি নেয়া হয়েছিলো।

ঈয়ন : বরিশালের কোন এলাকায় জন্ম আপনার? বাবা-মাসহ পুরো পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
নায়লা নাঈম : বরিশালের পটুয়াখালিতে আমার জন্ম। বাবা, মা ও ছোট ভাইকে নিয়েই আমার পরিবার। বাবা বেসরকারী চাকরীজীবি আর মা আইনবিদ। আর ছোট ভাই পড়াশোনা করছে।

ঈয়ন : কেমন ছিলো আপনারৈ শৈশব, স্কুল জীবন?
নায়লা নাঈম : আমার শৈশব অনেক বৈচিত্রময়। বাবার চাকরির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আমার শৈশব কেটেছে। সবশেষে অবশ্য বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়া হয়। আসলে স্কুল জীবনটা অনেক আনন্দময় ছিলো। অনেক বন্ধু-বান্ধবী ছিলো সেসময়। আমার স্কুল জীবনের খুব কাছের কোনো বান্ধবীর সাথে এখন আর যোগাযোগ নেই। অনেক মিস করি তাদের। অনেক মনে পড়ে স্কুলের স্মৃতিগুলো।

এখন তিনি
ঈয়ন : কি জাতীয় ঘটনার স্মৃতি?
নায়লা নাঈম : মনে পড়ে, আমার এক স্কুলে অনেক গাছের চারা লাগানো ছিলো । আর আমার নিজেরও বাগান করার প্রবল শখ ছিলো। বাসার টবে অনেক গাছ লাগাতাম। তখন মাঝে মাঝে স্কুল থেকেও গাছ নিয়ে এসে বাসার টবে লাগাতাম। এছাড়া আমার সেই স্কুলে একটা পুকুরও ছিলো। প্রায় প্রতিদিন স্কুলের পুকুর পাড়ের শীতল হাওয়ায় অনেকক্ষন বসে থাকা আমার শৈশবের অন্যতম আনন্দময় অভিজ্ঞতা।

ঈয়ন : কুসুমকুমারী দেবী, কামীনি রায়, মনোরমা বসু মাসীমা, সুফিয়া কামাল বা মুক্তিযোদ্ধা আলমতাজ বেগমের মতো যে অগ্রগামী নারীরা বরিশালে জন্মেছিলেন, তারা কি আপনার জীবন দর্শণে কোনো প্রভাব ফেলেছেন?
নায়লা নাঈম : আমি সবসময়ই বরিশালে জন্ম নেয়া কৃতি সন্তানদের অনেক শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তাঁদের আদর্শ, তাঁদের সংগ্রাম ও সফলতা আমায় এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রেরণা যোগায়।

________________________________________

ঈয়ন : বলা হচ্ছে আপনি বাংলাদেশের প্রথম সেক্সসিম্বল মডেল, আইটেম গার্ল ও নায়িকা। আপনার আগে এ ক্ষেত্রে কেউ এতটা সাহসী হয়নি। এ সাহস আপনি কোথায় পেলেন? আর এ সাহস প্রদর্শন কি শুধুই খ্যাতির তাড়নায়, না নারী অগ্রযাত্রার বিষয়টিও আছে আপনার ভাবনায়?
নায়লা নাঈম : আসলে ডেণ্টিস্ট হবার পাশাপাশি, আমি যখন মডেল হিসাবে কাজ করি, আমার বিবেচনায় প্রাধান্য থাকে- যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছি সেই প্রোডাক্টটিকে সফলভাবে তুলে ধরা। আমার পাশাপাশি অনেকেই কিন্তু একইরকম কাজগুলো করছেন। কিন্তু তারা হয়ত আলোচনায় আসতে পারেননি। শুধুমাত্র আমার কাজগুলো নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। অনেকে হয়ত ব্যাপারটিকে সহজভাবে নিতে পারেননি এবং সমালোচনা করেছেন। কিন্তু অনেকেই আবার ওই একই কাজগুলোর প্রশংসাও করেছেন। তবে একটি ব্যাপার, কাজ করার সময় খ্যাতির ব্যাপারটা আমার কখনোই মাথায় থাকে না। আমি সব সময় বিশ্বাস করি- ভালো কাজ করলে, সঠিকভাবে মূল্যায়িত হলে- খ্যাতি পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভালো কাজের জন্যই আজ আমি এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।
আলোকচিত্রীঃ নাসের আবু
ঈয়ন : বাঙালী মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ কাঠামো নাড়িয়ে প্রচলিত অনুশাসনের প্রতি বৃদ্ধঙ্গুলি প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে যে প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে তা কি করে সামলাচ্ছেন?
নায়লা নাঈম : আমার কাছে মনে হয়, একবিংশ শতাব্দীতে সময়ের সাথে সাথে আমাদের মূল্যবোধে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে একটা কাজ যেভাবে দেখা হত, সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে সেটা এখন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হচ্ছে। এরপরও প্রতিটি কাজেরই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া থাকবে। যদিও ‘Different People, different thoughts’। এক্ষেত্রে আবারও বলছি, আমার যে কাজগুলো নিয়ে সমালোচনা হয়েছে, সেগুলো কিন্তু অনেক প্রশংসাও পেয়েছে। মূল ব্যাপার হচ্ছে, একটা কাজ কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন - সেটা যার যার একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। তবুও আমি আমার কাজের প্রতিটি সমালোচনাকে অনেক গঠনমূলক ভাবে নেই। কারো সমালোচনার মাঝে সৃজনশীল কিছু পেলে তা গ্রহন করতে বা সেখান থেকে কিছু শেখার থাকলে সেটাকে ইতিবাচকভাবে নিতে আপত্তি নেই আমার।

ঈয়ন : পরিবারিক পারিপার্শ্বিকতা কতটুকু সহায়ক বা প্রতিবন্ধক হয়েছে?
নায়লা নাঈম : আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে, মিডিয়ায় কাজ করার ব্যাপারে পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে এসেছি সবসময়। আমার পরিবার আমার কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক। তাদের সমর্থন ছাড়া কখনোই এত দূর আসা সম্ভব ছিলো না।
তন্ময় তানসেন পরিচালিত ‘রানআউট’ সিনেমার গানের দৃশ্যে
ঈয়ন : এ মুহুর্তে আপনার জীবনের লক্ষ্য কি? মানে এ জীবনে কি কি করতে চান?
নায়লা নাঈম : আপনারা জানেন যে, পেশাগত জীবনে আমি একজন ডেন্টিস্ট, মডেল এবং অভিনেত্রী। ঢাকায় আমার নিজের ক্লিনিক আছে, সেখানে আমি নিয়মিত রোগী দেখে থাকি। এই মুহূর্তে আমার লক্ষ্য, ডেন্টিস্ট হিসাবে নিজেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এছাড়াও অদূর ভবিষ্যতে নিজেকে একজন সফল অভিনেত্রী হিসাবে দেখতে চাই।
ঈয়ন : রিলেশনসিপ স্ট্যাটাস -
নায়লা নাঈম : এখনো আমি আমার মনের মত কোনো মানুষ খুঁজে পাইনি। আমি যাকে পছন্দ করবো সে দেখতে যেমনই হোক, মানুষ হিসাবে তাকে অবশ্যই অনেক ভালো, মানে সৎ ও চরিত্রবান হতে হবে।
ঈয়ন : আত্ম-সমালোচনা করুন।
নায়লা নাঈম : আসলে ডেণ্টিস্ট্রি, মডেলিং ও অভিনয়, তিনটি কাজ নিয়েই আমাকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই মাঝে মাঝে আমার নিজের কাছে মনে হয় আমি যদি শুধুমাত্র একটি পেশায় নিয়োজিত থাকতাম তবে সে পেশায় আজ আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকতো; আরো ভালো কাজ করতে পারতাম।

সাম্প্রতিক ফটোস্যুট
ঈয়ন : বরিশাল ও বরিশালের মানুষ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
নায়লা নাঈম : বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় থাকা হলেও বরিশাল আমার সবচেয়ে পছন্দের শহর। বরিশাল শহরটাকে আমি অনেক মিস করি। বরিশাল শহরের সাথে আমার কৈশোরের অনেক অদ্ভুত প্রিয় স্মৃতি জড়িত। প্রথম ভালোবাসা বরিশালকে ঘিরে, প্রথম ভালোবাসার মানুষটাও ওই শহরের। তাই আমার এই ব্যস্ত জীবনের মাঝেও সময় পেলেই বরিশাল যাওয়ার ইচ্ছা থাকে আমার। ইচ্ছে করে হারানো কাছের বন্ধুদের খুঁজে পেতে। যাদের সাথে স্কুলে বসে অনেক আড্ডা দিতাম, ছুটির পরে একসাথে হেঁটে বাসায় ফিরতাম।

ঈয়ন : বরিশালবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে?
নায়লা নাঈম : বরিশালবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বরিশালের মানুষ আমার অনেক আপন ও কাছের মানুষ। আমি সত্যি গর্বিত এই ভেবে যে, বরিশালবাসীরা মানুষ হিসাবে অনেক আন্তরিক ও ভালো মনের মানুষ। এই জনপদে জন্মগ্রহন করে আমি গর্ববোধ করি।
নায়লা নাঈম সম্পর্কে কৌতূহলীরা অন্তর্জালের যে কোনো খোঁজ যন্ত্রে বাংলা বা ইংরেজীতে তার নামটি লিখে অনুসন্ধান করলে নিরাশ হবেন না। খুঁজে পাবেন বহু সংযোগ। তার ওয়েবসাইটের ঠিকানা - www.nailanayembd.com আর পেইজের facebook.com/artist.nailanayem
অফিসিয়াল পেইজের স্ক্রিনসট
newsreel [সংবাদচিত্র]