Powered By Blogger

১৩ নভেম্বর ২০১৪

বরিশালই ‘আপন’ নায়লার

ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সাথে
নিজের ব্যক্তিগত একাউন্টে অনুসারী ৭০ হাজার ৫৩১ জন আর অফিসিয়াল পেইজে দুই লাখ ৪০ হাজার ৪২৯ জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এই পরিসংখ্যান অবশ্য তার ‘উঠতি জশ’ বোঝানোর জন্য যথেস্ট নয়। পেশায় দন্ত চিকিৎসক হলেও স্বল্পবসনা বাংলাদেশী মডেল, আইটেম গার্ল বা নায়িকার পরিচয়ে আলোচনায় আসা এ তরুণীর পরিচিতি দিন দিনই বাড়ছে। সামাজিক গোঁঢ়ামীর পরাকাষ্ঠা ভাঙার সাহস দেখানোয় একদিকে যেমন সাধুবাদ পাচ্ছেন; অন্যদিকে আবার ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ’ ও ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ পরিপন্থী হিসাবেও অভিযুক্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ দেশ-বিদেশে ইতিবাচক ও নেতিবাচক, দু’ভাবেই প্রচার পাচ্ছেন তিনি। গত শতকের শেষ দশকে (১৪ ডিসেম্বর) বরিশালে জন্ম নেয়া এ তরুণীই এখন দেশী মিডিয়ার একমাত্র ‘সেক্সসিম্বল’। এতক্ষণে অধিকাংশ পাঠক তার নাম আন্দাজ করে ফেলেছেন নিশ্চয়ই। সময়ের আলোচিত চরিত্র, নায়লা নাঈম। বরিশাল থেকে পরিচালিত এক অনলাইন নিউজ পোর্টাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তার এ সাক্ষাতকারটি নেয়া হয়েছিলো।

ঈয়ন : বরিশালের কোন এলাকায় জন্ম আপনার? বাবা-মাসহ পুরো পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
নায়লা নাঈম : বরিশালের পটুয়াখালিতে আমার জন্ম। বাবা, মা ও ছোট ভাইকে নিয়েই আমার পরিবার। বাবা বেসরকারী চাকরীজীবি আর মা আইনবিদ। আর ছোট ভাই পড়াশোনা করছে।

ঈয়ন : কেমন ছিলো আপনারৈ শৈশব, স্কুল জীবন?
নায়লা নাঈম : আমার শৈশব অনেক বৈচিত্রময়। বাবার চাকরির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আমার শৈশব কেটেছে। সবশেষে অবশ্য বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়া হয়। আসলে স্কুল জীবনটা অনেক আনন্দময় ছিলো। অনেক বন্ধু-বান্ধবী ছিলো সেসময়। আমার স্কুল জীবনের খুব কাছের কোনো বান্ধবীর সাথে এখন আর যোগাযোগ নেই। অনেক মিস করি তাদের। অনেক মনে পড়ে স্কুলের স্মৃতিগুলো।

এখন তিনি
ঈয়ন : কি জাতীয় ঘটনার স্মৃতি?
নায়লা নাঈম : মনে পড়ে, আমার এক স্কুলে অনেক গাছের চারা লাগানো ছিলো । আর আমার নিজেরও বাগান করার প্রবল শখ ছিলো। বাসার টবে অনেক গাছ লাগাতাম। তখন মাঝে মাঝে স্কুল থেকেও গাছ নিয়ে এসে বাসার টবে লাগাতাম। এছাড়া আমার সেই স্কুলে একটা পুকুরও ছিলো। প্রায় প্রতিদিন স্কুলের পুকুর পাড়ের শীতল হাওয়ায় অনেকক্ষন বসে থাকা আমার শৈশবের অন্যতম আনন্দময় অভিজ্ঞতা।

ঈয়ন : কুসুমকুমারী দেবী, কামীনি রায়, মনোরমা বসু মাসীমা, সুফিয়া কামাল বা মুক্তিযোদ্ধা আলমতাজ বেগমের মতো যে অগ্রগামী নারীরা বরিশালে জন্মেছিলেন, তারা কি আপনার জীবন দর্শণে কোনো প্রভাব ফেলেছেন?
নায়লা নাঈম : আমি সবসময়ই বরিশালে জন্ম নেয়া কৃতি সন্তানদের অনেক শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তাঁদের আদর্শ, তাঁদের সংগ্রাম ও সফলতা আমায় এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রেরণা যোগায়।

________________________________________

ঈয়ন : বলা হচ্ছে আপনি বাংলাদেশের প্রথম সেক্সসিম্বল মডেল, আইটেম গার্ল ও নায়িকা। আপনার আগে এ ক্ষেত্রে কেউ এতটা সাহসী হয়নি। এ সাহস আপনি কোথায় পেলেন? আর এ সাহস প্রদর্শন কি শুধুই খ্যাতির তাড়নায়, না নারী অগ্রযাত্রার বিষয়টিও আছে আপনার ভাবনায়?
নায়লা নাঈম : আসলে ডেণ্টিস্ট হবার পাশাপাশি, আমি যখন মডেল হিসাবে কাজ করি, আমার বিবেচনায় প্রাধান্য থাকে- যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছি সেই প্রোডাক্টটিকে সফলভাবে তুলে ধরা। আমার পাশাপাশি অনেকেই কিন্তু একইরকম কাজগুলো করছেন। কিন্তু তারা হয়ত আলোচনায় আসতে পারেননি। শুধুমাত্র আমার কাজগুলো নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। অনেকে হয়ত ব্যাপারটিকে সহজভাবে নিতে পারেননি এবং সমালোচনা করেছেন। কিন্তু অনেকেই আবার ওই একই কাজগুলোর প্রশংসাও করেছেন। তবে একটি ব্যাপার, কাজ করার সময় খ্যাতির ব্যাপারটা আমার কখনোই মাথায় থাকে না। আমি সব সময় বিশ্বাস করি- ভালো কাজ করলে, সঠিকভাবে মূল্যায়িত হলে- খ্যাতি পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভালো কাজের জন্যই আজ আমি এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।
আলোকচিত্রীঃ নাসের আবু
ঈয়ন : বাঙালী মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ কাঠামো নাড়িয়ে প্রচলিত অনুশাসনের প্রতি বৃদ্ধঙ্গুলি প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে যে প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে তা কি করে সামলাচ্ছেন?
নায়লা নাঈম : আমার কাছে মনে হয়, একবিংশ শতাব্দীতে সময়ের সাথে সাথে আমাদের মূল্যবোধে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে একটা কাজ যেভাবে দেখা হত, সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে সেটা এখন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হচ্ছে। এরপরও প্রতিটি কাজেরই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া থাকবে। যদিও ‘Different People, different thoughts’। এক্ষেত্রে আবারও বলছি, আমার যে কাজগুলো নিয়ে সমালোচনা হয়েছে, সেগুলো কিন্তু অনেক প্রশংসাও পেয়েছে। মূল ব্যাপার হচ্ছে, একটা কাজ কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন - সেটা যার যার একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। তবুও আমি আমার কাজের প্রতিটি সমালোচনাকে অনেক গঠনমূলক ভাবে নেই। কারো সমালোচনার মাঝে সৃজনশীল কিছু পেলে তা গ্রহন করতে বা সেখান থেকে কিছু শেখার থাকলে সেটাকে ইতিবাচকভাবে নিতে আপত্তি নেই আমার।

ঈয়ন : পরিবারিক পারিপার্শ্বিকতা কতটুকু সহায়ক বা প্রতিবন্ধক হয়েছে?
নায়লা নাঈম : আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে, মিডিয়ায় কাজ করার ব্যাপারে পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে এসেছি সবসময়। আমার পরিবার আমার কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক। তাদের সমর্থন ছাড়া কখনোই এত দূর আসা সম্ভব ছিলো না।
তন্ময় তানসেন পরিচালিত ‘রানআউট’ সিনেমার গানের দৃশ্যে
ঈয়ন : এ মুহুর্তে আপনার জীবনের লক্ষ্য কি? মানে এ জীবনে কি কি করতে চান?
নায়লা নাঈম : আপনারা জানেন যে, পেশাগত জীবনে আমি একজন ডেন্টিস্ট, মডেল এবং অভিনেত্রী। ঢাকায় আমার নিজের ক্লিনিক আছে, সেখানে আমি নিয়মিত রোগী দেখে থাকি। এই মুহূর্তে আমার লক্ষ্য, ডেন্টিস্ট হিসাবে নিজেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এছাড়াও অদূর ভবিষ্যতে নিজেকে একজন সফল অভিনেত্রী হিসাবে দেখতে চাই।
ঈয়ন : রিলেশনসিপ স্ট্যাটাস -
নায়লা নাঈম : এখনো আমি আমার মনের মত কোনো মানুষ খুঁজে পাইনি। আমি যাকে পছন্দ করবো সে দেখতে যেমনই হোক, মানুষ হিসাবে তাকে অবশ্যই অনেক ভালো, মানে সৎ ও চরিত্রবান হতে হবে।
ঈয়ন : আত্ম-সমালোচনা করুন।
নায়লা নাঈম : আসলে ডেণ্টিস্ট্রি, মডেলিং ও অভিনয়, তিনটি কাজ নিয়েই আমাকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই মাঝে মাঝে আমার নিজের কাছে মনে হয় আমি যদি শুধুমাত্র একটি পেশায় নিয়োজিত থাকতাম তবে সে পেশায় আজ আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকতো; আরো ভালো কাজ করতে পারতাম।

সাম্প্রতিক ফটোস্যুট
ঈয়ন : বরিশাল ও বরিশালের মানুষ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
নায়লা নাঈম : বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় থাকা হলেও বরিশাল আমার সবচেয়ে পছন্দের শহর। বরিশাল শহরটাকে আমি অনেক মিস করি। বরিশাল শহরের সাথে আমার কৈশোরের অনেক অদ্ভুত প্রিয় স্মৃতি জড়িত। প্রথম ভালোবাসা বরিশালকে ঘিরে, প্রথম ভালোবাসার মানুষটাও ওই শহরের। তাই আমার এই ব্যস্ত জীবনের মাঝেও সময় পেলেই বরিশাল যাওয়ার ইচ্ছা থাকে আমার। ইচ্ছে করে হারানো কাছের বন্ধুদের খুঁজে পেতে। যাদের সাথে স্কুলে বসে অনেক আড্ডা দিতাম, ছুটির পরে একসাথে হেঁটে বাসায় ফিরতাম।

ঈয়ন : বরিশালবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে?
নায়লা নাঈম : বরিশালবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বরিশালের মানুষ আমার অনেক আপন ও কাছের মানুষ। আমি সত্যি গর্বিত এই ভেবে যে, বরিশালবাসীরা মানুষ হিসাবে অনেক আন্তরিক ও ভালো মনের মানুষ। এই জনপদে জন্মগ্রহন করে আমি গর্ববোধ করি।
নায়লা নাঈম সম্পর্কে কৌতূহলীরা অন্তর্জালের যে কোনো খোঁজ যন্ত্রে বাংলা বা ইংরেজীতে তার নামটি লিখে অনুসন্ধান করলে নিরাশ হবেন না। খুঁজে পাবেন বহু সংযোগ। তার ওয়েবসাইটের ঠিকানা - www.nailanayembd.com আর পেইজের facebook.com/artist.nailanayem
অফিসিয়াল পেইজের স্ক্রিনসট

কোন মন্তব্য নেই:

newsreel [সংবাদচিত্র]