old mate | © eon's photography / pap |
ছবির এই মানুষটি বহু পুরানো বন্ধুদের একজন। অথচ তার আসল নাম কখনো জানাই হয়নি। আমার কাছে আজও তার নাম ‘দাদু’। তাকে এ নামেই ডাকতাম আমরা, মানে বন্ধুরা। প্রায় ১০ বছর পর দেখা হয়েছিলো এই দাদুর সাথে, তা’ও দুই বছর আগে - ১২’র নভেম্বরে - বরিশাল মহাশ্মশানে।
স্কুল জীবনের প্রিয় আড্ডাখানাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো নতুন বাজার টেম্পু
স্ট্যান্ড। ১৯৯৭-৯৮ থেকে ২০০০-০১ সালের সেই টেম্পু স্ট্যান্ডের সাথে আজকের স্ট্যান্ডের কোনো মিলই নেই।
ওই সময় পুলিশ ফাঁড়ির ঠিক উল্টোদিকে সারি বাঁধা টিনশেড ঘরগুলোয় ছিলো ওয়ার্কসপ। সারাদিন টেম্পু মেরামতের কাজ হত। আর ওয়ার্কসপগুলোর পূর্ব প্রান্তে ছিলো সোহেল ভাইয়ের চায়ের দোকান। আর তার দোকান ঘেঁষা রেলিঙ দেয়া কালভার্ট পেরুলেই কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি। দুঃসাহসিক ডাকাত হিসাবে বরিশাল অঞ্চলের এক ‘মিথিক্যাল ক্যারেক্টার’ ছিলেন ওই মোল্লা। মন্ত্রবলে তিনি বিভিন্ন পশুপাখি রূপ ধারন করতে পারেন, এমন গল্পও শুনেছি।
মোল্লার বাড়ির সেই রেলিঙ দেয়া কালভার্টের অন্যপাশে ছিলো টিএন্ডটি’র দুটি ডিস্ট্রিবিউসন পয়েন্ট কেবিনেট। তারই সামনে ছিলো দাদুর সেলুন। সেলুন বলতে - ওই কেবিনেট আর বিদ্যুতের খুঁটির সাথে কসরত করে ঝুলানো পলিথিনের চালা, ছোট্ট আয়না, হাতলভাঙা চেয়ার, আর একটি টিনের বাক্সে খুর, কাঁচি, ফিটকিরি, সাদা কাপড়সহ আনুসাঙ্গিক কিছু উপাদান। চুল, দাঁড়ি কাটার চেয়ে মাথা আর শরীর মেসেজে খ্যাতি ছিলো তার। তবে খুব বেশী কাজ পেতেন না। এ নিয়ে কোনো হা-হুতাশও ছিলো না তার। তামাম অনিশ্চয়তাও ঢেকে রাখতেন পুরু মোটা চশমার আড়ালে । যদিও মাঝে মাঝে দেখতাম চেয়ারে বসে উদাস হয়ে তাকিয়ে আছেন রাস্তার দিকে। কি ভাবনায় ডুবে যেন রিক্সা-গাড়ির আসা-যাওয়া দেখছেন। আবার কখনো মুড ভালো থাকলে খুব আয়েশ করে বিড়ি ধরিয়ে তুমুল উৎসাহ নিয়ে নানান আলাপ জমাতেন, বিশেষ আগ্রহ ছিলো স্থানীয় রাজনীতির ব্যাপারে।
সোহেল ভাইয়ের দোকান, রেলিঙ দেয়া কালভার্ট আর দাদুর সেই সেলুনের সামনে সিরিয়ালে থাকত বানারীপাড়া রুটের টেম্পুগুলো । কৈশোরের কত সকাল, দুপুর, রাত কেটেছে - ওই টেম্পুগুলোয়। অদূরেই ছিলো জগদীশ আশ্রম। সেটিও আমাদের আড্ডাখানা ছিলো দীর্ঘ দিন। লুকিয়ে সিগারেট ফোঁকা বা গলা ছেড়ে গান গাওয়ার সেই মুহুর্তগুলো - আহা, কতই না অনাবিল ছিলো।
বহুতল ভবনের নীচতলার একটি স্টলে আশ্রয় নিয়ে সোহেল ভাইয়ের চায়ের দোকান আজও টিকে আছে। দাদু অবশ্য টিকতে পারেনি। দু’বছর আগের সে সাক্ষাতে বলেছিলেন, তার সেলুন এখন কাউনিয়ার মড়কখোলা পোল সংলগ্ন ডোমপট্টির বিপরীতে। বলেছিলাম যাব, কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। আশা করি - দাদু আজও ভালো আছেন, থাকবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন