| নকশীকাঁথা হাতে আইরিন বেগম © eon's photography / pap |
আইরিন বেগম। নিভৃতচারী এক সফল নারী উদ্যোক্তা। যার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন দেশের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ২০ হাজার নারী।
স্কুলের গণ্ডিও পেরুনো হয়নি তার। প্রাইমেরীতেই বন্ধ হয়েছিলো পড়াশুনা। তবে রূদ্ধ হয়নি চিন্তার গতিধারা। কিছু একটা করার শপথ নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছিলো তা। পরবর্তীতে যা আরো উসকে দেয় মুক্তমনা স্বামীর আস্কারা। এরই জেরে আজ দেশের নকশীকাঁথা শিল্পের ইতিহাসই বদলে দিচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কালীনগর গ্রামের এই মহিলা। নিজ বাড়িই গড়ে তুলেছেন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ নকশীকাঁথার আড়ত ও বিক্রয় কেন্দ্র।
দেশের অনেক লোক শিল্প যখন হারাতে বসেছে, নকশীকাঁথা শিল্প তখন নবোল্লাসে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। আর এটা সম্ভব করেছেন কিছু সাহসী উদ্যোক্তা। তাদেরই একজন আইরিন বেগম। এমন খবর পেয়েই তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় এই প্রতিবেদক।
বিসিক থেকে ২০০২ সালে স্বামী আব্দুল মান্নানের নামে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে আইরিন মাত্র আশি জন মহিলাকে সাথে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। ঠিক ১২ বছর পর ২০১৪ সালের শেষে তার সাথে কাজ করছেন কমপক্ষে ২০ হাজার মহিলা।
![]() |
| আইরিন বেগমের আড়তের একাংশ © eon's photography / pap |
আইরিন জানান, চাহিদানুযায়ী কাঁথা তৈরীর জন্য বর্তমানে প্রতিমাসে গড়ে এক ট্রাক কাপড় কেনা হয়। যার মূল্য প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। আর প্রতিদিন নূন্যতম ২৫ হাজার টাকার সুতা লাগে। দৈনিক গড়ে এক লাখ টাকার কাঁথা বিক্রি হয় বলেও তিনি জানান।
![]() |
| সুতো মেপে দিচ্ছেন আইরিন © eon's photography / pap |
নাচোল থেকে শুরু করে শিবগঞ্জের মধ্যবর্তী প্রায় প্রতিটি গ্রামের মহিলা আইরিনের সাথে কাজ করছেন। তাদের কাঁথা তৈরীর কাপড়, সুতা থেকে শুরু করে ডিজাইন অবধি সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে পাইকারও আছেন ৭০ জন। প্রতিটি কাঁথা তৈরীর জন্য নকশীকাঁথা শিল্পীরা মজুরী বাবদ তিনশ থেকে নয়শ টাকা পেয়ে থাকেন। আর ওগুলো বিক্রি হয় নয়শ থেকে দুই হাজার টাকায়।
![]() |
| আইরিনের স্বামী আব্দুল মান্নান © eon's photography / pap |
১৯৯৭-৯৮ সালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের তিনটি ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বর নির্বাচিত হয়েছিলেন আইরিন। নিজের ক্ষমতার মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে স্থানীয় গ্রামীণ মহিলাদের উন্নয়নে স্থায়ী কিছু করার ইচ্ছা জাগে তার। বাড়িতে বাড়িতে নঁকশীকাঁথা সেলাইয়ের বহু পুরানো ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে মহিলাদের স্বনির্ভর করার বিষয়টি ওই সময়ই তার মাথায় আসে। তার এ ভাবনা স্বামী মান্নানেরও ভালো লাগে। তিনিও উৎসাহ জোগান স্ত্রীকে। এরপরই দু’জনে মিলে আঁটঘাঁট বেঁধে নেমে পরেন।
আইরিন-মান্নানের দুই ছেলে নাসিমউদ্দিন মানিক আর সোহেল আহমেদও এখন এই ব্যবসারে সাথে জড়িত। এদের মধ্যে ছোট ছেলে সোহেল বাড়ির কর্মযজ্ঞ, আর বড় ছেলে মানিক সিলেটের বিক্রয় কেন্দ্র সামলাচ্ছেন। এছাড়া মানিক দেশের বিভিন্ন এলাকার নকশীকাঁথা সংগ্রহ করেন বলেও জানিয়েছেন সোহেল।
গত কয়েক মাস যাবৎ অবশ্য ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো না। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে আইরিন নকশীকাঁথা প্রকল্পেও। চাহিদানুযায়ী কাঁচামাল আনা যাচ্ছে না। তৈরী কাঁথা পাঠানোর ক্ষেত্রেও একই প্রতিবন্ধকতা। সম্প্রতি (৮ মার্চ) বিকেলে মুঠোফোনালাপে এমনটাই জানালেন আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘আরো কিছু দিন এমন অবস্থা চলতে থাকলে আর ব্যবসা করতে হবে না।’
![]() |
| কাঁথা জমা দিয়ে টাকা নিচ্ছেন নারীরা। © eon's photography / pap |












![newsreel [সংবাদচিত্র]](https://live.staticflickr.com/4908/46061368235_81e61ab7b9_m.jpg)