Powered By Blogger
কলেজ পাড়া লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কলেজ পাড়া লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২০ মে ২০১৮

ফের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে চাই

পুত্র মুনিমের সাথে ছায়ীদুল্লাহ্ আঙ্কেলের এই ছবিটি ৪ মে দুপুরের
কিছু কিছু মৃত্যুর খবর বড় বেশী স্মৃতিকাতর করে তোলে। এই যেমন আজ ভোরে বন্ধু কানুর (লিমন কৃষ্ণ সাহা) কাছে যখন শুনলাম কলেজ পাড়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রিয়মুখ মোহাম্মদ ছায়ীদুল্লাহ্ আর নেই, কত কিছুই না মনে পড়ে গিয়েছে। যা রোমন্থনে বেলা গড়িয়ে দুপুর হতে চলেছে। তিনি হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক হলেও এককালে বরিশালের প্রতিটি শিক্ষায়তনের শিক্ষার্থী তাঁর জ্ঞানের সান্নিধ্য পেয়েছেন।
মূলত ইংরেজীর ডাকসাইটে শিক্ষক ছিলেন ছায়ীদুল্লাহ আঙ্কেল (এমনটাই সম্বোধন করতাম তাকে)। হালিমা খাতুনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকও ছিলেন দীর্ঘদিন। মিষ্টভাষী নিপাট ভদ্রলোক, অদ্ভুত মায়াবী এক হাসির অধিকারী এই মানুষটি শৈশব ও কৈশোরে আমাদের এক অদ্ভুত ভয়ের কারণ ছিলেন। তার ছোট ছেলে মুনিমের (মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ্) সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে যার সাথে পরিচিত ছিলাম আমরা, মানে মুনিমের বন্ধুরা। আন্দাজ করি বাবু ভাইয়ের (মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ্) বন্ধুরাও একই আতঙ্কে ভুগতেন। বিষয়টা একটু খোলসা করি। একদিনের ঘটনা বললেই সবাই বুঝবেন আশাকরি। 

তখন সম্ভবত সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। বিকেলে পূর্ব নির্ধারিত ক্রিকেট ম্যাচ খেলার জন্য মুনিমকে ডাকতে গিয়েছি ওর বাসায়। আঙ্কেলই দরজা খুললেন। আসার কারণ শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন। এরপর প্রথমেই জানতে চাইলেন কোন স্কুলে কোন ক্লাসে পড়ি। বলার পর ফের জানতে চাইলেন, ‘টেনস’ (Tense ) কত প্রকার ও কি কি? উত্তর শেষ হতেই তাঁর পরবর্তী জিজ্ঞাসা, ‘পার্টস অব স্পিচ’ (Parts Of Speech) কাকে বলে? তা’ও বললাম। এরপর আবারও সম্পূরক প্রশ্ন, পার্টস অব স্পিচ কত প্রকার ও কি কি? সবগুলো উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারায় মহাখুশী হয়ে যান তিনি। গম্ভীরতা ঝেড়ে স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, দাঁড়াও মুনিমকে ডেকে দিচ্ছি। কিন্তু তিনি ভিতরে গিয়ে দেখেন যে তার সুপুত্রটি আর ঘরে নেই আসলে। কোলবালিশকে কাঁথায় মুড়িয়ে নিজের জায়গায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে সে অনেক আগেই পিছনের দরজা থেকে পালিয়েছে। বুঝুন তখন আমার কি হাল। অবস্থা বুঝে আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত ভেগে যাই। 

একটু বড় হওয়ার পর বন্ধুরা যখন প্রায়ই নিশিজাগা আড্ডায় মাতি, তখনকার আরেকটা গল্প বলি। এক শাওন রাতে আঙ্কেল ঘুমিয়ে যাওয়ার পর মুনিমের বাসায় গিয়ে হাজির আমরা। তুমুল আড্ডা, তাস খেলা আর খাওয়া-দাওয়ায় আমরা যখন মত্ত ঠিক তখনই কিভাবে যেন আঙ্কেলের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি রুমের দরজায় এসে নক করতেই আমরা সব চুপ। পিনপতন নিরবতা নেমে আসে। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তিনি ঠিকই টের পেয়ে গিয়েছিলেন যে রুমে অনেক মানুষ রয়েছে। অবশেষে অন্যদিকের দরজা খুলে আমরা যখন কেবল রাস্তায় বেড়িয়েছি, তিনিও কোন দিক দিয়ে যেন বেড়িয়ে এলেন। কি আর করা, দিলাম দৌড়। তিনিও আমাদের তাড়া করে বেশ কত দূর দৌড়ে এসেছিলেন, বলছিলেন - দাঁড়াও, দাঁড়াও। কিন্তু আমাদের কি আর তখন সেই সাহস আছে। আঙ্কেলকে আসতে দেখে পাশে থাকা এক বন্ধু থামার কথা বলতেই আরেক বন্ধুর বলেছিল, তুই ইংলিশ গ্রামারে ভালো হলে দাঁড়া; নইলে ভেগে যা। আঙ্কেলের সাথে এমন আরো কত অজস্র টুকরো স্মৃত্মি জমে আছে! শেষের দিকে তিনি বেশ নরম হয়ে গিয়েছিলেন, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাতেও বন্ধু বান্নার (বাকিউল আহসান) সাথে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা হচ্ছিল। চুয়াত্তর কি-ইবা এমন বয়স!

কিছুক্ষণ পর, মানে বা’দ যোহর বিএম কলেজের মধ্যে আঙ্কেলের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। বরিশালের কলেজ পাড়া এক গুণী প্রবীণকে বিদায় জানাবে আজ। আল্লাহ অবশ্যই তার এই নামাজী পরহেজগার বান্দাকে প্রাপ্য সম্মাণটুকু দেবেন। পবিত্র কোরান বলছে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। বিদায় আঙ্কেল। তবে মহাবিশ্বের কোথাও ফের কোনো জন্মে আপনার আন্তরিক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে চাই। অপেক্ষায় থাকলাম। আশারাখি আপনিও ভালো থাকবেন।

ঈয়ন
২০ মে ২০১৮
মিরপুর, ঢাকা।

২২ এপ্রিল ২০১৪

সোনালী সময় - The Golden Age

© eon's photography / pap
এই বয়সটা সকলেই পাড়ি দেয়; এবং সারাজীবনই মিস করে খুব। কারণ এমন নিরুদ্বেগ মন, কেড়ে নেয় বয়সী ক্ষণ। অবশ্য কেউ কেউ বয়সকেও জয় করতে জানে; তারা আজন্ম কিশোর।
‍‌______________________
Camera : Canon EOS 7D
Focal Length : 116 mm
Shutter Speed : 1/50 sec
Aperture : f/7.1 ISO : 160
______________________
Taken : Oct 17, 2013
Location : Barisal, Bangladesh

https://www.flickr.com/photos/eon_bd/with/10824594675
http://yourshot.nationalgeographic.com/photos/3466720

newsreel [সংবাদচিত্র]