Powered By Blogger
হিন্দু লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
হিন্দু লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০৮ নভেম্বর ২০২০

ফের বিষবাষ্পে ভারী বাংলার বাতাস

"জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই; বিন খালিদের (সম্ভবত মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে বোঝানো হচ্ছে) হাতিয়ার/বীর শহীদের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার," এমন নানা শ্লোগান তুলে সেদিন একপক্ষকে 'মূর্তি ভাঙ্গার আন্দোলন' ঘোষণা করতে দেখেছি। যার রেশ না কাটতেই বীরদর্পে প্রতিপক্ষের গালে জুতা মারার বাসনা জানান দিয়ে আরেকপক্ষকে আজ বলতে শুনছি, "জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো; কুরুক্ষেত্রের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার।" ধর্মযুদ্ধের এই দামামা বাংলায় ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোর ইতিহাস মনে করিয়ে দিচ্ছে। দমবন্ধ লাগছে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে ফের ভারী হয়ে উঠছে বাংলার বাতাস। একদিকে “নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার,” অন্যদিকে "জয় শ্রী রাম, জয় জয় শ্রীরাম;" ধ্বনি তুলে বিদ্বেষপূর্ণ আচারণকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার আদি চেষ্টাও চলছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাষ্ট্রকে এখনই সতর্ক হতে হবে। একইসঙ্গে সাধারণ মুসলমান ও হিন্দুদের মনে রাখতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ জন্ম নেওয়ারও হাজার বছর আগে থেকে পারস্পরিক সহাবস্থানে অভ্যস্ত এই ভূমির নানা মত ও পথের মানুষ। তাদের উদার নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো যতগুলো ঘটনা এখানে ঘটেছে, প্রত্যেকটিতে এমন কেউ লাভবান হয়েছে, যারা এই ভূমির কেউ নন। ধর্মপ্রাণ বাঙালীর ভাবাবেগকে পুঁজি করে এই মুহুর্তে কে বা কারা লাভবান হতে চাইছে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন; খুব খেয়াল।

২৮ অক্টোবর ২০১৯

ভারতে বাংলাদেশ-ফোবিয়ার হেতু কি?

দীপাবলী উপলক্ষে হিলি সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারতের উপহার বিনিময়।
বাংলাদেশের সীমানায় ভারতীয় জেলে আটকের ঘটনায় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বড়াল ও পদ্মার নদীর মোহনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনার পর থেকেই আরো অনেক বাংলাদেশী সাংবাদিকের মতো তীক্ষ্ণ নজর রাখছিলাম ভারতীয় গণমাধ্যমে। তখনই ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে প্রকাশিত ‘স্বরাজ্য ম্যাগ’ নামের এক গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণের একটি শিরোনামে হঠাৎ চোখ আটকে যায়। যার বাংলা অর্থ, বিএসএফ এর নতুন মাথাব্যাথা: বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী জওয়ানরা মৌলবাদী হয়ে উঠছে এবং প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে ‘প্রসাদ’।

রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ সীমান্তের ওই ঘটনার মাত্র তিনদিনের মাথায় (২১ অক্টোবর ২০১৯) প্রকাশিত এই প্রতিবেদন জুড়েই ছিল উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ছাপ। যেখানে জানানো হয়েছে, বিশেষত যেসব সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেইসব সীমান্তে পূজাদের সময় দেবদেবীদের উদ্দেশ্যে বিএসএফ জওয়ানদের দেওয়া ‘খিচুড়ি’ আনুষ্ঠানিকভাবে ওপারে পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। একইভাবে বিজিবির জওয়ানরাও ঈদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে বিরিয়ানী এবং মিষ্টি পাঠাতেন। তবে তারা ‘প্রসাদ’ নিতে অস্বীকার করার পরে অনেক জায়গায় থেমে গেছে এই শুভেচ্ছা বিনিময়।

এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও একান্ত আলাপে বিজিবির এক কর্মকর্তা বলেছেন, “সীমান্তে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।” সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি উপলক্ষেও বিভিন্ন সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা শুভেচ্ছা ও উপহার বিনিময় করেছেন বলেও জানান তিনি। 
যদিও উল্লেখিত প্রতিবেদনের উপ-শিরোনামে অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “নিম্নস্তরে ইসলামীকরণ ও উগ্রপন্থীকরণের কারণে আমাদের ‘কাফের’ ভাবছে বিজিবির সদস্যরা। এ কারণেই তারা এত প্রতিকূল ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে।” এছাড়া “বিজিবির নিম্নস্তরে ইসলামীকরণে আন্তঃসীমান্ত পাচার, বিশেষত গবাদি পশু এবং মানবপাচারের উত্থান হয়েছে” বলেও উল্লেখ করা হয়। 
সীমান্তে কর্মরত বিএসএফ কর্মকর্তাদের ভাষ্য দাবি করে স্বরাজ্য ম্যাগের সহযোগি সম্পাদক জয়দ্বীপ মজুমদার তাঁর প্রতিবেদনের শুরুতেই জানিয়েছেন, “বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলায় আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিজিবি জওয়ানদের দ্বারা বিএসএফের এক হেড কনস্টেবলকে হত্যা এই দ্বন্দ্ব ও শত্রুতার পরিচায়ক মাত্র।” দু'দেশের সীমান্ত বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের মধ্যেকার সম্পর্ক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ হলেও বিজিবির জওয়ান, ল্যান্স নায়েক, নায়েক এবং হাবিলদার স্তরের সাথে বিএসএফ জওয়ানদের ‘ক্রমবর্ধমান বৈরিতা’ অনুভব করছেন বলে তাঁকে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। 
গত কয়েকদিনে এই প্রতিবেদনটি নিয়ে কথা হয়েছে ওপার বাংলার একাধিক বন্ধুর সাথে। যারা জন্মসূত্রে হিন্দু হলেও কট্টর নন, মূলত রাজনীতি, সাহিত্য, সংবাদ, চলচ্চিত্রের মতো বুদ্ধিবৃত্তিক নানা কাজের সাথে জড়িত। তাদের মুখেই জানতে পারি, ‘স্বরাজ ম্যাগ’ নামের এই পত্রিকাটি মূলত উগ্র হিন্দুবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) অন্যতম মুখপাত্র। যে কারণে তারা এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে রাষ্ট্রীয় চাপে এমন প্রচারণাটা মূলধারার গণমাধ্যমেও শুরু হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। 
যে কারণে এমন প্রচার : ভারতীয় বন্ধুদের ভাষ্য, সীমান্তে স্থিত বিএসএফ ও বিজিবি কর্মীরা যে যার রাষ্ট্রীয় সীমানাকেন্দ্রিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে নিয়োজিত৷ তারা উভয়েই আপনার রাষ্ট্রের ব্যাপারে দায়বদ্ধ এবং নিজ নিজ রাষ্ট্রকে অপবহির্শক্তির হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর৷ এই সুরক্ষার বিষয়টি বাদে বর্ডারের অপরপ্রান্তের অপর রাষ্ট্রের অন্দরে কী হচ্ছে তা দেখার বা তা নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশ নেই, যদি না অপর রাষ্ট্রের সীমানা থেকে কোনোরকম কোনো ‘থ্রেট’ একপক্ষ পেয়ে থাকে৷ দুটি প্রতিবেশী রাষ্টের পারস্পরিক গণসংস্কৃতি, বিশ্বাস, ভাবনার তরিকা, অভ্যাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফারাক আছে, মিলও আছে, কিন্তু ফারাকগুলিই একেকটির দৃশ্যমান পরিপ্রেক্ষিতের ভিন্নতা বজায় রাখে রাষ্ট্রের নিরীখে। একেকটি রাষ্ট্রের নিজস্বতাও তার সার্বভৌমত্বের অংশ৷ 
এখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণসমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বাঙালী মুসলমান৷ তাই তার বর্ডার গার্ডের মধ্যে নিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ট্রের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব অনুযায়ী ইসলাম বিশ্বাসীর সংখ্যাই বেশি৷ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের শতাংশের হিসেবের থেকে কিছুটা বেশি সনাতন বিশ্বাসী মানুষ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডে থাকলেও জনবিন্যাসের বাস্তবতা অনুযায়ী হিন্দুর চেয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা বেশি৷ 
অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে স্থিত ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে ভারতের ধর্ম বিশ্বাস ভিত্তিক জনবিন্যাস অনুযায়ী মুসলিমের চেয়ে হিন্দুর সংখ্যা অনেক বেশি৷ যদিও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে নিয়োজিত বিএসএফ কর্মীরা কেউই পশ্চিম বাংলার বাঙালী হিন্দু বা মুসলিম নয়৷ তারা হয় উত্তর ভারত, মধ্য ভারত, পশ্চিম ভারত অথবা উত্তরপূর্ব ভারতের হিন্দু বা মুসলিম। যদিও হিন্দু বেশি৷ 
হিন্দুরা সাধারণত গরু খায় না৷ আবার বিশ্বাসী মুসলমানও এমন কিছু করে না যাতে তার ঈমান নষ্ট হয়৷ বিশ্বাসী মুসলিমদের সামনে কেউ যদি নিজস্ব আচারে আল্লাহর একত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, সেই ব্যক্তির ওই আচরণে সমর্থন জানানোটা তাদের ঈমানী নৈতিকতার পরিপন্থী৷ একইভাবে বিশ্বাসী হিন্দুকে যদি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গো-মাংস খাওয়ানোর মতো কাজে প্রণোদিত করতে চাওয়া হয়, সেক্ষেত্রে প্রনোদিত হওয়াটাও নিজের বিশ্বাসের প্রতি অবিচার! তো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান বাঙালীর বর্ডারে নিয়োজিত লোকেরা যেহেতু বেশির মুসলিম তাই কোনো পৌত্তলিক দেবতার প্রতি নিবেদিত প্রসাদগ্রহণের ঘটনা তাদের কাছে ঈমানী চেতনার বিরোধী। যেভাবে বিশ্বাসী হিন্দুর কাছে গো-মাংস খাওয়া অধর্ম৷ 
প্রতিটি মুসলিমের অধিকার আছে তার ঈমান রক্ষা করার৷ প্রতিটি হিন্দুরও অধিকার আছে গো-মাংস গ্রহণ না করে সংস্কার রক্ষা করার৷ এখন বিজিবি প্রসাদ নেয়নি বলে বিএসএফের কাঁধে বন্দুক রেখে স্বয়ং সেবক সংঘ যদি বিজিবির মধ্যে ‘র‍্যাডিক্যাল ইসলাম’ বা ইসলামী জঙ্গিবাদের ভূত দেখলে তো বিজিবিও কোরবানীর মাংস বিএসএফকে দিতে চাইবে। এক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যাত হলে তারা শুধুমাত্র বিএসএফ কর্মীদের দিকে ‘র‍্যাডিক্যাল হিন্দুত্বের’ অভিযোগও তুলতে পারে! কিন্তু বিজিবি প্রসাদ প্রত্যাখান করার যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা আসলে তাদের এক্তিয়ারের মধ্যেই পরে। কারণ এটা তাদের ‘কালচারাল চয়েস’৷ একইভাবে বিএসএফ যদি কোরবানীর গো-মাংস না নিতে চাইতো, সেটাও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ কে কী খাবে বা খাবে না কী পরবে বা পরবে না এই সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তিগত৷ এই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক, জঙ্গিবাদী বা জাতিবাদী নয়৷ 

বিজিবি নিজ মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রসাদ প্রত্যাখ্যান করেছে তাঁর ধর্মবিশ্বাসের অধিকার রক্ষায় এবং সার্বভৌমত্বে দাঁড়িয়ে৷ অন্য রাষ্ট্রের বর্ডার গার্ডে নিযুক্ত বিশ্বাসী মুসলিমকে প্রসাদ দিতে চাওয়া এবং প্রত্যাখ্যাত হয়ে তার দিকে জঙ্গীবাদের অভিযোগ করাই বরং অন্যের ‘ডেমোক্রেটিক’ এবং ‘সভারনিটি’ ভায়োলেট করার সামিল। বিজিবির গায়ে পরে বিএসএফের মালিক রাষ্ট্রের এই ঝগড়া আপাত অর্থে অর্থহীন হলেও রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যবাহী৷ কারণ প্রসাদের অজুহাতে বিজিবির দিকে র‍্যাডিক্যাল ইসলামের ব্যাপারে যে অভিযোগ স্বয়ং সেবক সংঘ তুলেছে তা অমূলক হলেও এই মিথ্যাপ্রচার দিয়েমপশ্চিমবঙ্গে ও ত্রিপুরায় বাংলাদেশ-ফোবিয়াকে জোরালো করতে পারবে। আর ইসলামোফোবিয়া, বাংলাদেশ-ফোবিয়া, এসব হলো পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় এনআরসি বাস্তবায়বের জন্যে বানোয়াট একটি বিষয়৷

আমার বন্ধুরা আরো বলেছেন, এনআরসির জন্য বাংলাদেশ ফোবিয়া তৈরি করা দরকার, যাতে প্রচার করা যায় বিজিবির মদদে হুহু করে কয়েক বছরে পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরবঙ্গে মানুষ ঢুকেছে৷ এই মিথ্যা প্রচারকে সামনে রেখে এনআরসির সমর্থনের গণভিত্তি তৈরি করা হবে। তারপর ওই গণভিত্তির গণকেই এনআরসি দিয়ে বাস্তুচ্যুত, দেশচ্যুত করা হবে৷ বাংলাদেশ-ফোবিয়ার মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্র রচনা করতেই বিজিবির সাথে বিএসএফকে দিয়ে পায়ে পা তুলিয়ে ঝগড়া করানোর ফিকির খুঁজছে দিল্লী৷ এই কাজ তাদের পক্ষে আরো সহজ কারণ দুই বাংলার বর্ডার অথবা বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা সীমান্তের ভারতীয় সীমানার নিয়োজিত বিএসএফ কর্মীরা অধিকাংশই হিন্দুস্তানী ও হিন্দীভাষী৷ বিজেপি তথা দিল্লীর এই ষড়যন্ত্রে তারা অংশীদার। কারণ, বিজেপি ও স্বয়ং সেবক সংঘের রাজনীতি হলো হিন্দী জাতিবাদী রাজনীতি৷ হিন্দুত্বের একমাত্রিক স্লোগানকে সামনে রেখে তারা আসলে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা থেকে বাঙালী উচ্ছেদ করে এই অঞ্চলকে হিন্দুস্তানী, মারোয়ারি, বিহারী, গুজরাতিদের লীলাভূমি বানাতে চায়৷ বানিয়া পুঁজির বাজার ও কারখানা বানাতে চায়৷এটাই হিন্দী জাতিবাদ। 
হিন্দী-হিন্দু-হিন্দুস্তানী জাতিবাদের লক্ষ্য ইসলামোফোবিয়ার মতো বাংলাদেশফোবিয়া তৈরি করে এনআরসি বাস্তবায়িত করা। সেকারণেই বিজিবির বিরুদ্ধে এমন ফালতু অভিযোগ তুলেছে হিন্দী জাতিবাদী আরএসএসরা।
বন্ধুদের সোজাসাপ্টা বক্তব্যে পাঠকদের কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে আশাকরি। এক্ষেত্রে একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমার প্রত্যাশা, ভারতীয়দের এই ফোবিয়া তথা অস্বাভাবিক ভীতি বা উদ্বেগ ‘বিদ্বেষ’ না ছড়াক। ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক স্থিতি বজায় থাকুক।

ইতিহাস কথা বলে : ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ইতিহাস এই উপমহাদেশে নতুন নয়। তবে স্বরাজের এই প্রতিবেদনটি স্মরণ করিয়ে দেয় ১৮৫৭ সাল। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার এদেশে ৫৫৭ ক্যালিবার এনফিল্ড (পি/৫৩) রাইফেল নিয়ে আসে। ১৮৫৩ সালে তৈরি এই রাইফেলের ব্যবহৃত কার্তুজে চর্বিযুক্ত অংশ ছিল, যা ব্যবহারের পূর্বে সৈন্যকে তা দাঁত দিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে হতো। গুজব রটানো হলো এই চর্বিযুক্ত অংশ গরু এবং শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরি। যেহেতু গরু ও শুকরের চর্বি মুখে দেওয়া হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সৈন্যদের কাছে অধার্মিক কাজ ছিল, সেহেতু এই গুজবের মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ১৮৫৭–৫৮ সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা ভারতীয় মহাবিদ্রোহ।

১৬ অক্টোবর ২০১৯

রাষ্ট্রধর্ম বাড়িয়েছে ইসলামী উগ্রবাদ

একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচীর দৃশ্য
“রাষ্ট্রধর্ম কায়েমের তিন দশকে বেড়েছে ইসলামী উগ্রবাদের শক্তি,” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন তৈরী করেছিলাম গত বছর, যা কোথাও প্রকাশিত হয়নি। চলতি বছরের জুলাইতে প্রিয়া সাহা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সাহায্য চাওয়ায় যখন খুব হৈচৈ হচ্ছে, তখন অপ্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটি ফের স্মরণে আসে। 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রিয়া সাহা ওয়াশিংটনে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউজে গিয়ে ট্রাম্পকে বলছেন, “আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে তিন কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ‘উধাও’ হয়ে গেছেন। এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ (১৮ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। জমি কেড়ে নিয়েছে। এর কোনো বিচার এখনো পাইনি।”
“কারা এসব করেছে,” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানতে চাইলে দলিত সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘শারি’ পরিচালক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংগঠক প্রিয়া সাহা আরো বলেন, “উগ্রপন্থী মুসলমানরা এটা করেছে। সব সময় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তারা এটা করে থাকে।” 
এমন বক্তব্যের জেরে সরকার-বিরোধী, ডান-বাম, বাঙালী মুসলমানদের সব পক্ষই যখন প্রিয়াকে তুলোধনো করছে, তখন খেয়াল হয় আরো ছয় বছর আগে মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির এক শুনানিতে দাবি করা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে ১৯৪৭ থেকে ২০১৩ সাল এ পর্যন্ত চার কোটি ৯০ লাখ (৪৯ মিলিয়ন) হিন্দু মিসিং হয়েছে। 

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদও বহু বছর ধরেই বলছে, গত পাঁচ দশকে আনুমানিক এক কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী দেশান্তরিত হয়েছেন। সে হিসেবে গড়ে বছরে দেশ ছেড়েছেন দুই লাখ ৩০ হাজার ৬১২ জন। তাছাড়া সরকারি পরিসংখ্যান মতে সত্তরের দশকে এ দেশে ২০ দশমিক এক শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। চলতি দশকের শুরুতে ২০১১ সালে যা কমে দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক সাত শতাংশে। 
ঘাঁটতে গিয়ে জানতে পারি, নিরাপত্তহীনতায় কোটি মানুষ দেশ ছাড়লেও কমেনি সাম্প্রদায়িক পীড়নের মাত্রা; বরং রাষ্ট্রধর্ম কায়েমের পর দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিধান সংযুক্তকারী অষ্টম সংশোধনীর প্রস্তাব পাসের ত্রিশ বছর পূর্ণ হয়েছে গত বছর। 
তৎকালীন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ ১৯৮৮ সালের ১১ মে জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করেছিলেন। পরে ৭ জুন এটি পাস হলে ৯ জুন ‘স্বৈরশাসক’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুমোদন পেয়ে তা আইনে পরিণত হয়। অবশ্য তার আগেই সংবিধান ইসলামীকরণ শুরু করেন আরেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। ফরমান জারি করে তিনি প্রস্তাবনার আগে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ (পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) বাক্যটি যোগ করেন। সেইসঙ্গে মূলনীতি থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বিলুপ্ত এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সাংবিধানিক সুযোগ তৈরী করা হয়। 

এরই ধারাবাহিকতায় এরশাদের শাসনামলে কায়েম করা হয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ৷ ওই সময় স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে সংবিধানের এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে উচ্চ-আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন লেখক সাহিত্যিক, সাবেক বিচারপতি, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ দেশের পনেরো জন বিশিষ্ট নাগরিক। এর ২৩ বছর পর ২০১১ সালের ৮ জুন একটি সম্পূরক আবেদন করা হলে মামলাটি আলোচনায় আসে। এর কিছুদিন পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করা হলে আরো একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। ওই সময় রুল ইস্যু করলেও আদালত ২০১৬ সালে রিট দুটি বাতিল করে দেয়। 

রিটকারীদের মধ্যে যারা এখনও বেঁচে রয়েছেন, তাদেরই একজন জাতীয় অধ্যাপক ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। এক আলাপে তিনি বলেছিলেন, “শেষ অবধি উচ্চ আদালত আমাদের মামলার অধিকারই স্বীকার করেনি। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় থাকা প্রবীণ এই বুদ্ধিজীবীর অভিমত, “রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি জঙ্গিবাদকে উসকে দিয়েছে। এভাবে একটি ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাধান্য দেয়া উগ্রবাদীদের উৎসাহিত করে। কারণ তাদেরও বোঝানো হয় , পৃথিবীতে তাদের ধর্মই শুধু শ্রেষ্ঠ আর অন্য সব ধর্ম নিকৃষ্ট।”
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রধর্ম বিরোধী রিট বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে করেছিল জামায়াতে ইসলামী, হেফাজত ইসলামসহ বিভিন্ন মতাদর্শ ও ভাবধারার ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো। 
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, “রাষ্ট্রধর্ম রেখে সাম্প্রদায়িকতাকে উৎসাহ দিয়ে বা উগ্রবাদী শক্তির সামনে মাথানত করে জঙ্গিবাদ দমনের কথা আমরা বলি কি করে! মুক্তিযুদ্ধ করার সময় আমি কি কখনো ভেবেছিলাম যে বাংলাদেশে এমন একটি সময় আসবে যখন আমাদের ‘মাইনরিটি’ হিসেবে ‘সেকেন্ড গ্রেডের সিটিজেনে’ পরিণত করা হবে এবং তার থেকে উত্তরণের জন্য আবার লড়াই করতে হবে।” 

রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী দাবি করে রানা আরো বলেন, “একাত্তরে যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তা ফেরাতে না পারলে মৌলবাদ উৎখাত করা যাবে না।” সংখ্যাগরিষ্ঠ দেওবন্দী ওহাবী ভাবধারার কওমি মতাদর্শী মুসলিমদের চাপে থাকা প্রায় আড়াই লাখ কাদিয়ানীর সংগঠন আহমদিয়া মুসলিম জামা’তের আমির মোবাশশেরউর রহমান মনে করেন, “রাষ্ট্রধর্মের বিধান ধর্মীয় গোষ্ঠির ক্ষমতায় যাওয়ার একটা দরজা।”

অষ্টম সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’ পরে পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটি পরিবর্তন করে লেখা হয় - ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ একই সংশোধনীতে সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাও ফিরিয়ে আনা হয়।

তবে “অবশিষ্ট ছয় শতাংশ সংখ্যালঘু দেশত্যাগ করলে, অর্থাৎ সংখ্যালঘু শূন্য হলে কিভাবে নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করবে বাংলাদেশ?” এক আলাপে এমন প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও গল্পকার তুহিন দাস। মুক্তচিন্তার পক্ষে লেখালেখি, পত্রিকা প্রকাশ এবং গণজাগরণ মঞ্চে সক্রিয় থাকার কারণে ২০১৫ সালে আগস্টে ‘আনসারবিডি’ নামের এক উগ্রবাদী সংগঠনের হুমকী পেয়ে তিনি ২০১৬ সালের এপ্রিলে দেশ ত্যাগ করেন। 

চলতি দশকে কক্সবাজারে রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলা করে মহামূল্যবান প্রাচীন পুঁথি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, খ্রিস্টান গির্জাগুলোতে বোমা হামলা হয়েছে, নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে; এছাড়া রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে সাঁওতালসহ বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর বসতভিটা নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে দাবি করে তুহিন বলেন, “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার ফলে এ ধর্মের অধিকাংশ মানুষেরা মনে করে, এ দেশটা শুধু তাদের এবং সবকিছুতে তাদেরই অধিকার।” 

অবশ্য ভাষ্কর, লেখক ও গবেষক গোঁসাই পাহলভী মনে করেন, “সংবিধানের চর্চা সাধারণ মানুষর ভেতর নেই। তারা সংবিধান বুঝে ‘এ্যাক্ট’ কিংবা ‘রিএ্যাক্ট’ করেন, এমন নয়। জনগণের কৌমচেতনার সাথে ধর্মীয় চেতনা, এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চয়ই উগ্রতার পেছনে দায়ী। আরো আছে আন্তজার্তিক ঘটনাবলীর প্রভাব।”
তুহিন ও গোঁসাই, দুজনেই রাষ্ট্রের বৈষম্যের উদাহরণ হিসাবে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘একদিনের ঈদ’ উপলক্ষে কমপক্ষে তিন দিনের সরকারি ছুটির বিপরীতে হিন্দুদের প্রধান উৎসব ‘পাঁচ দিনের দূর্গা পূজা’ উপলক্ষে মাত্র একদিন ছুটি থাকা কথা বলেন। 
বাংলাদেশ জন্মের আগে থেকে এই জনপদের রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহৃত হচ্ছে, উল্লেখ করে তরুণ প্রকাশক ও সাংবাদিক সৈয়দ রিয়াদ বলেন, “দেশের বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর যে ধরণের আক্রমণ করা হয় তা দেখেই মনে হয়, এই দেশে সংখ্যালঘুদের ঠাঁই নেই।” 

তরুণ কবি রূমান শরীফের অভিমত, “একটি গণতান্ত্রিক দেশে সব ধর্মের মানুষ; আকি, নাস্তিক সবাই বাস করে। সেখানে রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ধর্ম থাকা মানে ওই ধর্মানুসারী বাদে বাকি নাগরিকদের অস্বিকার করা। সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বৈধ করে দেয়। নাগরিকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে। তাঁর দাবি বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতপোষণকারীরা মোটেই নিরাপদবোধ করেন না। এখানে ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, প্রকাশক, ব্লগারদের ওপর হামলার বা তাদের খুনের এখনো কোনো বিচার হয়নি।”

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়ক এক আলোচনায় বক্তারা বলছিলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ স্বার্থের জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, হত্যা ও নির্যাতন করছে। তারা আরো বলেন, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ায় এই সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
“ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠা বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীরা আসলে খুব চালাক,” বলেছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান। 
আচ্ছা প্রিয়া সাহা বা তাঁর পরিবারের সর্বশেষ অবস্থা কেউ জানেন কী? খবরে দেখেছিলাম, তাঁর স্বামী স্বামী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মলয় সাহাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রাণ ভয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই, পিরোজপুরে পৈত্রিক বাড়িতে হামলা ও আগুনের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রিয়া সাহা স্থানীয় সাংসদ ও পূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে গেলেও তিনি অনীহা দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

প্রিয়া সাহা
আরো পড়ুন:

০১ অক্টোবর ২০১৭

সন্দেহপ্রবণ, বাঙালী মুসলমানের মন!

ক্যাপশন যোগ করুন
০১.
‘আপনি মুসলমানের ছেলে, আপনার কাছে শিবলিঙ্গ কেন?’ মিরপুরের মাযার রোড সংলগ্ন এলাকায় বসে জানতে চেয়েছিলেন দারুস সালাম থানার এক পুলিশ সদস্য। তাকে সমর্থণ করে আমায় জেরা করেছিলেন তার দুই সহকর্মিও। নাটোর থেকে ঢাকা ফেরার সময় গত ২২ জুলাই সকালে এ ঘটনার মুখোমুখি হই। শিবলিঙ্গটি সাধারণ নয়, কষ্টি পাথরে তৈরী আর আমি পাচারকারী এমন দাবিও তোলে পুলিশ। যিনি আমাকে এটি উপহার দিয়েছেন তার সাথে ফোনালাপের পর তারা নিশ্চিত হন, এটি চেন্নাইয়ে এক মন্দিরের সামনে থেকে সামান্য পয়সায় কেনা হয়েছে। তবুও তাদের প্রশ্নের শেষ নেই। ঘুরে ফিরে বার বার একই কথা, ‘আপনি মুসলমান। আপনার সাথে হিন্দু দেবতার লিঙ্গ থাকবে কেন?’

০২.
‘আপনি মুসলমানের মেয়ে, আপনার কাছে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি কেন?’ - কিছুক্ষণ আগে হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয়, তথা ডোমেস্টিক টার্মিনালে রাজশাহীগামী এক নারী যাত্রীকে এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এবারও প্রশ্নকর্তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য; কাস্টমস বা পুলিশের। যাত্রীর সাথে থাকা প্রতিমাটি পাথরেরও নয়, পিতলের। এক্ষেত্রে তাকে কষ্টি পাথর পাচারকারী সন্দেহেরও কোনো কারণ নেই। মূলত তাদের মূখ্য প্রশ্ন, ‘মুসলমান মেয়ের সাথে হিন্দু দেবদেবী থাকবে কেন?’ এমনটা তারা কখনো দেখেননি বলেও জানান।

প্রথম ঘটনাটি প্রায় ভুলে-ই গিয়েছিলাম। মূলত আজকের কাণ্ড এর অতীত পরম্পরা স্মরণ করিয়ে দিলো। যে কারণে গল্প দুটি টুকে রাখাও জরুরী মনে হলো। অন্য ধর্ম নিয়ে বেশী ঘাঁটাঘাঁটি করা যাবে না, এই ফতোয়া কিভাবে জানি জারি রয়েছে বাঙালি মুসলমানের মননে। ধর্মকে জন্মসূত্রে না পেয়ে জ্ঞানসূত্রে পেলে সম্ভবত দর্শনের এহেন দৈন্যতা পয়দা হতো না। তারা মানতে পারে না যে কেউ বলতে-ই পারে, ‘মা যে আমার ফাতেমা / আমার-ই মা শ্রীকালী’।...

প্রথম প্রকাশঃ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

২৯ এপ্রিল ২০১৭

অক্ষয় তৃতীয়ার মাজেজা

কুঠার হাতে পরশুরাম
আজ পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়া। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে এ খবর এতক্ষণে জেনে গেছেন অনেকে। এ নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখায় অজস্র পাঠকের মন্তব্য পড়ে বুঝলাম তারা এ তিথি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। তবে অনেকেই কৌতূহলী; মানে আগ্রহী দিনটির মাজেজা জানতে। অক্ষয় শব্দের অর্থ হচ্ছে - ‘যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না’। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে, এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে।

অক্ষয় তৃতীয়া হচ্ছে চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লাতৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি।এই দিনে জন্ম নিয়েছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। বেদব্যাস ও গণেশ এই দিনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।এদিনই সত্য যুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়। রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন এদিন। এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। একই তিথিতে দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে দ্বারকায় গিয়ে শ্রী কৃষ্ণের সাথে দেখা করেন ভক্তরাজ সুদামা। এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে গেলে তাকেও রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ।

আজও কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিলো। এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়। এছাড়া বর্তমানে এই তিথিতে সোনার বা রূপার গয়না কেনা হয়। ভাবা হয়, এই শুভ দিনে রত্ন বা জিনিসপত্র কিনলে গৃহে শুভ যোগ হবে। সুখ-শান্তি ও সম্পদ বৃদ্ধির আশাতেই অনেকেই কিছু না কিছু কিনে থাকেন।

শাস্ত্রমতে এদিন যদি ভালো কাজ করা হলে অক্ষয় পূণ্য লাভ হয় আর যদি খারাপ কাজ করা হলে হয় অক্ষয় পাপ। তাই এদিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিত। খুব খেয়াল রাখা উচিত যাতে ভুলেও যেন কোনো খারাপ কাজ হয়ে না যায়। 

ধ্যানী
মুখ থেকে কটু কথা না বের হওয়ার ভয়ে বিশ্বাসীদের অনেকে এদিন যথাসম্ভব মৌন থাকেন। এই তিথিতে তারা এমন কোনো কাজ করেন না যা কারো ক্ষতি করে বা মনে আঘাত দেয়। তারা মনে করেন, যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে। এদিনটা ভালোভাবে কাটানোর অর্থ সাধনজগতের অনেকটা পথ একদিনে চলে ফেলা। 

এবারের অক্ষয় তৃতীয়া সবার ভালো কাটুক – এই কামনায় শেষ করছি। আমিন।

চিন্তা ও চিত্রসূত্র : বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া। 

২২ জুন ২০১৫

ক্রিকেটের মওকায় সাম্প্রদায়িকতা !

ক্রিকেটের মওকায় আজ যারা ফের সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়াতে চাইছেন, তাদেরই একজন কবি, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক দর্পন কবীর (Darpan Kabir) । হিন্দুবিদ্বেষী এই ভদ্রলোক আবার এটিএন বাংলা ইউএসএ’র বার্তা সম্পাদক এবং আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকেই টের পেলাম তিনি মূলত সেকালের দাঙ্গাবাজদের বীজবহনকারী এবং স্বভাবতই আজ ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
যারা ওনার এই হিন্দুবিদ্বেষী প্রচারণায় বেশ আমোদিত, লাইক - শেয়ার করে প্রচার বাড়াচ্ছেন, সেই মুসলমান ভাইদের কাছে জানতে চাচ্ছি - ইসলাম কি এমন বিদ্বেষ ছড়ানো সমর্থন করে? নাকি নিজেদের ব্যক্তিআক্রোশ মেটাতেই আপনারা ধর্মকে টেনে আনছেন? আর খোদ দর্পন কবীরের কাছে জানতে চাচ্ছি, শেষ কবে কোন দর্পনে নিজের মুখাবয়বটা দেখেছিলেন ভাই?

সকলেই এদের ব্যাপারে সতর্ক হোন, সজাগ থাকুন।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকে ওই কথাগুলো শেয়ার পর যে ধরণের আক্রমণাত্বক মন্তব্য আর মেসেজ পাচ্ছি তা কিছুটা শঙ্কাজনকই বটে। এ জাতীয় ইস্যুতে পুরানো বন্ধু, বান্ধব - এমনকী স্বজনদের যে চেহারা উন্মোচিত হয়; তাতে ভয়ই লাগে। কে যে কখন কোন ঈমাণে চাপাতির এক কোপে কল্লা নামিয়ে দেবে তা টেরও পাবো না হয়ত। তবে এটা এখনই টের পাচ্ছি যে এরা, মানে এই প্রতিক্রিয়াশীলরা আদতে ধার্মিক না। এরা ধর্মের নামে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলেই ব্যস্ত।
নিজের পূর্ববর্তী পোস্টের সূত্র ধরেই নতুন স্ট্যাটাস দিয়েছেন দর্পন কবীর। 
যার একাংশও পড়ে নিতে পারেন।
নীচে দর্পনের দেয়াল থেকে নেয়া আরো একটি পোস্টের একাংশ।
তিনি বেশ সুপরিকল্পিতভাবেই একের পর এক সাম্প্রদায়িক উসকানীমূলক পোস্ট করে যাচ্ছেন।

তবে হতাশ হবেন না, আমিও হচ্ছি না। কারণ দর্পন কবীর এবং তার সমর্থকগোষ্ঠীর বাইরেও বহু মানুষ আছেন। যারা এ জাতীয় প্রচারের জবাব দিচ্ছেন। হয়ত দিতে বাধ্য হচ্ছেন।  কারণ, এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে তাদের ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু জানেন’তো, প্রকৃত ধার্মিকরা ধর্মের নামে বিদ্বেষ সহ্য করতে পারেন না। আর বাঙালরা আদিতেই ধর্মপ্রাণ।
newsreel [সংবাদচিত্র]