Powered By Blogger
ইসলাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ইসলাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৬ অক্টোবর ২০১৯

রাষ্ট্রধর্ম বাড়িয়েছে ইসলামী উগ্রবাদ

একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচীর দৃশ্য
“রাষ্ট্রধর্ম কায়েমের তিন দশকে বেড়েছে ইসলামী উগ্রবাদের শক্তি,” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন তৈরী করেছিলাম গত বছর, যা কোথাও প্রকাশিত হয়নি। চলতি বছরের জুলাইতে প্রিয়া সাহা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সাহায্য চাওয়ায় যখন খুব হৈচৈ হচ্ছে, তখন অপ্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটি ফের স্মরণে আসে। 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রিয়া সাহা ওয়াশিংটনে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউজে গিয়ে ট্রাম্পকে বলছেন, “আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে তিন কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ‘উধাও’ হয়ে গেছেন। এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ (১৮ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। জমি কেড়ে নিয়েছে। এর কোনো বিচার এখনো পাইনি।”
“কারা এসব করেছে,” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানতে চাইলে দলিত সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘শারি’ পরিচালক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংগঠক প্রিয়া সাহা আরো বলেন, “উগ্রপন্থী মুসলমানরা এটা করেছে। সব সময় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তারা এটা করে থাকে।” 
এমন বক্তব্যের জেরে সরকার-বিরোধী, ডান-বাম, বাঙালী মুসলমানদের সব পক্ষই যখন প্রিয়াকে তুলোধনো করছে, তখন খেয়াল হয় আরো ছয় বছর আগে মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির এক শুনানিতে দাবি করা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে ১৯৪৭ থেকে ২০১৩ সাল এ পর্যন্ত চার কোটি ৯০ লাখ (৪৯ মিলিয়ন) হিন্দু মিসিং হয়েছে। 

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদও বহু বছর ধরেই বলছে, গত পাঁচ দশকে আনুমানিক এক কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী দেশান্তরিত হয়েছেন। সে হিসেবে গড়ে বছরে দেশ ছেড়েছেন দুই লাখ ৩০ হাজার ৬১২ জন। তাছাড়া সরকারি পরিসংখ্যান মতে সত্তরের দশকে এ দেশে ২০ দশমিক এক শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। চলতি দশকের শুরুতে ২০১১ সালে যা কমে দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক সাত শতাংশে। 
ঘাঁটতে গিয়ে জানতে পারি, নিরাপত্তহীনতায় কোটি মানুষ দেশ ছাড়লেও কমেনি সাম্প্রদায়িক পীড়নের মাত্রা; বরং রাষ্ট্রধর্ম কায়েমের পর দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিধান সংযুক্তকারী অষ্টম সংশোধনীর প্রস্তাব পাসের ত্রিশ বছর পূর্ণ হয়েছে গত বছর। 
তৎকালীন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ ১৯৮৮ সালের ১১ মে জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করেছিলেন। পরে ৭ জুন এটি পাস হলে ৯ জুন ‘স্বৈরশাসক’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুমোদন পেয়ে তা আইনে পরিণত হয়। অবশ্য তার আগেই সংবিধান ইসলামীকরণ শুরু করেন আরেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। ফরমান জারি করে তিনি প্রস্তাবনার আগে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ (পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) বাক্যটি যোগ করেন। সেইসঙ্গে মূলনীতি থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বিলুপ্ত এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সাংবিধানিক সুযোগ তৈরী করা হয়। 

এরই ধারাবাহিকতায় এরশাদের শাসনামলে কায়েম করা হয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ৷ ওই সময় স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে সংবিধানের এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে উচ্চ-আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন লেখক সাহিত্যিক, সাবেক বিচারপতি, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ দেশের পনেরো জন বিশিষ্ট নাগরিক। এর ২৩ বছর পর ২০১১ সালের ৮ জুন একটি সম্পূরক আবেদন করা হলে মামলাটি আলোচনায় আসে। এর কিছুদিন পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করা হলে আরো একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। ওই সময় রুল ইস্যু করলেও আদালত ২০১৬ সালে রিট দুটি বাতিল করে দেয়। 

রিটকারীদের মধ্যে যারা এখনও বেঁচে রয়েছেন, তাদেরই একজন জাতীয় অধ্যাপক ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। এক আলাপে তিনি বলেছিলেন, “শেষ অবধি উচ্চ আদালত আমাদের মামলার অধিকারই স্বীকার করেনি। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় থাকা প্রবীণ এই বুদ্ধিজীবীর অভিমত, “রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি জঙ্গিবাদকে উসকে দিয়েছে। এভাবে একটি ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাধান্য দেয়া উগ্রবাদীদের উৎসাহিত করে। কারণ তাদেরও বোঝানো হয় , পৃথিবীতে তাদের ধর্মই শুধু শ্রেষ্ঠ আর অন্য সব ধর্ম নিকৃষ্ট।”
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রধর্ম বিরোধী রিট বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে করেছিল জামায়াতে ইসলামী, হেফাজত ইসলামসহ বিভিন্ন মতাদর্শ ও ভাবধারার ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো। 
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, “রাষ্ট্রধর্ম রেখে সাম্প্রদায়িকতাকে উৎসাহ দিয়ে বা উগ্রবাদী শক্তির সামনে মাথানত করে জঙ্গিবাদ দমনের কথা আমরা বলি কি করে! মুক্তিযুদ্ধ করার সময় আমি কি কখনো ভেবেছিলাম যে বাংলাদেশে এমন একটি সময় আসবে যখন আমাদের ‘মাইনরিটি’ হিসেবে ‘সেকেন্ড গ্রেডের সিটিজেনে’ পরিণত করা হবে এবং তার থেকে উত্তরণের জন্য আবার লড়াই করতে হবে।” 

রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী দাবি করে রানা আরো বলেন, “একাত্তরে যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তা ফেরাতে না পারলে মৌলবাদ উৎখাত করা যাবে না।” সংখ্যাগরিষ্ঠ দেওবন্দী ওহাবী ভাবধারার কওমি মতাদর্শী মুসলিমদের চাপে থাকা প্রায় আড়াই লাখ কাদিয়ানীর সংগঠন আহমদিয়া মুসলিম জামা’তের আমির মোবাশশেরউর রহমান মনে করেন, “রাষ্ট্রধর্মের বিধান ধর্মীয় গোষ্ঠির ক্ষমতায় যাওয়ার একটা দরজা।”

অষ্টম সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’ পরে পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটি পরিবর্তন করে লেখা হয় - ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ একই সংশোধনীতে সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাও ফিরিয়ে আনা হয়।

তবে “অবশিষ্ট ছয় শতাংশ সংখ্যালঘু দেশত্যাগ করলে, অর্থাৎ সংখ্যালঘু শূন্য হলে কিভাবে নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করবে বাংলাদেশ?” এক আলাপে এমন প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও গল্পকার তুহিন দাস। মুক্তচিন্তার পক্ষে লেখালেখি, পত্রিকা প্রকাশ এবং গণজাগরণ মঞ্চে সক্রিয় থাকার কারণে ২০১৫ সালে আগস্টে ‘আনসারবিডি’ নামের এক উগ্রবাদী সংগঠনের হুমকী পেয়ে তিনি ২০১৬ সালের এপ্রিলে দেশ ত্যাগ করেন। 

চলতি দশকে কক্সবাজারে রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলা করে মহামূল্যবান প্রাচীন পুঁথি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, খ্রিস্টান গির্জাগুলোতে বোমা হামলা হয়েছে, নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে; এছাড়া রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে সাঁওতালসহ বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর বসতভিটা নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে দাবি করে তুহিন বলেন, “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার ফলে এ ধর্মের অধিকাংশ মানুষেরা মনে করে, এ দেশটা শুধু তাদের এবং সবকিছুতে তাদেরই অধিকার।” 

অবশ্য ভাষ্কর, লেখক ও গবেষক গোঁসাই পাহলভী মনে করেন, “সংবিধানের চর্চা সাধারণ মানুষর ভেতর নেই। তারা সংবিধান বুঝে ‘এ্যাক্ট’ কিংবা ‘রিএ্যাক্ট’ করেন, এমন নয়। জনগণের কৌমচেতনার সাথে ধর্মীয় চেতনা, এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চয়ই উগ্রতার পেছনে দায়ী। আরো আছে আন্তজার্তিক ঘটনাবলীর প্রভাব।”
তুহিন ও গোঁসাই, দুজনেই রাষ্ট্রের বৈষম্যের উদাহরণ হিসাবে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘একদিনের ঈদ’ উপলক্ষে কমপক্ষে তিন দিনের সরকারি ছুটির বিপরীতে হিন্দুদের প্রধান উৎসব ‘পাঁচ দিনের দূর্গা পূজা’ উপলক্ষে মাত্র একদিন ছুটি থাকা কথা বলেন। 
বাংলাদেশ জন্মের আগে থেকে এই জনপদের রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহৃত হচ্ছে, উল্লেখ করে তরুণ প্রকাশক ও সাংবাদিক সৈয়দ রিয়াদ বলেন, “দেশের বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর যে ধরণের আক্রমণ করা হয় তা দেখেই মনে হয়, এই দেশে সংখ্যালঘুদের ঠাঁই নেই।” 

তরুণ কবি রূমান শরীফের অভিমত, “একটি গণতান্ত্রিক দেশে সব ধর্মের মানুষ; আকি, নাস্তিক সবাই বাস করে। সেখানে রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ধর্ম থাকা মানে ওই ধর্মানুসারী বাদে বাকি নাগরিকদের অস্বিকার করা। সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বৈধ করে দেয়। নাগরিকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে। তাঁর দাবি বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতপোষণকারীরা মোটেই নিরাপদবোধ করেন না। এখানে ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, প্রকাশক, ব্লগারদের ওপর হামলার বা তাদের খুনের এখনো কোনো বিচার হয়নি।”

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা বিষয়ক এক আলোচনায় বক্তারা বলছিলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজ স্বার্থের জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, হত্যা ও নির্যাতন করছে। তারা আরো বলেন, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ায় এই সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
“ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠা বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীরা আসলে খুব চালাক,” বলেছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান। 
আচ্ছা প্রিয়া সাহা বা তাঁর পরিবারের সর্বশেষ অবস্থা কেউ জানেন কী? খবরে দেখেছিলাম, তাঁর স্বামী স্বামী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মলয় সাহাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রাণ ভয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই, পিরোজপুরে পৈত্রিক বাড়িতে হামলা ও আগুনের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রিয়া সাহা স্থানীয় সাংসদ ও পূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে গেলেও তিনি অনীহা দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

প্রিয়া সাহা
আরো পড়ুন:

০৮ জুন ২০১৭

খ্রিষ্টীয় মতে মহানবীর ওফাত দিবস আজ

মসজিদে নববী
খ্রিষ্টীয় পঞ্জিকা মতে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) -এর ওফাত দিবস আজ। তিনি ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুন (১১ হিজরী সালের ১২ রবিউল আউয়াল) সন্ধ্যায় বর্তমান সৌদি আরবের মদিনায় নিজ স্ত্রী আয়েশার ঘরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জানাযার পর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের আমলে মসজিদে নববীকে সম্প্রসারণ কালে মুহাম্মদ (স.)’র রওজাটিও সম্প্রসারিত এলাকার ভেতরে নিয়ে নেয়া হয়।
মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণকারী মহানবী (স.) প্রচলিত ধারণা মতে, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগষ্ট আরবি রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মেছেন। প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা মন্টগোমারি ওয়াট তার পুস্তকে এই সালের উল্লেখ করেছেন; তবে প্রকৃত তারিখ উদঘাটন সম্ভবপর হয়নি বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মুহম্মদ (স.) নিজে কোনো মন্তব্য করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মূলত এ কারণেই তারিখটি নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়ে গেছে। যেমন সাইয়েদ সোলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মোহাম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণায় এটি ছিলো ৫৭১ সালের এপ্রিল ২৬ হবে বা ৯ রবিউল আওয়াল। তবে তার জন্মের বছরেই হস্তী যুদ্ধের ঘটনা ঘটে এবং সে সময় সম্রাট নরশেরওয়ার সিংহাসনে আরোহনের ৪০ বছর পূর্তি ছিল এ নিয়ে কারো মাঝে দ্বিমত নেই।
মোহাম্মদ, মুহম্মদ বা মুহাম্মেদ পরিচিত মহানবী (স.)-এর পূর্ণাঙ্গ নাম আবু আল-কাশিম মুহাম্মাদ ইবনে ʿআব্দ আল্লাহ ইবনে ʿআব্দ আল-মুত্তালিব ইবনে হাশিম। তিনি ইসলামের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। মুসলিম বিশ্বাসমতে তিনি আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ নবী। যার উপর ইসলামী ধর্মগ্রন্থ ‘আল-কুরআন’ অবতীর্ণ হয়েছে। অমুসলিমদের মতে তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রবর্তক।
রওজা
উইকিপিডিয়া বলছে, ‘অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে মুহাম্মাদ (স.) ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। তার এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য। বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তার জীবনের অন্যতম সফলতা।’

আরো পড়ুন :
স্মরণে আজ আলীর শাহাদাত

০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

স্মরণে আজ আলীর শাহাদাত

পারস্যের শিল্পীদের তুলিতে মাওলা আলী (রা.)
যে ব্যক্তির তরবারীর আঘাতে তিনি শহীদ হয়েছিলেন তার নাম ছিলো আব্দুর রাহমান ইবনে মুলযেম। উনিশে রমযানে তাকে আঘাত করা হয়, আর একুশে রমযানে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এর মধ্যবর্তী সময়টাতে তিনি ইচ্ছে করলেই এর প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা নেননি। কারণ প্রতিশোধের মতো ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে তিনি সবসময় দূরে থেকেছেন। তাই তরবারীর আঘাত খেয়েও অপেক্ষা করেছেন। এমনকী মুলযেমের যথার্থ যত্ন নেয়া হচ্ছে কিনা বা তার খাবার-দাবারের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা; সে খোঁজও নিয়েছেন। এমনকী শহীদ হবার আগে তিনি বলে গিয়েছিলেন- ‘আমি যদি মারা যাই, তাহলে মুলযেম আমাকে যেভাবে তরবারি দিয়ে একটিমাত্র আঘাত করেছে, ঠিক সেভাবে তাকেও একটিমাত্র আঘাত করবে, এর বেশি নয়।’

যার কথা বলছিলাম তিনি সুন্নী মুসলিম মতে ইসলামের শেষ খলিফা এবং শিয়া মুসলিম মতে ইসলামের একমাত্র বৈধ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ)। আজ ২১ রমজান, তার শাহাদাত দিবস। যদিও অনেক সুন্নী আলেম দাবি করেন তিনি ১৮ বা ২০ রমজান ইন্তেকাল করেছেন। তবে শিয়া-সুন্নী উভয় মতেই আলীর শাহাদাতের সাল ৪০ হিজরী। খ্রিস্টীয় পঞ্জিকা অনুসারে শিয়া মতে তার মৃত্যু হয়েছে ৬৬১ সালের ২৯ জানুয়ারি, আর সুন্নী মতে ২৬ বা ২৮ জানুয়ারি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৩ বছর। হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) তার জানাজায় ইমামতি করেন। কুফার নাযাফে তাকে দাফন করা হয়। যেখানে আজও তার মাযার রয়েছে।

হযরত আলী (রাঃ) সুন্নীদের চেয়ে শিয়াদের কাছে বহুগুন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিয়া মতবাদ গড়েই উঠেছে আলীকে কেন্দ্র করে। তিনি শিয়াদের ১২ ইমামের প্রথম ইমাম। গুরুত্বের দিক থেকে শিয়াদের কাছে রাসূলের পরেই আলীর স্থান। অনেক শিয়া মুসলিম আরো মনে করেন, গুরুত্বের দিক থেকে ইমাম আলীর স্থান মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) বাদে অন্যান্য নবীদের চেয়েও উপরে। বহুকাল আগে শিয়াদের মধ্যে এক চরমপন্থী মাঝহাব ছিলো। সেই মাজহাবের নাম ছিলো গুরাব্বিয়া। তাদের দাবি ছিলো, আল্লাহ আলী ইবনে আবু তালিবকে নিজের শেষ নবী বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জিব্রাইল ভুল করে মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহকে ওহী দিয়ে দেন। এই কারনে ওই শিয়ারা জিব্রাইলের সমালোচনা করতেন। এই মাঝহাব অবশ্য এখন আর নেই। সুন্নীরা যেমন কাদিয়ানী আহমাদিয়াকে কুফরী মাজহাব ও বাতিল ফিকরা মনে করে; শিয়ারাও তেমননি গুরাব্বিয়া মাজহাবকে কুফরী মাজহাব ও বাতিল ফিকরা হিসেবে গণ্য করে। এখানে আরো উল্লেখ্য, শিয়ারা আবু বকর, উমর ও উসমানকে মোটেই গুরত্ব দেয় না। তাদের সবকিছু রাসূল (সাঃ), আলী (রাঃ) ও বাকি ১১ ইমাম কেন্দ্রিক। তাদের প্রথম ইমাম আলী ও শেষ ইমাম মাহদী।

হযরত আলীর পিতার নাম আবু তালিব ও মাতার নাম ফাতেমা বিনতে আসাদ (রাঃ)। তিনি মহানবী (সাঃ) এর চাচাতো ভাই এবং সর্বকনিষ্ট কন্যা ফাতেমা জোহরার (রাঃ) স্বামী। শিশু বয়স থেকে রাসূলের সাথেই থাকতেন। দারিদ্রের কারনে চাচা আবু তালিবের পক্ষে যখন সন্তানদের ভরন পোষন করা সম্ভব হচ্ছিলো না বলে রাসূল চাচাতো ভাইদের মধ্যে আলীর দায়িত্ব নেন। এরই সুবাদে মহানবী (সাঃ)’র প্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজা (রাঃ) পর আলীই হন ইসলামের দ্বিতীয় এবং যুবকদের মধ্যে প্রথম মুসলমান। কৈশোরে (রাঃ) ইসলামে দীক্ষা নিয়ে তিনি এ আদর্শ প্রচারে ব্রতী হন। এ বিষয়ক এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘একদিন তিনি (আলী) সবিস্ময়ে দেখছিলেন, রাসুলে খোদা (সাঃ) ও খাদিজা (রাঃ) উপুড় হয়ে মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে আছেন। অবাক হয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? রাসুল (সাঃ) উত্তর দিলেন, ‘এক আল্লাহর ইবাদত করছি। আর তোমাকেও দাওয়াত দিচ্ছি।’ হজরত আলী (রা.) সে দাওয়াত কবুল করে মুসলমান হয়ে গেলেন। তখন তাঁর বয়স নয় থেকে ১১ বছরের মধ্যে।’

আলী (রাঃ) ছিলেন প্রবল সাহসী। যেই রাতে মহানবী (সাঃ) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেছিলেন, সেই রাতে নিহত হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তিনি নবীর বিছানায় শুয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন। ইসলামের পক্ষে অসি হাতে বীরত্বের জন্য মহানবী (সাঃ) তাকে ‘আসাদুল্লাহ’ (আল্লাহর সিংহ) উপাধি দেন। এছাড়া তাকে আমেরুন মুমেনীন নামেও ডাকা হতো। অনেকে নিশ্চয়ই জানেন, ইসলামে তাৎপর্যপূর্ন এক তলোয়ারের নাম জুলফিকার। এক সময় এটি ছিলো এক ‘কাফের’ -এর। তার নাম মুনাবা বিন হাজাজ। বদর যুদ্ধে তাকে মুসলমানেরা হত্যা করে। তখন জুলফিকার মুসলিম সেনাদের নিয়ন্ত্রনে আসলে রাসূল এটি নিজের কাছে রাখেন। ওই যুদ্ধেই আলী ৩৬ জন ‘কাফের’ হত্যা করলে মহানবী (সাঃ) বিশেষ তলোয়ারটি তাকে বিশেষ বীরত্বের জন্য উপহার হিসেবে দেন।

আরেক যুদ্ধ শেষে আলী নিজের জন্য রাসূলের মেয়ে ফাতেমা (রাঃ) কে চান। এর আগে আবু বকর এবং উমরও ফাতেমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) রাজি ছিলেন না। আলী প্রস্তাব দিলে তিনি ফাতেমাকে জানান। আলী ছিলেন অনেক সুদর্শন যুবক। ফাতেমা আলীকে পছন্দ করলে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় খাতুনে জান্নাতের বয়স ছিল ১৫ বছর পাঁচ মাস ১৫ দিন। আর হজরত আলীর বয়স হয়েছিল ২১ বছর পাঁচ মাস। কোনো কোনো লেখায় অবশ্য তাদের বিবাহকালীন বয়স যথাক্রমে ১৪ ও ২১ উল্লেখ করা হয়েছে।

শিয়া আলেমদের একাধিক লেখায় রয়েছে, তৎকালীন সময়ে সন্ধি স্থাপনের জন্য মেয়েদের উপহার হিসেবে দেয়া হতো। সে অনুযায়ি একবার আলীর সাথে সন্ধি করতে বিধর্মীদের এক প্রতিনিধি নিজের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেন। ফাতেমা এটা জানতে পেরে নিজের বাবার কাছে নালিশ দেন। তখন মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘ আলী যদি আল্লাহর শত্রুর মেয়েকে বিয়ে করে তবে সে যেনো মনে রাখে, যে আমার মেয়েকে কষ্ট দিবে সে আমাকে কষ্ট দিবে।’ এ কথা শোনার পর আলী আর সেই মেয়েটিকে বিয়ে করেন নি। আলী যে রাসূলের নির্দেশের বাইরে এক চুল নড়তেন না সেটাই এই ঘটনার মাধ্যমে ফুটে উঠে।

হযরত আলীর মোট ১১ সন্তান ছিলেন। এর মধ্যে হজরত ফাতেমা (রাঃ)-এর গর্ভে হাসান, হুসাইন ও মহসিন নামে হজরত আলীর তিন পুত্রসন্তান এবং জয়নাব ও উম্মে কুলসুম নামে দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেন। মহসিন (রাঃ) বাল্যকালেই ইন্তেকাল করেন। হজরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর বংশধররা সৈয়দ নামে পরিচিত ছিল। হজরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর হজরত আলী (রাঃ) অন্যত্র বিয়ে করেন এবং তার ঔরসে আরো সন্তান জন্মগ্রহণ করেন।

কোনো কোনো সুন্নী আলেম দাবি করেন, হযরত আলীর খুবই ঘনিষ্ট ছিলেন উমর ও উসমান। ওনারা এত ঘনিষ্ট ছিলেন যে আলী নিজের দুই সন্তানের নাম রেখেছিলেন উমর ও উসমান। তবে মহানবীর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার (রাঃ) সাথে মেয়ের জামাই আলীর সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিলো না। আসছি সে গল্পে।

২৩ জুন ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রাঃ) শহীদ হওয়ার ঠিক পাঁচ দিন পেরিয়েছে। রাজনৈতিক উত্তেজনায় মদিনার সর্বত্র তখন তুমুল নৈরাজ্য আর বিশৃংখলা। এমন ডামাডোলের মাঝেই মিসরীয় বিদ্রোহীদের নেতা ইবনে সাবা রায় দেন, হযরত আলী (রাঃ) একমাত্র খলিফা হওয়ার অধিকারী। কারণ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার সপক্ষে একটি ওসিয়্যত করেছিলেন। অতঃপর ওসমান (রাঃ) এর মৃত্যুর ষষ্ঠ দিনে, ২৪ জুন আলী (রাঃ) কে চতুর্থ খলিফা নির্বাচিত করা হয়। মদিনার জনতা তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন।

খলিফা হওয়া পর তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনা থেকে ইরাকের কুফায় সরিয়ে নেন। এ সময় তার মাথার ওপরে ছিলো হযরত উসমান(রাঃ)’র হত্যাকারীদের দ্রুত শাস্তি দেয়ার দাবি। হযরত আলী (রাঃ) ঘোষণা করেন, তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রাষ্ট্রে শান্তি-শৃংখলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এরপর তিনি হযরত উসমান (রাঃ)’র হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখিন করতে পারবেন। আলী (রাঃ)’র এমন ঘোষণা মানতে নারাজ ছিলেন মহানবীর ঘনিষ্ট সাহাবি হযরত তালহা (রাঃ), হযরত যুবাইর (রাঃ)’সহ আরো অনেকে। তারা সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করা শুরু করেন। হযরত আয়েশা (রাঃ), যিনি আলীর প্রকৃত মনোভাব সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, তিনিও হযরত উসমানের হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে তালহা (রাঃ) ও যুবাইর (রাঃ)’র সাথে যোগ দেন। তিনজনে মিলে বসরার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী নিয়ে রওনা হন।

খবর পেয়ে আলী হযরত আলী (রাঃ) যুদ্ধ এবং রক্তপাত এড়ানোর যারপরনাই চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এক দুর্ভাগ্যজনক যুদ্ধ হয়। যদিও তালহা (রাঃ) ও যুবায়ের (রাঃ) যুদ্ধের পূর্বেই সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন। হযরত আয়েশার (রাঃ) সৈন্যরা পরাজিত হয়।তবুও আলী (রাঃ) তাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন এবং তার নিরাপত্তার খেয়াল রাখেন। তিনি তার ভাই মোহাম্মদ বিন আবু বকর (রাঃ)’র রক্ষাবেষ্টনীতে তাকে মদিনায় পাঠিয়ে দেন। এটি ‘উটের যুদ্ধ’ নামে খ্যাত। কারণ হযরত আয়েশা(রাঃ) যুদ্ধের সময় উটের উপর বসে সৈন্য পরিচালনা করেছেন। পরবর্তীতে হযরত আয়েশা (রাঃ) জীবনভর হযরত আলী (রাঃ)’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুতপ্তা ছিলেন। যুদ্ধে উভয় পক্ষে অংশ নেয়া ১০ হাজার সাহাবি শহীদ হন।

শিয়া মতে ‘মাওলা’ খ্যাত আলী (রাঃ)’র জন্য এই যুদ্ধটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক পরীক্ষা। আবু মরিয়ম (রাঃ) থেকে বর্নিত, ‘(ও আলী), তিনি (আয়েশা) রাসূলের দুনিয়া ও আখিরাতের স্ত্রী। আল্লাহ আপনাকে পরীক্ষা করছেন। আপনি কি আল্লাহকে মান্য করেন নাকি তাকে (আয়েশা)।’ বিভিন্ন সাহাবির বর্ণিত হাদিস মতে আলী সেই দশজন সৌভাগ্যশালীদের একজন মহানবী (সাঃ) নিজে যাদের জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।

হজরত আলী (রাঃ) বাল্যকালে কিছু লেখাপড়াও শিখেছিলেন। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)’র ‘কাতেবে ওহি’ দলের অন্যতম সদস্য। তার মধ্যে অসাধারণ কাব্যপ্রতিভাও ছিলো। বিভিন্ন সময় তিনি অনেক কবিতা রচনা করেছেন। তার রচনায় মূলত দ্বীনে ইসলামের মহিমাই ফুটে উঠেছে। সিহাহ সিত্তার গ্রন্থাবলিতে তার কবিতার কিছু উদ্ধৃতি লক্ষ করা যায়। ‘দিওয়ানে আলী’ শিরোনামে হজরত আলীর কবিতাসংগ্রহকে আরবি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ মনে করা হয়। একইসঙ্গে আলী (রাঃ) ছিলেন একজনসুবক্তা । ‘নাহজুল বালাগা’ নামে তার বক্তৃতার একটি সংকলনও রয়েছে। যেখানে তার ভাষাজ্ঞান ও বাগ্মিতার প্রমাণ মেলে।

৪০ হিজরি রমজানের সেই ভোরে ফজরের নামাজ আদায়কালে সিজদারত আলী (রাঃ)’র ওপর তরবারীর আঘাত হানা হয়েছিলো। আঘাতকারী আব্দুর রাহমান ইবনে মুলযেম ছিলেন ইসলামের তৎকালীন চরমপন্থী ‘খারেজি’ গ্রুপের সদস্য। মূলযাম যখন তার তরবারী বসিয়ে দিচ্ছিলেন , তখন হযরত আলী মুখ থেকে যে শব্দকটি বেরিয়েছিলো, তা ছিলো-‘فزت و ربی الکعبه অর্থাৎ ‘কাবার রবের শপথ আমি সফলকাম হলাম।’ পরে গোপনেই দাফন করা হয় আলী (রাঃ)’কে, তা’ও মূলত ওই উগ্রপন্থীদের ভয়ে। খারেজীরা বলতেন, আলী মুসলমানই নন। তাই ভয় ছিলো তারা কবর থেকে তার লাশ বের করে অপমান করতে পারে। এই ভয়ের কারণে প্রায় একশ বছর নবী পরিবারের ইমামেরা ব্যতীত কেউই জানতেন না আলীকে কোথায় দাফন করা হয়েছে।

সেই ২১ রমযানের ভোরে কাউকে নকল লাশ সাজিয়ে কিছু ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হয়েছিলো মদিনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। যাতে লোকজন মনে করে আলী (রাঃ) কে মদিনায় দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু ইমাম আলীর সন্তানেরা ও কিছু সংখ্যক অনুসারী – যারা তার দাফনে অংশগ্রহণ করেছেন; তারা জানতেন তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে। বর্তমানে কুফার নিকটে নাজাফে যে স্থানে আলীর সমাধি রয়েছে সেখানে তারা গোপনে যিয়ারতে আসতেন। পরে খারেজীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং আলীর প্রতি অসম্মানের সম্ভাবনা রহিত হয়, তৎকালীন ইমাম সাদিক (আঃ) তার এক সাহাবী সাফওয়ান (রহঃ) কে সে স্থান চিহ্নিত করে গাছ লাগিয়ে দিতে বলেন। এরপর থেকে সবাই জানতে পারেন ইমাম আলীর মাযার সেখানে।

* লেখাটি গত ২৭ জুন (২১ রমজান) নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’এ প্রকাশিত হয়েছিলো।

২১ এপ্রিল ২০১৫

ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ

বঙ্গাব্দ বরণ, তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি চত্ত্বর সংলগ্ন
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে নারীদের বস্ত্রহরণ ও শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে উত্তাল সারাদেশ।
ছবিটি বরিশালের।
ইসলামী ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরীফের কোন সূরার কোন আয়াতে কম কাপড় পরিহিত - ‘বেপর্দা’ (পর্দা না মানা) নারীদের বিবস্ত্র করার কথা বলা আছে? এমন কোনো নির্দেশ রয়েছে ঠিক কার বর্ণিত হাদিসে? কোনো নারী ইসলাম বা ইসলামী আদেশ না মানলেই কি মুসলমান পুরুষ তার বস্ত্রহরণের অধিকার পেয়ে যায়? নাকি এ মহান ধর্মে যে কোনো নারীই নিরাপদ?
***
পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারা -এর ১৮৭ নম্বর আয়াতে নারী ও পুরুষের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ [স্বরূপ], তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ [স্বরূপ]।” অর্থাৎ পুরুষ ও নারীকে পরস্পরের পোশাক বলছে ইসলাম। সেই নারীর বস্ত্রহরণে যে পুরুষেরা মহান আল্লাহর নামে শ্লোগান দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন, তারা কি আদৌ মুসলমান? নাকি ইসলামকে কলুষিত করার বিধর্মী কৌশলে পথভ্রষ্ট কোনো গোষ্ঠী? তারা কী জানে না যে সূরা নূর -এর ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “(হে নবী) মোমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। নিশ্চয়ই তারা যাহা কিছুই করে, আল্লাহ তৎসম্পর্কে পরিজ্ঞাত।” - নাকি তারা নেহাতই জন্মসূত্রে মুসলমান? যারা কখনো কোরআন বোঝার তাগিদই অনুভব করেনি। যুগে যুগেই যে এরা থাকবে সে ইঙ্গিতও রয়েছে সূরা বাকারা -এর তিনটি আয়াতে। আয়াতগুলো জেনে রাখুন-
০৮। মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা বলে 'আমরা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করি'। কিন্তু তারা [প্রকৃতপক্ষে] বিশ্বাস করে না। ০৯। আল্লাহ্‌ ও বিশ্বাসীদের তারা প্রতারিত করতে চায়, কিন্তু [এর দ্বারা] তার শুধুমাত্র নিজেদের প্রতারিত করে অথচ তারা [তা] বুঝতে পারে না। ১০। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি; এবং আল্লাহ্‌ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন; তারা [ভোগ করবে] নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।”

***
পহেলা বৈশাখ, ১৪২২। বাংলার ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে নিশ্চয়ই। এ দেশেরই এক শ্রেণীর (অ)-মানুষ ইসলামের দোহাই দিয়ে সেদিনের সংঘবদ্ধ যৌনত্রাসের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নারীদের যেভাবে দোষারোপ করছেন, তাতে এক মুসলিম পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি অন্তত বিব্রত। কারণ পবিত্র কোরআন কখনোই এমন বাড়াবাড়িকে সমর্থন করে না। স্বদেশী মুসলমানদের এই গোমরাহের পথ থেকে ফেরানোর তাগিদ অনুভব করেই এ লেখাটি তৈরী করতে বসেছি। আল্লাহ আমাকে এটি সম্পন্ন করা তওফিক দেবেন, সে ঈমানও রয়েছে। কারণ নিশ্চয়ই এসব তারই নির্দেশে হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে বিচলিত মন নিয়ে তাই কোরআন, হাদিসেই দিয়েছি ডুব। আর খুব খেয়াল করে দেখেছি, সর্বজ্ঞ আল্লাহ বহুবার সেইসব পথভ্রষ্টদের সতর্ক করে দিতে চেয়েছেন, যারা নারীর পোশাকের দোহাই দিয়ে যৌন সন্ত্রাস চালানোকে হালাল করতে চেয়েছে, চাচ্ছে এবং চাইবে। যেমন সূরা নিসা -এর উল্লেখিত আয়াতে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন ‘পুরুষদের বলে দিন’। আবার আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো অপরিচিত নারীর প্রতি যৌন লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, কিয়ামতের দিন তার চোখে উত্তপ্ত গলিত লৌহ ঢেলে দেওয়া হবে (ফাতহুল কাদির)।” এখনো কারো কী মনে হচ্ছে না বৈশাখের বস্ত্রহরণকারীরা কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কাজ করেছে। আর তাদের সমর্থন করে ওই সুমহান গ্রন্থ এবং নবীকে কলঙ্কিত করেছন একদল বিভ্রান্ত অনুসারী। এ বিভ্রান্তির দায় কার, সে আলোচনায় পরে আসছি।

***
পহেলা বৈশাখের ওই ঘটনা পর যারা বলেছেন -
-‘আলহামদুলিল্লাহ - এটা আল্লাহর পক্ক (পক্ষ) হতে।’
- ‘এটা ইসলাম থেকে দূরে যাওয়ার ফল।’
- ‘ইসলামের বাইরে গেলে এমনি হবে।’
- ‘যে নারী , পরপুরুষকে দেখানোর জন্য সেজে বের হয়, তাদের জন্য এটাই পাওনা !’
- ‘ওখানে (বর্ষবরণে) না গেলে কী হয় না! এর জন্য মেয়েরাই দাই (দায়ী)।’
- ‘তোমাদেরকে আল্লাহ বেইজ্জতি না করে ছেড়ে দিবে ভেবেছ?’
- ‘আধা বিবস্ত্র নারী পুরা বিবস্ত্র হবে এটাই স্বাভাবিক।
তারাই একটু ভেবে দেখুন তো - আমার দয়াল মহানবীর একজন উম্মত হয়ে তার দরবারে দাঁড়িয়ে আপনারা এই কথাগুলো বলতে পারতেন কি? নাকি আগে নিজের বিরুদ্ধে, আপন কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জেহাদ করার কথা ভাবতেন।
***
হে মুমিন মুসলমান ভাইয়েরা, সেদির ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজে দেখলাম বোরখা পরিহিত এক নারী তার শরীরে হাত দেয়ার অপরাধে একজনকে চড় দিচ্ছে। অর্থাৎ পর্দাশীল নারীরাও সেদিন শ্লীলতাহানীর হাত থেকে রেহাই পাননি। এরপরও আপনারা (ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা) বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন কি? আপনাদের আরো স্মরণ করিয়ে দেই সূরা নিসা –এর ৭৫ নম্বর আয়াত। যেখানে আল্লাহ বলছেন, "তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করছ না অসহায় নারী,পুরুষ ও শিশুদের রক্ষার জন্যে? যারা বলে হে আমাদের প্রতিপালক! জালেমের এই জনপদ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর। তোমার কাছ থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী পাঠাও ৷" পরের আয়াতেই তিনি বলেন, "যারা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা অবিশ্বাসী তারা তাগুত বা অসত্যের পক্ষে যুদ্ধ করে ৷ সুতরাং তোমরা শয়তানের অনুসারী ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর ৷ নিশ্চয় শয়তানের কৌশল দুর্বল৷"
সাম্প্রতিক সংবাদ
***
উপরের শেষ আয়াতটি একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করুন। আল্লাহ সেখানে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে - "ঈমানদাররা শুধু আল্লাহর ধর্ম রক্ষা এবং তা শক্তিশালী করার জন্য যুদ্ধ করে, ক্ষমতা বা পদের জন্য নয়৷ মুমিনের জন্য শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি যথেষ্ট ৷ কিন্তু কাফেররা খোদাদ্রোহী শক্তি ও জালেমদের শাসন শক্তিশালী করার জন্য যুদ্ধ করে। তাদের লক্ষ্য অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব করা এবং নিজ দেশের সীমানা বৃদ্ধি করা।" একটু ভেবে দেখুন, আজ ইসলামকেও অমনই এক চেহারা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কী’না। মুসলমানদের উগ্রপন্থী হিসাবে প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে কেউ কিছু করছেন কী’না – সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকুন। ইসলামকে ধ্বংসের উদ্দেশে কারা এর নামে বিশৃঙ্খলা তৈরী করছে, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের গোয়েন্দা তৎপরতায় প্রসূত আলেম, ওলামাদের বয়ানে বিভ্রান্ত না হয়ে কোরআনের শিক্ষায় আলোকিত হোন, আত্মপোলদ্ধি জাগান। আর অবশ্যই মনে রাখবেন, সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ির ব্যাপারে মহান আল্লাহ বার বার সতর্ক করেছেন। আর আমাদের প্রাণের নবী মোহম্মদ (সঃ) তার বিদায় হজের ভাষনে বলেছেন, “সাবধান! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না। এমন বাড়াবাড়ির কারণে অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।”

সিসিটিভির ফুটেজে সুবাদে চিহ্নিত যৌন সন্ত্রাসীরা
***
সূরা হুজরা’তে আল্লাহ বলছেন, “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে এবং তোমাদেরকে পরিণত করেছি বিভিন্ন জাতিতে ও বিভিন্ন গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার।” - অর্থাৎ কোরআনের বক্তব্য অনুযায়ী - মানুষ যে বিভিন্ন জাত, মত বা গোত্রে বিভক্ত, এটা খোদারই ইচ্ছায়। এই বিভেদ এখন যেমন আছে, আগেও ছিলো। কিন্তু আপনি কি এমনটা কখনো শুনেছেন - আমাদের প্রিয় মহানবীর যমানায়, তার খেলাফতে বসবাসকারী/ভ্রমণরত কোনো বিধর্মী জনগোষ্ঠী/উপজাতির বেপর্দা নারী তৎকালের মুসলমানদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছে? শোনার কথা নয়। কারণ মুসলিম মূল্যবোধ তখনও দূষিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। বরং মুসলমানদের চারিত্রিক গুনের মোহে বিমোহিত হয়েও ইসলামের ছায়া তলে এসেছিলো মানুষ। সূরা বাকারা -এর ৬২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট বলছেন - “যারা ঈমান আনে [এই কোরআনে], এবং যারা ইহুদীদের [ধর্মগ্রন্থ] অনুসরণ করে, এবং খৃশ্চিয়ান, এবং সাবীয়ান, যারাই ঈমান আনে আল্লাহ্‌র [একত্বে] শেষ [বিচার] দিবসে এবং সৎ কাজ করে, তাদের জন্য পুরষ্কার আছে তাদের প্রভুর নিকট। তাদের কোন ভয় নাই তারা দুঃখিতও হবে না।” অর্থাৎ ইসলাম শুধু মুসলমানদেরই সুখবর দেয়না, অন্যান্য কিতাব অনুসারীদেরও তাদের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়। স্মরণ করিয়ে দেয় ভালো কাজের ইনাম। তবে ধর্ম রক্ষা বা প্রচারের নামে হানাহানিকে ইসলাম সমর্থন করে না। একই সূরার ১৯০ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, “আল্লাহর ওয়াস্তে লড়াই কর তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।”

***
ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী এমনভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে যাতে মনে হয়, প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে কোরআনেই নারীকে সবচেয়ে বেশী অবমাননা করা হয়েছে এবং সবচেয়ে কম অধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে এই অপপ্রচার বিশ্বাসও করছেন, কোরআন যাচাই করে বা না করেই। যারা এমন প্রচার চালিয়েছে বা চালাচ্ছে তাদের নিশ্চয়ই কোনো অসৎ কোনো উদ্দেশ্য আছে। সে আলাপে যাচ্ছি না, বা এ বিষয়ে কারো কোনো বিশ্বাসেও আমি আঘাত হানতে চাইছি না। শুধু আরো কিছু আয়াত উল্লেখ করে যাচ্ছি -
সূরা আন-নাহল এর ৯৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,  “যে ভাল কাজ করে এবং বিশ্বাসী, হোক সে পুরুষ কিংবা নারী, আমি তাকে অবশ্যই দান করব এক পবিত্র শান্তিময় জীবন এবং তারা যা করত তার জন্য তাদেরকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।” কোরআনের ৪০ নম্বর সূরা আল-গাফির -এর ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে - “যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে সে কেবল তদনুরূপ প্রতিফল পাবে। আর যে ব্যক্তি ভাল কাজ করে সে পুরুষই হোক কিংবা নারীই হোক, সে যদি বিশ্বাসী হয় তবে এরূপ লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেথায় তাদেরকে দেয়া হবে বেহিসাব রিযিক।” আর সূরা লুকমান -এর ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আমি মানুষকে তার মাতা-পিতা সম্বন্ধে নির্দেশ দিয়েছি তাদের সাথে সদাচরণ করতে। তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দু’বছরে তার দুধ ছাড়ানো হয়। সুতরাং শোকরগুজারী কর আমার এবং তোমার মাতা-পিতার।”

সূরা নিসা -এর সাত নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “পুরুষদের জন্য অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়; এবং নারীদের জন্যও অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়, হোক তা অল্প কিংবা বেশী। তা অকাট্য নির্ধারিত অংশ।” ১৯ নম্বর আয়াতে রয়েছে - “হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের জন্য বৈধ নয় নারীদের জবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য করা। আর তাদের আটকে রেখ না তাদের যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করতে, কিন্তু যদি তারা কোন প্রকাশ্য ব্যভিচার করে তবে তা ব্যতিক্রম। তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করবে।” একই সূরার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ।” এছাড়া আন-নূর -এর চার নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “যারা কোন ভাল নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই প্রকৃত দুষ্ট ও মিথ্যাবাদী।”

সূরা আল-আহযাব -এর ৩৫ নম্বর আয়াতে আল্লাজ “নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজাদার পুরুষ ও রোজাদার নারী, স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাযতকারী পুরুষ ও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাযতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী–এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান।”
সহোদরা | © eon's photography
***
অতএব হে বাংলার মুমিনগণ, সচেতন হন। সতর্ক করে দিন আপনার সকল মুসলমান ভাইকে। যাতে তারা ইসলামের নামে অনৈসলামিক কিছু করে আমাদের প্রিয় নবীকে লজ্জিত করার সুযোগ না পায়। মনে রাখবেন, কোরআনে পুরুষ ও নারী শব্দটি সম্ভবত সমসংখ্যক বার উল্লেখ করা হয়েছে। আর আমাদের মহানবী (সঃ) এ’ও বলেছেন, “এ কথা সত্য যে, নারীদের উপর পুরুষের যেমন কিছু অধিকার আছে তেমনি পুরুষের উপরও নারীদের কিছু অধিকার আছে।” আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে শেষ করছি। পবিত্র কোরআনে নিকাব-সহ প্রচলিত বোরখার কোনো ইঙ্গিত আমি পাইনি। হিজাবের ক্ষেত্রে খোদ মুসলিম স্কলারদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে। বেশীরভাগ স্কলার কোরআনের আলোকে হিজাবকে সমর্থন করেন। তবে আরেকটি পক্ষ মনে করে কোরআনে নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে কিছু স্বাধীনতা ও নমনীয়তা রাখা হয়েছে যেটা দেশ-কাল-পাত্র ভেদে কিছুটা পরিবর্তনশীল হতে পারে।
newsreel [সংবাদচিত্র]