Powered By Blogger
রাসেল আহমেদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রাসেল আহমেদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০৬ ডিসেম্বর ২০১৭

অমিতের ফেরা যে কারণে জরুরী

অমিত সেনের এ ছবিটি ২০১৪ সালে বরিশালে তোলা
“আমার বন্ধু অমিভাত রেজা চৌধুরীর প্রথম ছবি ‘আয়নাবাজি’। বাংলাদেশের সিনেমার মানচিত্রে এক নতুন সংযোজন। কলকাতার ছবির তরঙ্গ যেভাবে ঢাকায় দোলা দেয়, উল্টোটা কখনোই ঘটে না। অমিতাভের এই ছবি শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই আলোড়ন সৃষ্টি করবে না, কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গকেও নাড়া দেবে। এই শহরে মুক্তি পেলে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়বে অমিতাভ রেজার প্রথম ছবি আয়নাবাজি দেখতে।।” গত বছর আয়নাবাজি সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর, সম্ভবত ৮ অক্টোবর মুখবইয়ে এমনটা লিখেছিলেন ভারতের প্রথিতযশা বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিত সেন। নির্মাতা অমিতাভকে অভিনন্দন জানিয়ে চলচ্চিত্রবিদ্যার এই শিক্ষক আরো উল্লেখ করেছিলেন, সিনেমাটি গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আন্তর্জাতিক বিভাগে প্রদর্শণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
শীতটা তখন একদমই যাই যাই করছে, আর বসন্ত আসি আসি। মাত্র ক’দিন আগেই সেনাসমর্থিত সরকার এসেছে দেশে। চারিদিকে চাপা উত্তেজনা। তবে বন্ধু-স্বজন, সহকর্মিসহ আশেপাশের সবাই কেমন যেন ভীত, তটস্থ। বলছিলাম ২০০৭’র ফেব্রুয়ারির কথা। তখন আমি সাপ্তাহিক ২০০০’র বরিশাল প্রতিনিধি। দিনের বেলায় শুধু ছুট আর ছুট, সংবাদের সন্ধানে দৌড়াদৌড়ি। রাত দুপুরে ঘরে ফিরে খাবার খেতে খেতে পড়ছিলাম পত্রিকার ভালোবাসা দিবস (৯ ফেব্রুয়ারি) সংখ্যা। অমিত সেনের মুখবইয়ের লেখাটি পড়ে স্মরণে এলো সেই রাতের কথা। কারণ সেদিনই আমি প্রথম তাকে চিনেছিলাম। ২০০০’র আলোচ্য সংখ্যা প্রকাশিত এক যৌথ সাক্ষাতকারে দেখেছিলাম আলোচিত নির্মাতা অভিতাভ রেজা বলছেন, ‘অমিত সেন আমাকে প্রথম উৎসাহ দেন বিজ্ঞাপন নির্মাণের। আমি তাকে অ্যাসিস্ট করি অল্প সময়। এরপর বিজ্ঞাপন নির্মাণ শুরু করি। আর আমাকে পিছনে ফিরতে হয়নি।’ একই সাক্ষাতকারের আরেকাংশে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে মুম্বাইয়ের অনেক ভালো মেকারও কাজ করছেন। যার মধ্যে রয়েছেন অমিত সেন। আমি এটা স্বীকার করবো যে, অমিত সেনদের কাজ দেখে অনেক কিছুই শিখেছি।’ অমিতাভ আরো বলেছিলেন, ‘অমিত সেন মুম্বাইয়ের অন্যান্য নির্মাতার চেয়ে অনেক আলাদা। তিনি এ দেশে ক্লায়েন্টদের (বিজ্ঞাপনদাতাদের) কাছে গিয়ে বলেছেন, তোমরা এদেশের ছেলেদের প্রমোট করো।’ সঙ্গে থাকা আরেক বিখ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও তখন বলেছিলেন, ‘অমিতাভ যেটা বলল, এটা অমিত সেনের ভালো দিক।’ এর বহু বছর পর ২০১৪ সালে অমিত সেনের কল্যাণেই অমিতাভের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনিস্টিটিউটের বিপরীতে ঘটা সেই আচমকা সাক্ষাত অনুষ্ঠানে প্রয়াত নির্মাতা রাসেল আহমেদ, চিত্রগ্রাহক ড্যানিয়েল ড্যানিসহ আরো অনেকেই ছিলেন - যদ্দুর মনে পড়ে।

রাসেল আহমেদের পাশে অমিত সেন
চিত্রটি ড্যানিয়েল ড্যানি তুলেছিলেন
এতদিন বাদে এসব কথা যেসব কারণে স্মরণে আসছে তার সবকিছু এখন বলতে চাচ্ছি না আসলে। তবে নিশ্চয়ই বলবো কখনো সময় ও সুযোগ পেলে। আপাতত শুধু জানাই, ঠিক তার কিছু দিন আগে স্বাধীন চলচ্চিত্র ‘নৃ’ নির্মাণ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন অমিত সেন এবং তার আইলেভেল ফিল্মস। সিনেমাটির অর্থায়ন যোগাতে বিজ্ঞাপনের কাজ যোগাড়ের পাশাপাশি তিনি আরো বহুমুখী উদ্যোগ নেন। এটা নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে তিনি পাশে না দাঁড়ালে হয়ত রাসেল আহমেদের এ চলচ্চিত্র চিত্রায়ন পর্বেই আটকে যেত। দেশের নির্মাতাদের মধ্যেও যারা ওই সময় নৃ -এর পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক ও মানুসিকভাবে আমাদের শক্তি যুগিয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আনোয়ার শাহাদাত, বিজ্ঞাপন নির্মাতা পিপলু আর খান, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর এবং শিল্পী ও নির্মাতা অঙ রাখাইন অন্যতম। গত মে মাসে যখন এডিটিং টেবিলে সিনেমাটির চূড়ান্ত সম্পাদনা চলছে, ঠিক সেই মুহুর্তে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন রাসেল। নির্মাণ শুরুর প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় আবার থমকে যায় নৃ। আটকে যায় কাজ। তৈরী হয় নানামুখী শঙ্কা। এ নিয়ে যখন নানাবিধ হতাশায় ডুবে যাচ্ছি ঠিক তখনই আবার কাঁধে হাত রাখলেন অমিত সেন। জানতে চাইলেন সিনেমাটির সর্বশেষ অবস্থা, জানালেন তার চিন্তার কথাও। আবার আশাবাদী হলো আমার চলচ্চিত্র শ্রমিক সত্তা। 
বাংলাদেশ বা বাংলাদেশী সিনেমা বা নির্মাতাদের জন্য যে মানুষটির মন এত কাঁদে তিনি এদেশে নিষিদ্ধ হয়ে আছেন সেই ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে। ওই সময় তার পিআই (পারসোনাল ইনভেস্টমেন্ট) ভিসা বাতিল করে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই থেকে আজ অবধি বাংলাদেশে কাজ করতে পারছেন না এ নির্মাতা। গত এক দশক ধরেঅমিত সেনের বাংলাদেশী বন্ধু বা সাবেক সহকর্মিরাও এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চুপ। অবশ্য তাকে নিষিদ্ধ করার কারণ জানার চেষ্টা করে একাধিক রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ধমক খেয়েছেন কয়েকজন। এরপরও তিনি বহুবার ভিসার জন্য আবেদন করেছেন এবং বার বার ব্যর্থ হয়েছেন। এর নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার সাংবাদিক সত্ত্বা যে ধরণের ‘ব্যক্তি-বিদ্বেষ’ খুঁজে পেয়েছে তা কিছুটা ইগো আর কিছুটা ব্যবসায়িক। মূলত প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী চাচ্ছে না অমিত বাংলাদেশে আসুক বা এখানে কাজ করুক। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই আন্তর্জাতিকমানের ‘ট্রিলজি’বানানোর চিন্তা তিনি লালন করছেন চলচ্চিত্র-জীবনের শুরু থেকে।
বাংলাদেশ আর এর স্বাধীনতার সাথে যে অমিত সেনের পরিবারের আদি ইতিহাসও জড়িয়ে রয়েছে। বরিশাল অঞ্চলের ঝালকাঠীর বেউখির গ্রামেই শেকড় তাদের। পঞ্চাশের দাঙ্গার পর দেশ ত্যাগ করা এ পরিবারের সন্তান রঞ্জিত কুমার সেনগুপ্ত আবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে অংশ নিয়েছিলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে; আহতও হয়েছিলেন। এর আগে ১৯৬২ সালে চৈতালী সেনগুপ্তের সাথে বিয়ে হয় তার। তার বাপের বাড়ি ফরিদপুর হলেও সে’ও বড় হয়েছে বরিশালেই। যারই জেরে রঞ্জিত ও চৈতালী - দুজনেই ছিলেন প্রায়ই একই মাত্রার পূর্ববঙ্গ অন্তঃপ্রাণ। বিয়ের ক’বছর পর এমনই এক ডিসেম্বরে তারা যখনে নেপালের কাঠমুণ্ডুতে, ঠিক তখনই তাদের কোলে আসে একমাত্র সন্তান অমিত।বাংলাদেশ নিয়ে তিনি যে সিনেমাগুলো তৈরী করতে চান তার চিত্রনাট্য তৈরীর গবেষণায় সংযুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন করে জানার সুযোগ হয়েছিলো আমার। যারই বদৌলতে এ লেখাটি তৈরীর সাহস পেলাম। কারণ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিই এখন দেশের ক্ষমতায়। আর এই যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিকমানের চলচ্চিত্র ধারাবাহিক তৈরীর জন্য অমিতের ফেরাটা খুবই জরুরী। এ কথা পড়ে আমাকে ভারতের দালাল বলে গালি দিতে পারেন অনেকে। তাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি, অন্তত আমার দৃষ্টিতে তিনি মানুসিকভাবে যতটা ভারতীয় তার চেয়ে অনেক বেশী ‘বরিশাইল্যা’। এ নিয়ে ইতিপূর্বেও ব্যক্তিগত ব্লগে লিখেছিলাম। ইন্টারনেটের যে কোনো সার্চ ইঞ্জিনে সেনের প্রত্যাবর্তন বা বোলপুরে বরিশালের রান্না ঘর লিখে সন্ধান করলেও তা মিলে যাবে।

ফটোগ্রাফী : এমএসআই প্রিন্স 
আজ ৬ ডিসেম্বর। নির্মাতা ও শিক্ষক অমিত সেনের জন্মদিন। বাংলাদেশের সংবাদ, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র জগতের একজন নবীশ প্রতিনিধি হিসাবে আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে তাকে পরম শ্রদ্ধা জানাই। আর নিজ রাষ্ট্রের কাছে দাবি রেখে বলতে চাই, অমিত সেনকে এদেশে কাজ করার সুযোগ দেয়া হোক। প্রত্যাশায় রাখি এই লেখাটি দেখবে বর্তমান সরকারের নীতি-নির্ধারক কোনো চোখ। কাকতালীয়ভাবে একাত্তরে অমিত সেনের এই জন্মদিনেই দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও ভুটান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করে। 

সম্পর্কিত লেখাঃ
সেনের প্রত্যাবর্তন - the return of sen

০৫ জুন ২০১৭

দীপনপুর, আর মাত্র অল্প দূর..

দীপন ভাই, মানে ফয়সল আরেফিন দীপন মৃত্যুর ঠিক আগের দিন (৩০ অক্টোবর ২০১৫) বিকেলে দীর্ঘদিন পর শাহবাগ গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথেই ভেবেছিলাম সন্ধ্যায় আজিজ মার্কেটে গিয়ে ভাইয়ার নতুন অফিস দেখে আসবো।কিন্তু ছবির হাটের বন্ধুদের সাথে বিবিধ আলাপে ডুবে আর যাওয়া হয়নি সেদিকে; মেতে ছিলাম আড্ডায়। পরদিন মার্কেটের তৃতীয় তলার সেই অফিসেই তিনি খুন হন। 
খুব বেশীদিন আগের নয়, ২০১৩ -এর এপ্রিলের কথা। দীপন ভাইয়ের সাথে আলাপের সূত্রপাঠ হয়েছিলো সিনেমা নিয়ে। মূলত তার মুখবইয়ের ভেতরবাক্সে রাসেল আহমেদ পরিচালিত নৃ - চলচ্চিত্রের পাতার সংযোগ দেয়ার মাধ্যমে। পরে সিনেমা ছাড়াও কবিতা, ব্লগিং, প্রকাশনা থেকে শুরু করে ধর্ম, দর্শন, এমনকী জীবন বোধ নিয়েও আলাপ হয়েছে তার সাথে। তবে আমাদের প্রথম সাক্ষাত হয় অনেক পরে, ২০১৪ -এর জানুয়ারিতে; নিজস্ব প্রকাশনী কাদাখোঁচা যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে। এর নামকরণের পাশাপাশি নামাঙ্কণও করে দিয়েছিলেন নৃ -এর নির্মাতা।
কিভাবে কি করা যায় - শুধু তা’ই জানতে নয়, ‘জাগৃতি’ আমাদের প্রকাশনাগুলোর পরিবেশক হবে - এমন আবদার নিয়েই গিয়েছিলাম দীপন ভাইয়ের কাছে। সানন্দে রাজিও হয়েছিলেন তিনি এবঙ জানিয়েছিলেন - প্রকাশকের মৌলিক দায়িত্ব, কর্তব্যের কথা। আলাপ হয়েছিলো দেশের প্রকাশনা শিল্প আর সিনেমার দুরাবস্থা নিয়ে। তখনও দীপন ভাইয়ের অফিস মার্কেটের দোতলায়। সেখানে বসেই কথা বলছিলাম আমরা। যদ্দুর মনে পরে প্রিয়মুখ প্রকাশনীর প্রধান - গল্পকার আহমেদ ফারুক কে সেদিন দেখেছিলাম সেখানে ।
স্যার এবঙ আপার এ ছবিটি ফেসবুকে পাওয়া
সেই প্রথম সাক্ষাতের পরও আমাদের সামনা সামনি খুব বেশী দেখা হয়েছে, এমন নয়। কদাচিৎ দীপন ভাইয়ের অফিসে গিয়ে হানা দিয়েছি। তার তুমুল ব্যস্ততাকে তোয়াক্কা না করে জোর করে হলেও শুনিয়েছি নিজের উদ্ভট সব গ্রন্থভাবনা। তিনিও আবার মনযোগ দিয়ে শুনেছেন - পরামর্শ দিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন। কখনো কখনো সেখানে গিয়ে স্যার, মানে দীপন ভাইয়ের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হককে পেয়েছি। কোনো এক মার্চের এক দুপুরে জলি আপা, মানে ভাইয়ার স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলির সাথেও দেখা হয়ে যায়। সেদিন মূলত আমার প্রকাশ করা বইগুলো জাগৃতির বিক্রয় কেন্দ্রের জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। বইগুলোর মধ্যে একটি ছিলো আমার নিজের কবিতার বই। সেটার ফ্ল্যাপে নিজের সাম্প্রতিক কোনো ছবি না দেয়া নিয়ে ভাইয়া-আপার যৌথ অনুযোগ; আহা- কি মধুর লেগেছিলো।
এর আগে দীপন ভাই বইগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর নানাবিধ সমস্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে সেই ভুলগুলো আগামীতে আর না হয়। আহা, কী অল্প সময়ে কত অজস্র আলাপ হয়েছে আমাদের। কত ভরসা, কত প্রাণশক্তিতে ভরা মানুষটা - যার প্রয়ান সংবাদ আমায় উপহার দিয়েছে এক দীর্ঘ ট্রমা। যা আজও পুরোপুরি কেটেছে কি-না তা ঠিক ঠাওর করতে পারছি না।
দীপন ভাইকে একদিন স্বপ্নেও দেখেছিলাম। ঠিক কোথায় বুঝিনি। তবে তিনি বেশ হাসি খুশি। তাকে দেখেই আমি বোকার মতো জানতে চাইলাম - ‘ভাইয়া, আপনি মারা যান নাই?’ সে অবাক হয়ে বললো - ‘কে বলছে তোমাকে?’ আমি বললাম, ‘টিভিতে যে দেখলাম!’ ভাইয়া হেসে কিছু একটা বললেন - যা আমার ঠিক বোধগম্য হলো না। শুধু ‘মিডিয়া’ শব্দটা বুঝতে পেরেছিলাম। এরপরই ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিলো।
সেদিনের আগে, পরে বহুদিন ভেবেছি - একদিন জাগৃতিতে যাবো। সেখানকার কী অবস্থা তা খোঁজ নেবো। কিন্তু পরক্ষণেই যখন জলি আপা বা ফজলুল হক স্যারের মুখটা মনে পরেছে; প্রচণ্ড গ্লানিতে অবসন্ন হয়েছে মন। আমার আপোষকামী নীরবতাপুষ্ট প্রতিবাদহীন বেহায়া মুখটা নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়াই কী করে, তা ভেবে পাইনি আজও।
দীপন ভাই মারা যাওয়ার পর অবশ্য মাত্র দুই/তিন বার আজিজ মার্কেটে যাওয়া হয়েছে; তা’ও তারই সহযাত্রী শ্রাবণ প্রকাশনীর রবীন আহসান ভাইয়ের কাছে। সর্বশেষ গত মাসেই তার কাছে গিয়েছিলাম ‘রাসেল স্মরণ’ - পত্রিকাটি বিনামূল্যে ছাপানোর আবদার নিয়ে, ছেপেও দিয়েছেন। বুঝেছেন-তো কোন রাসেল? সেই যে সেই নৃ-এর নির্মাতা। তিনিও এখন প্রয়াত। যিনি দীপন হত্যাকাণ্ডের পর ফজলুল হক স্যারের উদ্দেশ্যে মুখবইয়ে লিখেছিলেন - ‘স্যার, আমরা সত্যি ব্যর্থ আজ দেশটাকে সুস্থ, সুন্দর করে সাজাতে। এ ব্যর্থতার দায় - সবার। আমাদের ক্ষমা করবেন।’ এর আগে এক সাক্ষাতকারে স্যার বলেছিলেন - 'আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই না। এদেশের কোর্ট-কাচারিতে বিচার হয় না। তাই বিচার চেয়ে লাভ নেই।মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।'
গত বছর, মানে ২০১৬ সালে টানা তিন মাস সাংবাদিকতা করার সময় দীপন ভাইকে দুইবার স্মরণ করার সুযোগ ছিলাম। প্রথমবার ১৯ জুন - বাবা দিবসে, পরেরবার ১২ জুলাই - তার জন্মদিনে। সেই লেখাদুটোও পাঠকদের জন্য নীচে সংযুক্ত করলাম। তবে তার আগে একটা সুখবর দিয়ে যাই। 
দীপনপুরের প্রস্তুতি বৈঠক
দীপন ভাইয়ের আসন্ন জন্মদিনে, অর্থাৎ আগামী ১২ জুলাই যাত্রা শুরু করছে বইয়ের মেগাসপ দীপনপুর। জাগৃতির পক্ষ থেকে জলি আপা এবং প্রিয়মুখের ফারুক ভাই দিন-রাত খেটে চলেছেন। তাদের সাথে রয়েছে ভাইয়ার বন্ধু-স্বজনরা। ২৩২, ২৩০ এলিফেন্ট রোড হচ্ছে এই উদ্যোগের ঠিকানা। উন্নত বিশ্বের বুকসপ কাম ক্যাফে যে স্টাইলে চলে দীপনপুরও সেভাবে চলবে। এখানে থাকবে চিলড্রেন্স কর্ণার, ওল্ড সিটিজেন ক্লাব, যে কোনো বই হোম ডেলিভারীর ব্যবস্থা, মিনি অডিটোরিয়ামসহ আরো অনেক কিছু।যার কোনোটার নাম দীপনতলা, কোনোটা দীপনগঞ্জ, কোনোটা দীপাঞ্জলি বা দীপনালয়।

এটির ব্যাপারে গত বছরের নভেম্বরে আহমেদ ফারুক বলেছিলেন, ‘নতুন বছর থেকে বইয়ের এক নতুন মাইলফলকে পৌছে যাচ্ছে জাগৃতি আর প্রিয়মুখ। ইচ্ছে ছিলো এই প্রজেক্ট শুরু করবো দীপন ভাইয়ের সাথে। ২০১৪ সালে এই বিষয় নিয়ে কথাও হয়েছিলো ওনার সাথে। একটা বইয়ের মেগাসপ দেয়ার স্বপ্ন যেমন আমি দেখতাম, তেমনি দেখতেন দীপন ভাইও। আজ উনার স্বপ্ন পূরণের জন্যই মেগাসপ হচ্ছে। নামও রাখা হয়েছে তার নামেই। দীপন ভাইয়ের জাগৃতির দায়িত্ব নেয়া জলি আপাও (সবাই ওনাকে ভাবী বললেও আমি আপাই বলি) অনেক কষ্ট করছেন স্বপ্নটা পূরণ করতে। উনি উদ্যোগটা না নিলে সম্ভবই হতো না।’

ফারুক জানান তাদের প্রাথমিক টার্গেট এক লাখ বই। পাঠকের হাতের নাগালে যে কোনো পছন্দের বই পৌঁছাতেই এই উদ্যোগ। তিনি বলেন, ‘বই, বই আর বই- এই নিয়েই দীপনপুর। আসছে শিগগিরই...’। একই সময়ে ‘দীপন চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত রাখতে চাই’ বলে উল্লেখ করেছিলেন জলি আপা। সর্বশেষ গত এপ্রিলে তিনি মুখবই-তে লিখেছেন, ‘খুব স্বল্প ক্ষমতার একটা মানুষ যখন খুব বড় একটা কাজ হাতে নেয়, তখন পদে পদে সে ঠেকে যায়। তাই বিলম্ব হয়, তবুও হাল ছাড়েনা। দীপনপুর, আর মাত্র অল্প দূর।’

সংযুক্তি : ১৯ জুন ২০১৬
এবারই প্রথম বাবাকে ছাড়া বাবা দিবস কাটছে স্কুল পড়ুয়া রিদাত আর রিদমার। গত বছর জুনের তৃতীয় রোববারও বেঁচে ছিলেন তাদের বাবা ফয়সল আরেফিন দীপন। সেবার কিভাবে তারা এ দিনটি কাটিয়েছে বা এবার কিভাবে তাদের এ দিনটি কাটছে, জানার ইচ্ছে হয়েছে। কিন্তু কিছু শুধানোর সাহস হয়নি। আমার প্রশ্ন ওদের কতটা কষ্ট দিতে পারে তা আন্দাজ করেই কুঁকড়ে গিয়েছি। অতটা ‘প্রফেশনাল’ হতে পারিনি বলেই প্রতিবেদনটি ঠিক প্রতিবেদন হয়ে ওঠেনি।
ফেসবুক ইনবক্সে রিদাত, রিদমার মা; মানে প্রয়াত দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলিকে বলছিলাম – ‘রিদাত আর রিদমার বাবাহীন প্রথম বাবা দিবস আজ।’ জবাবে তিনি বললেন – ‘তাতে এই নীল গ্রহটার কিছুই যাবে আসবে না যে।’ লেখক ড. জাফর ইকবালের সাথে দাঁড়ানো রিদাত আর রিদমার একটি ছবি শনিবার ফেসবুকে প্রকাশ করেছিলেন জলি। ক্যাপসনে লিখেছিলেন, ‘বাবার পোশাকগুলো রিদাত পরছে ইদানীং, মাঝে মাঝে রিদমাও।’

ধারাবাহিক গুপ্তহত্যার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর নিজ প্রকাশনার কার্যালয়ে খুন হওয়া দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের কথাও স্মরণে আসে। তার দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে ছিলেন দীপন। স্মরণে আসেন অভিজিৎ রায়ের বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায়, তার কন্যা তৃষা আহমেদ। নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনির সন্তান মেঘের কথাও মনে পরে। বাবাকে ছাড়া কতগুলো বাবা দিবস কেটেছে তার, সে হিসাবটাও করতে ইচ্ছে করেনি আর। 

সংযুক্তি : ১২ জুলাই ২০১৬
‘শুভ জন্মদিন দীপ জ্বেলে যাওয়া দীপন।’ এভাবেই প্রয়াত সহযোদ্ধা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা ফয়সল আরেফিন দীপনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ টুটুল। মঙ্গলবার ফেসবুক’এ জাগৃতির পক্ষ থেকে প্রকাশ করা এক স্মরণ স্মারকে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
গত ৩১ অক্টোবর একই সময়ে, একই কায়দায় হামলা চালানো হয়েছিলো দীপন ও টুটুলের ওপর। এরমধ্যে টুটুল বেঁচে গেলেও দীপন বাঁচতে পারেননি। তারা দুজনেই ছিলেন ‘নাস্তিক’ আখ্যা পাওয়া লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক। শুধু তাই নয়, ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর চাপাতির আঘাতে খুন হওয়া দীপন ও অভিজিৎ ছিলেন বাল্যবন্ধু।

আজ ১২ জুলাই, দীপনের ৪৫তম জন্মদিন। মুক্তচিন্তার এই সাহসী মানুষটি ১৯৭২ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা । দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা অধ্যাপক। আর মা ছিলেন রোকেয়া হলের প্রিন্সিপাল হাউজ টিউটর। দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান জলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক। তার শ্বশুরও ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

দীপনের স্কুল জীবন কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই স্কুল উদয়নে। ইন্টারমিডিয়েট ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। এরপর সম্মান ও স্নাতকোত্তর পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। যে কারণে তার মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আরেফিন সিদ্দিক বলেছিলেন, ‘দীপনের ওপর আঘাত আমার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ওপর আঘাত।’ আবার লেখক ও শিক্ষক জাফর ইকবাল ‘প্রিয় দীপন’ নামের এক লেখায় বলেছেন, ‘তার মতো সুদর্শন, পরিশীলিত এবং মার্জিত মানুষ আমি খুব কম দেখেছি’।

রাজধানীর শাহবাগ এলাকার আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে দীপনকে চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার পর, কার্যালয়ের সাটার তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বিকেলে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে। একই সময় ও একই কায়দায় লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালায়ে দুর্বৃত্তের আঘাতে মারাত্মক আহত হন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ টুটুল, ব্লগার তারেক রহিম ও সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক গবেষক রণদীপম বসু।
১৯৯২ সালে পাঁচটি বইয়ের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছিলো জাগৃতি। প্রথম বছরের যে বইটি জাগৃতির জন্য এখনো মাইলফলক হয়ে আছে, সেটি ড. নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’। সেই থেকে এখন অবধি জাগৃতি থেকে প্রায় হাজার বই প্রকাশিত হয়েছে। ফয়সল আরেফিন দীপন খুন হওয়ার পার থেকে জাগৃতির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তার স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান জলি। তারই তত্ত্বাবধানে বিগত বইমেলায়ও এ প্রকাশনী ২০টি নতুন বই প্রকাশ করে। এর মধ্যে দীপনকে নিয়ে প্রকাশিত একটি স্মারকগ্রন্থও রয়েছে। তবে তখন এক সাক্ষাতকারে জলি বলেছিলেন, ‘দীপনের ইচ্ছা ছিলো এবারের বইমেলায় প্রায় একশটি বই প্রকাশ করা।’
স্মৃতির এ্যালবামে..
দীপনের এবারের জন্মদিনে কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজন রয়েছে কি’না, জানতে চাইলে নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে কোনো জবাব দেননি তার স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান জলি। স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান – রিদাত, রিদমা আর দীপনের রেখে যাওয়া অজস্র স্মৃতি – নিয়ে এই দিনটি তার কেমন কাটছে, তা বোধকরি অনেকেই অনুমান করতে পারবেন। জানেন তো, জলি শুধু দীপনের স্ত্রী নন, শৈশবের বন্ধু – কৈশোরের প্রেয়সী।
মৃত্যুর মাত্র ক’দিন আগে (২৫ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক দেয়ালে ওয়াহিদ ইবনে রেজার বরাত দিয়ে দীপন লিখেছিলেন, ‘নিশ্চিত পরাজয় জেনেও যে খেলাটি আমরা খেলে যাই, তার নামই জীবন।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটিই ছিলো তার শেষ ‘পোস্ট’ (প্রকাশনা)। জন্মদিনের প্রথম প্রহরে এই প্রকাশনায় মন্তব্য করেও তাকে স্মরণ করেছেন অনেকে। কেউ কেউ আলাদা করেও লিখেছেন তাকে নিয়ে। আবার অনেকে দুই ভাবেই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

যেমন – গল্পকার সার্জিল খান। দীপনের প্রকাশনায় তিনি লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন দীপন ভাই। এক বছর আগে শেষ দেখা এই দিনেই হয়েছিলো।’ পরে নিজের দেয়ালে তিনি লেখেন, ‘এই শুভেচ্ছা কিভাবে আপনি পাবেন জানি না। ওপার থেকে না কি সবই দেখা যায়। শুভেচ্ছার বিনিময়ে স্বাগতম চাচ্ছি না। আপনি যা দিয়ে গিয়েছেন, তা-ই অসীম। আর কিছুর বিনিময় চাই না। সম্পর্কের মাঝে বিনিময় থাকাও ঠিক না। তাই শুভেচ্ছাটাই রাখলে কৃতজ্ঞ হবো। শুভ জন্মদিন দীপন ভাই। আজীবন সবার হৃদয়ে এভাবেই বেঁচে থাকুন।’

পড়ুন :
ভয় পেও না, সাবধান থেকো ...
পরম শ্রদ্ধায় রাসেল স্মরণ

২৭ মে ২০১৭

পরম শ্রদ্ধায় রাসেল স্মরণ

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র ‘নৃ’ - শেষ করার দায়িত্ব এখন আমাদের সকলের। এমনটাই বলেছেন রাসেল আহমেদের সুহৃদ-বন্ধু, স্বজন ও সহকর্মিরা। শুক্রবার (২৬ মে) বিকেলে শাহবাগের ছবির হাটে ( সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারুকলা ইনিস্টিটিউট সংলগ্ন গেটের সামনে) রাসেল স্মরণ বৈঠকে তারা এ কথা বলেন। সদ্য প্রয়াত এই নির্মাতার প্রথম ও শেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নৃ। 

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
বৈঠকে বলা হয়, রাসেল আহমেদ ছিলেন এক স্বপ্নবাজ যাদুকর। শৈশব থেকেই চিন্তাশীল এই মানুষটি যে কোনো মানুষের কষ্টেই ব্যথিত হতেন। তবে তার মনের এ স্পর্শকাতরতা পরিবারের সদস্য, এমনকি বন্ধুদের অনেকেও ঠিক বোঝেনি। পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্তকেও পাগলামী ভেবেছেন কেউ কেউ। তবে এখন তাদের মনে হচ্ছে, রাসেলের জন্য অনেক কিছুই করার ছিলো। অন্তত তার সিনেমাটির পাশে দাঁড়ানো দরকার ছিলো। কারণ তিনি স্রেফ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, মানুষের বোধ ও চিন্তাকে উন্নত করতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে নেমেছিলেন। আমৃত্যু মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
বক্তারা আরো বলেন, রাসেল ও তার টিমের সদস্যরা খেয়ে না খেয়ে যেভাবে নিজেদের সিনেমার করেছেন, সে ইতিহাস একসময় চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীদের পাঠ্য হবে নিশ্চিত। রাসেলের সহযোদ্ধারা বাংলাদেশের সিনেমায় আগামীতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে - এমনটাও আশা অনেকের। তবে সকলেই একমত যে- সবার আগে নৃ সিনেমাটিকে মুক্তির আলোয় নিয়ে আসতে হবে। 

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
বৈঠকে বক্তব্য রাখেন কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর, প্রকাশক রবীন আহসান, কবি ও আবৃত্তিকার সাফিয়া খন্দকার রেখা, অভিনেতা ম ম মোর্শেদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ফয়সাল রদ্দি, চলচ্চিত্র নির্মাতা অং রাখাইন, মাহবুব হোসেন, ইফতেখার শিশির, ইমতিয়াজ পাভেল, সাংবাদিক সাইফ ইবনে রফিক, ভাষ্কর ও লেখক গোঁসাই পাহলভী, কবি ও সাংবাদিক রুদ্র আরিফ, আবদুল্লাহ মাহফুজ অভি, সঙ্গীত শিল্পী সম্রাট, কিম্বেল অভি, সিনা হাসান, কবি মাহমুদ মিটুল, কিং সউদ, রাসেলের মেঝ ভাই মোহাম্মদ শফিকুল আলম মুকুল, শৈশবের বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার এসএম পলাসহ আরো অনেকে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে পরম শ্রদ্ধার সাথে রাসেলকে স্মরণ করেন তারা। 
রাসেল স্মরণ - সূচনা সংখ্যার প্রচ্ছদ
টোকন ঠাকুর বলেন, ‘রাসেল সিনেমাটি (নৃ) প্রায় শেষ করে এনেছিলেন, কিন্তু এর মুক্তি দেখে যেতে পারলেন না। এটি মুক্তি না পাওয়া অবধি তার আত্মা শান্তি পাবে না।’ 

রবীন আহসান বলেন, ‘বাজারি ধারায় সবাই যেভাবে সিনেমা বানাচ্ছে - রাসেল সেভাবে বানাতে চায়নি। নিজের মতো করেই গল্প বলতে চেয়েছে। এই প্রবণতা দেখেই বুঝেছিলাম সে আসলে শিল্পী।’ 

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
রাসেলের মেঝ ভাই মুকুল বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, সে আমাদের মাঝে বড় হলেও আমরা তাকে চিনতে পারিনি। আজ আপনাদের মাঝে এসে, কাজের কথা শুনে - তাকে নতুন করে চিনলাম।’ 

মা, মাটি ও মানুষের গল্প নিয়ে রচিত ‘নৃ’ চলচ্চিত্রের কারিগর নির্মাতা রাসেল আহমেদ গত ১৫ মে সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। টিজার/ট্রেইলর প্রকাশের কারণে বহুল আলোচিত চলচ্চিত্রটি যখন সম্পাদনার টেবিলে মুক্তির অপেক্ষায় শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনই দুনিয়া ছাড়লেন নির্মাতা।
ছবি তুলেছেন প্রান্ত

newsreel [সংবাদচিত্র]