তাদের একজনের নাম নুরুল ইসলাম খান, অপরজনের খন্দকার নুরুল হোসেন নুরু মিয়া। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই নুরুলদ্বয় যথাক্রমে কুমিল্লা ও ফরিদপুরের প্রভাবশালী রাজাকার ছিলেন। মানবতাবিরোধী বহু অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। তাদের পুত্রদ্বয়ও আজ বিভিন্ন অপরাধের অভিযুক্ত হয়ে মহালোচিত। প্রথম জনের পুত্র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান। আর পরের জনের পুত্র স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল বাণিজ্য নিয়ে ইদানীংএই নুরুল পুত্রদ্বয় প্রায় একই সুরে কথা বলছেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদকারী সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকেও তারা সমালোচনা করছেন একই তালে। তাদের এই দৃশ্যমান আঁতাত এবঙ ক্ষমতার প্রতিপত্তি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সাধারণ মানুষের মনে স্রেফ শঙ্কা জাগাচ্ছে, হয়ত হতাশাও। কারণ ওই পুত্রদ্বয়ের মধ্যে যিনি এখন মন্ত্রী - তিনি নিজেও পাকিস্তানী বাহীনির পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি আবার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই (মেয়ের শ্বশুর)।
আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের স্বামী হওয়ার সুবাদে সেই ১৯৯০-৯১ সাল থেকে ব্যাপক পরিচিত পাওয়া এক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নাঈমুল ইসলাম খান। সাম্প্রতিক এক কলামে তিনি লিখেছেন - “বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক অ্যাক্টিভিজম করেন। দেখা উচিত, সাংবাদিকতা এটা অনুমোদন করে কি-না। এটা নিয়ে তো কোনো আইন নাই। সাংবাদিকতা কোনো আইন মেনে করা হয় না। কিন্তু আমি বুঝি যে, এটা সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। এটাকে বলে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট।” তাকে জিজ্ঞেস করতে মন চায়, সাংবাদিকরা অ্যাক্টিভিস্ট হলে কনফ্লিক্টটা মূলত কার ইন্টারেস্টে ঘটে? তিনি কি এটা একটু পরিস্কার করবেন? তার কি মনে হয় একজন সাংবাদিকের অন্য কোনো, বিশেষত প্রতিবাদী সত্ত্বা থাকা উচিত নয়? সাংবাদিক হওয়া মানেই কি প্রতিবাদের অধিকার হারিয়ে যাওয়া? প্রবীর সিকদারের যে স্ট্যাটাসটি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, লিখেছেন - ‘এটি কি জার্নালিস্টিক স্ট্যাটাস?’; সেই স্ট্যাটাসটি মূলত কোন ঘটনার পরম্পরায় দেয়া তা কি তিনি যথেষ্ঠ ঘেঁটে জেনেছেন? নিয়মিত টকশো’তে গিয়ে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে তিনি যে কথার খৈ ফোটান, তা কি এক্টিভিজম নয়?
কারো বেয়াদবী মনে হলে ক্ষমা করবেন। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, এই দেশে প্রকৃত সাংবাদিকরা সোচ্চার হলে সবচেয়ে বিপাকে পরে যান ধান্দাবাজ ‘সাংবাদিক সাহেব’ আর ‘সাংবাদিক নেতা’ গোষ্ঠী। তারা সব সময় চায় দেশের সকল সাংবাদিক তাদের মতো কারো না (লেওড়ার) ছায়াতলে থেকে উপর মহলের পারপাস সার্ভ করুক, নয়ত নিজেই সাংবাদিক সাহেব বা নেতা হয়ে উঠুক। বস্তুত যারা নেহাতই সাংবাদিকতার স্বার্থে সাংবাদিকতা করছেন, সোচ্চার হচ্ছেন বিভিন্ন অন্যায় ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে; ‘সাংবাদিক সাহেব’ আর ‘সাংবাদিক নেতা’ গোষ্ঠীই তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু।
এর আগে প্রাণনাশের শঙ্কায় সাংবাদিক প্রবীর শিকদার স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, “তিনি (সাংবাদিক প্রবীর) যে অভিযোগ আনতেছে এটাকে পাগলের পাগলামি ছাড়া আমি আর কিছুই মনে কারি না। তার সাথে আমার কনফ্লিক্টের কোন ইস্যুই নাই।”
মুক্তিযুদ্ধে পিতাসহ পরিবারের ১৪ সদস্যকে হারানো প্রবীর শিকদার মূলত ফরিদপুরের হিন্দু সম্পত্তি দখল এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে লেখালেখির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। এর জন্য ওই মন্ত্রীসহ আরো দুজনকে দায়ী করে ফেসবুকে লেখার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে গণদাবির মুখে তিন দিনের মাথায় রিমাণ্ড চলাকালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এ নিয়ে গত ক’দিন ধরে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে - মেইনস্ট্রিম ও সোস্যাল মিডিয়া। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার কথাও বলেছে ভিনদেশী বেশ কয়েকটি মিডিয়া। বিব্রত ঘোর আওয়ামী সমর্থকরাও।
এ লেখাটি প্রস্তুতকালে এক লেখক ও নাট্যনির্মাতা অগ্রজ ভেতরবাক্সে বার্তা পাঠিয়ে জানতে চাইলেন - ‘প্রবীর শিকদার নিয়ে এই আলোচনায় মন্ত্রীর দখলদারির বিষয়টা চাপা পরে গেল না’তো? তিনি কি পার পেয়ে যাবেন সংখ্যালঘুদের জমি-ভিটা জোড় করে অল্প টাকায় কিনে নিয়ে তাদের দেশ ছাড়া করার ঘটনায়?’ কোনো জবাব দিতে পারিনি তাকে। কিন্তু তার প্রশ্ন দুটো সাথে সাথেই নাঈমুল ইসলাম খান -এর লেখাটির শেষাংশ পুনরায় স্মরণে এলো।
স্বঘোষিত ওই রাজাকারপুত্র লিখেছেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নানা রকম নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার। এটা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়। এটার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো দল জড়িত নয়। তবে একটা পার্টিকুলার অভিযোগ সত্যও হতে পারে। একজন হয় তো সঠিকভাবে জমিটা কিনেছেন কিন্তু আমি যদি তাকে পছন্দ না করি সে তখন তার বিরুদ্ধে লেগে গেলাম। বলে যে হিন্দুর জমি জোর করে নিয়েছে। খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে, ওই লোকটাও ওই জমিটা কিনতে চেয়েছিলেন। না পেরে মিথ্যে অভিযোগ ছড়িয়ে বিষয়টাকে ভিন্নরূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন।”
সাংবাদিকতার লেবাসে অর্থ-আত্মসাতের বহু-অভিযোগে আক্রান্ত আলোচিত ওই ‘সাংবাদিক সাহেব’ মূলত কি বোঝাতে চেয়েছেন - তা সবাই যে একই মাত্রায় বুঝবেন, এমনটা আমি আশা করি না। তবে ওনার কথার সুরের সাথে অভিযুক্ত মন্ত্রীর কথার সুরে যে মিল আছে তা বোধকরি সকলেই টের পাবেন। ফরিদপুরের ভজনডাঙার অরুণ গুহ মজুমদারের মালিকানাধীন দয়াময়ী ভবন নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে তাদের স্বপরিবারে দেশছাড়া করার ব্যাপারে দেয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন - অন্যের উপকার করতে গিয়েই তিনি বিপদে পরেছেন!
যাকগে, আশার কথা হচ্ছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরে হিন্দু সম্পত্তি দখলের যে অভিযোগ করেছেন তার সত্যতা যাচাইয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কামরুজ্জামান সেলিমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অপর দুই সদস্য হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ও সদর উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার খলিলুর রহমান। এ বিষয়ে গত ১৭ অগাস্ট চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে কমিটি প্রধান সাংবাদিকদের বলেছেন, পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আরো একটি বিষয় উল্লেখ করছি এখানে। ২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারিয়েছিলেন দুই সন্তানের জনক প্রবীর শিকদার। তার অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে মুসার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ওই হামলা চালিয়েছিলো। এই মূসা আবার প্রধানমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর)। উল্লেখিত নুরুলদ্বয়ের দুই পুত্রের কর্মকাণ্ডের কল্যাণে তিনি কিন্তু আজ আর অতটা লাইম লাইটে নেই। মিডিয়ার ফোকাস ঘুরে গেছে। যদিও মুক্ত হয়ে এক সাক্ষাতকারে প্রবীর জানিয়েছেন তাকে নুলা মুসা অর্থাৎ বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের বিষয়েই বেশি প্রশ্ন করেছে পুলিশ।
২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি রূপে প্রকাশ করা করা
এ চিত্রের ক্যাপসনে প্রবীর লিখেছিলেন - গত জুনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার
সফরসঙ্গী হিসেবে ৬ দিন চীনে ছিলাম। ছবিটি তারই একটি মুহূর্ত।
প্রবীর শিকদার, এক প্রকৃত যোদ্ধার নাম। যার প্রতিবাদের ভাষা আজও চুরি হয়ে যায়নি। যে মুহুর্তে তাকে নিয়ে এ লেখাটি তৈরী হচ্ছে সে মুহুর্তে তিনি পুলিশের, তথা রাষ্ট্রের হাতে বন্দী। তার অপরাধ - মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই রাষ্ট্র সৃষ্টির বিরোধীতা এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বহুল আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসেরকে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তূলনার প্রতিবাদ। যদিও মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাই এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়।
নিজ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিনের ইন্দিরা রোডের কার্যালয় থেকে কাল (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা দিকে প্রবীরকে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রথমে তাকে একটি নীল রঙের পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়েছিল। পরে খামারবাড়ি এলাকায় ভ্যান থামিয়ে তাকে ধূসর রঙের একটি প্রাইভেটকারে তোলা হয়। এরপর তাকে গোয়েন্দা পুলিশের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। আটকের কয়েক ঘণ্টা পর তার বিরুদ্ধে ফরিদপুরে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্ক্রীনসট
প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ‘আপন বেয়াই’ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগ তুলে রাত ১১টার দিকে বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ওই মামলা দায়ের করা হয়। বাদী স্থানীয় সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) স্বপন পাল।
স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, “জীবনহানির আশঙ্কা প্রকাশ করে তার জন্য মন্ত্রীকে দায়ী করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন প্রবীর শিকদার। এভাবে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে মন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।” এখানে উল্লেখ্য যে, মুসা বিন শমসেরের শেকড়ও কিন্তু এই ফরিদপুরে। আর তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর)।
এর আগে গত ১০ অগাস্ট ‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের একটি স্ট্যাটাসে প্রবীর লিখেছিলেন - “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”
ফেসবুকের কল্যাণে প্রবীর সিকদারের যে দুটি বইয়ের
প্রচ্ছদ দেখলাম তার একটির নাম আবার ‘আমার বোন শেখ হাসিনা’।
এদিকে গত রাতে স্বামীর মুক্তির আশায় গোয়েন্দা পুলিশ দপ্তরের সামনে বসে থাকা প্রবীরের জায়া আনিকা শিকদার 'ক্রসফায়ার' -এর শঙ্কার কথা জানিয়ে বলছেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘'কোন ধরনের আপোষ করবো না, মেরে ফেলে মারুক, সে ঠিক কথাই লিখেছে। তবে সাথে আমাকে আর আমার দুই সন্তানকেও যেনো মেরে ফেলা হয়।' তার এ কথাগুলো পড়তে পড়তেই মনে হলো - আহা, এই না হলে সহযোদ্ধা। ঘরে এমন পার্বতী না থাকলে কী আর প্রকৃত শিব হওয়া যায়!
২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারিয়েছিলেন দুই সন্তানের জনক প্রবীর। তার অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে মুসার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ওই হামলা চালায়। ওই সময় জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ কলামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুসা বিন শমসেরের বিতর্কিত ভূমিকার বিবরণ তুলে ধরেছিলেন এই সাংবাদিক, যার পরিবারের ১৪ জন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।
সেবার পা হারিয়েও একফোটা দমে যাননি প্রবীর শিকদার। গ্রেফতারের আগ মুহুর্ত অবধি দৃঢ় চিত্তে লড়ে গেছেন রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্র পরিচালকদের অন্ধত্বের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এর আগে তিনি সমকাল আর কালের কণ্ঠে’র প্রধান দপ্তরেও কাজ করেছেন। লেখার কারণে পাওয়া সাম্প্রতিক হুমকির কথা জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতেও গিয়েছিলেন প্রবীর সিকদার। এই মাসে নিহত ব্লগার নিলয় চক্রবর্তীর মতো তাকেও ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ফেইসবুকে তা নিয়েও তিনি লিখেছিলেন।
সর্বশেষ খবরে (১৭ আগস্ট দুপুরে) জানলাম, ফরিদপুরের কোনো আইনজীবি প্রবীর শিকদারের পক্ষে মামলা লড়তে আদালতে দাঁড়াবেন না। ফরিদপুর বারের এক নিয়মানুযায়ী কোনো আইনজীবি কারো বিরুদ্ধে মামলা করলে সেই আসামীর পক্ষে বারের অন্য কোনো আইনজীবি লড়তে পারবে না।’
এই ব্যাপারে দেশের আইনজীবি সমাজের মতামত জানতে চেয়ে ফেসবুকে লিখেছেন ডেইলি অবজার্ভার -এর সিনিয়র রিপোর্টার পুলক ঘটক। বহু পীড়নের শিকার হওয়া আরেক প্রতিবাদী অগ্রজ, সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মিল্টনের কথা দিয়েই লেখাটি শেষ করছি। তিনি লিখেছেন, “প্রবীর শিকদার আওয়ামী লীগ করে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখে এক পা রাজাকারদের দান করে, ক্র্যাচে ভর দিয়ে হেটে নিজ শহর ছেড়ে এখন আওয়ামী পুলিশের হেফাজতে। আমাদের তথাকথিত সুবিধাবাদী দালাল সাংবাদিক নেতারা কি করবেন? শালারা .. ”
প্রসঙ্গত, দেশের আরেক ধনকুবেরের মালিকানাধীন অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত একটি লেখাতেই ‘বিজনেস টাইকুন’ খ্যাত মুসা বিন শমসেরকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিলো। এরই প্রতিবাদ সরূপ প্রবীর মুসাকে নিয়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার লেখাগুলো পুনঃপ্রকাশ করতে থাকেন। পুলিশ আটকের কয়েক ঘণ্টা আগেও - ‘জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের'!’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি লেখা নিজের ফেইসবুক একাউন্ট থেকে শেয়ার করেন প্রবীর, সঙ্গে লেখেন- “যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ছে ! রেহাই নেই কারও !”
আমি ঈয়ন, দাপ্তরিক নাম শরীফ খিয়াম আহমেদ। জন্ম খুলনা হলেও শেকড় ও বেড়ে ওঠা বরিশালে। হিজরত বা কর্মসূত্রে বর্তমান আবাস কোটি মানুষের শহর ঢাকায়। পেশা লেখালেখি, চিত্রগ্রহণ ও মুক্ত সাংবাদিকতা। এর আগে ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি অবধি ‘মেইনস্ট্রিম’ সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলাম। এরই মাঝে ২০০৮ সালে সামহোয়্যার ইন ব্লগ দিয়ে আমি ‘ব্লগিঙ’ শুরু করি। অর্থাৎ স্বাধীন সাংবাদিকতা শুরুর বেশ আগেই ব্যক্তিগত ব্লগগুলোয় আমি বিভিন্ন সংবাদ ও নিজস্ব অভিমত প্রকাশ করে আসছি। পরবর্তীতে স্বাধীন সাংবাদিকতার মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ব্লগকেই বেছে নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৯ জুলাই দিবাগত রাতে আমি অশালীন সংবাদ প্রকাশকারী সাইট নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করি। যার জেরে গত ১০ জুলাই সন্ধ্যায় ‘আধাঘন্টার মধ্যে তোরে খুঁইজা বাইর কইরা মাইরা ফালামু’ – টাইপ অজস্র হুমকী পেতে হয় আমায়।
হুমকীদাতা চটি সংবাদ নির্ভর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। নিজেকে ভারতের কোলকাতা রাজের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ভাগ্নি জামাই পরিচয় দিয়ে তিনি প্রথমত দাবি করেছিলেন, আমি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিতে চেয়েছি। তার অভিযোগ, ব্যক্তিগত ব্লগ প্রেস এন্ড প্লেজারে -‘মাহে রমজানে চটি সাংবাদিকতা’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করে আমি এই চেষ্টা করেছি।
সম্ভবত আমার ফটোগ্রাফীর পেইজ থেকে আমার মোবাইল নম্বর +880 1715 ****** সংগ্রহ করে প্রথমে +8801672 ****** এবং পরে +880 447-800 **** নম্বর দিয়ে তিনি তার অভিযোগ ও হুমকী প্রকাশ করেন। দুপুর থেকে রাত অবধি বেশ কয়েক দফা আলাপের পরও তিনি শান্ত না হওয়ায় একসময়ে আমি লেখাটি মুছে ফেলে তার ক্ষোভ কমানোর চেষ্টা করি।
ওই রাতেই পুরো ঘটনা বর্ণনা করে একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি)’র খসড়া তৈরী করি। কিন্তু সেটি পড়ে নিজেরই মনে হয় লেখার ধরণ বা হুমকীদাতার অতিরঞ্জনে বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে যে, এটির কপি যদি সরকার বিরোধী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে যায় তবে পুরো ঘটনাটি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। এমনকী আমি নিজেও স্রেফ গুটিতে পরিণত হতে পারি। এমন চিন্তা থেকে বিষয়টি কয়েকজন সিনিয়র লেখক, ব্লগার ও সাংবাদিক বন্ধুকে জানিয়ে নীরব হয়ে যাওয়াই স্রেয় মনে করি। তবে এর আগে উল্লেখিত লেখাটি মুছে ফেলার জন্য আমার ব্লগের পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সেখানে আরেকটি লেখা পোষ্ট করি।‘পাঠক, ক্ষমা করবেন ... ’- শিরোনামে ১৯ জুলাই প্রকাশিত ওই লেখায় নেপথ্যের কোনো ঘটনা উল্লেখ করা হয়নি। চেপে যাওয়া হয়েছে ওই অনলাইনের নামটিও। তবুও আবার হুমকী পেলাম। এবার কারণ - ব্লগ পাঠকদের কাছে ওই ‘ক্ষমা চাওয়া’।
গুম হওয়া লেখাটির শেয়ার করা সংযোগ
গত ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় সেই পুরানো হুমকীদাতা আমার মোবাইলে আবার ফোন করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি আবার ওই জায়গায় (ব্লগে) দুঃখ প্রকাশ করছেন। আমার ভাবতে ইচ্ছে করছে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আপনি, যে একটা দুঃখ প্রকাশ করলেন। বা আপনার ব্লগটা দেশের নাম্বার ওয়ান ব্লগ, আপনি সব ব্লগের সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু এইটা আসলে আপনি এখন নিজে একটু চিন্তা কইরা দ্যাখেন। আপনি আপনার ওয়েটটা চিন্তা করেন, আপনার ব্লগের মার্কেটিঙটা চিন্তা করেন, আপনার পপুলারিটি চিন্তা করেন। এই সবকিছু নিয়া আপনার যে পোস্টটা, সেটায় কয়টা লাইক, কয়টা কমেন্ট পরছে – সেটাও চিন্তা করেন। এইখানে দুঃখপ্রকাশ কইরা কি হইছে? আপনি কার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন?’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি একটু কষ্ট পাইলাম যে আপনি আবার ওইটা দিছেন। আপনার অনেক বড় ব্লগতো আসলে! আমরাও (*** বার্তা ডটকম) এমন দুঃখ প্রকাশ করি না। আমাগোও মাঝে মধ্যে একটু-আধটু ভুল হয়।’
এর আগে হুমকীদাতা জানান, কোনো একটি গোয়েন্দা সংস্থা তার নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। নির্দেশ পাওয়া মাত্র তারা আমাকে ‘সাইজ’ করে ফেলবে। এছাড়া তিনি আমাকে জামায়াত-শিবিরপন্থী আন্দাজ করে এটাও জানান যে, জামায়াত ও শিবিরের উচ্চমহলের সাথে তার খুবই ভালো যোগাযোগ আছে। তিনি চাইলে তারাই আমাকে একদম ‘ডলা’ দিয়ে দেবে।
১৯৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের দিকে ইঙ্গিত করে তার বক্তব্য- ‘যে কয়জনের ফাঁসি হইছে না, তার মধ্যে একজনের ছেলে আছে আমার বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। ভিতরে আছে এ রকম তিনজনের ছেলেও আমার বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড মানে কি জানেন? ওরা আমার বাড়িতে থাকে, আমার বাড়িতে খায়। আমি ওদের বাড়িতে থাকি, ওর বাড়িতে খাই। এরকম, বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। এমনকী আমি অনেক জায়গায় তাদের মিডিয়াপার্সন হিসাবেও কাজ করি। তাই ওদের নিয়া অনেস্টলি আমি ভয় পাইতেছি না।’ শিবিরের মাসুদ নামের কোনো এক ব্যক্তির সাথেও আমার ব্যাপারে আলাপ হয়েছে বলে তিনি জানান।
পরবর্তীতে এক চিত্রপরিচালকের স্ত্রীকে আমার ‘গডমাদার’ সন্দেহ করার কথাও জানান হুমকীদাতা। ওই পরিচালকের বউ তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে এসেছিলেন, কিন্তু তাকে চাকরি দেয়া হয়নি। এরই জেরে তার নির্দেশেও আমি - হুমকীদাতা এবঙ তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারি। তিনি আরো বলেন, ‘কালের কণ্ঠ পত্রিকার যে কোনো একজন আমাকে বলেছে, আমাকে নিয়ে করতে (লিখতে) তো সাহস পায় না। কারণ আমারে নিয়া করলে (লিখলে) তো জানে বসুন্ধরা গ্রুপের। আইনা যেখানে মাটি ভরাট করতেছে ওইখানে ফালাইয়া ভরাট কইরা দিবো।’
ব্লগিঙের কারণে এর আগেও আমি বহুবার হুমকী পেয়েছি। কখনো ভারতপন্থী দালাল, আবার কখনো পাকিস্তানপন্থী ছাগু আখ্যা দিয়ে আমাকে ভার্চুয়ালি আক্রমণ করা হয়েছে। বাস্তবিক হুমকী পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। অন্যকোনো ব্লগারকেও এভাবে দফায় দফায় ফোন করে হুমকী দেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যে কারণে পূর্বপর্তী (১০ জুলাই সন্ধ্যায় দেয়া) হুমকীর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোও আপনাদের, তথা আমার ব্লগের পাঠকদের জানিয়ে রাখা উচিত বলেই মনে করছি।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ অনলাইনটির সাথে বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী জড়িত জানিয়ে হুমকীদাতা বলেছিলেন- “খোদার কসম তোরে আমি জবই কইরা ফালামু কুত্তার বাচ্চা। এক্কারে জবাই কইরা ফালামু চোদানীর পোলা। তোর বউ, মা, বোন যা আছে তাগো সব ল্যাংটা কইরা ছবি তুইলা দিয়া দিমু খানকির পোলা। তুই চিনস আমারে? তরে এম্নেও ধরুম, অম্নেও ধরুম। তোর নয় বছরের জার্নালিজম গোয়া দিয়া ভইরা দিমু।” তার আগে কথা প্রসঙ্গে তাকে জানিয়েছিলাম আমি প্রায় নয় বছর মেইস্ট্রিম জার্নালিজম, মানে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা করেছি।
হুমকীদাতা আরো বলেছিলেন, “ভাই আমি আপনারে পরিস্কার কইরা কইলাম, খোদার কসম ঢাকা শহরে আপনি যে কোনায় থাকেন কুটি কুটি কুটি কইরা হালামু আমি আপনারে, পিটাইয়া। লোক দিয়া পিটামু না, প্রশাসন দিয়া পিটামু। আপনারে খুঁইজা কালকে সন্ধ্যার মধ্যে আপনারে আমি আমার হাতে লইয়া আমু। কাল ইফতারের আগে আপনি আমার হাতে থাকবেন এইটা আপনারে গ্যারান্টি দিয়া কইলাম।” এর আগে ব্লগের পোস্টটির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনি এটা লিখে প্রশাসনের নজরে চলে আসছেন। কারণ আমি একটা ‘ভাইটাল ইস্যু’ এ দেশে। গাঙ দিয়া ভাইসা আসি নাই। থানা, পুলিশ, মন্ত্রী, মিনিস্টার - সবই লবিঙ করা আছে আমার। আপনার ভিতর কি ভয় ডর নাই? চোখ বন্ধ কইরা একটু চিন্তা করেন তো আপনি একটা কি? কোন হ্যাডমডা?”
minar & mandir | Barisal'06
হুমকীদাতা বলেছিলেন, “তোগো মতো বাল ছাড়া পোলাপান আমার কিছু করতে পারবো না খানকির পোলা। তোর চেহারা দেখলেই বোঝা যায় কি কইরা খাইতে পারবি। ফকিন্নির পোলা, বাপে বেঁচত আলু। আইছস ঢাকা শহরে, ধোন খুইলা খিঁচছস, ভাবছস ঢাকার প্রেসিডেন্ট। ফাজিল পোলাপান শালা। পুলিশের মাইর খাইলে কি বাঁচবি? তোর কি জীবন বাঁচব? তোর যা শরীর। চেহারা দেখলেই বোঝা যায় তুই ‘বাবাখোর। কাইলকা ইফতারের আগে আমি তোর সামনে আইতেছি। দেখুম তোর কত হ্যাডম হইছো। তুই কত লিখতে পারস, তোর ধোনে কত কালি হৈছে, আমি দেখুম।” এর আগে তিনি বলেন, “ভাই পাগলেও তো নিজের ভালো বোঝে। এত্ত মরার ইচ্চা থাকে গাড়ির তলে পইরা মইরা যান, ছাদ দিয়া পইড়া মইরা যান, পুলিশের মাইর খাইয়া মরনের দরকারডা কি?”
ক্ষিপ্ত হুমকীদাতা আরো বলেছিলেন, “এ্যাডাল্ট নিউজ তো আরো অনেকে দিতেছে। তাইলে বাইঞ্চোতের বাচ্চা তুই অন্যগুলোর কথা লেখছ নাই ক্যান? খানকির পোলা, *** বার্তা কি তোর মায়েরে চুদছে, না তোর বইনেরে রেপ করছে? তোর সোনা আমি আবার কাটুম। একবার কাটছে তর মন ভরে নাই। তুই আমারে চেনো শুয়োরের বাচ্চা? আরে খানকির পোলা তুই জানস বল্লার চাকায় ঢিল মারলে কি হয়? তুই নিজের পুটকি নিজেই মারছস। খালি *** বার্তা লইয়া নিউজ করছস। তার মানে এটা মার্কেট বুঝতে পারতেছে *** বার্তার লগে নিশ্চয়ই তোর কোনো কাহীনি আছে।” এরপর কি জানি একটা বলতে শুরু করতেই আমায় থামিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আরে ব্যাডা তুই তো জামাতের লোক, খানকির পোলা। তুই আবার কথা কস ব্যাটা, দাদা চোদাস আমারে। তরে সামনে যহন পামু তহন টের পাবি আমি কি জিনিস। তুই ডাইরেক্ট জামাতের লোক ফাজিল। আমি তোরে আধাঘন্টা সময় দিলাম, আধাঘন্টার মধ্যে তোর দোকান যদি আমি খুঁইজা পাই, তোরে আমি মাইরা ফালামু। তোর কোন বাপ আছে তারে লইয়া আইস।”
এছাড়া নিজেকে পাশ্ববর্তী দেশের উল্লেখিত নেত্রীর (ভারতের কোলকাতা রাজের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর) নিকট স্বজন দাবি করে ওই হুমকীদাতা আরো যা বলেছেন, তা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে আমার সাহসই হচ্ছে না। কারণ মূলত দুটি।
০১. অনাকাঙ্খিত সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরী হতে পারে।
০২. আমার দেশের সার্বভৌমত্ত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
তবে জেনে রাখুন। দৃঢ় চিত্তে বুক ফুলিয়ে পর্ণোগ্রাফী আইন ভাঙা ওই মানুষটি, অর্থাৎ আমার হুমকীদাতা একজন দেশদ্রোহীও। কেউ চাইলে এর প্রমাণও আমি দিতে পারবো। লাল ফোনে কল আনানোর ক্ষমতাও আছে জানিয়ে তার দম্ভোক্তি কী ছিলো তা আজ না হয় নাই-বা বলি। তবে এখানে আরো কিছু বিষয় জানিয়ে রাখা উচিত।
প্রথম দফায় হুমকী দেয়ার সময়ই হুমকীদাতা বলেছিলেন, ইতিমধ্যেই তিনি আমার বিরুদ্ধে ঢাকার কোনো একটি থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরী) করেছেন। যদিও তিনি নিজে মামলা করার মতো কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। তবু কেন জানি ক্ষুদ্ধ হতে পারছি না। এত গালিগালাজ খেয়েও লোকটার কণ্ঠ শুনে বার বার বেশ করুণাই জেগেছে। কী ধরণের পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বেড়ে উঠলে একটা মানুষের অমন অসুস্থ চটিপন্থী মনন আর ভাষাভঙ্গী গড়ে ওঠে তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়। অবশ্য অবস্থাদৃস্টে এটাও মনে হয়েছিলো যে এই মুহুর্তে আমি ওর বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলেই আমায় হিন্দুবিদ্বেষী ও সরকারবিরোধী তমকা লাগিয়ে জামায়াতপন্থী, জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হতে পারে। আজীবন প্রগতিশীল আর সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলে এখন যদি তাদের বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত হতে হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিই-বা হতে পারে?
সবকিছু মিলিয়ে নিজের ওপরও রাগ লাগছে। এরচেয়ে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ছিলো। বস্তুত তেমন কাজের মধ্যেই ছিলাম। হুট করে ফেসবুক নোটিফিকেশন চেক করত গিয়ে ওই চটিসাইটের নিউজগুলো দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়েছিলো । আসলে গত পহেলা বৈশাখের সেই টিএসসি’র ঘটনার পর থেকে যৌন পীড়নের উৎসাহদানকারী যে কোনো কর্মকাণ্ডই আমার মাথা গরম করেছে। যে কারণে ওই দিনও আমি সামলাতে পারিনি নিজেকে। তার ওপর ওই সময়ে আবার পাকিদের ৭১’র ধর্ষনচিত্র নিয়ে পুরানো লেখা পড়ছিলাম। যাকগে, আপনারা বুঝতেই পারছেন - হুমকীদাতার সাথে কথোপকথনের কিয়দাংশের অডিও রেকর্ড আমার হাতে রয়েছে। তবুও আমি এখন কোনো মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে আমার চলমান কাজগুলোর মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে চাচ্ছি না।
যে দেশে ছয় মাসের মধ্যে চারজন ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, সে দেশে কোনো ব্লগারকে কারো এভাবে মারধর বা হত্যার হুকমী দেয়ার ঘটনা হয়ত খুবই নৈমিত্তিক এবঙ স্বাভাবিক। তবু গত ৮ আগস্ট কাফরুল থানায় একটি জিডি করলাম। আর আজ (১০ আগস্ট) ব্লগের মাধ্যমেই ঘটনাটি সবাইকে জানিয়েও রাখলাম। আরো একটি বিষয় জানিয়ে রাখি। যদি বেঁচে থাকি তবে আত্মজৈবনিক এ ঘটনার অবলম্বনে একটি ডকুফিল্ম তৈরী হবে, নাম - ‘আত্মরক্ষার্থে’।
এই লেখায় আরেকটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। উল্লেখিত ঘটনা চলাকালে বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক সিনিয়র, জুনিয়র সাংবাদিক বন্ধুর কথা শুনে মনে
হয়েছে আমি আদতে এখন আর তাদের বন্ধু নাই, স্রেফ পূর্বপরিচিততে পরিণত হয়েছি।
বিচ্ছিন্নতায় বা যোগাযোগচর্চার অভাবে আমি তাদের হারিয়ে ফেলেছি, কিঙবা
হারিয়ে গেছে আমার অজস্র পুরানো সম্পর্ক। আরো খেয়াল করলাম, অনেকেই মুক্ত
সাংবাদিকতাকে স্রেফ ‘সৌখিনতা’ ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
শুভাকাঙ্খীদের অনেকে আমাকে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হওয়ারও পরামর্শও
দিয়েছেন। কেন আমি কখনো ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) -এর সদস্য হইনি,
তা নিয়েও আক্ষেপ করেছেন। তাদের এসব কথা শুনদে শুনতে আমার বার বার মনে
পরেছে, হুমকীদাতাও আমাকে বহুবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে সামান্য ব্যক্তি
হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখা আমার মোটেই উচিত হয়নি।
হে অপ্রিয় হুমকীদাতা, পুরো লেখাটি আপনিও যে পড়বেন তা আমি নিশ্চিত। এবঙ নিশ্চয়ই খেয়াল করবেন এর কোথাও আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ করা হয়নি। ভুলেও ভাববেন না হুমকীতে ভয় পেয়ে এভাবে লেখা হয়েছে। মূলত আপনার বালক সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমি এখনো চাচ্ছি না আমার কারণে আপনার কোনো ক্ষতি হোক। তবে সকলকে আপনার মতো ব্যক্তিদের সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেয়ার তাগিদ অনুভব করেছি। কারণ আপনারা শুধু মিডিয়াকে না সমগ্র সমাজকেই কলুষিত করছেন।
এই লেখা পড়ার পরও যদি আপনার বোধদয় না ঘটে, আপন ক্ষমতা প্রদর্শনের স্বাদ জাগে - তবে আমার মোবাইলটা খোলাই আছে। আবার ফোন করুন। গালাগালি করে আমার চৌদ্দগুষ্ঠীকে উদ্ধার করুন। নয়ত এবার খুনটা করিয়েই ফেলুন। শুধু একটাই অনুরোধ, খুনটা করার বা করানোর আগে নীচের পদ্যটি একবার পড়ে নেবেন। আশাকরি তাতে আমারে হত্যার ইচ্ছা আরো তীব্র হবে। আমেন।
- স্মরণে কৈবর্ত বিদ্রোহ
নিশ্চিত অনার্য আমি আদি কৈবর্তের ছেলে সহস্র জনমে ছিলেম - মিঠে জলের জেলে বার বার ফিরেছি বঙগে, ফিরিয়েছে মোহ - মননে অনিবার্য আজও বরেন্দ্রী বিদ্রোহ।
অহিঙস ধর্মের নামে ক্ষিপ্ত সহিঙসতা- রুখেছিলো যে কৌশলে এই নদীমাতৃকতা যুগ-যুগান্তর ধরে যাচ্ছিলাম লিখে তারে সেই অপরাধেই খুন হয়েছি বারে বারে।
“চেনা যায়, শিশ্নোত্থিত রাষ্ট্র আর তার ব্যবস্থাপনাকে? চেনা যায়?”-সময়ের এ প্রশ্নটির উত্থাপক বন্ধু বাঁধন অধিকারী।
লেখাটি শুরু করেছিলাম এক দিন আগে (১০ মে, ২০১৫)। মূল ফোকাস ছিলো – যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের চালানো নিষ্পেষনে। মূলত ব্যক্তিগত নানা কারণেই এটি শেষ হয়নি। এরই মধ্যে সামনে নতুন ইস্যু। কিঙবা নতুন নয়, এটাকে পুরানোও বলা যায়। আজ (১২ মে, ২০১৫) আরেক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় খুন হয়েছেন। অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর বাবুর মতো তাকেও প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে হত্য করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত তিন মাসের মধ্যে তৃতীয় নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখলো বাংলাদেশ। যৌন পীড়নের ঘটনার পুনুরাবৃত্তির দু’দিন পরই ব্লগার হত্যার পুনুরাবৃত্তি একই সুঁতোয় গাঁথতে চায় না মন। কিন্তু পরিস্থিতির প্রয়োজনে কখনো কখনো এমন প্রশ্ন’তো মনে জাগতেই পারে – এই রাষ্ট্রই কি নিপীড়ক বা এই রাষ্ট্রই কি খুনি? নাহ, পুরানো প্রসঙ্গে ফিরি। নতুন ইস্যুতে পুরানো ইস্যুরে চাপা দেয়ার ফাঁদে পা না দেই। কারণ এম্নিতেই ব্লগার হত্যা নিয়ে আলাদা করে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
“আপনাকে সমর্থন করি মানে সবকিছুতেই সমর্থন করতে হবে তা কিন্তু নয় প্রিয় প্রধানমন্ত্রী.. পহেলা বৈশাখে নারীর সম্ভ্রমহানীর ঘটনা ঘটেছে.. আপনি তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নিলে প্রতিবাদ হবেই.. ওরা বাসে পেট্রলবোমা মারেনি.. ওরা পুলিশের মাথা গুড়িয়ে দেয়নি.. ওরা নারীর সম্মানহানীর প্রতিবাদে নেমেছে.. আপনি বিশ্বের সবচেয়ে নারীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী.. এই প্রতিবাদে আপনিও সামিল জানি.. আপনার পুলিশ যে আঘাত করেছে সে আঘাত আপনার গায়েও লাগার কথা.. আপনি অনুভব করতে পারছেন না কেনো?” –এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্যকার মাসুম রেজার সাম্প্রতিক (১০ মে, ২০১৫) ফেসবুক স্ট্যাটাস। নিউজ ফিডে গত ৪৮ ঘন্টা যাবত এ জাতীয় স্ট্যাটাসের আধিক্য যে হারে বেড়েছে, তাতে আমি শঙ্কিত। কারণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ‘ডিজিটাল’ সরকারের আমলেই সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো নিষিদ্ধ বা বন্ধ করে দেয়ার নজির রয়েছে। অবশ্য আজকের ব্লগার হত্যাকাণ্ডের পর নিউজ ফিডের চেহারা দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে।
ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী ইসমত জাহানের সেই পাল্টা আঘাত
লেখাটি শুরু করতে গিয়ে আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নারী মরহুমা দাদী মরহুমা সৈয়দুন্নেছা বেগমকে মনে পড়লো খুব। দাদীর জন্ম হয়েছিলো রাজনৈতিক পরিবারে। তিনি ছিলেন ঝালকাঠীর বারৈয়ারা গ্রামের মীর মমতাজ উদ্দিনের জেষ্ঠ্য কন্যা। এই মমতাজ উদ্দিন একাধারে একজন জনপ্রিয় শিক্ষক এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন । তিনি এক নাগাড়ে ২৬ বছর নথুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন আবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ‘প্রেসিডেন্ট’ বলা হত। পরে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে পদটির নাম ‘চেয়ারম্যান’ হয়ে যায়। সে যাকগে, মূল প্রসঙ্গে আসি। স্মৃতি হাঁতড়ে দেখি – দাদীর কাছেই প্রথম শুনেছিলাম ‘শ্যাখের বেটি’ -এর গল্প। তার কাছেই জেনেছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্ব-পরিবারে নিহত হওয়ার সেই নারকীয় কাণ্ড। খেয়াল আছে, জায়নামাজে বসেই দাদী আমার কৌতূহলী মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। আর একটু পরপরই ঘোমটার প্রান্ত চেনে মুছে নিচ্ছিলেন সজল হয়ে ওঠা আঁখি। নিহত বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার এবং বেঁচে যাওয়া দুই কন্যার জন্য দাদীর সে আবেগ, আজও ভুলতে পারিনি। হয়ত এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের সামনে অজস্র বিশেষন যুক্ত করার সুযোগ থাকলেও আমার সবচেয়ে প্রিয় হয়ে রয়ে গেছে সেই ‘শ্যাখের বেটি’ উপমাটি।
প্রিয় দাদীর সেই ‘শ্যাখের বেটি’ গত ছয় বছর যাবৎ আমাদের প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ আজ আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান একজন নারী। তবুও আজ রাষ্ট্রই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় নারী নিপীড়ক! নাহ - নিপীড়ন, অত্যাচার, বস্ত্রহরণ, পাষবিক আচরণ বলে এই অপরাধকে আর হালকা করবো না। আজ থেকে এ জাতীয় ঘটনাকে শুধু যৌন সন্ত্রাস বা ধর্ষনই বলবো। দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনও আমায় সে অধিকার দিয়েছে। সেখানে বলা রয়েছে – “যদি কোনো ব্যক্তিঅবৈধভাবে যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোন বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানী করেন, তাহলে তার এ কাজ হবে যৌন পীড়ন।” তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সব কিছু বাদ দিয়েও সর্বাগ্রে একজন নারী; যিনি কন্যা, জায়া, জননী – এ তিনটি স্তরই চেনেন। সেহেতু নিশ্চয়ই জানেন, নারীকে শুধু পুরুষাঙ্গ দিয়েই যৌন পীড়ন বা ধর্ষন করা হয় না। একজন কামুক পুরুষ তার প্রতিটি অঙ্গ ব্যবহার করে। অনেক সময় শুধু লোলুপ দৃষ্টিও যে কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে – তা বোধকরি দেশের প্রতিটি মেয়েরই জানা আছে।
ইসমতের উপর পুলিশী পীড়নের আরো চিত্র
বঙ্গাব্দ বরণ, তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি চত্ত্বর সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে নারীদের বস্ত্রহরণ ও শ্লীলতাহানির যে ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পায়নি জাতি। এর আগের ও পরের প্রায় সকল ঘটনায় তিনি প্রেস সচিবদের মাধ্যমে কখনো শোক আবার কখনো শুভেচ্চা বার্তা, অর্থাৎ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনার ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও ঠিক পরের দিনই এ নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে অনলাইন পত্রিকা আমাদের বুধবার – এ প্রকাশিত একটি লেখায় শাহাদত হোসেন বাচ্চু বলেছেন, “বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে সফল, সুখী ও পরিতৃপ্ত মানুষটি কে? উত্তর হতে পারে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার পার করছে ষষ্ঠ বছর। গত বুধবার, বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে গণভবনে কলামিষ্ট, লেখক, টক শো’র আলোচক, সঞ্চালকসহ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তাঁর হাস্যোজ্বল চেহারায় ছিলো না কোন উদ্বেগ-উৎকন্ঠার ছাপ, ঠিকরে পড়ছিল গভীর আত্মবিশ্বাস। ওই মতবিনিময়কালে এবারের পয়লা বৈশাখ পালনের কথা বলছিলেন, টেলিভিশনে তিনি দেখেছেন। বিশদ উল্লেখ না করে ‘বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট’ বলে প্রসঙ্গান্তরে চলে গেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা অনেকেই বুদ্ধিমান নই কিম্বা বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাও করি না। ফলে আমরা আম-জনতা ইশারায় অনেক কিছুই হয়তো বুঝতে পারি না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে সকল বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারাটি করেছেন, তারা হয়তো বুঝে গেছেন অনেক কিছুই।” শাহাদত হোসেন বাচ্চু আরো লিখেছেন, “আম-জনতা ইশারায় কিছুই বুঝতে চায় না। চাই একটু স্বস্তি-শান্তি আর জীবনের নিরাপত্তা। স্বস্তি-শান্তির বদলে জুটছে আতঙ্কিত জীবন-যাপন। আসলে জনগন ইশারায় কিছুই বুঝতে চায় না। তারা চায় সত্যিকার জনকল্যাণকর রাষ্ট্রাচারসম্মত গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার। প্রধানমন্ত্রী ইশারায় যদি সেটি বোঝাতে চেয়ে থাকেন, তাহলে জনগন তা অবশ্যই বুঝে নেবে।”
বৈশাখের সংঘবদ্ধ সেই যৌনসন্ত্রাসের প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলনরত ছাত্র ইউনিয়নের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য ইসমত জাহানের সাথে পুলিশ, মানে আইনের রক্ষকরা যে আচরণ করেছে, সেটা আইনানুযায়ীই ‘যৌন পীড়ন’। অর্থাৎ পুলিশ ভাইয়েরা পুনরায় প্রমাণ করলেন, তারা অর্থাৎ এ রাষ্ট্র শুধু যৌন পীড়নের সমর্থকই নয়, ক্ষেত্র বিশেষে নিজেই পীড়ক, ধর্ষক। অবস্থাদৃষ্টে আপন রাষ্ট্রকেই আজ যৌনসন্ত্রাসী বা ধর্ষক ভাবতে হচ্ছে হায়। শুধু আমাদের মা, বোনকে নয়; দেশমাতৃকাকেই ধর্ষন করছে রাষ্ট্রযন্ত্র। এতে অবাক হতাম না। কারণ হাজার বছর ধরে শোষণযন্ত্রের স্বভাবই যে এমন, তা সচেতন সকলেরই জানা আছে। কিন্তু ওই যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের চাবি এখন যার আঁচলে বাঁধা, তিনি সেই ‘শ্যখের বেটি’। তাকে বা আমাদের পুলিশ বাহীনিকে বিব্রত করার কোনো বাসনা নিয়ে এ্ই লেখা লিখতে বসিনি। শুধু রাষ্ট্রীয় প্রধানের কাছে আমার প্রশ্ন – পহেলা বৈশাখ ইস্যুতে আপনার ‘আনুষ্ঠানিক নিরাবতা’ কি নিপীড়কদের মানুসিক শক্তি বাড়ায়নি? এর পরবর্তী পুলিশী পীড়নের জন্যও কি পরোক্ষভাবে আপনিই দায়ী নন? এই দুটো প্রশ্নকে কারো বেয়াদবি মনে হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
চলতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “নারী সমাজের উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন। তাই তার সরকার নারী সমাজের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। যারা ইসলামের নামে নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারা ইসলামের অনুশাসন মানে না।” একইসঙ্গে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেশের নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এটি গত ৮ মার্চ, ২০১৫ - একটি অনলাইন পত্রিকার খবর। এটা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর উন্নয়ন’। ওই অনুষ্ঠানের আরেকটি খবরে বলা হয়েছে - নারী সমাজের উন্নয়নে নিজ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে নারীদের কল্যাণে কাজ করে। এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাংলাদেশের নারীদের কর্মস্পৃহা, দক্ষতা, ত্যাগের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নারীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। সরকারের নারী উন্নয়নমুখী নীতির কারণে এখন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, জাতীয় সংসদের উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, অনেক বিচারক, সচিব, এমনকি ভিসিও হচ্ছেন নারী। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩টি সংরক্ষিত আসন সৃষ্টির মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে নারী নেতৃত্ব বিকাশে ফলপ্রসূ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়নসহ নারী সমাজের উন্নয়নে ৬ বছরে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।” বাংলাদেশের সাউথ-সাউথ পুরস্কার ও নারী সাক্ষরতায় ইউনেস্কো ‘শান্তি বৃক্ষ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার অর্জনের কথা ও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়াও বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মান বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসব ভুলে যাইনি। শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীও ভুলে যাননি নিশ্চয়ই। কারণ আমরা জানি তার সরকারই নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩, ডিএনএ আইন ২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। মাতৃত্বকালীন ছুটিও ছয় মাসে উন্নীত করেছে এ সরকার। সেই সাথে মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করেছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোও এখন জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করছে। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, এসব কি তবে শুধুই কাগজপত্রে হচ্ছে? নাহ, এমনটা আমি অন্তত মনে করতে চাই না। তবে মনে পরে যায় শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদকে। কমপক্ষে ১০ বছর আগে নিজের “১০,০০০ এবং আরো একটি ধর্ষণ” উপন্যাসের মুখবন্ধে তিনি লিখেছিলেন - ‘বাঙলাদেশ এখন হয়ে উঠেছে এক উপদ্রুত ভূখণ্ড; হয়ে উঠেছে ধর্ষণের এক বিশাল রঙ্গমঞ্চ, ৫৬,০০০ বর্গমাইলব্যাপী পীড়নের এক বিশাল প্রেক্ষাগার। ধর্ষিত হচ্ছে মাটি মেঘ নদী রৌদ্র জোৎস্না দেশ, নারীরা।’
আন্দোলনরতদের ওপরে পুলিশের লাঠিচার্জের বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ গত ক’দিনে ঘেঁটে দেখলাম। পুলিশের লাঠিচার্জে আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলের অজস্র ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবেই। ওগুলো একটু খেয়াল করে দেখলেই দেখবেন - ক্ষুব্ধ ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী ইসমত জাহান জলকামানধারী দাঙ্গাগাড়ির গায়ে ঢিল ছুড়ে মারার সাথে সাথে তাকে পিছন থেকে এসে এক থাপ্পরে ফুটপাতে শুইয়ে ফেলে একজন সুঠার দেহের পুরুষ পুলিশ। তিনি কোনো মতে উঠে পাশে দাঁড়ানো এক আলোকচিত্রীর পেছনে লুকিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে – পুলিশ সদস্যরা তাকে ধটেনে হিঁচরে বের করে লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে ধাওয়া করে। এরপর তিনি দৌড়ে গিয়ে একটি গাছের আড়ালে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখান থেকেও তাকে চুলির মুঠি ধরে বের করে এনে পিটাতে পিটাতে আবারো শুইয়ে ফেলা হয়।
জানা হয়নি ওই পুলিশ সদস্য জানতেন কি’না, সেদিন ছিলো বিশ্ব মা দিবস। আর এই দিনে তিনি বা তারা যাকে পেটাচ্ছিলেন, তিনিও মায়েরই জাত। যে কি’না নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষার দাবিতেই আজ রাজপথে, নিপীরকদের শাস্তির দাবিতে। ওই সদস্য না জানুক, তার কর্তারা তো জানতেন- বৈকি। এ কারণেই সেদিন ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলাম। চিঠিটি এখানেও সংযুক্ত করছি -
হে মহান বিজ্ঞ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), এ কথাগুলো সম্ভবত আপনার কান অবধি পৌছাবে না। তবুও বলছি, বিশ্ব মা দিবসে মায়ের জাতকে পিটানোর জন্য নারী পুলিশ ব্যবহারে আপনার গদি খুব একটা নরবরে হয়ে যেত না হয়ত। যৌনসন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন দমাতে নারী পুলিশদের কি ওপর ভরসা রাখতে পারছিলেন না? আন্দোলন দমাতে এসে তাদেরও প্রতিবাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিলো কি’না সে আলোচনা আপাতত উহ্য রাখছি। শুধু একটু জানিয়ে রাখছি, নিজ বাহীনির নারী সদস্যদের ওপর আপনার এই আস্থাহীনতা, তথা নারীদের শায়েস্তার জন্য পুরুষ পুলিশ ব্যবহার এই জাতিকে ফের সেই শামসুন্নাহার হলের ঘটনাকে মনে করিয়ে দিয়েছে। তবুও দেশের সুবোধ নাগরিকের মতো আমরা ট্যাক্সের পয়সায় আপনাদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করবো নিশ্চয়ই। পুনশ্চঃ পরে জেনেছি - “সেখানে পুলিশের নারী সদস্য থাকলেও তাঁরা নীরব ছিলেন।” লিখেছে দৈনিক প্রথম আলো।
খবরে দেখলাম নারী লাঞ্ছনার বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কনস্টেবলের নাম আনিস। গতকাল (১১ মে, ২০১৫) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখা থেকে সাংবাদিকদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একই দিনে ডিএমপি কার্যালয় থেকে পাঠানো আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা কীভাবে ব্যারিকেড পার হয়ে মিন্টো রোডের স্পর্শকাতর মন্ত্রিপাড়ায় এসে পুলিশের ওপর ‘হামলা চালিয়েছেন’ এবং পুলিশ কোন প্রেক্ষাপটে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করেছে তা ‘যাচাইয়ে’ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি)। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) বেলালুর রহমানকে। কমিটির দুই সদস্য হলেন ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) কৃষ্ণ পদ রায় ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখিত সংবাদ ভাষ্যগুলো পড়তে পড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আরো কিছু কথা মনে পরলো। এ দেশে অপরাধীদের মারা হলে মায়াকান্না করা হয় উল্লেখ করে ক’দিন আগেই তিনি বলছিলেন - “পুলিশের অধিকার আছে নিরপরাধ মানুষের জানমাল বাঁচানো। মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, বাসে-রেলে আগুন দেয়া হচ্ছে, রেললাইন তুলে ফেলছে, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে, কিছু করা যাবে না! কিছু করলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। এ হতে পারে না।”
সম্ভবত অনেকেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সেই বক্তব্য ভুলে যাননি। তিনি বলেছিলেন, “কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ পেলে পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। যে ফুটেজ পাওয়া গেছে, তাতে বিবস্ত্র করার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, “ পহেলা বৈশাখের এ ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটানো হয়েছে। যদি কারও কাছে কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য থাকে তাহলে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে তা পুলিশের কাছে জমা দিন।” এনিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ঘাঁটলেই জানবেন, সেদিনও পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিলো স্মারকলিপি নিয়ে সচিবালয়মুখী আন্দোলনকারীদের সাথে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলামের সেই সংবাদ সম্মেলনের কথাও নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, “নারীকে বিবস্ত্র করে যৌন হয়রানি করার কোন ঘটনা ঘটেনি, এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে বিবস্ত্র করে তার ছবি মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার করানো হচ্ছে।” তবে টিএসসির আশপাশের এলাকায় ঠেলাঠেলি হয়েছে বলে স্বীকার করে মনিরুল ইসলাম বলেন, “এখানে ঠেলা-ধাক্কা, হাতাহাতি হয়েছে। একেবারেই কিছু বিকৃতমনা যুবক এবং যারা অপুরুষসুলভ, তারাই হয়ত এ কাজটি করেছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ চলছে।”
বর্ষবরণ উৎসবে যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে লজ্জা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘সব নারীর কাছে’ ক্ষমা চেয়েছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। পুলিশের ‘লোক দেখানো’ ভূমিকা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, “নববর্ষের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানি ও এ ঘটনা আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- কী হিংস্রতা ও নগ্নতা আমাদের মনের গহিনে বাসা বেঁধেছে। কী ঘৃণ্য মানসিকতা আমাদের পেয়ে বসেছে।” এবার তিনি কী বলেন তা দেখারও অপেক্ষায় আছি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। নগর নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগদ খালেদা জিয়ার ওপর সরকার সমর্থকদের দফায় দফায় আক্রমণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই শুধু নন, তার সন্তান ও অবৈতনিক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা’ও সকলের মনে আছে আশাকরি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘৬৬৫ জন বিএনপি নেতা পেট্রোলবোমাসহ ধরা পড়েছে। ৭০ জনের মতো সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়েছে এবং তারা গণপিটুনির শিকার হয়েছে। বোমা বানাতে গিয়ে নিজেদের নেতাও মারা গেছে। বহু মায়ের বুক খালি করেছেন। বহু বোনকে বিধবা করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) এখনো প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তার কথায় আমি অবাক হয়ে যাই। এখন যদি সাধারণ মানুষ তার ওপর প্রতিশোধ নেয় তা হলে তিনি কী করবেন। তিনি দেশের মানুষকে এতো বোকা মনে করেন কেন?’ আর তার পুত্র জয় ফেসবুকে লিখলেন – “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে মানুষ আবারও পাথর এবং লাঠি নিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনাগুলোতে আসলে আওয়ামী লীগের তেমন কিছু করার নেই। দেশের মানুষ, বিশেষ করে ঢাকার মানুষ গত তিন মাসে বাস এবং গনপরিবহনে বিএনপির দ্বারা অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছেন। বিএনপি ১৬০ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, বহু মানুষ আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে শুয়ে আছেন। ক্ষোভটা সহজেই বোধগম্য।”
ক্ষমতার চূড়ান্তে থাকা এক মা বা তার ছেলের এমন বক্তব্য প্রতিহিংসায় আস্কারা দেয় কি’না – সে প্রশ্ন এখানে তুলবো না। কারণ এটা আমি মনে করি না যে ওনারা ভুলে গিয়েছিলেন যে বেগম খালেদা জিয়াও সর্বাগ্রে একজন নারী, দেশের এক সম্মানিত নাগরিক। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া একজন নারীর কতটা সম্মান পাওয়া উচিত, তা’ও বোধকরি ওনাদের অজানা নয়। এমন একজন নারীর ওপর হামলার পর অমন বক্তব্য আরো কতটা ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিতে পারে – সে শঙ্কায়ও ছিলাম। হয়ত ছিলেন আরো অনেকে। ক’দিনের মধ্যেই প্রমাণ পেলাম – শঙ্কা ভুল ছিলো না। নগর নির্বাচনের দিন সারা ঢাকাতেই সরকার বিরোধী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা যে পরিমাণ নিগ্রহের স্বীকার হয়েছেন, তার মধ্যে নারীর সংখ্যাও এক্কেবারে কম ছিলো না।
বেগম জিয়াও এই ইস্যুতে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ২৬ এপিল, ২০১৫ – এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন যৌন পীড়নের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। খালেদা জিয়া বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের যে বোনেরা ও মেয়েরা ন্যাক্কারজনকভাবে নির্যাতিত ও সম্মানহানির শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি। এসব ঘৃণ্য অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।” তিনি আরও বলেন, 'যে সরকার ও প্রশাসন কোনো সামাজিক উৎসবে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে পারে না এবং এমন ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিকার করতে পারে না, তাদের লজ্জিত হওয়া উচিৎ। ক্ষমা চেয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ।'
একই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রী আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। তাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উত্তরা, কারওয়ান বাজার, ফকিরেরপুলের কাছে ও বাংলামোটরে আমার গাড়িবহরে পরপর চারদিন হামলা করেছে। বাংলামোটরে আমাকে বহনকারী গাড়ির উপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেয় এবং হামলাকারীদের পুলিশ পুরোপুরি সহযোগিতা করে। সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে কারওয়ানবাজারে। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। বহরের অনেকগুলো গাড়ি ভেঙ্গে ফেলে। হামলার সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানো হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, 'সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আমি তখন সবেমাত্র গাড়িতে উঠে বসেছি। আমি যে-পাশে বসা ছিলাম, সেই পাশেই গাড়ির জানালার কাঁচে গুলি লাগে। এতে গাস ভেদ না করলেও তা ফেটে যায়। আলাহর রহমতে অল্পের জন্য আমার জীবন রক্ষা পায়। কতটা মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করলে বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ ফেটে যায়, তা সবাই বোঝে। এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।” প্রতিটি হামলার জন্য তিনি এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে বলেন, “প্রতিটি হামলার ঘটনাই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সরাসরি উস্কানির ফল এবং সুপরিকল্পিত। এসব হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অংশ নেয়।”
এদিকে যৌন সন্ত্রাস বিরোধী ‘পাল্টা আঘাত’ শীর্ষক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে যখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে দেশের সচেতন সমাজ, ঠিক তখনই ফের ব্লগার হত্যার মতো ইস্যুও তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একই দিনে নিখোঁজ এক জাতীয় নেতার (বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ) সন্ধান লাভ ও ফের ভূ-কম্পনের ঘটনাও এলোমেলো করে দিচ্ছে অনেক ভাবনার গতি-প্রকৃতি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মানসিক হাসপাতালে অবস্থানরত ওই নেতা বা নেপালে জন্ম নেয়া ভূমিকম্পের প্রভাব জনমনে কেমন হতে পারে তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এবারের বৈশাখে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছিলো জগন্নাথ আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়ায় টিএসসি’র ঘটনাতেও এই সংগঠনের নেতাকর্মিদের জড়িত থাকার গুজব ছড়িয়ে পরে। মূলত বিগত বছরগুলোতে তাদের এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের নজিরই এটি ছড়াতে সাহায্য করেছে। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মিদের মাধ্যমে পুলিশের হাতে আটক হওয়া নিপীড়কদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনা – এ গুজবকে আরো শক্তিশালী করেছে। এতে হাওয়া দিয়েছে খোদ ছাত্রলীগও। এনিয়ে ২২ এপ্রিল এক সংবাদ পরিবেশন করে দৈনিক মানবকণ্ঠ। “ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়ন : সপ্তাহ পেরুলেও কর্মসূচিহীন ছাত্রলীগ : কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারণায়” শিরোনামের ওই সংবাদে বলা হয়, রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। ঠিক তেমনি বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত বর্বরোচিত যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যেখানে একের পর এক কর্মসূচি পালন করছে, সেখানে প্রায় নিশ্চুপ ছাত্রলীগ। ঘটনার সাতদিন পেরুলেও নেই কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যস্ত আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগে। এ নিয়ে সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভেতরেও বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এ ধরণের সংবাদ এসেছে আরো একাধিক গণমাধ্যমে। ওইসব সংবাদে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বর্বর ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে নামমাত্র একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। তাও আবার তিনদিন পর। বিবৃতিতে ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে গত মঙ্গলবার বিকেলে ৩০-৩৫ জনের একদল বখাটে যুবক বেশ কয়েক নারীকে যৌন হয়রানি করেছে। তারা আগন্তুকদের সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করে। জাতির জনকের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ হীন ও ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। অতি দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতেই দাবি শেষ! এরপর নেই কোনো দৃশ্যমান কর্মসূচি। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে। প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ মনোনীত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের গণসংযোগে ব্যস্ত।
প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে আরেকটি অনলাইন। ‘ছাত্রলীগকে জড়ানো হচ্ছে গোষ্ঠীস্বার্থে : প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, “পহেলা বৈশাখের ঘটনায় দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নামে কুৎসা রটানোর অপপ্রয়াস রুখতে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন।” তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসটিও এখানে তুলে ধরা হলো -
গরু ঘাস খায় / আমি গরু খাই। সুতরাং আমি ঘাস খাই ... যুক্তি বিদ্যার যুক্তিগুলো এইরকমই। যা অবশেষে ভুল প্রমাণিত হয়। "যেহেতু সুশীলদের কাছে সব দোষের দোষী ছাত্রলীগ হয়। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতনের যে ঘটনা এটা ছাত্রলীগই করেছে।" কিছু অশিক্ষিত/অর্ধ শিক্ষিত মানুষ এই রকম যুক্তি দিয়েই ছাত্রলীগের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে কিছু পেইড পেশাজীবীও রয়েছেন। কারণ সামনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, সরকার সমর্থক প্রার্থীদের হারানোর জন্য এটা খুব বার্নিং ইস্যু। যেমন গত নির্বাচনে ছিল হেফাজত ইস্যু। অথচ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী, যিনি মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে দুস্কৃতিকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন তিনিও কিন্তু প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠন এর নাম বলেননি। নিশ্চয় দুস্কৃতিকারী কুলাঙ্গারগুলো ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক হলে তার জানার কথা। কারণ উদ্ধারকারীরাও ৭/৮ বছর ধরে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছেন। সুতরাং প্রতিপক্ষকে চেনার কথা। যারা কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া ছাত্রলীগকে দোষারোপ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা কি জানেন, আপনিও যে ওই "কুলাংগারদেরই একজন।" কারণ আপনি, আপনার গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে আসল কুলাঙ্গারদের বাঁচিয়ে দিচ্ছেন।
অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষের রাতে শাওন আকতার বাঁধন নামে এক নারীকে বিবস্ত্র করা হয়েছিলো। তখনও যে সোনার ছেলেরা এই অপকর্ম করেছিলো তারা ক্ষমতার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। আর তখনও বর্তমান ক্ষমতাসীনরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো। পুলিশ ছিলো নীরব। এ নিয়ে মামলা হলেও আসামিরা সবাই মুক্তি পেয়েছিলো। তাছাড়া প্রবল চাপের কারণে সেই বাঁধন নিজেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। ২০১৪ সালের এক খবরে বিবিসি বলছিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ওই বছরে কমপক্ষে ২০টি যৌন হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। বিগত ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল অবধি এ জাতীয় শত শত ঘটনার জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমেও এসেছে খুব কম সংখ্যক ঘটনা। তবে যেগুলো এসেছে, ব্যাপক আলোচিত হয়েছে - সেগুলোয় ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্টদের জড়িত থাকার প্রমাণই মিলেছে বার বার।
কার জানি এক লেখায় পেয়েছিলাম, সেই সুদূর অতীতে - বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেই (১৯৭৩ সালে) শহীদ মিনারে ছাত্রীদের ওপর হামলে পড়ার মতো ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে আছে। তাদের বর্তমান উত্তারাধিকারীরা সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রেখেছে। এই ছাত্রলীগ তৈরি করেছিলো সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষক। তাদের এ জাতীয় অনাচার নিঃসন্দেহে ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতিয়ার।
অনেকের হয়ত প্রাসঙ্গিক মনে না’ও হতে পারে। তবুও সাংবাদিক ও ব্লগার কল্লোল মুস্তফার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস এখানে হুবহু উল্লেখ করছি।
>> অভিজিৎ রায়ের খুনিরা এখনও ধরা পড়েনি/চিহ্নিত হয়নি, ওয়াশিকুর বাবুর খুনিরা জনগণের তৎপরতায় ঘটনাচক্রে ধরা পড়লেও পেছনের ব্যাক্তি বা সংগঠন এখনও ধরা পড়ে নি। হুমায়ুন আজাদ হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে নাস্তিক অভিযোগে যাদের উপরই হামলা হয়েছে, সেসবের কোন তদন্ত কাজেই সন্তুষ্ট হওয়ার মত কিছু দেখি না। ক্ষমতাবানরা বিপন্ন বোধ করলে যেভাবে পুলিশ কিংবা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী মাঠে নামে, অন্যান্য আরও ঘটনার মতো এই হত্যাকান্ডগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে মূল হোতা সনাক্ত করার ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ নেই। যে কারণে পেছনের মূল শক্তি তো দূরের কথা রেদোয়ান রানা কিংবা মাসুম ভাইদের মতো সামনের সারির সমন্বয়করা পর্যন্ত ধরা পড়েনা। এ রকম একটা বাস্তবতাই লেখক অনন্ত বিজয় দাসকে কুপিয়ে হত্যার পরিসর তৈরি করে দিয়েছে।
>> নাস্তিকতার কারনেই একের পর এক হত্যা কারা হচ্ছে বলে মনে হলেও নাস্তিকতাকে পুঁজি করে হত্যার পেছনে অন্য কোন মোটিভ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। ইতিহাস বলে, নাস্তিক আস্তিক হিন্দু মুসলিম ইত্যাদি বিভিন্ন দাঙ্গা হামলা আক্রমণ ইত্যাদির পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারলৌকিক বিষয়ের চেয়ে ইহলৌকিক নানান বিষয় কাজ করে। নাস্তিকতা বিষয়টি তো বাংলাদেশে নতুন নয় কিন্তু এভাবে চাপাতি সহ হামলা তুলনামূলক নতুন। কি এমন ঘটলো যে কিছু লোক ব্লগারদের উপর চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে? মাদ্রাসা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধর্মপ্রাণ কিশোর বা তরুণটি হামলা করছে, সে হয়তো ধর্ম রক্ষা করছে ভেবেই হামলাটি করছে, কিন্তু যারা তার ভেতরে থাকা ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাকে উসকে দিচ্ছে, চাপাতি সর্বরাহ করছে, ভিকটিমের নাম ঠিকানা ছবি হাতে ধরিয়ে হামলায় উদ্বুদ্ধ করছে- তারা স্রেফ ধর্মরক্ষার জন্য করছে এরকম আমার মনে হয় না। এর পেছনে ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর একেবারেই ইহজাগতিক স্বার্থসিদ্ধির বিভিন্ন কার্যকারণ থাকতে পারে।কিন্তু মূল হোতারা চিহ্নিত না হলে আসলে এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত কিছু বলা মুশকিল।
>> জঙ্গিবাদের উত্থানে সরকারের মুখের কথা আর কাজের মধ্যে কন্ট্রাডিকশান স্পষ্ট।মুখে জঙ্গিবাদ দমণের কথা বললেও এবং জঙ্গিবাদ বিরোধীতার কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা লূটলেও- প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানান উপায়ে নিজেরাই ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার করে, বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করে- যা ধর্মীয় জঙ্গিবাদ উত্থান ও লালন পালনের বাস্তব পরিসর তৈরী করে।
পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে নারীদের ওপর সংঘবদ্ধ যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে চার-পাঁচ জন যুবকের দুষ্টামির ছলে ঘটা ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এ ঘটনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা লিটন নন্দী ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। আজই দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ জাতীয় মন্তব্য করেন। আইজিপি বলেছেন, ‘বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে হাজার হাজার মানুষ ছিল। তাদের মাধ্যে মাত্র চার-পাঁচ জন যুবক ওরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সময় জনগণ কী করেছে? একজনও কেন তাদের ধরতে পারল না। জনগণেরও তো ক্ষমতা রয়েছে। দুষ্টামির ছলে চার-পাঁচ জন যুবক কী করেছে তা জনগণই প্রতিহত করতে পারত। এ ঘটনা নিয়ে লিটন নন্দী বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। এসব তথ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে আল-কায়েদা প্রসঙ্গে তিনি বলেনে, ‘বাংলাদেশে আল-কায়েদার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশের কোনো সংগঠন তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ একের পর এক ব্লগার হত্যা প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, কিছু ব্যক্তি ব্লগারদের হত্যার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে। কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না। ফলে হত্যাকাণ্ডের পর তাদের গ্রেফতারে নতুন করে কৌশলী হতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
কি হবে এখন? দেশে কি তবে তুমুল অরাজকতা আসন্ন? নাকি এই আওয়ামী লীগ সরকার এবারও সব বিতর্ক সামলে উঠতে পারবে? সকাল থেকেই প্রশ্নগুলো ঘোরপাক খাচ্ছে মনে। অনুভব করছি - এই মুহুর্তে আরো অনেকের মাথায় একই চিন্তা দৌড়াচ্ছে। মূলত বিভিন্ন সংবাদপত্রের অন্তর্জালিক সংস্করণে ঘুরতে ঘুরতেই আমার এ ভাবনা, অনুভবের উদ্রেক। কারণটা ব্যাখার চেয়ে আজকের (পহেলা মে, ২০১৫) কিছু সংবাদ ভাষ্য উপস্থাপনই বোধকরি শ্রেয়।
একটি অনলাইনের সংবাদে জানানো হয়েছে - খোদ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না।’ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আরেকটি প্রভাবশালী দৈনিকের সংবাদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমিশনের অধীনে থাকলেও এই বাহিনীর ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’ এর আগের দিনের আরেকটি খবরও এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। ওই সংবাদে জানানো হয়, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের ভাতা নিয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আনসারের কয়েক সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার বিকেলে মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’ দৃশ্যত বোঝাই যাচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেই চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নগর নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের জেতানোর লক্ষ্যে প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দল যে ভোটসন্ত্রাস চালিয়েছে, তা নিয়ে ওঠা সহস্র প্রশ্নের জবাব সহসাই পাওয়া যাবে না হয়ত। তবে এই ঘটনার পর থেকে দেশের পরিস্থিতি এখন থমথমে বললেও বোধকরি ভুল হবে না। আগে থেকেই বিদ্যমান ভূমিকম্পাতঙ্কের সাথে এ নব্য রাজনৈতিক অস্বস্তি মিলে - যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, তাতে জনগণের হাঁপিয়ে উঠতে আর বেশী সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে না। এটাকে আমার পর্যবেক্ষণ নয়, বিশ্বাস ভাবুন। জনমনে এমন কত বিশ্বাসই না খেলা করে। অতএব - গুরুত্বপূর্ণদের এসবে কান দেয়া মানেই সময় নষ্ট করা।
শুধু বাংলাদেশ নয়, আজ ভূমিকম্পাতঙ্কে কাঁপছে পুরো দক্ষিণ এশিয়া। বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় দ্রুতই বদলাতে শুরু করেছে মানুষের সমকালীন মনস্তত্ত্ব। পর পর দু’দিনের ভূকম্পনে শুধু ভবন নয়, ফাঁটল ধরেছে অনেক চিন্তা, দ্বন্দ্ব ও বিশ্বাসে। কিন্তু এ দূর্যোগ আমাদের দেশের প্রধান দুই নেত্রীর বৈরীতায় কোনো ফাঁটল ধরাতে পারেনি। ভূমিকম্পের দ্বিতীয় দিনে (২৬ এপ্রিল) পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বতর্মান প্রধানপন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু সেদিনও তারা কোনো সৌহার্দের গান শোনাতে পারেননি? বরং আগের মতোই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, পরস্পরের প্রতি বিষোদগারে ফের গরম করলেন ঢাকাই মিডিয়া।
সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বলে লাভ নেই। তাদের কানে কিছুই পৌঁছাবে না। বাংলার বুড়োরাও আমার এ কথায় কান দিয়েন না। শুধু হে তরুণ, আপনি শুনুন। একটু ভাবুন। অন্তত এটুকু যে - এই দেশটা কার? কারা চালাচ্ছে? আর আপনি এ দেশের কে? উত্তর পেয়ে গেলে ভালো - না পেলেও জানবেন, একদিন আপনিও ভাববেন - এ বাংলা জাগবেই জাগবে।
জাগো বঙ্গ।
প্রধান
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন
হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না।
তাই ষাটভাগ জেলায় আমরা কোর্ট বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারছি না। প্রশাসনকে বলব
আপনারা আমাদেরকে সহায়তা করুন।
তিনি বলেন, প্রশাসনের কারণে আমরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার বিচারকদের বসতে জায়গা দিতে পারছি না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি
এসব কথা বলেন। - See more at:
http://tazakhobor.org/bangla/law-court/45516-2015-04-30-20-28-17#sthash.d3aFpVGR.dpuf
প্রধান
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন
হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না।
তাই ষাটভাগ জেলায় আমরা কোর্ট বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারছি না। প্রশাসনকে বলব
আপনারা আমাদেরকে সহায়তা করুন।
তিনি বলেন, প্রশাসনের কারণে আমরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার বিচারকদের বসতে জায়গা দিতে পারছি না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি
এসব কথা বলেন। - See more at:
http://tazakhobor.org/bangla/law-court/45516-2015-04-30-20-28-17#sthash.d3aFpVGR.dpuf
ধানমণ্ডির সিটি কলেজ সেন্টারে
ভোট দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নগর ভোটের অর্জন কারচুপি আর বর্জন
- সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ওই দুই লাইনের বেশী লেখার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। তবুও হঠাৎ মনে হলো এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনামগুলো অন্তত লিপিবদ্ধ হয়ে থাক।
এই নির্বাচন পরবর্তী ভাবনায় প্রকাশিতব্য গাধার গয়না সিরিজেও এক নয়া পদ্য সংযোজিত হয়েছে। পাঠকদের ভালো লাগুক বা না লাগুক, উল্লেখ করছি লেখাটি।
টের পাই ষড়যন্ত্র -
বা বিদেশী ধনতন্ত্র
চামে টেপে তোর বুক
আমরাও উজবুক
খুব লাফাই হুদাই সব দামাল সন্তান নাকি আদতে ভোদাই কে ভাবে কী জানি -তবে ভয় পাসনে মামণি জানিস’তো এটা রাজনীতি এমনই মা বিক্রির কারবার গণতন্ত্র - স্বৈরাচার
জাল ভোট দেয়ার ছবি তুলতে বাঁধা দিচ্ছেন ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরা
পরিশিষ্ট
বিবিসি -এর বাংলা সংস্করণে নির্বাচন সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম ‘নতুন অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের রাজনীতি?’ -প্রতিবেদনটিতে তারা লিখেছে - “গত বছর ৫ই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন বয়কট এবং এ বছর টানা কয়েক মাস ধরে
সহিংস আন্দোলনে ক্ষান্ত দিয়ে বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়। অনেকেই মনে করছিলেন যে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হয়তো রাজনৈতিক অচলাবস্থার বরফ গলার একটা সুযোগ তৈরি হলো। কিন্তু আজ বিরোধীদের ভোট বয়কটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি যে নতুন একটি অনিশ্চয়তায় পড়লো এনিয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই।”