Powered By Blogger
রাজনৈতিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রাজনৈতিক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শেখের বেটির জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

ছবি: সংগ্রহিত
মা–বাবার কাছে না থাকায় যাঁর প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল, স্বজন হারিয়েও যিনি অর্ধযুগ দেশে ফিরতে পারেননি, যাঁকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা হয়েছে—সেই হতভাগা নারী আর কেউ নন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ৭২ পেরুনো এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আলাপকালে দেশের প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বলেছিলেন, “খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য থেকে তাঁর উত্থান। সহজাত ব্যক্তিত্ব আর নেতৃত্বের গুনেই নিজেকে তিনি আজকের উচ্চতায় নিয়ে আসতে পেরেছেন।” 
চার মেয়াদে দেড় দশকের বেশী সময় ধরে ক্ষমতাসীন এই মানুষটির পরিবারের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস। তাঁর পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই এসেছে স্বাধীনতা । সাংবিধানিকভাবে তাঁকে ‘জাতির জনক’ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান আন্দোলনেরও অন্যতম নেতা ছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু’ আখ্যা পাওয়া উপমহাদেশের এই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। দেশের মূলধারার রাজনীতিতে তাঁর জেষ্ঠ্য কন্যা হাসিনার পদার্পণও মূলত ‘শেখের বেটি’ হিসেবেই।   
বঙ্গবন্ধুর সাখে শেখ হাসিনা
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, “রাজনীতিতে আসার প্রথম কয়েক বছরের জন্য শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দেওয়ার দরকার নেই। সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু’ ম্যাজিক কাজ করেছে। পিতা ও পরিবার হারানোর বেশ কয়েকবছর পর তিনি যখন আওয়ামী লীগ প্রধান হয়ে দেশে আসলেন, তখন ‘বঙ্গবন্ধু-কন্যা’ হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে অনেক সুবিধা পেয়েছেন।” আরেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অরুন কুমার গোস্বামী বলেন, “যদিও আওয়ামী বিরোধীরা বলে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জনগণ রাজপথে নামেনি। এটা দালিলিকভাবে সত্য হলেও ‘ফ্যাক্ট’ (প্রকৃত সত্য) হচ্ছে, মানুষ তখন সামরিক বাহিনীর হাতে প্রাণ হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। এতে আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের সহানুভুতি বেড়েছে।” 

ড. শান্তনু বলেন, “স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে তাঁর (শেখ হাসিনা) স্বতন্ত্র রাজনৈতিক গুনাবলী বিকশিতে হতে শুরু করে। সেই থেকে তাঁর গত তিন দশকের রাজনৈতিক জীবন যদি আমরা দেখি, তা খুবই সমৃদ্ধ।” ড. অরুনের দাবি, “তিনি রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের আজকের অবস্থানে পৌঁছানোর একটি ইতিবাচক সংযোগ রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়েছে। বিষ্ময়কর অগ্রগতি দেখে আন্তর্জাতিক মহলও অবাক। সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন ‘টেকসই’ উন্নয়নের রোল মডেল। প্রতিটি সূচকে এগিয়েছি আমরা।” 

অরুন আরো বলেন, “শেখ হাসিনা যেভাবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছেন, তা এর আগে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান করেননি। তিনি জাতীয় মাইলফলকগুলো সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ ২০২১, ২০৪১, ২১০০ ও ২১২১ এগুলো পেরুবে।”  ড. আতাউরও মনে করেন, হাসিনা যেভাবে শক্ত হাতে দেশকে ‘টেকসই’ উন্নয়নের দিকে পরিচালনা করেছেন, তা আর কখনো হয়নি। তিনি অনেক বেশী সক্ষমতা ও দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। “দেশের ইতিহাসে তিনি রাজনৈতিক নেতার চেয়ে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেই বেশী উজ্জল হয়ে থাকবেন,” বলেন এই বিশ্লেষক। এ ব্যাপারে ড. শান্তনুর বক্তব্য, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি যে ‘রকেট’ গতিতে এগিয়েছে, তাঁর দলের ভোট কিন্তু একই গতিতে বাড়েনি।” 

৭৩ তম জন্মদিনের প্রাক্কালে (২৬ সেপ্টেম্বর)  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ ঘোষণা করে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল (ইউনিসেফ)। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এই সম্মাননা অর্জনের মাত্র দুই দিন আগে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অপর এক অনুষ্ঠানে তাঁকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ আখ্যা দেয় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। এই সম্মাননাটি শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিতে সাফল্যের স্বীকৃতি। 
এর আগে গত  বছর এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। নেতা ক্যাটাগরিতে তালিকায় জায়গা পাওয়া ২৭ জনের মধ্য তিনি ছিলেন ২১ নম্বরে। ফোর্বস, সিএনএন, ফরচুনসহ একাধিক গণমাধ্যমের জরিপে বিশ্ব, এশিয়া এবং মুসলিম জাহানের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায়ও ছিলেন তিনি। 
ছবি: সংগ্রহিত
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সর্বাধিককাল দায়িত্ব-পালনকারী হাসিনাকে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। বিভিন্ন সময়ে তাঁর প্রসঙ্গে আলাপ হয়েছে নানাজনের সাথে, মূলত সাংবাদিকতার সুবাদে। যার কিছু প্রকাশিত হয়েছে, কিছুটা হয়নি। নিজের মত প্রকাশের সুযোগ না থাকায় কোথাও বলতে পরিনি, তিনি বাংলার আদ্যাশক্তিরই প্রতিরূপ। প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনেই আজ এই লেখার অবতারণা। 

পথটা সহজ ছিল না : শেখ হাসিনার এই সাফল্য একদিনে অর্জিত হয়নি। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারও আগে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রসংসদের প্রথমে সহসভাপতি, পরে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। 
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানীতে অবস্থান করায় বেঁচে যান।পরিবারের সদস্যদের শেষকৃত্যে করার অনুমতিও সে সময়কার সরকার তাঁদের দেয়নি। পরের ছয় বছর ভারতে ছিলেন তাঁরা। নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে তাঁর অনুপস্থিতিতেই সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের পর ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থে‌কে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মোট সাতবার তাঁকে গৃহবন্দী ক‌রে রাখে শাসকগোষ্ঠী। সর্বশেষ ২০০৭ সালে সেনা‌সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও তাঁকে সাবজেলে থাকতে হয়। 
ছবি: সংগ্রহিত
এর আগে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের সময় তাঁকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে একইদিনে দুবার তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়। ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালেও তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুতে রাখা হয়েছিল। ২০০১ সালেও তাঁকে দুইবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (বর্তমানে বিলুপ্ত) শীর্ষনেতা মুফতি হান্নান। 

শেখ হাসিনার ৩৬ বছরের (১৯৮১-২০১৭) রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাসের সংকলন “জননেত্রীর জয়যাত্রা” সম্পাদনাকারী আসিফ কবীর বলেন, “পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের মানসিক আঘাতের পাশাপাশি স্বজন হারানোর সুতীব্র বেদনা ও বিচারহীনতার সংক্ষুব্ধতা- এই তিন নিদারুণ চাপ সয়েই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। সামরিক ও ছায়া সামরিক শাসকরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের জন্য নানা চক্রান্ত, কূটকৌশল ও নিষ্পেষণ চালিয়েছে। তা সত্ত্বেও জননেত্রীর (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে তারা বারবার পুর্নগঠিত ও পুনরুজ্জীবিত হয়ে অগ্রসর হয়েছেন। প্রধানের দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস এবং অপরিসীম সাহসের কারণেই দলটি এত বছরেও অতীত হয়নি।” 
শেখ হাসিনার ওপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট।গত বছরের অক্টোবরে এ সংক্রান্ত মামলার রায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। ফাঁসির আদেশ হয়েছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ আরো ১৯ জনের। 
২১ আগস্টের হামলার পর
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে সবচেয়ে নিন্দনীয়, নৃশংস ও নারকীয় ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী প্রেস সচিব আসিফ বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করায় রাষ্টধীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এমন ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ইতিহাসে বিরল। তবুও পিছপা হয়নি শেখ হাসিনা বা তাঁর দল। খুব কাছ থেকেই তাঁকে দেখছি শাসনব্যবস্থার সংস্কার, জনগণকে যুপোপযোগী সুরক্ষা দান এবং নগর থেকে প্রান্তিক পর্যায় অবধি উন্নয়নের কাজে নিবেদিন থাকতে।তাঁর নেতৃত্বে দেশের অবকাঠামো খাতে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে তা অচিরেই সম্পন্ন হয়ে জনগণের দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ হবে।” 

বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর অভিযোগ, তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসিত করেছেন। একইসঙ্গে স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মান্ধগোষ্ঠীকে রাজনীতিতে আসার সুযোগ করে দিয়ে গেছেন। বিএনপিকে নিয়ে গড়া রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে হারিয়েই তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এটিকে ‘নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির’ নির্বাচন দাবি করা ওই দলটি ক্ষমতায় থাকাকালীন হাসিনা দুই দফায় মোট ১০ বছর সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্বও পালন করেছেন। এর আগে বিএনপির বয়কটে ‘বিতর্কিত’ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয় অর্জনের পর হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। বিএনপিকে হারিয়েই তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ও ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার এই দায়িত্বগ্রহণ করেছিলেন।  

আসিফ বলেন, “রাজপথের দল থেকে সংসদের বিরোধী বা সরকারি দল, সব ভূমিকাতে আওয়ামী লীগের সাফল্যের কারিগর ছিলেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা।” বিগত কয়েক বছরে দলীয় ফোরামে বেশ কয়েকবার শেখ হসিনা নিজেই অবসরে যাওয়ার বিষয়টি তুলেছেন। প্রতিবারই দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সমস্বরে জানিয়েছে, তাঁকে আমৃত্যু দলের প্রধান হিসেবে চায় তারা। ড. আতাউর বলেন, “শেখ হাসিনা খুবই বাস্তববাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। যে কারণে অনেক কঠিন সময় পার করেও তিনি নিজেকে, নিজের দলকে এবং বাংলাদেশকে একটা ভালো অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছেন।”
ড. শান্তনু  বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার কোনো বড় রাজনৈতিক দলে শেখ হাসিনার মতো এত লম্বা সময় ধরে কেউ নেতৃত্বে নেই। তাঁর কারণেই আওয়ামী লীগ আজ শুধু দেশ নয়, পুরো উপ-মহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। যখন ভারতের কংগ্রেস, পাকিস্তানের মুসলিম লীগসহ শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপের পুরানো দলগুলোও ক্রমে দুর্বল হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের এই দলটি ক্রমে আরো সামর্থ্যবান হচ্ছে। এটা নিশ্চিত যে তিনি (হাসিনা) না থাকলে আওয়ামী লীগ এখন যেরকম অবস্থায় আছে, সেটা থাকত না।” 
শান্তনু আরো বলেন, “তাঁর রাজনীতি কতটা গণতান্ত্রিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। তবে দক্ষিণ-এশিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতির জায়গা থেকে যদি দেখলে বলতে হয়, এটা এমনই হওয়ার কথা।  বাংলাদেশে উদারনৈতিক গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মতো সংগঠন যে এতদিন ধরে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, এটা শেখ হাসিনার বড় একটি কৃতিত্ব। দলকে তিনি ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছেন। কখনো শক্ত হাতে, আবার কখনো প্রজ্ঞার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামলেছেন।”

ছবি: সংগ্রহিত
শাসনে সাফল্য-ব্যর্থতা :  বিশ্লেষকদের মতে, বিগত দশকে শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশী সফল কূটনীতিতে। আগের সরকারের কারণে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সাথে যে দুরত্ব তৈরী হয়েছিল, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরই তিনি তা ঘুচিয়ে ফেলেন।  তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই তিনি চীনের সাথেও সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে পেরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অনেক ক্ষেত্রে তাঁর বিরোধীতা করলেও তিনি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হননি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু বলেন, “কূটনৈতিক দিক থেকে শেখ হাসিনা বৈশ্বিক পরিস্থিতি দ্বারা আশীর্বাদপুষ্ট। তিনি দ্বিতীয়বার এমন একটা সময়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, যখন আন্তর্জাতিক কতগুলো পরিস্থিতি, বিশেষকরে উগ্রপন্থী সহিসংতার কারণে সারাবিশ্বই উদ্বিগ্ন। এনিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সাথে রাশিয়া, চীনেরও কোনো বিরোধ নেই; বরং তারা সবাই একাট্টা। এই ইস্যুতে বৃহৎ প্রতিবেশী (ভারত) এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘গুড বুকে’ জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। উগ্র জঙ্গিবাদ দমনের ভূমিকাই তাঁকে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছে। এটা তাঁর অন্যতম শক্তি।” আন্তর্জাতিকমহলে প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির নাজুক অবস্থানও আওয়ামী লীগকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

ছবি: সংগ্রহিত
ড. আতাউর বলেন, “শেখ হাসিনা খুবই দক্ষতার সাথে সব সামলে নিয়েছেন। তাঁর শাসনামলের দুইটি দিক আছে, একটা রাজনৈতিক এবং অন্যটা অর্থনৈতিক। অর্থনৈতিক দিকে তিনি ভালো করেছেন, এটা মোটামুটি সব মহলই স্বীকার করছে। বৈষম্য, দুর্নীতি, অর্থপাচার বেড়েছে, তবুও অগ্রগতি হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শেখ হাসিনার একটি বড় অর্জন। তবে রাজনৈতিক দিক থেকে তাঁর কিছু নেতিবাচক অর্জনও আছে।” ২০১৪ সা‌লের ‌নির্বাচ‌নের আগে ও প‌রে বি‌রোধী দলীয় নেতাকর্মীরা গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা‌ণ্ডের শিকার হ‌য়ে‌ছেন ব‌লে অভি‌যোগ আছে। তার শাসনামলে প্রায় সাড়ে পাঁচশ গুমের ঘটনা ঘটেছে। সেইসঙ্গে ঘটেছে কয়েক হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা। 

শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘খুব বেশী’ কথা বলাও ‘ঝূঁকিপূর্ণ’ বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন। তাঁর ভাষ্য, “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি ‘জিরো-টলারেন্সের’ কথা বলেছিলেন, তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এটা ছিল। কিন্তু গত ১০ বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তো কমেইনি, বরং এর সাথে যুক্ত হয়েছে গুম। মানুষ আগেও ‘গুম’ হয়েছে, কিন্তু এটা মাত্রাতিরিক্ত ঘটেছে এই সময়টায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মি-সমর্থক নেতা থেকে শুরু করে সাবেক রাষ্ট্রদূত, এমনকি সেনাকর্মকর্তারাও গুম হয়েছেন। এই যে বর্বরতা, এটা বাঁধাহীন ভাবে নির্বিচারে চলেছে। এটা সরকারের বিরোধী মতের ওপর দমন পীড়নেরই বহিঃপ্রকাশ বলে আমি মনে করি।” 

ছবি: সংগ্রহিত
গত বছর সরকা‌রি চাক‌রি‌তে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়‌কের দা‌বি‌তে স্কুল ক‌লেজ শিক্ষার্থী‌দের আন্দোলনও ক‌ঠোরভা‌বে দমন করার অভি‌যোগ আছে শেখ হাসিনার বিরু‌দ্ধে।  বিত‌র্কিত ধারা বহাল রে‌খে ডি‌জিটাল নিরাপত্তা আইন পাস ক‌রে মত প্রকা‌শের অধিকার ক্ষুণ্ন করার দায়ও বর্তা‌নো হয় তাঁর ওপর। এ ব্যাপারে লিটন বলেন, “তুমুল প্রতিবাদের পরও বাকস্বাধীনতা হরণকারী আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাকে আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরো শক্তভাবে প্রতিস্থাপিত হতে দেখলাম। এসব আইনে অনেক ক্ষেত্রে জামিনের অধিকারও দেওয়া হয়নি।মত প্রকাশের দায়ে ইতিমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক, আলোকচিত্রী, নারী অধিকার কর্মি, সমাজকর্মি, ছাত্রসহ অসংখ্য মানুষকে কারাবরণ করতে দেখেছি।” 
ড. শান্তনু বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেখছে একদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, বাক-স্বাধীনতাহরনকারী আইন জারির অভিযোগ রয়েছে; অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের ঝূঁকি অসাধারণভাবে কমে গিয়েছে। যে কারণে অভ্যন্তরীন কোনো ইস্যুতে তারা শেখ হাসিনার সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, বাক-স্বাধীনতাহরন আমাদের শাসনব্যবস্থার অংশ হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে বড় অভিযোগগুলো, সেগুলোও অনেকখানি ‘ব্লার’ (অস্পষ্ট) করে দিতে পেরেছে।” 
যদিও লিটনের দাবি, “রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান অবশ্যই মানবিক। তবে তা দিয়ে আভ্যন্তরীন মানবাধিকার লংঘনকে ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা (মানবাধিকার কর্মিরা) দীর্ঘদিন ধরেই একটি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছি। যে কমিশন ২০০৪ সালের পর থেকে এখন যত বিচার বহির্ভূত হত্যা বা গুম হয়েছে তা তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করবে, বিচারের আওতায় আনবে। আওয়ামী লীগ সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অর্থাৎ এই ইস্যুতে শেখ হাসিনার নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।” 

নানা ‘বিতর্ক’ থাকলেও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অরুন বলেন,  এক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা সফল হয়েছেন। বিরোধীরা সবসময় তাঁকে ‘স্বৈরাচারী’ বললেও তিনি তাদের সাথে সংলাপ করেছেন। রাজনৈতিক কৌশলে পরাভূত হয়ে সব রাজনৈতিক দলই এবার তাঁর সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অনাস্থা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল, তারই জেরে দীর্ঘদিন এদেশে দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে কোনো নির্বাচন হয়নি।”
অরুন আরো বলেন, “মূলত সামরিক শাসন বারবার এই আস্থা-বিশ্বাসের মূলে আঘাত হেনেছে। শেখ হাসিনা এই নির্বাচন সফলভাবে সামলিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সেই আস্থা-বিশ্বাস ফিরিয়ে এনে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তাঁর এই ভূমিকা ‘স্বর্ণাক্ষরে’ লেখা থাকবে।” 
তবে “শেখ হাসিনার ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতা আছে,” উল্লেখ করে ড. শান্তনু বলেন, “কিছুদিন আগে আমরা দেখতে পেয়েছি তিনি ‘কওমী জননী’ উপাধিও পেয়েছেন। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁর দলটি ধর্মনিরপেক্ষ।” এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি আতাউরের অভিমত, “অনেক সময় তাঁকে (হাসিনা) আপোষও করতে হয়েছে। যেমন – ইসলামিক দলগুলোর সাথে আওয়ামী লীগের দূরত্ব ঘোচাতে নমণীয় হয়ে তিনি রাজনৈতিক দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন।” 
দেশের ডানপন্থী রাজনীতির মূলশক্তি হিসেবে বিএনপির শক্তিশালী খর্ব হওয়ায় সৌদিআরবসহ মুসলিম বিশ্বের ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে বিএনপি একচেটিয়া অবস্থান টলে গেছে বলে দাবি করেছেন অনেক বিশ্লেষক। তাদের মতে, মুসলিম দেশগুলোর কাছে শেখ হাসিনাও এখন গ্রহনযোগ্য একটি নাম। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দেওয়াটা তাঁর জন্য খুবই ইতিবাচক হয়েছে। 
ছবি: সংগ্রহিত
২০১৭ সালে রো‌হিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর ব্রিটেনভিত্তিক গণমাধ্যম চ্যানেল ফোরের একটি প্রতিবেদনে তাঁকে ‘মাদার অফ হিউম্যা‌নি‌টি’ আখ্যায়িত করা হয়। এর আগে তাঁর শাসনামলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সুদীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসান হয়েছিল।  শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং পরিবেশ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হাসিনাকে বিভিন্ন সম্মানসূচত ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করেছে। 

ব্যক্তিগত জীবন ও স্বজন :  ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মানো শেখ হাসিনার পরিবারের সাথে ১৯৫৪ সালে প্রথম ঢাকায় আসেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ানরত অবস্থায় তাঁর বিয়ে হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার সাথে। তিনি ২০০৯ সালের ৯ মে ইন্তেকাল করেন। এই দম্পত্ত্বির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। 

ছোট বোন শেখ রেহানাকে আদর করছেন শেখ হাসিনা
ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ একজন তথ্য প্রযুক্তিবিদ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টাও। মেয়ে সায়মা হোসেন ওয়াজেদ একজন মনোবিজ্ঞানী এবং তিনি অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন।  সাধারণত অবসর পান না শেখ হা‌সিনা, পে‌লেই রান্না ক‌রেন, বই প‌ড়েন। এছাড়া তিনি তাঁর সাত না‌তি-নাত‌নি‌র স‌ঙ্গে সময় কাটা‌তে ভালবা‌সেন তি‌নি। গত বছরের নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া তথ্যচিত্র ‘হাসিনা: এ ডটার্স টেল’ –এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। 
চলতি মাসে নিজ দলের নেতাদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষ এবং দেশের সূবর্ণ জয়ন্তীতেও ক্ষমতায় থাকছে তাঁর দল। তবে  “তিনি লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকা শুধু তাঁর দল নয়, সমগ্র জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” বলছিলেন ড. শান্তনু।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) এই নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, “দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগে অনেক আবর্জনা যুক্ত হয়েছে। সরকারি দল হিসেবে তাদের এখন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে আগামীতে তাদের নাম করে কেউ অপরাধ করার সাহস না পায়।”  নাগরিক সংগঠন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন,  “চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে শেখ হাসিনা যে অপূর্ব সুযোগ পেয়েছেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে এরকম সুযোগ খুব কম মানুষ পেয়েছে। আশা করি, তিনি এটার সদ্বব্যবহার করবেন।”

০২ এপ্রিল ২০১৯

ভোটযুদ্ধে গণধর্ষণ, দায় কার?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানকারী নারীদের একাংশ। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮।
দুনিয়ার কোথাও কি এমন কোনো সশস্ত্র যুদ্ধ হয়েছে, যেখানে নারীরা ‘সামরিক’ গণধর্ষণের শিকার হয়নি? সমরাক্রান্ত জনপদে এটাই নারীদের নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে দুনিয়া। আর ‘ভোটযুদ্ধে’ এই পুরুষতান্ত্রিক বর্বরতার বেসামরিক প্রয়োগ মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। যাকে নির্বাচনী বা রাজনৈতিক গণধর্ষণ বলা যেতে পারে। 
এর জন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দায়ী করা হলে তা কিভাবে এড়াবে দলগুলো? আবার কেউ যদি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সামর্থ্য নিয়ে তোলে, তারাই বা কি বলবে?
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার বিরোধীদের ভোট দেওয়ার দায়ে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চল্লিশোর্ধ গৃহবধুকে গণধর্ষণের ঘটনার পর আলাপ হচ্ছিল বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) এই নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরের সাথে।
“সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী নির্যাতনকারীদের বয়কট করতে হবে,” উল্লেখ করে নারী অধিকার আন্দোলনের এই নেত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগে এ জাতীয় অনেক আবর্জনা যুক্ত হয়েছে।” 
ওই ঘটনার হোতা দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিস্কার করে তাঁর দল। চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্য বাগ্যা গ্রামের ধর্ষিতা ছিলেন চার সন্তানের জননী। ঠিক তিন মাস পর ইউনিয়নে উত্তর বাগ্যা গ্রামে একই ঘটনার পুনুরাবৃত্তি। 
নির্বাচনী দ্বন্দ্বের জেরে সেই রুহুলের কলা বাগানে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয় পয়ত্রিশোর্ধ্ব এক গৃহবধুকে, যে ছয় সন্তানের জননী। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদের এক প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় জেরে রোববার (৩১ মার্চ) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে দাবি করে নির্যাতিতা নারী ও তাঁর স্বামী জানান, বাড়ি ফেরার পথে গতিরোধ করে প্রথমে স্বামীকে মারধর করে বেঁধে ফেলে ধর্ষকরা। 
ওই দিনের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। অথচ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর ভোলায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পূর্ণিমা শীলকে নিজের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন এই দলেরই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
প্রসঙ্গত, “বাংলাদেশে সংঘবদ্ধ, দলগত বা গণধর্ষণের ৩০ শতাংশই ঘটে প্রতিহিংসাবশত,” ২০১৩ সালের এক গবেষণার বরাত দিয়ে এমনটাই বলছে উইকিপিডিয়া বলছে। 
ইতিমধ্যে এ ঘটনায় চরজব্বর থানায় মামলা হয়েছে দুই জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। এর আগের ঘটনায়ও গণধর্ষণের নির্দেশদাতা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ পাঁচ অভিযুক্তকে নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার আগেই গ্রেপ্তার করেছিল তারা। তখন ‘পুলিশের এই জোড় তৎপরতা প্রসংশনীয়’ উল্লেখ করে রোকেয়া কবির বলেছিলেন, “সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে এখন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে আগামীতে তাদের নাম করে কেউ নারী নির্যাতন করার সাহস না পায়।” 
তাঁর অভিমত, “শুধু আগামীদের গ্রেপ্তারের করলেই হবে না, আক্রান্ত পরিবারটি যাতে সুরক্ষা পায় এবং তাদের যাতে পুনরায় আক্রান্ত হতে না হয়, সেদিকেও পুলিশকে খেয়াল রাখতে হবে।” তাছাড়া “আক্রান্ত পরিবারকে ‘ভ্রকুটি মুক্ত’ রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সক্রিয় থাকতে হবে,” বলেও উল্লেখ করেন বিএনপিএস নির্বাহী পরিচালক। 
সুবর্ণচরের প্রথম গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতনর দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এই মামলার প্রধান আসামি রুহুলকে দেওয়া জামিন বাতিল করে হাইকোর্ট। এরই মধ্যে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। 

চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ জানিয়েছে, গত বছর ৯৪ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩২ জন নারী।

০১ মে ২০১৫

বাংলা জাগবেই জাগবে...

কি হবে এখন? দেশে কি তবে তুমুল অরাজকতা আসন্ন? নাকি এই আওয়ামী লীগ সরকার এবারও সব বিতর্ক সামলে উঠতে পারবে? সকাল থেকেই প্রশ্নগুলো ঘোরপাক খাচ্ছে মনে। অনুভব করছি - এই মুহুর্তে আরো অনেকের মাথায় একই চিন্তা দৌড়াচ্ছে। মূলত বিভিন্ন সংবাদপত্রের অন্তর্জালিক সংস্করণে ঘুরতে ঘুরতেই আমার এ ভাবনা, অনুভবের উদ্রেক। কারণটা ব্যাখার চেয়ে আজকের (পহেলা মে, ২০১৫) কিছু সংবাদ ভাষ্য উপস্থাপনই বোধকরি শ্রেয়।

একটি অনলাইনের সংবাদে জানানো হয়েছে - খোদ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না।’ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আরেকটি প্রভাবশালী দৈনিকের সংবাদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমিশনের অধীনে থাকলেও এই বাহিনীর ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’ এর আগের দিনের আরেকটি খবরও এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। ওই সংবাদে জানানো হয়, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের ভাতা নিয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আনসারের কয়েক সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার বিকেলে মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’ দৃশ্যত বোঝাই যাচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেই চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

নগর নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের জেতানোর লক্ষ্যে প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দল যে ভোটসন্ত্রাস চালিয়েছে, তা নিয়ে ওঠা সহস্র প্রশ্নের জবাব সহসাই পাওয়া যাবে না হয়ত। তবে এই ঘটনার পর থেকে দেশের পরিস্থিতি এখন থমথমে বললেও বোধকরি ভুল হবে না। আগে থেকেই বিদ্যমান ভূমিকম্পাতঙ্কের সাথে এ নব্য রাজনৈতিক অস্বস্তি মিলে - যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, তাতে জনগণের হাঁপিয়ে উঠতে আর বেশী সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে না। এটাকে আমার পর্যবেক্ষণ নয়, বিশ্বাস ভাবুন। জনমনে এমন কত বিশ্বাসই না খেলা করে। অতএব - গুরুত্বপূর্ণদের এসবে কান দেয়া মানেই সময় নষ্ট করা।
শুধু বাংলাদেশ নয়, আজ ভূমিকম্পাতঙ্কে কাঁপছে পুরো দক্ষিণ এশিয়া। বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় দ্রুতই বদলাতে শুরু করেছে মানুষের সমকালীন মনস্তত্ত্ব। পর পর দু’দিনের ভূকম্পনে শুধু ভবন নয়, ফাঁটল ধরেছে অনেক চিন্তা, দ্বন্দ্ব ও বিশ্বাসে। কিন্তু এ দূর্যোগ আমাদের দেশের প্রধান দুই নেত্রীর বৈরীতায় কোনো ফাঁটল ধরাতে পারেনি। ভূমিকম্পের দ্বিতীয় দিনে (২৬ এপ্রিল) পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বতর্মান প্রধানপন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু সেদিনও তারা কোনো সৌহার্দের গান শোনাতে পারেননি? বরং আগের মতোই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, পরস্পরের প্রতি বিষোদগারে ফের গরম করলেন ঢাকাই মিডিয়া।
সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বলে লাভ নেই। তাদের কানে কিছুই পৌঁছাবে না। বাংলার বুড়োরাও আমার এ কথায় কান দিয়েন না। শুধু হে তরুণ, আপনি শুনুন। একটু ভাবুন। অন্তত এটুকু যে - এই দেশটা কার? কারা চালাচ্ছে? আর আপনি এ দেশের কে? উত্তর পেয়ে গেলে ভালো - না পেলেও জানবেন, একদিন আপনিও ভাববেন - এ বাংলা জাগবেই জাগবে।

জাগো বঙ্গ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না। তাই ষাটভাগ জেলায় আমরা কোর্ট বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারছি না। প্রশাসনকে বলব আপনারা আমাদেরকে সহায়তা করুন।
তিনি বলেন, প্রশাসনের কারণে আমরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার বিচারকদের বসতে জায়গা দিতে পারছি না।
<a href='http://new.tazakhobor.org/www/delivery/ck.php?n=a0ddadec&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE' target='_blank'><img src='http://new.tazakhobor.org/www/delivery/avw.php?zoneid=9&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&n=a0ddadec' border='0' alt='' /></a>
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। - See more at: http://tazakhobor.org/bangla/law-court/45516-2015-04-30-20-28-17#sthash.d3aFpVGR.dpuf
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না। তাই ষাটভাগ জেলায় আমরা কোর্ট বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারছি না। প্রশাসনকে বলব আপনারা আমাদেরকে সহায়তা করুন।
তিনি বলেন, প্রশাসনের কারণে আমরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার বিচারকদের বসতে জায়গা দিতে পারছি না।
<a href='http://new.tazakhobor.org/www/delivery/ck.php?n=a0ddadec&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE' target='_blank'><img src='http://new.tazakhobor.org/www/delivery/avw.php?zoneid=9&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&n=a0ddadec' border='0' alt='' /></a>
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। - See more at: http://tazakhobor.org/bangla/law-court/45516-2015-04-30-20-28-17#sthash.d3aFpVGR.dpuf

০৯ জানুয়ারী ২০১৪

বিশ্বের চেয়ে দেশের শান্তিরক্ষা কঠিন!

বিশ্ব শান্তিরক্ষায় যারা সবচে সমাদৃত, সেই পুলিশ সেনাবাহিনী নিজ দেশের শান্তি রক্ষায় কেন ব্যর্থ? জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের এসাইনমেন্টগুলোর চেয়ে নিজ দেশের নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা মিশনের এসাইনমেন্ট কি খুব বেশী কঠিন ? অথচ নির্বাচনের দিন আগেও না শুনলাম, শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য আরো দেশীয় সৈন্য চাইতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন জাতিসংঘ  মহাসচিব বান কি মুন
সর্বোচ্চ সৈন্য সরবরাহকারী এই রাষ্ট্রের পুলিশ সেনাবাহিনীর ৯৮ হাজার ৯৫৯ জন সদস্য বর্তমানে চার মহাদেশে ১৫টি শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন এদিকে, জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তার আগে-পরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মিশনে আজ জানুয়ারি অবধি মাঠে আছেন প্রায় ছয় লাখ সদস্য এর মধ্যে দেশের ৫৯ জেলায়  আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে একজন লে. কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তার অধীনে ৮০০ জন করে সেনাসদস্য রয়েছেন আর এদের উপস্থিতিতেই ঘটছে একের পর এক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস যদিও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, নির্বাচন পরবর্তী নাশকতার ঝুঁকিতে থাকা এলাকা চিহ্নিত করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে তবুও কেউ নিরাপদে নেই দেশে চলমান রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় বান কি মুনও গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন নির্বাচনের পর দিনই তিনি প্রতিক্রিয়া জানান

এর আগেও আমরা দেখেছি - দেশের যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক টানাপোড়নের প্রথম শিকার হন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়  এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে নির্বাচনকালীন সময়ে তারাই সবচেয়ে বেশী নাশকতার ঝুঁকিতে ছিলেন এবং সহিংসতার শিকারও হয়েছেনআতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আতঙ্কে শত শত হিন্দু পরিবার ফের দেশ ছাড়ার চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছে অথচ স্বাধীনতার এই ৪২ বছর পরও কি এমনটা হওয়ার কথা ছিলো? বাংলাদেশ কি আসলেই একটি ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র


যত দূর মনে পরে, নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রায় দেড়শকোটি টাকা চেয়েছিলো পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স; আর সেনাবাহিনী চেয়েছিলো ২৬ কোটি টাকা তো জনতারই টাকাআর জনতাই আজ নিরাপত্তাহীন বিশেষ করে দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান . মিজানুর রহমান রাজধানীর বিচার, প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে গত জানুয়ারি জাতীয় আইন কমিশনের এক সেমিনারে তিনি অভিযোগ করেন

. মিজান বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সহিংসতায় দেশে হাজার হাজার সংখ্যালঘু আক্রান্ত হয়েছে নির্বাচনের আগেএক প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা করা হলো নির্বাচন শেষ হওয়ার পর সংখ্যালঘুদের বাড়িতে লুটপাট, হামলা করা হলোঅথচ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী থাকবে বলে সরকার নির্বাচনের আগে আমাদেরআশ্বস্ত করেছিল" দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে এখনই দায়িত্ব নিতে হবে উল্লেখ করে . মিজান আরো বলেন, ‘ ব্যর্থতা যেন দীর্ঘায়িত না হয়, সেই বিষয়ে সরকারকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে নয়তোবা দেশবিপন্ন হয়ে যাবে
এর আগে জানুয়ারি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর  মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশ কালো পতাকা নিয়ে মৌন মিছিল করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান সময় মুক্তিযোদ্ধা নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে আজ লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে শুধু ভিন্নধর্মের কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী বর্বর হামলার শিকার হচ্ছে’ 

প্রবীণ অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার বলেন,  ‘প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে  এসব ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা গিয়ে সমবেদনা জানান  তারপর আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে  কিন্তু অপরাধীরা বার বারই পার পেয়ে যাচ্ছে

সংখ্যালঘুদের রক্ষায় সচেতন জনতার প্রতিবাদ প্রতিরোধ বাড়ছে একইসঙ্গে বাড়ছে এই ইস্যুর রাজনৈতিক ব্যবহার আমাদের অভিভাবক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কিন্তু নিরব নন নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বিরোধীরাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এসব বন্ধ না করলে যথাযথ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে যেসব জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে সেখানে কম্বিং অপারেশন চালানোর জন্য ইতোমধ্যে যৌথবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে জড়িত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবেবিরোধীরা আবার সরকার প্রধানের এমন অভিযোগ মেনে নিতে নারাজ তাদের দাবি, এসব সরকারি নাটকেরই অংশ  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘একতরফা নির্বাচন দেশবাসী স্বতঃস্ফুর্তভাবে বর্জন করায় দেশ-বিদেশে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রবল সমালোচনা চলছে। এই জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার দেশব্যাপী সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর পরিকল্পিত হামলা করা হচ্ছে।’

আরো প্রশ্ন ও প্রতিবাদ
নির্বাচনের আগে-পরে সাম্প্রদায়িক হামলার আশঙ্কা রয়েছে জানা সত্ত্বেও কেন তা প্রতিরোধে ব্যর্থ হলেন? কেন এসব আক্রান্ত জনপদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি? ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা বারবার হলেও একটিরও বিচার কেন হয়নি? রাজধানীর সেগুনবাগিচায়সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে বিক্ষুব্ধ জনতাআয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গত জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন শিপ্রা বোস তিনি বলেন, ‘মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা শোনালেও দেশের সরকার রাজনৈতিক দলগুলো আজও বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যর্থতার দায়ভার সরকার, বিরোধী দল সবার।’ লিখিত বক্তব্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মূল সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধের দাবিও জানানো হয়  একই দিনে সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত এলাকায় আক্রমণে উদ্বেগ প্রতিবাদ জানিয়েছেবাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’  সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রশাসনকে সক্রিয় দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার দাবি জানানো হয় একই সঙ্গে দেশের সর্বত্র ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সর্বসাধারণকে আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ প্রাণহানির পাশাপাশি সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত এলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন আক্রমণ করা হয়েছে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের হাতে যশোর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রংপুর চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আক্রান্ত হয়েছে হিন্দুদের বাড়িঘর, দোকান মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ লুটপাট করেছে তারা প্রাণের ভয়ে শিশু, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধরা বসতবাড়ি ছেড়ে নদী পার হয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন দুর্বৃত্তরা দীর্ঘদিন ধরে ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো সত্ত্বেও প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে অভিযোগ আছে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালিয়ে আসছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো স্বাধীনতার সপক্ষের নেতা-কর্মী ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে শতাধিক মন্দির-বিগ্রহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের মূল লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধের রায় বানচাল করা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা

হচ্ছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত বিচার করতে -সংক্রান্ত সব মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনকারীদের বিচার করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমেদ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিচার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের যেসব স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে, সেসব এলাকার দ্রুত বিচারযোগ্য মামলাগুলোকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে আজ ৯ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হবে
একই সঙ্গে সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, রামুসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়ি লুট সম্পত্তি দখলের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের করা মামলাগুলোর দ্রুত বিচার করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার প্রস্তাবও আজ আইন, বিচার সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে


রেজা ঘটকের ব্লগ থেকে
বাংলাদেশে বারবার নির্বাচনকালীন সময়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর পরিকল্পিত এই হামলাকে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ঘটনা বলে বারবার পাশ কাটিয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই বরং নির্বাচন কালীন সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্পদায়ের উপর বারবারই এই হামলা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত, সুচিন্তিত এবং সুসংগঠিতভাবেই করা হয়েছে আর এই হামলার পেছনে নির্বাচনের সময়কে বেছে নেবার পেছনেও অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই প্রধান শুধুমাত্র স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত শিবিরের লোকজন এই হামলার সঙ্গে জড়িত নয় বরং দেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর লোকজনও এই হামলার পেছনে জড়িত যখন যারা ক্ষতায় থাকে তারা বিরোধী দলকে এই হামলার দায় দিয়ে নিজেরা ফেরেশতা সাজার ব্যর্থ চেষ্টা করেন কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, এই হামলার সঙ্গে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সরাসরি পরোক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান যখন যার প্রয়োজন পড়ে, তখন সে এই হামলা করে বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিন্থ করার পায়তারা করছে বলেই ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়

২০০১
সালের লা অক্টোবর নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর একই ধরনের হামলার পর, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ তখন সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন, আমরা ভোটের অধিকার চাই না আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে নিন কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা দিন তাদের সেই আবেদনে কেউ তখন সারা দেয়নি বরং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও এবারের জানুয়ারি' নির্বাচনে সেই ঘটনা আবার আরো তীব্র আকারে ঘটলো যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই

১৯৪১ সালের ভারতীয় আদমশুমারি অনুয়ায়ী, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে তখন অন্তত শতকরা প্রায় ২৮ ভাগ মানুষ ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দেশ বিভাগ ১৯৪৬-৪৭ সালের হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার পর সেই সংখ্যা ১৯৫১ সালে শতকরা ২২ ভাগে নেমে আসে তখন বাংলাদেশের অভিজাত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতে চলে যায় কিন্তু যারা গরিব তাদের আর যাওয়ার সুযোগ রইলো না তারা এই হাজার বছরের বংশ পরম্পরার জন্ম ভিটেমাটিতেই আগলে রইলেন পাকিস্তান কায়েম হবার পর সংখ্যালঘুদের উপর নানান ধরণের চাপ নির্যাতনের ফলে তখণ থেকেই নিরবে অনেকে বাংলাদেশ ছেড়ে যান ১৯৬১ সালে সেই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৮. ভাগে নেমে আসে

ছবিটি দৈনিক কালের কণ্ঠ থেকে নেয়া।
পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রশ্নে ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ সংগঠিত হয়, তখনো বাংলাদেশের প্রধান টার্গেটে পরিনত হয়েছিল সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের প্রথম আদমশুমারি সাক্ষ্য দেয় যে, তখন বাংলাদেশে মাত্র শতকরা ১৩. ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল অন্যরা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর মুসলমানদের কর্তৃত্ব চাপের কারণে সেই দেশ ত্যাগের ঘটনাটি নিরবে ঘটতেই থাকলো ১৯৮১ সালে সেই সংখ্য নেমে আসে শতকরা ১২.১৩ ভাগে আর ১৯৯১ সালে সেটি দাঁড়ায় শতকরা ১১.৬২ ভাগে

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নির্বাচনকালীন সময়ে এই হামলা সহিংসতা বন্ধ না হবার কারণে, ২০০১ সালে এসে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র শতকরা . ভাগে ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, তখন বাংলাদেশে অন্তত কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজারের মত সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস ছিল আর ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় শতকরা ভাগে নেমে আসে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক সহিংসতা সংখ্যালঘুদের উপর বারবার হামলা নির্যাতনের ঘটনায় এই সংখ্যা এখন প্রকৃত হিসেবে কত, সেটি বলা কষ্টকর হলেও, ধারণা করা যায়, এটি শতকরা ভাগের বেশি হবার কোনো যুক্তি নেই কারণ, ২০১১ সালের আদমশুমারির পরেও দেশে নিরবে হিন্দু সম্প্রদায়ের দেশত্যাগের অনেক ঘটনাই ঘটেছে তাই বর্তমানে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা শতকরা ভাগের বেশি হবে না তাছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানোর জন্য বাংলাদেশের সরকারি তথ্য হিসেবে অনেক প্রকৃত তথ্যই এদিক সেদিক করার অভ্যাস মোটেও মিথ্যে নয়

তাহলে স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে যে, বাংলাদেশে কি শেষ পর্যন্ত এভাবে ধীরে ধীরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় একদিন নিশ্চিন্থ হয়ে যাবে? এখন যদি আমাকে কেউ এই প্রশ্ন করেন, আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশে আগামী বিশ-পঁচিশ বছরের মধ্যে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় একটি নৃ-গোষ্ঠীতে পরিনত হতে যাচ্ছে  এর পেছনে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য যেমন দায়ী তেমনি বলপ্রয়োগ, রাজনৈতিক চাপ, নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের এভাবে নির্মম বলিদান, ধন সম্পদ লুটপাট, মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার, দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বংশবিস্তার, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিস্তার, দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলগুলোর এসব হামলার সময় নিরব দর্শকের ভূমিকা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নির্লজ্ব ব্যর্থতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা না দিতে পারার রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, প্রতিবেশী দেশ ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়ন, প্রতিবেশী মায়ানমারের জাতিগত দাঙ্গা, দেশের দুর্বল গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, দেশে বিদ্যমান অন্যের সম্পত্তি দখলের লাগাতার সংস্কৃতি, হিন্দু সম্প্রদায়ের নিজস্ব নিরাপত্তাহীনতা, মিডিয়ার পক্ষপাত আচরণ, আর দেশের মানুষের মানবতা বিরোধী নির্মম ঘটনার পরেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি, এসব সম্মিলিত ধারার যুগপথ ধারার কারণেই ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় এক সময় নিশ্চিন্থ হয়ে যেতে পারে

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত নিবেদন, নির্বাচনের পর চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এখনই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় ব্যবহার করুন বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা আর যাতে বিঘ্নিত না হয়, তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণেরও ব্যবস্থা করুন নির্বাচন কালীন সহিংসতার সকল উপাদান সক্রিয় থাকা স্বত্ত্বেও কেন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরকার গঠন করলো না, সেই অযুহাত নিয়ে রাজনীতি না করে বরং এখনই অবশিষ্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর যাতে আর একটি হামলাও না হয়, সেই নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি নতুবা সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এটি আরো পাকাপাকিভাবে নিশ্চিত করে, দেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু সকল সম্প্রদায়কে একটি নির্দিষ্ট সময় বেধে দিন, যে অমুক তারিখের মধ্যে সবাই নিরাপদে দেশত্যাগ করুন, নইলে অমুক তারিখে একযোগে হামলা করে সবাইকে শেষ করা হবে একটা কঠোর সিদ্ধান্তে দয়া করে আসুন বারবার সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ঘুটি হিসেবে ব্যবহার না করে, এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান করুন

আর যদি বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়, তাহলে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, এটা দশম সংসদের প্রথম অধিবেসনেই বর্জন করে ধর্ম নিরপেক্ষ লিখুন পাশাপাশি জাতি ধর্ম বর্ণ গোষ্ঠি নির্বিশেষে সকলকে নিরাপত্তা দেবার একটি স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা করুন আমরা এভাবে আর একজনও সংখ্যালঘু' উপর হামলা দেখতে চাই না আর সংখ্যালঘু নিয়ে রাজনীতিও দেখতে চাই না অনেক বৃদ্ধ হিন্দু মহিলা কান্নাজড়িত কণ্ঠে দাবী করেছেন, নৌকায় ভোট দেবার পর আজ তাদের এই দশা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই নয় দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল তারা কেন এই হামলার সময় পাশে দাঁড়ালো না? সংখ্যালঘুরা কোথায় ভোট দিলেন, কেন ভোট দিলেন, সেটি একটি সুসংগঠিত সুপরিকল্পিত হামলার জন্য অন্যতম কারণ হতে পারে না আর এটি মেনে নেওয়াও যায় না একজন মুসলমান কোথায় ভোট দিলেন, তার যেহেতু কোনো জবাবদিহিতা নেই, একটি রাষ্ট্রে কেন একজন সংখ্যালঘুকে বারবার এই একই প্রশ্নে নির্মম হামলার শিকার হতে হবে?

নইলে আমার যে হিন্দু বন্ধু সে আমাকে কোন ভরসায় বিশ্বাস করবে? আমার যে হিন্দু প্রতিবেশী কোন ভরসায় তারা আমাদের পাশে বসবাস করবে? আমাদের যে হিন্দু উৎসব, কোন ভরসায় তারা সেই উৎসব করবে? ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার পর তারা পরের বছর তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সারদীয় দুর্গাপূজা বর্জন করেছিলেন একটি সম্প্রদায় কতো কষ্ট পেলে নিজেদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বর্জনের ঘোষণা দিতে পারে, সেটি কি আমরা একবারও অনুমান করতে পারি? আমরা কি এই হামলার প্রতিবাদে আগামী ঈদ উৎসব বর্জন করব? ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায় দাবী করেছিলেন, তারা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চায় যদি তাদের নিয়ে সত্যিই কোনো রাজনীতি না থাকে, তাহলে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে নিয়ে আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক নিরাপত্তা যখন সার্বিকভাবে নিশ্চিত হবে, তখণ না হয় তারাই আবার দাবী তুলবে যে, আমাদের ভোটের অধিকার এখন ফিরিয়ে দাও একটা সমাধান দয়া্ করে বের করুন আর এভাবে মানবতার পরাজয়, সভ্যতার পরাজয়, হিংসার রাজনীতিতে ধুকে ধুকে শকুনের হিংস্র থাবার মুখে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে বারবার মুখোমুখি করার সত্যি সত্যিই কোনো অসভ্যতা আমরা দেখতে চাই না

ছবিটি ফেসবুক থেকে সংগ্রহিত

আর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কে আহবান জানাব, আপনারা পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুবকদের নিয়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলুন যতোক্ষণ নিজেরা লড়াই করতে পারবেন, ততোক্ষণ লড়াই করুন নিজেদের বসত বাড়ি ব্যবসা সম্পত্তি ফেলে পালিয়ে শুধু আত্মরক্ষাই করা যায়, জীবন সংগ্রাম থেকে পালানো যায় না আপনাদের যুবশ্রেণী যতোক্ষণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে ততোক্ষণ, আপনারা নিশ্চিত নিরাপদ পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যদি সময় মত সারা না দেয়, মা বোনেরাও প্রতিরোধের জন্য তৈরি হোন যতোক্ষণ জীবন, ততোক্ষণ লড়াই একবার প্রতিরোধ করুন, দেখবেন হামলাকারীরা পরের হামলাটি করার জন্য একটু হলেও পিছপা নেবে বাংলাদেশে এখনো অনেক অসাম্প্রদায়িক মুসলমান আছে তারা আপনাদের প্রতিবেশী আপনাদের বন্ধু তাদেরকেও সেই প্রতিরোধ বলয়ে ডাকুন নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পাড়ায়-পাড়ায় এভাবে টহল প্রতিরোধ গঠন করুন নইলে বারবার ভয় আর আতংক আপনাদের মানসিকভাবে আরো দুর্বল করে দেবে আর মানসিকভাবে দুর্বল থাকলে সরকারি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বেশি দিন আপনাদের যে পাহারা দিয়ে বাঁচাতে পারবে না বা পাহারা দেবে না এটা আপনারাও হয়তো ভালো করেই জানেন পাশপাশি এই হামলার সকল ঘটনা বিশ্ববাসীর কাছে নানাভাবে তুলে ধরে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করুন আপনারা যতোবেশি সংগঠিত থাকবেন, ততোই আপনাদের নিরাপত্তা সবল থাকবে মনে রাখবেন, যারা হামলা করছে তারা কিন্তু দলবদ্ধ তাই আপনারাও দলবদ্ধ থাকুন এর বেশি কিছু বলার মত আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না একজন মুসলিম ঘরের সন্তান হিসেবে আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি এই হামলার দায় মুসলিমরা এড়াতে পারে না রাষ্ট্র এড়াতে পারে না রাজনৈতিক দলগুলো এড়াতে পারে না নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারে না আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এড়াতে পারে না সত্যি সত্যিই কেউ এই দায় এড়াতে পারে না
newsreel [সংবাদচিত্র]