Powered By Blogger

০২ এপ্রিল ২০১৯

ভোটযুদ্ধে গণধর্ষণ, দায় কার?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানকারী নারীদের একাংশ। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮।
দুনিয়ার কোথাও কি এমন কোনো সশস্ত্র যুদ্ধ হয়েছে, যেখানে নারীরা ‘সামরিক’ গণধর্ষণের শিকার হয়নি? সমরাক্রান্ত জনপদে এটাই নারীদের নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে দুনিয়া। আর ‘ভোটযুদ্ধে’ এই পুরুষতান্ত্রিক বর্বরতার বেসামরিক প্রয়োগ মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। যাকে নির্বাচনী বা রাজনৈতিক গণধর্ষণ বলা যেতে পারে। 
এর জন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দায়ী করা হলে তা কিভাবে এড়াবে দলগুলো? আবার কেউ যদি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সামর্থ্য নিয়ে তোলে, তারাই বা কি বলবে?
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার বিরোধীদের ভোট দেওয়ার দায়ে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চল্লিশোর্ধ গৃহবধুকে গণধর্ষণের ঘটনার পর আলাপ হচ্ছিল বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) এই নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরের সাথে।
“সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী নির্যাতনকারীদের বয়কট করতে হবে,” উল্লেখ করে নারী অধিকার আন্দোলনের এই নেত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগে এ জাতীয় অনেক আবর্জনা যুক্ত হয়েছে।” 
ওই ঘটনার হোতা দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিস্কার করে তাঁর দল। চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্য বাগ্যা গ্রামের ধর্ষিতা ছিলেন চার সন্তানের জননী। ঠিক তিন মাস পর ইউনিয়নে উত্তর বাগ্যা গ্রামে একই ঘটনার পুনুরাবৃত্তি। 
নির্বাচনী দ্বন্দ্বের জেরে সেই রুহুলের কলা বাগানে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয় পয়ত্রিশোর্ধ্ব এক গৃহবধুকে, যে ছয় সন্তানের জননী। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদের এক প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় জেরে রোববার (৩১ মার্চ) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে দাবি করে নির্যাতিতা নারী ও তাঁর স্বামী জানান, বাড়ি ফেরার পথে গতিরোধ করে প্রথমে স্বামীকে মারধর করে বেঁধে ফেলে ধর্ষকরা। 
ওই দিনের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। অথচ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর ভোলায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পূর্ণিমা শীলকে নিজের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন এই দলেরই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
প্রসঙ্গত, “বাংলাদেশে সংঘবদ্ধ, দলগত বা গণধর্ষণের ৩০ শতাংশই ঘটে প্রতিহিংসাবশত,” ২০১৩ সালের এক গবেষণার বরাত দিয়ে এমনটাই বলছে উইকিপিডিয়া বলছে। 
ইতিমধ্যে এ ঘটনায় চরজব্বর থানায় মামলা হয়েছে দুই জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। এর আগের ঘটনায়ও গণধর্ষণের নির্দেশদাতা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ পাঁচ অভিযুক্তকে নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার আগেই গ্রেপ্তার করেছিল তারা। তখন ‘পুলিশের এই জোড় তৎপরতা প্রসংশনীয়’ উল্লেখ করে রোকেয়া কবির বলেছিলেন, “সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে এখন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে আগামীতে তাদের নাম করে কেউ নারী নির্যাতন করার সাহস না পায়।” 
তাঁর অভিমত, “শুধু আগামীদের গ্রেপ্তারের করলেই হবে না, আক্রান্ত পরিবারটি যাতে সুরক্ষা পায় এবং তাদের যাতে পুনরায় আক্রান্ত হতে না হয়, সেদিকেও পুলিশকে খেয়াল রাখতে হবে।” তাছাড়া “আক্রান্ত পরিবারকে ‘ভ্রকুটি মুক্ত’ রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সক্রিয় থাকতে হবে,” বলেও উল্লেখ করেন বিএনপিএস নির্বাহী পরিচালক। 
সুবর্ণচরের প্রথম গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতনর দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এই মামলার প্রধান আসামি রুহুলকে দেওয়া জামিন বাতিল করে হাইকোর্ট। এরই মধ্যে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। 

চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ জানিয়েছে, গত বছর ৯৪ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩২ জন নারী।

কোন মন্তব্য নেই:

newsreel [সংবাদচিত্র]