Powered By Blogger
অসাম্প্রদায়িক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
অসাম্প্রদায়িক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৬ নভেম্বর ২০১৭

রাষ্ট্রধর্মের মূলে ভোটের রাজনীতি

মূলত সামরিক ফরমানে (১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ এর ২ তফসিল বলে) বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে প্রস্তাবণার আগে 'বিসমিল্লাহ’ সন্নিবেশিত হয়। পরের বছর এপ্রিলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে আইনসভা এর বৈধতা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২(ক) যুক্ত করা হয়। যাতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটিতে পরিবর্তন এনে লেখা হয় - ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ একইসঙ্গে মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাও ফিরিয়ে আনা হয়।
সম্প্রতি ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। প্রথম বিজয় দিবসে, অর্থাৎ একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে তা কার্যকর করা হয়। পরবর্তী ৪৫ বছরে এটি সংশোধন করা হয়েছে মোট ১৬ বার। একই সময়ের মধ্যে দুই বার রাষ্ট্রপ্রধান হত্যা, দফায় দফায় সামরিক ক্যুসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেছে দেশ। এসব মাথায় রেখে সংবিধানের ৪৬ বছর উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের চতুর্থ পর্বে থাকছে ঢাকায় বসবাসকারী তরুণ প্রকাশক ও সাংবাদিক সৈয়দ রিয়াদের আলাপ। তার সাথেও কথা হয় ফেসবুক চ্যাটবক্সে ।
ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
সৈয়দ রিয়াদ : সংবিধান সংশোধনে যখন ভোটের রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়া হয় তখন আসলে গণতন্ত্র সাংবিধানিক ভাবেই লংঘিত হয়। সংখ্যাগুরুদের খুশি করতে ভোটের রাজনীতিতে সেখানে ‘বিসমিল্লাহ’ ও রাষ্ট্রধর্ম ব্যবহারের ফলে বিষয়টি সাম্প্রদায়িক ও দৃষ্টিকটু-তো হয়েছেই; সেইসঙ্গে সংখ্যালঘুরা তাদের পরিচয় সংকটে পড়েছে। অথচ আমাদের প্রথম সংবিধান কোনো একক ধর্মের জন্য রচিত হয়নি; হয়েছে একটি দেশের জন্য, জনগণের জন্য। তাহলে এখানে আবার ধর্ম আসছে কোথা থেকে?

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
সৈয়দ রিয়াদ : উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যাওয়া পরও যখন ‘বিসমিল্লাহ’ সংবিধানে বহাল থাকে তখন দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়। প্রথমত সর্বোচ্চ আদলতের রায়কে আমাদের গণতন্ত্রে কিভাবে দেখা হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত রায় নিয়ে সরকার যে ধরণের রাজনীতি করেছে তাতে স্পষ্টতেই বোঝা গেছে তারা নিজেদের আদর্শিক জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে। তা না হলে আদালতের এমন রায় অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখাত না অসাম্প্রদায়িক আদর্শে এ সরকার।

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
সৈয়দ রিয়াদ আমাদের সংবিধান, এমনকি এই রাষ্ট্র জন্মেরও আগে থেকে এ জনপদের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের কারণে সংখ্যালঘু সম্পর্কে এক শ্রেণীর স্থানীয় মুসলমানদের মজ্জাগত ভাবে ধারণা হয়ে আছে যে এরা এই দেশের কেউ নন। আদতে তারা তাদের মূর্খতাকে বোঝার পরিবেশ পাচ্ছে না। এর জন্য অবশ্যই সংবিধান দায়ী।

ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
সৈয়দ রিয়াদ : সরকার সংখ্যালঘুবান্ধব নিঃসন্দেহে। কিন্তু ওই যে ভোটের রাজনীতির সমীকরণে তারা সেটা স্পষ্ট করতে পারছে না। দৃশ্যত তাদের অসাম্প্রদায়িক মনোভাব এখানে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর দায়ও তাদের নিতে হবে।সরকার মুখে নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বলছে আর কার্যত সাম্প্রদায়িক আচরণ করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘুদের উপর ইদানীং যে ধরণের আক্রমণ করা হয়েছে তা দেখে মনে হয়েছে এই দেশে সংখ্যালঘুদের ঠাঁই নেই। আর সংবিধান থেকেই যদি জাতি ধর্মের সাথে আপস করে তাহলে সেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে স্বস্তির কিছু দেখছি না।

ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
সৈয়দ রিয়াদ : আমাদের গণতন্ত্র এখনো সুসংহত নয়। নাগরিক অধিকার তলানিতে পড়ে আছে। তাই এসব বিষয়ে আমাদের অগ্রগতি নিয়ে কোনে আশার খবর নেই। বুদ্ধিচর্চা এখানে বিকল। ২০১১ পর থেকে এই অবস্থা উন্নতি হওয়ার কোনো ধরণের কারণ নেই। সাধারণ মানুষের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র এখানে ভয়ংকর। আসলে এই দেশে নাগরিক অধিকার বলে কিছু নাই।

পরম্পরার অন্যান্য লেখা
সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বৈধ করেছে রাষ্ট্র!
সংখ্যালঘু নয় ক্ষমতাই বিষয়..
অসাম্প্রদায়িক ছিলো বলা যাবে না!
..কিভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দাবি করবে..
কতটা স্বাধীন হয়েছে বিচার বিভাগ?

১১ নভেম্বর ২০১৭

সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বৈধ করেছে রাষ্ট্র!

মূলত সামরিক ফরমানে (১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ এর ২ তফসিল বলে) বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে প্রস্তাবণার আগে 'বিসমিল্লাহ’ সন্নিবেশিত হয়। পরের বছর এপ্রিলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে আইনসভা এর বৈধতা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২(ক) যুক্ত করা হয়। যাতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটিতে পরিবর্তন এনে লেখা হয় - ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ একইসঙ্গে মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাও ফিরিয়ে আনা হয়। 
সম্প্রতি ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। প্রথম বিজয় দিবসে, অর্থাৎ একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে তা কার্যকর করা হয়। পরবর্তী ৪৫ বছরে এটি সংশোধন করা হয়েছে মোট ১৬ বার। একই সময়ের মধ্যে দুই বার রাষ্ট্রপ্রধান হত্যা, দফায় দফায় সামরিক ক্যুসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেছে দেশ। এসব মাথায় রেখে সংবিধানের ৪৬ বছর উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের চতুর্থ পর্বে থাকছে বরিশালের তরুণ কবি রূমান শরীফের আলাপ। তার সাথেও কথা হয় ফেসবুক চ্যাটবক্সে ।

ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
রুমান শরীফ : এটা প্রত্যেক নাগরিককে অপমান করার মতো একটা বিষয়।কোন গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্র কখনোই একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না।

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
রুমান শরীফ : রাষ্ট্রের ধর্ম হয় কিভাবে! রাষ্ট্রধর্ম তো একটি হাস্যকর বিষয়।রাষ্ট্রের একটি ধর্ম থাকলে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা কি তবে রাষ্ট্রদ্রোহী! নাকি ধর্মদ্রোহী! তারা কি দেশের নাগরিক না! একটি গণতান্ত্রিক দেশে সব ধর্মের মানুষ; আস্তিক, নাস্তিক সবাই বাস করে। সেখানে রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ধর্ম থাকা মানে ওই ধর্মানুসারী বাদে বাকি নাগরিকদের অস্বিকার করা। 

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
রুমান শরীফ : সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বৈধ করে দেয়। নাগরিকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে।
আগুনে জ্বলছে বাড়ি, সামনে সংখ্যালঘু বৃদ্ধার আহাজারি। ১০ নভেম্বর,
হরকলি ঠাকুরপাড়া, রংপুর। ছবি: মঈনুল ইসলাম (দৈনিক প্রথম আলো)
ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
রুমান শরীফ : এই সরকারের সময়কালে প্রচুর পরিমানে সংখ্যালঘু নির্যাতিত হয়েছে। সেগুলো সংবাদপত্র, মিডিয়ায় উঠে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন মতামতে বলেছেন, এখানে তারা মোটেই নিরাপদ বোধ করেন না।এমনকি এই সরকারের সময়কালে সংখ্যালঘুদের ওপর নানান সময়ে হামলার ঘটনার কোনো বিচার হয়নি।ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীরা এর সাথে জড়িত এমন সংবাদও মিডিয়ায় এসেছে। এখন কিভাবে বলা যায় আওয়ামীলীগ সংখ্যালঘু বান্ধব সরকার!

ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
রুমান শরীফ : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতপোষণকারীরা মোটেই নিরাপদবোধ করেন বলে মনে হয় না।বাংলাদেশে লেখক, প্রকাশক, ব্লগারদের ওপর হামলার বা তাদের খুনের এখনো কোনো বিচার হয়নি। এমনকি সোস্যাল নেটওয়ার্কে, সংবাদপত্রে মতামত প্রকাশ করলেও ৫৭ ধারায় কারাদণ্ড হয়।

পরম্পরার অন্যান্য লেখা

০৯ নভেম্বর ২০১৭

সংখ্যালঘু নয় ক্ষমতাই বিষয়..

‘ভারতের ১৯৫২ সালের প্রথম সংবিধানের মূলনীতিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা বা সমাজতন্ত্রের কথা উল্লেখ ছিলো না। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের প্রথম সংবিধানের মূলনীতি থেকে  এই শব্দ দুটো আমদানি করেন ইন্দিরা গান্ধী।ভারতীয় সংবিধানে ৪২তম সংশোধনীতে, মানে ১৯৭৬ সালে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র ঠাঁই পায়। এর পেছনে ছিলো ১৯৭১ সালে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম এবং ভারতজুড়ে বামপন্থীদের উত্থান।’ সাম্প্রতিক এক ফোনালাপে বলছিলেন কলকাতার তরুণ কবি ও সাংবাদিক অতনু সিংহ। 
সম্প্রতি ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে জন্ম নেয়া এই রাষ্ট্রের সেই সূচনা সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রাহিম’ (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে) লেখা ছিলো না। ছিলো না রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধানও। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করা হয়। আর ১৯৮৮ সালে সাবেক সেনাশাসক এইচএম এরশাদের সময় সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযুক্ত হয়। পরবর্তীতে উচ্চ-আদালত ওই সংশোধনী দুটো বাতিল করলেও ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই দুটি জায়গা অপরিবর্তিত রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করে আইনসভা। 
সংবিধানের ৪৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে দুই তরুণ লেখক হামিম কামাল ও শ্মশান ঠাকুরের আলাপ। তাদের সাথেও মূলত ফেসবুক চ্যাটবক্সে কথা হয় ।
ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
হামিম কামাল : একবিন্দু স্বস্তিদায়ক নয়। 
শ্মশান ঠাকুর : রাজনীতি অন্ধ ক্ষমতায়নের দিকে যাচ্ছে, এখানে স্বস্তি থাকবার কথা নয়।

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
হামিম কামাল : বিষয়টি স্ববিরোধী। 
শ্মশান ঠাকুর : ইসলামকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, এই আর কি।

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
হামিম কামাল : রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্বের বড় দায় আছে। তবে এখানে সরল উত্তরের অবকাশ নেই। অল্প কথায়, এটা সুরক্ষিতা রাষ্ট্রস্বর্গে এমন এক ছিদ্রপথ যার ভেতর দিয়ে অনেক বড় বড় অকল্যাণসর্প প্রবেশ করে একের পর এক। এবং এরা নিয়ত সঙ্গমাচারি। সারাক্ষণ এমনভাবে জড়াজড়ি করে থাকে যে দায় বিচারের লাঠিতে পিটিয়ে আলাদা করা কঠিন।
শ্মশান ঠাকুর : উগ্রতা যখন অর্থের সাথে সম্পর্কিত তখন আইন অবশ্যই তার জন্য দায়ী, সংবিধানও।

ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
হামিম কামাল : নীতিগত দিক থেকে আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুবান্ধব। ঐতিহাসিক ভাবেও। তবে বর্তমানের প্রশ্নে দলটির নীতি, ইতিহাস; দুটোই সমাধিস্থ।
শ্মশান ঠাকুর : লীগ সরকার ক্ষমতার জন্য উন্মাদ। কোন সংখ্যালঘু তার কাছে বিষয় নয়, ক্ষমতাই বিষয়।

ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
হামিম কামাল : ভালো নেই। ধর্মবিচারে, অধিকারে অসাম্য আছে। একইসঙ্গে ধর্মাধর্ম নির্বিচারে অধিকারহীনতার আধিয়ারি জারি। দ্বিমুখী দায়। অধিকার কে কাকে দেবে।
শ্মশান ঠাকুর : অধিকার কি পাচ্ছে? মনে হয় না। সম অধিকারের বিষয়ই আসে না। ক্ষমতাধর আর সাধারণের মধ্যেই সম অধিকার নেই।
মূলত সামরিক ফরমানে (১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ এর ২ তফসিল বলে) বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে প্রস্তাবণার আগে 'বিসমিল্লাহ’ সন্নিবেশিত হয়। পরের বছর এপ্রিলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে আইনসভা এর বৈধতা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২(ক) যুক্ত করা হয়। যাতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটিতে পরিবর্তন এনে লেখা হয় - ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ একই সংশোধনীতে মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাও ফিরে এসেছে। 
বরিশালের এ দৃশ্য ২০০৬ সালের
পড়ুন :
অসাম্প্রদায়িক ছিলো বলা যাবে না!
..কিভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দাবি করবে..
কতটা স্বাধীন হয়েছে বিচার বিভাগ?
ধর্মের কল নড়ে রাষ্ট্রের বাতাসে..
সন্দেহপ্রবণ, বাঙালী মুসলমানের মন!
হুমকীতে ভারতবর্ষের সুফিভাব
দমনে দৃঢ় রাষ্ট্র কাঠামো
অস্ত্রবাজ সময় ও সমাজে ...
পুলিশ ছাড়া কেউ থাকবে না ...
ভয় পেও না, সাবধান থেকো ...
পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব নেবে কে?
ওই বেতনের কেতন উড়ে
হেফাজতের পথে ওলামা লীগ !
সানিকে ঠেকাবে হেফাজত !
নুরুলদ্বয়ের মহালোচিত পুত্রেরা
প্রবীর প্রকৃত প্রতিবাদী অগ্রজ
সময় হুমকী আর হত্যালীলার
মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...
সর্বোচ্চ সংকর জাতের সঙ্কট
ক্রিকেটের মওকায় সাম্প্রদায়িকতা !
সাংবিধানিক পিতা আইনে অনাত্মীয় !
রাষ্ট্রীয় শিশ্ন - ধর্ষন, খুন এবঙ ...
বাংলা জাগবেই জাগবে...
ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ
বর্ষবরণে বস্ত্রহরণ কী পরিকল্পিত !

০৮ নভেম্বর ২০১৭

অসাম্প্রদায়িক ছিলো বলা যাবে না!


সম্প্রতি ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। প্রথম বিজয় দিবসে, অর্থাৎ একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে তা কার্যকর করা হয়। পরবর্তী ৪৫ বছরে এটি সংশোধন করা হয়েছে মোট ১৬ বার। একই সময়ের মধ্যে দুই বার রাষ্ট্রপ্রধান হত্যা, দফায় দফায় সামরিক ক্যুসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেছে দেশ।
ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে জন্ম নেয়া এই রাষ্ট্রের সেই সূচনা সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রাহিম’ (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে) লেখা ছিলো না। ছিলো না রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধানও। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করা হয়। আর ১৯৮৮ সালে সাবেক সেনাশাসক এইচএম এরশাদের সময় সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযুক্ত হয়। পরবর্তীতে উচ্চ-আদালত ওই সংশোধনী দুটো বাতিল করলেও ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই দুটি জায়গা অপরিবর্তিত রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করে আইনসভা। সংবিধানের ৪৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে থাকছেন ভাষ্কর, চিন্তক ও গবেষক গোঁসাই পাহলভী । বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানকারী এই যুবক শিল্পীচর্চার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি এবং প্রামান্যচিত্র নির্মাণের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তার সাথেও ফেসবুক চ্যাটবক্সে কথা হয় ।
ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
গোঁসাই পাহলভী : সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংশয় আছে বলেই এই প্রশ্নের উত্থাপণ মনে হয়েছে। সংবিধান বাস্তবতা এবং ধর্মচর্চার বাস্তবতায় সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘুদের জীবন-যাপন সংস্কৃতির বিষয়ে ভাবা যেতে পারে।সংবিধানের বাস্তবতায় যে কোনও সচেতন নাগরিক আতংকিত হবেন, অস্বত্বিতে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম থাকবে আবার অপরাপর ধর্মগুলোও থাকবে, তাদের অধিকারও সমান হবে এমন নয়। সেটা হয়ওনি।যদি সমানভাবে চর্চিত হতে হয়, তবে সেটা রাষ্ট্র থেকেই হতে হবে। মানে রাষ্ট্র যদি ইদে তিন দিন ছুটি দেয় তাহলে পূজায়ও সেটা হতে হবে। পাঁচ দিনের পূজায় এক দিন ছুটি! এটা তো সাংবিধানিক আইন মানা হলো না, রাষ্ট্রকে কি এ বিষয়ে জবাবদিহি করা যায়? সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে ধর্মের উপর এই গুরু দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায়, বাংলাদেশের সংবিধান শুরুতেই অসাম্প্রদায়িক ছিলো এমন বলা যাবে না। কারণ, সাম্প্রদায়িকতাকে এখানে আইনের দ্বারা সিদ্ধ করা হয়েছে, উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। 

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
গোঁসাই পাহলভী : ২৭ অনুচ্ছেদ মতে. এই ধারাটি বিতর্কিত। আইনের দৃষ্টিতে সমান হলে আইনকে শুরুতেই সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করতে হবে। সম্পত্তির মতো গুরুতর বিষয়টি ধর্মের হাতে রেখে সংবিধান নিজেকে কীভাবে অসাম্প্রদায়িক ভাবে সেটাই প্রশ্ন। 

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
গোঁসাই পাহলভী : সংবিধানের চর্চা সাধারণ মানুষর ভেতর নেই। তারা সংবিধান বুঝে এ্যাক্ট কিংবা রিএ্যাক্ট করেন, এমন নয়। জনগণের কৌমচেতনার সাথে ধর্মীয় চেতনা, এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চয়ই উগ্রতার পেছনে দায়ী। আরো আছে আন্তজার্তিক ঘটনাবলীর প্রভাব। উপসাগরীয় যুদ্ধের পর ক্রমাগত মুসলমানদের মার খাওয়ার ইতিহাস, এবং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে তার উপস্থাপন এখানকার মুসলমানদের উগ্রবাদীতার সাপেক্ষে তৈরী করার মনোভাব দেখা যাচ্ছে! এ বিষয়ে ‘কাভারিং ইসলাম’ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
গোঁসাই পাহলভী : নিয়োগ প্রথায় সংখ্যালঘুরা এই সরকারের কাছ থেকে আনডু ফ্যাসালিটিস পাচ্ছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু জনগণের স্তরে তাকালে ইসলামিস্টদেরকে বিভিন্ন প্রকার ছাড় দেয়া নিঃসন্দেহে বিরোধাত্মক। গ্রাসরুট বা গ্রাস লেবেলে তাকালে সংখ্যালঘুদের ভূমিদখল, বাস্তুচ্যুত করার বিষয়ে যে সমস্ত সংবাদগুলো ছাপা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারী দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর লোকদের নামই এসেছে ঘুরেফিরে। 

ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
গোঁসাই পাহলভী : বাংলাদেশের লেখক বা চিন্তুকরাই হচ্ছেন এ দেশের প্রকৃত সংখ্যালঘু। তারা এখন মার খাচ্ছেন। দেশ থেকে পালাচ্ছেন, দেশের ভেতর গুম হচ্ছেন। অধিকারের বিষয়ে সম কিংবা অসমের প্রেক্ষাপটে অধিকার বিচার বিষয়ক ধারণা সংবিধান স্বচ্ছতার সাথে লিপিবদ্ধ নয়। অর্থাৎ অধিকারের মতো দার্শনিক ধারনাকে কনটেইনড করে গড়ে ওঠা ব্যবস্থার কথা এখানকার আইনবেত্তা বা বুদ্ধিজীবীরা ভেবেছেন বা ভাবতে পেরেছেন এমন উদাহরণ আমাদের হাতে নেই। অধিকারের বিষয়ে লোকায়ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা উহ্য রেখেই বলছি। ধর্ম কতটা অধিকার দেয় মানুষকে, রাষ্ট্র কতটা অধিকার কুক্ষিগত করেছে, কতটা অধিকার ছাড় দিয়েছে এ তো বিশদ প্রশ্ন। পাঁচটি মৌলিক অধিকার চিহ্নিত হলো, নির্দিষ্ট হলো, এই অধিকারগুলো কী জনগণের দ্বারা চিহ্নিত, নাকি রাষ্ট্র নিজেকে কর্তা ভেবে জনগণের অধিকারের বিষয়ে কেবল পাঁচটি ধারণাকেই সনাক্ত এবং সূত্রবদ্ধ করেছে। এটা প্রকৃতিগতভাবে একটি ব্যত্যয়। 

ছবিটি বাংলাদেশের, আমারই তোলা। 
আরো পড়ুন :

২২ জুন ২০১৫

ক্রিকেটের মওকায় সাম্প্রদায়িকতা !

ক্রিকেটের মওকায় আজ যারা ফের সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়াতে চাইছেন, তাদেরই একজন কবি, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক দর্পন কবীর (Darpan Kabir) । হিন্দুবিদ্বেষী এই ভদ্রলোক আবার এটিএন বাংলা ইউএসএ’র বার্তা সম্পাদক এবং আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকেই টের পেলাম তিনি মূলত সেকালের দাঙ্গাবাজদের বীজবহনকারী এবং স্বভাবতই আজ ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
যারা ওনার এই হিন্দুবিদ্বেষী প্রচারণায় বেশ আমোদিত, লাইক - শেয়ার করে প্রচার বাড়াচ্ছেন, সেই মুসলমান ভাইদের কাছে জানতে চাচ্ছি - ইসলাম কি এমন বিদ্বেষ ছড়ানো সমর্থন করে? নাকি নিজেদের ব্যক্তিআক্রোশ মেটাতেই আপনারা ধর্মকে টেনে আনছেন? আর খোদ দর্পন কবীরের কাছে জানতে চাচ্ছি, শেষ কবে কোন দর্পনে নিজের মুখাবয়বটা দেখেছিলেন ভাই?

সকলেই এদের ব্যাপারে সতর্ক হোন, সজাগ থাকুন।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকে ওই কথাগুলো শেয়ার পর যে ধরণের আক্রমণাত্বক মন্তব্য আর মেসেজ পাচ্ছি তা কিছুটা শঙ্কাজনকই বটে। এ জাতীয় ইস্যুতে পুরানো বন্ধু, বান্ধব - এমনকী স্বজনদের যে চেহারা উন্মোচিত হয়; তাতে ভয়ই লাগে। কে যে কখন কোন ঈমাণে চাপাতির এক কোপে কল্লা নামিয়ে দেবে তা টেরও পাবো না হয়ত। তবে এটা এখনই টের পাচ্ছি যে এরা, মানে এই প্রতিক্রিয়াশীলরা আদতে ধার্মিক না। এরা ধর্মের নামে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলেই ব্যস্ত।
নিজের পূর্ববর্তী পোস্টের সূত্র ধরেই নতুন স্ট্যাটাস দিয়েছেন দর্পন কবীর। 
যার একাংশও পড়ে নিতে পারেন।
নীচে দর্পনের দেয়াল থেকে নেয়া আরো একটি পোস্টের একাংশ।
তিনি বেশ সুপরিকল্পিতভাবেই একের পর এক সাম্প্রদায়িক উসকানীমূলক পোস্ট করে যাচ্ছেন।

তবে হতাশ হবেন না, আমিও হচ্ছি না। কারণ দর্পন কবীর এবং তার সমর্থকগোষ্ঠীর বাইরেও বহু মানুষ আছেন। যারা এ জাতীয় প্রচারের জবাব দিচ্ছেন। হয়ত দিতে বাধ্য হচ্ছেন।  কারণ, এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে তাদের ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু জানেন’তো, প্রকৃত ধার্মিকরা ধর্মের নামে বিদ্বেষ সহ্য করতে পারেন না। আর বাঙালরা আদিতেই ধর্মপ্রাণ।

১২ মে ২০১৫

রাষ্ট্রীয় শিশ্ন - ধর্ষন, খুন এবঙ ...

“চেনা যায়, শিশ্নোত্থিত রাষ্ট্র আর তার ব্যবস্থাপনাকে? চেনা
যায়?”-সময়ের এ প্রশ্নটির উত্থাপক বন্ধু বাঁধন অধিকারী।
লেখাটি শুরু করেছিলাম এক দিন আগে (১০ মে, ২০১৫)। মূল ফোকাস ছিলো – যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের চালানো নিষ্পেষনে। মূলত ব্যক্তিগত নানা কারণেই এটি শেষ হয়নি। এরই মধ্যে সামনে নতুন ইস্যু। কিঙবা নতুন নয়, এটাকে পুরানোও বলা যায়। আজ (১২ মে, ২০১৫) আরেক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় খুন হয়েছেন। অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর বাবুর মতো তাকেও প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে হত্য করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত তিন মাসের মধ্যে তৃতীয় নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখলো বাংলাদেশ। যৌন পীড়নের ঘটনার পুনুরাবৃত্তির দু’দিন পরই ব্লগার হত্যার পুনুরাবৃত্তি একই সুঁতোয় গাঁথতে চায় না মন। কিন্তু পরিস্থিতির প্রয়োজনে কখনো কখনো এমন প্রশ্ন’তো মনে জাগতেই পারে – এই রাষ্ট্রই কি নিপীড়ক বা এই রাষ্ট্রই কি খুনি? নাহ, পুরানো প্রসঙ্গে ফিরি। নতুন ইস্যুতে পুরানো ইস্যুরে চাপা দেয়ার ফাঁদে পা না দেই। কারণ এম্নিতেই ব্লগার হত্যা নিয়ে আলাদা করে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
“আপনাকে সমর্থন করি মানে সবকিছুতেই সমর্থন করতে হবে তা কিন্তু নয় প্রিয় প্রধানমন্ত্রী.. পহেলা বৈশাখে নারীর সম্ভ্রমহানীর ঘটনা ঘটেছে.. আপনি তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নিলে প্রতিবাদ হবেই.. ওরা বাসে পেট্রলবোমা মারেনি.. ওরা পুলিশের মাথা গুড়িয়ে দেয়নি.. ওরা নারীর সম্মানহানীর প্রতিবাদে নেমেছে.. আপনি বিশ্বের সবচেয়ে নারীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী.. এই প্রতিবাদে আপনিও সামিল জানি.. আপনার পুলিশ যে আঘাত করেছে সে আঘাত আপনার গায়েও লাগার কথা.. আপনি অনুভব করতে পারছেন না কেনো?” –এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্যকার মাসুম রেজার সাম্প্রতিক (১০ মে, ২০১৫) ফেসবুক স্ট্যাটাস। নিউজ ফিডে গত ৪৮ ঘন্টা যাবত এ জাতীয় স্ট্যাটাসের আধিক্য যে হারে বেড়েছে, তাতে আমি শঙ্কিত। কারণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ‘ডিজিটাল’ সরকারের আমলেই সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো নিষিদ্ধ বা বন্ধ করে দেয়ার নজির রয়েছে। অবশ্য আজকের ব্লগার হত্যাকাণ্ডের পর নিউজ ফিডের চেহারা দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে।
ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী ইসমত জাহানের সেই পাল্টা আঘাত
লেখাটি শুরু করতে গিয়ে আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নারী মরহুমা দাদী মরহুমা সৈয়দুন্নেছা বেগমকে মনে পড়লো খুব। দাদীর জন্ম হয়েছিলো রাজনৈতিক পরিবারে। তিনি ছিলেন ঝালকাঠীর বারৈয়ারা গ্রামের মীর মমতাজ উদ্দিনের জেষ্ঠ্য কন্যা। এই মমতাজ উদ্দিন একাধারে একজন জনপ্রিয় শিক্ষক এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন । তিনি এক নাগাড়ে ২৬ বছর নথুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন আবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ‘প্রেসিডেন্ট’ বলা হত। পরে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে পদটির নাম ‘চেয়ারম্যান’ হয়ে যায়। সে যাকগে, মূল প্রসঙ্গে আসি। স্মৃতি হাঁতড়ে দেখি – দাদীর কাছেই প্রথম শুনেছিলাম ‘শ্যাখের বেটি’ -এর গল্প। তার কাছেই জেনেছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্ব-পরিবারে নিহত হওয়ার সেই নারকীয় কাণ্ড। খেয়াল আছে, জায়নামাজে বসেই দাদী আমার কৌতূহলী মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। আর একটু পরপরই ঘোমটার প্রান্ত চেনে মুছে নিচ্ছিলেন সজল হয়ে ওঠা আঁখি। নিহত বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার এবং বেঁচে যাওয়া দুই কন্যার জন্য দাদীর সে আবেগ, আজও ভুলতে পারিনি। হয়ত এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের সামনে অজস্র বিশেষন যুক্ত করার সুযোগ থাকলেও আমার সবচেয়ে প্রিয় হয়ে রয়ে গেছে সেই ‘শ্যাখের বেটি’ উপমাটি।

প্রিয় দাদীর সেই ‘শ্যাখের বেটি’ গত ছয় বছর যাবৎ আমাদের প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ আজ আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান একজন নারী। তবুও আজ রাষ্ট্রই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় নারী নিপীড়ক! নাহ - নিপীড়ন, অত্যাচার, বস্ত্রহরণ, পাষবিক আচরণ বলে এই অপরাধকে আর হালকা করবো না। আজ থেকে এ জাতীয় ঘটনাকে শুধু যৌন সন্ত্রাস বা ধর্ষনই বলবো। দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনও আমায় সে অধিকার দিয়েছে। সেখানে বলা রয়েছে – “যদি কোনো ব্যক্তিঅবৈধভাবে যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোন বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানী করেন, তাহলে তার এ কাজ হবে যৌন পীড়ন।” তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সব কিছু বাদ দিয়েও সর্বাগ্রে একজন নারী; যিনি কন্যা, জায়া, জননী – এ তিনটি স্তরই চেনেন। সেহেতু নিশ্চয়ই জানেন, নারীকে শুধু পুরুষাঙ্গ ‍দিয়েই যৌন পীড়ন বা ধর্ষন করা হয় না। একজন কামুক পুরুষ তার প্রতিটি অঙ্গ ব্যবহার করে। অনেক সময় শুধু লোলুপ দৃষ্টিও যে কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে – তা বোধকরি দেশের প্রতিটি মেয়েরই জানা আছে।

ইসমতের উপর পুলিশী পীড়নের আরো চিত্র
বঙ্গাব্দ বরণ, তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি চত্ত্বর সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে নারীদের বস্ত্রহরণ ও শ্লীলতাহানির যে ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পায়নি জাতি।
এর আগের ও পরের প্রায় সকল ঘটনায় তিনি প্রেস সচিবদের মাধ্যমে কখনো শোক আবার কখনো শুভেচ্চা বার্তা, অর্থাৎ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনার ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও ঠিক পরের দিনই এ নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে অনলাইন পত্রিকা আমাদের বুধবার – এ প্রকাশিত একটি লেখায় শাহাদত হোসেন বাচ্চু বলেছেন, “বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে সফল, সুখী ও পরিতৃপ্ত মানুষটি কে? উত্তর হতে পারে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার পার করছে ষষ্ঠ বছর। গত বুধবার, বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে গণভবনে কলামিষ্ট, লেখক, টক শো’র আলোচক, সঞ্চালকসহ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তাঁর হাস্যোজ্বল চেহারায় ছিলো না কোন উদ্বেগ-উৎকন্ঠার ছাপ, ঠিকরে পড়ছিল গভীর আত্মবিশ্বাস। ওই মতবিনিময়কালে এবারের পয়লা বৈশাখ পালনের কথা বলছিলেন, টেলিভিশনে তিনি দেখেছেন। বিশদ উল্লেখ না করে ‘বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট’ বলে প্রসঙ্গান্তরে চলে গেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা অনেকেই বুদ্ধিমান নই কিম্বা বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাও করি না। ফলে আমরা আম-জনতা ইশারায় অনেক কিছুই হয়তো বুঝতে পারি না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে সকল বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারাটি করেছেন, তারা হয়তো বুঝে গেছেন অনেক কিছুই।” শাহাদত হোসেন বাচ্চু আরো লিখেছেন, “আম-জনতা ইশারায় কিছুই বুঝতে চায় না। চাই একটু স্বস্তি-শান্তি আর জীবনের নিরাপত্তা। স্বস্তি-শান্তির বদলে জুটছে আতঙ্কিত জীবন-যাপন। আসলে জনগন ইশারায় কিছুই বুঝতে চায় না। তারা চায় সত্যিকার জনকল্যাণকর রাষ্ট্রাচারসম্মত গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার। প্রধানমন্ত্রী ইশারায় যদি সেটি বোঝাতে চেয়ে থাকেন, তাহলে জনগন তা অবশ্যই বুঝে নেবে।”
বৈশাখের সংঘবদ্ধ সেই যৌনসন্ত্রাসের প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলনরত ছাত্র ইউনিয়নের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য ইসমত জাহানের সাথে পুলিশ, মানে আইনের রক্ষকরা যে আচরণ করেছে, সেটা আইনানুযায়ীই ‘যৌন পীড়ন’। অর্থাৎ পুলিশ ভাইয়েরা পুনরায় প্রমাণ করলেন, তারা অর্থাৎ এ রাষ্ট্র শুধু যৌন পীড়নের সমর্থকই নয়, ক্ষেত্র বিশেষে নিজেই পীড়ক, ধর্ষক। অবস্থাদৃষ্টে আপন রাষ্ট্রকেই আজ যৌনসন্ত্রাসী বা ধর্ষক ভাবতে হচ্ছে হায়। শুধু আমাদের মা, বোনকে নয়; দেশমাতৃকাকেই ধর্ষন করছে রাষ্ট্রযন্ত্র। এতে অবাক হতাম না। কারণ হাজার বছর ধরে শোষণযন্ত্রের স্বভাবই যে এমন, তা সচেতন সকলেরই জানা আছে। কিন্তু ওই যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের চাবি এখন যার আঁচলে বাঁধা, তিনি সেই ‘শ্যখের বেটি’। তাকে বা আমাদের পুলিশ বাহীনিকে বিব্রত করার কোনো বাসনা নিয়ে এ্ই লেখা লিখতে বসিনি। শুধু রাষ্ট্রীয় প্রধানের কাছে আমার প্রশ্ন – পহেলা বৈশাখ ইস্যুতে আপনার ‘আনুষ্ঠানিক নিরাবতা’ কি নিপীড়কদের মানুসিক শক্তি বাড়ায়নি? এর পরবর্তী পুলিশী পীড়নের জন্যও কি পরোক্ষভাবে আপনিই দায়ী নন? এই দুটো প্রশ্নকে কারো বেয়াদবি মনে হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
মাসুম রেজার সেই স্ট্যাটাস
চলতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “নারী সমাজের উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন। তাই তার সরকার নারী সমাজের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। যারা ইসলামের নামে নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারা ইসলামের অনুশাসন মানে না।” একইসঙ্গে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেশের নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এটি গত ৮ মার্চ, ২০১৫ - একটি অনলাইন পত্রিকার খবর। এটা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর উন্নয়ন’। ওই অনুষ্ঠানের আরেকটি খবরে বলা হয়েছে - নারী সমাজের উন্নয়নে নিজ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে নারীদের কল্যাণে কাজ করে। এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাংলাদেশের নারীদের কর্মস্পৃহা, দক্ষতা, ত্যাগের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নারীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। সরকারের নারী উন্নয়নমুখী নীতির কারণে এখন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, জাতীয় সংসদের উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, অনেক বিচারক, সচিব, এমনকি ভিসিও হচ্ছেন নারী। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩টি সংরক্ষিত আসন সৃষ্টির মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে নারী নেতৃত্ব বিকাশে ফলপ্রসূ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়নসহ নারী সমাজের উন্নয়নে ৬ বছরে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।” বাংলাদেশের সাউথ-সাউথ পুরস্কার ও নারী সাক্ষরতায় ইউনেস্কো ‘শান্তি বৃক্ষ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার অর্জনের কথা ও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়াও বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মান বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এসব ভুলে যাইনি। শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীও ভুলে যাননি নিশ্চয়ই। কারণ আমরা জানি তার সরকারই নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩, ডিএনএ আইন ২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। মাতৃত্বকালীন ছুটিও ছয় মাসে উন্নীত করেছে এ সরকার। সেই সাথে মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করেছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোও এখন জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করছে। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, এসব কি তবে শুধুই কাগজপত্রে হচ্ছে? নাহ, এমনটা আমি অন্তত মনে করতে চাই না। তবে মনে পরে যায় শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদকে। কমপক্ষে ১০ বছর আগে নিজের “১০,০০০ এবং আরো একটি ধর্ষণ” উপন্যাসের মুখবন্ধে তিনি লিখেছিলেন - ‘বাঙলাদেশ এখন হয়ে উঠেছে এক উপদ্রুত ভূখণ্ড; হয়ে উঠেছে ধর্ষণের এক বিশাল রঙ্গমঞ্চ, ৫৬,০০০ বর্গমাইলব্যাপী পীড়নের এক বিশাল প্রেক্ষাগার। ধর্ষিত হচ্ছে মাটি মেঘ নদী রৌদ্র জোৎস্না দেশ, নারীরা।’


আন্দোলনরতদের ওপরে পুলিশের লাঠিচার্জের বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ গত ক’দিনে ঘেঁটে দেখলাম। পুলিশের লাঠিচার্জে আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলের অজস্র ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবেই। ওগুলো একটু খেয়াল করে দেখলেই দেখবেন - ক্ষুব্ধ ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী ইসমত জাহান জলকামানধারী দাঙ্গাগাড়ির গায়ে ঢিল ছুড়ে মারার সাথে সাথে তাকে পিছন থেকে এসে এক থাপ্পরে ফুটপাতে শুইয়ে ফেলে একজন সুঠার দেহের পুরুষ পুলিশ। তিনি কোনো মতে উঠে পাশে দাঁড়ানো এক আলোকচিত্রীর পেছনে লুকিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে – পুলিশ সদস্যরা তাকে ধটেনে হিঁচরে বের করে লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে ধাওয়া করে। এরপর তিনি দৌড়ে গিয়ে একটি গাছের আড়ালে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখান থেকেও তাকে চুলির মুঠি ধরে বের করে এনে পিটাতে পিটাতে আবারো শুইয়ে ফেলা হয়।
জানা হয়নি ওই পুলিশ সদস্য জানতেন কি’না, সেদিন ছিলো বিশ্ব মা দিবস। আর এই দিনে তিনি বা তারা যাকে পেটাচ্ছিলেন, তিনিও মায়েরই জাত। যে কি’না নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষার দাবিতেই আজ রাজপথে, নিপীরকদের শাস্তির দাবিতে। ওই সদস্য না জানুক, তার কর্তারা তো জানতেন- বৈকি। এ কারণেই সেদিন ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলাম। চিঠিটি এখানেও সংযুক্ত করছি -
হে মহান বিজ্ঞ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), এ কথাগুলো সম্ভবত আপনার কান অবধি পৌছাবে না। তবুও বলছি, বিশ্ব মা দিবসে মায়ের জাতকে পিটানোর জন্য নারী পুলিশ ব্যবহারে আপনার গদি খুব একটা নরবরে হয়ে যেত না হয়ত। যৌনসন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন দমাতে নারী পুলিশদের কি ওপর ভরসা রাখতে পারছিলেন না? আন্দোলন দমাতে এসে তাদেরও প্রতিবাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিলো কি’না সে আলোচনা আপাতত উহ্য রাখছি। শুধু একটু জানিয়ে রাখছি, নিজ বাহীনির নারী সদস্যদের ওপর আপনার এই আস্থাহীনতা, তথা নারীদের শায়েস্তার জন্য পুরুষ পুলিশ ব্যবহার এই জাতিকে ফের সেই শামসুন্নাহার হলের ঘটনাকে মনে করিয়ে দিয়েছে। তবুও দেশের সুবোধ নাগরিকের মতো আমরা ট্যাক্সের পয়সায় আপনাদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করবো নিশ্চয়ই। পুনশ্চঃ পরে জেনেছি - “সেখানে পুলিশের নারী সদস্য থাকলেও তাঁরা নীরব ছিলেন।” লিখেছে দৈনিক প্রথম আলো।
খবরে দেখলাম নারী লাঞ্ছনার বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কনস্টেবলের নাম আনিস। গতকাল (১১ মে, ২০১৫) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখা থেকে সাংবাদিকদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একই দিনে ডিএমপি কার্যালয় থেকে পাঠানো আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা কীভাবে ব্যারিকেড পার হয়ে মিন্টো রোডের স্পর্শকাতর মন্ত্রিপাড়ায় এসে পুলিশের ওপর ‘হামলা চালিয়েছেন’ এবং পুলিশ কোন প্রেক্ষাপটে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করেছে তা ‘যাচাইয়ে’ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি)। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) বেলালুর রহমানকে। কমিটির দুই সদস্য হলেন ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) কৃষ্ণ পদ রায় ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

উল্লেখিত সংবাদ ভাষ্যগুলো পড়তে পড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আরো কিছু কথা মনে পরলো। এ দেশে অপরাধীদের মারা হলে মায়াকান্না করা হয় উল্লেখ করে ক’দিন আগেই তিনি বলছিলেন - “পুলিশের অধিকার আছে নিরপরাধ মানুষের জানমাল বাঁচানো। মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, বাসে-রেলে আগুন দেয়া হচ্ছে, রেললাইন তুলে ফেলছে, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে, কিছু করা যাবে না! কিছু করলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। এ হতে পারে না।”

সম্ভবত অনেকেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সেই বক্তব্য ভুলে যাননি। তিনি বলেছিলেন, “কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ পেলে পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। যে ফুটেজ পাওয়া গেছে, তাতে বিবস্ত্র করার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, “ পহেলা বৈশাখের এ ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটানো হয়েছে। যদি কারও কাছে কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য থাকে তাহলে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে তা পুলিশের কাছে জমা দিন।” এনিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ঘাঁটলেই জানবেন, সেদিনও পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিলো স্মারকলিপি নিয়ে সচিবালয়মুখী আন্দোলনকারীদের সাথে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলামের সেই সংবাদ সম্মেলনের কথাও নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, “নারীকে বিবস্ত্র করে যৌন হয়রানি করার কোন ঘটনা ঘটেনি, এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে বিবস্ত্র করে তার ছবি মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার করানো হচ্ছে।” তবে টিএসসির আশপাশের এলাকায় ঠেলাঠেলি হয়েছে বলে স্বীকার করে মনিরুল ইসলাম বলেন, “এখানে ঠেলা-ধাক্কা, হাতাহাতি হয়েছে। একেবারেই কিছু বিকৃতমনা যুবক এবং যারা অপুরুষসুলভ, তারাই হয়ত এ কাজটি করেছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ চলছে।”

অমি রহমান পিয়ালের স্ট্যাটাস
বর্ষবরণ উৎসবে যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে লজ্জা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘সব নারীর কাছে’ ক্ষমা চেয়েছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। পুলিশের ‘লোক দেখানো’ ভূমিকা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, “নববর্ষের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানি ও এ ঘটনা আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- কী হিংস্রতা ও নগ্নতা আমাদের মনের গহিনে বাসা বেঁধেছে। কী ঘৃণ্য মানসিকতা আমাদের পেয়ে বসেছে।” এবার তিনি কী বলেন তা দেখারও অপেক্ষায় আছি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। নগর নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগদ খালেদা জিয়ার ওপর সরকার সমর্থকদের দফায় দফায় আক্রমণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই শুধু নন, তার সন্তান ও অবৈতনিক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা’ও সকলের মনে আছে আশাকরি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘৬৬৫ জন বিএনপি নেতা পেট্রোলবোমাসহ ধরা পড়েছে। ৭০ জনের মতো সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়েছে এবং তারা গণপিটুনির শিকার হয়েছে। বোমা বানাতে গিয়ে নিজেদের নেতাও মারা গেছে। বহু মায়ের বুক খালি করেছেন। বহু বোনকে বিধবা করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) এখনো প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তার কথায় আমি অবাক হয়ে যাই। এখন যদি সাধারণ মানুষ তার ওপর প্রতিশোধ নেয় তা হলে তিনি কী করবেন। তিনি দেশের মানুষকে এতো বোকা মনে করেন কেন?’ আর তার পুত্র জয় ফেসবুকে লিখলেন – “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে মানুষ আবারও পাথর এবং লাঠি নিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনাগুলোতে আসলে আওয়ামী লীগের তেমন কিছু করার নেই। দেশের মানুষ, বিশেষ করে ঢাকার মানুষ গত তিন মাসে বাস এবং গনপরিবহনে বিএনপির দ্বারা অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছেন। বিএনপি ১৬০ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, বহু মানুষ আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে শুয়ে আছেন। ক্ষোভটা সহজেই বোধগম্য।
ক্ষমতার চূড়ান্তে থাকা এক মা বা তার ছেলের এমন বক্তব্য প্রতিহিংসায় আস্কারা দেয় কি’না – সে প্রশ্ন এখানে তুলবো না। কারণ এটা আমি মনে করি না যে ওনারা ভুলে গিয়েছিলেন যে বেগম খালেদা জিয়াও সর্বাগ্রে একজন নারী, দেশের এক সম্মানিত নাগরিক। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া একজন নারীর কতটা সম্মান পাওয়া উচিত, তা’ও বোধকরি ওনাদের অজানা নয়। এমন একজন নারীর ওপর হামলার পর অমন বক্তব্য আরো কতটা ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিতে পারে – সে শঙ্কায়ও ছিলাম। হয়ত ছিলেন আরো অনেকে। ক’দিনের মধ্যেই প্রমাণ পেলাম – শঙ্কা ভুল ছিলো না। নগর নির্বাচনের দিন সারা ঢাকাতেই সরকার বিরোধী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা যে পরিমাণ নিগ্রহের স্বীকার হয়েছেন, তার মধ্যে নারীর সংখ্যাও এক্কেবারে কম ছিলো না।
বেগম জিয়াও এই ইস্যুতে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ২৬ এপিল, ২০১৫ – এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন যৌন পীড়নের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে  জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। খালেদা জিয়া বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের যে বোনেরা ও মেয়েরা ন্যাক্কারজনকভাবে নির্যাতিত ও সম্মানহানির শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি। এসব ঘৃণ্য অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।” তিনি আরও বলেন, 'যে সরকার ও প্রশাসন কোনো সামাজিক উৎসবে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে পারে না এবং এমন ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিকার করতে পারে না, তাদের লজ্জিত হওয়া উচিৎ। ক্ষমা চেয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ।'


একই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রী আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। তাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উত্তরা, কারওয়ান বাজার, ফকিরেরপুলের কাছে ও বাংলামোটরে আমার গাড়িবহরে পরপর চারদিন হামলা করেছে। বাংলামোটরে আমাকে বহনকারী গাড়ির উপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেয় এবং হামলাকারীদের পুলিশ পুরোপুরি সহযোগিতা করে। সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে কারওয়ানবাজারে। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। বহরের অনেকগুলো গাড়ি ভেঙ্গে ফেলে। হামলার সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানো হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, 'সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আমি তখন সবেমাত্র গাড়িতে উঠে বসেছি। আমি যে-পাশে বসা ছিলাম, সেই পাশেই গাড়ির জানালার কাঁচে গুলি লাগে। এতে গাস ভেদ না করলেও তা ফেটে যায়। আলাহর রহমতে অল্পের জন্য আমার জীবন রক্ষা পায়। কতটা মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করলে বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ ফেটে যায়, তা সবাই বোঝে। এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।” প্রতিটি হামলার জন্য তিনি এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে বলেন, “প্রতিটি হামলার ঘটনাই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সরাসরি উস্কানির ফল এবং সুপরিকল্পিত। এসব হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অংশ নেয়।
এদিকে যৌন সন্ত্রাস বিরোধী ‘পাল্টা আঘাত’ শীর্ষক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে যখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে দেশের সচেতন সমাজ, ঠিক তখনই ফের ব্লগার হত্যার মতো ইস্যুও তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একই দিনে নিখোঁজ এক জাতীয় নেতার (বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ) সন্ধান লাভ ও ফের ভূ-কম্পনের ঘটনাও এলোমেলো করে দিচ্ছে অনেক ভাবনার গতি-প্রকৃতি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মানসিক হাসপাতালে অবস্থানরত ওই নেতা বা নেপালে জন্ম নেয়া ভূমিকম্পের প্রভাব জনমনে কেমন হতে পারে তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়।

শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এবারের বৈশাখে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছিলো জগন্নাথ আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়ায় টিএসসি’র ঘটনাতেও এই সংগঠনের নেতাকর্মিদের জড়িত থাকার গুজব ছড়িয়ে পরে। মূলত বিগত বছরগুলোতে তাদের এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের নজিরই এটি ছড়াতে সাহায্য করেছে। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মিদের মাধ্যমে পুলিশের হাতে আটক হওয়া নিপীড়কদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনা – এ গুজবকে আরো শক্তিশালী করেছে। এতে হাওয়া দিয়েছে খোদ ছাত্রলীগও। এনিয়ে ২২ এপ্রিল এক সংবাদ পরিবেশন করে দৈনিক মানবকণ্ঠ। “ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়ন : সপ্তাহ পেরুলেও কর্মসূচিহীন ছাত্রলীগ : কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারণায়” শিরোনামের ওই সংবাদে বলা হয়, রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। ঠিক তেমনি বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত বর্বরোচিত যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যেখানে একের পর এক কর্মসূচি পালন করছে, সেখানে প্রায় নিশ্চুপ ছাত্রলীগ। ঘটনার সাতদিন পেরুলেও নেই কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যস্ত আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগে। এ নিয়ে সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভেতরেও বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এ ধরণের সংবাদ এসেছে আরো একাধিক গণমাধ্যমে। ওইসব সংবাদে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বর্বর ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে নামমাত্র একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। তাও আবার তিনদিন পর। বিবৃতিতে ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে গত মঙ্গলবার বিকেলে ৩০-৩৫ জনের একদল বখাটে যুবক বেশ কয়েক নারীকে যৌন হয়রানি করেছে। তারা আগন্তুকদের সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করে। জাতির জনকের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ হীন ও ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। অতি দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতেই দাবি শেষ! এরপর নেই কোনো দৃশ্যমান কর্মসূচি। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে। প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ মনোনীত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের গণসংযোগে ব্যস্ত।

প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে আরেকটি অনলাইন। ‘ছাত্রলীগকে জড়ানো হচ্ছে গোষ্ঠীস্বার্থে : প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, “পহেলা বৈশাখের ঘটনায় দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নামে কুৎসা রটানোর অপপ্রয়াস রুখতে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন।” তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসটিও এখানে তুলে ধরা হলো -
গরু ঘাস খায় / আমি গরু খাই। সুতরাং আমি ঘাস খাই ... যুক্তি বিদ্যার যুক্তিগুলো এইরকমই। যা অবশেষে ভুল প্রমাণিত হয়। "যেহেতু সুশীলদের কাছে সব দোষের দোষী ছাত্রলীগ হয়। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতনের যে ঘটনা এটা ছাত্রলীগই করেছে।" কিছু অশিক্ষিত/অর্ধ শিক্ষিত মানুষ এই রকম যুক্তি দিয়েই ছাত্রলীগের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে কিছু পেইড পেশাজীবীও রয়েছেন। কারণ সামনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, সরকার সমর্থক প্রার্থীদের হারানোর জন্য এটা খুব বার্নিং ইস্যু। যেমন গত নির্বাচনে ছিল হেফাজত ইস্যু। অথচ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী, যিনি মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে দুস্কৃতিকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন তিনিও কিন্তু প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠন এর নাম বলেননি। নিশ্চয় দুস্কৃতিকারী কুলাঙ্গারগুলো ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক হলে তার জানার কথা। কারণ উদ্ধারকারীরাও ৭/৮ বছর ধরে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছেন। সুতরাং প্রতিপক্ষকে চেনার কথা। যারা কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া ছাত্রলীগকে দোষারোপ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা কি জানেন, আপনিও যে ওই "কুলাংগারদেরই একজন।" কারণ আপনি, আপনার গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে আসল কুলাঙ্গারদের বাঁচিয়ে দিচ্ছেন।
অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষের রাতে শাওন আকতার বাঁধন নামে এক নারীকে বিবস্ত্র করা হয়েছিলো। তখনও যে সোনার ছেলেরা এই অপকর্ম করেছিলো তারা ক্ষমতার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। আর তখনও বর্তমান ক্ষমতাসীনরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো। পুলিশ ছিলো নীরব। এ নিয়ে মামলা হলেও আসামিরা সবাই মুক্তি পেয়েছিলো। তাছাড়া প্রবল চাপের কারণে সেই বাঁধন নিজেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। ২০১৪ সালের এক খবরে বিবিসি বলছিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ওই বছরে কমপক্ষে ২০টি যৌন হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। বিগত ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল অবধি এ জাতীয় শত শত ঘটনার জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমেও এসেছে খুব কম সংখ্যক ঘটনা। তবে যেগুলো এসেছে, ব্যাপক আলোচিত হয়েছে - সেগুলোয় ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্টদের জড়িত থাকার প্রমাণই মিলেছে বার বার।
কার জানি এক লেখায় পেয়েছিলাম, সেই সুদূর অতীতে - বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেই (১৯৭৩ সালে) শহীদ মিনারে ছাত্রীদের ওপর হামলে পড়ার মতো ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে আছে। তাদের বর্তমান উত্তারাধিকারীরা সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রেখেছে। এই ছাত্রলীগ তৈরি করেছিলো সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষক। তাদের এ জাতীয় অনাচার নিঃসন্দেহে ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতিয়ার।

অনেকের হয়ত প্রাসঙ্গিক মনে না’ও হতে পারে। তবুও সাংবাদিক ও ব্লগার কল্লোল মুস্তফার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস এখানে হুবহু উল্লেখ করছি।
>> অভিজিৎ রায়ের খুনিরা এখনও ধরা পড়েনি/চিহ্নিত হয়নি, ওয়াশিকুর বাবুর খুনিরা জনগণের তৎপরতায় ঘটনাচক্রে ধরা পড়লেও পেছনের ব্যাক্তি বা সংগঠন এখনও ধরা পড়ে নি। হুমায়ুন আজাদ হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে নাস্তিক অভিযোগে যাদের উপরই হামলা হয়েছে, সেসবের কোন তদন্ত কাজেই সন্তুষ্ট হওয়ার মত কিছু দেখি না। ক্ষমতাবানরা বিপন্ন বোধ করলে যেভাবে পুলিশ কিংবা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী মাঠে নামে, অন্যান্য আরও ঘটনার মতো এই হত্যাকান্ডগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে মূল হোতা সনাক্ত করার ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ নেই। যে কারণে পেছনের মূল শক্তি তো দূরের কথা রেদোয়ান রানা কিংবা মাসুম ভাইদের মতো সামনের সারির সমন্বয়করা পর্যন্ত ধরা পড়েনা। এ রকম একটা বাস্তবতাই লেখক অনন্ত বিজয় দাসকে কুপিয়ে হত্যার পরিসর তৈরি করে দিয়েছে।

>> নাস্তিকতার কারনেই একের পর এক হত্যা কারা হচ্ছে বলে মনে হলেও নাস্তিকতাকে পুঁজি করে হত্যার পেছনে অন্য কোন মোটিভ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। ইতিহাস বলে, নাস্তিক আস্তিক হিন্দু মুসলিম ইত্যাদি বিভিন্ন দাঙ্গা হামলা আক্রমণ ইত্যাদির পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারলৌকিক বিষয়ের চেয়ে ইহলৌকিক নানান বিষয় কাজ করে। নাস্তিকতা বিষয়টি তো বাংলাদেশে নতুন নয় কিন্তু এভাবে চাপাতি সহ হামলা তুলনামূলক নতুন। কি এমন ঘটলো যে কিছু লোক ব্লগারদের উপর চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে? মাদ্রাসা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধর্মপ্রাণ কিশোর বা তরুণটি হামলা করছে, সে হয়তো ধর্ম রক্ষা করছে ভেবেই হামলাটি করছে, কিন্তু যারা তার ভেতরে থাকা ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাকে উসকে দিচ্ছে, চাপাতি সর্বরাহ করছে, ভিকটিমের নাম ঠিকানা ছবি হাতে ধরিয়ে হামলায় উদ্বুদ্ধ করছে- তারা স্রেফ ধর্মরক্ষার জন্য করছে এরকম আমার মনে হয় না। এর পেছনে ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর একেবারেই ইহজাগতিক স্বার্থসিদ্ধির বিভিন্ন কার্যকারণ থাকতে পারে।কিন্তু মূল হোতারা চিহ্নিত না হলে আসলে এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত কিছু বলা মুশকিল।

>> জঙ্গিবাদের উত্থানে সরকারের মুখের কথা আর কাজের মধ্যে কন্ট্রাডিকশান স্পষ্ট।মুখে জঙ্গিবাদ দমণের কথা বললেও এবং জঙ্গিবাদ বিরোধীতার কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা লূটলেও- প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানান উপায়ে নিজেরাই ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার করে, বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করে- যা ধর্মীয় জঙ্গিবাদ উত্থান ও লালন পালনের বাস্তব পরিসর তৈরী করে।
নিহত লেখক - ব্লগার অনন্ত বিজয়
কয়েক বছর যাবৎ একটি নতুন সিরিজ লিখছি, কবিতার। নাম দিয়েছি ‘গাধার গয়না’। এই পরম্পরার একটি লেখা দিয়েই আজ শেষ করলাম।

- স্বজাতি বা মনুষ্যকূলকে

নিজেরাই ডেকে এনে বালা
সব্বাই খুব উদ্বিগ্ন শালা !!
এতেই করছো বাপ বাপ
কেবল তো খেলে তলঠাপ;
আসছে মহাদূর্যোগ মামা-
ক্ষেপেছে স্রষ্টা বা প্রকৃতি মা।
বলছি এই যে এত বোমা-
গুলি আর গোলার বিক্রিয়া
- বিচ্ছুরণ বাড়ন্ত যে তেজে
এড়াতে পারবে ভেবেছিলে?
নাকি এতই ব্যস্ত তোমরা
ভাবার সময় নেই কারো
ভারসাম্য নষ্টকারী কারা
ক্ষমতা লিপ্সায় পথভ্রষ্ট-
আর থাক, ভেবেছ যথেষ্ট।

এবার আসো তাদের দেখি
অভিশপ্ত মসনদে যারা -
হাতে হাত ধরে চলো যাই
দেই সিংহাসন ধরে নাড়া।

লেখাটি প্রকাশের আগেই এলো নতুন সংবাদ !
পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে নারীদের ওপর সংঘবদ্ধ যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে চার-পাঁচ জন যুবকের দুষ্টামির ছলে ঘটা ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এ ঘটনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা লিটন নন্দী ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। আজই দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ জাতীয় মন্তব্য করেন। আইজিপি বলেছেন, ‘বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে হাজার হাজার মানুষ ছিল। তাদের মাধ্যে মাত্র চার-পাঁচ জন যুবক ওরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সময় জনগণ কী করেছে? একজনও কেন তাদের ধরতে পারল না। জনগণেরও তো ক্ষমতা রয়েছে। দুষ্টামির ছলে চার-পাঁচ জন যুবক কী করেছে তা জনগণই প্রতিহত করতে পারত। এ ঘটনা নিয়ে লিটন নন্দী বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। এসব তথ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে আল-কায়েদা প্রসঙ্গে তিনি বলেনে, ‘বাংলাদেশে আল-কায়েদার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশের কোনো সংগঠন তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ একের পর এক ব্লগার হত্যা প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, কিছু ব্যক্তি ব্লগারদের হত্যার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে। কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না। ফলে হত্যাকাণ্ডের পর তাদের গ্রেফতারে নতুন করে কৌশলী হতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

অন্যান্য পোস্টঃ
বাংলা জাগবেই জাগবে...
আহা কী অর্জন - কারচুপি, বর্জন ...
ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ
বর্ষবরণে বস্ত্রহরণ কী পরিকল্পিত !
এ কোন উগ্রবাদের মহড়া ...
যদি মনে শঙ্কা বিরাজে, সরকার লাগে কি কাজে ?
বিএম কলেজের একাংশে নারীরা নিষিদ্ধ !
বিশ্বের চেয়ে দেশের শান্তিরক্ষা কঠিন !

১৬ এপ্রিল ২০১৫

বর্ষবরণে বস্ত্রহরণ কী পরিকল্পিত!

 Women in Bangladesh
© eon's photography / pap
বঙ্গাব্দ বরণ, তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি চত্ত্বর সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে নারীদের বস্ত্রহরণ ও শ্লীলতাহানির যে ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে কুয়েত প্রবাসী আবু আশরাফ কাজী বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ - এটা আল্লাহর পক্ক (পক্ষ) হতে।’ চট্টগ্রামে বসবাসকারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সালমান আব্দুল্লাহ আরো এক কাঠি সরেস। তার মন্তব্য, ‘এটাই চাইছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাদেরকে আরো লাঞ্ছিত হওয়ার তাওফিক দিন।’ সৌদি প্রবাসী আবু ইউসুফ বলেছেন, ‘যারা এই কাজটি করেছে তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। এই মেয়েদের এটাই পাওনা ছিলো!’ দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ মিজান মনে করে, ‘নিজেকে ভোগের পন্যের মত উপস্থাপন করলে - শ্লীলতাহানী হতেই পারে।’ আর বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) এর ইলেট্রিসিয়ান রাইহান হোসাইন -এর অভিমত আরো ভয়ংকর। তার বক্তব্য, ‘চুদে ফাটিয়ে দেয়া উচিত।’ কী, আঁতকে উঠলেন। ওঠারই কথা। পহেলা বৈশাখের অমন পৈশাচিক ঘটনাকে আল্লাহর নেয়ামত মনে করে উল্লাসিত হওয়া অজস্র মানুষ স্বজাতি জেনে আমিও আতঙ্কিত।

আমার দেশ অনলাইনের ফেসবুক পেইজ থেকে নেয়া স্ক্রিনসট
জ্ঞানসূত্রে নয়, জন্মসূত্রে পাওয়া ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ বা উগ্র ধর্মান্ধ এই গোষ্ঠী নারীকে আজও পর্দাবন্দী দেখতে চায়। তাদের দৃষ্টিতে নববর্ষ উদযাপনও ধর্মবিরোধী। যে কারণে বস্ত্রহরণ ও শ্লীলতাহানির পক্ষে সাফাই গেয়ে আর উল্লাস করেই তারা ক্ষান্ত নন। লাঞ্চিতদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সেদিনের দলবদ্ধ যৌন সন্ত্রাসীদের বাহবা দিতেও তারা সরব। তাদের মতে, বঙ্গাব্দ বরণকারী পুরুষদের হত্যা বা নারীদের বিধর্মী জ্ঞানে ‘গণিমতের মাল’হিসেবে গণ্য করা জায়েজ। একই চেতনায় ২০০১ সালে ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে হত্যা করা হয়েছিলো ১০ জনকে। যে কারণে এবারও যে ঘটনা ঘটেছে - সেটা কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ কি’না - তা অবশ্যই ভাবা উচিত । একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, বেশ ক’দিন আগে থেকেই বর্ষবরণ উদযাপন ইসলাম বিরোধী বলে অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রচারণা চালিয়ে আসছে এই গোষ্ঠী। এরই ধারাবাহিকতায় ‘অপারেশন ভুভুজেলা’ চালানো হয়েছে কি’না - তা’ও খতিয়ে দেখা দরকার।
আরো একটি স্ক্রিনসট
নানা ঘটনায় আলোচিত গণমাধ্যম আমার দেশ অনলাইন - বিশেষ গোষ্ঠীটির অলিখিত মুখপাত্র হয়ে উঠেছে। তাদের ফেসবুক পেইজে আলোচ্য ঘটনার সংবাদ সংযোগে উল্লেখিত মন্তব্যগুলো লিখেছেন সংশ্লিষ্টরা।  আরো শত শত অমন মন্তব্য রয়েছে সেখানে।  এর মধ্যে রিসান এম তারেক  আলোচ্য ঘটনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তার মন্তব্য ছিলো - ‘থ্যাংকস ভাই খবরটা দেয়ার জন্য। ঘটনার বাস্তব সাক্ষী আমি।’ হে মহান পুলিশ ভাইয়েরা, আপনাদের জন্য অন্তত একজন সাক্ষীর সন্ধান রেখে গেলাম। এখানে আরো কতিপয় মন্তব্য উল্লেখ করছি -

রাজশাহী কলেজের ছাত্র তানভীর কবির বলেছেন, ‘হে জাতি শুনে রাখ, এটা ইসলাম থেকে দূরে যাওয়ার ফল।’ ইতালী প্রবাসী আনোয়ার হোসেইন লালন এর মন্তব্য, ‘আল্লাহ্ নিষেধ করেছেন এসব আকাম কুকাম করতে। তোমরা নারীরা যখন শুনবে না, কি আর করার। যাও - ঘরের বাহিরে যাও ছেলে বন্দুদের (বন্ধুদের) সাথে আনন্দ করো, কাদঁছ কেন এখন?’ চট্টগ্রামের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র শফিকুল ইসলাম স্বপন বলেছেন, ‘করবে না কেন? ঢলা খাওয়ার জন্যই যায়, ঢলা দিয়ে দিছে - এতে তো খুশী হবার কথা। এদের লজ্জা কোনোদিন হবে না। আবার দেখবেন আগাম বছর ঐ মেয়েগুলোই নববর্ষ পালন করতে যাবে। আমার মনে হয় উচিত প্রাপ্য পাইছে।’

বর্ষবরণ উদযাপন ইসলাম বিরোধী বলে প্রচারে যা বলা হচ্ছে ...
শিশির ভেজা রাজকন্যা নামের একটি আইডি থেকে লেখা হয়েছে, ‘বেশি বাঙ্গালীয়ানা ফলাতে গেলে এটাই হয়।’ আরব আমিরাত প্রবাসী মহিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘এরই নাম বৈশাখী পূজা।’ ময়মনসিংহের সরকারি চাকুরে মাহমুদুল হাসান রাসেল লিখেছেন, ‘এই তো পয়েলা বৈশাখ পালনের মর্মকথা বেরিয়ে আসছে।’ চট্টগ্রামের মো. তোহা -এর দাবি, ‘কিছু মনে করার কি আছে? অসাম্প্রদায়িক এবং বাঙ্গালী চেতনায় অতি অনুপ্রাণিত হলে, মাঝে মধ্যে এরকম হতেই পারে, চেতনা বলে কথা!’ যশোরের আব্দুল জলিল লিখেছেন, ‘এই দেশে ইসলামিক আইন চালু হলে এই সব অপকালচার থাকবে না ইনশাআল্লাহ।’ এমন মন্তব্য আরো অজস্র রয়েছে। ঢাকা সিটি কলেজের সাবেক ছাত্র নাইম আহমেদ লিখেছেন, ‘ইসলামের বাইরে গেলে এমনি হবে। এত কেবল শুরু।’ সিঙ্গাপুর প্রবাসী নজরুল নাজির -এর মন্তব্য, ‘যেমন কর্ম তেমন ফল। মাগিরা বর্ষবরণ চোদায়।’ চট্টগ্রামের মনুয়ার আল ইসলাম বলেছেন, ‘তথাক‌থিত সু‌শীল সমাজ বাংলা সংস্কৃ‌তির না‌মে যারা বাংলা নবর্বষ‌কে যারা বেহায়াপনায় রুপ (রূপ) দি‌য়ে‌ছে - তা‌দের মা-বোন‌কে রাস্তায় এনে এভা‌বে উলঙ্গ করা দরকার।’
এখানে একটু বলে রাখি, এই দেশে এমন ঘটনার সামাজিক প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়। কারণ এর উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতের সেই বাঁধন ট্রাজেডি অনেকেরই মনে আছে আশাকরি। সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনেই তার শ্লীলতাহানি হয়েছিলো। সেই ঘটনার পর থেকে খ্রীস্টাব্দ উদযাপনে যে কড়াকড়ি আরোপ হয়েছে তা আজও শিথিল হয়নি। প্রতিটি ৩১ ডিসেম্বরের রাতে রাজধানী ঢাকা হয়ে যায় পুলিশী চেকপোষ্টের নগরী। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে তাদের প্রধান দূর্গ।  রাষ্ট্রের মতো কড়া হতে বাধ্য হয়েছে প্রতিটি পরিবারও।
এদিকে এবারের ঘটনাটিকে ইসলামের আদেশ না মানার কুফল হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ওই গোষ্ঠী লাঞ্চিত নারীদের যাচ্ছে তা বলতেও কুণ্ঠিত হচ্ছেন না । রংপুরের রেজাউল করিম রাজ লিখেছেন, ‘নারীরা যেদিন ন্যাংটা হয়ে বেরাতে পারবে সেদিন তারা বলবে যে তারা স্বাধীন।’ আরব আমিরাত প্রবাসী মোঃ জসিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘এইটাকে বলে নারীর সাধীনতা (স্বাধীনতা)। নারী পুরুষ এক সাথে বেহায়াপনার নাম জদি (যদি) হয় নারীর সমান অধিকার, আমার বলার কিছুই নাই। এর জন্য দাই (দায়ী) আমাদের দেশের শাসক গুষ্ঠী (গোষ্ঠী)। আমরা কিসের মুসলমান, সেরেপ (স্রেফ) নামের মুসলমান।’ সিলেটের মোঃ সুমন আহমেদ -এর অভিমত, ‘এই সব যারা পালন করে তারা আর যাই হোক কোন (কোনো) ভাল ঘরের মেয়ে নয়।’
সোনাগাজীর এম এ নুরুল হুদা  -এর বক্তব্য, ‘ছেলেগুলাতো না হ্য় কুকুর, কিন্তু যে মেয়েগুলা বুকের মাংস পুলাইয়া (ফুলিয়ে) এসব নোংরামি করার জন্য বের হ্য়, তখন তাদের মায়েরা কোথায় থাকে? এই সব বাজে মেয়েরা হ্চ্ছ ওই কুকুরগুলার খাদ্য এখানে দোসের (দোষের) কিছু নেইভবিষ্যতে আরো বেশি করা দরকার ।’ ঢাকার মিরপুরের মাদ্রাসা শিক্ষক শারফুদ্দীন ইয়াহইয়া কাসেমী লিখেছেন – ‘যে নারী গিয়েছে আর যে বখাটেরা যা করেছে, এতে আশ্চর্য হবার কি!? উভয় লিঙ্গ একই চরিত্রের। নগ্নতা, বেহায়াপনার কালচার গ্রহণ করলে এমনই দৃশ্য বার বার আসবে।’ সিলেটের সৈয়দ চালিক আহমেদ গুলশান বলেছেন, ‘যে নারী , পরপুরুষকে দেখানোর জন্য সেজে গুছে বের হয় ! তাদের জন্য এটাই পাওনা ! যেমন কর্ম তেমন ফল !!’
ফতুল্লার ফেরদৌস রহমান রাসেল -এর বক্তব্য, ‘নাস্তিকরা যে ভাবে দেশটাকে পাপে লিপ্ত করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে তাতে এমন হওয়ারই কথা! কারন সরকার ওয়াজ মাফিল বন্ধ করে, আর নাচ গানে মগ্ন রাখার চেষ্টা করে সব সুবিধা দিয়ে!’ নোয়াখালীর  শামীম হোসাইন লিখেছেন - ‘আজ ৪/৫ বতসর (বছর) ঢ়াকা বিশ্ববিদ্যালয় টি এস ছি (টিএসসি) যৌন পললিতে (যৌনপল্লীতে) রূপান্তরিত হয়।’ হা-মীম এসোসিয়েটস’র ডিরেক্টর (ফিন্যান্স)  মুঃ মোরশদ উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘এই কানকি গুলা (খানকিগুলো) ওখানে যাইতো (যায়ই’তো) লেংটা হওয়ার জন্য।’ মাদারীপুরের সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের ছাত্রী সেঁজুতি লিমা -এর বক্তব্য, ‘শিয়াল কুকুরদের মাঝে গেলে যা হয় তাই হয়েছে। দোষের কি আছে? জাতির কাছে প্রশ্ন।’
এসব মন্তব্যে বাঙাল বোধের যে চিত্র স্পষ্ট, তা পীড়াদায়ক।
কী, ক্লান্ত হয়ে গেলেন। আরো পড়ুন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মর্ত মোহাম্মদ জাফর বলেছেন, ‘মহিলারা থাকে ভিতরে। বাহিরে গেলে এই রকম হয়।’পাকিস্তান প্রবাসী তাসনীম হাসান আমানী লিখেছেন, ‘এরপরও লজ্জাহীন নারীদের চেতনা আসবে না?’ কুয়েত প্রবাসী মাহবুব আলম লিখেছেন, ‘যে নারী পর পুরুষকে দেখানুর (দেখানোর) জন্য সেজে গুছে বের হয়! তাদের জন্য এটাই পাওনা! যেমন কর্ম তেমন ফল !!’ শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমাদ বলেছেন, ‘পাওয়ার জন্য গেছে. দেওয়ার যারা তারা দিছে। হারাম কাজ ত এইভাবে চলে।’ চট্টগ্রামের খান মো. জহির দাবি করেছেন, ‘যৌনকর্মীরা সবসময় সবখানে লাঞ্চিত অপমানিত অপদস্ত হবেই। যদি ইসলামের রীতিনীতি মেনে চলত তাহলে এসব ফালতু অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজের দেহ প্রসারণ করে বিড়াম্বনার স্বীকার হত না।’
ঢাকার মালেক আফসারী বলেছেন, ‘আমাদের মনে রাখা উচিত যে-তা হলো মধু যদি ঢেকে রাখা না হয় তাতে মাছি বসবে এটাই সত্য । আর সোনার ছেলেরা তাতে একটু খুলে টেষ্ট করছে এতে আমি বরং সোনার ছেলেদের ধন্যবাদ জানাই, শেষ কথা আমাদের দেশের ঐ রকম মহিলাদের তাই হওয়া উচিত।’ মক্কা প্রবাসী  আতিক রাহমান বলেছেন, ‘ইসলামের মধ্যে নারী জাতিকে সব চাইতে বেশী সম্মান দিয়েছে, আর পুরুষ কে দিয়েছে স্বাধীনতা। আর সেই স্বাধীনতা যদি নারী জাতি টানা টানি করে তাহলে এর চাইতে বেশির চাইতে বেশি নির্যাতিত হবে। তাই আমাদের কে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। সেই অনুযায়ী চলতে হবে। মনে রাখবেন - জানা এবং মানার মধ্যেই সব কিছু ! আপনি না জেনে আমল করতে পারবেন না।’ রাজশাহীর দোগাছির মোঃ আয়াতুল্লাহ খামোনি বলেছেন, ‘কলা যদি ছিলা থাকে মাছি তো ধেন ধেন করবেই। যে অনুষ্ঠানে গেসে এটা তো simple (সাধারণ) ব্যাপার। যে নারী ইসলাম ধর্ম মেনে চলবে সে কখনো এই ভাবে যৌনহয়রানী হবে না।

বঙ্গাব্দ বরণ বিরোধী প্রচারণায় ব্যবহৃত ট্রল।
ওবায়েদ ইসলাম লিখেছেন, ‘নাউযুবিল্লাহ মিন যালেক।  কোনো মেয়ের ইজ্জতের বিনিময়ে এই ১লা বৈশাখ আসার কোন দরকার ছিল।’  জিয়া উদ্দিন রাসেল এর অভিমত, ‘প্রকাশ্যে ধর্ষন করলেও অবাক হতাম না। এসব মেয়েদের এসবই প্রাপ্য। বি. ইউ. কোরশী  লিখেছেন, ‘ঘরের মেয়ে, রাস্তায় নামছে বলেই তো পরের ছেলে নষ্টামি করতে পারছে।’ মোঃ রুহুল লিখেছেন, ‘প্রগতি নারীবাদী বেশ্যারা কোথায়। এরা ইসলামের শত্রু মানবতার শত্রু।’
মঈন মুহম্মদ লিখেছেন, ‘এই গনমাধ্যমগুলা আসলেই বেরসিক। এইসব জশনে তো এমন ঘটনা ঘটবেই। আর এমন ঘটনা ঘটানোর জন্যই তো ঐসব মেয়েরা উপস্থিত হয়েছিল সেখানে। কই ঐসব মেয়েরা তো বলেনি আমাদের সাথে খুব খারাপ অনাকাক্ষিত কিছু ঘটেছে, তাইলে বেরসিক গনমাধ্যমের এত চুলকানি কেন?’ রেজাউল ইসলাম বলেছেন, ‘একেই বলে মুক্ত মনের মানুষ! মনের সাথে সাথে নিজের শরীরটাও উন্মুক্ত করে রাখল। নিজেকে খোলা মেলা রাখাটাই তাদের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যে কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলাটা তাদের ফ্যাশন।’

মোঃ শামীম আহমেদ
বলেছেন, শ্লীততাহানী বর্তমান সমাজের একটা ঐতিহ্য। মামুনুর রশীদ বলেছেন, ‘ভাল হইছে, যেন এই কথা মনে করে আর কোথাও যেন পর্দা ছাড়া না যায়।’ আবু বকর বলেন, ‘এরা কোন সভ্য ঘরের মেয়ে নয়, আর হয়রানি কারিরা তো তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জানোয়ার। হাসিনার সোনার ছেলে।’

এক চুতিয়ার স্ট্যাটাস
আনিসুর রহমান বলেছেন, ‘সবেতো শুরু, যেভাবে বিজাতীয় সংস্কৃতি আমাদের কে গ্রাস করছে তাতে করে আর বেশিদিন এমন থাকবে না, এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটতে থাকবে। কোথায় আমাদের অতি পরহেজগার প্রধানমন্ত্রি, উনি কি বোঝেন কেন এগুলো হচ্ছে? যেখানে নাস্তিকদের পক্ষে কথা বলার লোকের অভাব হয়না, নারী স্বাধীনতার কথা বলে নারীর প্রকৃত স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না এমন নারীনেত্রীরা। সেখানে এ ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে মনে হয়, শুস্থ (সুস্থ) সাভাবিক জীবন ছেড়ে অস্বাভাবিক জীবনে চলে যায়, এই কুত্তাগুলোকে টুকরা টুকরা করে কাটি। আমারও একটি মেয়ে আছে, আজ যে মেয়েটির সাথে এমন আচরন করা হয়েছে, তার বাবা মার মনের অবস্থাটা কি একবার ভাবুন, এখনো সময় আছে সচেতন মানুষকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে হবে। নইলে আমরা অচিরেই অন্ধকারে হারিয়ে যাব।’

আব্দুল খালেক বলেছেন, ‘নগ্নতা, বেহায়াপনার কালচার গ্রহণ করলে এমনই দৃশ্য বার বার আসবে। ভারতকে খুশি করার জন্য এগুলো করা হয়েছে, এখন ভারত খুশি।’ খান মোঃ জিল্লুর বলেন, ‘কুলাঙ্গার নাস্তিক বামপন্থিরা আজ কোথায়? তারা কি দেখছে না টিএসসি চত্বর এখন যৌনপল্লীর রুপ (রূপ) ধারণ করেছে? কোথায় তোদের মানবতা?আর যারা এইসব অনুষ্ঠান পালন করে তাদের সাথে এরকমই হওয়া উচিৎ।। আল্লাহ কোন ধার্মিক পর্দাশীল মেয়েকে অসম্মান করান না।।’ রনি বলেছেন, ‘ওখানে না গেলে কি হয় না। এর জন্য মেয়েরাই দাই (দায়ী)। একটা ওপলক্ষ (উপলক্ষ) পেলে তারা ছোট পোশাক পরে না যাওয়া পর্যন্ত সান্তি (শান্তি) পায় না। কাকে ছি ছি ছি বলবো বুঝতে পারছি না।’·
শিবিরের সমর্থক আজিজুর রাহমান বলেছেন, ‘আপোষে আধুনিকতা, আর জোর খাটালে শ্লীলতাহানি। আমাদের পরদানশীন বোনদেরকে সন্ত্রাসের গোপন বৈঠক করে বলে বহিষ্কার করলা,লাঞ্চিত করলা কিন্তু তোমরা প্রতিবাদ করনি। আমাদের বোনদেরকে বেইজ্জতি করেছ, তোমাদেরকে আল্লাহ বেইজ্জতি না করে ছেড়ে দিবে ভেবেছ?জুয়েল রানা বলেছেন, ‘তাহলে এখন বুঝ মজা কেমন লাগে। তোমরা নারীর স্বাধিনতার জন্য নারীকে ল্যাংটা করে রাস্তায় বের করে নিয়ে আসো। এখনো সময় ইসলামের ভিতরে পরিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করো পর্দা করা ফরয় (ফরজ) পর্দা করো। আল্লাহকে ভয় করো। চরিত্র ঠিক করো। বদমাশি (বদমায়েশী) ছেড়ে নামাজ পড় তাতে কাজে লাগবে।’
সাকলাইন বলেছেন, ‘আধা বিবস্ত্র নারী পুরা বিবস্ত্র হবে এটাই স্বাভাবিক। এক যুগ ধরে চলা দেশে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে গড়া মাইয়াটার জিবনটা (মেয়েটার জীবনটা) নষ্ট হইলো। বাকিরা শিক্ষা নিয়েন। নাইলে দেশের ভবিষ্যত আরো অন্ধকার!’ দ্রোহীমন সৌদ -এর বক্তব্য, ‘বর্ষবরন যদি ঘর থেকে বের করে টিএসসিতে আনতে পারে, শ্লীলতাহানি তো আত্মহত্যার মতই সাধারন ব্যাপার! কারন ওটা সে স্ব-ইচ্ছায় এসেছে হওয়ার জন্য! ১৪২২ তো তারই জন্যে স্মরণীয়! ঘরে স্মরণীয় কিছু কি করা যায়?’
হোসাইন আহওমদ কামাল বলেছেন, ‘আমি রাসূল (সাঃ) এর উম্মত। আমি হাজার বার বলব আমি লক্ষ বার বলব। আমি ঘৃনা করি যারা বৈশাখের নামে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়। আমি ঘৃনা করি যেসব নারী বৈশাখের নামে নিজের সুন্দর্য পর পুরূষকে বিলিয়ে বেড়ায়। আমি ঘৃনা করি ঐ সব নারী পুরুষকে যারা নামাজ বাদ দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আড্ডা দেয়। আমি আরো ঘৃনা করি যেসব নারী পুরুষ মুসলিম হয়েও অমুসলিম হিন্দুদের মত মূর্তি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।আপনি কেমন মুসলিম একবারো কি ভেবে দেখেছেন আপনি কি করছেন’

কামরুল ইসলাম কামরুল বলেছেন বেশ উপাত্তসহ। লিখেছেন - ‘হিন্দুদের সাথে একত্রিত হয়ে মুসলিম নামধারী যারা হারাম ১লা বৈশখ পালন করতে ওই সব জায়গায় যায় তারা আর যাই হোক ভালো মেয়ে নয়। কারন এইসব উতসবকে হারাম করা হয়েছে । আর ওরা এই রকম নাজেহাল হওয়াকে পরোক্ষ ভাবে পছন্দ করে। বছরের পহেলা দিবস পালন করা মজুসী বা অগ্নি উপাসকদের একটি একান্ত উৎসবের দিন। যেটা হিন্দু, বৌদ্ধ ও চাকমারা করে। এ দিবসটিকে উৎসব ও পূজার দিন হিসেবে গ্রহণ করে। তাই পহেলা বৈশাখ দুটি কারণে হারাম ও কুফরী:
১) এটি মজুসীদের অনুকরণ
২) এটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও উপজাতিদের পূজা ও উৎসবের সাথে সদৃশ্য
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইসলাম কি কাফিরদের সাদৃশ্যপূর্ণ আমল করার অনুমতি দেয়? পবিত্র কুরআন হাদীস এ সম্পর্কে কি বলে???
১) পবিত্র কুরআন পাকে আছে-
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়মনীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, عن عمرو بن شعب عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ليس منا من تشبه بغيرن. । অর্থ: “হযরত আমর বিন শুয়াইব তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য রাখে।” (মিশকাত) - তাই এদের প্রতি হেদায়েতের সুপারিশ কিংবা আফসোস করাও ঠিক নয়।’

লাকির এই স্ট্যাটাস নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের সংযোগে লাকিসহ পুরো নারী সমাজকে
হেয় করে যেসব মন্তব্য ছোঁড়া হয়েছে - সেগুলো আরো ভয়াবহ।
লাকি আক্তারকে উদ্দেশ্য করে জহিরুল ইসলাম হোসাইনী নামের একজন লিখেছেন, ‘এই কথাগুলোর প্রেক্ষিতে কয়েকটি কথা বলতে চাই  ১.বিজ্ঞান মনস্ক (?) সুশীল তসলিমা নাসরিনের জরায়ুর স্বাধীনতা দাবীকে সমর্থন জানানোর পর এই ধরনের বক্তব্যের আর কোন গুরুত্ব থাকেনা | আপনি একদিকে জরায়ুর স্বাধীনতা চাইবেন অন্যদিকে কেউ এই স্বাধীনতাকে যুদ্ধ করে মুঠোয় এনে দিতে চাইলে তাকে জানোয়ার কুকুর বলে গালাগালি করবেন তা তো হয়না | ২. ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কর্মীরা বিবস্ত্র করা মেয়েদেরকে উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে এসেছেন - কথাটা কেমন যেন বেসুর লাগছে। এই কাজগুলো তো জঙ্গিদের কাজ। ছাত্র ইউনয়ন করতে যাবে কেন ? হেফাজতে ইসলামের ঢাকা ঘেরাওয়ের দিন এক মহিলা সংবাদ কর্মীকে নির্যাতনের সময় এই কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররাই কিন্তু তাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌছে দিয়েছিলো, যার ভিডিও ফুটেজ এখনো আছে। কিন্তু আপনাদের ভাষায় তারা ভয়ংকর জঙ্গি। ৩. আপনাদের মনে আছে বিগত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নিউজ কাভার করার জন্য ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিক পিয়ার রহমান বিমানের ভেতর এক কিশোরীকে যৌন হেনস্তা করেন। অস্ট্রেলিয়া এয়ার পোর্টে নামার পর ওখানকার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তিনি বলেছিলেন যে ঘুমের মধ্যে ওই কিশোরীর গায়ে তার হাত উঠে যায়। তিনি বুঝতে পারেননি। আমরা জানি ঘুমের মধ্যে হাত নিচের দিকে থাকে। এই প্রথম এই সুশীল জানোয়ারের মাধ্যমে জানলাম ঘুমালে হাত উপরের দিকে উঠে। অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ কিন্তু আমাদের মত চেতনায় উজ্জীবিত নয়। তাকে গ্রেফতার করে। ৪. বাংলাদেশের পুলিশ ভাইদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। মেলায় যারা যান তারা তো জেনে শুনেই যান। মেলা মানেই ঠেলা। ঠেলাঠেলি ঘেষাঘেষি হবেই। এক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় (?) জয়নাল হাজারীর লেখা 'বাঁধনের বিচার চাই' বইটি সবাইকে পড়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। ৫. বৈশাখী আপুদের বলছি আপনারা তো প্রতি বছরই ছেলেরা এমন ছেলেরা তেমন এইগুলো বলে মিডিয়ায় ঝড় তুলেন। ফেসবুক ভাসিয়া (ভাসিয়ে) দেন। একবারও কি ভেবে দেখেছেন এজন্য দায়ী কারা? কুকুরদের জন্য নিজেকে মেলে ধরবেন আর ওরা ঝাপিয়ে পড়বেনা তাকি হয় ? আসুন সবশেষে গতকালের একটি সংলাপ দেখি যা এইমাত্র ফেসবুকে পেলাম: '-এই ছেলে তোমার ঘরে কি মা বোন নেই ? গায়ে হাত দাও কেন? -জি আপু মা বোন্ আছে, তবে বউ নেই। তাই ভিড়ের মাঝে বউ খুঁজতাছি। -কি? এত বড় কথা! এটা কি বউ খুঁজার জায়গা? -জি আপু. আপনারা যখন বাসা থুয়ে বউ সেজে পাবলিকের ভিড়ে ডুকেছেন (ঢুকেছেন) তখন আমরাও এখানে বউ খুঁজছি? ওদেরকে জানোয়ার বলে লাভ কি? আপনারা কি খুব ভালো?’
কেয়া চৌধুরী নামের এক মেয়ে বলেছেন, ‘উলংগ হয়ে ছেলেদের সামনে চলবে তাহলে ছেলেরা কি তুমাদের চুমু খাবে ছেলেদের চেতনা জাগিয়ে নিরবে কোথায় যাবে যা হয়েছে তুমাদের নত নষ্ট রমনীদের জন্য উপযুক্ত হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
লাকির উদ্দেশ্যে ছোঁড়া মন্তব্যের একাংশ ...
তাজাম্মুল ইসলাম আবার এই ফাঁকে তার দলের প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই না হলে ইসলামী ছাত্রশিবির.. আজ বাংলা নববর্ষ। এই দিনকে পুঁজি করে যেখানে অধিকাংশ ছাত্রসমাজ বেহায়াপনায় লিপ্ত, গান,ফুর্তিতে মেতে উঠে নিজের চরিত্উঠে নিজের চরিত্রের ১২টা বাজাচ্ছে, সেখানে ছাত্রশিবির তার কর্মীদের চরিত্র সংরক্ষণে গ্রহন করেছে এক অভিনব প্রক্রিয়া। শিবিরের প্রতিটি উপশাখা থেকে শুরু করে থানা,মহানগরী পর্যন্ত সবখানেই আয়োজন করা হয়েছে কোন না কোন প্রোগ্রাম। যেমন সামষ্টিক পাঠ,হাদীস পাঠ,সাথী শিক্ষাশিবির সহ অন্যান্য মৌলিক প্রোগ্রামাদী। আলহামদুলিল্লাহ, যার ফলে আমাদের কোনভাবেই বেহায়াপনায় লিপ্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। অভিনন্দন ছাত্রশিবির তোমাকে। তুমি বেচে থাকো যুগ যুগ ধরে। আর তোমার হাত ধরে গড়ে উঠুক একটি চরিত্রবান,আদর্শ সমাজ।’ এমকে জামান লিখেছেন, ‘তোমাদের মত লাকিদের কারনেই সমাজে এত বেহায়াপনা। অভিযোগ কর কেন তোমরা তো এটাই চাও যে তোমরা রাস্তায় উলঙ্গ হয়ে চলবে অার ছেলেরা সুযোগ মত চেপে ধরবে। অার জামায়াত শিবির এটা চায়না বলেই তারা অাজ জঙ্গি।’
আবুল কালাম লিখেছেন, ‘খানকি মাগির আবার যৌন লজ্জা।’  মোঃ মুরাদ লিখেছেন, ‘মেয়েগুলাকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। এটা ওই বদমাইশ মহিলাদের প্রাপ্ত ছিল। য়ারা (যারা) এই কাজ করেছে তাদের কে জানাই ধন্যবাদ কারন ওই ছেলে গুলা ছিল সত্যিকারের পুরুষ । শিয়াল সামনে মুরগি শরীল (শরীর) দেখায় ঘুরাঘুরি করবে শিয়াল শিকার করবে না তা হয় না।’ জুয়েল রানা লিখেছেন, ‘গন জাগরন মঞ্চ নামে তোরা যে যৌনতার মঞ্চ করে যে নোংরামি করেছিস এবং ছড়িয়ে দিয়েছিস এটা তারই প্রতিফলন ৷ এর জন্য তোরাই দায়ী৷’ হামিদ এইচ আজাদ লিখেছেন, ‘একে যদি বাংলার সংস্কৃতি বলে, লাথি মারি এই অপ-সংস্কৃতিকে।’
রবিউল আওয়াল লিখেছেন, ‘উলংগ (উলঙ্গ) হয়ে ছেলেদের সামনে চলবে তাহলে ছেলেরা কি তুমাদের (তোমাদের) চুমু খাবে ছেলেদের চেতনা জাগিয়ে নিরবে কোথায় যাবে যা হয়েছে তুমাদের (তোমাদের) নত (মতো) নষ্ট রমনীদের জন্য উপযুক্ত হয়েছে বলে আমি মনে করি।কর্ণেল শাকুর মজিদ দাবি করেছেন, ‘এই সব বেহায়াপনার বিরুদ্ধে এন্টিভাইরাস!! কুত্তায় কামড়ালে নাকি যে রাবিস পুশ করা হয়, তা নাকি জলাতঙ্কের জীবাণু দিয়ে তৈরি!! এই সব বেহায়া নারীদের বিবস্ত্র ও ধর্ষণ করে এন্টি ভাইরাস দেওয়া উচিত যাতে কেউ আর এসব উলংগপনা (উলঙ্গপনা) করার সাহষ (সাহস) না পায়!! ধন্যবাদ ছাত্রলীগ ভাইদের!!’ যুবায়ের আহমেদ পিকুল বলছেন, ‘ছেলেগুলোর যৌন জাগরন হয়েছে, আর কি করা। ভাদ্র মাসের কুত্তা কুত্তির কামলীলা। শুধু কুত্তার টাই দেখলেন, কুত্তি যে পাছা উদোম করে রাখে সেটার নামই কি নারী স্বাধীনতা?’
মোহাম্মদ রওশন আহমদ লিখেছেন,  ‘হা হা হা আজ খুব আনন্দ লাগতাছে মামুরা আপনারা ও প্রান খুলে হাসুন হা হা হা। গত কালকের পতিতা বরণ অনুষ্ঠানের দিনে বহু পতিতার গলায় ইলিশের kata (কাঁটা) নাকি লেগেছে। অনেক পতিতাকে জুর পূর্বক (জোড়পূর্বক) ধর্ষণ করা হয়েছে হুল আলা হুল আলা... অনেকে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে, অনেকে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। কি যে আনন্দ না লাগছে! উক্ত দিনের উপহার পেয়ে হুল আলা হুল আলা...’
এ এম জুবায়ের বাবু লিখেছেন, ‘ঠিকই আছে,আরো বেশি করে করার দরকার ছিলো। বেহায়াপনার এক্তা সীমা আছে। যারা বাঁধন এর কথা ভুলে গিয়ে নতুন সাঝে (সাজে) উদ্যমী হতে চায় তারাই এর শিকার হইছে। যাদের গত আওয়ামী লীগ (১৯৯৬-২০০০) আমল এর কথা মনে নাই তাদের আর বেশি করে করা উচিত। Go ahead (এগিয়ে যাও) বাংলার সোনার ছেলেরা। সালা বাইনচোদ এর বাচ্চারা।’

সাহিদুল ইসলাম বাঁধন লিখেছেন, ‘একটি বৈশাখি মেলায় পঞ্চাশটিই আল্লাহর গজব টেনে আনবে। আপনি কি বাবা নাকি দালাল? কিভাবে পাঠালেন আপনার মেয়েকে, আপনার বুনকে (বোনকে), আপনার বৌকে হাজার লুকের (লোকের) বিডের (ভীরের) ভিতর, যেখানে পুরুষ লুক (লোক) হাঁটতে কষ্ট হয়ে যায়। আপনি তো উদ্দেশ্য করে পাঠিয়েছেন। তাহলে আপনার উদ্দেশ্য কি ইসলাম ধ্বংস করা। নাকি মুসলিম ছেলেরা জিনার (বহুগামিতার) পথে যাওয়া আপনার মতো পুরুষ খ্রিষ্টানের দালাল।’

সত্যবালক নামের একটি আইডি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ভাল ঘোড়ার এক চাবুক। এই বোনদের যদি কিঞ্চিত জ্ঞান থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই চেতনার বেশ্যামী ভুলে দ্বীনের পথে ফিরে আসবে । জ্ঞানীদের একটি কথা আছে ,আকেলমান্দ কে লিয়ে ইশারা কাফি হায়। অর্থাৎ জ্ঞানীদের জন্য ইঙ্গিতি যথেষ্ট। এরপরেও যদি বুঝ না আসে ,তাহলে যেমন কর্ম তেমন ফল পাবে । যেমন পেয়েছে।’

সোহাগ খান লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে আমি সম্মান করি,কিন্তু সে পবিত্র বিদ্যাপীঠ কে অসম্মান করচে কিচু (করছে কিছু) বেজন্মার জাত, যারা আল্লামা শফি সাহেবের মত লোকদের অপমান করে, আল্লামা সাইদি সাহেবের মত লোকের পাশী (ফাঁসি) দাবি করেকুত্তার বাচ্চারা মা বোন্দের ইজ্জতে হামলা করে, তাদের কাচে উদের (কাছে ওদের) মা বোন ও নিরাপদ নয়।’

এড়িয়ে যাবেন না। পড়ুন ...
সংবাদ ভাষ্য
সেদিনের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিক সংবাদগুলোয় বলা হয়েছে, বাংলা নববর্ষের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন কয়েকজন নারী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে এ ঘটনা ঘটে। নিপীড়নকারীদের ঠেকাতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন শাখার সভাপতি লিটন নন্দীর হাত ভেঙেছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে এই ঘটনা জানানো হলেও তাঁরা যথাসময়ে ব্যবস্থা নেননি। ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ও প্রগতিশীল ছাত্রজোট। তারা অভিযোগ করেছে, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার কারণেই যেকোনো উৎসবের দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটে। তারা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা দেখে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

সক্রিয় বাঁশের কেল্লাও
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন নন্দী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শাহবাগ থেকে টিএসসি আসার পথে তাঁরা কয়েকজন দেখেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে ৩০-৩৫ জনের একদল যুবক বেশ কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করছে। তারা কারও কারও শাড়ি ধরে টান দিচ্ছিল। কয়েকজনকে তারা বিবস্ত্রও করে ফেলে। এ সময় সেখানে বাধা দিতে গেলে ওই যুবকদের ধাক্কায় তিনি পড়ে যান এবং তাঁর হাত ভেঙে যায়।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিটন নন্দী বলেন, ‘এ দৃশ্য বর্ণনা করা যায় না। আমি আমার পাঞ্জাবি খুলে এক নারীকে দিয়েছিলাম। আরেকটি মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। ওই যুবকেরা ভিড়ের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ধরে এই ঘটনা ঘটাচ্ছিল। আমরা পুলিশ ও প্রক্টরকে ঘটনা জানালেও তারা কেউ যথাসময়ে আসেনি। ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরা পরে প্রক্টরের কার্যালয়ে গিয়ে দেখেন, তিনি কম্পিউটারে গেমস খেলছেন।’ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী গেটে যখন এই ঘটনা ঘটছিল, তখন সেখানে মাত্র দুজন পুলিশ ছিল। টিএসসির ডাচ-বাংলা বুথের দিকে বেশ কয়েকজন পুলিশ ছিল। আমরা তাদের এগিয়ে আসতে বললে তারা তখন রাজি হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে আমরা দুজনকে ধরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ পরে তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে জানতে পারি।’
গণমাধ্যমগুলো আরো বলছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিজ্ঞান লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় যেখানে খুন হন, তার পাশেই সোহরাওয়ার্দী গেটে এ ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র অভিযোগ করেছেন, সোহরাওয়ার্দী গেট এবং এর ভেতরে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায়ও প্রথম বর্ষের কিছু ছাত্র নিয়মিতই নারীদের লাঞ্ছিত করে। এসব ব্যাপারে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরও এসব প্রতিরোধে এগিয়ে আসা উচিত। ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেন, ঘটনাস্থলে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ছিল বলে পুলিশ দাবি করেছে। কাজেই সেগুলো দেখে যেন দ্রুত দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বাঁশের কেল্লার আরেকটি পোস্ট
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা আমাকে খবর দেওয়ার পরপরই আমি পুলিশকে সোহরাওয়ার্দী গেট বন্ধ করতে এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে বলে আমি জেনেছি। আমরা পুলিশকে বলেছি সিসি টিভির ফুটেজ দেখে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে।’

আরেকটি সংবাদে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি ছিল। আক্রান্ত নারীদের রক্ষার জন্য তাদের কাছে মিনতি জানালে প্রথমে তারা এগিয়ে এসে মৃদু লাঠিচার্জ করে। কিন্তু বস্ত্রহরণকারীদের ছাত্রলীগ পরিচয় জেনে নিস্ক্রিয় হয়ে যায় পুলিশ। ওই সময় এক নারীকে রক্ষা করতে গিয়ে এগিয়ে যান ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা নেতা লিটন নন্দী নিজের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে এক বিবস্ত্র নারীর ইজ্জত হেফাজত করতে গিয়ে মারধরের শিকার হন। এই ঘটনার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীরা জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ছাত্র ইউনিয়ন জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে তাদের বহিরাগত আখ্যা দিয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য
টিএসসি’র ঘটনার পর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ লাঠিচার্জ করেও যুবকদের নিবৃত্ত করতে পারেনি। এ ঘটনার জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম সরকারও বলেছেন, ‘পুলিশ এ ব্যাপারে বিধিমতো ব্যবস্থা নেবে।’ এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের এডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।’
মনে রাখবেন
সামরিক সরকারদের আনা সংশোধনীগুলো বাতিল করে পূর্ণাঙ্গ অসাম্প্রদায়িক নীতির সেই ৭২’র সংবিধানে ফেরার সুযোগ তৈরী করে দিয়েছিলো আমাদের উচ্চ আদালত। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সেই সংবিধান পুণর্বহাল না করে - তাদের ইসলামী ভোট ব্যাংক বাড়াতে চেয়েছে। আরেকটি (পঞ্চদশ) সংশোধনী এনে স্বৈরশাসকদের ইসলামী সিদ্ধান্তগুলোকেই দিয়েছে ‘গণতান্ত্রিক’ স্বীকৃতি। সংবিধানের শুরুতে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, মানে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ - কথাটি রেখে দিয়েছে। রেখেছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকেও। আর নারীদের তেঁতুল আখ্যা দেয়া আল্লামা শফী হুজুরকে দিয়েছে ৩২ কোটি টাকা মূল্যের জমি। আর এটাও নিশ্চয়ই মনে রাখুন, বর্তমানে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা এবং স্পিকার, তিন জনই নারী।

বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তরুণীকে বিবস্ত্র ও নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

বুধবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের এডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।

 প্রসঙ্গত, বাংলা নববর্ষ উদযাপণ করে বাসায় ফেরার সময় ঢাবি ক্যাম্পাসে এক তরুণীকে বিবস্ত্রসহ একাধিক নারীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। - See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2015/04/16/76990#sthash.8S49RSXi.dpuf
বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তরুণীকে বিবস্ত্র ও নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

বুধবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের এডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।

 প্রসঙ্গত, বাংলা নববর্ষ উদযাপণ করে বাসায় ফেরার সময় ঢাবি ক্যাম্পাসে এক তরুণীকে বিবস্ত্রসহ একাধিক নারীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। - See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2015/04/16/76990#sthash.8S49RSXi.dpuf
বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তরুণীকে বিবস্ত্র ও নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

বুধবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের এডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।

 প্রসঙ্গত, বাংলা নববর্ষ উদযাপণ করে বাসায় ফেরার সময় ঢাবি ক্যাম্পাসে এক তরুণীকে বিবস্ত্রসহ একাধিক নারীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। - See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2015/04/16/76990#sthash.8S49RSXi.dpuf
বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তরুণীকে বিবস্ত্র ও নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

বুধবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের এডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ওই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।

 প্রসঙ্গত, বাংলা নববর্ষ উদযাপণ করে বাসায় ফেরার সময় ঢাবি ক্যাম্পাসে এক তরুণীকে বিবস্ত্রসহ একাধিক নারীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। - See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2015/04/16/76990#sthash.8S49RSXi.dpuf
তবুও সুন্দর আগামীর স্বপ্ন জিইয়ে বাঁচে বাঙালের প্রতিবাদ, জাগো বঙ্গ।
newsreel [সংবাদচিত্র]