Powered By Blogger
amaderbarisal.com লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
amaderbarisal.com লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১২ মার্চ ২০১৫

এ কোন উগ্রবাদের মহড়া ...

লাঠিসোটা হাতে মুসলিম হলের ছাত্ররা, অদূরে পুলিশ।
দৈনিক সকালের খবর –এর শিরোনাম ‘বিএম কলেজে শিক্ষার্থী বহিরাগত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : আটক ৩’। দৈনিক সমকাল –এর ‘বহিরাগতদের হামলার জের : বিএম কলেজে ছাত্রদের ভাংচুর’। দৈনিক নয়া দিগন্তের শিরোনাম ‘বিএম কলেজে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের মধ্যে ধাওয়া’। - ধ্বস, গুম, অভ্যুত্থানাশঙ্কা বা নিত্য জ্যান্ত মানুষ পোড়ানোর এই কালে আজকের ওই শিরোনামগুলো হয়ত খুব বেশী ভয়ংকর নয়, অনেকটা নিরীহ গোছের। তবে নিশ্চিত জেনে রাখুন, সংবাদমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা বরাবরের মতো আজও দুস্প্রাপ্য। তাই কোনো ঘটনার যে কারণটি প্রকাশিত হয় - তারও আড়ালে লুকিয়ে রয় ছোট-বড় আরো অজস্র গল্প।
বিএম কলেজের গতকালের (১১ মার্চ, ২০১৫ ) ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে মুঠোফোনে আলাপও হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে শঙ্কিত হয়েই লিখতে বসেছি। কারণ - এ ঘটনার নেপথ্যে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় উগ্রবাদের গন্ধ টের পাচ্ছি বেশ। বহিরাগতদেরও দোষ আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু তাদের তাড়ানোর নামে বিএম কলেজের আবাসিক হলের যে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ভাংচুর চালিয়েছে এবং লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়েছে - তারা আসলে কোন শক্তির প্রতিনিধিত্ব করেছে; তা’ও একটু খতিয়ে দেখা দরকার। এ ব্যাপারে শুধু কলেজ প্রশাসন নয়, বরিশালে কর্মরত সামরিক ও বেসমারিক গোয়েন্দাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


আমাদের বরিশাল ডটকম’র ফেসবুক পেইজের স্ক্রীনসট
খুব খেয়াল
যেখান থেকে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, সর্বাগ্রে সেখানেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। মুসলিম হল - নামে সমধিক পরিচিত সার্জেন্ট ফজলুল হক হলের পুকুরের পাড়ে ‘প্রেমিকা বা মেয়ে নিয়ে বসা’ নিয়ে কলহের শুরু। এটা দেখেই অতীতে ফিরতে হলো। গত বছরের জানুয়ারিতে “বিএম কলেজের একাংশে নারীরা নিষিদ্ধ !” শিরোনামে প্রকাশিত এক লেখায় জানিয়েছিলাম ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়াল, গাছ ও ল্যাম্পপোষ্টে লাগানো একটি লিফলেটের কথা। যাতে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসের বিজ্ঞান অনুষদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ ঘেঁষা মুসলিম হলের সামনের বিশাল পুকুর, মাঠ ও রাস্তায় নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিক্ষিকা বা ছাত্রীদের তোয়াক্কা করা হয়নি। নিজেদের ক্যাম্পাসের বিশালাংশে তাদের অবাঞ্চিত ঘোষণাকারী ওই লিফলেটে লেখা ছিলো - “বিএম কলেজ, মুসলিম হলের সামনের রাস্তায়, মাঠে এবং পুকুরপাড়ে মেয়েদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। অনুরোধক্রমে - হলের সচেতন ছাত্রবৃন্দ।”

নিজস্ব ব্লগ প্রেস এন্ড প্লেজার (pap) এবং আমাদের বরিশাল ডটকম’এ ওই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর লিফলেটটির পক্ষে সাফাই গেয়েও মন্তব্য করেছিলেন অনেকে। তখনই বুঝে গিয়েছিলাম প্রিয় বিএম কলেজে ধর্মীয় মৌলবাদের আগ্রাসন কতটা তীব্র হয়েছে। গতকালের ঘটনাকেও তাই দক্ষিণবঙ্গের ওই প্রধান বিদ্যাপিঠে ইসলামি উগ্রবাদের মহড়াই মনে হয়েছে। এখানে আরো একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কীর্তনখোলার ওপারের চরকাউয়া ইউনিয়নের কালিখোলা গ্রামে হিন্দুদের ১৬টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার সাথেও ওই ‘মুসলিম হল’ -এর ছাত্রদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিলো।

কপিতয় মন্তব্য পড়ে দেখুন, তবেই বুঝবেন এরা কারা
মানবতার কল্যাণে ‘সত্য প্রেম পবিত্রতা’র আদর্শে সোয়াশো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওই শিক্ষালয়ের, মানে বিএম কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর এম ফজলুল হক। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট তিনি এ পদে যোগ দিয়েছিলেন। তার কাছে আজ (১২ মার্চ, ২০১৫) বিকেলে উল্লেখিত লিফলেটটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন - “হ্যাঁ, আমিও দেখেছি ওগুলো। কাঁচা ভাবনার লেখা। কিছু দুষ্ট ছেলে মাঝে মাঝে দুষ্টুমী করে ওগুলো লাগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা (কলেজ প্রশাসন) কখনো প্রশ্রয় দেই না। অমন লিফলেট দেখা মাত্র ছিড়ে ফেলতে বলা হয়েছে।”

কলেজ প্রশাসনের কাছে ছেলে আর মেয়ের কোনো তফাৎ নেই জানিয়ে এম ফজলুল হক বলেন, “আমাদের ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের যে কোনো স্থানে যেতে পারবে। তবে ছাত্র হোস্টেলের আশাপাশে একটু সমস্যা হয় মাঝে মাঝে। এটাও কোনোমতেই কাম্য নয়।” এ প্রসঙ্গে তিনি গতকালের ঘটনাটিও উল্লেখ করেন। অধ্যক্ষ আরো বলেন, ‘আবাসিক ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধতার বিষয়টি অবশ্য ভালো। এতে উটকো লোকেরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে সাহস পাবে না।’

সংবাদ ভাষ্য
গতকালের ঘটনার ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে - “বহিরাগতদের হামলার জের ধরে আবাসিক হলের ছাত্ররা বরিশাল বিএম কলেজের বিভিন্ন ভবনের দরজা-জানালা ব্যাপক ভাংচুর করেছে। কলেজ ক্যাম্পাসের তিনটি আবাসিক হলের ছাত্ররা একযোগে প্রায় আধাঘণ্টাব্যাপী এ তাণ্ডব চালায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দুটি ধারালো অস্ত্রসহ তিন বহিরাগতকে গ্রেফতার করা হয়।”

ঘটনার কারণ হিসাবে খবরগুলোয় আরো বলা হয়েছে - “বিএম কলেজ এলাকার বহিরাগত যুবক হিরা ক্যাম্পাসের মুসলিম হলের সামনের পুকুর পাড়ে প্রেমিকার সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় পুকুরে গোসলরত কয়েক ছাত্র তাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করলে দু’ পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে হিরা কিছুক্ষণ পরে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গিয়ে তন্ময়, ইমরান, শুভ রাতুলসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগতকে নিয়ে ধারালো অস্ত্রসহ মুসলিম হলে প্রবেশ করে ওই ছাত্রদের খুঁজতে করতে থাকে। এ সময় হলের ছাত্ররা একত্রিত হয়ে তাদের ধাওয়া দিলে বহিরাগতরা পালিয়ে যায়। এরপরই কলেজের তিনটি ছাত্রাবাসের কয়েকশ ছাত্র বহিরাগতদের ক্যাম্পোসে প্রবেশে নিষেজ্ঞাধা জারির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন বিভাগের ভবনের দরজা-জানালায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে। খবর পেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে লাঠিসোটা ও দুইটি ধারালো অস্ত্রসহ তিনজন বহিরাগত ছাত্রকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের পরিচয় শনাক্ত ও বিএম কলেজে প্রবেশ না করার শর্তে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।”

ঘটনা প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর এম ফজলুল হকের নির্দেশনা অনুযায়ী আটক বহিরাগত শিক্ষার্থীর মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’ আর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এম ফজলুল হক বলেছেন, ‘বহিরাগতদের প্রবেশ রোধে শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করে নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়া।’
পর্যালোচনা
উত্তেজিত ছাত্ররা।
কোনো সংবাদেই অভিযুক্ত বহিরাগতদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখিত লিফলেটটির কথাও কোথাও আসেনি। এ বিষয়ে শুধু ক্যাম্পাসের রিপোর্টাররাই নয়, বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিকরাও ভাববেন –এমনটাই আমার প্রত্যাশা। সচেতন নাগরিক সমাজেরও সজাগ হওয়া প্রয়োজন। কারণ, ঐতিহ্যবাহী বিএম কলেজেকে মৌলবাদের আখড়ায় পড়িণত হওয়া থেকে ঠেকানো সম্ভবত সমগ্র বরিশালবাসীর দায়িত্ব। নয়ত মহাত্মা অশ্বিনীর দত্তের আত্মা তাদের ক্ষমা করবে না।
জেনে রাখুন
বাংলার শস্য ভাণ্ডার ও প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বন্দর নগরী বরিশালে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুন প্রতিষ্ঠিত বিএম কলেজ এর আগেও সাম্প্রদায়িকতার কবলে পরেছে। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ ও ১৯৫০ সালের দাঙ্গা-হাঙ্গামার পর এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র-শিক্ষক ভারতে চলে গিয়েছিলো। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তখন কলেজের দ্বি-বার্ষিক ও ত্রি-বার্ষিক সম্মান কোর্স তুলে দিযে় এটিকে শুধু স্নাতক পাস কলেজ হিসেবে টিকিযে় রাখা হয়েছিলো। অথচ তার আগে এ কলেজ ছিলো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পাঁচ কলেজের একটি। পূর্ববাংলা তথা অধুনা বাংলাদেশের প্রথম দিকের সরকারি কলেজগুলোরও একটি এটি। এ কলেজকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণবঙ্গের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রেনেসাঁর সৃষ্টি হয়। এ কারণে বিএম কলেজের ইতিহাস মানে আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাস। বিশ্বের মানব সভ্যতার ইতিহাস ও বিকাশের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, আমেরিকার হারবার্ড, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া ও ভারতের নালন্দা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় যেরূপ অবদান রেখেছে, পূর্ব বাংলায় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে বিএম কলেজের ভূমিকা অনুরূপ বললেও বেশি বলা হবে না। উনিশ ও বিশ শতকের গোড়ার দিকে অবিভক্ত বাংলার জনজীবন যারা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন এ কলেজের ছাত্র। দেশের জাতীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনে বিএম কলেজের ছাত্ররা এককভাবে যত বড় অবদান রেখেছে এ দেশের আর কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পারেনি।

পুরানো পোষ্টের সেই ছবিটি
ঢাকা ও কলকাতা থেকে দূরে অবস্থান এবং নদী-নালা দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এখানকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক পশ্চাৎপদ ছিল। ১৮৫৪ সালে বরিশাল জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চল আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নবজাগরণ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিন দশক পরে আধুনিক বরিশালের স্থপতি দরিদ্রবান্ধব মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ১৮৮৪ সালে বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে প্রতিষ্ঠা করেন বিএম স্কুল। তখনও প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করার পর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আর সুযোগ ছিলো না বরিশালে। তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাবু রমেশ চন্দ্র দত্তের অনুরোধে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৮৮৯ সালে ওই স্কুল কম্পাউন্ডেই এই বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাত্মা অশ্বিনী । ১৯১৭ সালে বিএম স্কুল কম্পাউন্ড থেকে বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয় এই কলেজ। প্রায় ৬২.০২ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই ক্যাম্পাসে আসার পরই শুরু হয়েছিলো বিএম কলেজের বর্ণালী অধ্যায়। সে সময় স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের কারণে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি, উচ্চ শিক্ষিত ও স্বাধীনচেতা তরুণ ইংরেজদের গোলামী ছেড়ে চলে এসে দেশসেবা ও মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরি করাকে অধিক পছন্দনীয় মনে করেছিলেন। অশ্বিনী কুমার দত্ত তখন ভারতবর্ষের অনেক খ্যাতিমান শিক্ষকের সমাবেশ ঘটিয়ে এ কলেজের শিক্ষার মান অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান। তার সাথে সাথে তিনি নিজেও লাভজনক ওকালতি পেশা ছেড়ে বিনা বেতনে এ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। অধ্যক্ষ ব্রজেন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায়, রজনীকান্ত গুহ, বাবু সতীশচন্দ্রসহ বিএম কলেজের সে সময়কার অন্যান্য অধ্যক্ষদের পাণ্ডিত্ব্য এবং পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ঈর্ষণীয় সাফল্য বরিশালের জন্য প্রচুর সুনাম বয়ে এনেছিলো। এ কলেজের অধ্যাপকদের প্রজ্ঞা ও শিক্ষাপদ্ধতি উন্নত করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

আরো জানুন
১৯২২ সনে ইংরেজি ও দর্শন, ১৯২৫ সনে সংস্কৃতি ও গণিত, ১৯২৮ সনে রসায়ন এবং ১৯২৯ সালে অর্থনীতি সম্মান অনার্স কোর্স চালু হয় বিএম কলেজে। মূলত ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সময়কাল ছিল বিএম কলেজের স্বর্ণযুগ। তখন এ কলেজের শিক্ষার মান এতই উন্নত ছিল যে, অনেকে প্রতিষ্ঠানকে দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড বলে আখ্যায়িত করেন। বাংলার ছোটলাট স্যার উডবর্ন সরকারি শিক্ষা বিবরনীতে লিখেছিলেন This moffusil College promises some days to Challenge the supremacy of the Metropolitan (Presidency) College. একই সময়ে বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিটসন বেল লিখেছিলেন Barisal may be said to be the Oxford of East Bengal.

মুঠোফোনে তোলা পুরানো একটি ছবি
আর্থিক অনটনের কারণে ১৯৫২ সালে কলেজের অবস্থা খুবই নাজুক আকার ধারণ করে। পরিস্থিতি নিরসনে ১৯৫৯ সালে প্রয়াত অধ্যাপক কবির চৌধুরীকে ডেপুটেশনে কলেজের নতুন অধ্যক্ষ নিযে়াগ করে সরকার। এর ফলে কলেজের অবস্থা পরিবর্তিত হতে থাকে। ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৫ জন ছাত্রছাত্রী নিযে় অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পাঠ্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। ১৯৬৫ সালের পহেলা জুলাই বিএম কলেজকে প্রাদেশীকরণ করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সনের পরে আরো কয়েকটি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। সর্বশেষ ২০১০-১১ শিক্ষা বর্ষে চালু হয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ও মার্কেটিং বিভাগ। এ কলেজে বর্তমানে মোট ২৪টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় ১৯৯৯ সাল থেকে বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী বিলুপ্ত করা হয়।

০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৪

বোলপুরে বরিশালের রান্না ঘর!

bolpur-barisal-rannghor বোলপুরে বরিশালের রান্নাঘর
ছবিটি নির্মাতা অমিত সেনের তোলা - আমাদের বরিশাল ডটকম
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সুপরিচিত মহকুমা বোলপুর্। মূলত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের কারণে বিখ্যাত। আর এই বোলপুরেও রয়েছে বরিশালের রান্না ঘর।

খবরটি ফেসবুকের কল্যাণে পাওয়া। আসলে একটি ছবির সুবাদে। ক’মাস আগে কোলকাতার আলোচিত চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিত সেন এটি পোস্ট করেছিলেন। ছবিটি তারই তোলা। সম্ভবত মোবাইলে।

অনলাইন আলাপচারিতায় অমিত জানান, বোলপুর থেকে ইলামবাজার যাওয়ার পথে জঙ্গল শুরু হওয়ার ঠিক আগে ‘বনভিলা’ বাস স্টপ। সেখান থেকে বাম দিকের রাস্তায় ঢুকে অল্প আগালেই বনলক্ষী রিসোর্ট। এর ঠিক বিপরীতেই রয়েছে ওই বরিশালের রান্না ঘর। এটি মূলত একটি খাবারের হোটেল। রিসোর্টের সাথে সংশ্লিষ্টরাই এর প্রতিষ্ঠাতা।

রিসোর্টটি সম্পর্কে উইকিপিডিয়া জানিয়েছে, বনলক্ষী একটি ন্যাচারাল রিসোর্ট। নিরঞ্জন স্যানাল নামের এক ব্যাক্তি ১৯৬৩ এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৩ একর জায়গার ওপর তৈরী এ রিসোর্ট শাল আর ইউক্লিপটাস গাছ দিয়ে ঘেরা।

নির্মাতা অমিত সেন আসলে রিসোর্টেই গিয়েছিলেন। ফেরার পথে হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় সাইনবোর্ডটিতে। ঝটপট ছবিও তুললেন। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে  ভিতরে ঢোকা হয়নি তার। তবে অমিত বলেছেন, এরপর ওই দিকে গেলে তিনি ঠিকই সুযোগ করে বরিশালের রান্না ঘরে যাবেন।

কে এই অমিত সেন

পুনের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনিস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে ১৯৯০ সালে গ্রাজুয়েশন করার পর চিত্রগ্রাহক হিসাবেই প্রথম কাজ শুরু করেছিলেন অমিত সেন। একই সময়ে তিনি বিজ্ঞাপন নির্মাণের কাজও শুরু করেন। আজ অবধি সাড়ে তিনশ থেকে চারশ বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন। এরই মাঝে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান ‘আইলেভেল ফিল্মস’। অবশ্য এর আগেই তিনি দক্ষ ও সফল বিজ্ঞাপন নির্মাতা হিসাবে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন।
amit-sen অমিত সেন
কর্মক্ষেত্রে অমিত সেন - আমাদের বরিশাল ডটকম

১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কাজ করতে এসেছিলেন অমিত। এরপর তিনি একে একে অনেকগুলো কাজ করেন এখানে। এর মধ্যে বার্জার পেইন্ট ও পিএইচপি গ্লাসের বিজ্ঞাপনগুলো অন্যতম।

২০১০ সালে মুক্তি পায় অমিতের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নটবর নট আউট। বর্তমানে তিনি হাতে নিয়েছেন  বাংলা ভাষার প্রথম পূর্ণাঙ্গ খ্রি-ডি সিনেমা নির্মাণের কাজ। সুকুমার রায়ের বিখ্যাত শিশুতোষ গ্রন্থ ‘হ-য-ব-র-ল’ অবলম্বনে তৈরী হচ্ছে এটি। এছাড়া ‘গর্ত’ নামের আরো একটি সিনেমা নির্মাণ করছেন অমিত।

যে টান বহু পুরানো
বরিশাল অঞ্চলের আচার-সংস্কৃতি অমিত সেনের পরিচিতই শুধু নয়, অতি আপন। কাঠমুণ্ডুতে জন্মগ্রহনকারী এ নির্মাতার বাবা-মা দু’জনেই যে খাঁটি ‘বরিশাইল্যা’। দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালে তারা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তবে তাদের সন্তানদের কাছে বরিশাল অচেনা থাকেনি। যে কারণে আজও অমিত বরিশালের রান্না ঘরে যাওয়ার সুযোগ বের করার কথা ভাবছেন। হয়ত সেখানে গিয়ে তিনি মায়ের হাতের রান্নার স্বাদই খুঁজবেন।

প্রতিবেদনটি আমাদের বরিশাল ডটকম’র জন্য প্রস্তুতকৃত। 

২২ জানুয়ারী ২০১৪

বিএম কলেজের একাংশে নারীরা নিষিদ্ধ !


লিফলেটটি প্রথম দেখেছিলাম ২০১২ ডিসেম্বরে সযন্তে সাঁটানো ছিলো ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হলের মূল ফটক সংলগ্ন দেয়ালে বরিশালের বিএম কলেজের ছাত্রাবাসটিমুসলিম হল’  নামেই সমধিক পরিচিত মানবতার কল্যাণেসত্য প্রেম পবিত্রতা আদর্শে সোয়াশো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওই শিক্ষালয়ের মুসলিম ছাত্ররাই শুধু হলের বাসিন্দা যে কারণে উগ্র ডানপন্থীদের আদর্শ বিস্তারের জন্য এটি বরাবরই আকর্ষনীয় পাশেই আবার হিন্দু ছাত্রাবাস কবি জীবনানন্দ দাশ হল - জাতীয় বিভিন্ন কারণে লিফলেটটি মাথায় গাঁথলেও নানা ব্যস্ততায় তা ভুলে থাকতে হয়েছে ঘাঁটাঘাঁটি করার আর সুযোগ হয়নি কিন্তু গত বছরের মাঝ নভেম্বরে কীর্তনখোলার ওপারের চরকাউয়া ইউনিয়নের কালিখোলা গ্রামে হিন্দুদের ১৬টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা শোনার পর লিফলেটটির কথাই প্রথম মাথায় আসে পরদিন ঘটনার সাথে ওই হলের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতার কথাও জানতে পারি সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাস্পে ঘোলাটে হতে থাকা পরিস্থিতি বিষয়টি ঘাঁটাতে বাধ্য করে খুঁজতে গিয়ে দেখলামহলের সেই দেয়ালসহ আশেপাশের কয়েকটি গাছ আর ল্যাম্পপোস্টে যে লিফলেটগুলো রয়েছে, সেগুলোর একটিও আস্ত নেই প্রতিটিরই কোনো না কোনো অংশ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে তবুও সবগুলো মিলিয়ে যে লেখাটুকু আমার সামনে পরিস্কার হয়, তা হচ্ছে - ‘বিএম কলেজ, মুসলিম হলের সামনের রাস্তায়, মাঠে এবং পুকুরপাড়ে মেয়েদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ অনুরোধক্রমে - হলের সচেতন ছাত্রবৃন্দ

ছবিটি ২০১৩’র পহেলা ডিসেম্বর তোলা
এরা মূল্যবোধ সচেতন, না যৌনতা সচেতন?’- লিফলেট প্রচাকারীসচেতন ছাত্রবৃন্দসম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন এসএম তুষার কলেজ পাড়ায় বসবাসকারি এই লেখক-গবেষকের সাথে গত ৩০ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে এসব নিয়ে কথা হচ্ছিলো কলেজের পুরানো প্রশাসনিক ভবন, মানে এখনকার পদার্থ বিজ্ঞান ভবনের সামনে বসে তার সাথে আলাপকালেই চোখে পরে দুজন ছাত্র মুসলিম হলে যাওয়ার রাস্তার পাশের গাছে আর ল্যাম্পপোস্টে আঠা দিয়ে কিছু একটা লাগাচ্ছে এগিয়ে দেখলাম, আবারো সেই লিফলেটটি লাগানো হচ্ছে
আলাপ করে জানা গেলোযারা লিফলেট লাগাচ্ছেন তারা দুজনে কলেজের বিজ্ঞান অনুষদের পৃথক দুটি বিষয়ের দ্বিতীয় তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এদেরই একজন মেহেদী হাসান তিনি জানান, প্রায় দুবছর ধরে লিফলেটটি প্রচার করা হচ্ছে ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মিসহ প্রায় সকল ছাত্রই এটি প্রচারের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছে এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘হলের পুকুরে ছাত্ররা খালি গায়ে গোসল করে অথচ অনেক সময়ই মেয়েরা এসে পুকুরের আশেপাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে আবার হলে যাওয়ার রাস্তার পাশের মাঠে অনেক ছেলে-মেয়েকে আপত্তিকর অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায় মানা করলে আবার তারা ক্ষেপে যায় এর জেরে হলের ছেলেদের সাথে বহুবার গণ্ডগোলও হয়েছে এসব চিন্তা করেই বড় ভাইয়েরা এই লিফলেট প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তবে লিফলেটে কিন্তু আদেশ দেয়া, অনুরোধ করা হয়েছে
 
প্রসঙ্গত, ‘অনুরোধক্রমেশব্দটি ব্যবহার করা হলেও লিফলেটে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসের বিজ্ঞান অনুষদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ ঘেঁষা মুসলিম হলের সামনের বিশাল পুকুর, মাঠ রাস্তায় নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে শিক্ষিকা বা ছাত্রীদের তোয়াক্কা করা হয়নি নিজেদের ক্যাম্পাসের বিশালাংশে তারা আজ অবাঞ্চিত   

মেহেদী তার সহযোগী আরো জানায়, কলেজের ডানপিটে অনেক মেয়ে আর প্রেমিক-প্রেমিকারা বার বার এই লিফলেটগুলো ছিঁড়ে ফেলে কিন্তু তারাও দমবে না যত ছেঁড়া হবে তত লাগানো হবে তারা আরো জানায়, এই হলে চরমোনাই পীরের ভক্তের সংখ্যা অনেক বেশী বর্তমান পীরও এখানে এসে ওয়াজ করেছেন অবশ্য কলেজ ছাত্রদল ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতা জানান, পীর ভক্তদের আড়ালে শিবিরের সমর্থকরাও লুকিয়ে আছে ওখানে ওরাই সব সময়স্ট্রংছিলো, আজও আছে আমলে ছাত্রলীগ আর আমলে ছাত্রদলের মিছিল-মিটিঙে অংশ নিলেও তলে তলে ওরা উগ্র ইসলামি মৌলবাদকেই লালন করে

ওদিকে কালিখোলা গ্রামের ঘটনার ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক (মুসলিম হল) হলের অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারাই নৌপথে শহর থেকে ওই গ্রামের পেছন দিয়ে গিয়ে আগুন দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক কালের কণ্ঠ ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পত্রিকার বরিশাল অফিসের সাংবাদিকরা তাদের পাঠানো সংবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ছাত্রের নামও জানিয়েছেন তারা সবাই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এছাড়া কালিখোলা থেকে ফিরে কবি-গল্পকার অদিতি ফাল্গুনীও লিখেলেন, ‘কেউ বলছেন - এটা স্থানীয় আওয়ামি লীগের চেয়ারম্যানের কাজ হতে পারে, যেহেতু গতবার তিনি এই গ্রামে বেশি ভোট পাননি আর বরিশাল বিএম কলেজের যে ছেলেরা হিন্দু গ্রামে হামলার অগ্রভাগে ছিলো, তারা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগেরই কর্মী

বাংলার শস্য ভাণ্ডার প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বন্দর নগরী বরিশালে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুন প্রতিষ্ঠিত বিএম কলেজ এর আগেও সাম্প্রদায়িকতার কবলে পরেছে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ ১৯৫০ সালের দাঙ্গা-হাঙ্গামার পর এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র-শিক্ষক ভারতে চলে গিয়েছিলো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তখন কলেজের দ্বি-বার্ষিক ত্রি-বার্ষিক সম্মান কোর্স তুলে দিযে় এটিকে শুধু স্নাতক পাস কলেজ হিসেবে টিকিযে় রাখা হয়েছিলো অথচ তার আগে কলেজ ছিলো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পাঁচ কলেজের একটি পূর্ববাংলা তথা অধুনা বাংলাদেশের প্রথম দিকের সরকারি কলেজগুলোরও একটি এটি কলেজকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণবঙ্গের শিক্ষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রেনেসাঁর সৃষ্টি হয় কারণে বিএম কলেজের ইতিহাস মানে আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্বের মানব সভ্যতার ইতিহাস বিকাশের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, আমেরিকার হারবার্ড, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া ভারতের নালন্দা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় যেরূপ অবদান রেখেছে, পূর্ব বাংলায় শিক্ষা সংস্কৃতি বিকাশে বিএম কলেজের ভূমিকা অনুরূপ বললেও বেশি বলা হবে না উনিশ বিশ শতকের গোড়ার দিকে অবিভক্ত বাংলার জনজীবন যারা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন কলেজের ছাত্র দেশের জাতীয় সাংস্কৃতিক জীবনে বিএম কলেজের ছাত্ররা এককভাবে যত বড় অবদান রেখেছে দেশের আর কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পারেনি

ঢাকা কলকাতা থেকে দূরে অবস্থান এবং নদী-নালা দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এখানকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক পশ্চাৎপদ ছিল ১৮৫৪ সালে বরিশাল জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে অঞ্চল আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নবজাগরণ শুরু হয় এরই ধারাবাহিকতায় তিন দশক পরে আধুনিক বরিশালের স্থপতি দরিদ্রবান্ধব মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ১৮৮৪ সালে বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে প্রতিষ্ঠা করেন বিএম স্কুল তখনও প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করার পর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আর সুযোগ ছিলো না বরিশালে তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাবু রমেশ চন্দ্র দত্তের অনুরোধে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৮৮৯ সালে ওই স্কুল কম্পাউন্ডেই এই বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাত্মা অশ্বিনী ১৯১৭ সালে বিএম স্কুল কম্পাউন্ড থেকে বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয় এই কলেজ  প্রায় ৬২.০২ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই ক্যাম্পাসে আসার পরই শুরু হয়েছিলো বিএম কলেজের বর্ণালী অধ্যায় সে সময় স্বদেশী অসহযোগ আন্দোলনের কারণে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি, উচ্চ শিক্ষিত স্বাধীনচেতা তরুণ ইংরেজদের গোলামী ছেড়ে চলে এসে দেশসেবা মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরি করাকে অধিক পছন্দনীয় মনে করেছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত তখন ভারতবর্ষের অনেক খ্যাতিমান শিক্ষকের সমাবেশ ঘটিয়ে কলেজের শিক্ষার মান অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান তার সাথে সাথে তিনি নিজেও লাভজনক ওকালতি পেশা ছেড়ে বিনা বেতনে কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন অধ্যক্ষ ব্রজেন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায়, রজনীকান্ত গুহ, বাবু সতীশচন্দ্রসহ বিএম কলেজের সে সময়কার অন্যান্য অধ্যক্ষদের পাণ্ডিত্ব্য এবং পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ঈর্ষণীয় সাফল্য বরিশালের জন্য প্রচুর সুনাম বয়ে এনেছিলো কলেজের অধ্যাপকদের প্রজ্ঞা শিক্ষাপদ্ধতি উন্নত করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিশেষ ভূমিকা রাখেন

১৯২২ সনে ইংরেজি দর্শন, ১৯২৫ সনে সংস্কৃতি গণিত, ১৯২৮ সনে রসায়ন এবং ১৯২৯ সালে অর্থনীতি সম্মান অনার্স কোর্স চালু হয় বিএম কলেজে মূলত ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সময়কাল ছিল বিএম কলেজের স্বর্ণযুগ তখন কলেজের শিক্ষার মান এতই উন্নত ছিল যে, অনেকে প্রতিষ্ঠানকে দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড বলে আখ্যায়িত করেন বাংলার ছোটলাট স্যার উডবর্ন সরকারি শিক্ষা বিবরনীতে লিখেছিলেন This moffusil College promises some days to Challenge the supremacy of the Metropolitan (Presidency) College. একই সময়ে বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিটসন বেল লিখেছিলেন Barisal may be said to be the Oxford of East Bengal.

আর্থিক অনটনের কারণে ১৯৫২ সালে কলেজের অবস্থা খুবই নাজুক আকার ধারণ করে পরিস্থিতি নিরসনে ১৯৫৯ সালে প্রয়াত অধ্যাপক কবির চৌধুরীকে ডেপুটেশনে কলেজের নতুন অধ্যক্ষ নিযে়াগ করে সরকার এর ফলে কলেজের অবস্থা পরিবর্তিত হতে থাকে ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৫ জন ছাত্রছাত্রী নিযে় অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পাঠ্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন করা হয় ১৯৬৫ সালের পহেলা জুলাই বিএম কলেজকে প্রাদেশীকরণ করা হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সনের পরে আরো কয়েকটি বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয় সর্বশেষ ২০১০-১১ শিক্ষা বর্ষে চালু হয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং মার্কেটিং বিভাগ কলেজে বর্তমানে মোট ২৪টি বিষয়ে পাঠদান করা হয় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় ১৯৯৯ সাল থেকে বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী বিলুপ্ত করা হয়

কলেজ নিয়ে এত কথা বললাম শুধু প্রশ্নের প্রেক্ষাপট পরিস্কার করতে আজ মনে অনেক প্রশ্ন ওই লিফলেটটি কি আমাদের পশ্চাতপদতারই নিদর্শন নয়? জাতির চিন্তার দৈন্যতা কাটবে কবে? এর দায় কে বা কারা নেবে? কে ভাই - আদি বিভেদ মেটানোর মন্ত্র শেখাবে?

* লেখাটি আমাদের বরিশাল ডটকম’এ প্রকাশিত হয়েছে।
newsreel [সংবাদচিত্র]