Powered By Blogger
বিএম কলেজ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বিএম কলেজ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২০ মে ২০১৮

ফের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে চাই

পুত্র মুনিমের সাথে ছায়ীদুল্লাহ্ আঙ্কেলের এই ছবিটি ৪ মে দুপুরের
কিছু কিছু মৃত্যুর খবর বড় বেশী স্মৃতিকাতর করে তোলে। এই যেমন আজ ভোরে বন্ধু কানুর (লিমন কৃষ্ণ সাহা) কাছে যখন শুনলাম কলেজ পাড়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রিয়মুখ মোহাম্মদ ছায়ীদুল্লাহ্ আর নেই, কত কিছুই না মনে পড়ে গিয়েছে। যা রোমন্থনে বেলা গড়িয়ে দুপুর হতে চলেছে। তিনি হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক হলেও এককালে বরিশালের প্রতিটি শিক্ষায়তনের শিক্ষার্থী তাঁর জ্ঞানের সান্নিধ্য পেয়েছেন।
মূলত ইংরেজীর ডাকসাইটে শিক্ষক ছিলেন ছায়ীদুল্লাহ আঙ্কেল (এমনটাই সম্বোধন করতাম তাকে)। হালিমা খাতুনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকও ছিলেন দীর্ঘদিন। মিষ্টভাষী নিপাট ভদ্রলোক, অদ্ভুত মায়াবী এক হাসির অধিকারী এই মানুষটি শৈশব ও কৈশোরে আমাদের এক অদ্ভুত ভয়ের কারণ ছিলেন। তার ছোট ছেলে মুনিমের (মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ্) সাথে বন্ধুত্বের সুবাদে যার সাথে পরিচিত ছিলাম আমরা, মানে মুনিমের বন্ধুরা। আন্দাজ করি বাবু ভাইয়ের (মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ্) বন্ধুরাও একই আতঙ্কে ভুগতেন। বিষয়টা একটু খোলসা করি। একদিনের ঘটনা বললেই সবাই বুঝবেন আশাকরি। 

তখন সম্ভবত সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। বিকেলে পূর্ব নির্ধারিত ক্রিকেট ম্যাচ খেলার জন্য মুনিমকে ডাকতে গিয়েছি ওর বাসায়। আঙ্কেলই দরজা খুললেন। আসার কারণ শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন। এরপর প্রথমেই জানতে চাইলেন কোন স্কুলে কোন ক্লাসে পড়ি। বলার পর ফের জানতে চাইলেন, ‘টেনস’ (Tense ) কত প্রকার ও কি কি? উত্তর শেষ হতেই তাঁর পরবর্তী জিজ্ঞাসা, ‘পার্টস অব স্পিচ’ (Parts Of Speech) কাকে বলে? তা’ও বললাম। এরপর আবারও সম্পূরক প্রশ্ন, পার্টস অব স্পিচ কত প্রকার ও কি কি? সবগুলো উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারায় মহাখুশী হয়ে যান তিনি। গম্ভীরতা ঝেড়ে স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, দাঁড়াও মুনিমকে ডেকে দিচ্ছি। কিন্তু তিনি ভিতরে গিয়ে দেখেন যে তার সুপুত্রটি আর ঘরে নেই আসলে। কোলবালিশকে কাঁথায় মুড়িয়ে নিজের জায়গায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে সে অনেক আগেই পিছনের দরজা থেকে পালিয়েছে। বুঝুন তখন আমার কি হাল। অবস্থা বুঝে আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত ভেগে যাই। 

একটু বড় হওয়ার পর বন্ধুরা যখন প্রায়ই নিশিজাগা আড্ডায় মাতি, তখনকার আরেকটা গল্প বলি। এক শাওন রাতে আঙ্কেল ঘুমিয়ে যাওয়ার পর মুনিমের বাসায় গিয়ে হাজির আমরা। তুমুল আড্ডা, তাস খেলা আর খাওয়া-দাওয়ায় আমরা যখন মত্ত ঠিক তখনই কিভাবে যেন আঙ্কেলের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি রুমের দরজায় এসে নক করতেই আমরা সব চুপ। পিনপতন নিরবতা নেমে আসে। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তিনি ঠিকই টের পেয়ে গিয়েছিলেন যে রুমে অনেক মানুষ রয়েছে। অবশেষে অন্যদিকের দরজা খুলে আমরা যখন কেবল রাস্তায় বেড়িয়েছি, তিনিও কোন দিক দিয়ে যেন বেড়িয়ে এলেন। কি আর করা, দিলাম দৌড়। তিনিও আমাদের তাড়া করে বেশ কত দূর দৌড়ে এসেছিলেন, বলছিলেন - দাঁড়াও, দাঁড়াও। কিন্তু আমাদের কি আর তখন সেই সাহস আছে। আঙ্কেলকে আসতে দেখে পাশে থাকা এক বন্ধু থামার কথা বলতেই আরেক বন্ধুর বলেছিল, তুই ইংলিশ গ্রামারে ভালো হলে দাঁড়া; নইলে ভেগে যা। আঙ্কেলের সাথে এমন আরো কত অজস্র টুকরো স্মৃত্মি জমে আছে! শেষের দিকে তিনি বেশ নরম হয়ে গিয়েছিলেন, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাতেও বন্ধু বান্নার (বাকিউল আহসান) সাথে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা হচ্ছিল। চুয়াত্তর কি-ইবা এমন বয়স!

কিছুক্ষণ পর, মানে বা’দ যোহর বিএম কলেজের মধ্যে আঙ্কেলের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। বরিশালের কলেজ পাড়া এক গুণী প্রবীণকে বিদায় জানাবে আজ। আল্লাহ অবশ্যই তার এই নামাজী পরহেজগার বান্দাকে প্রাপ্য সম্মাণটুকু দেবেন। পবিত্র কোরান বলছে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। বিদায় আঙ্কেল। তবে মহাবিশ্বের কোথাও ফের কোনো জন্মে আপনার আন্তরিক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে চাই। অপেক্ষায় থাকলাম। আশারাখি আপনিও ভালো থাকবেন।

ঈয়ন
২০ মে ২০১৮
মিরপুর, ঢাকা।

২২ এপ্রিল ২০১৪

সোনালী সময় - The Golden Age

© eon's photography / pap
এই বয়সটা সকলেই পাড়ি দেয়; এবং সারাজীবনই মিস করে খুব। কারণ এমন নিরুদ্বেগ মন, কেড়ে নেয় বয়সী ক্ষণ। অবশ্য কেউ কেউ বয়সকেও জয় করতে জানে; তারা আজন্ম কিশোর।
‍‌______________________
Camera : Canon EOS 7D
Focal Length : 116 mm
Shutter Speed : 1/50 sec
Aperture : f/7.1 ISO : 160
______________________
Taken : Oct 17, 2013
Location : Barisal, Bangladesh

https://www.flickr.com/photos/eon_bd/with/10824594675
http://yourshot.nationalgeographic.com/photos/3466720

২২ জানুয়ারী ২০১৪

বিএম কলেজের একাংশে নারীরা নিষিদ্ধ !


লিফলেটটি প্রথম দেখেছিলাম ২০১২ ডিসেম্বরে সযন্তে সাঁটানো ছিলো ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হলের মূল ফটক সংলগ্ন দেয়ালে বরিশালের বিএম কলেজের ছাত্রাবাসটিমুসলিম হল’  নামেই সমধিক পরিচিত মানবতার কল্যাণেসত্য প্রেম পবিত্রতা আদর্শে সোয়াশো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওই শিক্ষালয়ের মুসলিম ছাত্ররাই শুধু হলের বাসিন্দা যে কারণে উগ্র ডানপন্থীদের আদর্শ বিস্তারের জন্য এটি বরাবরই আকর্ষনীয় পাশেই আবার হিন্দু ছাত্রাবাস কবি জীবনানন্দ দাশ হল - জাতীয় বিভিন্ন কারণে লিফলেটটি মাথায় গাঁথলেও নানা ব্যস্ততায় তা ভুলে থাকতে হয়েছে ঘাঁটাঘাঁটি করার আর সুযোগ হয়নি কিন্তু গত বছরের মাঝ নভেম্বরে কীর্তনখোলার ওপারের চরকাউয়া ইউনিয়নের কালিখোলা গ্রামে হিন্দুদের ১৬টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা শোনার পর লিফলেটটির কথাই প্রথম মাথায় আসে পরদিন ঘটনার সাথে ওই হলের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতার কথাও জানতে পারি সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাস্পে ঘোলাটে হতে থাকা পরিস্থিতি বিষয়টি ঘাঁটাতে বাধ্য করে খুঁজতে গিয়ে দেখলামহলের সেই দেয়ালসহ আশেপাশের কয়েকটি গাছ আর ল্যাম্পপোস্টে যে লিফলেটগুলো রয়েছে, সেগুলোর একটিও আস্ত নেই প্রতিটিরই কোনো না কোনো অংশ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে তবুও সবগুলো মিলিয়ে যে লেখাটুকু আমার সামনে পরিস্কার হয়, তা হচ্ছে - ‘বিএম কলেজ, মুসলিম হলের সামনের রাস্তায়, মাঠে এবং পুকুরপাড়ে মেয়েদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ অনুরোধক্রমে - হলের সচেতন ছাত্রবৃন্দ

ছবিটি ২০১৩’র পহেলা ডিসেম্বর তোলা
এরা মূল্যবোধ সচেতন, না যৌনতা সচেতন?’- লিফলেট প্রচাকারীসচেতন ছাত্রবৃন্দসম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন এসএম তুষার কলেজ পাড়ায় বসবাসকারি এই লেখক-গবেষকের সাথে গত ৩০ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে এসব নিয়ে কথা হচ্ছিলো কলেজের পুরানো প্রশাসনিক ভবন, মানে এখনকার পদার্থ বিজ্ঞান ভবনের সামনে বসে তার সাথে আলাপকালেই চোখে পরে দুজন ছাত্র মুসলিম হলে যাওয়ার রাস্তার পাশের গাছে আর ল্যাম্পপোস্টে আঠা দিয়ে কিছু একটা লাগাচ্ছে এগিয়ে দেখলাম, আবারো সেই লিফলেটটি লাগানো হচ্ছে
আলাপ করে জানা গেলোযারা লিফলেট লাগাচ্ছেন তারা দুজনে কলেজের বিজ্ঞান অনুষদের পৃথক দুটি বিষয়ের দ্বিতীয় তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এদেরই একজন মেহেদী হাসান তিনি জানান, প্রায় দুবছর ধরে লিফলেটটি প্রচার করা হচ্ছে ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মিসহ প্রায় সকল ছাত্রই এটি প্রচারের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছে এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘হলের পুকুরে ছাত্ররা খালি গায়ে গোসল করে অথচ অনেক সময়ই মেয়েরা এসে পুকুরের আশেপাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে আবার হলে যাওয়ার রাস্তার পাশের মাঠে অনেক ছেলে-মেয়েকে আপত্তিকর অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায় মানা করলে আবার তারা ক্ষেপে যায় এর জেরে হলের ছেলেদের সাথে বহুবার গণ্ডগোলও হয়েছে এসব চিন্তা করেই বড় ভাইয়েরা এই লিফলেট প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তবে লিফলেটে কিন্তু আদেশ দেয়া, অনুরোধ করা হয়েছে
 
প্রসঙ্গত, ‘অনুরোধক্রমেশব্দটি ব্যবহার করা হলেও লিফলেটে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসের বিজ্ঞান অনুষদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ ঘেঁষা মুসলিম হলের সামনের বিশাল পুকুর, মাঠ রাস্তায় নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে শিক্ষিকা বা ছাত্রীদের তোয়াক্কা করা হয়নি নিজেদের ক্যাম্পাসের বিশালাংশে তারা আজ অবাঞ্চিত   

মেহেদী তার সহযোগী আরো জানায়, কলেজের ডানপিটে অনেক মেয়ে আর প্রেমিক-প্রেমিকারা বার বার এই লিফলেটগুলো ছিঁড়ে ফেলে কিন্তু তারাও দমবে না যত ছেঁড়া হবে তত লাগানো হবে তারা আরো জানায়, এই হলে চরমোনাই পীরের ভক্তের সংখ্যা অনেক বেশী বর্তমান পীরও এখানে এসে ওয়াজ করেছেন অবশ্য কলেজ ছাত্রদল ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতা জানান, পীর ভক্তদের আড়ালে শিবিরের সমর্থকরাও লুকিয়ে আছে ওখানে ওরাই সব সময়স্ট্রংছিলো, আজও আছে আমলে ছাত্রলীগ আর আমলে ছাত্রদলের মিছিল-মিটিঙে অংশ নিলেও তলে তলে ওরা উগ্র ইসলামি মৌলবাদকেই লালন করে

ওদিকে কালিখোলা গ্রামের ঘটনার ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক (মুসলিম হল) হলের অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারাই নৌপথে শহর থেকে ওই গ্রামের পেছন দিয়ে গিয়ে আগুন দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক কালের কণ্ঠ ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পত্রিকার বরিশাল অফিসের সাংবাদিকরা তাদের পাঠানো সংবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ছাত্রের নামও জানিয়েছেন তারা সবাই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এছাড়া কালিখোলা থেকে ফিরে কবি-গল্পকার অদিতি ফাল্গুনীও লিখেলেন, ‘কেউ বলছেন - এটা স্থানীয় আওয়ামি লীগের চেয়ারম্যানের কাজ হতে পারে, যেহেতু গতবার তিনি এই গ্রামে বেশি ভোট পাননি আর বরিশাল বিএম কলেজের যে ছেলেরা হিন্দু গ্রামে হামলার অগ্রভাগে ছিলো, তারা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগেরই কর্মী

বাংলার শস্য ভাণ্ডার প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বন্দর নগরী বরিশালে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুন প্রতিষ্ঠিত বিএম কলেজ এর আগেও সাম্প্রদায়িকতার কবলে পরেছে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ ১৯৫০ সালের দাঙ্গা-হাঙ্গামার পর এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র-শিক্ষক ভারতে চলে গিয়েছিলো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তখন কলেজের দ্বি-বার্ষিক ত্রি-বার্ষিক সম্মান কোর্স তুলে দিযে় এটিকে শুধু স্নাতক পাস কলেজ হিসেবে টিকিযে় রাখা হয়েছিলো অথচ তার আগে কলেজ ছিলো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পাঁচ কলেজের একটি পূর্ববাংলা তথা অধুনা বাংলাদেশের প্রথম দিকের সরকারি কলেজগুলোরও একটি এটি কলেজকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণবঙ্গের শিক্ষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রেনেসাঁর সৃষ্টি হয় কারণে বিএম কলেজের ইতিহাস মানে আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্বের মানব সভ্যতার ইতিহাস বিকাশের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, আমেরিকার হারবার্ড, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া ভারতের নালন্দা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় যেরূপ অবদান রেখেছে, পূর্ব বাংলায় শিক্ষা সংস্কৃতি বিকাশে বিএম কলেজের ভূমিকা অনুরূপ বললেও বেশি বলা হবে না উনিশ বিশ শতকের গোড়ার দিকে অবিভক্ত বাংলার জনজীবন যারা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন কলেজের ছাত্র দেশের জাতীয় সাংস্কৃতিক জীবনে বিএম কলেজের ছাত্ররা এককভাবে যত বড় অবদান রেখেছে দেশের আর কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পারেনি

ঢাকা কলকাতা থেকে দূরে অবস্থান এবং নদী-নালা দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এখানকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক পশ্চাৎপদ ছিল ১৮৫৪ সালে বরিশাল জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে অঞ্চল আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নবজাগরণ শুরু হয় এরই ধারাবাহিকতায় তিন দশক পরে আধুনিক বরিশালের স্থপতি দরিদ্রবান্ধব মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ১৮৮৪ সালে বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে প্রতিষ্ঠা করেন বিএম স্কুল তখনও প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করার পর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আর সুযোগ ছিলো না বরিশালে তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাবু রমেশ চন্দ্র দত্তের অনুরোধে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৮৮৯ সালে ওই স্কুল কম্পাউন্ডেই এই বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাত্মা অশ্বিনী ১৯১৭ সালে বিএম স্কুল কম্পাউন্ড থেকে বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয় এই কলেজ  প্রায় ৬২.০২ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই ক্যাম্পাসে আসার পরই শুরু হয়েছিলো বিএম কলেজের বর্ণালী অধ্যায় সে সময় স্বদেশী অসহযোগ আন্দোলনের কারণে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি, উচ্চ শিক্ষিত স্বাধীনচেতা তরুণ ইংরেজদের গোলামী ছেড়ে চলে এসে দেশসেবা মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরি করাকে অধিক পছন্দনীয় মনে করেছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত তখন ভারতবর্ষের অনেক খ্যাতিমান শিক্ষকের সমাবেশ ঘটিয়ে কলেজের শিক্ষার মান অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান তার সাথে সাথে তিনি নিজেও লাভজনক ওকালতি পেশা ছেড়ে বিনা বেতনে কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন অধ্যক্ষ ব্রজেন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায়, রজনীকান্ত গুহ, বাবু সতীশচন্দ্রসহ বিএম কলেজের সে সময়কার অন্যান্য অধ্যক্ষদের পাণ্ডিত্ব্য এবং পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ঈর্ষণীয় সাফল্য বরিশালের জন্য প্রচুর সুনাম বয়ে এনেছিলো কলেজের অধ্যাপকদের প্রজ্ঞা শিক্ষাপদ্ধতি উন্নত করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিশেষ ভূমিকা রাখেন

১৯২২ সনে ইংরেজি দর্শন, ১৯২৫ সনে সংস্কৃতি গণিত, ১৯২৮ সনে রসায়ন এবং ১৯২৯ সালে অর্থনীতি সম্মান অনার্স কোর্স চালু হয় বিএম কলেজে মূলত ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সময়কাল ছিল বিএম কলেজের স্বর্ণযুগ তখন কলেজের শিক্ষার মান এতই উন্নত ছিল যে, অনেকে প্রতিষ্ঠানকে দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড বলে আখ্যায়িত করেন বাংলার ছোটলাট স্যার উডবর্ন সরকারি শিক্ষা বিবরনীতে লিখেছিলেন This moffusil College promises some days to Challenge the supremacy of the Metropolitan (Presidency) College. একই সময়ে বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিটসন বেল লিখেছিলেন Barisal may be said to be the Oxford of East Bengal.

আর্থিক অনটনের কারণে ১৯৫২ সালে কলেজের অবস্থা খুবই নাজুক আকার ধারণ করে পরিস্থিতি নিরসনে ১৯৫৯ সালে প্রয়াত অধ্যাপক কবির চৌধুরীকে ডেপুটেশনে কলেজের নতুন অধ্যক্ষ নিযে়াগ করে সরকার এর ফলে কলেজের অবস্থা পরিবর্তিত হতে থাকে ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৫ জন ছাত্রছাত্রী নিযে় অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পাঠ্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন করা হয় ১৯৬৫ সালের পহেলা জুলাই বিএম কলেজকে প্রাদেশীকরণ করা হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সনের পরে আরো কয়েকটি বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয় সর্বশেষ ২০১০-১১ শিক্ষা বর্ষে চালু হয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং মার্কেটিং বিভাগ কলেজে বর্তমানে মোট ২৪টি বিষয়ে পাঠদান করা হয় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় ১৯৯৯ সাল থেকে বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী বিলুপ্ত করা হয়

কলেজ নিয়ে এত কথা বললাম শুধু প্রশ্নের প্রেক্ষাপট পরিস্কার করতে আজ মনে অনেক প্রশ্ন ওই লিফলেটটি কি আমাদের পশ্চাতপদতারই নিদর্শন নয়? জাতির চিন্তার দৈন্যতা কাটবে কবে? এর দায় কে বা কারা নেবে? কে ভাই - আদি বিভেদ মেটানোর মন্ত্র শেখাবে?

* লেখাটি আমাদের বরিশাল ডটকম’এ প্রকাশিত হয়েছে।
newsreel [সংবাদচিত্র]