Powered By Blogger
নারী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নারী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০২ এপ্রিল ২০১৯

ভোটযুদ্ধে গণধর্ষণ, দায় কার?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানকারী নারীদের একাংশ। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮।
দুনিয়ার কোথাও কি এমন কোনো সশস্ত্র যুদ্ধ হয়েছে, যেখানে নারীরা ‘সামরিক’ গণধর্ষণের শিকার হয়নি? সমরাক্রান্ত জনপদে এটাই নারীদের নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে দুনিয়া। আর ‘ভোটযুদ্ধে’ এই পুরুষতান্ত্রিক বর্বরতার বেসামরিক প্রয়োগ মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। যাকে নির্বাচনী বা রাজনৈতিক গণধর্ষণ বলা যেতে পারে। 
এর জন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দায়ী করা হলে তা কিভাবে এড়াবে দলগুলো? আবার কেউ যদি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সামর্থ্য নিয়ে তোলে, তারাই বা কি বলবে?
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার বিরোধীদের ভোট দেওয়ার দায়ে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চল্লিশোর্ধ গৃহবধুকে গণধর্ষণের ঘটনার পর আলাপ হচ্ছিল বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) এই নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরের সাথে।
“সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী নির্যাতনকারীদের বয়কট করতে হবে,” উল্লেখ করে নারী অধিকার আন্দোলনের এই নেত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগে এ জাতীয় অনেক আবর্জনা যুক্ত হয়েছে।” 
ওই ঘটনার হোতা দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিস্কার করে তাঁর দল। চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্য বাগ্যা গ্রামের ধর্ষিতা ছিলেন চার সন্তানের জননী। ঠিক তিন মাস পর ইউনিয়নে উত্তর বাগ্যা গ্রামে একই ঘটনার পুনুরাবৃত্তি। 
নির্বাচনী দ্বন্দ্বের জেরে সেই রুহুলের কলা বাগানে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয় পয়ত্রিশোর্ধ্ব এক গৃহবধুকে, যে ছয় সন্তানের জননী। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদের এক প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় জেরে রোববার (৩১ মার্চ) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে দাবি করে নির্যাতিতা নারী ও তাঁর স্বামী জানান, বাড়ি ফেরার পথে গতিরোধ করে প্রথমে স্বামীকে মারধর করে বেঁধে ফেলে ধর্ষকরা। 
ওই দিনের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। অথচ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর ভোলায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পূর্ণিমা শীলকে নিজের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন এই দলেরই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
প্রসঙ্গত, “বাংলাদেশে সংঘবদ্ধ, দলগত বা গণধর্ষণের ৩০ শতাংশই ঘটে প্রতিহিংসাবশত,” ২০১৩ সালের এক গবেষণার বরাত দিয়ে এমনটাই বলছে উইকিপিডিয়া বলছে। 
ইতিমধ্যে এ ঘটনায় চরজব্বর থানায় মামলা হয়েছে দুই জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। এর আগের ঘটনায়ও গণধর্ষণের নির্দেশদাতা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ পাঁচ অভিযুক্তকে নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার আগেই গ্রেপ্তার করেছিল তারা। তখন ‘পুলিশের এই জোড় তৎপরতা প্রসংশনীয়’ উল্লেখ করে রোকেয়া কবির বলেছিলেন, “সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে এখন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে আগামীতে তাদের নাম করে কেউ নারী নির্যাতন করার সাহস না পায়।” 
তাঁর অভিমত, “শুধু আগামীদের গ্রেপ্তারের করলেই হবে না, আক্রান্ত পরিবারটি যাতে সুরক্ষা পায় এবং তাদের যাতে পুনরায় আক্রান্ত হতে না হয়, সেদিকেও পুলিশকে খেয়াল রাখতে হবে।” তাছাড়া “আক্রান্ত পরিবারকে ‘ভ্রকুটি মুক্ত’ রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সক্রিয় থাকতে হবে,” বলেও উল্লেখ করেন বিএনপিএস নির্বাহী পরিচালক। 
সুবর্ণচরের প্রথম গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতনর দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এই মামলার প্রধান আসামি রুহুলকে দেওয়া জামিন বাতিল করে হাইকোর্ট। এরই মধ্যে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি উপজেলার পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। 

চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ জানিয়েছে, গত বছর ৯৪ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩২ জন নারী।

২১ এপ্রিল ২০১৫

ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ

বঙ্গাব্দ বরণ, তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি চত্ত্বর সংলগ্ন
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে নারীদের বস্ত্রহরণ ও শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে উত্তাল সারাদেশ।
ছবিটি বরিশালের।
ইসলামী ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরীফের কোন সূরার কোন আয়াতে কম কাপড় পরিহিত - ‘বেপর্দা’ (পর্দা না মানা) নারীদের বিবস্ত্র করার কথা বলা আছে? এমন কোনো নির্দেশ রয়েছে ঠিক কার বর্ণিত হাদিসে? কোনো নারী ইসলাম বা ইসলামী আদেশ না মানলেই কি মুসলমান পুরুষ তার বস্ত্রহরণের অধিকার পেয়ে যায়? নাকি এ মহান ধর্মে যে কোনো নারীই নিরাপদ?
***
পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারা -এর ১৮৭ নম্বর আয়াতে নারী ও পুরুষের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ [স্বরূপ], তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ [স্বরূপ]।” অর্থাৎ পুরুষ ও নারীকে পরস্পরের পোশাক বলছে ইসলাম। সেই নারীর বস্ত্রহরণে যে পুরুষেরা মহান আল্লাহর নামে শ্লোগান দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন, তারা কি আদৌ মুসলমান? নাকি ইসলামকে কলুষিত করার বিধর্মী কৌশলে পথভ্রষ্ট কোনো গোষ্ঠী? তারা কী জানে না যে সূরা নূর -এর ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “(হে নবী) মোমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। নিশ্চয়ই তারা যাহা কিছুই করে, আল্লাহ তৎসম্পর্কে পরিজ্ঞাত।” - নাকি তারা নেহাতই জন্মসূত্রে মুসলমান? যারা কখনো কোরআন বোঝার তাগিদই অনুভব করেনি। যুগে যুগেই যে এরা থাকবে সে ইঙ্গিতও রয়েছে সূরা বাকারা -এর তিনটি আয়াতে। আয়াতগুলো জেনে রাখুন-
০৮। মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা বলে 'আমরা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করি'। কিন্তু তারা [প্রকৃতপক্ষে] বিশ্বাস করে না। ০৯। আল্লাহ্‌ ও বিশ্বাসীদের তারা প্রতারিত করতে চায়, কিন্তু [এর দ্বারা] তার শুধুমাত্র নিজেদের প্রতারিত করে অথচ তারা [তা] বুঝতে পারে না। ১০। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি; এবং আল্লাহ্‌ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন; তারা [ভোগ করবে] নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।”

***
পহেলা বৈশাখ, ১৪২২। বাংলার ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে নিশ্চয়ই। এ দেশেরই এক শ্রেণীর (অ)-মানুষ ইসলামের দোহাই দিয়ে সেদিনের সংঘবদ্ধ যৌনত্রাসের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নারীদের যেভাবে দোষারোপ করছেন, তাতে এক মুসলিম পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি অন্তত বিব্রত। কারণ পবিত্র কোরআন কখনোই এমন বাড়াবাড়িকে সমর্থন করে না। স্বদেশী মুসলমানদের এই গোমরাহের পথ থেকে ফেরানোর তাগিদ অনুভব করেই এ লেখাটি তৈরী করতে বসেছি। আল্লাহ আমাকে এটি সম্পন্ন করা তওফিক দেবেন, সে ঈমানও রয়েছে। কারণ নিশ্চয়ই এসব তারই নির্দেশে হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে বিচলিত মন নিয়ে তাই কোরআন, হাদিসেই দিয়েছি ডুব। আর খুব খেয়াল করে দেখেছি, সর্বজ্ঞ আল্লাহ বহুবার সেইসব পথভ্রষ্টদের সতর্ক করে দিতে চেয়েছেন, যারা নারীর পোশাকের দোহাই দিয়ে যৌন সন্ত্রাস চালানোকে হালাল করতে চেয়েছে, চাচ্ছে এবং চাইবে। যেমন সূরা নিসা -এর উল্লেখিত আয়াতে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন ‘পুরুষদের বলে দিন’। আবার আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো অপরিচিত নারীর প্রতি যৌন লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, কিয়ামতের দিন তার চোখে উত্তপ্ত গলিত লৌহ ঢেলে দেওয়া হবে (ফাতহুল কাদির)।” এখনো কারো কী মনে হচ্ছে না বৈশাখের বস্ত্রহরণকারীরা কোরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কাজ করেছে। আর তাদের সমর্থন করে ওই সুমহান গ্রন্থ এবং নবীকে কলঙ্কিত করেছন একদল বিভ্রান্ত অনুসারী। এ বিভ্রান্তির দায় কার, সে আলোচনায় পরে আসছি।

***
পহেলা বৈশাখের ওই ঘটনা পর যারা বলেছেন -
-‘আলহামদুলিল্লাহ - এটা আল্লাহর পক্ক (পক্ষ) হতে।’
- ‘এটা ইসলাম থেকে দূরে যাওয়ার ফল।’
- ‘ইসলামের বাইরে গেলে এমনি হবে।’
- ‘যে নারী , পরপুরুষকে দেখানোর জন্য সেজে বের হয়, তাদের জন্য এটাই পাওনা !’
- ‘ওখানে (বর্ষবরণে) না গেলে কী হয় না! এর জন্য মেয়েরাই দাই (দায়ী)।’
- ‘তোমাদেরকে আল্লাহ বেইজ্জতি না করে ছেড়ে দিবে ভেবেছ?’
- ‘আধা বিবস্ত্র নারী পুরা বিবস্ত্র হবে এটাই স্বাভাবিক।
তারাই একটু ভেবে দেখুন তো - আমার দয়াল মহানবীর একজন উম্মত হয়ে তার দরবারে দাঁড়িয়ে আপনারা এই কথাগুলো বলতে পারতেন কি? নাকি আগে নিজের বিরুদ্ধে, আপন কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জেহাদ করার কথা ভাবতেন।
***
হে মুমিন মুসলমান ভাইয়েরা, সেদির ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজে দেখলাম বোরখা পরিহিত এক নারী তার শরীরে হাত দেয়ার অপরাধে একজনকে চড় দিচ্ছে। অর্থাৎ পর্দাশীল নারীরাও সেদিন শ্লীলতাহানীর হাত থেকে রেহাই পাননি। এরপরও আপনারা (ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা) বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন কি? আপনাদের আরো স্মরণ করিয়ে দেই সূরা নিসা –এর ৭৫ নম্বর আয়াত। যেখানে আল্লাহ বলছেন, "তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর পথে লড়াই করছ না অসহায় নারী,পুরুষ ও শিশুদের রক্ষার জন্যে? যারা বলে হে আমাদের প্রতিপালক! জালেমের এই জনপদ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর। তোমার কাছ থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী পাঠাও ৷" পরের আয়াতেই তিনি বলেন, "যারা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা অবিশ্বাসী তারা তাগুত বা অসত্যের পক্ষে যুদ্ধ করে ৷ সুতরাং তোমরা শয়তানের অনুসারী ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর ৷ নিশ্চয় শয়তানের কৌশল দুর্বল৷"
সাম্প্রতিক সংবাদ
***
উপরের শেষ আয়াতটি একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করুন। আল্লাহ সেখানে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে - "ঈমানদাররা শুধু আল্লাহর ধর্ম রক্ষা এবং তা শক্তিশালী করার জন্য যুদ্ধ করে, ক্ষমতা বা পদের জন্য নয়৷ মুমিনের জন্য শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি যথেষ্ট ৷ কিন্তু কাফেররা খোদাদ্রোহী শক্তি ও জালেমদের শাসন শক্তিশালী করার জন্য যুদ্ধ করে। তাদের লক্ষ্য অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব করা এবং নিজ দেশের সীমানা বৃদ্ধি করা।" একটু ভেবে দেখুন, আজ ইসলামকেও অমনই এক চেহারা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কী’না। মুসলমানদের উগ্রপন্থী হিসাবে প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে কেউ কিছু করছেন কী’না – সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকুন। ইসলামকে ধ্বংসের উদ্দেশে কারা এর নামে বিশৃঙ্খলা তৈরী করছে, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের গোয়েন্দা তৎপরতায় প্রসূত আলেম, ওলামাদের বয়ানে বিভ্রান্ত না হয়ে কোরআনের শিক্ষায় আলোকিত হোন, আত্মপোলদ্ধি জাগান। আর অবশ্যই মনে রাখবেন, সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ির ব্যাপারে মহান আল্লাহ বার বার সতর্ক করেছেন। আর আমাদের প্রাণের নবী মোহম্মদ (সঃ) তার বিদায় হজের ভাষনে বলেছেন, “সাবধান! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না। এমন বাড়াবাড়ির কারণে অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।”

সিসিটিভির ফুটেজে সুবাদে চিহ্নিত যৌন সন্ত্রাসীরা
***
সূরা হুজরা’তে আল্লাহ বলছেন, “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে এবং তোমাদেরকে পরিণত করেছি বিভিন্ন জাতিতে ও বিভিন্ন গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার।” - অর্থাৎ কোরআনের বক্তব্য অনুযায়ী - মানুষ যে বিভিন্ন জাত, মত বা গোত্রে বিভক্ত, এটা খোদারই ইচ্ছায়। এই বিভেদ এখন যেমন আছে, আগেও ছিলো। কিন্তু আপনি কি এমনটা কখনো শুনেছেন - আমাদের প্রিয় মহানবীর যমানায়, তার খেলাফতে বসবাসকারী/ভ্রমণরত কোনো বিধর্মী জনগোষ্ঠী/উপজাতির বেপর্দা নারী তৎকালের মুসলমানদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছে? শোনার কথা নয়। কারণ মুসলিম মূল্যবোধ তখনও দূষিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। বরং মুসলমানদের চারিত্রিক গুনের মোহে বিমোহিত হয়েও ইসলামের ছায়া তলে এসেছিলো মানুষ। সূরা বাকারা -এর ৬২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট বলছেন - “যারা ঈমান আনে [এই কোরআনে], এবং যারা ইহুদীদের [ধর্মগ্রন্থ] অনুসরণ করে, এবং খৃশ্চিয়ান, এবং সাবীয়ান, যারাই ঈমান আনে আল্লাহ্‌র [একত্বে] শেষ [বিচার] দিবসে এবং সৎ কাজ করে, তাদের জন্য পুরষ্কার আছে তাদের প্রভুর নিকট। তাদের কোন ভয় নাই তারা দুঃখিতও হবে না।” অর্থাৎ ইসলাম শুধু মুসলমানদেরই সুখবর দেয়না, অন্যান্য কিতাব অনুসারীদেরও তাদের কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়। স্মরণ করিয়ে দেয় ভালো কাজের ইনাম। তবে ধর্ম রক্ষা বা প্রচারের নামে হানাহানিকে ইসলাম সমর্থন করে না। একই সূরার ১৯০ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, “আল্লাহর ওয়াস্তে লড়াই কর তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।”

***
ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী এমনভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে যাতে মনে হয়, প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে কোরআনেই নারীকে সবচেয়ে বেশী অবমাননা করা হয়েছে এবং সবচেয়ে কম অধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে এই অপপ্রচার বিশ্বাসও করছেন, কোরআন যাচাই করে বা না করেই। যারা এমন প্রচার চালিয়েছে বা চালাচ্ছে তাদের নিশ্চয়ই কোনো অসৎ কোনো উদ্দেশ্য আছে। সে আলাপে যাচ্ছি না, বা এ বিষয়ে কারো কোনো বিশ্বাসেও আমি আঘাত হানতে চাইছি না। শুধু আরো কিছু আয়াত উল্লেখ করে যাচ্ছি -
সূরা আন-নাহল এর ৯৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,  “যে ভাল কাজ করে এবং বিশ্বাসী, হোক সে পুরুষ কিংবা নারী, আমি তাকে অবশ্যই দান করব এক পবিত্র শান্তিময় জীবন এবং তারা যা করত তার জন্য তাদেরকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।” কোরআনের ৪০ নম্বর সূরা আল-গাফির -এর ৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে - “যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে সে কেবল তদনুরূপ প্রতিফল পাবে। আর যে ব্যক্তি ভাল কাজ করে সে পুরুষই হোক কিংবা নারীই হোক, সে যদি বিশ্বাসী হয় তবে এরূপ লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেথায় তাদেরকে দেয়া হবে বেহিসাব রিযিক।” আর সূরা লুকমান -এর ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আমি মানুষকে তার মাতা-পিতা সম্বন্ধে নির্দেশ দিয়েছি তাদের সাথে সদাচরণ করতে। তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দু’বছরে তার দুধ ছাড়ানো হয়। সুতরাং শোকরগুজারী কর আমার এবং তোমার মাতা-পিতার।”

সূরা নিসা -এর সাত নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “পুরুষদের জন্য অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়; এবং নারীদের জন্যও অংশ আছে সে সম্পত্তিতে যা পিতা-মাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়, হোক তা অল্প কিংবা বেশী। তা অকাট্য নির্ধারিত অংশ।” ১৯ নম্বর আয়াতে রয়েছে - “হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের জন্য বৈধ নয় নারীদের জবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য করা। আর তাদের আটকে রেখ না তাদের যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করতে, কিন্তু যদি তারা কোন প্রকাশ্য ব্যভিচার করে তবে তা ব্যতিক্রম। তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন করবে।” একই সূরার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ।” এছাড়া আন-নূর -এর চার নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “যারা কোন ভাল নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই প্রকৃত দুষ্ট ও মিথ্যাবাদী।”

সূরা আল-আহযাব -এর ৩৫ নম্বর আয়াতে আল্লাজ “নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজাদার পুরুষ ও রোজাদার নারী, স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাযতকারী পুরুষ ও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাযতকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী–এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান।”
সহোদরা | © eon's photography
***
অতএব হে বাংলার মুমিনগণ, সচেতন হন। সতর্ক করে দিন আপনার সকল মুসলমান ভাইকে। যাতে তারা ইসলামের নামে অনৈসলামিক কিছু করে আমাদের প্রিয় নবীকে লজ্জিত করার সুযোগ না পায়। মনে রাখবেন, কোরআনে পুরুষ ও নারী শব্দটি সম্ভবত সমসংখ্যক বার উল্লেখ করা হয়েছে। আর আমাদের মহানবী (সঃ) এ’ও বলেছেন, “এ কথা সত্য যে, নারীদের উপর পুরুষের যেমন কিছু অধিকার আছে তেমনি পুরুষের উপরও নারীদের কিছু অধিকার আছে।” আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে শেষ করছি। পবিত্র কোরআনে নিকাব-সহ প্রচলিত বোরখার কোনো ইঙ্গিত আমি পাইনি। হিজাবের ক্ষেত্রে খোদ মুসলিম স্কলারদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে। বেশীরভাগ স্কলার কোরআনের আলোকে হিজাবকে সমর্থন করেন। তবে আরেকটি পক্ষ মনে করে কোরআনে নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে কিছু স্বাধীনতা ও নমনীয়তা রাখা হয়েছে যেটা দেশ-কাল-পাত্র ভেদে কিছুটা পরিবর্তনশীল হতে পারে।

২২ জানুয়ারী ২০১৪

বিএম কলেজের একাংশে নারীরা নিষিদ্ধ !


লিফলেটটি প্রথম দেখেছিলাম ২০১২ ডিসেম্বরে সযন্তে সাঁটানো ছিলো ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হলের মূল ফটক সংলগ্ন দেয়ালে বরিশালের বিএম কলেজের ছাত্রাবাসটিমুসলিম হল’  নামেই সমধিক পরিচিত মানবতার কল্যাণেসত্য প্রেম পবিত্রতা আদর্শে সোয়াশো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওই শিক্ষালয়ের মুসলিম ছাত্ররাই শুধু হলের বাসিন্দা যে কারণে উগ্র ডানপন্থীদের আদর্শ বিস্তারের জন্য এটি বরাবরই আকর্ষনীয় পাশেই আবার হিন্দু ছাত্রাবাস কবি জীবনানন্দ দাশ হল - জাতীয় বিভিন্ন কারণে লিফলেটটি মাথায় গাঁথলেও নানা ব্যস্ততায় তা ভুলে থাকতে হয়েছে ঘাঁটাঘাঁটি করার আর সুযোগ হয়নি কিন্তু গত বছরের মাঝ নভেম্বরে কীর্তনখোলার ওপারের চরকাউয়া ইউনিয়নের কালিখোলা গ্রামে হিন্দুদের ১৬টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা শোনার পর লিফলেটটির কথাই প্রথম মাথায় আসে পরদিন ঘটনার সাথে ওই হলের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতার কথাও জানতে পারি সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাস্পে ঘোলাটে হতে থাকা পরিস্থিতি বিষয়টি ঘাঁটাতে বাধ্য করে খুঁজতে গিয়ে দেখলামহলের সেই দেয়ালসহ আশেপাশের কয়েকটি গাছ আর ল্যাম্পপোস্টে যে লিফলেটগুলো রয়েছে, সেগুলোর একটিও আস্ত নেই প্রতিটিরই কোনো না কোনো অংশ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে তবুও সবগুলো মিলিয়ে যে লেখাটুকু আমার সামনে পরিস্কার হয়, তা হচ্ছে - ‘বিএম কলেজ, মুসলিম হলের সামনের রাস্তায়, মাঠে এবং পুকুরপাড়ে মেয়েদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ অনুরোধক্রমে - হলের সচেতন ছাত্রবৃন্দ

ছবিটি ২০১৩’র পহেলা ডিসেম্বর তোলা
এরা মূল্যবোধ সচেতন, না যৌনতা সচেতন?’- লিফলেট প্রচাকারীসচেতন ছাত্রবৃন্দসম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন এসএম তুষার কলেজ পাড়ায় বসবাসকারি এই লেখক-গবেষকের সাথে গত ৩০ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে এসব নিয়ে কথা হচ্ছিলো কলেজের পুরানো প্রশাসনিক ভবন, মানে এখনকার পদার্থ বিজ্ঞান ভবনের সামনে বসে তার সাথে আলাপকালেই চোখে পরে দুজন ছাত্র মুসলিম হলে যাওয়ার রাস্তার পাশের গাছে আর ল্যাম্পপোস্টে আঠা দিয়ে কিছু একটা লাগাচ্ছে এগিয়ে দেখলাম, আবারো সেই লিফলেটটি লাগানো হচ্ছে
আলাপ করে জানা গেলোযারা লিফলেট লাগাচ্ছেন তারা দুজনে কলেজের বিজ্ঞান অনুষদের পৃথক দুটি বিষয়ের দ্বিতীয় তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এদেরই একজন মেহেদী হাসান তিনি জানান, প্রায় দুবছর ধরে লিফলেটটি প্রচার করা হচ্ছে ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মিসহ প্রায় সকল ছাত্রই এটি প্রচারের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছে এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘হলের পুকুরে ছাত্ররা খালি গায়ে গোসল করে অথচ অনেক সময়ই মেয়েরা এসে পুকুরের আশেপাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে আবার হলে যাওয়ার রাস্তার পাশের মাঠে অনেক ছেলে-মেয়েকে আপত্তিকর অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায় মানা করলে আবার তারা ক্ষেপে যায় এর জেরে হলের ছেলেদের সাথে বহুবার গণ্ডগোলও হয়েছে এসব চিন্তা করেই বড় ভাইয়েরা এই লিফলেট প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তবে লিফলেটে কিন্তু আদেশ দেয়া, অনুরোধ করা হয়েছে
 
প্রসঙ্গত, ‘অনুরোধক্রমেশব্দটি ব্যবহার করা হলেও লিফলেটে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসের বিজ্ঞান অনুষদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ ঘেঁষা মুসলিম হলের সামনের বিশাল পুকুর, মাঠ রাস্তায় নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে শিক্ষিকা বা ছাত্রীদের তোয়াক্কা করা হয়নি নিজেদের ক্যাম্পাসের বিশালাংশে তারা আজ অবাঞ্চিত   

মেহেদী তার সহযোগী আরো জানায়, কলেজের ডানপিটে অনেক মেয়ে আর প্রেমিক-প্রেমিকারা বার বার এই লিফলেটগুলো ছিঁড়ে ফেলে কিন্তু তারাও দমবে না যত ছেঁড়া হবে তত লাগানো হবে তারা আরো জানায়, এই হলে চরমোনাই পীরের ভক্তের সংখ্যা অনেক বেশী বর্তমান পীরও এখানে এসে ওয়াজ করেছেন অবশ্য কলেজ ছাত্রদল ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতা জানান, পীর ভক্তদের আড়ালে শিবিরের সমর্থকরাও লুকিয়ে আছে ওখানে ওরাই সব সময়স্ট্রংছিলো, আজও আছে আমলে ছাত্রলীগ আর আমলে ছাত্রদলের মিছিল-মিটিঙে অংশ নিলেও তলে তলে ওরা উগ্র ইসলামি মৌলবাদকেই লালন করে

ওদিকে কালিখোলা গ্রামের ঘটনার ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক (মুসলিম হল) হলের অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারাই নৌপথে শহর থেকে ওই গ্রামের পেছন দিয়ে গিয়ে আগুন দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক কালের কণ্ঠ ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পত্রিকার বরিশাল অফিসের সাংবাদিকরা তাদের পাঠানো সংবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ছাত্রের নামও জানিয়েছেন তারা সবাই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এছাড়া কালিখোলা থেকে ফিরে কবি-গল্পকার অদিতি ফাল্গুনীও লিখেলেন, ‘কেউ বলছেন - এটা স্থানীয় আওয়ামি লীগের চেয়ারম্যানের কাজ হতে পারে, যেহেতু গতবার তিনি এই গ্রামে বেশি ভোট পাননি আর বরিশাল বিএম কলেজের যে ছেলেরা হিন্দু গ্রামে হামলার অগ্রভাগে ছিলো, তারা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগেরই কর্মী

বাংলার শস্য ভাণ্ডার প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বন্দর নগরী বরিশালে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুন প্রতিষ্ঠিত বিএম কলেজ এর আগেও সাম্প্রদায়িকতার কবলে পরেছে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ ১৯৫০ সালের দাঙ্গা-হাঙ্গামার পর এর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্র-শিক্ষক ভারতে চলে গিয়েছিলো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তখন কলেজের দ্বি-বার্ষিক ত্রি-বার্ষিক সম্মান কোর্স তুলে দিযে় এটিকে শুধু স্নাতক পাস কলেজ হিসেবে টিকিযে় রাখা হয়েছিলো অথচ তার আগে কলেজ ছিলো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পাঁচ কলেজের একটি পূর্ববাংলা তথা অধুনা বাংলাদেশের প্রথম দিকের সরকারি কলেজগুলোরও একটি এটি কলেজকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণবঙ্গের শিক্ষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রেনেসাঁর সৃষ্টি হয় কারণে বিএম কলেজের ইতিহাস মানে আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্বের মানব সভ্যতার ইতিহাস বিকাশের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, আমেরিকার হারবার্ড, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া ভারতের নালন্দা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় যেরূপ অবদান রেখেছে, পূর্ব বাংলায় শিক্ষা সংস্কৃতি বিকাশে বিএম কলেজের ভূমিকা অনুরূপ বললেও বেশি বলা হবে না উনিশ বিশ শতকের গোড়ার দিকে অবিভক্ত বাংলার জনজীবন যারা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন কলেজের ছাত্র দেশের জাতীয় সাংস্কৃতিক জীবনে বিএম কলেজের ছাত্ররা এককভাবে যত বড় অবদান রেখেছে দেশের আর কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পারেনি

ঢাকা কলকাতা থেকে দূরে অবস্থান এবং নদী-নালা দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে এখানকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক পশ্চাৎপদ ছিল ১৮৫৪ সালে বরিশাল জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে অঞ্চল আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নবজাগরণ শুরু হয় এরই ধারাবাহিকতায় তিন দশক পরে আধুনিক বরিশালের স্থপতি দরিদ্রবান্ধব মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ১৮৮৪ সালে বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে প্রতিষ্ঠা করেন বিএম স্কুল তখনও প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করার পর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আর সুযোগ ছিলো না বরিশালে তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাবু রমেশ চন্দ্র দত্তের অনুরোধে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৮৮৯ সালে ওই স্কুল কম্পাউন্ডেই এই বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাত্মা অশ্বিনী ১৯১৭ সালে বিএম স্কুল কম্পাউন্ড থেকে বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয় এই কলেজ  প্রায় ৬২.০২ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই ক্যাম্পাসে আসার পরই শুরু হয়েছিলো বিএম কলেজের বর্ণালী অধ্যায় সে সময় স্বদেশী অসহযোগ আন্দোলনের কারণে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি, উচ্চ শিক্ষিত স্বাধীনচেতা তরুণ ইংরেজদের গোলামী ছেড়ে চলে এসে দেশসেবা মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরি করাকে অধিক পছন্দনীয় মনে করেছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত তখন ভারতবর্ষের অনেক খ্যাতিমান শিক্ষকের সমাবেশ ঘটিয়ে কলেজের শিক্ষার মান অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান তার সাথে সাথে তিনি নিজেও লাভজনক ওকালতি পেশা ছেড়ে বিনা বেতনে কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন অধ্যক্ষ ব্রজেন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায়, রজনীকান্ত গুহ, বাবু সতীশচন্দ্রসহ বিএম কলেজের সে সময়কার অন্যান্য অধ্যক্ষদের পাণ্ডিত্ব্য এবং পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ঈর্ষণীয় সাফল্য বরিশালের জন্য প্রচুর সুনাম বয়ে এনেছিলো কলেজের অধ্যাপকদের প্রজ্ঞা শিক্ষাপদ্ধতি উন্নত করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিশেষ ভূমিকা রাখেন

১৯২২ সনে ইংরেজি দর্শন, ১৯২৫ সনে সংস্কৃতি গণিত, ১৯২৮ সনে রসায়ন এবং ১৯২৯ সালে অর্থনীতি সম্মান অনার্স কোর্স চালু হয় বিএম কলেজে মূলত ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সময়কাল ছিল বিএম কলেজের স্বর্ণযুগ তখন কলেজের শিক্ষার মান এতই উন্নত ছিল যে, অনেকে প্রতিষ্ঠানকে দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড বলে আখ্যায়িত করেন বাংলার ছোটলাট স্যার উডবর্ন সরকারি শিক্ষা বিবরনীতে লিখেছিলেন This moffusil College promises some days to Challenge the supremacy of the Metropolitan (Presidency) College. একই সময়ে বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিটসন বেল লিখেছিলেন Barisal may be said to be the Oxford of East Bengal.

আর্থিক অনটনের কারণে ১৯৫২ সালে কলেজের অবস্থা খুবই নাজুক আকার ধারণ করে পরিস্থিতি নিরসনে ১৯৫৯ সালে প্রয়াত অধ্যাপক কবির চৌধুরীকে ডেপুটেশনে কলেজের নতুন অধ্যক্ষ নিযে়াগ করে সরকার এর ফলে কলেজের অবস্থা পরিবর্তিত হতে থাকে ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৫ জন ছাত্রছাত্রী নিযে় অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পাঠ্যক্রম পুনঃপ্রবর্তন করা হয় ১৯৬৫ সালের পহেলা জুলাই বিএম কলেজকে প্রাদেশীকরণ করা হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সনের পরে আরো কয়েকটি বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয় সর্বশেষ ২০১০-১১ শিক্ষা বর্ষে চালু হয় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং মার্কেটিং বিভাগ কলেজে বর্তমানে মোট ২৪টি বিষয়ে পাঠদান করা হয় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় ১৯৯৯ সাল থেকে বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী বিলুপ্ত করা হয়

কলেজ নিয়ে এত কথা বললাম শুধু প্রশ্নের প্রেক্ষাপট পরিস্কার করতে আজ মনে অনেক প্রশ্ন ওই লিফলেটটি কি আমাদের পশ্চাতপদতারই নিদর্শন নয়? জাতির চিন্তার দৈন্যতা কাটবে কবে? এর দায় কে বা কারা নেবে? কে ভাই - আদি বিভেদ মেটানোর মন্ত্র শেখাবে?

* লেখাটি আমাদের বরিশাল ডটকম’এ প্রকাশিত হয়েছে।
newsreel [সংবাদচিত্র]