Powered By Blogger
Cinema লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Cinema লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২৭ মে ২০১৭

পরম শ্রদ্ধায় রাসেল স্মরণ

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র ‘নৃ’ - শেষ করার দায়িত্ব এখন আমাদের সকলের। এমনটাই বলেছেন রাসেল আহমেদের সুহৃদ-বন্ধু, স্বজন ও সহকর্মিরা। শুক্রবার (২৬ মে) বিকেলে শাহবাগের ছবির হাটে ( সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারুকলা ইনিস্টিটিউট সংলগ্ন গেটের সামনে) রাসেল স্মরণ বৈঠকে তারা এ কথা বলেন। সদ্য প্রয়াত এই নির্মাতার প্রথম ও শেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নৃ। 

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
বৈঠকে বলা হয়, রাসেল আহমেদ ছিলেন এক স্বপ্নবাজ যাদুকর। শৈশব থেকেই চিন্তাশীল এই মানুষটি যে কোনো মানুষের কষ্টেই ব্যথিত হতেন। তবে তার মনের এ স্পর্শকাতরতা পরিবারের সদস্য, এমনকি বন্ধুদের অনেকেও ঠিক বোঝেনি। পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্তকেও পাগলামী ভেবেছেন কেউ কেউ। তবে এখন তাদের মনে হচ্ছে, রাসেলের জন্য অনেক কিছুই করার ছিলো। অন্তত তার সিনেমাটির পাশে দাঁড়ানো দরকার ছিলো। কারণ তিনি স্রেফ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, মানুষের বোধ ও চিন্তাকে উন্নত করতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে নেমেছিলেন। আমৃত্যু মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
বক্তারা আরো বলেন, রাসেল ও তার টিমের সদস্যরা খেয়ে না খেয়ে যেভাবে নিজেদের সিনেমার করেছেন, সে ইতিহাস একসময় চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীদের পাঠ্য হবে নিশ্চিত। রাসেলের সহযোদ্ধারা বাংলাদেশের সিনেমায় আগামীতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে - এমনটাও আশা অনেকের। তবে সকলেই একমত যে- সবার আগে নৃ সিনেমাটিকে মুক্তির আলোয় নিয়ে আসতে হবে। 

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
বৈঠকে বক্তব্য রাখেন কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর, প্রকাশক রবীন আহসান, কবি ও আবৃত্তিকার সাফিয়া খন্দকার রেখা, অভিনেতা ম ম মোর্শেদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ফয়সাল রদ্দি, চলচ্চিত্র নির্মাতা অং রাখাইন, মাহবুব হোসেন, ইফতেখার শিশির, ইমতিয়াজ পাভেল, সাংবাদিক সাইফ ইবনে রফিক, ভাষ্কর ও লেখক গোঁসাই পাহলভী, কবি ও সাংবাদিক রুদ্র আরিফ, আবদুল্লাহ মাহফুজ অভি, সঙ্গীত শিল্পী সম্রাট, কিম্বেল অভি, সিনা হাসান, কবি মাহমুদ মিটুল, কিং সউদ, রাসেলের মেঝ ভাই মোহাম্মদ শফিকুল আলম মুকুল, শৈশবের বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার এসএম পলাসহ আরো অনেকে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে পরম শ্রদ্ধার সাথে রাসেলকে স্মরণ করেন তারা। 
রাসেল স্মরণ - সূচনা সংখ্যার প্রচ্ছদ
টোকন ঠাকুর বলেন, ‘রাসেল সিনেমাটি (নৃ) প্রায় শেষ করে এনেছিলেন, কিন্তু এর মুক্তি দেখে যেতে পারলেন না। এটি মুক্তি না পাওয়া অবধি তার আত্মা শান্তি পাবে না।’ 

রবীন আহসান বলেন, ‘বাজারি ধারায় সবাই যেভাবে সিনেমা বানাচ্ছে - রাসেল সেভাবে বানাতে চায়নি। নিজের মতো করেই গল্প বলতে চেয়েছে। এই প্রবণতা দেখেই বুঝেছিলাম সে আসলে শিল্পী।’ 

ছবি তুলেছেন প্রান্ত
রাসেলের মেঝ ভাই মুকুল বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, সে আমাদের মাঝে বড় হলেও আমরা তাকে চিনতে পারিনি। আজ আপনাদের মাঝে এসে, কাজের কথা শুনে - তাকে নতুন করে চিনলাম।’ 

মা, মাটি ও মানুষের গল্প নিয়ে রচিত ‘নৃ’ চলচ্চিত্রের কারিগর নির্মাতা রাসেল আহমেদ গত ১৫ মে সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। টিজার/ট্রেইলর প্রকাশের কারণে বহুল আলোচিত চলচ্চিত্রটি যখন সম্পাদনার টেবিলে মুক্তির অপেক্ষায় শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনই দুনিয়া ছাড়লেন নির্মাতা।
ছবি তুলেছেন প্রান্ত

২০ মে ২০১৬

আফ্রিকায় যাচ্ছে ‘মাই বাইসাইকেল’

ফিল্ম, মিউজিক আর পারফর্মিঙ আর্টের সমন্বিত উৎসবের কারণে ইতোমধ্যে পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তানজিনিয়ার জেডআইএফএফ, মানে জানজিবার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এ উৎসবের এবারের থিম ‘দিস জার্নি অফ আওয়ার্স।’ জানজিবারের স্টোন টাউনে আগামী ৯ থেখে ১৭ জুলাই এটি অনুষ্ঠিত হবে। আর এতে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘মাই বাইসাইকেল’। চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। সে ভাষায় সিনেমাটির নাম ‘মর থেংগারি’, যার বাংলা অর্থ ‘আমার বাইসাইকেল’।
উৎসবের ‘ফিচার ফিকসন’ বিভাগে প্রদর্শনের জন্য এটি ‘অফিসিয়ালি’ মনোনিত হয়েছে। দেশের জন্য আবারো সম্মান আনলো সেন্সর বোর্ডের, তথা সরকারি ছাড়পত্র না পাওয়া একটি চলচ্চিত্র। কিঙবা বলা যায় - এই সম্মান নিয়ে এলেন স্রোতের বিপরীতে চলতে জানা এক আত্মবিশ্বাসী নির্মাতা অং রাখাইন
অং রাখাইন শুধু চাকমা ভাষার প্রথম সিনেমার নির্মাতা নন, সম্ভবত
তিনি রাখাইন জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা একমাত্র বাংলাদেশী পরিচালক।
বাংলাদেশে এই চলচ্চিত্র বাণিজ্যিক ভাবে মুক্তি দেয়া না গেলেও ২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৩তম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও উন্মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবেই এটি প্রথম প্রদর্শিত হয়। এরপর প্রদর্শনী হয়েছিলো চট্টগ্রামে। গত বছর নভেম্বরে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয় ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়ার তাল্লিন ব্ল্যাক নাইট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ডিসেম্বরে রাশিয়ার সিলভার আকবুজাত অ্যাথনিক ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটি সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার জেতে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুইডেনের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব গোটেবর্গ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও প্রশংসিত হয় এ সিনেমার গল্প ও নির্মাণ। এছাড়া ফিনল্যান্ডের স্কাবমাগোভ্যাট ইন্ডিজেনাস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরো কয়েকটি উৎসবে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।
‘মাই সাইকেল’ -এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কামাল মনি চাকমা, ইন্দ্রিরা চাকমা, ইউ চিং হলা রাখাইন, বিনাই কান্তি চাকমা, আনন্দ চাকমা, সুভাষ চাকমা, জোরাদান চাকমা। ছবির গল্প পরিচালকের নিজের। চিত্রনাট্য করেছেন নাসিফুল ওয়ালিদ। চিত্রগ্রহণে ছিলেন সৈয়দ কাসেফ শাহবাজী, আর সম্পাদনায় আরেফিন। মিউজিক করেছেন অর্জুন, সাউন্ড মিক্সিং রতন পাল। প্রযোজনা করেছেন মা নান খিং। স্রেফ শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতা বা অর্থায়নে নির্মিত স্বল্প বাজেটের এ ছবিটির পরিবেশক খনা টকিজ

ছবির গল্পে দেখা যায়, কামাল নামে একজন যুবক শহরে টিকতে না পেরে বাড়িতে ফিরে আসেন একটি বাইসাইকেল নিয়ে। এ সাইকেল দিয়ে একসময় এলাকায় মানুষসহ মালামাল পরিবহন শুরু করেন। আর তাতে তার সংসারের খরচ, ছেলের পড়ার খরচ চলতে থাকে। কিন্তু তার এই সুখ অন্যদের সহ্য হয় না। তিনি ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন। আর না, বাকীটা জানতে অবশ্যই দেখতে হবে পুরো সিনেমা।

১৬ জুলাই ২০১৪

সেনের প্রত্যাবর্তন - the return of sen

***
দেশ ভাগের আগে বেউখির ছিলো সমৃদ্ধশালী এক গ্রাম। ওই সময় ‘সেনগুপ্ত’ আর ‘দাশগুপ্ত’ পদবীর হিন্দু ধর্মালম্বীরা ছিলো এর সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা। বরিশালের ঝালকাঠি জেলার কীর্তিপাশার এই গ্রামে তখন বারো মাসের তেরো পূজোয় ঢাক বাজত মোট চৌদ্দ বাড়িতে। সারা বছরই উৎসবের আমেজে মুখরিত থাকত বেউখির। নানা আয়োজনে সরগরম থাকত চারিদিক। চিত্রটা বদলাতে শুরু করে ১৯৪৭’র পর। ভারতবর্ষ ভাগের আগে বা পরে পুরো কীর্তিপাশায় কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না হলেও দূর-দুরান্ত থেকে ভেসে আসা নানা খবর এলাকার হিন্দুদের আতঙ্কিত করে তুলেছিলো। বহিরাগত দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করেও সে আতঙ্ক কমাতে পারেনি স্থানীয় মুসলমানরা। বিশেষত ১৯৫০’র দাঙ্গার পর ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করে কীর্তিপাশার প্রতিটি গ্রামের হিন্দু বাড়ি-ঘর। বেউখিরের এক একটি পরিবারও প্রাণ আর সম্ভ্রম রক্ষায় পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে উদ্বাস্তু জীবন বেছে নিতে শুরু করে। এমনই এক পরিবারের কর্তা ছিলেন উষাকান্ত সেনগুপ্ত। গেরস্থ বাড়ির সন্তান হলেও তিনি পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক। আমৃত্যু এ দেশান্তর মেনে নিতে পারেননি। বার বার তিনি ফিরতে চেয়েছেন বেউখিরে। সহধর্মীনি প্রেমলতা সেনগুপ্তকে নিয়ে ফিরে নিজের ভিটেয় মরতে চেয়েছেন। কিন্তু তা আর হয়নি। এই অতৃপ্তিই কি তাকে ফের নিয়ে আসবে বেউখিরে? হয়ত অন্য কোনো জন্মে, অন্য কোনো পরিচয়ে – ফিরবেন কি সেই সেন? এরই সূত্র ধরে ভাবি, কোনো জন্মে লক্ষন সেনও কি নদীয়ায় ফিরেছিলেন?

*** 
ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চে অমিত সেন
অমিত’দা, মানে সময়ের ব্যস্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিত সেনের শেকড়ও যে বরিশালে তা জেনে যতটা না অবাক হয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশী অবাক হয়েছিলাম তিনি কখনো এখানে আসেননি শুনে। কোলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও এ মানুষটি শুধু কাজের প্রয়োজনেই গিয়েছেন ১৫টি দেশে। সবমিলিয়ে ঘুরেছেন মোট ৩০টি দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশেও তার আসা-যাওয়া সেই ১৯৯০’র পর থেকেই। কিন্তু এই দুই যুগে তিনি বরিশাল যাননি কখনো। খোঁজেননি নিজের শেকড়। প্রথমে এ কথা বিশ্বাসই হয়নি। কবি বন্ধুদের কল্যানে এটা অবশ্য আগেই জানতাম যে ‘ওপারে’ এমন অনেক ‘বরিশাইল্যা’ আছেন যারা কখনো বরিশালেই আসেননি। তবে এর শহর-বন্দর-গ্রাম, হাট-বাজার, খাল-নদী, পুকুর-দীঘি, ক্ষেত-মাঠ, বন-জঙ্গল বা আলো-হাওয়া জড়ানো নানা লোক গাঁথা আর পূর্বপুরুষের ভিটে ছাড়ার গল্প শুনতে শুনতেই তারা বড় হয়েছেন। কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা, সন্ধ্যা, কচা, বিষখালী বা পায়রার বাঁকে বাঁকে মিশে থাকা গান আর পুঁথির সুরও তাদের খুব চেনা। জেনেছেন দুরন্ত ঢেউয়ের আবাদী উচ্ছাস আর মাতাল প্রলয়ের কথা। চিনেছেন মায়ার শুভ্রতার সাখে মিশে থাকা অজ্ঞতা নিমজ্জিত লোলুপ হিংস্র বর্বরতাও। বুঝে নিয়েছেন ভূ-রাষ্ট্রীয় বাস্তবতায় শেকড়হারা তারা এখন ভিনদেশী নাগরিক। ভিসা নিয়েই এদেশ, মানে বাংলাদেশে ঢুকতে হয় তাদের। তাই হয়ত তারা ভিটেয় ফেরার আশা করেন না এখন আর। কিন্তু শেকড়ের টান কি কখনো মুছে যায়? এখানে মৃদুল দাশগুপ্তের নামোল্লেখ করা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে ১৯৫৫ সালে জন্মানো এ কবি যে নিজের জ্ঞাতসারেই এক কট্টর, মানে মনে-প্রাণে ‘বরিশাইল্যা’ - তা জেনেছিলাম আরেক ঘটনাচক্রে। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘চাইনিজরা যেমন যে দেশেই জন্মাক তারা চাইনিজই হয়। তেমনি বরিশাইল্যারাও যেখানেই থাকুক তারা বরিশাইল্যাই রয়।’ অন্তর্জালীয় আড্ডাঘরের দীর্ঘ আলাপের পর সাক্ষাতে অমিত’দার বিস্তারিত শুনে বুঝেছিলাম মৃদুল’দা ভুল বলেননি। সে প্রসঙ্গে না গিয়ে তখন শুধু বলেছিলাম, আমার প্রথম সিনেমার প্রেক্ষাপট পেয়ে গেছি বোধহয়। প্রাথমিক ভাবনাটা শুনে অমিত’দা-ও নারাজ হলেন না। সেই থেকে আমাদের যৌথ পরিকল্পনা শুরু। মিশন – অমিত’দার শেকড় অনুসন্ধান, বা আমার সিনেমার গল্প। এরই ধারাবাহিকতায় গত জুনের শেষ হপ্তায় আমরা দারুণ উত্তেজিত। অবশেষে শেকড়ে ফিরছেন অমিত’দা। তার যাত্রাটা শুরু হয় কোলকাতার টালিগঞ্জের প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের সাউথ সিটি কমপ্লেক্সের বাসা থেকে। সেখান থেকে দমদম এয়ারপোর্ট থেকে উড়ে সোজা ঢাকায়। এখানেই দাদার সাথে যোগ দেই আমরা। অর্থাৎ আমি, রাসেল ভাই (চলচ্চিত্র নির্মাতা রাসেল আহমেদ) আর গানের দল ত্রিমিঙ্গিলের নাজমুল হুদা। পরিকল্পনানুযায়ী লঞ্চে চেপে আমরা সোজা বরিশাল চলে যাই। এর আগে অবশ্য ঢাকায়ও কয়েকজনের সাথে দেখা করতে হয়েছিলো অমিত’দাকে, তা খুবই অল্প সময়ের জন্য।

লঞ্চের টি-স্টলে অমিত’দার সাথে আমার এ ছবিটি তুলেছিলেন রাসেল ভাই
***
৫০’র দাঙ্গা বেশ ভালো প্রভাব ফেলেছিলো বরিশাল অঞ্চলে। লেখক ও গবেষক কুলদা রায়ের এক লেখায় পড়েছিলাম, ‘১৯৫০ সালের কোলকাতায় একটা ছোটোখাটো দাঙ্গা হয়েছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে খবর রটেছিল কোলকাতায় একে ফজলুল হকের এক আত্মীয়কে হিন্দুরা মেরে ফেলেছে। ফলে তীব্রভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় আক্রান্ত হয় হিন্দুরা। এটা ছিল পাকিস্তান সরকারের একটা পরিকল্পনা। সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়। সে সময় ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় মেরে ফেলা হয় নয় দিনে দশ হাজার হিন্দুকে। শুরু হয়েছিল ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বরিশালের মাধবপাশার জমিদার বাড়ির ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। এ এলাকার তীব্র আক্রান্ত গ্রাম হল লাকুটিয়া এবং কাশিপুর।’ কুলদা আরো লিখেছেন, ‘সে সময়ে মুলাদীর নদী লাল হয়ে গিয়েছিল মানুষের রক্তে। বরিশালে মেরে ফেলা হয়েছিল ২৫০০ হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বাড়িঘর। লুটপাট করা হয়েছিল সহায়-সম্পদ। ধর্ষণের শিকার হয়েছিল অসংখ্য নারী। দখল করা হয়েছিল অনেকের জমিজমা।’ একে ফজলুল হকের জন্মস্থান বা নানা বাড়ি ছিলো ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের দুরত্ব বেউখির থেকে খুব বেশী নয়। তাই ৫০’র ওই বিভৎসতায় উষাকান্ত বা অন্যান্য পরিবারের কর্তারা কেন আতঙ্কিত হয়েছিলেন, তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়। কিন্তু ভিটে ছাড়া হতে কেইবা চায়। অন্য অনেকের মতো উষাকান্তও চাননি। পরিস্থিতির চাপে ভিটে ছাড়ার পরও, ছাড়তে পারেননি মায়া। যে কারণে পুষেছিলেন ফেরার আশাও।

বরিশালের হাওয়ায় উৎফুল্ল দাদা
***
২৮ জুন ২০১৪। সকালটা ছিলো মন ভালো করা রোদে মাখা। সেই রোদ গায়ে মেখেই লঞ্চ থেকে নামি আমরা। নীলাকাশ তলের কীর্তনখোলার সামনে দাঁড়িয়ে অমিত’দা যেন কোথায় হারিয়ে গেলেন। তার দৃষ্টি অনুসরন করে দেখি তা ওই দূরের বাঁকেরও ওপাড়ে মিলিয়ে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা যখন অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে চলে আসি, তখনও সজাগ হয়নি বরিশাল নগরী। মসজিদে ফজরের নামাজ আদায়কারী বা প্রাতঃভ্রমণকারী ছাড়া রাস্তায় যাদের দেখা পাচ্ছিলাম, তাদের প্রত্যেকের সাথে লাগেজ। অর্থাৎ হয় লঞ্চ, নয় বাস যোগে মাত্র শহরে পৌঁছেছে। নগরের এ শোভা গিলতে গিলতেই সকাল সন্ধ্যা রেস্তোরায় গিয়ে আমরা নাস্তা করে ফেলি। এরপর গল্পচ্ছলেই নিয়ে নেই ক্ষণিকের বিশ্রাম। ভর দুপুরে আমরা যখন বরিশাল থেকে আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্যে রওনা হলাম তখন আকাশে মেঘের আনাগোনাও বাড়ছিলো ধীরে ধীরে। বাড়ছিলো বাতাসের বেগ, আর্দ্রতা। বাহন - ভাড়া করা মাইক্রোবাস। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছেন অমিত’দা। পেছনে আমি, রাসেল ভাই, ড্যানি (চিত্রগ্রাহক ড্যানিয়েল ড্যানি) ও নাজমুল। বরিশালে আমরা কারো বাসায় না উঠে ঘাঁটি গেরেছিলাম ছিলাম গীর্জা মহল্লা, মানে খান বাহাদুর হেমায়েতউদ্দিন সড়কের হোটেল ইম্পেরিয়ালে। সেখান থেকে সদর রোড, বাংলাবাজার, সাগরদী ও রূপাতলী হয়ে আমরা কালিজিরা ব্রীজ পেরিয়ে শহর ছাড়াতেই গান ধরলেন রাসেল ভাই। কফিল আহমেদের গান, ‘গঙ্গাবুড়ি’। গলা মেলালাম সবাই। গানের তালে তালে সবুজের বুক চিড়ে চলে যাওয়া কালো পিচের রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

***
সেই উষাকান্তের উত্তরসূরী
উষাকান্ত সেনগুপ্ত তার পরিবার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের খলিশাকোটা পল্লী নামের যে গ্রামে গিয়ে ডেরা বেঁধেছিলেন, সেটিও ছিলো বেউখিরেরই মতই শান্ত-শ্যামল-সুনিবির। উষাকান্তের মৃত্যুর আগেই সেখানে পুরো পরিবারের হাল ধরেছিলেন তার মেঝো ছেলে রঞ্জিত কুমার সেনগুপ্ত। ভারতীয় সেনাবাহীনিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তার বড় ভাই অজিত কুমার সেনগুপ্তের একটা গতি অবশ্য আগেই হয়েছিলো। পুরো পরিবার কোলকাতায় আসারও আগে তিনি শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ে করে নিজের তিনি সংসার নিয়ে আলাদাই ছিলেন। তাই বাকি তিন ভাই; মানে অসিত, অধির ও তপন সেনগুপ্ত বড় হয়েছেন রঞ্জিতেরই হাড়ভাঙা খাঁটুনিতে। ১৯৬২ সালে চৈতালী দাশগুপ্তের সাথে বিয়ে হয় তার। চৈতালীর বাপের বাড়ি ফরিদপুর হলেও - তিনিও বড় হয়েছেন বরিশাল অঞ্চলে। ক’বছর পরই রঞ্জিত-চৈতালীর ঘর আলো করে আসে তাদের একমাত্র সন্তান, অমিত সেনগুপ্ত। পরবর্তীতে অবশ্য কবি জীবনানন্দ দাশগুপ্তের মত সেই অমিতও তার গুপ্তটাকে গায়েব করে দিয়েছেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। সেই অমিত সেনগুপ্ত বা অমিত সেনই মানে আমাদের অমিত’দা। উষাকান্তের উত্তরসূরী। যিনি এবার এসেছেন তার পিতামহের ফেলে যাওয়া ভিটে বা নিজের শেকড়ের সন্ধানে।

***
দ্রুত ঝালকাঠির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। গন্তব্য সেই বিউখির। এই ভূখন্ডে ঠিক কবে থেকে জনবসতি শুরু হয়েছিল তা নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও নাম দেখে বোঝা যায়- এখানে কৈবর্ত জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা আবাদ করেছিলো। এক সময় কৈবর্ত জেলেদেরই ঝালো বলা হতো এবং তাদের পাড়াকে বলা হতো ঝালোপাড়া। অনেকের ধারণা এ ঝালোপাড়া থেকেই ঝালকাঠি নামের উৎপত্তি। কবি বিজয়গুপ্ত মনসামঙ্গল কাব্যেও জেলে সম্প্রদায়কে ঝালো নামে উল্লেখ করেছেন। বিশ্বরুপ সেনের একখানি তাম্রলিপিতেও ঝালকাঠির নাম রয়েছে। এছাড়া একাধিক ইতিহাসগ্রন্থ মতে, চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্যতম একটি বন্দর ছিল সুতালরী। সম্রাট শাহজাহানের ফৌজদার ছবি খাঁ বাকেরগঞ্জ থেকে সুতালরী হয়ে কোটালীপাড়া পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে সুতালরী বন্দরের পার্শ্ববর্তী জঙ্গল পরিস্কার করে বাসভূমি গড়ে তোলে জেলেরা। ওই অংশের নাম হয় ঝালকাঠি। আরেক মতের দাবি, প্রতাপশালী জমিদার রামভদ্রের শাসনামলে বাজার বসে পোনাবালিয়ায়। এক সময় সে বাজার স্থানান্তরিত হয় মহারাজগঞ্জে যা আজকে ঝালকাঠি নামে পরিচিতি।

নস্টালজিক অমিত সেন
***
রঞ্জিত আর চৈতালী ইহলোক ত্যাগ করেছেন, তা’ও ১০-১৫ বছর হয়ে গেছে। জীবদ্দশায় তাদেরও কখনো ফেরা হয়নি নিজেদের দেশ, মানে বাংলাদেশে। তবে তাদের মুখে এ দেশ, বরিশাল বা ফেলে আসার গ্রামের অনেক গল্প শুনেছেন অমিত’দা। শুনেছেন পিতামহ আর অন্যান্য স্বজনদের বলা গল্পও। যে কারণে ঝালকাঠীর দিকে যত আগাচ্ছিলাম, ততই নস্টালজিক হচ্ছিলেন তিনি। শৈশবে শোনা গ্রামের গল্পগুলো বলছিলেন আমাদের। ক্রমে নরম হচ্ছিলো তার স্বর। কিছুক্ষণ পর পরই অবশ্য গল্প থামিয়ে সেলফোন দিয়ে ছবি তুলছেন, আর তা আপলোড করছেন ফেসবুকে। তাতে আবার যাদের মন্তব্য পাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশেরই শেকড়ই এপারে। কারো কারো হয়ত বরিশালে বা ঝালকাঠীতেই। অমিত’দার পোস্ট করা ছবিগুলো তাদেরও যে নাড়িয়ে দিচ্ছিলো তা মন্তব্যগুলো পড়েই বোঝা যাচ্ছিলো। আকাশে মেঘের দলও ভারী হচ্ছিলো ধীরে ধীরে। এরই মাঝে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। হালকা, গাঢ় নানা ধরনের সবুজ। এদিকে সুযোগ পেলেই গান ধরছেন রাসেল ভাই, আর তাতে গলা মিলাচ্ছি সবাই। এগিয়ে চলছে আমাদের গাড়ি। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলছে নানা রঙ্গও।

***
এটা মোটামুটি সকলেই নিশ্চিত যে, রাজা সত্যাচরণ ঘোষাল পরিকল্পিতভাবে আধুনিক ঝালকাঠি শহর গড়ে তুলেছিলেন। জেলেদের জঙ্গল কেটে আবাস গড়া থেকে ঘোষালের পরিকল্পিত নগরায়নের মাঝে রয়েছে অনেক ইতিহাস, উত্থান-পতন। যার কিছুটা আনন্দের, কিছুটা বেদনার। এ জেলাটি মূলত পুরাতন সেলিমাবাদ পরগনার প্রধান অংশ ছিলো। সুগন্ধা নদীর বুক চিরে জেগে উঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চরগুলো নিয়েই এ সেলিমাবাদের জন্ম । ষোড়শ ও সপ্তাদশ শতাব্দীতে প্রথম দিকে ঝালকাঠি ছিলো কর্দমাক্ত এক ঘন বনাঞ্চল। যেখানে বাঘ, উল্লুক, কুমির আর ভয়ংকর সব সাপেরা বাস করত। একইসঙ্গে জলদস্যুদেরও স্বর্গরাজ্য ছিলো এটা। সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ তীরে পোনাবালিয়া এবং উত্তর পাড়ে ছিলো উজিরপুর, শিকারপুর। মাঝের বিস্তীর্ণ অঞ্চলই ছিলো নদী। জানা গেছে, রায়েরকাঠীর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মদনমোহনের ছেলে শ্রীনাথ রায় সম্রাটের নিকট থেকে ‘পাট্টা’ লাভ করেছিলেন পর্তুগীজ নাগরিক উড ও ইউয়াট। তারা মূলত একটি লবন স্টেটের এজেন্ট ছিলেন। । মদনমোহন পূর্বে নলছিটি থানার (বর্তমানে ঝালকাঠী থানার) নথুল্লাবাদ গ্রামে জমিদারির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেছিলেন। পরে মদনমোহন রায়ের পৌত্র রাজা রুদ্রনারায়ন স্বপ্নযোগে বলেশ্বর নদীর পূর্ব তীরে জঙ্গলে জগদম্বর দশভূজা পাষাণময়ী মূর্তি পেয়ে তা রায়েরকাঠী গ্রামে স্থাপন করেন এবং রায়েরকাঠীতে রাজধানী স্থাপন করেন। রুদ্র নারায়নের প্রপৌত্র জয়নারায়নের সময় আগাবাকের খাঁ নামক এক পাঠান যুবক তার জমিদারির অর্ধেক জোরপূর্বক দখল করলে এক প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। ঝালকাঠীর পূর্বদিকে সুতালরী এবং পূর্ব দক্ষিনে বারৈকরন গ্রামের ওই যুদ্ধে বাকের খাঁ ২২টি কামান ফেলে পলায়ন করেন বলেও তথ্য পাওয়া যায়। কালক্রমে রায়েরকাঠী জমিদারির অর্ধেকের মালিক হন এক ঘোষাল। ঝালকাঠীতে তিনি কাছারি স্থাপন করেন। ওই সময় তিনি রাজা বাহাদুর খেতাব প্রাপ্ত হন। তার প্রজারা তাঁকে মহারাজ সম্বোধন করত। এই মহারাজ সম্বোধন থেকেই কাছারিবাড়ী সংলগ্ন এলাকার নাম হয় মহারাজগঞ্জ। ঝালকাঠীর পূর্ব নাম মহারাজগঞ্জ । তারই পুত্র ছিলেন রাজা সত্যচরন ঘোষাল। তার ঝালকাঠী বন্দর তৎকালীন বাংলার শ্রেষ্ঠতম বানিজ্য বন্দর হিসেবে গড়ে উঠেছিলো।

***
কীর্তিপাশার রাস্তায় ঢোকার আগে আমরা আরেকটু এগিয়ে গেলাম গাবখান, সুগন্ধা ও ধানসিঁড়ি নদীর সঙ্গম স্থল দেখতে। সেখান থেকে ফিরে বাউখির যাওয়ার পথটা চিনে নিতে আমরা যখন কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম, খুব চেনা মনে হলো জায়গাটিকে। গাড়ি থেকে নেমে কেন জানি মনে হলো, এর আগেও আমি এসেছি এখানে। এ বাড়িটির কথা প্রথম জেনেছিলাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অভিশপ্ত’ গল্পে। জমিদার কীর্তি নারায়ণ রায় আর তার মিথ নিয়ে লেখা সে গল্প। ঝালকাঠি শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে এ বাড়ির অবস্থান। সরূপকাঠির দিক দিয়ে, মানে সন্ধ্যা নদী থেকে ভীমরুলি খাল ধরেও চলে আসা যায় এখানে। রোহিনী রায় চৌধুরী ও তাঁর নাতি তপন রায় চৌধুরী এখানকার জমিদার বংশের দুটি পরিচিত নাম। বর্তমানে জমিদার বাড়ির সম্পত্তিতে তৈরি হয়েছে প্রসন্ন কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মূল জমিদার বাড়ি এবং দুর্গামন্দির এখন পরিত্যক্ত। জমিদার বাড়ির নাট্যশালার চিহ্ন রয়েছে এখনো। নাট্যমঞ্চের গ্রিনরুম এবং হলরুমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কমলিকন্দর নবীন চন্দ্র বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পারিবারিক শিবমন্দির এবং একটি শিবমূর্তিও এখনো আছে । পুরাতন জমিদার বাড়িতে রয়েছে অন্ধকূপসহ আরো নানা নিদর্শন। ইট-সুরকির ভবন তৈরি হয়েছে অসামান্য স্থাপত্যশৈলীতে। তবে এসবের দিকে চোখ নেই আমাদের। আমরা খুঁজছি সেই কাঙ্খিত গ্রাম, যেখানে ছিলো উষাকান্তের ফেলে আসা ভিটে। আমাদের বেউখিরের পথ দেখিয়ে দিতে গিয়ে এক বয়োবৃদ্ধ দাদা, আরেক পৌঢ়া দিদি নিজেদের মধ্যে প্রায় তর্ক বাঁধিয়ে দিলেন। তর্কের বিষয় হচ্ছে – আমাদের গাড়ি নিয়ে যাওয়া, না যাওয়া। দিদি বলছেন, ‘রাস্তা যে পিছলার পিছলা (পিচ্ছিল); গাড়ি লইয়া যাওন ঠিক হইবে না।’ আর দাদা বলছেন, ‘আরে নাহ। কিচ্ছু হইবে না। যায় না, কত্ত গাড়ি যায়।’ তাদের তর্ক থামিয়ে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পরই আমরা টের পেলাম, দিদির কথাই ঠিক। রাস্তাটা যতক্ষণ পিচের ছিলো, ততক্ষণ ভালোই ছিলো। কিন্তু হেরিংবনের রাস্তা শুরু হতেই শুরু হয় বিপত্তি। রাস্তাটা শুধু পিচ্ছিলই নয়, বেশ সরুও। ড্রাইভার তাই ঝুঁকি নিতে চাইলেন না। উপায়ন্ত না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমরা হাঁটাই শুরু করলাম।

***
উষাকান্ত সেনগুপ্তের সাথে লক্ষন সেনের প্রথম সাদৃশ্যটি পেয়েছিলাম তাদের ভয়ে। দু’জনেরই ভয়ের কারণ ছিলো এমন একটি ধর্ম, যার শাব্দিক অর্থ শান্তি। যদিও শান্তি, তথা ইসলামের নামে এমন ভীতি ছড়ানোর নির্দেশ মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কোরআনের কোথাও দেয়া আছে বলে আমার অন্তত চোখে পড়েনি। গদি বা ভূমি দখলের চেষ্টায় ওই ভীতি সৃষ্টিকারীরা আদতে কোন ধরনের মুসলমান, সে আলোচনাও এখানে করতে চাইছি না। তার চেয়ে বরং মহারাজা লক্ষন সেনের কথা বলি। বলা হয়, তিনি ছিলেন ছিলেন বাংলার প্রকৃত শেষ স্বাধীন নরপতি। বর্তমান মালদহ জেলার গৌড় ছিল তার প্রধান রাজধানী। এর অপর নাম ছিল লক্ষণাবতী। পিতার ন্যায় তিনি একজন নিষ্ঠাবান হিন্দু ছিলেন। তাই গঙ্গা নদীর সান্নিধ্য কামনা করে তিনি নদীয়ায় দ্বিতীয় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে (১২০১ খ্রি.) মুহম্মদ ঘুরীর সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজীর বিহার বিজয় সমাপ্ত করে অতর্কিতে লক্ষণ সেনের রাজনিবাস নদীয়া বা নবদ্বীপ নগরী দ্বারদেশে এসে উপস্থিত হন। এই অতর্কিত আক্রমণ প্রতিহত করা অসম্ভব মনে করে রাজা লক্ষণ সেন পলায়ন করেন এবং এই পূর্ববঙ্গে আশ্রয় নেন। উষাকান্ত সেনগুপ্তও আলবৎ রাজা ছিলেন। সব বরিশাইল্যাই যে আপন মনে রাজা তা কে’না জানে।

বেউখির আর মাত্র তিন মিনিটের পথ !!
***
বাংলার দশটি গ্রামের মতই ছায়া ঘেরা সুনিবির গ্রাম বেউখির এখন এতটাই শান্ত যে কল কল করে বয়ে চলা জলস্রোত, বা তা কেটে ছুটে চলা নৌকার শব্দও সুতীব্র তিক্ষ্ণতায় কানে লাগে। ঘোর লাগা এক গভীর নিরবতা ভাঙে আমাদের হাঁটার শব্দ, কথোপকথন। অবাক প্রশান্ত মন নিয়ে এগিয়ে চলি আমরা। সুনশান পথের দু’ধারে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। ছবির মতো সুন্দর সব খাল। পথে শুধু এক কিশোরের দেখা পেলাম। সে বললো, মাত্র তিন মিনিট হাঁটলেই বেউখির। আমরা যখন বেউখির প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে দৃষ্টি সীমায় পেলাম, ঠিক তখনই ঝুম করে বৃষ্টি নামলো আকাশ ভেঙে। দৌড়ে গিয়ে উঠলাম পুরানো জীর্ণ স্কুল ভবনের খোলা বারান্দায়। দু’জন শিক্ষিকার দেখা পেলাম সেখানে। তাদের কাছ থেকে সোনা সেন আর পুলক দাশগুপ্তের বাড়ির ঠিকানা জেনে নিলাম আমরা। বারান্দায় দাঁড়িয়েই অমিত’দা ফোন করেছিলেন তার ছোটকাকা, মানে তপন সেনগুপ্তকে। কাকাই জানলেন, পুলক দাশের বংশধররা এখন যে বাড়িতে থাকে, সেটিই ছিলো তাদের আদি বাড়ি। এরপরই বৃষ্টির কাছে হার মানলো আমাদের অপেক্ষা। শেকড়ের এত কাছে এসে অমিত’দারও যে আর তর সইছিলো না। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা রওনা হই সেন বাড়ির পথে। স্কুল ছাড়িয়ে ডান দিকে মোড় নিয়ে কিছু দূর এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে এক শতবর্ষী তেঁতুল গাছ। তার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মাটির রাস্তাটি চলে গেছে সেন বাড়ির দিকে। শিক্ষিকা দ্বয় এই নির্দেশনা দিয়েই ক্ষাণ্ত হলেন না। তাদের একজন পথ চিনিয়ে দিতে সাথেও এলেন। অবশ্য তার বাড়ি ফেরার পথটিও ছিলো একই পথে।

***
কোনো কোনো ঐতিহাসিক লক্ষন সেনকে কাপুরুষ বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাদের এ বর্ণনার কোনো সত্যতা নেই। লক্ষন সেন জীবনে বহু শৌর্যবীর্যের পরিচয় দিয়েছেন। তার পুত্রদের লিপি থেকে জানা যায়, তিনি পুরী, বারানসি ও প্রয়াগে বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন। 'তাবাকাত-ই-নাসিরী নামক গ্রন্থের লেখক মিনহাজ উদ্দীন তাকে ‘রায় (রাজা) লখমানিয়া' ও 'হিন্দুস্তানের খলিফা' বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি কাপুরুষ হলে তার সম্বন্ধে এমন উক্তি কখনো সম্ভব ছিলো না। একাধিক ইতিহাস গ্রন্থে রয়েছে, বখতিয়ার খলজীর বিহার অধিকারের কথা শুনে রাজ্যের বহুলোক যখন সন্ত্রস্ত এবং নদীয়া ছেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত তখনো লক্ষন সেন রাজধানী ত্যাগ করেননি। পরে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধ না করে তিনি পূর্ববঙ্গে আশ্রয় গ্রহণ করা সমীচীন মনে করেছিলেন। ১২০৫ খ্রিস্টাব্দে লক্ষন সেনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র কেশব সেন ও বিশ্বরূপ সেন আরও প্রায় ২৫ বছর ঢাকার অন্তর্গত বিক্রমপুরে রাজধানী স্থাপন করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেছিলেন।

***
পরিত্যাক্ত সিঁড়ি
অতীতের ছায়া
ভিটের মাটিতে
শেকড়ের মায়া
অতঃপর আমরা যখন উষা সেনের সেই বাড়ির উঠোনে গিয়ে পৌঁছাই, খুব কাছেই কোথায় যেন একটা অচেনা পাখি ডাকতে ডাকতে উড়ে চলে যায়। দোচালা কাঠের ঘরের, মাটির মেঝেতে শুয়ে থাকা কুকুরটিও অপরিচিত মানুষের ঘ্রাণ পেয়ে নড়েচরে বসে। ঘেউ করে উঠেই আবার থেমে যায়। একটি মোরগও ডেকে ওঠে। ওরা সবাই কাকে যেন আমাদের আগমনী বার্তা পাঠায়। চার/পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে দৌড়ে ঘরের দরজায় এসে আমাদের দেখেই আবার ভিতরে চলে যায়। এমন সময় আমরা এক জানালায় দেখি স্বর্গীয় পুলক দাশগুপ্তের বিধবা স্ত্রী বন্দনা দেবীর মুখ। তিনি জানতে চান, আমরা কাকে খোঁজ করছি। ঠিক এ সময় সেই বাচ্চাটিকে নিয়ে দরজায় এসে দাঁড়ায় তার ছেলে মিঠু দাসগুপ্ত। তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় জানান অমিত’দা। সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন মা-ছেলে। আমাদের সবাইকে নিয়ে বারান্দায় বসান। ঘর থেকে একটু দূরের একটি উঁচু মাটির ঢিবি দেখিয়ে মিঠু অমিত’দাকে জানান, ওখানেই ছিলো তাদের পুরানো ভিটে। দাদার চোখে তখন অদ্ভুত এক ঘোর। সে ওই জায়গাটায় ছুটে গিয়ে ভিটের মাটি তুলে নিলেন খানিকটা। এরপর এসে বসেন উঠোনে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত এক পুরানো সিঁড়ির উপর। ফেরার পথে নিতাই নামের এক লোক অবশ্য আমাদের জানিয়ে দেন, ওই সিঁড়িটিও ছিলো সেন বাড়ির। ভিটের শেষ চিহ্ন হিসাবে ওটাই শুধু রয়ে গেছে। প্রায় ৩০ বছর আগে যখন সেন বাড়ির ভিটে ভাঙা হয়, তখন সিঁড়িটি গড়িয়ে নিয়ে ওখানে রাখা হয়েছিলো। ভিটে ভাঙা সেই শ্রমিকদের দলে ছিলেন বলেই তিনি এটা জানাতে পেরেছিলেন। অবশ্য কিছু না জেনেও ওই সিঁড়িতে বসার পর দাদার চোখে মুখে তার যে প্রশান্তি খেলা করছিলো, তা ছুয়ে যাচ্ছিলো আমাদের সবাইকে। ভিটের মাটিটুকু পলিথিনের ব্যাগে পুড়ে সযন্তে নিজের কাছেই রাখলেন অমিত’দা। এরই মধ্যে মিঠু গিয়ে তার কাকা, শান্তি দাসগুপ্তকে ডেকে নিয়ে এলেন। বন্দনা দেবী আমাদের আপ্যায়নের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তার হাতে ভাজা গরম মুড়ি আর ডিম ভাজিকে মনে হচ্ছিলো স্বর্গের মেন্যু। গল্পে গল্পে রাতও এগিয়ে আসছিলো। তবুও অনেকটা তাড়াহুরো করেই উঠতে হয় আমাদের। আবারো ফেরার কথা জানিয়ে ফিরে আসি আমরা। সাথে নিয়ে আসি অমিত’দার শেকড়ের মাটি আর আমার চলচ্চিত্রের গল্প। যার নাম হতে পারে ‘সেনের প্রত্যাবর্তন’ বা ‘the return of sen’ অথবা ‘ফেরা না ফেরা’। ওহ, ফেরার পথে ওপারের, মানে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী বাম নেতা শৈলেন দাশগুপ্তের পাশের বাড়িও চিনে আসি আমরা। তার গল্পও শোনবো অন্য কোনো দিন।

এখনকার অমিত’দার কথা’তো তেমন কিছুই বললাম না। শুধু এটুকু জানাই - তিনি শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতা নন, একইসঙ্গে একজন শিক্ষক। আর সুকুমার রায়ের হ-য-ব-র-ল অবলম্বনে তার হাতেই তৈরী হচ্ছে বাংলা ভাষার প্রথম ত্রিমাত্রিক (থ্রি ডি) চলচ্চিত্র।

৩১ মার্চ ২০১৪

সঙ্কটে এক ব্লগার নির্মাতা, আসুন চলচ্চিত্র নৃ’কে বাঁচাই

জানেন তো সামু, মানে বাংলা ব্লগ সামহোয়্যার ইনের বেশ পুরানো ব্লগার নির্মাতা রাসেল আহমেদযাদুকর... নিকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই সংগ্রামী মানুষটির প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নৃ । আর্থিক সঙ্কটে স্যুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া এ চলচ্চিত্রের অফিসিয়াল টিজার অবশ্য ভা্র্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে বেশ সাড়া ফেলেছে । বিশ্বের ৫৫টি দেশ থেকে দেখা হয়েছে এটি। বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বেশী দেখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ভারত থেকে। ইউটিউব পরিসংখ্যান এ তথ্য জানিয়েছে। সম্প্রতি এ সাইটে নৃ’র টিজারটি আপলোড করা হয়। আরো যেসব দেশ থেকে টিজারটি বহুবার দেখা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অষ্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, ইতালি, সুইডেন, ফ্রান্স, রোমানিয়া, গ্রীস, জাপান, সাউথ কোরিয়া, মালয়শিয়া ও জার্মানি অন্যতম। নৃ’র ফেসবুক পেইজে মোট ৪২ দেশের অনুসারী রয়েছে বলে জানা গেছে।


সঙ্কট কাটবে, সিনেমাটিও শেষ হবে – এমনটাই প্রত্যাশা টিজারের দর্শকদের। চলচ্চিত্রটি নিয়েও দারুণ আশাবাদী তারা। ইউটিউব থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগেও শেয়ার হয়েছে টিজারটি। সব জায়গাতেই এটির ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত এসেছে। শেয়ার হয়েছে কয়েক হাজার বার।
নৃ’র অবস্থা নিয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী লেখক কূলদা রায় ফেসবুক এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মাধবপাশা বরিশাল শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আমি বহুবার গেছি। এই পথে গুঠিয়া , চাখার, বানারীপাড়া স্বরূপকাঠি যেতে আসতে মাধবপাশায় নেমে পড়তাম। আমার পিঠে শিবকালী ভট্টাচার্যের এগার খণ্ড। আমি ঔষধী গাছ খুঁজতে বেরিয়েছি। গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দুর্গাসাগর। শান্তশ্রী এই দীঘির সিঁড়িতে বসে থেকে দেখেছি--জলের উপরে পাখি এসে নামে। তার ছায়া উড়ে যায়। মাঝখানে একটুকু দ্বীপ। হাওয়ায় কাঁপে। এই মাধবপাশায় স্বদেশি আন্দোলনের সময়ে অনশন করেছিল গ্রামের মানুষ। পঞ্চাশের দাঙ্গায় একদিনে মেরে ফেলা হয়েছিল ২০০ জনকে। কিন্তু দুর্গাসাগর এখনো সুন্দর হয়ে আছে। হয়তো সুন্দর এরকমই। সুন্দরকে সুন্দরই থাকতে হয়। তাকে শ্রী বলে ডাকি। দুর্গাসাগর নিয়ে একটি ফিল্ম হচ্ছে। নাম নৃ। কোনো তরুণ করছেন। আমি তাকে চিনি না। কিন্তু দুর্গাসাগরকে চিনি বলেই তাকে অচেনা মনে হয়না। ফিল্মটি আটকে আছে ৮৫ ভাগ হওয়ার পর। টাকা নেই। ভালো কাজে টাকা থাকে না- এটা খুব স্বাভাবিক। তবু তাকিয়ে আছি দুর্গাসাগরের দিকে। কেউ হয়তো আসবেন। তখন নৃ ফিল্মটি দুর্গা সাগরকে নিয়ে শ্রী হয়ে উঠবে।’

একইভাবে টিজারটি ফেসবুকে শেয়ার করতে গিয়ে নৃ’র শুভানুধ্যায়ী অনার্য তাপস লিখেছেন, ‘শুভেচ্ছা রাসেল আহমেদ এবং তার দলকে। যারা অনেক মমতা নিয়ে, অনেক যত্ন করে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। আমার ব্যক্তিগত ভালোলাগা এবং আগ্রহ আছে চলচ্চিত্র নৃ কে নিয়ে। এই দলটির ক্যাপ্টেন রাসেল আহমেদ, গুরুত্বপূর্ণ কাণ্ডারি ঈয়নসহ নৃ এর সাথে যুক্ত অনেকেই আমার ব্যক্তিগত বন্ধু। চলচ্চিত্র নিয়ে তাদের চিন্তা, আগ্রহ, কর্মকাণ্ড আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমি খুব কাছ থেকে তাদের প্রসব বেদনার কষ্ট প্রত্যক্ষ করেছি, করছি। দীর্ঘ দিন ল্যাপটপ বন্দী হয়ে থাকতে থাকতে নৃ যখন বিধ্বস্ত ঠিক তখনই নৃর এই অফিসিয়াল ট্রেলার আমাকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করেছে। ৮৫% স্যুটিং শেষ হওয়া এই চলচ্চিত্রটির পুরো টিম যে বিপুল জী বনী শক্তির অধিকারী সেটা আবারও প্রমাণিত হলো। এখন অপেক্ষা, কবে আর্থিক দৈন্য তা কাটিয়ে এই চলচ্চিত্রটি শতভাগ কাজ শেষ করে দর্শকদের সামনে আসতে পারে- তার জন্য। কাল-কলা-কৌশলে নৃ কতটা পরিপক্ক, আধুনিক তা জানার জন্যও এর পুরো কাজ শেষ হওয়া দরকার। শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা থাকলো নৃ’র জন্য। সেই সাথে থাকলো কিছুটা দুশ্চিন্তা। কবে কাটবে আঁধার? অর্থনীতির চাকা কবে সচল হবে রাসেল আহমেদের?’ 

এদিকে টিজারের ব্যাপারে মো: খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমি অভিভূত। অসাধারণ ক্যামেরা শট, এ্যানিমেশন, অভিনয়, মেকিং। এটা বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে একটা মাইলস্টোন হতে পারে। ফুল ভার্সন দেখে পরিতৃপ্ত হতে চাই। অধীর আগ্রহে থাকলাম।’ সৈয়দ হিমু বলেছেন, ‘ওয়ান অব দ্যা বেস্ট আই এভার সিন।’ তপন গোস্বামী বলেছেন, ‘শুরু দেখে মনে হচ্ছে, একটি অসাধারণ ছবির জন্ম হতে চলেছে।’ তাওফিক নেওয়াজ বলেছেন, ‘অপু আর দূর্গার কথা মনে পড়ে গেলো।ট্রেইলার দেখে মনে হচ্ছে অসাধারণ একটা ছবি হয়েছে নৃ।দেখার অপেক্ষা রইলো। নৃ ছবির শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য শুভকামনা । মঙ্গল হোক সবার, জয় হোক বাংলা চলচ্চিত্রের।’

আরেক দর্শক রাজীব হাসান বলেছেন, ‘কিছু ভালো কাজ হোক। জীবনের আয়তন বেড়ে হোক মহান জীবন, মানুষ মানুষকে দেখুক। দেখুক জীবন, অনাদরে ভেসে আসা ভেসে যাওয়া নিশ্চুপ, নিষ্ফল রাত-দিন, আরো আরো কাজ হোক। মানুষ প্রেরণা পাক।’ ফয়জে হাসান লিখেছেন, ‘অসাধারন সিনেমাটোগ্রাফী এং কম্পোজিসন।’ এছাড়া ওপার বাংলার দর্শক সৌমিক ঘোষ বলেছেন, ‘অসামান্য কয়েকটা শট তারকোভস্কি মনে পড়াল!’ 

এর আগে ইস্টিশন ব্লগের ডা. আতিকুল হক লিখেছেন, ‘নৃ মানে মানুষ। মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়ও মানুষ। সেই মানুষের গল্প, মানবতার জয়গানের গল্প নিয়ে রাসেল আহমেদ তৈরি করছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র "নৃ"। ট্রেইলার দেখে মুগ্ধ হলাম।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘এমনিতে রাসেল ভাইয়ের কাজ আগে দেখিনি। ফেসবুকে উনার কিছু কিছু স্থিরচিত্র দেখে মুগ্ধতার সূচনা। নৃ চলচ্চিত্রের ট্রেইলার দেখে আমি খুব আশাবাদী অত্যন্ত ভালো মানের একটি চলচ্চিত্র যোগ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ভাণ্ডারে। অধীর হয়ে অপেক্ষায় আছি মানুষের জয়গান দেখার জন্য। "নৃ" চলচ্চিত্রের সফলতা কামনা করছি...।’

মানুষ শুধু ‘ভা্র্চুয়ালি’ নয়, ‘একচুয়ালি’ও সাড়া দিচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নৃ’র নির্মাতা রাসেল আহমেদ। এ নিয়ে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘অবাক হইনি। বরং বারংবার নিষিক্ত হয়েছি ভালোবাসায়। টাকার জন্য আটকে আছে চলচ্চিত্র- নৃ এর শেষভাগের শুটিং; এরকম একটা খবর ভার্চুয়ালি প্রচার হবার পর প্রচুর মানুষের এগিয়ে আসা টের পাচ্ছি। ভালোলেগেছে তাদের মুখে- এরকম একটা ভালো কাজ আটকে থাকতে পারে না শুনে। যে যার মতো করে সাহায্যের প্রস্তাব দিচ্ছে। যার যার সামর্থ্যের সিমানায় দাঁড়িয়ে।’ নতুন করে বুঝতে পারছি- মানুষ ও মনুষত্ব্য এখনো ফুরিয়ে যায়নি। একা একা মানুষগুলো এগিয়ে আসছে একাকার হবার বাসনায়।’এর আগে টিজার প্রসঙ্গে রাসেল বলেছিলেন, ‘স্যুটিং বাকি আছে আরও। এডিটিং, ডাবিং/সাউন্ড/মিউজিক ডিজাইন ইত্যাদি আরও পরের পদক্ষেপ। এর মাঝেও টিজার এর আদলে কিছু ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হলো মূলত অনেকের দাবির প্রেক্ষিতেই। এটাকে আবার ফুল প্রোমোশনাল ট্রেইলার ভেবে ভুল করবেন না।’

আমাদের সহযোদ্ধা, মানে এক ব্লগার নির্মাতার এই সন্তান বা একটি সুস্থ-সামাজিক ধারার চলচ্ছিত্রকে বাঁচাতে আমরা কি কিছুই করতে পারি না? সকল বাংলা ব্লগের ব্লগারদের উদ্দেশ্যে এ প্রশ্ন রেখেই আহবান জানাচ্ছি- আসুন, নৃ’র পাশে দাঁড়াই। সবাই মিলে চেষ্টা করলে বিদ্যমান বাঁধা নিশ্চয়ই অতি তুচ্ছ হয়ে যাবে; সঙ্কট মোচনও তরান্বিত হবে। 
এখানে আরো কিছু কথা না বললে পুরো বিষয়টা পরিস্কার হবে না। চিত্রায়নের মাত্র ১৫ ভাগ কাজ বাকি। তবু স্বস্তিতে নেই নৃ’র নির্মাতা ও তার ইউনিট। কারণ - আবারো অর্থসঙ্কট। আটকে গেছে কাজ। অবশ্য দ্রুতই এ সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা করছে প্রযোজক সংস্থা থিম থিয়েটার উইজার্ড ভ্যালী। শুদ্ধতার অঙ্গিকার আর বিভেদ ছাপিয়ে মাখামাখি হওয়ার গল্প নিয়ে নির্মানাধীণ এ চলচ্চিত্র এর আগেও একই সঙ্কটে পরেছিলো।

উইজার্ড ভ্যালীর কর্ণধার ও নির্মাতা রাসেল আহমেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির টাকায় ২০১২ সালের আগস্টে শুরু হয়েছিলো নৃ’র কাজ। প্রাথমিক মূলধন হিসাবে ওই টাকা ছিলো নিতান্তই অপ্রতুল। ছয় মাসের প্রস্তুতির পর ২০ দিনের স্যুটিংয়ে (গত বছরের এপ্রিলে) তা শেষ হয়ে যায়। তীব্র অর্থসঙ্কটে পরে নৃ ইউনিট। ওই সময়ে উইজার্ড ভ্যালী’কে আর্থিক সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেন সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ি ডা. আরিফুর রহমান। আমাদের বরিশাল ডটকম নাকম একটি অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ দেখেই তিনি নৃ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। পরে ফেসবুক পেইজের কল্যাণে তার সাথে নৃ টিমের যোগাযোগ হয়। আর ‘বরিশাইল্যাইজম’ তাকে এই টিমের পাশে এনে দেয়। মূল ভিত্তি বরিশালকেন্দ্রিক হওয়ার কারণেই চলচ্চিত্রটির পাশে দাঁড়াবার ইচ্ছা পোষণ করেন বরিশালের সন্তান ডা. আরিফ। তার সহায়তায় গত ২৫ অক্টোবর বরিশালের বানারীপাড়ার নরোত্তমপুর গ্রামে পুনরায় চিত্রায়নের কাজ শুরু হয়।

এর আগে প্রথম দু’দফায় (গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে) মোট ২০ দিনে সিনেমার ইনডোরের অধিকাংশ কাজ শেষ করেছিলো নৃ ইউনিট। তাই শেষ দফার বেশিরভাগ কাজই ছিলো আউটডোর নির্ভর। প্রথম দু’দিন বৈরি আবহাওয়ায় বিঘ্নিত হয় কাজ। তৃতীয় দিনে বৃষ্টি কমলেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। টানা ৬০ ঘন্টার হরতালে বিঘ্নিত হয় স্যুটিং। এ সময় পুলিশী হয়রানিরও স্বিকার হন নৃ ইউনিটের সদস্যরা। এসব বাঁধা পেরিয়েই বানারীপাড়াসহ বরিশাল মহানগরীর এপিফানী গির্জা, মহা-শ্মশান, নগর উপকণ্ঠের ঐতিহাসিক জলাধার দূর্গাসাগর এবং এর আশেপাশের এলাকায় কাজ চলেছে। তবে বেড়েছিলো খরচ। এরই প্রেক্ষিতে নভেম্বরে আবারো টাকা শেষ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় চিত্রায়নের কাজ। পুনরায় অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করে উইজার্ড ভ্যালী। সাংবাদিকদের তারা জানিয়েছে, শিগগিরই চলচ্চিত্র নৃ’র ‘টাইটেল স্পন্সর’ ও ‘কো-স্পন্সর’ চূড়ান্ত করা হবে। নতুন কো-প্রডিউসারও খোঁজা হবে। এছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেও সহায়তা চাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
নৃ ইউনিটের সদস্যরা জানান, তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলেও কেউই হতাশ নন। তাদের প্রত্যাশা, ‘চলতি মাসের মধ্যেই আর্থিক সঙ্কট কেটে যাবে। সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মূল্যবোধ জাগানিয়া গল্পের এই সিনেমাটি দ্রুত শেষও হবে।’
আলাপকালে নির্মাতা রাসেল আহমেদ বলেন, ‘চলচ্চিত্রটি শুরু করেই আমি টের পেয়েছি- এ অঞ্চলে স্বকীয়তা ও নিজস্ব ভাষা শৈলী নিয়ে একটি আন্তর্জাতিকমানের পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র পরিস্ফূটনে রয়েছে বিস্তর প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু সাথে সাথে আমি এটাও বুঝতে পেরেছি- লাগামছাড়া দু:সাহস ও চলচ্চিত্রের জন্য নিজস্ব উৎসর্গ ব্যতিরেকে একটা পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রের বিকাশ সম্ভব না। তাই জেনেবুঝেই ঝাঁপ দেয়া। প্রতিবন্ধকতাকে পথের অংশ মেনেই আগাচ্ছি। যাই হোক, অনেকখানি পথ পেরিয়ে শেষ পর্যায়ে এসে আমাদের আত্মবিশ্বাসের কোনো অভাব আছে, এটা কেউ বলতে পারবে না।’

রাসেল আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের ভিজুয়াল সম্পাদনার কাজ অনেকখানি এগিয়েছে। সাউন্ড ডিজাইন, গানসহ পূর্ণাঙ্গ মিউজিক ডিজাইনের কাজও চলছে। কালার গ্রেডের জন্য ইংল্যান্ডের এক কালারিস্টের সাথে কথাবার্তা চলছে। সবকিছু মিলিয়ে চলচ্চিত্র নৃ’র কাজ থেমে নেই। অনেক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এগিয়ে চলছি আমরা।’
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের রহমতপুরে নৃ’র চিত্রায়ন শুরু হয়। প্রায় দেড়শো মিনিটের মত হবে এ চলচ্চিত্রের শরীর। চলচ্চিত্রের মুখ্য চরিত্র বিশুর ভূমিকায় অভিনয় করছে বরিশাল জিলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ইয়াসিন। পুরানো এ নগরের কাউনিয়া এলাকার মহাশ্মশানের দুই চণ্ডাল দিলীপ কুমার পাল ও রাঁধা বল্লভ শীল ছাড়াও এতে আরো আছেন তাসনুভা তামান্না, সিরাজুম মুনীর টিটু, হিরা মুক্তাদির, এসএম তুষার, দুখু সুমন, হ্যাভেন খান, ওয়াহিদা রহমান আভাসহ শতাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রী। ওই চণ্ডাল জুটির জীবন দর্শন ও ভাবনা নিয়ে অর্ধযুগ আগে শুরু হওয়া গবেষণার প্রেক্ষিতে প্রসূত এ চলচ্চিত্রে বরিশালের মাধবপাশার ঐতিহাসিক জলাধার দূর্গাসাগরের প্রচলিত মিথ আর বাংলার সহজিয়া, দরদিয়া এবং মরমিয়া বোধ মাখামাখি হয়েছে। গণমানুষের কাছে এ চলচ্চিত্রের বার্তা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে গত জুনে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে নির্মাতা দাবি করেছিলেন, বাবা-মা-দাদা-দাদী-মামা-চাচা-খালা-খালু-বন্ধু-বান্ধব-আরশী-পরশী-আন্ডা-বাচ্চাসহ পরিবারের সকলকে নিয়ে হলে গিয়ে বাদামভাজা চিবুতে চিবুতে নিশ্চিন্তে উপভোগ করার মত সিনেমা হবে নৃ।
নৃ চিত্রায়নে তিনটি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। মূল চিত্রগ্রাহক- ড্যানিয়েল ড্যানি। সাথে আছেন ক্যামেরা সঞ্চালক শ খি আ ঈয়ন ও দঈত আন্নাহাল। সিনেমার শিল্প নির্দেশক হিসাবে আছেন থিওফিলাস স্কট মিল্টন। শব্দগ্রহণ করছেন- এমআই সাইফ। পোষাক ও পরিচ্ছদ দেখছেন শাহরিয়ার শাওন। এছাড়া সম্পাদনার দায়িত্বে আছেন- সামির আহমেদ।





প্রাসঙ্গিক তথ্য
মনুষ্যত্ব রক্ষার যুদ্ধে বোধ প্রকাশের সবচেয়ে প্রভাবসঞ্চারী মাধ্যম চলচ্চিত্রকে হাতিয়ার হিসাবেই বেছে নিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থিম থিয়েটার উইজার্ড ভ্যালী। তারা মনে করে, এ দেশের সিনেমাও একদিন পৃথিবী শাসন করবে। গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে বরিশালের বিএম কলেজ এবং কলেজ রোড (বর্তমানে আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ সড়ক) কেন্দ্রীক সৃজনশীল আড্ডায় উইজার্ড ভ্যালীর জন্ম। স্থানীয় প্রযুক্তির সাহায্যে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, নাটিকা বা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পাশাপাশি এ বিষয়ক তাত্ত্বিকচর্চায় সীমাবদ্ধ ছিলো এর প্রাথমিক কর্মকাণ্ড। প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১০ সালে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলে সিনেমা নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এটি নিবন্ধিত হয়।

কে এই রাসেল
বরিশাল নগরীতেই ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ে রাসেল আহমেদের জন্ম। নগরীর কলেজ রোড এলাকাতে বেড়ে উঠেছেন কর্কট রাশির এ জাতক। প্রগতিশীল মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসাবে অনুশাসনের পাশাপাশি পেয়েছেন এক সুস্থ সাংস্কৃতিক বলয়। বই পড়া আর আঁকাআঁকির অভ্যাস হয়েছে তখনই। খেলাঘর করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছে মঞ্চ নাটকের সাথে। কৈশোর কেটেছে ব্যান্ড মিউজিক আর সাহিত্য পত্রিকা করে। তারুণ্যে এসব চর্চা অব্যাহত রেখেই মেতেছেন ক্যামেরা-কম্পিউটার নিয়ে। ফটোগাফী-ভিডিওগ্রাফীর পাশাপাশি এডিটিং, গ্রাফিক্স ও এনিমেশন চর্চা করেছেন, করিয়েছেন। এরই ফাঁকে দৈনিকে শিল্প নির্দেশক ও সাংবাদিক হিসাবেও কাজ করেছেন। সংগঠক আর আয়োজকের ভূমিকায়ও তাকে দেখা গেছে বহুবার। ক্লাবের কাজ থেকে শুরু করে ফিল্ম ফ্যাস্টিভেল আয়োজন, সব জায়গাতেই সবচে কাজের মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এসব করতে করতেই কখন যে চলচ্চিত্র নির্মাণের ভূতটা রাসেলে মাথায় চেপে বসেছে, তা কেউ জানতেও পারেনি। বরিশালে বসেই তিনি নিভৃতে অডিও-ভিজুয়াল কাজের উপযোগী একটি দল গড়ে তুলতে শুরু করেন। যাত্রা শুরু করে উইজার্ড ভ্যালী।

রাসেল আহমেদ
২০১০ সালের শুরুতে রাসেল বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় আসেন। তিনি জানতেন, টেলিভিশনে প্রচারিত নাটক বা টেলিফিল্মে বাণিজ্যের চাপে শিল্প ভাবনা আড়ষ্ট হয় যায়। তবুও চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে নিজেকে যাচাইয়ের জন্যই নির্মাণ করেন নাটক ‘ফ্লাই-ওভার’। দেশ টিভিতে প্রচারিত এ নাটকটি প্রচুর প্রশংসা কুড়ালেও তিনি আর নাটক নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হননি। মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে নিজেকে এবং নিজের টিমকে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করেন। চলচ্চিত্র চর্চার সাথে ক্যামেরা, রিগস, লাইটস ও এডিট প্যানেল সমৃদ্ধ স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইউনিট তৈরি করেন। অবশেষে ২০১২ সালে তিনি নৃ’র কাজে হাত দেন।
newsreel [সংবাদচিত্র]