Powered By Blogger
Bangladesh লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Bangladesh লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

Dance With Drums (Video)


Pohela/Poila Boishakh is the first day of the Bengali calendar, celebrated on 14 April or 15 April in Bangladesh and in the Indian states of West Bengal and Tripura by the Bengali people and also by minor Bengali communities in other Indian states, including Assam, Jharkhand and Orrisa. It coincides with the New Year's days of numerous Southern Asian calendars like Tamil new year Puthandu. The traditional greeting for Bengali New Year is "Shubhô Nôbobôrsho" which is literally "Happy New Year".

The Bengali New Year begins at dawn, and the day is marked with singing, processions, and fairs. Traditionally, businesses start this day with a new ledger, clearing out the old.

People of Bangladesh enjoy a national holiday on Poila Boishakh. All over the country people can enjoy fairs and festivals. Singers perform traditional songs welcoming the new year. People enjoy classical jatra plays.

Like other festivals of the region, the day is marked by visiting relatives, friends and neighbors. People prepare special dishes for their guests.

The festivities from the deep heartland of Bengal have now evolved to become vast events in the cities, especially the capital Dhaka.

In Dhaka and other large cities, the festivals begin with people gathering under a big tree. People also find any bank of a lake or river to witness the sunrise. Artists present songs to welcome the new year, particularly with Rabindranath Tagore's well-known song "Esho, he Boishakh". It is tradition to enjoy a meal of 'pantha bhaat and ilish maach'( fermented rice and hilsa fish) on this day. Now a days People Use To send Pohela Boishakh Special Sms To there nearest Friends And Family Member.

People from all spheres of life wear classic Bengali dress. Women wear saris with their hair bedecked in flowers. Likewise, men prefer to wear panjabis. A huge part of the festivities in the capital is a vivid procession organized by the students and teachers of Faculty of Fine Arts, University of Dhaka.

Of the major holidays celebrated in Bangladesh and West Bengal, only Pôila Boishakh comes without any preexisting expectations. Unlike Eid ul-Fitr and Durga Pujo, where dressing up in lavish clothes has become a norm, or Christmas where exchanging gifts has become an essential part, Pôila Boishakh is about celebrating the simpler, rural heartland roots of the Bengal.

Source: wikipedia.org

২০ মে ২০১৬

আফ্রিকায় যাচ্ছে ‘মাই বাইসাইকেল’

ফিল্ম, মিউজিক আর পারফর্মিঙ আর্টের সমন্বিত উৎসবের কারণে ইতোমধ্যে পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তানজিনিয়ার জেডআইএফএফ, মানে জানজিবার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এ উৎসবের এবারের থিম ‘দিস জার্নি অফ আওয়ার্স।’ জানজিবারের স্টোন টাউনে আগামী ৯ থেখে ১৭ জুলাই এটি অনুষ্ঠিত হবে। আর এতে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘মাই বাইসাইকেল’। চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। সে ভাষায় সিনেমাটির নাম ‘মর থেংগারি’, যার বাংলা অর্থ ‘আমার বাইসাইকেল’।
উৎসবের ‘ফিচার ফিকসন’ বিভাগে প্রদর্শনের জন্য এটি ‘অফিসিয়ালি’ মনোনিত হয়েছে। দেশের জন্য আবারো সম্মান আনলো সেন্সর বোর্ডের, তথা সরকারি ছাড়পত্র না পাওয়া একটি চলচ্চিত্র। কিঙবা বলা যায় - এই সম্মান নিয়ে এলেন স্রোতের বিপরীতে চলতে জানা এক আত্মবিশ্বাসী নির্মাতা অং রাখাইন
অং রাখাইন শুধু চাকমা ভাষার প্রথম সিনেমার নির্মাতা নন, সম্ভবত
তিনি রাখাইন জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা একমাত্র বাংলাদেশী পরিচালক।
বাংলাদেশে এই চলচ্চিত্র বাণিজ্যিক ভাবে মুক্তি দেয়া না গেলেও ২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৩তম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও উন্মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবেই এটি প্রথম প্রদর্শিত হয়। এরপর প্রদর্শনী হয়েছিলো চট্টগ্রামে। গত বছর নভেম্বরে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয় ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়ার তাল্লিন ব্ল্যাক নাইট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ডিসেম্বরে রাশিয়ার সিলভার আকবুজাত অ্যাথনিক ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটি সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার জেতে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুইডেনের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব গোটেবর্গ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও প্রশংসিত হয় এ সিনেমার গল্প ও নির্মাণ। এছাড়া ফিনল্যান্ডের স্কাবমাগোভ্যাট ইন্ডিজেনাস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরো কয়েকটি উৎসবে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।
‘মাই সাইকেল’ -এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কামাল মনি চাকমা, ইন্দ্রিরা চাকমা, ইউ চিং হলা রাখাইন, বিনাই কান্তি চাকমা, আনন্দ চাকমা, সুভাষ চাকমা, জোরাদান চাকমা। ছবির গল্প পরিচালকের নিজের। চিত্রনাট্য করেছেন নাসিফুল ওয়ালিদ। চিত্রগ্রহণে ছিলেন সৈয়দ কাসেফ শাহবাজী, আর সম্পাদনায় আরেফিন। মিউজিক করেছেন অর্জুন, সাউন্ড মিক্সিং রতন পাল। প্রযোজনা করেছেন মা নান খিং। স্রেফ শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতা বা অর্থায়নে নির্মিত স্বল্প বাজেটের এ ছবিটির পরিবেশক খনা টকিজ

ছবির গল্পে দেখা যায়, কামাল নামে একজন যুবক শহরে টিকতে না পেরে বাড়িতে ফিরে আসেন একটি বাইসাইকেল নিয়ে। এ সাইকেল দিয়ে একসময় এলাকায় মানুষসহ মালামাল পরিবহন শুরু করেন। আর তাতে তার সংসারের খরচ, ছেলের পড়ার খরচ চলতে থাকে। কিন্তু তার এই সুখ অন্যদের সহ্য হয় না। তিনি ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন। আর না, বাকীটা জানতে অবশ্যই দেখতে হবে পুরো সিনেমা।

১৩ মে ২০১৬

প্রফেসনাল নই, ইমোসনাল আমি

‘আপা আপনি শ্রদ্ধেয়, মহান। কিন্তু আপনার সাথে কাজ করাতো দূরের আলাপ, কথা বলার রুচিও আমার আর অবশিষ্ট নেই। টাকাটা কখনো দিতে ইচ্ছে হলে *** ভাইয়ের কাছে দিয়েন।’ – দেশের স্বনামধন্য এক নির্মাতাকে গত মঙ্গলবার (১০ মে, ২০১৬) বিকেলে এই ক্ষুদে বার্তাটা পাঠাতে হয়েছে। গত মার্চের শেষ সপ্তাহে - তার নির্মাণাধীন ধারাবাহিক নাটক / মেগা সিরিয়ালের দ্বিতীয় কিস্তির চিত্রায়ন পর্বে কাজ করতে ‍গিয়েই জেনেছিলাম, প্রথম কিস্তির চিত্রগ্রাহক টানা আট দিন কাজ করেও কোনো টাকাও পাননি। তখনই বেশ আঁতকে উঠেছিলাম যে শঙ্কায়, তা’ই সত্যি হলো। নয় দিন কাজ করিয়ে তিনি মাত্র দুই দিনের মজুরী দিলেন, তা’ও বহুবার চাওয়ার ফল। এরপর – ‘এ হপ্তায় না, ও হপ্তায়’ - টাকা দেয়ার কথা বলে বলে কালক্ষেপন শেষে সর্বশেষ আমায় জানানো হয়েছে, ওই সাত দিনের মজুরি কবে নাগাদ দেয়া হবে তা অনিশ্চিত। তবে চলতি মাসের শেষ হপ্তায় নির্মাতা ধারাবাহিক/সিরিয়ালটির তৃতীয় কিস্তির চিত্রায়ন পর্বের কাজ শুরুর পাশাপাশি আরেকটি খণ্ড নাটক নির্মাণ করবেন। ওই সময় তিনি আমার, মানে চিত্রগ্রাহকের দিনের মজুরী দিনেই দিতে পারবেন।
বকেয়া মজুরী দিতে না পারার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তার ধারাবাহিক/সিরিয়ালের প্রযোজক এখন ‘ঈদের নাটক নিয়ে প্যাঁচে আছেন’। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ক্রিকেট খেলা প্রচারের কারণে নাটকটির প্রচার আপাতত বন্ধ রাখায় তিনি প্রযোজককে ‘আগের টাকার জন্য চাপ দিতে’ পারছেন না। যদিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অনির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, ‘তারা পরিচালকের আগের দুই কিস্তির সমুদয় বেকয়া পরিশোধ করে দিয়েছেন।’
নিজেরই প্রায় বছর দশ/বারো বছর আগের দশা মনে পরছে। সম্ভবত মনে করাচ্ছে এ সময়ের দায়। সেই সময়ও প্রায় একইরকম হতাশায়, ভুগতে হয়েছে হায়। তখন অবশ্য নাটক-সিনেমার পরিচালক/প্রযোজক নয়, পত্রিকা-ম্যাগাজিনের সম্পাদক/প্রকাশকের সুমতির অপেক্ষায় থাকতাম রোজ। আহা, কে-ইবা নিতে চায় এমন অতীতের খোঁজ। তখনও দেখতাম তারা ঠিকই ওড়াচ্ছেন বিজয়ের কেতন, ওদিকে বকেয়া আমার ছয় মাসের বেতন। এখন পরিচালক/প্রযোজকদের মাঝেও একই চরিত্র দেখি। এদের যত বড় বড় কথা, মানুষের জন্য দরদ বা ব্যাথা; সবই লোক দেখানো – মেকি। মালিক সর্বত্র একই। মিডিয়ার বিভিন্ন সেক্টরের মালিকদের চরিত্র - পোশাকশিল্প বা জাহাজভাঙাশিল্পের মালিকদের চেয়ে অন্তত ভালো, এমনটা ভাবার কোনোই কারণ নেই।
আন্দাজ করি, এই লেখা বা ক্ষোভ প্রকাশকে হয় ‘ছেলেমানুষী’ - নয় ‘পাকনামি’ ভাববেন অসংখ্য বিজ্ঞ সহযোদ্ধা। এর আগেও আমার এমন আচরনের বহিঃপ্রকাশে তাদের অনেকে অবাক হচ্ছেন দেখে আমি অবশ্য খুব একটা চমকাইনি। কারণ জানি এই শ্রমবাজারে তারাই কথিত প্রফেশনাল। আর আমার মতো ইমোসনালরা বরাবরই মুতে দেয় নিরবতার নিক্তিতে পরিমাপ্য অমন প্রফেসনালিজমের ওপর। যে কারণে আমরা সব জায়গায় আনফিট। মিডিয়ায়তো আরো বেশী।
আরেকটা গল্প বলে শেষ করছি। এটা ছিলো ২০১১ সালের আগস্টের ঘটনা। তখন একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল আর সাপ্তাহিকের সংসদ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করছি। সরকারের মন্ত্রীদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করে বেশ আলোচনায় আসা প্রতিষ্ঠান দুটির সম্পাদক/প্রকাশককে মাসের ২১ তারিখে গ্রেফতার করা হয়। পরদিনই সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় তার নিউজ পোর্টাল আর সাপ্তাহিক। বিনা নোটিশে বেকার হয়ে যাই প্রতিষ্ঠান দুটির শতাধিক সাংবাদিকসহ সবগুলো বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই সময় সাংবাদিকদের অনেকে আবার বেতন না পাওয়ার শঙ্কায় অফিস থেকে পাওয়া ল্যাপটপ/নোটপ্যাড জমা দেননি। আমিও একই শঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু অফিসের জিনিস আটকে বেতন আদায়ে বিবেক সায় দিচ্ছিলো না। অথচ আয়ের অন্য কোনো উপায়ও আমার জানা ছিলো না। অবশেষে কয়েকজন সাংবাদিক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে – কিছু টাকা ধার দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেই।

পরবর্তী সরকারের সাথে সমঝোতা হওয়ার পর সেই সম্পাদক/প্রকাশক কারামুক্ত হন। প্রতিষ্ঠান দুটোও আবার চালু করেন। কিন্তু সেই বেতন আর আমার চাওয়া হয়নি, পাওয়াও যায়নি। অথচ পাঁচ বছর আগের সেই এক মাসের বেতনের ঘাটতি আজও পোষাতে পারিনি। এর আগে পরে অজস্রবার অসংখ্য প্রতিষ্ঠান স্রেফ চাকরি ছাড়ার কারণে আমায় শেষ মাসের বেতন দেয়নি। এক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকতো ক্ষুদ্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে ল্যাপটপ চুরির অভিযোগও এনেছিলেন। যাক সে আলাপ। বস্তুত জীবনে ঘাটতি বাড়ছে। এরই সাথে তা পোষানোর সুযোগ বা সামর্থ্যও কমছে কী? – এই নিয়েই চিন্তায় আছি।

পুরানো পোস্টঃ
মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...

‘জার্নালিজম’ বনাম ‘ক্যাপিটালিজম’!
প্রতিক্রিয়া বা স্ব-শিক্ষিত সাংবাদিকতা...

৩০ মার্চ ২০১৬

অস্ত্রবাজ সময় ও সমাজে ...

ছবিঃ সংগ্রহিত
ধরায় মানুষ নয়, প্রাণ হন্তারক অস্ত্রই সবচেয়ে নিরাপদে রয়। দেশে দেশে তাদের প্রতিটি জমায়েত, তথা ‘অস্ত্রাগারগুলো’ ঘিরেই গড়ে ওঠে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়। এ বলয়গুলোকে সামরিক এলাকা, ঘাঁটি বা ক্যান্টনমেন্ট বলা হয়। সময়ের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন বিশেষায়িত ওইসব এলাকায় চলে অস্ত্রের পাহারা, পরিচর্যা এবঙ প্রাত্যহিক মহড়া। যুগ যুগ ধরে খোদ মানুষই নিয়োজিত আছে এই কাজে। অস্ত্রের বিবর্তনও আগাচ্ছে অজস্র মানুষেরই হাত ধরে। যে মানুষগুলোও আবার খুব দূরের কেউ নন। বেসামরিকদেরই ভাই, বন্ধু - স্বজন। কালের গণিতে যারা আজ সামরিক; তামাম অস্ত্রশাস্ত্র, বা অস্ত্রেরই সেবাদাস। নানা প্রত্যাশার মূলো ঝুলিয়ে তাদের ব্যবহার করা হয়। বস্তুত অস্ত্রেই স্থানীয়, জাতীয় ও বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত রয়। অস্ত্রবলেই গড়ে ওঠে প্রতিটি মনুষ্য রাস্ট্র, আইন। নির্ধারিত হয় সীমানা, শাসক। এবঙ যাবতীয় বিধান, নানাবিধ সম্মান। এমনকী আমার ইতিহাস পড়ুয়া তরুণী বোনের সম্ভ্রম হারানো ক্ষত-বিক্ষত তনু বা তার কেড়ে নেয়া জীবনের দামও আজ; নির্ধারণ করে দিতে চায় - এই অস্ত্রধারী সময় ও সমাজ। ময়নামতির পাহাড় হাউসে তবু কেউই কাঁদেনি ভয়ে। রাষ্ট্রের জলপাইরঙা দাপটে কেঁদেছে কান্দিরপাড় থেকে কারওয়ান বাজার; সমগ্র বাঙলা বা দুনিয়ার মানবাধিকার। তবে জানতে পারে নাই মন, কতটা কাঁদছে সুন্দরবন - এ বেলায়, ক্রমে পুড়ে ধ্বংসের খেলায়।


২৯ মার্চ, ২০১৬
পল্লবী, ঢাকা।

০৯ মার্চ ২০১৬

পথে পাওয়া প্রতিকৃতি


  যারা বইয়ের মতোই মানুষ পড়ার চেষ্টা করেন, পথে পথে মানুষই তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয়। পথের দৃশ্যাবলীর মধ্যে তারা সবচেয়ে আকৃষ্ট হয় মানুষের নানান চেহারা, অভিব্যক্তি ও কার্যাবলীতে। মূলত এমন আকর্ষন, বা আগ্রহের জায়গা থেকেই আমার ভালো লাগে - পথের মানুষদের প্রতিকৃতি ক্যামেরাবন্দী করতে, ক্ষেত্র বিশেষে কারো কারো জীবনের গল্প জানতে। আর জানেনই তো, আমার দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বৈচিত্র সারা দুনিয়ার কাছেই এক বিষ্ময়। বিষ্মিত আমিও। প্রতিদিনই অজস্র নতুন গল্পের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি - নতুন পথে, নতুন মানুষদের সাথে। এই দেখার বা জানার কতটুকু আর দেখিয়ে বা জানিয়ে যাওয়া যায়। তবু কিছু ছবি, গল্প থেকে যাক - সময়ের ভাঁজে।




[Those who try to read people like books, finds people on the way most magnetic. Different faces, expressions and activities of people seem most attractive to them among all the views around the street. Actually because of this admiration or interest, I like to - capture the portraits of persons I meet on my way. Sometimes I like to know the stories of their life. And you know, all the people around the globe are amazed to the population density and variety issue of this country. And I am amazed too while going through numerous stories everyday - on a new way, with new faces. How much of these experiences of seeing and knowing can be shared? Still let some pictures, some stories persist - in the folds of time.]

ক্লিক / Click || পুরো সংকলন / Full Album

০৮ অক্টোবর ২০১৫

ফেরে নাই অভিজিৎ দাস

হারানোর আগে এক রাতে ...
‘বন্ধু –
আবারও এসেছে বসন্ত
ফেরা হয় নাই ঘরে-
ভাঙা পথের রাঙা ধুলো
পদচিহ্নের ভারে-
কাঁপিয়া উঠিছে মন আমার
মন আমার... মন আমার..
থরে থরে ...
ফেরা হয় নাই ঘরে’

- গানটি গাইতে গেলেই খুব চেনা এক অসহনীয় অনুভূতি ভিতর থেকে উঠে এসে গলা চেপে ধরে। অথচ আমার বার বার মনে হয় গলা চেপে ধরছেন খোদ স্রষ্টা, মানে যিনি এ গানের গীতিকার ও সুরকার। তবুও গোঙানোর মতো করে গাইতে গাইতে ভাবি – তার ঘরে ফেরা হবে কবে?
০৮ অক্টোবর, ২০১৪ খ্রি.। খুব ভোরে, সম্ভবত ছয়টা বা সাড়ে ছয়টার দিকে সহোদর (ছোট ভাই) বিশ্বজিৎ দাসের শ্যামলীর বাসা থেকে বেড়িয়ে যান বাংলাদেশের তরুণ কবি ও গণসঙ্গীত শিল্পী অভিজিৎ দাস। এরপর থেকেই তিনি লাপাত্তা। দুই বাংলাতেই তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন বন্ধু, স্বজনরা। খোঁজার কথা জানিয়েছিলো পুলিশও। কিন্ত হদিস মেলেনি। বস্তুত গত বছরের ৭ অক্টোবরের পরই তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি। এমনকী ফেসবুকেও কোনো কার্যক্রম নেই তার। উধাও হওয়ার আগের রাতে ভাইয়ের পাশাপাশি বড় বোন চৈতালী দাসের সাথেও বেশ ঝগড়া হয়েছিলো অভিজিৎ’র। তাই পরদিন সকাল থেকেই অভিমানী ভাইকে খোঁজা শুরু করেন তারা। কিন্তু এক দিন, দুই দিন করে হপ্তা, মাস পেরিয়ে প্রায় বছর চলে গেলেও তার খোঁজ মেলেনি বরিশালে বেড়ে ওঠা এ কবির।
অভিজিৎ দাস নিরুদ্দেশ হওয়ার পরপরই ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করা হয়। পুলিশও ঘটনাটি দ্রুত আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। এ কবিকে খোঁজার জন্য তৎপর হয় তারা। তিন দিন পর, অর্থাৎ ২১ অক্টোবর অভিজিৎ দাসের পরিবারকে জানানো হয় দেশের সকল থানায় তার ছবি পাঠানো হয়েছে। এরপর পেরিয়ে গেছে মাসের পর মাস। আজও দাসের কোনো সন্ধান মেলেনি।

নিরুদ্দেশ হওয়ার আগের রাতে ভাইয়ের সাথে অভিজিৎ’র তর্ক হয়েছে মূলত তার দীর্ঘদিনের বোহেমিয়ান জীবনযাপন নিয়ে। মুঠোফোনে তীব্র বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে বোনের সাথেও। কারণ বোন তাকে বলেছিলেন, চুল-দাঁড়ি কেটে ভদ্রস্থ হতে। কিন্তু অভিজিৎ তার স্বকীয়তা ভাঙতে রাজি নন। তিনি ক্ষেপে গিয়েছেন। চিল্লাপাল্লা করেছেন। সেদিনের কথা বলতে বলতে বিশ্বজিৎ জানিয়েছিলেন, এর আগে দাদাকে অতটা বিক্ষিপ্ত হতে দেখেননি কখনো। এর আগে প্রায়ই তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার কথাও বলতেন । যে কারণে খবর দেয়া হয়েছে ওপার বাংলায়ও। বলা হয়েছে সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে। সেখানেও কেউ অভিজিৎ’র কোনো খোঁজ পাননি। সিনিয়র, জুনিয়র বা সমবয়সী বন্ধু, দূরের - কাছের স্বজন; কেউ না। তার আরেক ঘনিষ্ট বন্ধু বলেন, ‘কোলকাতায় যাওয়ার জন্য নতুন করে পাসপোর্ট করতে তিনি ক’দিন বরিশালে দৌঁড়ঝাপও করে ছিলেন। পরে অবশ্য আর পাসপোর্টটি করতে পারেন নাই।’

গত বইমেলা চলাকালে একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা ভেবেছিলেন বিশ্বজিৎ এবং আরো কয়েকজন। তা’ও পরে আর হয়নি। অভিজিৎ’র নিখোঁজ হওয়াটা যে নেহাতই কোনো বাজে রসিকতা নয়, বরং যথেষ্ট শঙ্কা জাগানিয়া তা প্রথম টের পেয়েছিলাম চৈতালীদির ফোন পেয়ে। পরে একই শঙ্কা টের পেয়েছি তার আরো অনেক শুভাকাঙ্খীর কণ্ঠ বা দৃষ্টিতে। শঙ্কিত সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের চায়ের দোকানদার দুলালও। রাতের পর রাত এই দুলালের দোকানেও কাটিয়েছেন কবি। ছবির হাট সংলগ্ন ওই এলাকাতেই আ্ড্ডা দিতেন তিনি ও তার বন্ধুরা। দুলালসহ ওখানকার আরো অনেকেই অবশ্য দাবি করেছেন, নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে অভিজিৎ প্রায়ই দুই-তিন মাসের জন্য উধাও হওয়ার কথা বলতেন। কিন্তু তিনি সত্যিই যে উধাও হয়ে যাবেন, এটা তারা কেউ আন্দাজও করতে পারেননি।
অভিজিৎ কি তবে তার প্রিয় অগ্রজ বিষ্ণু বিশ্বাসের মতোই স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করলেন? এম্নিতেই বিষ্ণুকে প্রচণ্ড পছন্দ করেন তিনি। তার দুটি কবিতায় সুরও দিয়েছেন। আর বিষ্ণুর মতো তিনিও ডোবেন আজব হ্যালুসিনেশনে। কাছের মানুষেরা তার ভীতিবিহবলতার মুখোমুখি হয়েছে বহুবার। ১৯৬২’র ২৯ মে ঝিনাইদহের বিষয়খালিতে জন্মানো বিষ্ণুও হ্যালুসিনেশনে ভীতচকিত হতেন। তিনি দেখতেন একটা সাদা গাড়ী অথবা ছুরি হাতে কেউ একজন তাকে তাড়া করে ফিরছে। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে আরো জানিয়ে রাখি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ করে ৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসেছিলেন বিষ্ণু। কিছুটা বাউন্ডুলে হলেও তার লেখালেখি, আড্ডা - সবই চলছিলো স্বাভাবিক। ছন্দপতন ঘটলো ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনায়। সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা প্রসূত হিংস্রতা কবিকে বিপর্যস্ত করে মারাত্মকভাবে। করে তোলে আতঙ্কগ্রস্ত। এই আতঙ্ক নিয়েই ১৯৯৩ সালে তিনি উধাও হন। এর প্রায় ১৮ বছর পর পশ্চিমবঙ্গে তার সন্ধান মেলে।
কয়েক বছর আগে অভিজিৎ জানিয়েছিলেন, বরিশালের জাগুয়া গ্রামের যে জমিতে তাদের আদি ভিটা ছিলো তা দখল করে সেখানে ক্লিনিক তৈরী করছেন এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। ভেঙে ফেলা হয়েছে তাদের পুরানো বাড়ি-ঘর, পূর্বপুরুষদের সমাধি। কোনো ভাবে এটা ঠেকাতে না পারার কারণে প্রচণ্ড হতাশ ছিলেন কবি। যদিও তার জ্ঞাতিদের কয়েকজন ক্ষতিপূরন বাবদ কিছু নগদার্থও পেয়েছেন। বয়সে খানিকটা বড় হলেও অভিজিৎ দাসের সাথে আমার অন্তরঙ্গতায় কোনো ঘাটতি ছিলো না সম্ভবত। যে কারণে তার নিপাট নির্লিপ্ত অভিমানের সাথেও আমি পরিচিত। আর এ কারণেই হয়ত ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, অভিমানী কবিকে লাপাত্তা হতে বাধ্য করিনি’তো আমরা; মানে পুঁজিবাদী চমকে মোহাবিষ্ট স্বজন, বন্ধু আর সমাজ? বা সেলফিজমের যমানাই গুম করেনি তো তাকে? নানা শঙ্কা উঁকি দেয় মনে।

এত শঙ্কার মাঝে দাঁড়িয়েও কেন যেন মনে হচ্ছে, শিগগিরই ফিরে আসবেন নিগ্রো পরীর হাতে কামরাঙা কেমন সবুজ, ভাঙা আয়নার প্রতিবিম্বগণ, মাটির চামচ মুখে, করপল্লবসঙ্গিনী এবং সারাটা আঁধার বেড়াবো মাতাল কুসুম বনে বনে -এর কবি। সাথে থাকবে তার নতুন কাব্যগ্রন্থ বা কোনো মহাকাব্যের পাণ্ডুলিপি। শূন্য দশকের কবিদের নিয়ে এক আলোচনায় পড়েছিলাম – “কবি নামের সঙ্গে নান্দনিক হতাশার যোগসূত্রতা সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই। পৃথিবীর তাবৎ কবি-শিল্পীর বহু মহিমান্বিত সৃষ্টির জন্য নান্দনিক হতাশার রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। বরং বলা চলে, কবিদের সত্ত্বার ভেতর এই নান্দনিক নামক জিনিসটি না থাকলে শিল্পের অনেক কিছুরই জন্ম হতো না। কবিতা বঞ্চিত হতো বহু বিস্ময়কর সৃষ্টি ও সৌন্দর্য থেকে। ঘটনাটা ঘটেছে কবি অভিজিৎ দাসের বেলাতেও। পৃথিবীর মহৎ শিল্পকর্মে এই সহজাত প্রক্রিয়া লক্ষ্য করি বেশ। অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের যে সংবেদন তার প্রতিটি মুহুর্তের অধিবিদ্যাকে কবি অনুভব করেন অতিসংবেদনশীলতা। যারা হতাশায় তাড়িত হয় তারা আসলে জীবনের পক্ষে যায়না। তারা আসলে এই বর্তমান হাইড্রোলিক হর্ণ সংবলিত জীবনধারাকে অস্বীকার করে এবং কাঙ্খিত, স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী স্রোতধারাময় জীবনের অপেক্ষায় থাকে। তাদের হতাশা আসলে এক নীরব প্রতিবাদ-এক নৈঃশব্দিক কাতরতার দ্বারা তারা একে একে প্রকাশ করে যায় নিজেকে। একটি কাঙ্খিত জীবনের জন্যে একটি কাম্য জীবনের জন্য তারা নিজেকে ধ্বংস করে যায়। অতএব লেখক হিসেবে তার এই cosmic pathos - আমরা বুঝি। কবি অভিজিৎ দাস-এর হৃদয় সম্ভবত জীর্ণবস্ত্রের মতো সুঁই হয়ে এ ফোঁড় ও ফোঁড় তোলে। তার আত্মপক্ষীয় লেখার মধ্যে সমুদ্র সমান অসন্তোষ আগ্নেয় উষ্ণতায় বিধৃত। সুষ্ঠু ও সুস্থ আত্মপ্রকাশের অক্ষমতা সম্পর্কে সচেনতা এবং ভয়াবহ অতৃপ্তি এর পরতে পরতে। এই গহীন অতৃপ্তি মানসিক যন্ত্রনা তার সৃষ্টিশীল নন্দন-মানসকে কুঁরে কুঁরে খায়। অতৃপ্তি অসন্তুষ্টি, নিরন্তর পরিবর্তনমানতা শিল্পসৃষ্টির ক্ষেত্রে উচ্চতর শুদ্ধির কাছে পৌঁছে দেয়। অনেক সময় স্রষ্টার অন্তরকে অক্টোপাশী প্রজননী-বেদনা ফালাফালা করে। তার অভ্যন্তরে সৃষ্টি অগ্নি আলোকিত করে। যে নিজের লাল রক্তকে কালো কালিতে রুপান্তরিত করে সেই তো কবি। আর অভিজিৎ সেই অস্থিরতার সংলাপে অম্লমধু ধারণ করে সেই পথটিকেই বেছে নিয়ে হাঁটছেন। কেননা তিনি রক্ত-মাংসের কবি।”

২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বাবা এবং তার আগে ২০০৭ সালের ১৬ মে মাকে হারান কবি অভিজিৎ । অবশ্য তাদের মৃত্যুর অনেক আগেই তিনি ভালোবেসে ফেলেছিলেন কাব্যিক উদাসীনতাকে। সংসারের দিকে তার খেয়াল ছিলো না কোনো। তবে জ্ঞাতসারে কখনো কারো ক্ষতির কারণ হননি আমাদের এই আত্মভোলা বন্ধু । তাই বিশ্বাস করি, তারও ক্ষতির কারণ হবেন না কেউ। যেখানেই আছেন, ভালো আছেন – সুস্থ আছেন কবি। যদিও অযন্ত-অবহেলায় তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব বেশী ভালো নেই জানি। তবুও আশা করতে দোষ কি?

নিখোঁজ হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় কবি অভিজিৎ’র নিয়মিত আয়ের কোনো সংস্থান ছিলো না। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিলো দৈনিক আমাদের সময়। পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে শিল্পপতি নূর আলী ও সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খানের দ্বন্দ্ব চলাকালে ছাঁটাই হওয়া কর্মিদের মধ্যে ছিলেন কবিও। এরপর আর কোথাও কাজ করেননি তিনি। তবে কর্মহীন ছিলেন না কখনো। কবি বা যন্ত্রী বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন সারাদিন। আর যেখানেই নিপীরনের খবর পেয়েছেন, ছুটে গিয়েছেন। খোলা গলায় গান ধরেছেন শোষিতদের পক্ষে - ‘দুধ ভাত শুধু তোমাদের - আর আমরা কেবলই - পাথর চিবুতে বাধ্য’। শোষকদের বিরুদ্ধে গানই তার শ্লোগান। এমন অজস্র গানের স্রষ্টা তিনি। কয়েক বছর ধরে ছবি আঁকার ভুতটাও মাথায় চেপেছিলো তার । এঁকেছেন এবং হারিয়েছেন অজস্র ছবি।
অভিজিৎ বলেছিলেন, প্রায় দেড় দশক আগে বরিশালের দৈনিক প্রবাসীতে তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ওস্তাদ ছিলেন সাংবাদিক শওকত মিল্টন। এছাড়াও যদ্দুর জানি অভি বরিশালের দৈনিক আজকের বার্তা, ঢাকার দৈনিক বাংলাদেশ সময়, আর্ট ম্যাগাজিন শিল্পরূপসহ আরো অগণিত পত্রিকায় কাজ করেছেন। বেসরকারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকাপন ইনিস্টিটিউট (আইআরআই) আর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সাথেও ছিলেন বেশ দীর্ঘ সময়। ধ্রুবতারা, শূন্য মাতাল, কালনেত্র, কাঠবিড়ালীসহ আরো অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনও বেরিয়েছে তার হাত দিয়ে।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা অর্ধদিবস হরতালকে সমর্থন জানাতে গিয়ে ২০১১ সালের জুলাইয়ে অভিজিৎ গ্রেফতারও হয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থানে তিনি লাঠিচার্জ ও ধাওয়ার সম্মুখীনও হয়েছেন বহুবার। তবুও রাজপথ ছাড়েননি কখনো। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত - পথেই কাটিয়ে দিয়েছেন। হয়ত আজও তিনি কোথাও কোনো পথেই আছেন; গাইছেন – ‘পথে পথেই পেরিয়ে যাচ্ছি ভোর / পথে পথে পেরিয়ে আসছি রাত / পথেই হারিয়ে ফেলেছি অচেনা মুখ / তোমার সঙ্গে - পথেই সাক্ষাত’।

পুরানো পোস্টঃ অভিজিৎ দাস নিরুদ্দেশ, না গুম?

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পত্রিকার চাহিদা কমেনি!

ফার্মগেট, আগস্ট ২০১৫
টিভি, অনলাইনের দর্শক, পাঠক দিন দিনই বাড়ছে; আর ক্রমশ কমছে কাগজে ছাপানো দৈনিক পত্রিকার আকার ও সার্কুলেশন। তবে ঢাকার পথবাসী মানুষের কাছে দৈনিক পত্রিকার চাহিদা আগের মতোই আছে। আজও ভরদুপুরে তারা নিশ্চিন্তে ঘুমায়, ভোরের পাতায়।

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ওই বেতনের কেতন উড়ে

মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি রুটের
একটি লোকাল বাসের জানালায় সাঁটানো নোটিশ
সরকারি চাকুরেদের বেতন দ্বিগুণ হওয়ার এক দিন না যেতেই শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের ওপর রাষ্ট্রীয়বাহীনির গুলি বর্ষণের ঘটনা দুটি নোটিশের কথা মনে করিয়ে দিলো। রাজধানীর মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি রুটে চলাচলকারী একটি লোকাল বাসের জানালায় সাঁটানো ওই নোটিশদ্বয়ের প্রথমটিতে লেখা - ‘হাফ পাশ নেই’। অন্যটিতে - ‘সামনের চারটি সিট সিনিয়র কর্মকর্তা/শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত’। এখানে স্পষ্ট যে, সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সিনিয়রদের প্রতি ওই বাস মালিক যতটা সদয়, জুনিয়রদের প্রতি ততটা নন। কারণ ‘হাফ পাশ’ নেয়ার বা অর্ধেক ভাড়া দেয়ার বিষয়টি আসে মূলত শিশু ও শিক্ষার্থীদের বেলায়। বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রও আগামী প্রজন্মের সাথে ঠিক ওই বাস মালিকের মতোই ব্যবহার করছে। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতের বরাদ্দও আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছে। এ বছরে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা করা হয়েছে জনপ্রশাসন খাতে।
দেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য; কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷” এছাড়া ১৫ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের শিক্ষা নিশ্চিত করা ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব’ বলেও সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতনের সঙ্গে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার রামপুরার আফতাবনগর এলাকায় বিক্ষোভ করেন ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা । ওই সময় তাদের ওপরে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারসহ অন্তত ৩০-৫০ জন আহত হন বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। তবে গুলি ছোড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পুলিশ। আন্দোলনরতরা দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। এ ঘটনার মাত্র একদিন আগে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরকারি চাকুরেদের বহুল প্রত্যাশিত নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সর্বোচ্চ গ্রেডে বর্তমানের চেয়ে ৯৫ শতাংশ ও সর্বনিম্ন গ্রেডে শতভাগের বেশি মূল বেতন বাড়ানো হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো গত জুলাই থেকে কার্যকর করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। তবে এখন শুধু বেতন বাড়বে, ভাতা বাড়বে আগামী বছরের জুলাই থেকে। বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেয়া হবে। বৈশাখে নববর্ষের বোনাসও পাবেন তারা।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সরকারি চাকুরেদের মহার্ঘ ভাতাও (ডিএ) গতকাল (বুধবার) আরো ছয় শতাংশ বেড়েছে । কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১১৩ শতাংশ থেকে ওই ভাতা বাড়িয়ে ১১৯ শতাংশ করার বিষয়টি অনুমোদন করেছে। দেশটির প্রায় এক কোটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগী এই সুবিধা পাবেন। এ খবরটা পড়ে প্রথমেই স্মরণে এলো পুনের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া বা ‘এফটিআইআই’ - এর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা। সেখানকার চেয়ারম্যান পদে রাষ্ট্রটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এর সদস্য গজেন্দ্র চৌহানকে নিয়োগের প্রতিবাদে এবং তার অপসারণ দাবিতে গত ১২ জুন থেকে থেকে তারা একটানা আন্দোলন করছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজেপি সদস্যকে বসিয়ে এর গেরুয়াকরণ করা হচ্ছে। অপরপক্ষ আবার আন্দোলকারীদের ‘হিন্দু বিরোধী’ বলছে। সেখানেও চলছে দমন, গ্রেফতার। অতএব নিজস্ব চাকরদের বেতন বাড়ানোর পর সে দেশের সরকারও যে আন্দোলকারীদের উপর চড়াও হতে পারে, তেমন শঙ্কাতো জাগতেই পারে।
যাক সে কথা, একটু দেশের দিকেই নজর দেই। এখানে পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এই রাষ্ট্রের সাথে ছাত্র আর ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্ক বেশ গভীর। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৯ এর পটভূমিতে ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের চিন্তায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাজনীতিবিদদের চেয়ে কম ছিলো না।
ওই সময় শিক্ষার্থীরা একই ধারার বৈষম্যহীন অবৈতনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার জন্য লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী কোনো সরকারই ওই দাবি আর আমলে নেয়নি। ১৯৯০ এর পরে অবাধ মুক্তবাজার অর্থনীতির হাত ধরে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের পথ প্রশস্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এই কৌশলপত্রের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে।
বিগত ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র অর্থায়নে এবং তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ওই কৌশলপত্র প্রণয়ন করে যা মোট চারটি স্তরে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়। স্তরগুলো হচ্ছে প্রাথমিক পর্ব- ২০০৬-০৭, স্বল্পমেয়াদি ২০০৮-১৩, মধ্যমেয়াদি ২০১৪-১৯ এবং দীর্ঘমেয়াদি ২০২০-২৬। এই ধাপে ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মুলে ছিল ছাত্র আন্দোলনের ভয়। কৌশলপত্র প্রণয়নকারীরা বেশ বুঝেছিলেন যে হটাত করে সমস্ত জনবিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি ও বেসরকারিকরণ করলে তীব্র আন্দোলন হতে পারে। তাই তারা কৌশলী হয়েছেন।
তবে আশার কথা হচ্ছে, বিতর্কিত ওই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের শুরু থেকেই বেশ ঝক্কি পোহাচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র। তাদের কৌশল কাজে লাগেনি। ঠিকই জেগে উঠেছে শিক্ষার্থী সমাজ। গড়ে তুলেছে একের পর এক আন্দোলন। যারই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ রাজপথে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও বিরুদ্ধে পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র আন্দোলন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে, এটাই কাম্য।

০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

হেফাজতের পথে ওলামা লীগ !

হেফাজতে ইসলামের পদাঙ্ক অনুসরন করছে আওয়ামী ওলামা লীগ। তারাও এবার ভারতীয় অভিনেত্রী আগমন প্রতিহত করতে বিমানবন্দর ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। তাদের কোপানলে পরেছেন বাঙালী অভিনেত্রী পাওলী দাম। নির্মাণাধীন একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য আগামী বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর ) থেকে টানা ১৪ দিন তার এ দেশে অবস্থানের কথা ছিলো।
একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্যে পাওলী
গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে অভিনয় শিল্পী পাওলি দামকে ‘বেহায়া’ আখ্যা দিয়ে গতকাল (৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেছেন - ‘পীর আউলিয়ার পূণ্যভূমি স্বাধীন বাংলাদেশে পাওলি দামের সফর যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে। স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে পাওলি দামের সফর অনভিপ্রেত।’ সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে ভারতীয় অভিনেত্রী সানি লিওনকে বাংলাদেশে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো হেফাজতে ইসলাম। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিতব্য সানির সফর ঠেকাতে রক্ত দিতে প্রস্তত আছে জানিয়ে গত মাসে (২১ আগস্ট) তারাও বলেছে, প্রয়োজনে বিমানবন্দর আক্রমন করা হবে। আলোচিত এই সংগঠনটির নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির, শহরের ডিআইটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়াল এক জুমার নামাজের খুতবার আগে বয়ানে এ হুমকি দিয়ে বলেছিলেন - ‘বাংলার জমিনে কোনো নর্তকীকে বেলাল্লাপনা করতে দেয়া হবে না।’
গত ক’দিন ধরে অবশ্য ওলামা লীগও বেশ আলোচনায় আছে। এর আগে, সম্ভবত গত পরশু (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন করে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে শহীদ ও শেষে রহমতুল্লাহি আলাইহি যোগ করার দাবি তুলেছে। সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ আখতার হুসাইন বুখারী এ দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘জাতির জনকের নামের আগে বঙ্গবন্ধু ব্যবহার করা হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে উনার নামের আগে জাতীয়ভাবে শহীদ শব্দ ব্যবহার করা হয় না। নামের শেষে রহমতুল্লাহি আলাইহি বলা হয় না। অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর নামের আগে জাতীয়ভাবে শহীদ ও নামের শেষে রহমতুল্লাহি আলাইহি বলতে হবে। একইসঙ্গে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবসের বদলে শাহাদাত দিবস ঘোষণা করতে হবে।’
মানববন্ধনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাফর ইকবালের বহিষ্কার চায় ওলামা লীগ। একইসঙ্গে বর্তমানে পাঠ্যপুস্তকে কট্টর ইসলামবিরোধী হিন্দু ও নাস্তিকদের লেখাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে তারা। এছাড়া তখন সানি লিওন আর পাওলী দামকে ‘পতিতা’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবিও জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, সানি লিওন ও পাওলী দাম ইতিপূর্বেও বাংলাদেশে এলেও তখন তাদের এ জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।

পূর্বের পোস্টঃ সানিকে ঠেকাবে হেফাজত !

২৫ আগস্ট ২০১৫

মায়ের জন্য কবি হেলাল

ছবিটি মৃত্যুর বছর খানেক আগে, ২০০৬’র মার্চে তোলা।
ঘটনাটি ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের। নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক মনে পরছে না। জুন বা জুলাইয়ের কোনো এক সকালে বাসায় এসে ঘুম ভাঙিয়ে ঔষধ কোম্পানীর প্যাডের পৃষ্ঠায় লেখা একটি কবিতা আমার হাতে গুজে দিয়েছিলেন এক কবি। শৈশব থেকে চেনা এ মানুষটির এই সত্বার সাথেও সেদিনই প্রথম পরিচয় হয় আমার। এর আগে কখনো কল্পনায়ও আসেনি যে তিনি কখনো কবিতা লিখতে পারেন । জানালেন মায়ের জন্য লিখেছেন। কিন্তু মা বাসায় নেই, তাই তাকে শোনানো হয়নি। লেখাটি চেয়ে নিয়ে নিজেই একবার পড়ে শুনিয়ে আবার আমার হাতে দিলেন। এরপর দ্রুত বেড়িয়ে যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলেন - ‘এটা থাকুক তোমার কাছে।’ তিনি চলে যাওয়ার পর লেখাটি নিজে একবার পড়ে নিয়ে ডায়েরীর মধ্যে রেখে আমি আবারো ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
তখনও হিজরত করিনি। মাঝে মাঝে ঢাকায় এসে কাজ করলেও বেশীরভাগ সময় বরিশালেই থাকছি। তবে তখন চূড়ান্তভাবে ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। সেদিন সন্ধ্যার কিছু সময় বাদে কি এক কাজে বন্ধু অনুপ, মানে মার্শেল অনুপ গুদাকে নিয়ে বাসায় ফিরতেই বাবার কাছে জানলাম অদ্য প্রতুষ্যে আবিষ্কৃত সেই কবি সিলিঙ ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পরেছেন। তার কক্ষের দরজা ভাঙার চেষ্টা চলছে। শুনেই ছুটলাম। অনুপও ছুটলো সাথে। আমার বাসা থেকে ঘটনাস্থল ছিলো মাত্র তিন মিনিটের এক ছুটের দুরত্বে। গিয়ে দেখি কেবলই দরজা ভাঙা হয়েছে। কবি ফ্যানের সাথে নয়, সিলিঙে লাগানো আঙটার সাথে লাগানো ফাঁসে ঝুলছেন। সম্ভবত মৃত্যু সুনিশ্চিত করতে নিজেই ফ্যানটা খুলে পাশের বিছানার উপরে রেখে নিয়েছেন। পশ্চিম মুখো নিথর দেহ। হাত দুটো এহরাম বাঁধার মতো করে পরস্পরকে আলিঙ্গণ করে আছে। অবশেষে পুলিশ এসে তার ঝুলন্ত দেহ নামানোর উদ্যোগ নেয়। অনেকের মতো আমি আর অনুপও হাত লাগাই। মাথার মধ্যে তখন সকালে পড়া ও শোনা কবিতার লাইনগুলো স্মরণের প্রচণ্ড চেষ্টা চলছে। কিন্তু নাম ছাড়া একটি লাইনও মনে আসেনি কিছুতে। প্রায় আট বছর পর সেই লেখাটি কোনো রূপ সংশোধন বা পরিমার্জন ছাড়াই আজ হুবুহু তুলে দিলাম এখানে।
মা
গাজী মুশফিকুর রহমান (হেলাল)

বেঁচে থেকেও পাশে নেই আজ তার মাতা
       বুকে তার পাহাড় সমান ব্যাথা
চারিদিকে কেন এত জ্বালা?
       কেউ বুঝবে না কারো এই ব্যাথা
করো না কেউ মাকে অবহেলা
       যখন যাবে ছেড়ে মা
এই পৃথিবীর সমতূল্যেও ফিরে পারে না আর
       মা নেই যার কত ব্যাথা তার
আজ বহুদূরে থেকে বুঝি মায়ের সেই
অকৃত্রিম, নিঃস্বার্থ ভালবাসার কথা
তিনি এই জগৎ সংসারের সকল সন্তানদের
জন্য দ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা, আল্লাহর পড়ে
নেই তাঁর কোন তূলনা।
সেদিন লাশ নামিয়ে বাইরে বের হতেই দেখি আমার এক সিনিয়র সহকর্মি, মানে আজকের পরিবর্তন পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার এসএম সোহাগ এসে হাজির। তার সাথে আলাপ করতে করতে ওই বাসা থেকে অনুপকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখি দাওয়ায় উদাস হয়ে বসে আছেন সদ্য আত্মহত্যাকারী কবি হেলালের পিতা। ওই সময় তার পাশে কাকে যেন পেয়ে জিজ্ঞাসা করে জানলাম কবির মা নিজের মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। সন্তানের মৃত্যুর এই খবর এখনো দেয়া হয়নি তাকে।
বেশ প্রগাঢ় পোক্ত বন্ধুত্ব ছিলো প্রয়াত মোহম্মদ আব্দুস সামাদ গাজী আর এবিএম নূরুল হক শরীফের। বরিশাল শহরের কলেজ পাড়ার তালভিটা প্রথম ও দ্বিতীয় গলির বাসিন্দা ছিলেন এ দুজন। প্রথম গলির গাজী ভিলা আর দ্বিতীয় গলির শরীফ কটেজ তাদের স্মৃতিবহন করে আজও দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে আছেন তাদের উত্তরসূরীরা। পরম্পরাসূত্রে পাওয়া পারিবারিক বন্ধুত্বও সম্ভবত টিকিয়ে রেখেছেন তারা। গাজী দাদার সহধর্মীনিও এখনো বেঁচে আছেন। মূলত আজ হঠাৎ তার কথা মনে পরতেিই তড়িঘড়ি করে  এ লেখাটি লিখতে বসেছি। কেন জানি মনে হলো তার অন্তত জানা দরকার যে তাকে ভালোবেসে এমন একজন মানুষ কবিতাও লিখেছেন, যাকে তিনিই জন্ম দিয়েছিলেন। সম্ভবত এটি ছিলো তার সে সন্তানের লেখা প্রথম ও শেষ কবিতা। কিঙবা হতে পারে এটি ছিলো এক অভিমানী পুত্রের কাব্যিক সুইসাইড নোট।
সামাদ গাজীর কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন হেলাল, আর আমি হক শরীফের জেষ্ঠ্য নাতি। হেলাল কাকা বয়সে আমার চেয়ে ছয়-সাত বছরের বড় ছিলেন। তবুও শৈশবের কিছুকালে তিনিই ছিলেন আমার প্রধানমত বন্ধু। তালভিটা প্রথম গলির পূর্বপাশেই জেল বাগান। এক সময় বরিশাল কারাগারের কয়েদীদের দিয়ে এখানে নিয়মিত কৃষি কাজ করানো হতো। শৈশবে এই বাগানে গরু চড়াতে গিয়েই হেলাল কাকার সাথে আমার মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। দুর্দান্ত ডানপিটে এই কাকাই প্রথম ছিপ আর ছোট জাল, এমনকী কোনো কিছু ছাড়া স্রেফ হাত দিয়ে মাছ ধরার কৌশলও শিখিয়েছিলেন আমায়। শুকনো পাতা দিয়ে বিড়ি বানিয়ে খাওয়াসহ শিখেছিলাম আরো কত কী! তখন দেখেই দেখতাম হেলাল মা অন্তঃপ্রাণ। আর বাবার সাথে তার খালি খিটমিট। পরবর্তীতে তিনি অনেক ঘটনাবহুল সময় পার করেছেন।
বরিশালের শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়েছিলেন। তারপর নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী সংগঠন হিযবুত তাওহীদের আঞ্চলিক নেতা। আবার মৃত্যুর আগে আগে সব বাদ দিয়ে মশগুল হয়েছিলেন স্রেফ আল্লাহর ইবাদতে। তালভিটা জামে মসজিদের মুয়াজ্জীন হওয়ার বাসনাও প্রকাশ করেছিলেন। আসলে এত সংক্ষেপে লিখে হেলালের মাজেজা বোঝানো কঠিন। তাকে নিয়ে একটি আস্ত উপন্যাসও লিখে ফেলা যাবে অনায়াসে।
হেলাল কাকার মৃত্যুর এক বছর না ঘুরতে প্রায় একই কায়দায় সিলিঙের সাথে ঝুলে দেহত্যাগ করেছিলো আমার সেই বন্ধু, অনুপ। তার বছর দুয়েকের মধ্যে ক্যান্সারে মারা যান সেই সহকর্মি এসএম সোহাগও। তারা, মানে মৃতরা এ জাতীয় ইহলৌকিক লেখা পড়তে পারেন কিনা জানতে পারিনি আজও।  পড়তে পারুক বা না পারুক, তারা যেখানে আছেন - ভালো থাকুক; এই যা প্রত্যাশা।

১২ আগস্ট ২০১৫

সময় হুমকী আর হত্যালীলার

© eon's photography / pap
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের পাশে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ঠিক পরদিন, ঘটনাস্থলের অদূরবর্তী ফুটপাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে গড়ে ওঠা ভাসমান বইয়ের দোকানের ছবি এটি। পাশাপাশি সাঁড়ির মুকুটরূপী এই বই তিনটি চিত্তাকর্ষক হোক বা না হোক, তাদের এ সহাবস্থানকে অর্থপূর্ণ ভাবাই যেতে পারে। আমার বিশ্বাসী মন অন্তত তেমনটাই ভাবে।  সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ছবিটি পুনরায় স্মরণ করালো। এমনিতেই আগস্ট এই পিতৃহন্তারক জাতির শোকের মাস। তার ওপরে চারিদিকে ধর্মের নামে যে হুমকী-ধামকি আর হত্যালীলা শুরু হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষ যে খুব বেশী স্বস্তিতে নেই তা বুঝতে মহাবিজ্ঞ হওয়ার কোনো দরকার নেই বোধকরি।
বরিশালের খবরটিও অনেকে জানেন নিশ্চয়ই। ‘জীবনানন্দ’ পত্রিকার সম্পাদক কবি হেনরি স্বপন, লিটল ম্যাগাজিন আরণ্যক, ক্যাম্পে ও অারক - এর সম্পাদক কবি তুহিন দাস, অগ্নিযুগ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদি হাসান এবং গনজাগরন মঞ্চ, বরিশালের মুখপাত্র নজরুল বিশ্বাসকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। এর মধ্যে সৈয়দ মেহেদি ছাড়া বাকি তিন ব্যক্তিই আমার সাবেক সহকর্মী। প্রিতম চৌধুরী আর চারু তুহিনের ব্যাপারে অবশ্য কোনো ধারনাই নেই আমার।
ইসলাম ধর্ম কায়েমের নামে "আনসার বিডি" - নামধারী যে গোষ্ঠী ওই ছয় জনকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছে - তাদের কাছে জানতে চাই, পবিত্র কোরআনের কোন আয়াতের বলে আপনারা তাদের ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে কতলের মিশনে নেমেছেন? আমি শুধু সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যেখানে পরম করুণাময় আল্লাহ বলছেন, “নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতিরেকে কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে রক্ষা করল।”

স্রষ্টা আপনাদের শুভ বুদ্ধি দিন, আমিন।

১০ আগস্ট ২০১৫

মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...

আমি ঈয়ন, দাপ্তরিক নাম শরীফ খিয়াম আহমেদ। জন্ম খুলনা হলেও শেকড় ও বেড়ে ওঠা বরিশালে। হিজরত বা কর্মসূত্রে বর্তমান আবাস কোটি মানুষের শহর ঢাকায়। পেশা লেখালেখি, চিত্রগ্রহণ ও মুক্ত সাংবাদিকতা। এর আগে ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি অবধি ‘মেইনস্ট্রিম’ সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলাম। এরই মাঝে ২০০৮ সালে সামহোয়্যার ইন ব্লগ দিয়ে আমি ‘ব্লগিঙ’ শুরু করি। অর্থাৎ স্বাধীন সাংবাদিকতা শুরুর বেশ আগেই ব্যক্তিগত ব্লগগুলোয় আমি বিভিন্ন সংবাদ ও নিজস্ব অভিমত প্রকাশ করে আসছি। পরবর্তীতে স্বাধীন সাংবাদিকতার মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ব্লগকেই বেছে নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৯ জুলাই দিবাগত রাতে আমি অশালীন সংবাদ প্রকাশকারী সাইট নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করি। যার জেরে গত ১০ জুলাই সন্ধ্যায় ‘আধাঘন্টার মধ্যে তোরে খুঁইজা বাইর কইরা মাইরা ফালামু’ – টাইপ অজস্র হুমকী পেতে হয় আমায়।
হুমকীদাতা চটি সংবাদ নির্ভর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। নিজেকে ভারতের কোলকাতা রাজের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ভাগ্নি জামাই পরিচয় দিয়ে তিনি প্রথমত দাবি করেছিলেন, আমি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিতে চেয়েছি। তার অভিযোগ, ব্যক্তিগত ব্লগ প্রেস এন্ড প্লেজারে -‘মাহে রমজানে চটি সাংবাদিকতা’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করে আমি এই চেষ্টা করেছি।
সম্ভবত আমার ফটোগ্রাফীর পেইজ থেকে আমার মোবাইল নম্বর +880 1715 ****** সংগ্রহ করে প্রথমে +8801672 ****** এবং পরে +880 447-800 **** নম্বর দিয়ে তিনি তার অভিযোগ ও হুমকী প্রকাশ করেন। দুপুর থেকে রাত অবধি বেশ কয়েক দফা আলাপের পরও তিনি শান্ত না হওয়ায় একসময়ে আমি লেখাটি মুছে ফেলে তার ক্ষোভ কমানোর চেষ্টা করি।

ওই রাতেই পুরো ঘটনা বর্ণনা করে একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি)’র খসড়া তৈরী করি। কিন্তু সেটি পড়ে নিজেরই মনে হয় লেখার ধরণ বা হুমকীদাতার অতিরঞ্জনে বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে যে, এটির কপি যদি সরকার বিরোধী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে যায় তবে পুরো ঘটনাটি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। এমনকী আমি নিজেও স্রেফ গুটিতে পরিণত হতে পারি। এমন চিন্তা থেকে বিষয়টি কয়েকজন সিনিয়র লেখক, ব্লগার ও সাংবাদিক বন্ধুকে জানিয়ে নীরব হয়ে যাওয়াই স্রেয় মনে করি। তবে এর আগে উল্লেখিত লেখাটি মুছে ফেলার জন্য আমার ব্লগের পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সেখানে আরেকটি লেখা পোষ্ট করি। ‘পাঠক, ক্ষমা করবেন ... ’ - শিরোনামে ১৯ জুলাই প্রকাশিত ওই লেখায় নেপথ্যের কোনো ঘটনা উল্লেখ করা হয়নি। চেপে যাওয়া হয়েছে ওই অনলাইনের নামটিও। তবুও আবার হুমকী পেলাম। এবার কারণ - ব্লগ পাঠকদের কাছে ওই ‘ক্ষমা চাওয়া’।
গুম হওয়া লেখাটির শেয়ার করা সংযোগ
গত ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় সেই পুরানো হুমকীদাতা আমার মোবাইলে আবার ফোন করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি আবার ওই জায়গায় (ব্লগে) দুঃখ প্রকাশ করছেন। আমার ভাবতে ইচ্ছে করছে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আপনি, যে একটা দুঃখ প্রকাশ করলেন। বা আপনার ব্লগটা দেশের নাম্বার ওয়ান ব্লগ, আপনি সব ব্লগের সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু এইটা আসলে আপনি এখন নিজে একটু চিন্তা কইরা দ্যাখেন। আপনি আপনার ওয়েটটা চিন্তা করেন, আপনার ব্লগের মার্কেটিঙটা চিন্তা করেন, আপনার পপুলারিটি চিন্তা করেন। এই সবকিছু নিয়া আপনার যে পোস্টটা, সেটায় কয়টা লাইক, কয়টা কমেন্ট পরছে – সেটাও চিন্তা করেন। এইখানে দুঃখপ্রকাশ কইরা কি হইছে? আপনি কার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন?’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি একটু কষ্ট পাইলাম যে আপনি আবার ওইটা দিছেন। আপনার অনেক বড় ব্লগতো আসলে! আমরাও (*** বার্তা ডটকম) এমন দুঃখ প্রকাশ করি না। আমাগোও মাঝে মধ্যে একটু-আধটু ভুল হয়।’
এর আগে হুমকীদাতা জানান, কোনো একটি গোয়েন্দা সংস্থা তার নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। নির্দেশ পাওয়া মাত্র তারা আমাকে ‘সাইজ’ করে ফেলবে। এছাড়া তিনি আমাকে জামায়াত-শিবিরপন্থী আন্দাজ করে এটাও জানান যে, জামায়াত ও শিবিরের উচ্চমহলের সাথে তার খুবই ভালো যোগাযোগ আছে। তিনি চাইলে তারাই আমাকে একদম ‘ডলা’ দিয়ে দেবে।
১৯৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের দিকে ইঙ্গিত করে তার বক্তব্য- ‘যে কয়জনের ফাঁসি হইছে না, তার মধ্যে একজনের ছেলে আছে আমার বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। ভিতরে আছে এ রকম তিনজনের ছেলেও আমার বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড মানে কি জানেন? ওরা আমার বাড়িতে থাকে, আমার বাড়িতে খায়। আমি ওদের বাড়িতে থাকি, ওর বাড়িতে খাই। এরকম, বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। এমনকী আমি অনেক জায়গায় তাদের মিডিয়াপার্সন হিসাবেও কাজ করি। তাই ওদের নিয়া অনেস্টলি আমি ভয় পাইতেছি না।’ শিবিরের মাসুদ নামের কোনো এক ব্যক্তির সাথেও আমার ব্যাপারে আলাপ হয়েছে বলে তিনি জানান।

পরবর্তীতে এক চিত্রপরিচালকের স্ত্রীকে আমার ‘গডমাদার’ সন্দেহ করার কথাও জানান হুমকীদাতা। ওই পরিচালকের বউ তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে এসেছিলেন, কিন্তু তাকে চাকরি দেয়া হয়নি। এরই জেরে তার নির্দেশেও আমি - হুমকীদাতা এবঙ তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারি। তিনি আরো বলেন, ‘কালের কণ্ঠ পত্রিকার যে কোনো একজন আমাকে বলেছে, আমাকে নিয়ে করতে (লিখতে) তো সাহস পায় না। কারণ আমারে নিয়া করলে (লিখলে) তো জানে বসুন্ধরা গ্রুপের। আইনা যেখানে মাটি ভরাট করতেছে ওইখানে ফালাইয়া ভরাট কইরা দিবো।’
ব্লগিঙের কারণে এর আগেও আমি বহুবার হুমকী পেয়েছি। কখনো ভারতপন্থী দালাল, আবার কখনো পাকিস্তানপন্থী ছাগু আখ্যা দিয়ে আমাকে ভার্চুয়ালি আক্রমণ করা হয়েছে। বাস্তবিক হুমকী পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। অন্যকোনো ব্লগারকেও এভাবে দফায় দফায় ফোন করে হুমকী দেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যে কারণে পূর্বপর্তী (১০ জুলাই সন্ধ্যায় দেয়া) হুমকীর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোও আপনাদের, তথা আমার ব্লগের পাঠকদের জানিয়ে রাখা উচিত বলেই মনে করছি।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ অনলাইনটির সাথে বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী জড়িত জানিয়ে হুমকীদাতা বলেছিলেন- “খোদার কসম তোরে আমি জবই কইরা ফালামু কুত্তার বাচ্চা। এক্কারে জবাই কইরা ফালামু চোদানীর পোলা। তোর বউ, মা, বোন যা আছে তাগো সব ল্যাংটা কইরা ছবি তুইলা দিয়া দিমু খানকির পোলা। তুই চিনস আমারে? তরে এম্নেও ধরুম, অম্নেও ধরুম। তোর নয় বছরের জার্নালিজম গোয়া দিয়া ভইরা দিমু।” তার আগে কথা প্রসঙ্গে তাকে জানিয়েছিলাম আমি প্রায় নয় বছর মেইস্ট্রিম জার্নালিজম, মানে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা করেছি।

হুমকীদাতা আরো বলেছিলেন, “ভাই আমি আপনারে পরিস্কার কইরা কইলাম, খোদার কসম ঢাকা শহরে আপনি যে কোনায় থাকেন কুটি কুটি কুটি কইরা হালামু আমি আপনারে, পিটাইয়া। লোক দিয়া পিটামু না, প্রশাসন দিয়া পিটামু। আপনারে খুঁইজা কালকে সন্ধ্যার মধ্যে আপনারে আমি আমার হাতে লইয়া আমু। কাল ইফতারের আগে আপনি আমার হাতে থাকবেন এইটা আপনারে গ্যারান্টি দিয়া কইলাম।” এর আগে ব্লগের পোস্টটির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনি এটা লিখে প্রশাসনের নজরে চলে আসছেন। কারণ আমি একটা ‘ভাইটাল ইস্যু’ এ দেশে। গাঙ দিয়া ভাইসা আসি নাই। থানা, পুলিশ, মন্ত্রী, মিনিস্টার - সবই লবিঙ করা আছে আমার। আপনার ভিতর কি ভয় ডর নাই? চোখ বন্ধ কইরা একটু চিন্তা করেন তো আপনি একটা কি? কোন হ্যাডমডা?

minar & mandir | Barisal'06
হুমকীদাতা বলেছিলেন, “তোগো মতো বাল ছাড়া পোলাপান আমার কিছু করতে পারবো না খানকির পোলা। তোর চেহারা দেখলেই বোঝা যায় কি কইরা খাইতে পারবি। ফকিন্নির পোলা, বাপে বেঁচত আলু। আইছস ঢাকা শহরে, ধোন খুইলা খিঁচছস, ভাবছস ঢাকার প্রেসিডেন্ট। ফাজিল পোলাপান শালা। পুলিশের মাইর খাইলে কি বাঁচবি? তোর কি জীবন বাঁচব? তোর যা শরীর। চেহারা দেখলেই বোঝা যায় তুই ‘বাবাখোর। কাইলকা ইফতারের আগে আমি তোর সামনে আইতেছি। দেখুম তোর কত হ্যাডম হইছো। তুই কত লিখতে পারস, তোর ধোনে কত কালি হৈছে, আমি দেখুম।” এর আগে তিনি বলেন, “ভাই পাগলেও তো নিজের ভালো বোঝে। এত্ত মরার ইচ্চা থাকে গাড়ির তলে পইরা মইরা যান, ছাদ দিয়া পইড়া মইরা যান, পুলিশের মাইর খাইয়া মরনের দরকারডা কি?”
ক্ষিপ্ত হুমকীদাতা আরো বলেছিলেন, “এ্যাডাল্ট নিউজ তো আরো অনেকে দিতেছে। তাইলে বাইঞ্চোতের বাচ্চা তুই অন্যগুলোর কথা লেখছ নাই ক্যান? খানকির পোলা, *** বার্তা কি তোর মায়েরে চুদছে, না তোর বইনেরে রেপ করছে? তোর সোনা আমি আবার কাটুম। একবার কাটছে তর মন ভরে নাই। তুই আমারে চেনো শুয়োরের বাচ্চা? আরে খানকির পোলা তুই জানস বল্লার চাকায় ঢিল মারলে কি হয়? তুই নিজের পুটকি নিজেই মারছস। খালি *** বার্তা লইয়া নিউজ করছস। তার মানে এটা মার্কেট বুঝতে পারতেছে *** বার্তার লগে নিশ্চয়ই তোর কোনো কাহীনি আছে।” এরপর কি জানি একটা বলতে শুরু করতেই আমায় থামিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আরে ব্যাডা তুই তো জামাতের লোক, খানকির পোলা। তুই আবার কথা কস ব্যাটা, দাদা চোদাস আমারে। তরে সামনে যহন পামু তহন টের পাবি আমি কি জিনিস। তুই ডাইরেক্ট জামাতের লোক ফাজিল। আমি তোরে আধাঘন্টা সময় দিলাম, আধাঘন্টার মধ্যে তোর দোকান যদি আমি খুঁইজা পাই, তোরে আমি মাইরা ফালামু। তোর কোন বাপ আছে তারে লইয়া আইস।
এছাড়া নিজেকে পাশ্ববর্তী দেশের উল্লেখিত নেত্রীর (ভারতের কোলকাতা রাজের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর) নিকট স্বজন দাবি করে ওই হুমকীদাতা আরো যা বলেছেন, তা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে আমার সাহসই হচ্ছে না। কারণ মূলত দুটি।
০১. অনাকাঙ্খিত সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরী হতে পারে।
০২. আমার দেশের সার্বভৌমত্ত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
তবে জেনে রাখুন। দৃঢ় চিত্তে বুক ফুলিয়ে পর্ণোগ্রাফী আইন ভাঙা ওই মানুষটি, অর্থাৎ আমার হুমকীদাতা একজন দেশদ্রোহীও। কেউ চাইলে এর প্রমাণও আমি দিতে পারবো। লাল ফোনে কল আনানোর ক্ষমতাও আছে জানিয়ে তার দম্ভোক্তি কী ছিলো তা আজ না হয় নাই-বা বলি। তবে এখানে আরো কিছু বিষয় জানিয়ে রাখা উচিত।
প্রথম দফায় হুমকী দেয়ার সময়ই হুমকীদাতা বলেছিলেন, ইতিমধ্যেই তিনি আমার বিরুদ্ধে ঢাকার কোনো একটি থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরী) করেছেন। যদিও তিনি নিজে মামলা করার মতো কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। তবু কেন জানি ক্ষুদ্ধ হতে পারছি না। এত গালিগালাজ খেয়েও লোকটার কণ্ঠ শুনে বার বার বেশ করুণাই জেগেছে। কী ধরণের পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বেড়ে উঠলে একটা মানুষের অমন অসুস্থ চটিপন্থী মনন আর ভাষাভঙ্গী গড়ে ওঠে তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়। অবশ্য অবস্থাদৃস্টে এটাও মনে হয়েছিলো যে এই মুহুর্তে আমি ওর বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলেই আমায় হিন্দুবিদ্বেষী ও সরকারবিরোধী তমকা লাগিয়ে জামায়াতপন্থী, জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হতে পারে। আজীবন প্রগতিশীল আর সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলে এখন যদি তাদের বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত হতে হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিই-বা হতে পারে?

সবকিছু মিলিয়ে নিজের ওপরও রাগ লাগছে। এরচেয়ে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ছিলো। বস্তুত তেমন কাজের মধ্যেই ছিলাম। হুট করে ফেসবুক নোটিফিকেশন চেক করত গিয়ে ওই চটিসাইটের নিউজগুলো দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়েছিলো । আসলে গত পহেলা বৈশাখের সেই টিএসসি’র ঘটনার পর থেকে যৌন পীড়নের উৎসাহদানকারী যে কোনো কর্মকাণ্ডই আমার মাথা গরম করেছে। যে কারণে ওই দিনও আমি সামলাতে পারিনি নিজেকে। তার ওপর ওই সময়ে আবার পাকিদের ৭১’র ধর্ষনচিত্র নিয়ে পুরানো লেখা পড়ছিলাম।​ যাকগে, আপনারা বুঝতেই পারছেন - হুমকীদাতার সাথে কথোপকথনের কিয়দাংশের অডিও রেকর্ড আমার হাতে রয়েছে। তবুও আমি এখন কোনো মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে আমার চলমান কাজগুলোর মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে চাচ্ছি না। 
যে দেশে ছয় মাসের মধ্যে চারজন ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, সে দেশে কোনো ব্লগারকে কারো এভাবে মারধর বা হত্যার হুকমী দেয়ার ঘটনা হয়ত ‍খুবই নৈমিত্তিক এবঙ স্বাভাবিক। তবু গত ৮ আগস্ট কাফরুল থানায় একটি জিডি করলাম। আর আজ (১০ আগস্ট) ব্লগের মাধ্যমেই ঘটনাটি সবাইকে জানিয়েও রাখলাম। আরো একটি বিষয় জানিয়ে রাখি। যদি বেঁচে থাকি তবে আত্মজৈবনিক এ ঘটনার অবলম্বনে একটি ডকুফিল্ম তৈরী হবে, নাম - ‘আত্মরক্ষার্থে’।
এই লেখায় আরেকটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। উল্লেখিত ঘটনা চলাকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক সিনিয়র, জুনিয়র সাংবাদিক বন্ধুর কথা শুনে মনে হয়েছে আমি আদতে এখন আর তাদের বন্ধু নাই, স্রেফ পূর্বপরিচিততে পরিণত হয়েছি। বিচ্ছিন্নতায় বা যোগাযোগচর্চার অভাবে আমি তাদের হারিয়ে ফেলেছি, কিঙবা হারিয়ে গেছে আমার অজস্র পুরানো সম্পর্ক।  আরো খেয়াল করলাম, অনেকেই মুক্ত সাংবাদিকতাকে স্রেফ ‘সৌখিনতা’ ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। শুভাকাঙ্খীদের অনেকে আমাকে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হওয়ারও পরামর্শও দিয়েছেন।  কেন আমি কখনো ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) -এর সদস্য হইনি, তা নিয়েও আক্ষেপ করেছেন। তাদের এসব কথা শুনদে শুনতে আমার বার বার মনে পরেছে, হুমকীদাতাও আমাকে বহুবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে সামান্য ব্যক্তি হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখা আমার মোটেই উচিত হয়নি।

হে অপ্রিয় হুমকীদাতা, পুরো লেখাটি আপনিও যে পড়বেন তা আমি নিশ্চিত। এবঙ নিশ্চয়ই খেয়াল করবেন এর কোথাও আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ করা হয়নি। ভুলেও ভাববেন না হুমকীতে ভয় পেয়ে এভাবে লেখা হয়েছে।  মূলত আপনার বালক সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমি এখনো চাচ্ছি না আমার কারণে আপনার কোনো ক্ষতি হোক। তবে সকলকে আপনার মতো ব্যক্তিদের সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেয়ার তাগিদ অনুভব করেছি।  কারণ আপনারা শুধু মিডিয়াকে না সমগ্র সমাজকেই কলুষিত করছেন। 
এই লেখা পড়ার পরও যদি আপনার বোধদয় না ঘটে, আপন ক্ষমতা প্রদর্শনের স্বাদ জাগে - তবে আমার মোবাইলটা খোলাই আছে।  আবার ফোন করুন। গালাগালি করে আমার চৌদ্দগুষ্ঠীকে উদ্ধার করুন। নয়ত এবার খুনটা করিয়েই ফেলুন।  শুধু একটাই অনুরোধ, খুনটা করার বা করানোর আগে নীচের পদ্যটি একবার পড়ে নেবেন। আশাকরি তাতে আমারে হত্যার ইচ্ছা আরো তীব্র হবে। আমেন।
- স্মরণে কৈবর্ত বিদ্রোহ

নিশ্চিত অনার্য আমি আদি কৈবর্তের ছেলে
সহস্র জনমে ছিলেম - মিঠে জলের জেলে
বার বার ফিরেছি বঙগে, ফিরিয়েছে মোহ
- মননে অনিবার্য আজও বরেন্দ্রী বিদ্রোহ।

অহিঙস ধর্মের নামে ক্ষিপ্ত সহিঙসতা-
রুখেছিলো যে কৌশলে এই নদীমাতৃকতা
যুগ-যুগান্তর ধরে যাচ্ছিলাম লিখে তারে
সেই অপরাধেই খুন হয়েছি বারে বারে।

গায়ের রঙটা কালো, গাই স্রোতস্বিনী সুরে
মোর রক্তে কত প্রাণ জানে পাল অন্তুপুরে।

মনে পরে সেবার - ছিলেম গঙ্গার উত্তরে
স্বর্ণকলসে বশীভূত লোভাতুর স্বীয়জাত
কী জলদি মিলিয়ে রামপালের হাতে হাত
প্রকাশ্যেই মদদ দিয়েছে আমার হত্যারে।

আরো কতবার মরেছি স্বজাতি সূত্রে ইস!
কখনো পলাশী, কখনো বা ধানমণ্ডি বত্রিশ
তবু ফিরেছি ফের কূটরুধির করতে হিম
আমি দিব্য, আমিই সেই রুদোকপুত্র ভীম।

[কবিতাটি গাধার গয়না পরম্পরা থেকে নেয়া]

পুরানো লেখাঃ
>> ‘জার্নালিজম’ বনাম ‘ক্যাপিটালিজম’!
>> ‘সাংবাদিক মারলে কিচ্ছু হয় না’
>> খোলা চিঠি বা প্রতিক্রিয়া এবং স্ব-শিক্ষিত সাংবাদিকতা...

২৭ মে ২০১৫

চাকা শিল্প বা দুই শিল্পীর গল্প

চাকা শিল্পী আবুল কাশেমে (৭০)
আবুল কাশেমের বয়স ৭০, আর আবুল হোসেনের ৬৪। পেশীবহুল পেটানো শরীরে তাদের পরিশ্রমের সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা সুষ্পষ্ট। পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রাখতে সেই আট বা নয় বছর বয়স থেকে তারা হাতুড়, বাটালি আর বাবলা কাঠের সাথে জড়িয়ে নিয়েছেন নিজেদের জীবন। প্রথম জন ৬২, আর পরের জন প্রায় ৫৫ বছর ধরে কাঠের চাকা তৈরীর কাজ করছেন। নিজ নিজ পিতার কাছ থেকেই কাজ শিখেছেন পাশাপাশি গ্রাম কালী চকভবানীপুর ও পাড়কৃষ্ণ গোবিন্দপুরের এই দুই চাকা শিল্পী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার সীমন্তবর্তী ওই এলাকাটি শত শত বছর ধরে চাকা শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। প্রায় নয় মাস আগে গিয়েছিলাম ওখানে, মূলত অন্য এক কাজে। কিন্তু চাকা শিল্পীদের সাক্ষাত পেয়ে আলাপের লোভ সামলাতে পারিনি। তাদের ছবি তোলার অনুমতিও মিলেছিলো সহজে। আহা, কী অদ্ভুত সহজ মানুষ তারা!

‘কাঠমিস্ত্রী আর চাকা শিল্পী এক নয়। কাঠের কাজ জানলেই চাকা বানানো যায় না’ – কাজ করতে করতেই বলছিলেন আবুল কাশেম। তার এ বক্তব্যে জড়িয়ে আছে শিল্পের গৌরব। যদিও তিনি জানেন, সেই দিন আর বেশি দূরে না যেদিন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ি শুধু জাদুঘরেই দেখা যাবে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে সুপ্রাচীন এসব দেশী বাহন। তাই’তো তিনিও বলেছেন, ‘আর কিছু দিন পর হারিয়ে যাবেন চাকার কারিগররাও।কাশেমের নয় সন্তানের মধ্যে চার জন ছেলে। তাদের কেউই চাকা শিল্পী হতে চায়নি কখনো। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, ‘হয়ত বেশী খাঁটুনিতে কম পয়সা দেখে ওরা এ কাজ করতে চায় না।’ জানা গেছে, তার ছেলেরা রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।

এদিকে, আবুল হোসেনেরও চার ছেলে। তারাও কেউ চাকা শিল্পের প্রতি আগ্রহী নন। একজন অবশ্য বাবার সাথে থেকে কাজ শিখেছিলেন। সে আবার বিদেশে চলে গেছে। হোসেনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, একটি চাকা বানাতে কমপক্ষে তিন দিন থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। এর আগে বাবলা গাছের কাঠ চেরাই করে এক মাস রোদে শুকিয়ে কাজের উপযোগী করতে হয়। আর একটি চাকা তৈরীতে বর্তমান (২০১৪ সালের আগস্টের) বাজার দর অনুযায়ী ১৬’শ টাকার বাবলা কাঠ লাগে। প্রতিটি চাকা বিক্রি হয় ২৮’শ থেকে তিন হাজার টাকায়। এক একটি চাকা প্রায় ১০ বছর গাড়িতে চলার জন্য উপযুক্ত থাকে।
আবুল কাশেম, আবুল হোসেনসহ দু’জনার গ্রামের আরো একাধিক চাকা শিল্পী জানান, তাদের এলাকায় এখনো কমপক্ষে দেড়শ চাকা শিল্পী আছেন। বারো মাস ধরেই চাকা তৈরির কাজ চলে। তবে এই শিল্পীদের সকলের বয়সই পঞ্চাশোর্ধ্ব। অতএব আগামী পঞ্চাশ বছর পর সম্ভবত এদের একজনও থাকবেন না। বিলুপ্ত হবে ওই এলাকার চাকা শিল্পও। দেশের অন্যান্য এলাকার চিত্রও বোধকরি খুব বেশী আলাদা হবে না। কারণ, চাকা শিল্পীদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কাঠের চাকার উপযোগিতা কমার বিষয়টি অনেক আগেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছে।
চাকা শিল্পী আবুল হোসেন (৬৪)
ফিরে দেখা
মানবসভ্যতার ইতিহাসে চাকার আবিষ্কারকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসাবে ধরা হয়। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ৫০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে চাকা আবিষ্কৃত হয়। শুরুতে কুমোরদের কাজে এটির ব্যবহার ছিলো। ককেশাসের উত্তর দিকে বেশ কিছু কবর পাওয়া গেছে যাতে ৩৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ হতে ঠেলাগাড়িতে করে মৃতদেহ কবর দেয়া হয়েছে। ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে তৈরি করা একটি মাটির পাত্র দক্ষিণ পোল্যান্ডে পাওয়া গেছে, যাতে চার চাকার একটি গাড়ির ছবি আছে। এটিই এ পর্যন্ত প্রাপ্ত চাকাযুক্ত গাড়ির ছবির সবচেয়ে পুরানো নিদর্শন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ সহস্রাব্দ নাগাদ চাকার ব্যবহার ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু সভ্যতায় চাকার ব্যবহার শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দের দিকে। চীনে চাকার ব্যবহার দেখা যায় ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, যখন চাকাযুক্ত গাড়ির প্রচলন হয়। তবে বারবিয়েরি-লো (২০০০) এর মতে আরো পূর্বে খ্রিষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের দিকে চীনে চাকার প্রচলন ছিলো। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন সভ্যতায় চাকার ব্যবহার দেখা যায়না। তবে অলমেক ও অন্যান্য কিছু আমেরিকার সভ্যতার নিদর্শনের মধ্যে শিশুদের খেলনা হিসাবে চাকাযুক্ত গাড়ি পাওয়া গেছে। প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের এসব খেলনাতে চাকার ব্যবহার থাকলেও আমেরিকার সভ্যতাগুলোতে যানবাহনের যন্ত্রাংশ হিসাবে চাকার প্রচলন ছিলো না। প্রাচীন নুবিয়াতে চাকা ব্যবহার করা হতো মাটির হাড়ি ও পাত্র তৈরীতে, এবং পানি উত্তোলনে। নুবিয়ার পানি উত্তোলনে ব্যবহৃত চাকাগুলো ঘুরানো হতো গবাদিপশু দিয়ে। নুবিয়ার অধিবাসীরা মিশর থেকে আনা অশ্বচালিত রথ ব্যবহার করতো।
চাকা ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত সমতল বা মসৃন রাস্তা না থাকায় চাকার প্রচলন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। যেসব এলাকায় রাস্তা ছিলোনা এবং অসমতল ভূমির উপর দিয়ে চলতে হয়েছে, সেসব এলাকায় চাকা-যুক্ত যানবাহনের বদলে মানুষের কিংবা পশুর পিঠে করে মাল বহন করা হতো। এমনকি বিংশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্বের অনুন্নত এলাকাগুলোতে ভালো রাস্তাঘাটের অভাবে চাকাযুক্ত যানবাহনের ব্যবহার কম ছিলো।
শুরুতে চাকা নির্মাণ করা হতো কাঠের চাকতি দিয়ে, যার কেন্দ্রে অক্ষদণ্ডের জন্য একটি গর্ত করা হতো। স্পোকযুক্ত চাকা অনেক পরে উদ্ভাবিত হয়। এই রকমের চাকার ব্যবহার গাড়ির ওজন কমিয়ে আনে, যার ফলে দ্রুতগতির বাহন তৈরি করা সম্ভব হয়। প্রায় ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের সমকালীন আন্দ্রোনভ সংস্কৃতিতে স্পোকযুক্ত চাকার ব্যবহার পাওয়া যায়। এর অল্প পড়েই ককসশাস এলাকার অধিবাসীরা অশ্বচালিত বাহনে স্পোকযুক্ত চাকা ব্যবহার করে। মূলত যুদ্ধে ব্যবহৃত রথে এধরণের চাকা তারা ব্যবহার করতো। এখান থেকে স্পোকযুক্ত চাকার ব্যবহার গ্রিক উপদ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে। চাকাযুক্ত বাহনের ব্যবহার গ্রিক সভ্যতার বিকাশে সহায়তা করে। খ্রিষ্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দ নাগাদ কেল্টিকদের রথগুলোতে এমন চাকা ব্যবহার করা যেতো, যার পরিধি বরাবর লোহার বেষ্টনি দেয়া থাকতো। ফলে এ ধরণের চাকাগুলো অনেক মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হতো। স্পোকযুক্ত চাকা এভাবেই প্রায় অপরিবপর্তিত অবস্থাতে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ব্যবহৃত হয়ে আসে। ১৮৭০ খ্রিঃ এর দিকে চাকায় নিউম্যাটিক টায়ার ব্যবহার করা শুরু হয়।
আনুমানিক ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের প্রাচীন যুদ্ধপতাকায় চাকাবিশিষ্ট গাড়ির ছবি - উইকিপিডিয়া
সামগ্রিক ভাবে চাকার আবিষ্কার কেবল পরিবহন ব্যবস্থাই নয়, বরং প্রযুক্তির নানা দিকে নতুন নতুন যন্ত্র উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। চাকা ব্যবহার করে জল চক্র (পানি তোলার এবং পানি হতে শক্তি আহরণের চাকা), গিয়ার চাকা, চরকা, ইত্যাদি তৈরি করা হয়। সাম্প্রতিক কালের প্রপেলার, জেট ইঞ্জিন, জাইরোস্কোপ, এবং টারবাইন—এর সবই চাকারই পরিবর্তিত রূপ।

০৭ মে ২০১৫

শাকুর মজিদের নভেরা বিদ্বেষ !

ভাস্কর নভেরা আহমেদ
প্রয়াত ভাস্কর নভেরা আহমেদের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ জাগানোর চেষ্টা করেছেন স্থপতি শাকুর মজিদ । ফেসবুকে উইমেন চ্যাপ্টার সম্পাদক সুপ্রীতি ধরের দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ প্রয়াস চালিয়েছেন। ঘন্টা তিনেক আগে, অর্থাৎ বুধবার (৭ মে) দিনগত রাতে নভেরাকে স্মরণ করে সুপ্রীতির দেয়া ওই স্ট্যাটাসে শাকুর প্রশ্ন ছোঁড়েন - “যে দেশ ছেড়ে চলে যায় তাঁর জন্য আহাজারি কিসের?”

শাকুরের দুটি মন্তব্য দেখুন ...
দেশের ভাস্কর্য শিল্পের অগ্রদূত নভেরাকে নিয়ে এমন মন্তব্য পড়ে মেজাজ কী করে ঠিক রাখি বলুন! তার ওপরে যদ্দুর জানি এই মন্তব্যকারী, অর্থাৎ শাকুর মজিদ প্রায় অর্ধশত দেশ ঘুরেছেন। লিখেছেন অজস্র ভ্রমণকাহীনি। দৈনিকের কল্যাণে তার এ জাতীয় কয়েকটি লেখা পড়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছে। এমন মহান বিদ্বান নিশ্চয়ই জানেন - মূলত কার কোন স্বার্থে দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত আজও বিভক্ত এবং সমাজের কোন শ্রেনী এই বিভাজনে হাজার হাজার বছর ধরে লাভবান হচ্ছেন। শোষকরাই কি এই সীমানার স্রষ্টা নয়? যুগে যুগে এদের লিঙ্গলেহনকারীও এক্কেবারে কম ছিলো না, এখনো আছে। কেউ বুঝে, আবার কেউ না বুঝেই ওই শোষকদের মুখপাত্র বনে গেছেন, যাচ্ছেন। যে কারণে শাকুর সাহেবের মন্তব্যে আর বিষ্ময় নয়, রাগই জেগেছে। এরাই আবার কী উদার, মুক্তমনা মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়! এমন মননের একটি লোকের কথাকে এত গুরুত্ব দেয়াও হয়ত ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু কিছু বিষয় - না বললেই নয়। এই যেমন - শাকুর সাহেবের কথার যে শ্রী - “উনি এতোদিন কি বেঁচে ছিলেন? ৫২’র পর তো আর কোনও আওয়াজ ছিলো না।” আমাদের আরো অনেকের মতো প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম (সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাথিউরা) থেকে ঢাকায় উঠে আসা এই ভদ্রলোক হয়ত ভুলে গেছেন যে - হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয়েছিলো ১৯৫৭ সালে। আর ১৯৭৩ সালে দেশত্যাগ করে ফ্রান্সে চলে যান নভেরা।

সুপ্রীতির সেই স্ট্যাটাস
একজন পেশাদার স্থপতি হিসাবে এসব ব্যাপারে তারই ভালো জানার কথা ভেবে যারা শাকুর মজিদের দেয়া তথ্যে বিভ্রান্ত হতে পারেন, বস্তুত তাদের জন্যই এতগুলো কথা লেখা। আপনারা আরো একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন। কলোনিয়াল ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে - অস্তিত্বের সঙ্কট কাটাতে খুব ভদ্রলোকি শেখা এ জাতীয় অগ্রজ চুতিয়ারা আজও এক মহাসমস্যা রূপে আমাদের এই বাঙালি সমাজে ঘাঁপটি মেরে আছে। এরা না মরা অবধি দেশে স্বস্তি ফিরবে না। কথাটি হয়ত একটু রূঢ়, মানে অমানবিক হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ, এমন বেকুবদের কখনোই কেউ বোঝাতে পারবেন না যে - পুরো পৃথিবীর উপর প্রত্যেকটি প্রাণেরই অধিকারে আছি।
শাকুর মজিদ
কে এই শাকুর
পেশায় স্থপতি হলেও তিনি লেখেন, ছবি তোলেন এবং নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র। আহসানউলাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন। জন্ম ১৯৬৫ সালের ২২ নভেম্বর, সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার মাথিউরা গ্রামে। পড়াশুনা করেছেন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। টেলিভিশনের জন্য অজস্র নাটক-টেলিফিল্ম লিখেছেন, নিজে পরিচালনাও করেছেন। শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে কমপক্ষে এক কুঁড়ি পুরস্কার পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশের ওপর তার করা প্রায় দেড়শ প্রামাণ্যচিত্র দেশীয় চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে বারোটি ভ্রমণকাহিনী। বাউল শাহ আবদুুল করিমের জীবন ও দর্শন নিয়ে লিখেছেন মঞ্চনাটক ‘মহাজনের নাও’। এছাড়া তার জীবন নিয়ে বানিয়েছেন তথ্যচিত্র ‘ভাটির পুরুষ’। এছাড়া মঞ্চনাটকের আলোকচিত্র নিয়ে ২০০৩ সালে প্রকাশ করেছেন ফটোগ্রাফি অ্যালবাম ‘রিদম অন দ্যা স্টেজ’। তার আরো দুটি প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রীতা ও দুঃসময়ের গল্পগুলো’ এবং আত্মজৈবনিক উপাখ্যান ‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’। শাকুরের স্ত্রী ড. হোসনে আরা জলী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তানের নাম- ইশমাম ও ইবন।
newsreel [সংবাদচিত্র]