ভাস্কর নভেরা আহমেদ |
প্রয়াত ভাস্কর নভেরা আহমেদের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ জাগানোর চেষ্টা করেছেন স্থপতি শাকুর মজিদ । ফেসবুকে উইমেন চ্যাপ্টার সম্পাদক সুপ্রীতি ধরের দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ প্রয়াস চালিয়েছেন। ঘন্টা তিনেক আগে, অর্থাৎ বুধবার (৭ মে) দিনগত রাতে নভেরাকে স্মরণ করে সুপ্রীতির দেয়া ওই স্ট্যাটাসে শাকুর প্রশ্ন ছোঁড়েন - “যে দেশ ছেড়ে চলে যায় তাঁর জন্য আহাজারি কিসের?”
কে এই শাকুর
পেশায় স্থপতি হলেও তিনি লেখেন, ছবি তোলেন এবং নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র। আহসানউলাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন। জন্ম ১৯৬৫ সালের ২২ নভেম্বর, সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার মাথিউরা গ্রামে। পড়াশুনা করেছেন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। টেলিভিশনের জন্য অজস্র নাটক-টেলিফিল্ম লিখেছেন, নিজে পরিচালনাও করেছেন। শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে কমপক্ষে এক কুঁড়ি পুরস্কার পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশের ওপর তার করা প্রায় দেড়শ প্রামাণ্যচিত্র দেশীয় চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে বারোটি ভ্রমণকাহিনী। বাউল শাহ আবদুুল করিমের জীবন ও দর্শন নিয়ে লিখেছেন মঞ্চনাটক ‘মহাজনের নাও’। এছাড়া তার জীবন নিয়ে বানিয়েছেন তথ্যচিত্র ‘ভাটির পুরুষ’। এছাড়া মঞ্চনাটকের আলোকচিত্র নিয়ে ২০০৩ সালে প্রকাশ করেছেন ফটোগ্রাফি অ্যালবাম ‘রিদম অন দ্যা স্টেজ’। তার আরো দুটি প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রীতা ও দুঃসময়ের গল্পগুলো’ এবং আত্মজৈবনিক উপাখ্যান ‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’। শাকুরের স্ত্রী ড. হোসনে আরা জলী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তানের নাম- ইশমাম ও ইবন।
শাকুরের দুটি মন্তব্য দেখুন ... |
দেশের ভাস্কর্য শিল্পের অগ্রদূত নভেরাকে নিয়ে এমন মন্তব্য পড়ে মেজাজ কী করে ঠিক রাখি বলুন! তার ওপরে যদ্দুর জানি এই মন্তব্যকারী, অর্থাৎ শাকুর মজিদ প্রায় অর্ধশত দেশ ঘুরেছেন। লিখেছেন অজস্র ভ্রমণকাহীনি। দৈনিকের কল্যাণে তার এ জাতীয় কয়েকটি লেখা পড়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছে। এমন মহান বিদ্বান নিশ্চয়ই জানেন - মূলত কার কোন স্বার্থে দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত আজও বিভক্ত এবং সমাজের কোন শ্রেনী এই বিভাজনে হাজার হাজার বছর ধরে লাভবান হচ্ছেন। শোষকরাই কি এই সীমানার স্রষ্টা নয়? যুগে যুগে এদের লিঙ্গলেহনকারীও এক্কেবারে কম ছিলো না, এখনো আছে। কেউ বুঝে, আবার কেউ না বুঝেই ওই শোষকদের মুখপাত্র বনে গেছেন, যাচ্ছেন। যে কারণে শাকুর সাহেবের মন্তব্যে আর বিষ্ময় নয়, রাগই জেগেছে। এরাই আবার কী উদার, মুক্তমনা মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়! এমন মননের একটি লোকের কথাকে এত গুরুত্ব দেয়াও হয়ত ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু কিছু বিষয় - না বললেই নয়। এই যেমন - শাকুর সাহেবের কথার যে শ্রী - “উনি এতোদিন কি বেঁচে ছিলেন? ৫২’র পর তো আর কোনও আওয়াজ ছিলো না।” আমাদের আরো অনেকের মতো প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম (সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাথিউরা) থেকে ঢাকায় উঠে আসা এই ভদ্রলোক হয়ত ভুলে গেছেন যে - হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয়েছিলো ১৯৫৭ সালে। আর ১৯৭৩ সালে দেশত্যাগ করে ফ্রান্সে চলে যান নভেরা।
সুপ্রীতির সেই স্ট্যাটাস |
একজন পেশাদার স্থপতি হিসাবে এসব ব্যাপারে তারই ভালো জানার কথা ভেবে যারা শাকুর মজিদের দেয়া তথ্যে বিভ্রান্ত হতে পারেন, বস্তুত তাদের জন্যই এতগুলো কথা লেখা। আপনারা আরো একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন। কলোনিয়াল ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে - অস্তিত্বের সঙ্কট কাটাতে খুব ভদ্রলোকি শেখা এ জাতীয় অগ্রজ চুতিয়ারা আজও এক মহাসমস্যা রূপে আমাদের এই বাঙালি সমাজে ঘাঁপটি মেরে আছে। এরা না মরা অবধি দেশে স্বস্তি ফিরবে না। কথাটি হয়ত একটু রূঢ়, মানে অমানবিক হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ, এমন বেকুবদের কখনোই কেউ বোঝাতে পারবেন না যে - পুরো পৃথিবীর উপর প্রত্যেকটি প্রাণেরই অধিকারে আছি।
শাকুর মজিদ |
পেশায় স্থপতি হলেও তিনি লেখেন, ছবি তোলেন এবং নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র। আহসানউলাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন। জন্ম ১৯৬৫ সালের ২২ নভেম্বর, সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার মাথিউরা গ্রামে। পড়াশুনা করেছেন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। টেলিভিশনের জন্য অজস্র নাটক-টেলিফিল্ম লিখেছেন, নিজে পরিচালনাও করেছেন। শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে কমপক্ষে এক কুঁড়ি পুরস্কার পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশের ওপর তার করা প্রায় দেড়শ প্রামাণ্যচিত্র দেশীয় চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে বারোটি ভ্রমণকাহিনী। বাউল শাহ আবদুুল করিমের জীবন ও দর্শন নিয়ে লিখেছেন মঞ্চনাটক ‘মহাজনের নাও’। এছাড়া তার জীবন নিয়ে বানিয়েছেন তথ্যচিত্র ‘ভাটির পুরুষ’। এছাড়া মঞ্চনাটকের আলোকচিত্র নিয়ে ২০০৩ সালে প্রকাশ করেছেন ফটোগ্রাফি অ্যালবাম ‘রিদম অন দ্যা স্টেজ’। তার আরো দুটি প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রীতা ও দুঃসময়ের গল্পগুলো’ এবং আত্মজৈবনিক উপাখ্যান ‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’। শাকুরের স্ত্রী ড. হোসনে আরা জলী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তানের নাম- ইশমাম ও ইবন।