Powered By Blogger
নভেরা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নভেরা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০৭ মে ২০১৫

দেশত্যাগ কি নভেরার প্রতিবাদ?

১৯৭০ সালে নভেরা আহমেদ
যারা ভাস্কর নভেরা আহমেদের অবদানের চেয়ে তার আত্মগোপনের লাভ-ক্ষতি নিয়ে বেশী নিয়ে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন - তাদের কাছে জানতে চাই; একজন শিল্পী বা স্রষ্টার নিজের বেছে নেয়া জীবনপ্রণালীকে কটাক্ষ করার অধিকার আপনারা কোথায় পেলেন? এ কী জ্ঞানের অহমিকা! নিজেদের জ্ঞান বা অনুধাবনকে কতটা চূড়ান্ত ভেবে আপনারা এর বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন? লাভ-ক্ষতির বাইরে গিয়েও যে ভাবা যায়, তা কি কখনো উপোলদ্ধি করেছেন? আমার এই আচরণও নিঃসন্দেহে বেয়াদবি। কিন্তু এ কালে বেয়াদবদের সাথে বেয়াদবি করা জায়েজ মনে হচ্ছে বলেই বলছি - এ নেহাতই পাতি বূ্র্জোয়াগিরি। সবই পুঁজির খেল। আপনারা কবে যে - কোথায় বিক্রি হয়ে গেছেন - তা হয়ত টেরও পাননি, বা পেয়েছেন। আর এখন সবাইকে বিক্রি হতে দেখতে চাচ্ছেন। পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রের তথা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি না হয়ে যারা নিরবিচ্ছিন্নভাবে নিজস্ব দর্শন/ভাবের জগতে ডুবে থাকতে চাচ্ছেন, তাদের ‘ক্ষতিকর/অস্বাভাবিক’ ভাবাও আপনাদের স্বাভাবিক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। থাক, বাদ দেই। তবে আজ এটুকু অন্তত ভাবুন, নভেরার এই আত্মগোপন বা দেশত্যাগ কি কোনো প্রতিবাদ ছিলো?
শাকুর মজিদের নতুন মন্তব্য
এখানে একটি সংবাদ ভাষ্য উল্লেখ করছি।
“১৯৫৮ সালে সামরিক আইনজারি হলে শহীদ মিনারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শহীদ পাক-হানাদার বাহিনী শহীদ মিনার সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর যখন আবার শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় তখন মূল নকশার অনেক কিছু বাদ পড়ে। বাদ পড়ে যায় নভেরা আহমেদের ভাস্কর্য দুটি।” তথ্য সূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ (১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)
- তার অভিমানের তরে আর কোনো উপলক্ষ কী দরকার আছে !! এই রাষ্ট্রই কি তাকে অভিমানী হওয়ার সুযোগ করে দেয়নি। জনকণ্ঠের ওই প্রতিবেদন থেকেই জেনেছিলাম, নভেরা আহমেদের বাবা সৈয়দ আহমেদ বনবিভাগের কর্মকতা হিসেবে যখন সুন্দরবনে অবস্থান করছিলেন, সেই সময় ১৯৩০ সালে এই তার জন্ম। শৈশব কেটেছে কলকাতায় এবং সেখানে ‘লরেট’ থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। স্কুল জীবনে তিনি ভাস্কর্য গড়ার দক্ষ হয়ে উঠেন। ১৯৪৭’র দেশ বিভাগের পর কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে গিয়ে নভেরা ১৯৫১ সালে ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস এ্যান্ড ক্র্যাফটসের ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইনের মডেলিং ও স্কাল্পচার কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালে কোর্স শেষ করে ডিপ্লোমা ডিগ্রী লাভ করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি বিবিসিতে অনুষ্ঠান করতেন। বিবিসির অনুষ্ঠান পরিচালক ছিলেন নাজির আহমদ। শহীদ মিনারের রূপকার হামিদুর রহমান লন্ডনে পড়তে গেলে ভাই নাজির আহমেদের মাধ্যমে নভেরা আহমেদের সাক্ষাত, পরে বন্ধুত্ব।
নভেরা ছিলেন ভাস্কর আর হামিদুর রহমান ছিলেন অঙ্কনশিল্পী। দুজনেই ছিলেন শিল্পানুরাগী। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে এই দুই বন্ধু মিলে ইউরোপের বড় বড় জাদুঘরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। তাঁরা উভয়ে লিয়োনাদ্রো ভেঞ্চির মোনালিসা ছবি দর্শন করতে প্যারিসের ‘লুভ‘ গ্যালারি পরিদর্শন করেন। লেখক হাসনাত আবদুল হাইর লেখা ‘নভেরা’ উপন্যাসে দুই বন্ধুর প্রগাঢ় বন্ধত্ব ও শিল্পানুরাগের বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য শিল্পীদের কাছে নকশা আহ্বান করলে শিল্পী হামিদুর রাহমান সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকায় আসেন এবং শহীদ মিনারের জন্য এমন একটি নকশা প্রণয়ন করেন যেটাকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ‘আমার মায়ের মুখ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। নির্বাচন মণ্ডলির সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ শুরু করেন হামিদুর রহমান। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে শিল্পী উপলব্ধী করেন যে শহীদ মিনারের সঙ্গে ভাস্কর্য স্থান পেলে তা পূর্ণতা পাবে। তাই তারই উদ্যোগে শিল্পী নভেরা আহমেদ ঢাকায় আসেন এবং শহীদ মিনারের মূল বেদীতে ভাস্কর্য তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৯৫৫ সালের দিকে এই দুই শিল্পী যখন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন তখন এদেশে শিল্প অনুরাগী খুব একটা ছিলো না। হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদ শূলত ভাষা শহীদদের স্মরণে কিছু একটা করার তাড়নায় জন্মভূমিতে ফিরে এসেছিলেন।

শাকুর দর্শনের নগদ প্রভাব
দয়া করে স্মরণ করুন তার এসব অবদানের কথা। আর আমার একটা অনুধাবনের কথা বলে যাই - মানুষের বিস্মৃতিপ্রবণ চিন্তার দৈন্যতা, দর্শনের দুর্বলতা, সার্বোপরী - আত্মজ্ঞানের সংকট প্রসূত সুবোধের অভাব এ দুনিয়ায় আজও অতটাই প্রকট যতটা সত্তর হাজার বছর আগেও ছিলো।
নভেরার প্রবাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত আসলে আজও রহস্যাবৃত। প্রবাস জীবনে দেশের যে মানুষটির সাথে তার সবচেয়ে ঘনিষ্টতা বা সখ্যতা ছিলো তিনি হচ্ছেন চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের স্ত্রী আনা ইসলাম। তিনি লিখেছিলেন, “বহুদিন ধরেই নভেরা আছেন নিজস্ব আড়ালে। দেশত্যাগের এক অজানা ধোঁয়াটে অধ্যায়, তারপর স্বেচ্ছা-নির্বাসনের দীর্ঘ অন্তরাল। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, মৃদু হাসিতে বুঝিয়েছেন – অন্তরালে থাকাটা তাঁর নিজস্ব জীবনচর্যার ব্যাপার। মানুষের কোলাহল, স্তুতি, প্রশংসা থেকে আগলে রাখা তাঁর ভুবন।”

পূর্ববর্তী পোস্টঃ শাকুর মজিদের নভেরা বিদ্বেষ !

শাকুর মজিদের নভেরা বিদ্বেষ !

ভাস্কর নভেরা আহমেদ
প্রয়াত ভাস্কর নভেরা আহমেদের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ জাগানোর চেষ্টা করেছেন স্থপতি শাকুর মজিদ । ফেসবুকে উইমেন চ্যাপ্টার সম্পাদক সুপ্রীতি ধরের দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ প্রয়াস চালিয়েছেন। ঘন্টা তিনেক আগে, অর্থাৎ বুধবার (৭ মে) দিনগত রাতে নভেরাকে স্মরণ করে সুপ্রীতির দেয়া ওই স্ট্যাটাসে শাকুর প্রশ্ন ছোঁড়েন - “যে দেশ ছেড়ে চলে যায় তাঁর জন্য আহাজারি কিসের?”

শাকুরের দুটি মন্তব্য দেখুন ...
দেশের ভাস্কর্য শিল্পের অগ্রদূত নভেরাকে নিয়ে এমন মন্তব্য পড়ে মেজাজ কী করে ঠিক রাখি বলুন! তার ওপরে যদ্দুর জানি এই মন্তব্যকারী, অর্থাৎ শাকুর মজিদ প্রায় অর্ধশত দেশ ঘুরেছেন। লিখেছেন অজস্র ভ্রমণকাহীনি। দৈনিকের কল্যাণে তার এ জাতীয় কয়েকটি লেখা পড়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছে। এমন মহান বিদ্বান নিশ্চয়ই জানেন - মূলত কার কোন স্বার্থে দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত আজও বিভক্ত এবং সমাজের কোন শ্রেনী এই বিভাজনে হাজার হাজার বছর ধরে লাভবান হচ্ছেন। শোষকরাই কি এই সীমানার স্রষ্টা নয়? যুগে যুগে এদের লিঙ্গলেহনকারীও এক্কেবারে কম ছিলো না, এখনো আছে। কেউ বুঝে, আবার কেউ না বুঝেই ওই শোষকদের মুখপাত্র বনে গেছেন, যাচ্ছেন। যে কারণে শাকুর সাহেবের মন্তব্যে আর বিষ্ময় নয়, রাগই জেগেছে। এরাই আবার কী উদার, মুক্তমনা মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়! এমন মননের একটি লোকের কথাকে এত গুরুত্ব দেয়াও হয়ত ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু কিছু বিষয় - না বললেই নয়। এই যেমন - শাকুর সাহেবের কথার যে শ্রী - “উনি এতোদিন কি বেঁচে ছিলেন? ৫২’র পর তো আর কোনও আওয়াজ ছিলো না।” আমাদের আরো অনেকের মতো প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম (সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাথিউরা) থেকে ঢাকায় উঠে আসা এই ভদ্রলোক হয়ত ভুলে গেছেন যে - হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয়েছিলো ১৯৫৭ সালে। আর ১৯৭৩ সালে দেশত্যাগ করে ফ্রান্সে চলে যান নভেরা।

সুপ্রীতির সেই স্ট্যাটাস
একজন পেশাদার স্থপতি হিসাবে এসব ব্যাপারে তারই ভালো জানার কথা ভেবে যারা শাকুর মজিদের দেয়া তথ্যে বিভ্রান্ত হতে পারেন, বস্তুত তাদের জন্যই এতগুলো কথা লেখা। আপনারা আরো একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন। কলোনিয়াল ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে - অস্তিত্বের সঙ্কট কাটাতে খুব ভদ্রলোকি শেখা এ জাতীয় অগ্রজ চুতিয়ারা আজও এক মহাসমস্যা রূপে আমাদের এই বাঙালি সমাজে ঘাঁপটি মেরে আছে। এরা না মরা অবধি দেশে স্বস্তি ফিরবে না। কথাটি হয়ত একটু রূঢ়, মানে অমানবিক হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ, এমন বেকুবদের কখনোই কেউ বোঝাতে পারবেন না যে - পুরো পৃথিবীর উপর প্রত্যেকটি প্রাণেরই অধিকারে আছি।
শাকুর মজিদ
কে এই শাকুর
পেশায় স্থপতি হলেও তিনি লেখেন, ছবি তোলেন এবং নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র। আহসানউলাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন। জন্ম ১৯৬৫ সালের ২২ নভেম্বর, সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার মাথিউরা গ্রামে। পড়াশুনা করেছেন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। টেলিভিশনের জন্য অজস্র নাটক-টেলিফিল্ম লিখেছেন, নিজে পরিচালনাও করেছেন। শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে কমপক্ষে এক কুঁড়ি পুরস্কার পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশের ওপর তার করা প্রায় দেড়শ প্রামাণ্যচিত্র দেশীয় চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে বারোটি ভ্রমণকাহিনী। বাউল শাহ আবদুুল করিমের জীবন ও দর্শন নিয়ে লিখেছেন মঞ্চনাটক ‘মহাজনের নাও’। এছাড়া তার জীবন নিয়ে বানিয়েছেন তথ্যচিত্র ‘ভাটির পুরুষ’। এছাড়া মঞ্চনাটকের আলোকচিত্র নিয়ে ২০০৩ সালে প্রকাশ করেছেন ফটোগ্রাফি অ্যালবাম ‘রিদম অন দ্যা স্টেজ’। তার আরো দুটি প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রীতা ও দুঃসময়ের গল্পগুলো’ এবং আত্মজৈবনিক উপাখ্যান ‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’। শাকুরের স্ত্রী ড. হোসনে আরা জলী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তানের নাম- ইশমাম ও ইবন।
newsreel [সংবাদচিত্র]