Powered By Blogger
education লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
education লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ওই বেতনের কেতন উড়ে

মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি রুটের
একটি লোকাল বাসের জানালায় সাঁটানো নোটিশ
সরকারি চাকুরেদের বেতন দ্বিগুণ হওয়ার এক দিন না যেতেই শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের ওপর রাষ্ট্রীয়বাহীনির গুলি বর্ষণের ঘটনা দুটি নোটিশের কথা মনে করিয়ে দিলো। রাজধানীর মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি রুটে চলাচলকারী একটি লোকাল বাসের জানালায় সাঁটানো ওই নোটিশদ্বয়ের প্রথমটিতে লেখা - ‘হাফ পাশ নেই’। অন্যটিতে - ‘সামনের চারটি সিট সিনিয়র কর্মকর্তা/শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত’। এখানে স্পষ্ট যে, সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সিনিয়রদের প্রতি ওই বাস মালিক যতটা সদয়, জুনিয়রদের প্রতি ততটা নন। কারণ ‘হাফ পাশ’ নেয়ার বা অর্ধেক ভাড়া দেয়ার বিষয়টি আসে মূলত শিশু ও শিক্ষার্থীদের বেলায়। বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রও আগামী প্রজন্মের সাথে ঠিক ওই বাস মালিকের মতোই ব্যবহার করছে। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতের বরাদ্দও আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছে। এ বছরে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা করা হয়েছে জনপ্রশাসন খাতে।
দেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য; কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷” এছাড়া ১৫ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের শিক্ষা নিশ্চিত করা ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব’ বলেও সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতনের সঙ্গে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার রামপুরার আফতাবনগর এলাকায় বিক্ষোভ করেন ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা । ওই সময় তাদের ওপরে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারসহ অন্তত ৩০-৫০ জন আহত হন বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। তবে গুলি ছোড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পুলিশ। আন্দোলনরতরা দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। এ ঘটনার মাত্র একদিন আগে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরকারি চাকুরেদের বহুল প্রত্যাশিত নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সর্বোচ্চ গ্রেডে বর্তমানের চেয়ে ৯৫ শতাংশ ও সর্বনিম্ন গ্রেডে শতভাগের বেশি মূল বেতন বাড়ানো হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো গত জুলাই থেকে কার্যকর করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। তবে এখন শুধু বেতন বাড়বে, ভাতা বাড়বে আগামী বছরের জুলাই থেকে। বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেয়া হবে। বৈশাখে নববর্ষের বোনাসও পাবেন তারা।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সরকারি চাকুরেদের মহার্ঘ ভাতাও (ডিএ) গতকাল (বুধবার) আরো ছয় শতাংশ বেড়েছে । কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১১৩ শতাংশ থেকে ওই ভাতা বাড়িয়ে ১১৯ শতাংশ করার বিষয়টি অনুমোদন করেছে। দেশটির প্রায় এক কোটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগী এই সুবিধা পাবেন। এ খবরটা পড়ে প্রথমেই স্মরণে এলো পুনের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া বা ‘এফটিআইআই’ - এর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা। সেখানকার চেয়ারম্যান পদে রাষ্ট্রটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এর সদস্য গজেন্দ্র চৌহানকে নিয়োগের প্রতিবাদে এবং তার অপসারণ দাবিতে গত ১২ জুন থেকে থেকে তারা একটানা আন্দোলন করছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজেপি সদস্যকে বসিয়ে এর গেরুয়াকরণ করা হচ্ছে। অপরপক্ষ আবার আন্দোলকারীদের ‘হিন্দু বিরোধী’ বলছে। সেখানেও চলছে দমন, গ্রেফতার। অতএব নিজস্ব চাকরদের বেতন বাড়ানোর পর সে দেশের সরকারও যে আন্দোলকারীদের উপর চড়াও হতে পারে, তেমন শঙ্কাতো জাগতেই পারে।
যাক সে কথা, একটু দেশের দিকেই নজর দেই। এখানে পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এই রাষ্ট্রের সাথে ছাত্র আর ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্ক বেশ গভীর। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৯ এর পটভূমিতে ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের চিন্তায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাজনীতিবিদদের চেয়ে কম ছিলো না।
ওই সময় শিক্ষার্থীরা একই ধারার বৈষম্যহীন অবৈতনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার জন্য লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী কোনো সরকারই ওই দাবি আর আমলে নেয়নি। ১৯৯০ এর পরে অবাধ মুক্তবাজার অর্থনীতির হাত ধরে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের পথ প্রশস্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এই কৌশলপত্রের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে।
বিগত ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র অর্থায়নে এবং তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ওই কৌশলপত্র প্রণয়ন করে যা মোট চারটি স্তরে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়। স্তরগুলো হচ্ছে প্রাথমিক পর্ব- ২০০৬-০৭, স্বল্পমেয়াদি ২০০৮-১৩, মধ্যমেয়াদি ২০১৪-১৯ এবং দীর্ঘমেয়াদি ২০২০-২৬। এই ধাপে ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মুলে ছিল ছাত্র আন্দোলনের ভয়। কৌশলপত্র প্রণয়নকারীরা বেশ বুঝেছিলেন যে হটাত করে সমস্ত জনবিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি ও বেসরকারিকরণ করলে তীব্র আন্দোলন হতে পারে। তাই তারা কৌশলী হয়েছেন।
তবে আশার কথা হচ্ছে, বিতর্কিত ওই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের শুরু থেকেই বেশ ঝক্কি পোহাচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র। তাদের কৌশল কাজে লাগেনি। ঠিকই জেগে উঠেছে শিক্ষার্থী সমাজ। গড়ে তুলেছে একের পর এক আন্দোলন। যারই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ রাজপথে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও বিরুদ্ধে পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র আন্দোলন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে, এটাই কাম্য।
newsreel [সংবাদচিত্র]