Powered By Blogger

২১ এপ্রিল ২০১৪

ফের সেই যোদ্ধার সন্ধানে...

মো. মনিরুজ্জামান [© eon's photography / pap]
২৮ মে. ২০১২।
মো. মনিরুজ্জামানের সাথে প্রথম এবং একমাত্র সাক্ষাতের ওই দিনটি আমার আজও মনে আছে। এরপরও তার সাথে কথা হয়েছে, মোবাইলে। কিন্তু আর দেখা-সাক্ষাত হয়নি। দৈনিক কালের কণ্ঠ তাকে নিয়ে ফিচার প্রকাশের খবরটি জানাতে সর্বশেষ কল করেছিলো মনির। তা'ও কমপক্ষে দেড় বছর আগে। এরই মধ্যে নানা দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকবার আমাকে মোবাইল সেট বদলাতে হয়েছে। হারিয়ে গেছে মনিরের নম্বর। সে'ও আর কল করেনি। এরই মধ্যে ক'মাস আগে - গত ফেব্রুয়ারিতে সম্ভবত; ফেসবুকে ‌'নীল অপরাজিতা' নামের একটি পেজ থেকে ‌'তুমি ১৬ কোটি বাঙালির গর্ব' শিরোনামে একটি পোস্ট দেখে আবার স্মরণে এলো মনির। পোস্টটি প্রায় ২২ হাজার লাইক ও সাড়ে তিন হাজার মন্তব্য পেয়েছে। আর এটি প্রায় সাত হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে।

ওই পোস্টে মূলত ছোট্ট এ্যামেচার ক্যামেরায় তোলা মনিরের এই ছবি আর পুরানো একটি লেখা ছিলো। ২০১২'র জুনেই এগুলো বার্তাটুয়েন্টিফোর ডটনেট’এ প্রকাশিত হয়েছিলো। তখন এটির শিরোনাম দিয়েছিলাম - 'এক শিক্ষার্থী বা যোদ্ধার গল্প'। উল্লেখিত ফেসবুক পেইজের দেয়া পোস্টের কোথাও যদিও আমার বা বার্তাটুয়েন্টিফোর ডটনেট’র নাম গন্ধ উল্লেখ নেই, তবু ওটি দেখে ভালো লেগেছিলো। পোস্টটি দেখলে হয়ত মনিরেরও ভালো লাগতো। ইসস, ওর নম্বরটা যে কোথায় পাই? - এ নিয়ে ভাবতে ভাবতেও কতগুলো দিন কেটে গেছে। আজ ভাবলাম - কি আর করা, ওকে নিয়ে না হয় আরো একটু লেখি। দেখি যদি কোনো ভাবে তার সন্ধান মেলে।
pap'র পাঠকদের জন্য পুরানো লেখাটিও লিপিবদ্ধ রইলো।
"রাজশাহীতে প্রাইভেট টিউশনিতে পয়সা কম, তাই প্রতিমাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় এসে রিকশা চালাই।" রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে ঘোরাতে খুব সহজেই এ কথাগুলো বললেন মো. মনিরুজ্জামান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত এই শিক্ষার্থী প্রায় ১০ বছর ধরে এভাবেই নিজের ও ছোট দুই বোনের পড়াশেনার খরচ যোগাড় করছেন। গত মাসের শেষ সপ্তাহে মগবাজার থেকে পরিবাগ যাওয়ার পথে তিনি আরোহী প্রতিবেদককে তার জীবন যুদ্ধের গল্প শোনান।
মনির জানান, রাজশাহীতে নবম-দশম বা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র- ছাত্রী প্রাইভেট পড়ালেও মাসে দুইশ টাকার বেশি পাওয়া যায় না। অথচ ঢাকায় প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে তিনি প্রায় হাজার টাকা আয় করেন। মনির বলেন, 'এক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রমটা একটু বেশিই হয়। কিন্তু সৎ পথে থেকে কম সময়ে এত টাকা আয় করার অন্য কোনো উপায় আমি পাইনি।' এরপরও মনিরের আক্ষেপ যে তিনি শুধু টাকার অভাবে বোনদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অনার্স’ পড়াতে পারেননি। বাধ্য হয়ে এখন তারা বাড়ির পাশের কলেজে ‘ডিগ্রি’ পড়ছেন।
এসএসসি পাশ করার পরই মনির প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় রিকশা চালানো শুরু করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি শুধু মিরপুর এক নম্বরের তাইজুল মিয়ার গ্যারেজের রিকশাই চালান এবং ওই গ্যারেজেই থাকেন। মনির বলেন, "এই কাজটি কখনোই আমার খারাপ লাগেনি। কাজ তো কাজই। আমি তো আর চুরি-ছিনতাই করছি না।"
কয়েক বছর আগে মাস তিনেকের জন্য চাকরিও করেছিলেন মনির। কিন্তু পরীক্ষার আগে ছুটি না পাওয়ায় তিনি সেটি ছেড়ে দেন। মনির আরো জানান, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর তিনি বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নেবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

newsreel [সংবাদচিত্র]