Powered By Blogger

২৭ মে ২০১৫

সাংবিধানিক পিতা আইনে অনাত্মীয় !

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে আমার কিংবা তোমারও আত্মীয়। দেশের সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ১৯৭৫ (১৯৭৫ সনের ২নং আইন) এর ধারা ৩৪ এর দফা (খ) দ্বারা তিনি জাতির পিতা হিসাবে স্বীকৃত। অর্থাৎ আমরা, এ দেশের সকল নাগরিক ওই মহান নেতার আদর্শিক বা সাংবিধানিক সন্তান। অথচ তারই ঔরসজাত সন্তানের নেতৃত্বে থাকা সরকার নতুন আইন করে এ সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আইনটি অসাংবিধানিক কি’না সে প্রশ্নও হয়ত তোলা যেতে পারে। যে আইন আরো ছয় বছর আগে কোটি কোটি সন্তানের সাথে এক পিতার অনাত্মীয়তা তৈরী করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে তাদের তৈরী করা জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইনে স্পস্ট করে বলেছে, শেখ মুজিবের "পরিবার-সদস্য" অর্থ ‘জাতির পিতার জীবিত দুই কন্যা এবং তাঁহাদের সন্তানাদি’। অর্থাৎ সাংবিধানিকভাবে পুরো দেশ তার পরিবার হলেও আইনত দেশের সকল জনগণ এখন তার অনাত্মীয়। এ নিয়ে অনেক আগেই লেখার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের ১৯টি বিশেষ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা সম্বলিত প্রজ্ঞাপন জারির ঘটনায় এই প্রসঙ্গ ফের স্মরণে এলো। রাষ্ট্রপতির আদেশে গত সোমবার (২৫ মে,২০১৫) জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান এ প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

এ ব্যাপারে প্রকাশিত সংবাদে জানানো হয়েছে, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৬৩ নং আইন) এর ধারা ৪ এর উপ-ধারা (৩) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের জন্য এসব সুবিধাদি প্রদানের ঘোষণা দিল। জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, জাতির পিতার জীবিত দুই কন্যা এবং তাঁদের সন্তানেরা এই সুবিধা পাবেন।

প্রজ্ঞাপনের প্রথম অংশে জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তায় যেসব ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্য অন্যতম হলো, তাঁদের আবাসস্থলে সুরক্ষিত ও নিরাপদ বেষ্টনীর ব্যবস্থা করা, আবাসস্থলের কাছে কোনো ভবন বা স্থাপনা হুমকি সৃষ্টির মতো অবস্থায় থাকলে সেগুলো পরিবর্তন কিংবা অপসারণ করা, আবাসস্থলের পাশে উঁচু ভবনে বসবাসকারীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা। এ ছাড়া তাঁদের আবাসস্থলের কাছে নিরাপত্তাকর্মীদের কৌশলগত অবস্থান নেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য আরও কিছু ব্যবস্থার নেওয়ার কথা বলা হয়। দ্বিতীয় অংশে জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়। সেগুলোর মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো, তাঁদের জন্য বরাদ্দ কিংবা মালিকানাধীন বাড়ির প্রয়োজনীয় মেরামত, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিবার-সদস্যদের জন্য একজন করে ড্রাইভার ও পেট্রলসহ গাড়ি প্রদান। এ ছাড়া সরকারি খরচে টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান, দেশে এবং প্রয়োজনবোধে বিদেশে সরকারি খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি সরকারি খরচে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, দুজন বেয়ারা, একজন করে বাবুর্চি, মালি ও ঠিকাদার প্রদানের ব্যবস্থা করা।
প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ফেসবুক, গুগল প্লাসের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো প্রচুর শেয়ার হওয়ায় খবরটি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অনেকের। যাদের মধ্যে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন - বাংলার ১৬ কোটি মানুষের করের টাকায় আপন পরিবারের সদস্যদের বিশেষ সুবিধা নিতে দেখলে খোদ বঙ্গবন্ধুই কি বিব্রত হতেন না?

পূর্ববর্তী কয়েকটি পোস্টঃ
রাষ্ট্রীয় শিশ্ন - ধর্ষন, খুন এবঙ ...
বাংলা জাগবেই জাগবে...
আহা কী অর্জন - কারচুপি, বর্জন ...
ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ
বর্ষবরণে বস্ত্রহরণ কী পরিকল্পিত !
এ কোন উগ্রবাদের মহড়া ...
যদি মনে শঙ্কা বিরাজে, সরকার লাগে কি কাজে ?
বিএম কলেজের একাংশে নারীরা নিষিদ্ধ !
বিশ্বের চেয়ে দেশের শান্তিরক্ষা কঠিন !

কোন মন্তব্য নেই:

newsreel [সংবাদচিত্র]