২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি রূপে প্রকাশ করা করা এ চিত্রের ক্যাপসনে প্রবীর লিখেছিলেন - গত জুনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে ৬ দিন চীনে ছিলাম। ছবিটি তারই একটি মুহূর্ত। |
প্রবীর শিকদার, এক প্রকৃত যোদ্ধার নাম। যার প্রতিবাদের ভাষা আজও চুরি হয়ে যায়নি। যে মুহুর্তে তাকে নিয়ে এ লেখাটি তৈরী হচ্ছে সে মুহুর্তে তিনি পুলিশের, তথা রাষ্ট্রের হাতে বন্দী। তার অপরাধ - মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই রাষ্ট্র সৃষ্টির বিরোধীতা এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বহুল আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসেরকে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তূলনার প্রতিবাদ। যদিও মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাই এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়।
নিজ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিনের ইন্দিরা রোডের কার্যালয় থেকে কাল (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা দিকে প্রবীরকে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রথমে তাকে একটি নীল রঙের পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়েছিল। পরে খামারবাড়ি এলাকায় ভ্যান থামিয়ে তাকে ধূসর রঙের একটি প্রাইভেটকারে তোলা হয়। এরপর তাকে গোয়েন্দা পুলিশের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। আটকের কয়েক ঘণ্টা পর তার বিরুদ্ধে ফরিদপুরে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্ক্রীনসট |
প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ‘আপন বেয়াই’ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগ তুলে রাত ১১টার দিকে বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ওই মামলা দায়ের করা হয়। বাদী স্থানীয় সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) স্বপন পাল।
স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, “জীবনহানির আশঙ্কা প্রকাশ করে তার জন্য মন্ত্রীকে দায়ী করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন প্রবীর শিকদার। এভাবে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে মন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।” এখানে উল্লেখ্য যে, মুসা বিন শমসেরের শেকড়ও কিন্তু এই ফরিদপুরে। আর তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর)।এর আগে গত ১০ অগাস্ট ‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের একটি স্ট্যাটাসে প্রবীর লিখেছিলেন - “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”
ফেসবুকের কল্যাণে প্রবীর সিকদারের যে দুটি বইয়ের প্রচ্ছদ দেখলাম তার একটির নাম আবার ‘আমার বোন শেখ হাসিনা’। |
এদিকে গত রাতে স্বামীর মুক্তির আশায় গোয়েন্দা পুলিশ দপ্তরের সামনে বসে থাকা প্রবীরের জায়া আনিকা শিকদার 'ক্রসফায়ার' -এর শঙ্কার কথা জানিয়ে বলছেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘'কোন ধরনের আপোষ করবো না, মেরে ফেলে মারুক, সে ঠিক কথাই লিখেছে। তবে সাথে আমাকে আর আমার দুই সন্তানকেও যেনো মেরে ফেলা হয়।' তার এ কথাগুলো পড়তে পড়তেই মনে হলো - আহা, এই না হলে সহযোদ্ধা। ঘরে এমন পার্বতী না থাকলে কী আর প্রকৃত শিব হওয়া যায়!
২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারিয়েছিলেন দুই সন্তানের জনক প্রবীর। তার অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে মুসার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ওই হামলা চালায়। ওই সময় জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ কলামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুসা বিন শমসেরের বিতর্কিত ভূমিকার বিবরণ তুলে ধরেছিলেন এই সাংবাদিক, যার পরিবারের ১৪ জন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।
সেবার পা হারিয়েও একফোটা দমে যাননি প্রবীর শিকদার। গ্রেফতারের আগ মুহুর্ত অবধি দৃঢ় চিত্তে লড়ে গেছেন রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্র পরিচালকদের অন্ধত্বের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এর আগে তিনি সমকাল আর কালের কণ্ঠে’র প্রধান দপ্তরেও কাজ করেছেন। লেখার কারণে পাওয়া সাম্প্রতিক হুমকির কথা জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতেও গিয়েছিলেন প্রবীর সিকদার। এই মাসে নিহত ব্লগার নিলয় চক্রবর্তীর মতো তাকেও ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ফেইসবুকে তা নিয়েও তিনি লিখেছিলেন।
সর্বশেষ খবরে (১৭ আগস্ট দুপুরে) জানলাম, ফরিদপুরের কোনো আইনজীবি প্রবীর শিকদারের পক্ষে মামলা লড়তে আদালতে দাঁড়াবেন না। ফরিদপুর বারের এক নিয়মানুযায়ী কোনো আইনজীবি কারো বিরুদ্ধে মামলা করলে সেই আসামীর পক্ষে বারের অন্য কোনো আইনজীবি লড়তে পারবে না।’এই ব্যাপারে দেশের আইনজীবি সমাজের মতামত জানতে চেয়ে ফেসবুকে লিখেছেন ডেইলি অবজার্ভার -এর সিনিয়র রিপোর্টার পুলক ঘটক। বহু পীড়নের শিকার হওয়া আরেক প্রতিবাদী অগ্রজ, সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মিল্টনের কথা দিয়েই লেখাটি শেষ করছি। তিনি লিখেছেন, “প্রবীর শিকদার আওয়ামী লীগ করে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখে এক পা রাজাকারদের দান করে, ক্র্যাচে ভর দিয়ে হেটে নিজ শহর ছেড়ে এখন আওয়ামী পুলিশের হেফাজতে। আমাদের তথাকথিত সুবিধাবাদী দালাল সাংবাদিক নেতারা কি করবেন? শালারা .. ”
প্রসঙ্গত, দেশের আরেক ধনকুবেরের মালিকানাধীন অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত একটি লেখাতেই ‘বিজনেস টাইকুন’ খ্যাত মুসা বিন শমসেরকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিলো। এরই প্রতিবাদ সরূপ প্রবীর মুসাকে নিয়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার লেখাগুলো পুনঃপ্রকাশ করতে থাকেন। পুলিশ আটকের কয়েক ঘণ্টা আগেও - ‘জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের'!’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি লেখা নিজের ফেইসবুক একাউন্ট থেকে শেয়ার করেন প্রবীর, সঙ্গে লেখেন- “যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ছে ! রেহাই নেই কারও !”
প্রবীরের আরেকটি ‘ফেসবুক স্ট্যাটাস’ |
কতিপয় পুরানো পোস্টঃ
সময় হুমকী আর হত্যালীলার
মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...
সর্বোচ্চ সংকর জাতের সঙ্কট
সাংবিধানিক পিতা আইনে অনাত্মীয় !
রাষ্ট্রীয় শিশ্ন - ধর্ষন, খুন এবঙ ...
দেশত্যাগ কি নভেরার প্রতিবাদ?
বাংলা জাগবেই জাগবে...
আহা কী অর্জন - কারচুপি, বর্জন ...
ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ
বর্ষবরণে বস্ত্রহরণ কী পরিকল্পিত !‘
জার্নালিজম’ বনাম ‘ক্যাপিটালিজম’!
এ কোন উগ্রবাদের মহড়া ...
যদি মনে শঙ্কা বিরাজে, সরকার লাগে কি কাজে ?
বিএম কলেজের একাংশে নারীরা নিষিদ্ধ !
বিশ্বের চেয়ে দেশের শান্তিরক্ষা কঠিন !