Powered By Blogger
নাঈমুল ইসলাম খান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নাঈমুল ইসলাম খান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২১ আগস্ট ২০১৫

নুরুলদ্বয়ের মহালোচিত পুত্রেরা

নুরুলদ্বয়ের মহালোচিত পুত্রেরা
তাদের একজনের নাম নুরুল ইসলাম খান, অপরজনের খন্দকার নুরুল হোসেন নুরু মিয়া। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই নুরুলদ্বয় যথাক্রমে কুমিল্লা ও ফরিদপুরের প্রভাবশালী রাজাকার ছিলেন। মানবতাবিরোধী বহু অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। তাদের পুত্রদ্বয়ও আজ বিভিন্ন অপরাধের অভিযুক্ত হয়ে মহালোচিত। প্রথম জনের পুত্র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান। আর পরের জনের পুত্র স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল বাণিজ্য নিয়ে ইদানীং এই নুরুল পুত্রদ্বয় প্রায় একই সুরে কথা বলছেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদকারী সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকেও তারা সমালোচনা করছেন একই তালে। তাদের এই দৃশ্যমান আঁতাত এবঙ ক্ষমতার প্রতিপত্তি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সাধারণ মানুষের মনে স্রেফ শঙ্কা জাগাচ্ছে, হয়ত হতাশাও। কারণ ওই পুত্রদ্বয়ের মধ্যে যিনি এখন মন্ত্রী - তিনি নিজেও পাকিস্তানী বাহীনির পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি আবার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই (মেয়ের শ্বশুর)।
আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের স্বামী হওয়ার সুবাদে সেই ১৯৯০-৯১ সাল থেকে ব্যাপক পরিচিত পাওয়া এক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নাঈমুল ইসলাম খান। সাম্প্রতিক এক কলামে তিনি লিখেছেন - “বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক অ্যাক্টিভিজম করেন। দেখা উচিত, সাংবাদিকতা এটা অনুমোদন করে কি-না। এটা নিয়ে তো কোনো আইন নাই। সাংবাদিকতা কোনো আইন মেনে করা হয় না। কিন্তু আমি বুঝি যে, এটা সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। এটাকে বলে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট।” তাকে জিজ্ঞেস করতে মন চায়, সাংবাদিকরা অ্যাক্টিভিস্ট হলে কনফ্লিক্টটা মূলত কার ইন্টারেস্টে ঘটে? তিনি কি এটা একটু পরিস্কার করবেন? তার কি মনে হয় একজন সাংবাদিকের অন্য কোনো, বিশেষত প্রতিবাদী সত্ত্বা থাকা উচিত নয়? সাংবাদিক হওয়া মানেই কি প্রতিবাদের অধিকার হারিয়ে যাওয়া? প্রবীর সিকদারের যে স্ট্যাটাসটি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, লিখেছেন - ‘এটি কি জার্নালিস্টিক স্ট্যাটাস?’; সেই স্ট্যাটাসটি মূলত কোন ঘটনার পরম্পরায় দেয়া তা কি তিনি যথেষ্ঠ ঘেঁটে জেনেছেন? নিয়মিত টকশো’তে গিয়ে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে তিনি যে কথার খৈ ফোটান, তা কি এক্টিভিজম নয়?
কারো বেয়াদবী মনে হলে ক্ষমা করবেন। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, এই দেশে প্রকৃত সাংবাদিকরা সোচ্চার হলে সবচেয়ে বিপাকে পরে যান ধান্দাবাজ ‘সাংবাদিক সাহেব’ আর ‘সাংবাদিক নেতা’ গোষ্ঠী। তারা সব সময় চায় দেশের সকল সাংবাদিক তাদের মতো কারো না (লেওড়ার) ছায়াতলে থেকে উপর মহলের পারপাস সার্ভ করুক, নয়ত নিজেই সাংবাদিক সাহেব বা নেতা হয়ে উঠুক। বস্তুত যারা নেহাতই সাংবাদিকতার স্বার্থে সাংবাদিকতা করছেন, সোচ্চার হচ্ছেন বিভিন্ন অন্যায় ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে; ‘সাংবাদিক সাহেব’ আর ‘সাংবাদিক নেতা’ গোষ্ঠীই তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু।

এর আগে প্রাণনাশের শঙ্কায় সাংবাদিক প্রবীর শিকদার স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, “তিনি (সাংবাদিক প্রবীর) যে অভিযোগ আনতেছে এটাকে পাগলের পাগলামি ছাড়া আমি আর কিছুই মনে কারি না। তার সাথে আমার কনফ্লিক্টের কোন ইস্যুই নাই।”

মুক্তিযুদ্ধে পিতাসহ পরিবারের ১৪ সদস্যকে হারানো প্রবীর শিকদার মূলত ফরিদপুরের হিন্দু সম্পত্তি দখল এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে লেখালেখির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। এর জন্য ওই মন্ত্রীসহ আরো দুজনকে দায়ী করে ফেসবুকে লেখার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে গণদাবির মুখে তিন দিনের মাথায় রিমাণ্ড চলাকালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এ নিয়ে গত ক’দিন ধরে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে - মেইনস্ট্রিম ও সোস্যাল মিডিয়া। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার কথাও বলেছে ভিনদেশী বেশ কয়েকটি মিডিয়া। বিব্রত ঘোর আওয়ামী সমর্থকরাও।
এ লেখাটি প্রস্তুতকালে এক লেখক ও নাট্যনির্মাতা অগ্রজ ভেতরবাক্সে বার্তা পাঠিয়ে জানতে চাইলেন - ‘প্রবীর শিকদার নিয়ে এই আলোচনায় মন্ত্রীর দখলদারির বিষয়টা চাপা পরে গেল না’তো? তিনি কি পার পেয়ে যাবেন সংখ্যালঘুদের জমি-ভিটা জোড় করে অল্প টাকায় কিনে নিয়ে তাদের দেশ ছাড়া করার ঘটনায়?’ কোনো জবাব দিতে পারিনি তাকে। কিন্তু তার প্রশ্ন দুটো সাথে সাথেই নাঈমুল ইসলাম খান -এর লেখাটির শেষাংশ পুনরায় স্মরণে এলো।
স্বঘোষিত ওই রাজাকারপুত্র লিখেছেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নানা রকম নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার। এটা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়। এটার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো দল জড়িত নয়। তবে একটা পার্টিকুলার অভিযোগ সত্যও হতে পারে। একজন হয় তো সঠিকভাবে জমিটা কিনেছেন কিন্তু আমি যদি তাকে পছন্দ না করি সে তখন তার বিরুদ্ধে লেগে গেলাম। বলে যে হিন্দুর জমি জোর করে নিয়েছে। খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে, ওই লোকটাও ওই জমিটা কিনতে চেয়েছিলেন। না পেরে মিথ্যে অভিযোগ ছড়িয়ে বিষয়টাকে ভিন্নরূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন।”

সাংবাদিকতার লেবাসে অর্থ-আত্মসাতের বহু-অভিযোগে আক্রান্ত আলোচিত ওই ‘সাংবাদিক সাহেব’ মূলত কি বোঝাতে চেয়েছেন - তা সবাই যে একই মাত্রায় বুঝবেন, এমনটা আমি আশা করি না। তবে ওনার কথার সুরের সাথে অভিযুক্ত মন্ত্রীর কথার সুরে যে মিল আছে তা বোধকরি সকলেই টের পাবেন। ফরিদপুরের ভজনডাঙার অরুণ গুহ মজুমদারের মালিকানাধীন দয়াময়ী ভবন নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে তাদের স্বপরিবারে দেশছাড়া করার ব্যাপারে দেয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন - অন্যের উপকার করতে গিয়েই তিনি বিপদে পরেছেন!
যাকগে, আশার কথা হচ্ছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরে হিন্দু সম্পত্তি দখলের যে অভিযোগ করেছেন তার সত্যতা যাচাইয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কামরুজ্জামান সেলিমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অপর দুই সদস্য হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ও সদর উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার খলিলুর রহমান। এ বিষয়ে গত ১৭ অগাস্ট চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে কমিটি প্রধান সাংবাদিকদের বলেছেন, পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আরো একটি বিষয় উল্লেখ করছি এখানে। ২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারিয়েছিলেন দুই সন্তানের জনক প্রবীর শিকদার। তার অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে মুসার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ওই হামলা চালিয়েছিলো। এই মূসা আবার প্রধানমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর)। উল্লেখিত নুরুলদ্বয়ের দুই পুত্রের কর্মকাণ্ডের কল্যাণে তিনি কিন্তু আজ আর অতটা লাইম লাইটে নেই। মিডিয়ার ফোকাস ঘুরে গেছে। যদিও মুক্ত হয়ে এক সাক্ষাতকারে প্রবীর জানিয়েছেন তাকে নুলা মুসা অর্থাৎ বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের বিষয়েই বেশি প্রশ্ন করেছে পুলিশ।
মুক্তির পর পরিবার ও সমর্থকদের সাথে প্রবীর শিকদার

পূর্ববর্তী পোষ্টঃ
প্রবীর প্রকৃত প্রতিবাদী অগ্রজ
newsreel [সংবাদচিত্র]