Powered By Blogger
ঈয়ন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ঈয়ন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০৬ ডিসেম্বর ২০২৩

আরো কিছু দুর্বল কবিতা


দৃষ্টিপাঠ

নতশিরে নিজের
গভীরে নিবিষ্ট
যে দৃষ্টি প্রগাঢ়;
নমিত সে চাহনি
পড়ে নিতে পারো।
অবনত হয়—
নত হতে আরো;
মিশে যাওয়ার
অপেক্ষায় রয়;
দ্রবীভূত মন কারো।

জীবন্মৃত

যখন কিছু ভাবতে আর ইচ্ছে না করে
তখনও মনমরা দিনগুলো মনে পড়ে;
গ্লানিবিষে মরেছি কতবার বাঁচার তরে
বহু মানুষই এক জীবনে বারবার মরে!

মৃত্যু

বুকের ভিতর শুনেছি যার পদধ্বনি
ক্রমাগত আসছে কাছে প্রতিক্ষণই
সে ছাড়া কেই-বা এত কাছে আসে
সদাই যে ঘন্টা বাজায় শ্বাসে শ্বাসে
তাল-বেতালে মনে বাজে আগমনী
আনচান তার সুরটা খুব কাছে শুনি
ডানা মেলে দূরাকাশে আনমনা চোখ
আর কতটা সময় বাকি করতে পরখ
না থাকার মানে বোঝার অপেক্ষাতে
অজানার স্বর গাঢ় হয় রাত-প্রভাতে
যেন শেষ হতে চায় সুদীর্ঘ গান কোনো
কোথাও যা কেউ সত্যি গায়নি কখনো

আফটারলাইফ

সহস্র ছায়াপথ পেরিয়ে আসা সংকেতের মতো হারিয়ে যাচ্ছি। ঘুম ভাঙার পর নিজেকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। সেচ্ছায় নড়তেও পারছি না। অথচ বাতাসে ভাসছি। কিছুতেই কিছু পাচ্ছি না, হাত-পা-চোখ-মুখ, কিচ্ছু না। একসময় মনে হলো ঘুমের মধ্যই হয়তো মরে গেছি। ভাবনাটা আসতে না আসতে নিজেকে বেমালুম ভুলে গেলাম। আমি কে তা কোনোভাবেই আর মনে করতে পারলাম না। শুধু টের পাচ্ছিলাম, দ্রুত গলে যাচ্ছে মন; বিস্ময় বা বেদনায়!

বধভেদ

কেবল কোরবানির ঈদেই নয়,
বছর জুড়ে গ্রাম থেকে শহরে
জবাই হতে আসে অজস্র প্রাণ।
যার মধ্যে গরু, ছাগল, এমনকি
মহিষেরাও নিমেষে মুক্তি পায়!
শুধু মানুষ কাটা হয় খুব ধীরে—
রসিয়ে রসিয়ে তাদের জান
নিংড়ে খায় বিবিধ বিজ্ঞান।

০৩ জানুয়ারী ২০২২

পাঁচটি ‘দুর্বল কবিতা’ | ঈয়ন

ছবি: ঈয়ন

অনাগত সময়ের গান
পাখির ভাষায় লিখতে চেয়ে গান
হরিণেরা সব দুলে উঠেছিল খুব
শনির ডানায় ভর করে ডাংগুলি
খেলতে খেলতে হয়েছে যারা চুপ
নোনাবনের মাছেরাই শুধু জানে
কতটুকু সুর হারিয়েছে স্বাদুজলে
আর কতটা রয়েছে গেঁথে জিনে
টিকে থাকার অসুর ক্ষমতাবলে
থেমেছে কবে উভচর মহামারী
সহস্র যুগ কেটে গেছে কিভাবে
ভাবার জন্য নতুন কোনো প্রাণ
আবার যখন দুনিয়ায় জন্মাবে
তখনও কেউ লিখবে কবিতা
শিশিরে আদ্র হবে পাতার মন
দুর্বল গেছো সাপেরও বিশ্বাসে
উঠবে কেঁপে নলখাগড়ার বন

দেবাদ্রিতা দরিয়া
নিশ্চয় তুমি সেই সামগ্রিক মহাসত্তার সন্তান;
যাকে নিযুত ঈয়নে ভগবান, আল্লাহ, ঈশ্বরসহ
আরো নানা নামে ডেকেছে তোমার স্বজাতি;
যার বাইরে কেউ নেই, কিছু নেই— আমিও না।
জীবন তোমার শিক্ষক, পিতামাতা বাহক মাত্র
জেনে নিও— আমৃত্যু সব মানুষই নির্ঘাত ছাত্র;
আর স্মরণে রেখো হে কন্যা দেবাদ্রিতা দরিয়া
—এই নীল গ্রহে তুমিই আমার পিতৃসত্তার মা।

বার্ষিক প্রত্যাশা
নতুন ভোরটা উঠবে হেসে
কবে মীন শিকারীর দেশে
মহামারীও কাঁপবে কেশে
থুরথুরে এক বুড়ির বেশে
নয়া হাওয়া-জল-মমতায়
অনাচার বাড়বে কোথায়
কী গনিতে কোন সমতায়
কারা কেন কত ক্ষমতায়
কিংবা বছর কেমন যাবে
কে বেশি ও কে কম খাবে
কার ফানুসে জ্বলে আলো
কারা বলে আঁধারি ভালো
ভাবলে কি-তা দোষের হবে
কেই-বা ভাবনা মুক্ত কবে—
কার খেলা কে কেন পুতুল
না জেনে সাঁতারে কী ভুল
লোভে ডুবে আটকে জালে
ভয়ের কুমির মনের খালে
খেয়ে দেবে প্রতিবাদী ভাষা
অদরকারি বার্ষিক প্রত্যাশা
বিলবিলাস
কখনো বিলবিলাস হয়নি যাওয়া
দাদাজানের মুখে শুনেছি শুধু নাম
তিনি জেনেছেন তাঁর দাদার বয়ানে
ওটাই আমাদের পূর্বসূরীদের গ্রাম
ঠিক চিনি না বিলবিলাসের মাটি
জানি না মোটে কেমন তার হাওয়া
নদ-নদী আছে নাকি আশোপাশে বা
সাগরটাকে যায় কি দেখতে পাওয়া
তবুও কখনো নামটা পড়লে মনে
ছুটোছুটি করে অগোছালো দৃশ্যরা
অপরিচিত সময়ের ধ্বনি শুধায়
বিলবিলাস ছেড়েছিলি কেন তোরা
প্রাককলন
কোন মিজানে যে মাপতেছ প্রেম
বা কবে কতটা প্রেমিক ছিলেম
প্রেম যে পুরানো মদিরার মতো
-বয়সে বাড়ে তার স্বাদ ও ক্ষত

ছবি: ঈয়ন

২৫ অক্টোবর ২০১৯

বালের্জীবনামার | ঈয়ন

ফুরায়ে যাওয়া কবির অসম্পূর্ণ শেষ কবিতার মতো বিষণ্ন মদের পাত্রে লেগে আছে অজস্র জন্মের চূড়ান্ত চুম্বনের চিহ্ন। সঙসারের প্রতিটি অলস দুপুরে যা পাঠ করতে করতে জেনেছি—
না হলে পরিচর্যায় কোনো ভুল
মরা গাছেও ফুটতে পারে ফুল।
অথচ ভেজাকাকের মতো স্থবির বৃষ্টির দিনগুলোয় ইদানীঙ স্মৃতিপথে পায়চারী ছাড়া কিছুই তেমন করা হয় না। যে মায়ার সরণি ধরে খানিকটা আগালেই ইচ্ছাহীনতার ধুধু প্রান্তর। যেখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো না লাগার যাবতীয় কারণের দিকে তাকিয়ে মোহাবিষ্ট হওয়া মাত্রই মনে পড়ে—
নিজের কাছেও দুর্বহ
হয়েছি সেই কবে;
—শৈশবে!
যদিও শিশুতোষ মেঘ সদৃশ ঘন হতাশার কোনো রঙ থাকে না। বরঙ তা যেন বর্ণচোরা ছল ও কৌতূহল। মোহের জলে ডুবে নিতে গিয়ে শ্বাস, মিটেছে পিয়াস। ভুল, দুর্বলতা ও অতৃপ্তির বাতাসে দোদূল্যমান বিষণ্ণতার ক্লান্তিতে তামাম স্পৃহা পুরোপুরি ‘নাই’ হওয়ার বেদনায় তাই থমকে ভেবেছি—
ধুর, এ শরীরের ভার
আত্মায়—
বইতে পারছে না আর।
আপাতত কিছুই করার ক্ষমতা নেই হয়ত, কিছুই না। ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন অলিগলিতে আপোষ করতে করতে চূড়ান্তভাবে ভেঙে গেছি। সুস্থতা হারিয়েছে বিশ্বাস, কিঙবা হারিয়েই গেছে—
এবঙ ফের হারিয়ে ফেলছি সব
দেহের কাঁধে বুলছে মনের শব।

১৫ জুলাই ২০১৭

পিতৃদর্শন

পিতা শরীফ আলী আহমেদ’কে উৎসর্গকৃত
না কবিতা না চিঠি
বৈশ্বিক টানা-পড়েনের দহনে নিজেকে সযত্নে পুড়িয়ে প্রতিটি অন্যায় আবদারও অক্লান্ত মনে পূরণ করে যাওয়া মধ্যবিত্ত বাবাকে কবিতা লিখতে দেখিনি কখনো। তবে তার চোখেই প্রথম দেখেছি মহাকাব্যিক উদাসীনতা ভর করা নির্লিপ্ততা; যা অবলীলায় এক শৈশবকে চিনিয়েছে বিক্ষিপ্ত ভাবনার দ্বান্দ্বিকতায় বর্ণিল বিচ্ছিন্নতা। তাই পরে আর বুঝে নিতে কোনো ভুল হয়নি।
প্রিয় বাবা,
তুমিও আসলে তাদের মতোই বর্ণচোরা কবি
যাদের ললাটের ভাঁজে জমে থাকা কাব্যেরা
লুকনোই থাকে, কেউ ঠিক বুঝতে পারে না
হয়ত কবি নিজেও না; তবু তারা এমনই ...
পরিতাপ
হুট করে খুব নিতাইয়ের মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে, সাথে ফকির চাঁনের রুটি। আহা তাদের রসায়নে স্বাদের যে বিউটি তা লুটে নেয়া ফরজ, স্বর্গীয় ডিউটি। শৈশবে চেনা সে রস, স্মরণেও চিত্ত হয় অবশ, ছোটে চন্দ্রদ্বীপে। হারিয়ে যাওয়া ঘরবরণের মালাই আর কালোজাম বা দধিঘরের মাখনের স্বাদও লেগে আছে জিভে। ধুরও —কেমনে যে ফিরি ফের শৈশবে। কত দিন বসি নাই বাবার ফনিক্স সাইকেলের ক্যারিয়ারে। কি সব ব্যারিয়ারে আটকে বড় হয়ে গেছি, বা হতে বাধ্য হয়েছি ধীরে।
পিতার এ ছবিগুলো নানা সময়ে আমার-ই তোলা
নিরাধার
বাড়িয়ে আত্মার ঝড়
পৌঁছে মনের অন্দর
কাঁপিয়ে নামায় বৃষ্টি
পিতার বিষাদ দৃষ্টি
কুপুত্রের কাব্য
সময়ের পথ ধরে বয়স বেড়েছে আপনার। ভাবনার অনাচারে নাজুক হয়েছে দেহ। তবে মুছে যায়নি অতীত। মনে মনে ঠিকই জেগে আছে। যেজন্য প্রবীণ চোখের ভ্রমেও উজ্জল আত্মজ বধের রাগ। বাল্যকালে মননে গেঁথে যাওয়া এ নজরের মানে খুঁজতে গিয়েই ভাবতে শিখেছি। যা ভুলিনি, ভুলতে দেননি। খুনের দলিল লুকানো শরীরে আজও যখন জাগে বুনোগন্ধ নেয়ার সাধ; তখন আপনার প্রাণ যে ঘ্রাণ খোঁজে তা মূলত তাজা লাশের, স্বীয় সন্তানের। হয়ত সাবেক স্ত্রীর ওপর জমে থাকা ক্ষোভের অনলে সতত জ্বলছে আপনার অবচেতন। যারই জেরে সদা জ্বালাতে চেয়েছেন পুরানো সংসারের সব স্মৃতি, এমনকি একমাত্র জলজ্যান্ত প্রমাণও। আদতে এর নেপথ্যের তত্ত্ব মুছে দিতে চায় নিজস্ব কিছু অপ্রিয় সত্য। তবু আপনাকে ভালোবাসি অবিরত। কারণ আমি সন্তান, টানটা জন্মগত। এখন আবার একটু পরিণত; তাই অপরাধবোধও সজাগ। 
প্রিয় পিতা, আপনার হাতে লেগে আছে আমার শৈশব হত্যার দাগ!

২০ মার্চ ২০১৭

কথাবলি নির্বচন

একুশে বইমেলা’১৭ চলাকালে কথাবলি ডটকম প্রকাশিত
 সাক্ষাতকারটি ব্লগ পাঠকদের জন্য সংরক্ষিত রইলো
[ঈয়ন। মূলত একজন আপাদমস্তক কবি। পেশায় সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহক ও প্রকাশক। দাপ্তরিক নাম শরীফ খিয়াম আহমেদ। জন্মেছেন খুলনায়। শেকড় ও বেড়ে ওঠা বরিশালে। বর্তমানে থাকছেন ঢাকায়। ২০১৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভাবনাংশ’ প্রকাশিত হয়। আর এই বছর বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার নতুন কবিতার বই ‘গাধার গয়না’। তার সঙ্গে কথাবলির পক্ষ থেকে কথা হলো। — নির্ঝর নৈঃশব্দ্য।]
আপনার নতুন কবিতার বই ‘গাধার গয়না’ নিয়ে কিছু বলেন।
নিজস্ব প্রকাশনী কাদাখোঁচা প্রকাশিত আমার (গাধার) এ গ্রন্থের (গয়নার) সত্ত্ব উন্মুক্ত। অর্থাৎ যে কেউ এর যে কোনো লেখা যে কোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। বইটির মূল পরিবেশক র‌্যামন পাবলিশার্স। সাদাকালো মলাটের চার ফর্মার এ গ্রন্থটি ‘শ্রেষ্ঠত্বের প্রত্যাশাবিমুখ বিশ্বাসীদের উৎসর্গকৃত’। যেখানে একই পরম্পরার ৬২টি লেখা রয়েছে। ২০১৩ সালে শুরু করেছিলাম সিরিজটি । প্রাথমিক পাণ্ডুলিপি গুছিয়ে এই পরম্পরার ভূমিকা লিখেছিলাম ২০১৫-এর জুলাইয়ে। যেখানে বলছি ‘জ্ঞানকাঠামোর অনমনীয়তাই হচ্ছে মৌলবাদিতা। আর মৌলবাদিরা মূলত দু’প্রকার এক. ছাগু প্রকৃতির (ডান) দুই. চুতিয়া প্রকৃতির (বাম); অর্থাৎ লেফট-রাইট করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদ।’

নিজের বই নিয়ে অনুভূতি কী?
বই প্রকাশের পর নিজেকে সার্বজনীন, মানে সকলের মনে হয়। কারণ প্রতিটি বই আসলে এক একটা সময়ের চিন্তা, দর্শন ও প্রবণতার দলিল। পাঠকের উদ্দেশ্যে উত্থাপনের আগ মুহুর্ত অবধি যার সব লেখাই একান্ত নিজস্ব বা ব্যক্তিগত। তবে গ্রন্থাকারে প্রকাশের পর তা পাঠকের, মানে সবার হয়ে যায়। তখন যে কেউ সেই লেখার ভাব, দর্শন বা বোধ গ্রহন ও প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ পায়।

ছোটোবেলায় কিছু হতে চাইতেন?
অনেক কিছু। পাইলট, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, চকোলেট বা আইসক্রিম ব্যবসায়ি থেকে শুরু করে ক্রিকেটার, সন্ত্রাসী, রকস্টার, নেতা এমন আরো অনেক কিছুই হতে চেয়েছি।

আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে মানে কতোদিন ধরে লেখালিখি করছেন?
দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায়, মানে ১৯৯২ সালে প্রথম স্বপ্রণোদিত হয়ে লেখার ইচ্ছে জাগে। স্কুলের খাতার পেছনে লিখেছিলাম - ‘আসবে যত/যাবেও তত/কিছুই থাকবে না/তাই বলে কী/সেই কবুতর/ আর আসবে না.../কবুতরটি/এখন না হয়/ পরেও আসতে পারে/তাই বলে কী/বলবে তুমি/আর আসবে নারে...’। পরের বছর এ লেখাটি বরিশালের স্থানীয় পত্রিকা ‘দৈনিক প্রবাসী’-তে ছাপা হয়েছিলো ।

আপনার লেখালেখির শুরু কেনো বলে মনে হয়?
প্রথম লেখার ইচ্ছে জাগার ঠিক আগের বছর বাবা-মায়ের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ আমায় অজস্র কৌতূহলী দৃষ্টিসংকুল ও বহু প্রশ্নবহুল একটি কাল উপহার দেয়। বস্তুত ওই সময়টায় যে বোধ জন্ম নেয় তা আমায় হুট করেই কিছুটা বড় করে দেয়। সমবয়সী বন্ধু বা মুরুব্বী স্বজনেরা যা একদমই টের পায়নি। কারণ আমি সবার কাছে থেকে একটু লুকিয়ে - দূরে দূরে থাকতে পছন্দ করতাম। আবার কাছে থাকলেও তাদের কারো সাথে খুব একটা কথা বলতাম না। মনে মনে নিজের সাথেই শুধু কথা বলতাম, অনেক কথা। একদিন হঠাৎ সেই কথাগুলোই লিখতে ইচ্ছে হলো।

আপনি কি শেষ পর্যন্ত কবি হতে চান, নাকি অন্যকিছু?
সত্যি কথা বলতে আমি কখনোই শুধু কবি হতে চাইনি, বা অন্যকিছু। কাব্যচর্চা বা কবিতা লেখাকে একটি সহজাত প্রবণতা ছাড়া বিশেষ কিছু ভাবতে পারিনি। জীবনের বিস্তীর্ণকাল জুড়ে দৈনন্দিন ভাবনার পরম্পরাই মননে কবিতা আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে। কখনো তা লেখা হয়েছে, কখনো হয়নি। তবে হ্যাঁ, আমি কথা বলতে চেয়েছি। প্রথমের নিজের সাথে, পরবর্তীতে স্ব-জাতির তথা মানুষের সাথে। অনেক সময় অমানুষ, অপার্থিবতার সাথেও হয়ত। এমন তাগিদ থেকেই জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে স্রেফ কথা বলার মাধ্যম হিসেবেই কবিতা, গল্প, প্রতিবেদন, প্রবন্ধ, গান, চিত্রকলা, আলোকচিত্র বা চলচ্চিত্রের মতো নানা ভাষা ব্যবহার করেছি। নিশ্চিত থাকুন এর কিছুই বিশেষ কোনো দৃষ্টিভঙ্গী, চিন্তা বা বোধ প্রচার ও প্রসারের খায়েসে ব্যবহৃত হয়নি। ভাব আদান-প্রদানই মুখ্য আমার কাছে। আর এ কাজে যে কোনো শিল্পমাধ্যম বা ভাষাই দুর্দান্ত। আবারো বলি, আমি কবি বা কিছুই হতে চাই না আসলে । স্রেফ মন যখন যা চায় তাই-ই করতে চাই। মানে আমৃত্যু শুধু মনের কথাই শুনতে চাই।

আপনার কাছে কবিতা কী?
এটা আগেও এক সাক্ষাতকারে বলেছি। আমার অমুক, আমার তমুক – জাতীয় যে আমিত্ব নিয়ে মানুষ ঘুরে বেড়ায়, তাকে হত্যা করে তামাম নিজস্বতাকে সার্বজনীন করার চেষ্টাই করে যায় কবিরা। আর সেই চেষ্টায় জন্ম নেয় কবিতা।

আপনার মাথার মধ্যে কবিতার ইমেজ কেমন করে আসে?
বস্তুত নানাবিধ বোধ থেকে।

বিশেষ কারো কবিতা কি আপনাকে প্রভাবিত করে?
আশৈশব ‘মানুষ ও গ্রন্থ – দুটোই যে পাঠ্য' ছিলো। তাই চিন্তায় ও প্রকাশে বিভিন্ন মানুষ ও গ্রন্থের প্রভাব অনিবার্য। বাঙলাদেশের সংবিধান থেকে কুরান, ডারউইন থেকে ভগবান—সবই প্রভাবিত করেছে আমাকে। অতএব কাব্যচর্চার ক্ষেত্রেও আমার যে ভাষাভঙ্গী দাঁড়িয়েছে তা নিশ্চয়ই প্রভাবমুক্ত নয়। তবে বিশেষ কারো মতো করে কবিতা লেখার চেষ্টা করি নাই কখনো। আবার খুব সচেতনভাবে নিজস্বতা আরোপেরও চেষ্টা করা হয় নাই। বাকিটা পাঠক, তাত্ত্বিকরাই ভালো বুঝবেন – বলতে পারবেন।

আপনার নিয়মিত কার কার কবিতা পড়তে ভালো লাগে, কেনো লাগে?
সবার কবিতাই ভালো লাগে। কারণ - ‘কোথায় আমি নাই/আমিই’তো সবাই।’

কবি এরং কবিতার দায় সম্পর্কে আপনার মত কী?
কবি ভেদে কবিতা লেখার উদ্দেশ্যই আলাদা; তাই আলাদা প্রত্যেকের দায়ভাবও । আমি কোনো দায়বোধ থেকে কবিতা লেখি না। এই ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততাকে গুরুত্ব দেই, স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজি। অবশ্য অন্যভাবেও ভাবা যায়। হয়ত বিভিন্ন দায়ের গ্লানিমুক্ত হতেই লেখি। লিখতে গিয়ে নিজের মাঝে লুকাই। মানবাত্মার জন্মদায় মেটাতেই হয়ত পয়দা হয় কবিতা। 

আপনার সমকালীন কবিদের লেখা কবিতা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
সমকালের যাদের কবিতা পড়া হয়েছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো কবিতা ভালো লেগেছে। আবার কোনো কোনোটা খারাপ লেগেছে। এটা মূলত পাঠকালীন সময়ের মানুসিকাবস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন। এই মুহুর্তে একটি লাইন আমাকে যে ইমেজ দেবে, একটু পরই তা ভিন্নতর হতে বাধ্য। এ কারণে একই কবিতা কখনো খুবই ভালো, আবার কখনো খুবই ফালতু লেগেছে।

এই সময়ে যারা কবিতা লিখেন তাদের কবিতা বিষয়ে বলেন। তাদের অনেকের মাঝে কি স্টান্টবাজি লক্ষ করেন না?
ব্যক্তিগতভাবে আমি কবিতাকে সাধারণের কাছে ফেরানোর তাগিদ অনুভব করেছি খুব। সমকালীন অসংখ্য কবির কবিতা আমায় এ ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে। যাদের লেখাগুলো পড়লেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা শূণ্যে ভাসছেন না।যারা জানেন এই মাটি ও মানুষের সাথে কবিতার সম্পর্ক আজকের নয়; বহু পুরানো। এক সময় ছন্দে ছন্দে কথা বলা ছিলো বাঙালের স্বাভাবিক প্রবণতা। পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শিক্ষা বা পাশ্চত্যের প্রভাব – বাংলার সাহিত্যকে একদিকে সমৃদ্ধ করেছে, অন্যদিকে করেছে বিভেদাক্রান্ত। অশিক্ষিত কবিয়ালদের সহজবোধ্য দেশজ ঢঙ বা ছন্দের চেয়ে শিক্ষিত মহাকবিদের গণবিচ্ছিন্ন দুর্বোধ্য উপমার সামাজিক কদর বাড়িয়েছে পশ্চিমা চেতনা। সমকালীন কবিতা পড়ে মনে হচ্ছে এই ‘কলোনিয়াল ট্রমা’ কাটিয়ে ওঠার সময়ট চলছে। ফের মাটি ও মানুষের কাছেই ফিরছে কবিতা; এবং তা এখনকার কবিদেরই হাত ধরে। যে কারণে আমার সময়ের কোনো কোনো কবি যদি স্টান্টবাজিও করেন, তাও আমার ভালো লাগে।

দশক বিভাজন বিষয়ে আপনার মত কী?
এটা সাহিত্য শিক্ষক, সমালোচক বা সম্পাদকদের ভাবার বিষয়, আমার মতো দায়হীন কাব্যচর্চাকারী কবি বা অকবির নয়। নিজেকে কখনো দশকাক্রান্ত দেখতে চাই না। 

শিল্প-সাহিত্যেক্ষেত্রে পুরস্কার প্রকৃতপক্ষে কী কোনো ভূমিকা রাখে?
যেহেতু আমরা এখন বাজার সভ্যতার বাসিন্দা সেহেতু অর্থ-পুরস্কার কোনো শিল্প-সাহিত্যচর্চাকারীর কয়েকটা দিন বা ঘন্টাকে আনন্দময় করে নিশ্চয়ই। তবে প্রকৃত শিল্প-সাহিত্যচর্চাকারী, অর্থাৎ যারা শুধু চর্চার আনন্দে শিল্প-সাহিত্য করেন; তাদের পুরস্কারের আশা করতে দেখিনি কখনো। 

সবশেষে আপনি আপানার এমন একটা স্বপ্নের কথা আমাদের বলেন, যেটা বাস্তবায়ন করতে আপনার চেষ্টা আছে।
আপাতত তামাম স্বপ্নেরা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা শিল্প কেন্দ্রীক। যেগুলো বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই মুহুর্তে মূলত চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে হাঁটছি। ইতিমধ্যে শুরু করেছি নিজের প্রথম সিনেমার কাজ। এছাড়া বেশ কিছু নতুন প্রকাশনার কাজও হাতে নিয়েছি। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা - দুটো ক্ষেত্রেই আমি মূলত শিশুদের জন্যই বেশী কাজ করতে চাই। আর এ জন্য শুধু চেষ্টা নয় - আমি যুদ্ধ করতেও রাজি।

পুরানো সাক্ষাতকার
ঘুমঘোরে কথোপকথন
অলস দুপুরে আলাপ...

০৯ জানুয়ারী ২০১৭

‘গাধার গয়না’ পড়ুন, পড়ান..

গাধাঙ্কন : ধীরা [Dhira] | নামাঙ্কন : কাজী [Kazi]
এখন অবধি মোট ৫১ জন পাঠকবন্ধু ‘অনলাইনে’ গাধার গয়না ‘অর্ডার’ করেছেন। এটি মূলত একটি কাব্যগ্রন্থ। একই পরম্পরার ৬২টি লেখা নিয়ে গত ডিসেম্বরের শেষ দিনে প্রকাশিত হয়েছে। আমার কবি সত্ত্বার প্রত্যাশা নানা মত ও পথের মানুষ এগুলো পড়বেন। বিশেষত সাধারণেরা, যারা কবিতা পড়াকে ভাবেন আঁতলামি বা বিলাসিতা।

তারা কেন বইটি পড়বে তা নিয়ে ভাবতে গিয়েই মনে হয়েছে, শুধুমাত্র প্রিয়জনেরা বইটির ব্যাপারে তাদের আগ্রহী করে তুলতে পারে। আর দুনিয়ার প্রতিটি মানুষই কারো না কারো প্রিয়জন। আবার নিজ কর্মগুনে আপনাদের অনেকেই আজ অজস্রের আপন। যে কারণে আমি চাই আপনিও - ‘যাচাই করুন বাঙাল প্রাণের জবান / গাধার গয়না পড়ুন এবঙ পড়ান’।

আগ্রহী হলে আপনার ডাক ঠিকানা পাঠিয়ে বইটির ফরমায়েশ জানান এর মুখবই পাতার (facebook.com/gadhargoyna) ভেতরবাক্সে। ২৫ শতাংশ ছাড়ে সাদাকালো মলাটের চার ফর্মার এ গ্রন্থটি মিলবে মাত্র ৬০ টাকায়। সাথে ৪০ টাকা ‘বিলি ব্যয়’ প্রযোজ্য। অর্থাৎ সর্বসাকূল্যে মাত্র একশ টাকা ব্যয়ে ঘরে বসেই এটি পেয়ে যাবেন আপনি।

এক্ষেত্রে অগ্রীম টাকা দেয়ার কোনো দরকার নেই। বই হাতে পেয়ে জানালেই কেবল আপনাকে টাকা পাঠানোর ‘বিকাশ সংখ্যা’ দেয়া হবে। শুভেচ্ছা, ভালো থাকবেন।

০১ জানুয়ারী ২০১৭

ভাবলিপি

যাপনের পরিক্রমায় পুরানো উপলদ্ধি নড়েনি একটুও। বহুকাল আগেই বোধ হয়েছিলো এ মন মূলত এক পরিব্রাজক। যে এ দুনিয়ায় কেন এসেছে তা ঠিক ঠিক জেনে নিতে অস্থির ভ্রমণচারী আশৈশব। যে কারণে নানা পথে অক্লান্ত আনন্দ নিয়ে নিবিষ্ট ধ্যানেই ছুটেছে জীবন। ছুটতে ছুটতে কখনো কখনো ক্লান্ত হয়েছে। আবার উঠে দাঁড়িয়েছে নতুন পথের দেখা পেয়ে, বা সন্ধানে। অবশেষে কোনো এক লগ্নে সে যে রূপের বা পথের সন্ধান পেয়েছে, তা ভ্রমণ করা বেশ দমের ব্যাপারই বটে। তবে আশা মরে নাই। কারণ মনের জানা আছে, তার কাছে যে পথের সন্ধান এনে দেন, দমের খবরও তিনি ঠিকই রাখেন। শাস্ত্র বলে তার ইচ্ছে বিনা বাতাসও এক চুল নড়ে না। অস্থিরতায় অসার করেই তিনি ফের স্থির করেন আমায়। 
০৩ জানুয়ারি ২০১৬
পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা
newsreel [সংবাদচিত্র]