Powered By Blogger

১৫ জুলাই ২০১৭

পিতৃদর্শন

পিতা শরীফ আলী আহমেদ’কে উৎসর্গকৃত
না কবিতা না চিঠি
বৈশ্বিক টানা-পড়েনের দহনে নিজেকে সযত্নে পুড়িয়ে প্রতিটি অন্যায় আবদারও অক্লান্ত মনে পূরণ করে যাওয়া মধ্যবিত্ত বাবাকে কবিতা লিখতে দেখিনি কখনো। তবে তার চোখেই প্রথম দেখেছি মহাকাব্যিক উদাসীনতা ভর করা নির্লিপ্ততা; যা অবলীলায় এক শৈশবকে চিনিয়েছে বিক্ষিপ্ত ভাবনার দ্বান্দ্বিকতায় বর্ণিল বিচ্ছিন্নতা। তাই পরে আর বুঝে নিতে কোনো ভুল হয়নি।
প্রিয় বাবা,
তুমিও আসলে তাদের মতোই বর্ণচোরা কবি
যাদের ললাটের ভাঁজে জমে থাকা কাব্যেরা
লুকনোই থাকে, কেউ ঠিক বুঝতে পারে না
হয়ত কবি নিজেও না; তবু তারা এমনই ...
পরিতাপ
হুট করে খুব নিতাইয়ের মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে, সাথে ফকির চাঁনের রুটি। আহা তাদের রসায়নে স্বাদের যে বিউটি তা লুটে নেয়া ফরজ, স্বর্গীয় ডিউটি। শৈশবে চেনা সে রস, স্মরণেও চিত্ত হয় অবশ, ছোটে চন্দ্রদ্বীপে। হারিয়ে যাওয়া ঘরবরণের মালাই আর কালোজাম বা দধিঘরের মাখনের স্বাদও লেগে আছে জিভে। ধুরও —কেমনে যে ফিরি ফের শৈশবে। কত দিন বসি নাই বাবার ফনিক্স সাইকেলের ক্যারিয়ারে। কি সব ব্যারিয়ারে আটকে বড় হয়ে গেছি, বা হতে বাধ্য হয়েছি ধীরে।
পিতার এ ছবিগুলো নানা সময়ে আমার-ই তোলা
নিরাধার
বাড়িয়ে আত্মার ঝড়
পৌঁছে মনের অন্দর
কাঁপিয়ে নামায় বৃষ্টি
পিতার বিষাদ দৃষ্টি
কুপুত্রের কাব্য
সময়ের পথ ধরে বয়স বেড়েছে আপনার। ভাবনার অনাচারে নাজুক হয়েছে দেহ। তবে মুছে যায়নি অতীত। মনে মনে ঠিকই জেগে আছে। যেজন্য প্রবীণ চোখের ভ্রমেও উজ্জল আত্মজ বধের রাগ। বাল্যকালে মননে গেঁথে যাওয়া এ নজরের মানে খুঁজতে গিয়েই ভাবতে শিখেছি। যা ভুলিনি, ভুলতে দেননি। খুনের দলিল লুকানো শরীরে আজও যখন জাগে বুনোগন্ধ নেয়ার সাধ; তখন আপনার প্রাণ যে ঘ্রাণ খোঁজে তা মূলত তাজা লাশের, স্বীয় সন্তানের। হয়ত সাবেক স্ত্রীর ওপর জমে থাকা ক্ষোভের অনলে সতত জ্বলছে আপনার অবচেতন। যারই জেরে সদা জ্বালাতে চেয়েছেন পুরানো সংসারের সব স্মৃতি, এমনকি একমাত্র জলজ্যান্ত প্রমাণও। আদতে এর নেপথ্যের তত্ত্ব মুছে দিতে চায় নিজস্ব কিছু অপ্রিয় সত্য। তবু আপনাকে ভালোবাসি অবিরত। কারণ আমি সন্তান, টানটা জন্মগত। এখন আবার একটু পরিণত; তাই অপরাধবোধও সজাগ। 
প্রিয় পিতা, আপনার হাতে লেগে আছে আমার শৈশব হত্যার দাগ!

কোন মন্তব্য নেই:

newsreel [সংবাদচিত্র]