Powered By Blogger
আ স ম আবদুর রব লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
আ স ম আবদুর রব লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০২ মার্চ ২০২১

কারফিউ ভঙ্গ করে বাঙালীর ব্যারিকেড

আলোকচিত্রঃ জগলুল হায়দার

আজ ২ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিন। একাত্তরের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। 

ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলেন। এ ঘটনা তখন সামরিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডকে নাড়িয়ে দেয়। সেদিন রবের সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফায়েল আহমদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং নূরে আলম সিদ্দিকী। বিশাল সেই সভাতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার এবং শেষ অবধি সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়।

সভার শুরুতে সমবেত ছাত্রসমাজ বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করে। সভা শেষে এক বিরাট শোভাযাত্রা স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে দিতে বায়তুল মোকাররম গমন করে।

একই দিন দুপুরে সচিবালয়ের পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ানো হয়। এরই জেরে গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসানের পরিবর্তে প্রাদেশিক সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেনেন্ট-জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সরকার সামরিক আইন বিধি জারি করে সংবাদপত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এছাড়া সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। রাতে হঠাৎ বেতার মারফত ঢাকা শহরে কারফিউ জারির ঘোষণা করা হয়।

কারফিউ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শ্রমিক এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা কারফিউ-বিরোধী প্রবল শ্লোগান তুলে সরকারি নির্দেশ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। তাদের শ্লোগান ছিলো ‘সান্ধ্য আইন মানি না’, ‘জয় বাংলা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর”।

এমন সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে পরদিন থেকে সকল সরকারি অফিস, সচিবালয়, হাইকোর্ট ও অন্যান্য আদালত, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পিআইএ, রেলওয়ে এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠনে হরতাল ঘোষিত হয়। শেখ মুজিবের উদ্দেশ্যে একটি প্রচারপত্রে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার আহবান জানায়।

সমস্ত শহরে কারফিউ ভঙ্গ করে ব্যারিকেড রচনা করা হয়। ডিআইটি এভিনিউর মোড়, মনিং-নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে নয়টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। বিরাট এক জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে গভর্নর হাউজের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও গুলি চালানো হয়। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চলে।

এর আগে আ স ম আবদুর রব যে পতাকা উত্তোলন করেন তা মূলত ১৯৭০ সালেন ৭ জুন ‘নিউক্লিয়াস’-এর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘জয়বাংলা বাহিনী’র ফ্ল্যাগ হিসেবে নকশা তৈরি করে পরিকল্পনাকারীরা, যা পরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে গৃহীত হয় এ পরিকল্পনায়। ‘নিউক্লিয়াস’-এর সিদ্ধান্তেই পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা উত্তোলনের সময় রব ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এই পতাকাই আজ থেকে স্বাধীন বাংলা দেশের পতাকা।’

এছাড়া এই দিন ন্যাপ, জাতীয় শ্রমিক লীগ আন্দোলনে একাত্মতা জানায়। ন্যাপ (মো) পল্টনে এবং জাতীয় লীগ বায়তুল মোকাররমে প্রতিবাদ সভা করে।
newsreel [সংবাদচিত্র]