Powered By Blogger
গণমাধ্যম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
গণমাধ্যম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১০ জানুয়ারী ২০২১

দীনেশ দাসকে মনে পড়ে

দেখতে দেখতে নয়টি বছর হয়ে গেছে। ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ঢাকার কাকরাইল মোড়ে বাস চাপায় নিহত হন সাংবাদিক দীনেশ দাস। ফেসবুকের ফিরে দেখা কর্মসূচীর কল্যাণে আজ ফের মনে এলো সেই সময়টা। যেখানে নিজের বৃত্তান্তে নিজের সম্পর্কে দাদা লিখে রেখেছিলেন, ‘আই অ্যাম রোমান্টিক পারসন।’ তাঁর মৃত্যুর চারদিন পর ‘নিশ্চিন্ত দীনেশদা’ শিরোনামে লিখেছিলাম -
হয়ত মৃত্যুই দীনেশদাকে নিশ্চিন্ত করেছে। তবে তিনি আদৌ তৃপ্ত হবেন কি? অর্থ সংকটে পরিবারের ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রীক যত উদ্বিগ্নতা তাকে মৃত্যুর পূর্ব-মুহুর্ত পর্যন্ত তাড়া করে বেড়িয়েছে; তা থেকে কি তিনি এভাবে মুক্ত হতে চেয়েছেন? এত শুভাকাঙ্খী, এত পরিচিত জন। কেউ কি তাকে একটি চাকরি দিতে পারতেন না? একজন সৎ সংবাদকর্মির ২৫ বছরের অভিজ্ঞতার কি কোনো মূল্যই ছিলো না? অথচ এখন তাঁর মৃত্যু কত মূল্যবান হয়ে গেল। সরকার দীনেশদার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বৌদিকে একটি চাকরি দেয়ার পাশাপাশি তার মেয়ের পড়াশুনার দায়িত্বও নিয়েছে। আবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, এমনকি জামায়াত নেতারাও টাকা দেয়ার কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ইতিমধ্যেই টাকা দিয়েছেন। অথচ শেষ কটা দিন কী অর্থ কষ্টেই না তাঁর কেটেছে। সদাহাস্যোজ্জল শিশুমনা মানুষটার মুখে হাসিও দেখিনি কত দিন। এখন হয়ত তিনি সবই দেখছেন। আর বৌদির কাছে গিয়ে বলছেন, 'বলেছিলাম না, একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। অথৈর পড়াশুনা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।'
তাঁর মৃত্যুর চার বছর পর দিনটি স্মরণ করিয়ে দেওয়ায় লেখক ও সাংবাদিক মাহফুজ জুয়েল বলেছিলেন, “চোখে পড়ার মতো মেঠো-বিচরণ ছিলো দিনেশদার। একসময় যেখানেই যেতাম সেখানেই তাঁকে দেখতে পেতাম! মাঠে-ঘাটে দেখতে দেখতেই পরিচয়। তারপর টুকটাক গল্প হয় রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে, কর্মসূচিতে, পল্টনে, প্রেসক্লাবে, মুক্তাঙ্গনে, মুক্তিভবনে, বামপন্থীদের সংবাদসন্ধানী সাংবাদিক; শ্যামসুন্দর মায়াময় নিরীহ মুখের দিনেশদা। মনে পড়িয়ে মন খারাপ করে দিলে।আহা, দিনেশদা।” আরো দুই বছর পর কবি ও সাংবাদিক রুদ্রাক্ষ রহমান লিখেছিলেন, “দীনেশ আমার তুই-তুইবন্ধু ছিলো। আমরা অনেকটা সময় এই শহরে ভাতের জন্য হেঁটেছি। সাক্ষী আশিস সৈকত! এবং আমরা এতোটাই ব্যর্থমানুষ যে দীনেশের জন্য কিছুই করতে পারিনি! অতএব ওর কাছে ক্ষমা চাই, বার বার।”
পলিটিক্যাল রিপোর্টিং, মূলত ইসলামি ও বামদলগুলো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল দাদার সাথে। তিনি ছাড়াও শ্রদ্ধেয় সেলিম জাহিদ,  ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ, রাশিদুল হাসান রাশেদ, বন্ধুপ্রতীম রাজীব আহমদ তখন ওই অঙ্গনের ডাকসাইটে প্রতিবেদক। দাদার সাথে আমার চেয়ে ঢের বেশী স্মৃতি আছে ওই তিনজনের। তবুও আজ এখানে ফের টুকে রাখছি নয় বছর আগের লেখাটির কিয়দাংশ। 

সত্যি কথা বলতে কি, দীনেশ'দা মারা যাওয়ার আগে নিজেও কখনো বুঝিনি যে তাকে কতটা ভালোবাসি। হয়ত আমার মত আরো অনেক সহকর্মিই তা বুঝতে পারেননি। গত বছরে (২০১১ সালে)বন্ধ হয়ে যাওয়া শীর্ষ নিউজ ডটকম ও শীর্ষ কাগজে কাজ শুরুর সময়ে ‘পলিটিক্যাল বিটের রিপোর্টার’ ছিলাম। আমাকে জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ বাম ও ইসলামী মিলিয়ে ৩৭টি দলের খবর রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এরই বদৌলতে ওই সরল প্রাণ মানুষটির সাথে আমার পরিচয় হয়। জামায়াত-শিবিরের অফিস, মুক্তাঙ্গন, পল্টন, মুফতী আমিনীর ডেরা থেকে শুরু করে কমিউনিষ্ট পার্টির অফিস। কত জায়গায়ই না এক সাথে কত সময় কেটেছে। এরপরও ওই বিটে যতদিন ছিলাম তা ঘনিষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে প্রথম দিনেই আপন করে নেয়ার গুনটি দাদার মাঝে বেশ ভালো মত ছিল। আর তাঁর রসিক চরিত্রের সচ্ছতায় মুগ্ধ না হওয়াটাই ছিল অস্বাভাবিক। যে কারণে ‘পার্লামেন্ট রিপোর্টিং’ শুরু করার পরও দাদার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়নি কখনো। ফেসবুকে খুব একটা সক্রিয় না হলেও তাঁর ইয়াহু মেইলটি প্রায় নিয়মিতই খোলা থাকত। মাঝেই মাঝেই ‘চ্যাটবক্সে’ হাজির হতেন দাদা। খুব বেশী সময়ের জন্য না হলেও বেশ জমজমাট আলাপ হতো। অবশ্য গত দেড়-দুই মাস ধরে সেখানও অনিয়মিত ছিলেন তিনি। হয়ত  দৈনিক আমাদের সময় থেকে চাকরি চলে যাওয়ার পর আর ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগটাই পাননি। আসলে দীনেশ'দার বহুপুরানো সহকর্মী সালাম ফারুক ভাইয়ের একটি লেখা শেয়ার করার জন্য বসেছিলাম; কিন্তু নিজেই কত কিছু বলে ফেললাম। আর শুধু একটি কথাই বলি। এখন বুঝি, দাদাকে অনেক ভালোবাসি।

চাকরির টেনশনমুক্ত দীনেশদা’ শিরোনামে একটি অনলাইনে লিখেছিলেন ফারুক ভাই; যা হুবুহু তুলে দিচ্ছি -
মৃত্যুর মাত্র ১৪ ঘণ্টা আগে শনিবার রাত সাতটায় ঘনিষ্ঠজন, কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার আজিজুল পারভেজকে বলেছিলেন, 'পকেটে মাত্র ২০ টাকা আছে।' রোববার সকালে মাটির ব্যাংক ভেঙে জমানো টাকা থেকে ১০০ টাকা হাতে দিয়েছিলেন স্ত্রী। জানা গেছে তিন মাসের বাড়িভাড়াও বাকি। ২৫ বছরের সাংবাদিকতার জীবনের এই পর্যায়ে এসে এমন হালেই দিন কাটছিল তাঁর। তিনি দৈনিক আমাদের সময় থেকে 'অন্যায়ভাবে' সদ্য চাকরিচ্যুত হওয়া দীনেশ দাশ, আমার দীনেশদা। এখন আর তার সেই টাকার চিন্তা নেই, নেই বাড়িভাড়ার টেনশন, জমানো টাকা থেকে তাকে দিনের খরচ দিতে হবে না বৌদির। সাংবাদিকতা করে অর্জন করা একমাত্র সম্বল মোটরসাইকেলটি নিয়ে তাকে আর ঘুরতে হবে না কাজের খোঁজে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গত নির্বাচনের আগের রাতে তার মোটারসাইকেলে উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'দাদা, পাওনা টাকাগুলো আমাদের সময় পে (পরিশোধ) করেছে কি-না।' জবাবে তিনি বলেছিলেন, 'না, টাকা-পয়সা তো কিছু দিলো না। তবে আমাদের সময় থেকে লোন নিয়ে হলেও এ মোটরসাইকেলটাই এখন আমার একমাত্র সম্বল।' সেই একমাত্র সম্বলটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। রোববার সকালে একমাত্র মেয়ে অথৈকে ভিকারুননিসা স্কুলে নামিয়ে দিয়ে ডিআরইউ’র দিকে যাওয়ার পথেই বাসের চাপায় নিভে গেল তার প্রাণপ্রদীপ। তার আর যাওয়া হলো না প্রিয় প্রাঙ্গণটিতে।

গত বছর আমি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর থেকে অমর একুশে বইমেলা কাভার করেছিলাম। দাদার ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে কালের কণ্ঠের আজিজুল পারভেজ ভাই, সমকালের মুন্না ভাই আর আমি ছিলাম নিয়মিত। তাই কখনো আসতে দেরি হলে দাদা ফোন করে বলে দিতেন, তার জন্যও যেন বইয়ের কাভার, বই ইত্যাদি কালেক্ট করে নিই। আমরা তা করতাম। মাঝেমধ্যে দাদার মোটারসাইকেলে চড়ে ফিরতাম অফিসে। আর মাত্র ২৩ দিন পরই শুরু হবে এবারের বইমেলা। দাদাকে ছাড়া বইমেলা- এখনই বিশ্বাস হতে চাইছে না। আমাদের সময়ে দীর্ঘ সময় কাজ করার সুবাদে দীনেশদা’র সান্নিধ্য পেয়েছিলাম খুব ভালোভাবেই।

শুরুতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে খানিকটা দুর্বল দাদাকে প্রায়ই সাহায্য করতে হতো আমার। ক’দিন আগেও ফেসবুকে দাদার আইডি নিয়ে একটি জটিলতার সমাধান করে দিয়েছিলাম। দাদার স্নেহমিশ্রিত আবদারে কখনোই বিরক্ত হতাম না। ঠাট্টা-মশকরা করতে করতেই তার কাজটুকু করে দিতাম। ডিআরইউ’র মিডিয়া সেন্টারে বসে দাদার সেইসব আবদার আর পূরণ করতে হবে না। বয়সে ১০/১২ বছরের বড় হতে পারেন। কিন্তু কথাবার্তা, আচার-আচরণ কোনো দিক থেকেই সেই পার্থক্য বুঝতে দিতেন না দীনেশদা। নানান ঢঙের টিটকারি, দুষ্টুমি সবই চলত তার সঙ্গে। যেন বাল্যকালের বন্ধু।

জ্ঞানপিপাসু দীনেশ দাশের সংগ্রহে ছিল দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দলিলের অনুলিপি। সামান্য বেতনে চাকরি করেও খুঁজে খুঁজে এসব যোগাড় করতেন তিনি। অনুকরণীয় চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের স্মৃতি ধরে রাখতে তিনি গঠন করেছিলেন মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি সংসদ। প্রতি বছর এ সংসদ থেকে সেরা রিপোর্টার বাছাই করে পুরস্কৃত করা হতো। সর্বশেষ আয়োজনটি ছিল গত ২৯ ডিসেম্বর। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও তিনি প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকতেন জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সংবাদ সংগ্রহে। নিজ ধর্মের প্রতি প্রবল ঝোঁকও অসাম্প্রদায়িক এই মানুষটিকে দায়িত্ব থেকে টলাতে পারেনি। ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাই তার হয়ে উঠেছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। আর তাই অনেকেই মজা করে তার নাম উচ্চারণের সময় আগে ‘মাওলানা’ শব্দটি জুড়ে দিতেন।

আমি আমাদের সময় ছেড়েছি বছর তিনেক আগে। কিন্তু গুটি কয়েক সমবয়সী সহকর্মীর মতো দীনেশদা’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বিলীন হয়ে যায়নি। একবার বৌদি’র অসুস্থতায় রক্তের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন আমাকেই। ছুটে গিয়েছিলাম। সব সেরে রাতে ফিরেছিলাম দুইটায়। সেই থেকে দাদার স্নেহের মাত্রা যেনে বেড়ে গিয়েছিল অনেক। 

কিছুদিন আগে আমরা সহকর্মী বন্ধু বেলাল হোসেনকে হারালাম, নিখিল ভদ্রকে পঙ্গু হতে দেখলাম। আর এবার হারালাম শান্ত-নিরীহ, বিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ বন্ধুজন দীনেশদাকে। ভুয়া লাইসেন্সেধারী অদক্ষ ও বেপরোয়া বাসচালকদের হাতে আর কতো সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ খুন হলে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়বে? আর কতো প্রাণহানি ঘটলে বিআরটিএ তার দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে?

০৮ ডিসেম্বর ২০১৬

সত্যও ঘেন্নায় লুকাই!

হায়রে অনলাইন, হায়রে সাংবাদিকতা ..
মাঝে মাঝে জেষ্ঠ্যদের ভয় লাগে তাই
বলে ফেলা প্রিয় সত্যও ঘেন্নায় লুকাই

বস্তুত লুকিয়ে ফেলছি প্রভাবশালী এক প্রতিবেদক বা গণমাধ্যমের পরিচয়। সদ্য প্রয়াত কবি ও রাজনীতিবিদ মাহবুবুল হক শাকিল সম্পর্কে যে বা যারা লিখেছিলো, ‘সাবেক এই ছাত্রনেতার কবিতা লেখার শখ ছিল।’ যারই প্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, ‘এ আচরণ নিঃসন্দেহে বিবিসির (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিঙ করপোরেসন) খালাতো ভাই সুলভ, হতাশাজনক।’ নেহাতই নির্মোহ ক্ষোভে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারির উদ্দেশ্যে আরো বলেছিলাম-

ওহে জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, আপনি কি জানেন না
কবি ও কবিতা শখ বা সৌখিনতা চোদে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমনটা লেখার কিছুক্ষণের মধ্যেই (৬ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকেলে) আলোচ্য এই প্রতিবেদক মোবাইল ফোনে কল করে আমায় রীতিমতো ধমক লাগান। পূর্বপরিচয়ের সুবাদে জেষ্ঠ্যতার অধিকার নিয়ে তিনি হয়ত এমনটা করতেই পারেন। কিন্তু বড় ভাই যখন জেরা শুরু করলেন - শাকিল ভাইকে কবে থেকে চেন? তার কয়টা কবিতা পড়েছ? তার কয়টা বই বের হয়েছে? - তখন রীতিমতো ভড়কে পেলাম। জানালাম আমি শুধু ফেসবুক আর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার লেখা পড়েছি। যে কারণে তিনি যে কবি সে ব্যাপারে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। এরপর ভাই যে স্বরে শুভকামণা জানালেন, তাতে বেশ দ্রুতই স্মরণে এলো তিনি কতটা প্রভাবশালী; আদতেই কতটা ক্ষমতাধরের সন্তান। যে কারণে তার কথাগুলোকে খুবই গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে লেখাটি সাথে সাথেই লুকিয়ে ফেলি। এরপর তাকে বার্তা পাঠিয়ে এ খবর জানাই। একইসঙ্গে ক্ষমা করার অনুরোধ জানিয়ে বলি, ‘ক্ষমতাশালীদের রাগকে আমি ভয় পাই।’ যদিও আদতে যতটা ভয় পেয়েছি তার চেয়ে ঘেন্নাই জেগেছে বেশি। পরিশেষে করুণা। ভদ্রলোক মনে হয়ত মনে করেন, কবিরা শখেই কবিতা লেখেন।
পরে অবশ্য বিতর্কিত ওই বাক্য সংশোধনও করেছে গণমাধ্যমটি। মূলত একাধিক কবির সক্রিয়তার কারণে। এসব নিয়ে ভাবতে চাইছিলাম না আর। কিন্তু পরে বুঝলাম না লেখা অবধি বিষয়টা মাথা থেকে তাড়াতে পারবো না। যে কারণে মেলা দিন পর ফের ব্লগের সরণাপন্ন হওয়া। এরই মধ্যে কবি ডাল্টন সৌভাত হীরার লেখা সূত্রে জানলাম, দেশের প্রভাবশালী আরো দৈনিক প্রথম আলো শাকিলের কবি পরিচয় বেমালুম ভুলে গেছে। সর্বত্র তার পেশাগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ই গুরুত্ব পেয়েছে। যে কারণে ডাল্টন লিখেছেন, ‘শাকিল ভাইয়ের পরিচয় "কবি'।দ্য ট্রু পোয়েট।এ পরিচয়কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা পৃথিবীর সমস্ত কবিতার অপমান।’ 
‘ধনী কৃষকের অবৈধ সন্তান ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো’ - গত ২৬ নভেম্বর 
কিউবার জাতির পিতার মৃত্যুর পর এমন শিরোনাম দিয়ে তাকে নিয়ে 
সংবাদ পরিবেশন করেছিলো বিবিসির বাংলা বিভাগ। মূল সংস্করণে-
 এ তথ্য যদিও এতটা গুরুত্ব পায়নি। তবুও সে সময় লিখেছিলাম, 
 সংবাদের ভেতরকার একটি সংবাদ শিরোনাম দেখে কি অবাক হচ্ছেন? 
আমি কিন্তু হচ্ছি না। কারণ অনেক আগেই কে জানি বলেছিলো 
‘বিবিসি’ মানে ‘বিলাতি বাঞ্চোত চুতিয়া’! তারই প্রমাণ ইহা।
মৃত্যুর আট দিন আগে শাকিল লিখেছিলেন, ‘মূলত আমি কেউ না, না রাজনীতিবিদ, না কবি, না গল্পকার, এমনকি নই তুমুল সংসারী| এক অভিশপ্ত চরিত্র যার কিছুই থাকতে নেই| সাধু কিংবা সন্ত নই, চোখ জ্বলজ্বল করে জীবনের লোভে| চন্দ্রাহত, বিষাদ এবং ভূতগ্রস্থ, বসে থাকি ব্রহ্মপুত্র ঘাটে, শেষ খেয়ার অপেক্ষায়..’। তার এ লেখাটির কথা স্মরণে এলো আরেক কবি ও সাংবাদিক সাঈফ ইবনে রফিকের লেখা দেখে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চাকরি করার পরও শাকিল কবি ছিলেন, রাজকবি ছিলেন না। রাজকবি হওয়ার বাসনা থাকলে তিনি মরতেন না। অমরত্বের চেষ্টা চালিয়ে যেতেন।’ 

গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে শাকিলের ভূমিকার কথাও এখন প্রকাশিত হচ্ছে অনেকের লেখায়। জানা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের উচ্চমহলে কথিত ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের একমাত্র আশ্রয়টি শেষ হয়ে যাওয়ার খবরও। তাকে ঘিরে নায়োকচিত বহু গল্প, গাঁথা প্রকাশিত হচ্ছে এখন। তবে আমার বন্ধু শিমুল সালাউদ্দিনের কথাটিই মনে ধরেছে। তার মতে, ‘শাকিল প্রকৃত কবির মতোই মারা গেছেন।’ মৃতদেহ উদ্ধারের মাত্র ১৬ ঘন্টা আগে ফেসবুকে পোস্ট করা তার শেষ লেখাটিও ছিলো একটি কবিতা। 

ছবিঃ ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)
এলা, ভালবাসা, তোমার জন্য

কোন এক হেমন্ত রাতে অসাধারণ
সঙ্গম শেষে ক্লান্ত তুমি, পাশ ফিরে শুবে।
তৃপ্ত সময় অখন্ড যতিবিহীন ঘুম দিবে।
তার পাশে ঘুমাবে তুমি আহ্লাদী বিড়ালের মতো,
তার শরীরে শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে, মাঝরাতে।
তোমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে এক প্রগাঢ় দীর্ঘশ্বাস,
আরো একবার তোমাদের মোথিত চুম্বন দেখবে বলে।
মৃতদের কান্নার কোন শব্দ থাকে না, থাকতে নেই,
নেই কোন ভাষা, কবরের কোন ভাষা নেই।
হতভাগ্য সে মরে যায় অকস্মাৎ বুকে নিয়ে স্মৃতি,
তোমাদের উত্তপ্ত সৃষ্টিমুখর রাতে।

প্রকাশক রবীন আহসানের কথা দিয়ে শেষ করছি। তিনি লিখেছেন, ‘এদেশে কিন্তু এখনো কবির দাম বেশি বই বিক্রি না হইলেও কবির কদর বেশি! তাই হাজার হাজার মানুষ কবিতার বই ছাপাইতে আসে ট্যাকাটুকা দিয়া! কত কত কবির জীবন নষ্ট হয়-কবিতা হয় না! কবিতা হয় না তারা পুরস্কার কেনে পয়সা দিয়া সভা-সমিতি করে বেরায়! এসবের মধ্যে দিয়া আবার ও প্রকৃত কবি আত্মহত্যা করে কবি হয়ে ওঠে এদেশের মানুষের প্রিয় কণ্ঠস্বর...’
newsreel [সংবাদচিত্র]