Powered By Blogger

০৮ ডিসেম্বর ২০১৬

সত্যও ঘেন্নায় লুকাই!

হায়রে অনলাইন, হায়রে সাংবাদিকতা ..
মাঝে মাঝে জেষ্ঠ্যদের ভয় লাগে তাই
বলে ফেলা প্রিয় সত্যও ঘেন্নায় লুকাই

বস্তুত লুকিয়ে ফেলছি প্রভাবশালী এক প্রতিবেদক বা গণমাধ্যমের পরিচয়। সদ্য প্রয়াত কবি ও রাজনীতিবিদ মাহবুবুল হক শাকিল সম্পর্কে যে বা যারা লিখেছিলো, ‘সাবেক এই ছাত্রনেতার কবিতা লেখার শখ ছিল।’ যারই প্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, ‘এ আচরণ নিঃসন্দেহে বিবিসির (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিঙ করপোরেসন) খালাতো ভাই সুলভ, হতাশাজনক।’ নেহাতই নির্মোহ ক্ষোভে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারির উদ্দেশ্যে আরো বলেছিলাম-

ওহে জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, আপনি কি জানেন না
কবি ও কবিতা শখ বা সৌখিনতা চোদে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমনটা লেখার কিছুক্ষণের মধ্যেই (৬ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকেলে) আলোচ্য এই প্রতিবেদক মোবাইল ফোনে কল করে আমায় রীতিমতো ধমক লাগান। পূর্বপরিচয়ের সুবাদে জেষ্ঠ্যতার অধিকার নিয়ে তিনি হয়ত এমনটা করতেই পারেন। কিন্তু বড় ভাই যখন জেরা শুরু করলেন - শাকিল ভাইকে কবে থেকে চেন? তার কয়টা কবিতা পড়েছ? তার কয়টা বই বের হয়েছে? - তখন রীতিমতো ভড়কে পেলাম। জানালাম আমি শুধু ফেসবুক আর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার লেখা পড়েছি। যে কারণে তিনি যে কবি সে ব্যাপারে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। এরপর ভাই যে স্বরে শুভকামণা জানালেন, তাতে বেশ দ্রুতই স্মরণে এলো তিনি কতটা প্রভাবশালী; আদতেই কতটা ক্ষমতাধরের সন্তান। যে কারণে তার কথাগুলোকে খুবই গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে লেখাটি সাথে সাথেই লুকিয়ে ফেলি। এরপর তাকে বার্তা পাঠিয়ে এ খবর জানাই। একইসঙ্গে ক্ষমা করার অনুরোধ জানিয়ে বলি, ‘ক্ষমতাশালীদের রাগকে আমি ভয় পাই।’ যদিও আদতে যতটা ভয় পেয়েছি তার চেয়ে ঘেন্নাই জেগেছে বেশি। পরিশেষে করুণা। ভদ্রলোক মনে হয়ত মনে করেন, কবিরা শখেই কবিতা লেখেন।
পরে অবশ্য বিতর্কিত ওই বাক্য সংশোধনও করেছে গণমাধ্যমটি। মূলত একাধিক কবির সক্রিয়তার কারণে। এসব নিয়ে ভাবতে চাইছিলাম না আর। কিন্তু পরে বুঝলাম না লেখা অবধি বিষয়টা মাথা থেকে তাড়াতে পারবো না। যে কারণে মেলা দিন পর ফের ব্লগের সরণাপন্ন হওয়া। এরই মধ্যে কবি ডাল্টন সৌভাত হীরার লেখা সূত্রে জানলাম, দেশের প্রভাবশালী আরো দৈনিক প্রথম আলো শাকিলের কবি পরিচয় বেমালুম ভুলে গেছে। সর্বত্র তার পেশাগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ই গুরুত্ব পেয়েছে। যে কারণে ডাল্টন লিখেছেন, ‘শাকিল ভাইয়ের পরিচয় "কবি'।দ্য ট্রু পোয়েট।এ পরিচয়কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা পৃথিবীর সমস্ত কবিতার অপমান।’ 
‘ধনী কৃষকের অবৈধ সন্তান ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো’ - গত ২৬ নভেম্বর 
কিউবার জাতির পিতার মৃত্যুর পর এমন শিরোনাম দিয়ে তাকে নিয়ে 
সংবাদ পরিবেশন করেছিলো বিবিসির বাংলা বিভাগ। মূল সংস্করণে-
 এ তথ্য যদিও এতটা গুরুত্ব পায়নি। তবুও সে সময় লিখেছিলাম, 
 সংবাদের ভেতরকার একটি সংবাদ শিরোনাম দেখে কি অবাক হচ্ছেন? 
আমি কিন্তু হচ্ছি না। কারণ অনেক আগেই কে জানি বলেছিলো 
‘বিবিসি’ মানে ‘বিলাতি বাঞ্চোত চুতিয়া’! তারই প্রমাণ ইহা।
মৃত্যুর আট দিন আগে শাকিল লিখেছিলেন, ‘মূলত আমি কেউ না, না রাজনীতিবিদ, না কবি, না গল্পকার, এমনকি নই তুমুল সংসারী| এক অভিশপ্ত চরিত্র যার কিছুই থাকতে নেই| সাধু কিংবা সন্ত নই, চোখ জ্বলজ্বল করে জীবনের লোভে| চন্দ্রাহত, বিষাদ এবং ভূতগ্রস্থ, বসে থাকি ব্রহ্মপুত্র ঘাটে, শেষ খেয়ার অপেক্ষায়..’। তার এ লেখাটির কথা স্মরণে এলো আরেক কবি ও সাংবাদিক সাঈফ ইবনে রফিকের লেখা দেখে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চাকরি করার পরও শাকিল কবি ছিলেন, রাজকবি ছিলেন না। রাজকবি হওয়ার বাসনা থাকলে তিনি মরতেন না। অমরত্বের চেষ্টা চালিয়ে যেতেন।’ 

গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে শাকিলের ভূমিকার কথাও এখন প্রকাশিত হচ্ছে অনেকের লেখায়। জানা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের উচ্চমহলে কথিত ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের একমাত্র আশ্রয়টি শেষ হয়ে যাওয়ার খবরও। তাকে ঘিরে নায়োকচিত বহু গল্প, গাঁথা প্রকাশিত হচ্ছে এখন। তবে আমার বন্ধু শিমুল সালাউদ্দিনের কথাটিই মনে ধরেছে। তার মতে, ‘শাকিল প্রকৃত কবির মতোই মারা গেছেন।’ মৃতদেহ উদ্ধারের মাত্র ১৬ ঘন্টা আগে ফেসবুকে পোস্ট করা তার শেষ লেখাটিও ছিলো একটি কবিতা। 

ছবিঃ ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)
এলা, ভালবাসা, তোমার জন্য

কোন এক হেমন্ত রাতে অসাধারণ
সঙ্গম শেষে ক্লান্ত তুমি, পাশ ফিরে শুবে।
তৃপ্ত সময় অখন্ড যতিবিহীন ঘুম দিবে।
তার পাশে ঘুমাবে তুমি আহ্লাদী বিড়ালের মতো,
তার শরীরে শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে, মাঝরাতে।
তোমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে এক প্রগাঢ় দীর্ঘশ্বাস,
আরো একবার তোমাদের মোথিত চুম্বন দেখবে বলে।
মৃতদের কান্নার কোন শব্দ থাকে না, থাকতে নেই,
নেই কোন ভাষা, কবরের কোন ভাষা নেই।
হতভাগ্য সে মরে যায় অকস্মাৎ বুকে নিয়ে স্মৃতি,
তোমাদের উত্তপ্ত সৃষ্টিমুখর রাতে।

প্রকাশক রবীন আহসানের কথা দিয়ে শেষ করছি। তিনি লিখেছেন, ‘এদেশে কিন্তু এখনো কবির দাম বেশি বই বিক্রি না হইলেও কবির কদর বেশি! তাই হাজার হাজার মানুষ কবিতার বই ছাপাইতে আসে ট্যাকাটুকা দিয়া! কত কত কবির জীবন নষ্ট হয়-কবিতা হয় না! কবিতা হয় না তারা পুরস্কার কেনে পয়সা দিয়া সভা-সমিতি করে বেরায়! এসবের মধ্যে দিয়া আবার ও প্রকৃত কবি আত্মহত্যা করে কবি হয়ে ওঠে এদেশের মানুষের প্রিয় কণ্ঠস্বর...’

কোন মন্তব্য নেই:

newsreel [সংবাদচিত্র]