Powered By Blogger

২৫ নভেম্বর ২০১৭

হাসানাতের ঘরে ফেরার দিন আজ

আজকের পরিবর্তন
২৫ নভেম্বর ২০০৬
রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক মুনির হোসেন এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করিমের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ঠিক ১১ বছর আগের এই দিনে এক শোকাবহ পরিবেশের মধ্যেই পাঁচ বছর পর নিজ এলাকায়, নিজের বাসায় ফিরেছিলেন বরিশাল আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এর আগে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর তিনি শুধু ঘরই নয়, দেশ ছাড়া হয়েছিলেন। মুনির হোসেনের মায়ের হাত ধরে তিনি সান্তণা দেয়ার সময় সংযুক্ত ছবিটি তুলেছিলেন মিজান রহমান। ওই সময় আমিও সশরীরে উপস্থিত ছিলাম। এরপর কীর্তনখোলায় আরো কত জল গড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ফিরে পেয়েছেন নিজের আসন। ইতিমধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে তার পুত্রেরা। বরিশাল প্রেসক্লাবের নামও এখন তার পিতার নামে - আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ প্রেসক্লাব। সেই মুনির হোসেনের ভাই এসএম জাকির হোসেন এখন এই প্রেসক্লবের সাধারণ সম্পাদক। চলতি বছরের আগস্ট থেকে পুনরায় প্রকাশিত হচ্ছে সাপ্তাহিক ইতিবৃত্ত। নব্বইয়ের দশকে এই পত্রিকার জন্ম দিয়েছিলেন মুনির হোসেন। ওদিকে প্রয়াত পীর মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করিমের ছেলে সৈয়দ রেজাউল করিমও বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন তার সাম্রাজ্য। জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ থাকার কৌশলটাও তিনি রপ্ত করেছিলেন পিতার কাছ থেকেই। আহা, স্মৃতি - কত কি বদলেছে, কতই-না বদলেছি! 

তারেকের সামনেই পেটালো ছাত্রদল

দৈনিক যুগান্তর (১০ এপ্রিল ২০০৬)

ছবিটাও বেশ আগের
গল্পটা দশক পুরানো। সেবার তারেক রহমানের সামনেই আমাদের গায়ে হাত তুলেছিলো ছাত্রদলের পাণ্ডারা। শুধুমাত্র এ কারণে ওই সময়ে দৈনিক যুগান্তর ছাড়া অন্য গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি চেপে গিয়েছিলো। এমনকি স্থানীয় যে দৈনিকে আমি কাজ করতাম, তারাও শুধু প্লেট গ্লাস ভাংচুরের খবর দিয়ে সাংবাদিক পিটানোর ঘটনা বেমালুম গুম করে দেয়। কারণ পত্রিকার আওয়ামীপন্থী মালিকের দুই ভাই ছিলেন আবার বিএনপি নেতা।
আরিফুর রহমান
আজও যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো প্রধান আকতার ফারুক শাহীন (Akter Faruk Shahin), আর বর্তমানে ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারে কর্মরত আছেন আরিফুর রহমান (Arif Rahman)। তাকে স্মরণ করতে-ই মনে এলো ছাত্রদল, ছাত্রলীগ এবঙ শিবির; এই তিন সংগঠনের হাতেই আমার পিটুনি খাওয়ার ছবি তুলতে পারা একমাত্র আলোকচিত্রী তিনি। জানি না সেসব ছবি এখনো আছে কি’না!

১৬ নভেম্বর ২০১৭

রাষ্ট্রধর্মের মূলে ভোটের রাজনীতি

মূলত সামরিক ফরমানে (১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ এর ২ তফসিল বলে) বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে প্রস্তাবণার আগে 'বিসমিল্লাহ’ সন্নিবেশিত হয়। পরের বছর এপ্রিলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে আইনসভা এর বৈধতা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২(ক) যুক্ত করা হয়। যাতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটিতে পরিবর্তন এনে লেখা হয় - ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ একইসঙ্গে মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাও ফিরিয়ে আনা হয়।
সম্প্রতি ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। প্রথম বিজয় দিবসে, অর্থাৎ একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে তা কার্যকর করা হয়। পরবর্তী ৪৫ বছরে এটি সংশোধন করা হয়েছে মোট ১৬ বার। একই সময়ের মধ্যে দুই বার রাষ্ট্রপ্রধান হত্যা, দফায় দফায় সামরিক ক্যুসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেছে দেশ। এসব মাথায় রেখে সংবিধানের ৪৬ বছর উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের চতুর্থ পর্বে থাকছে ঢাকায় বসবাসকারী তরুণ প্রকাশক ও সাংবাদিক সৈয়দ রিয়াদের আলাপ। তার সাথেও কথা হয় ফেসবুক চ্যাটবক্সে ।
ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
সৈয়দ রিয়াদ : সংবিধান সংশোধনে যখন ভোটের রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়া হয় তখন আসলে গণতন্ত্র সাংবিধানিক ভাবেই লংঘিত হয়। সংখ্যাগুরুদের খুশি করতে ভোটের রাজনীতিতে সেখানে ‘বিসমিল্লাহ’ ও রাষ্ট্রধর্ম ব্যবহারের ফলে বিষয়টি সাম্প্রদায়িক ও দৃষ্টিকটু-তো হয়েছেই; সেইসঙ্গে সংখ্যালঘুরা তাদের পরিচয় সংকটে পড়েছে। অথচ আমাদের প্রথম সংবিধান কোনো একক ধর্মের জন্য রচিত হয়নি; হয়েছে একটি দেশের জন্য, জনগণের জন্য। তাহলে এখানে আবার ধর্ম আসছে কোথা থেকে?

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
সৈয়দ রিয়াদ : উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যাওয়া পরও যখন ‘বিসমিল্লাহ’ সংবিধানে বহাল থাকে তখন দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়। প্রথমত সর্বোচ্চ আদলতের রায়কে আমাদের গণতন্ত্রে কিভাবে দেখা হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত রায় নিয়ে সরকার যে ধরণের রাজনীতি করেছে তাতে স্পষ্টতেই বোঝা গেছে তারা নিজেদের আদর্শিক জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে। তা না হলে আদালতের এমন রায় অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখাত না অসাম্প্রদায়িক আদর্শে এ সরকার।

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
সৈয়দ রিয়াদ আমাদের সংবিধান, এমনকি এই রাষ্ট্র জন্মেরও আগে থেকে এ জনপদের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের কারণে সংখ্যালঘু সম্পর্কে এক শ্রেণীর স্থানীয় মুসলমানদের মজ্জাগত ভাবে ধারণা হয়ে আছে যে এরা এই দেশের কেউ নন। আদতে তারা তাদের মূর্খতাকে বোঝার পরিবেশ পাচ্ছে না। এর জন্য অবশ্যই সংবিধান দায়ী।

ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
সৈয়দ রিয়াদ : সরকার সংখ্যালঘুবান্ধব নিঃসন্দেহে। কিন্তু ওই যে ভোটের রাজনীতির সমীকরণে তারা সেটা স্পষ্ট করতে পারছে না। দৃশ্যত তাদের অসাম্প্রদায়িক মনোভাব এখানে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর দায়ও তাদের নিতে হবে।সরকার মুখে নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বলছে আর কার্যত সাম্প্রদায়িক আচরণ করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘুদের উপর ইদানীং যে ধরণের আক্রমণ করা হয়েছে তা দেখে মনে হয়েছে এই দেশে সংখ্যালঘুদের ঠাঁই নেই। আর সংবিধান থেকেই যদি জাতি ধর্মের সাথে আপস করে তাহলে সেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে স্বস্তির কিছু দেখছি না।

ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
সৈয়দ রিয়াদ : আমাদের গণতন্ত্র এখনো সুসংহত নয়। নাগরিক অধিকার তলানিতে পড়ে আছে। তাই এসব বিষয়ে আমাদের অগ্রগতি নিয়ে কোনে আশার খবর নেই। বুদ্ধিচর্চা এখানে বিকল। ২০১১ পর থেকে এই অবস্থা উন্নতি হওয়ার কোনো ধরণের কারণ নেই। সাধারণ মানুষের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র এখানে ভয়ংকর। আসলে এই দেশে নাগরিক অধিকার বলে কিছু নাই।

পরম্পরার অন্যান্য লেখা
সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বৈধ করেছে রাষ্ট্র!
সংখ্যালঘু নয় ক্ষমতাই বিষয়..
অসাম্প্রদায়িক ছিলো বলা যাবে না!
..কিভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দাবি করবে..
কতটা স্বাধীন হয়েছে বিচার বিভাগ?

১৪ নভেম্বর ২০১৭

রাষ্ট্র তাকে ভয় না পেলে আশ্চর্য হতাম

ছবিটি ফেসবুক থেকে নেয়া 
সরকারি নথি সেলিম রেজা নিউটনকে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’ বলায় মোটেও অবাক হইনি। বরঙ মনে হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে তার বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি কানেকসন’ -এর অভিযোগও উঠতে পারে। একজন নিউটনকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ভাবা আসলে নতুন কিছু নয়। যে কোনো তাত্ত্বিককে সরকারের ‘বিপদজনক’ মনে হতেই পারে। এর আগে ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাক্যাম্প-স্থাপন ও সেনা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে রাষ্ট্রের রোষানলের শিকার হয়েছিলেন নিউটন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদী মৌন মিছিল করে জরুরি অবস্থা লঙ্ঘনের দায়ে সহকর্মীদের সাথে জেলও খেটেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক। তবে শঙ্কার কথা হচ্ছে ইদানীং এই রাষ্ট্রের, মানে বাংলাদেশের সরকার যদি কোনো নাগরিককে ভয় পায়, সে গুম হয়ে যায়। গত আড়াই মাসে সম্ভবত ১০ জন নিখোঁজ হয়েছেন শুধু রাজধানী থেকে। এর আগে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে একই পরিণতির শিকার হয়েছেন ৪২ জন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব মতে বাংলাদেশে গত বছর মোট ৯০ জন মানুষ ‘গুম’ হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র বা প্রকাশক। 

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ১০ নভেম্বর ‘রাবি ও রুয়েটে ইয়াবা ব্যবসায় ৪৪ শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মচারী’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘রাবি ঘিরে গড়ে ওঠা ইয়াবা ব্যবসা চক্রের ৩৪ জনকে শনাক্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখা, যা প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে ৭ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের (আরএমপি) হাতে পৌঁছেছে।’ তবে ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাদকাসক্ত চিহ্নিত করে কোনো তালিকা তৈরী করেনি। কারা করেছে তা’ও তিনি জানেন না। ওই তালিকাতেই রয়েছে সেলিম রেজা নিউটনের নাম। আরো ছয় শিক্ষককে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিউটনকে চিনি। জানি তার সহজিয়া প্রেমিক সত্ত্বার গান, কবিতা আর স্বাধীনচেতা ভাবনার গতিধারা। বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো তাকে ভয় না পেলেই হয়ত আশ্চর্য হতাম।
তথাপি রাষ্ট্র পরিচালকদের কাছে এ লেখার মাধ্যমে অনুরোধ জানাচ্ছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক অধিশাখায় কে বা কারা আছেন বা তারা কার নির্দেশে এই প্রতিবেদন তৈরী করে প্রধানমন্ত্রীল কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন তা একটু খতিয়ে দেখুন। নতুবা এ ঘটনা মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত করবে।তাছাড়া প্রতিবেদনটি কোনো যাচাইবাছাই না করেই রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান যখন বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে এটি গভীর পরিতাপের বিষয়, খুবই উদ্বেগজনক।কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’ তখন মনে আরো নানা প্রশ্ন জাগে। ভিসির এই অতি উৎসাহের উৎসও খুঁজে বের করা দরকার।
ইত্তেফাকের সেই প্রতিবেদন
পাঠকদের অনেকে হয়ত খেয়াল করেছেন ‘এটুআই প্রকল্পের একাধিক ব্যক্তির জঙ্গি কানেকশন : শিক্ষক মুবাশ্বারের নিখোঁজ রহস্যের নেপথ্যে’ - শিরোনামে ১১ নভেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক ইত্তেফাক। পরে তারা অনলাইন সংস্করণ থেকে সেটি তুলে নিলেও ততক্ষণে তা সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ভাইরাল হয়ে যায়। ওই প্রতিবেদনে ইত্তেফাকের সাংবাদিক আবুল খায়ের দাবি করেন গোয়েন্দাদের কল্যাণে তিনি জানতে পেরেছেন মুবাশ্বারের সাথে জঙ্গি সংযোগ রয়েছে। এদিকে যুগান্তরের পর আরো অজস্র গণমাধ্যম ইয়াবা ব্যবসা চক্রের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। এখানে সংযুক্ত করে রাখি - গণমাধ্যমে গত আড়াই মাসে যে দশ জন লাপাত্তা হওয়ার খবর এসেছে তার মধ্যে গত ২৭ অক্টোবর থেকে হদিস নেই বাংলাদেশে জনতা পার্টি (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন ঘোষ ও তার সহকর্মি আশিষ ঘোষের। সাংবাদিক উৎপল দাস ১০ অক্টোবর এবং আরাফাত নামের এক যু্বক ৭ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ। এর আগে ২২ থেকে ২৭ আগস্টের মধ্যে নিখোঁজ হন চারজন। এরা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, ব্যবসায়ী ও বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায় এবং কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) গভীর রাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন খিলগাঁও থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৪৭১) করলে তার খবরটিও গণমাধ্যমে আসে।পরদিন করিম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার তানভীর ইয়াসিন করিমকে সাদাপোশাকের লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে। তারও খোঁজ মিলছে না। 

নিউটনের সাথে সর্বশেষ সাক্ষাত হয়েছিলো চলচ্চিত্র নির্মাতা
রাসেল আহমেদের মৃত্যুর ক’দিন পর, গত মে বা জুনে।
যারা নিউটনকে চেনেন না তাদের জন্য বলে রাখি, ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি রাবিতে শিক্ষকতা করছেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। আশির দশকে সামরিক-শাসন-বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন এবং বলশেভিক-বামপন্থার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ‘রাজু ভাস্কর্য’ খ্যাত শহীদ মঈন হোসেন রাজু সন্ত্রাসবিরোধী যে ছাত্রমিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছিলেন, সেই মিছিলের অন্যতম মূথ্য সংগঠক ছিলেন নিউটন। ইউনিয়ন ছাড়ার পর ১৯৯১ সালের শেষ দিকে ‘শিক্ষা সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে ঢাবি’র ‘সাইনে ডাই’ (অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ) প্রথার বিরুদ্ধে স্বাধীন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন । সেটাই ছিলো ঢাবি'তে শেষ 'সাইনে ডাই'। নিউটন সক্রিয় ছাত্ররাজনীতি ছেড়েছেন মূলত নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে। তবে ১৯৯৮ সাল অবধি জড়িত ছিলেন সিপিবি (কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ) -এর সাথে। রাজশাহী জেলা কমিটির সহ-সভাপতিও ছিলেন। এরই মাঝে তিনি বিস্তৃত করেছেন লেখালেখির ক্ষেত্র। সম্পাদনা করছেন মানুষ ও প্রকৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ মানুষসহ আরো অজস্র পত্রিকা।

পূর্ববর্তী পোস্ট : 

প্রশ্নবিদ্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা

১১ নভেম্বর ২০১৭

প্রশ্নবিদ্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা

‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা প্রশ্নবিদ্ধ’ শিরোনামে
‘বাংলাদেশের খবর’-এর পরীক্ষামূলক সংখ্যায় লেখাটির
সম্পাদিত সংস্করণ প্রকাশিত হয় গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত লেখা চুরির অভিযোগে দেশের ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামো’-ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশ সেরা আখ্যা পাওয়া বিদ্যায়তনের এ ঘটনা ক্ষুণ্ণ করেছে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার মর্যাদা, শিক্ষক সমাজের সম্মাণ। একইসঙ্গে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুমোদিত গবেষণাপত্রের গ্রহণযোগ্যতাকে হুমকীর মুখে ফেলেছে। 

খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)-সহ একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আলাপকালে এসব জানতে পেরেছে বাংলাদেশের খবর। এই অবস্থার জন্য গবেষণাপত্র প্রণেতাদের পাশাপাশি তা রিভিউয়ের, মানে অনুমোদনের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিদের গাফিলতিকেও দুষছেন কেউ। আবার কেউ বলেছেন, এটি শিক্ষক নিয়োগের নামে ভোটার নিয়োগের পরিণাম। এ জাতীয় ঘটনা নতুন নয় বলেও জানা গেছে। ইতিপূর্বে এমন অভিযোগ শিক্ষকদের শাস্তি দেয়া হলেও তাদের জালিয়াতির প্রবণতা রোধ করা যায়নি। 
গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে গত মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। অভিযুক্তরা হলেন সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান, ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজান এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন, নুসরাত জাহান ও বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। এর মধ্যে সামিয়া রহমান একই সঙ্গে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হিসেবেও কাজ করেন৷ সামিয়া ও মারজানের একটি যৌথ লেখা গত বছরের ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ‘সায়েন্স রিভিউ’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। যার শিরোনাম ‘এ নিউ ডাইমেনশন অফ কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অফ দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’। অভিযোগ রয়েছে তাদের দু'জনের গবেষণাপত্রের ৬১ ভাগেরও বেশী নকল। প্রথমে শিকাগো জার্নাল কর্তৃপক্ষ জানায়,ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর লেখা ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে তারা লেখা চুরি করেছেন। পরে সাঈদ একাডেমি অব প্যালেস্টাইন এক অভিযোগে জানায়, উত্তর-উপনিবেশিক গবেষক ও দার্শনিক এডওয়ার্ড সাঈদের লেখা নিবন্ধ থেকেও কিছু অংশ হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে সামিয়া ও মারজানের নিবন্ধে। ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তিন শিক্ষক একইভাবে অন্যের লেখা নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছেন৷
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটছে। এ ব্যাপরে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে আমাদের অর্থায়নে যেসব গবেষণা হয়, যে জার্নালগুলো প্রকাশ করা হয়, সেখানে অনিয়ম হলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এর আমরা অনেক চৌর্যবৃত্তির ঘটনা ধরেছি। অনেক শিক্ষকের লেখা প্রত্যাহার করে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এক্ষেত্রে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও সবাই শাস্তি পায়নি।’ ইউজিসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মর্যাদার প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া ঠিক না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।’ 
একই সময়ে বিদেশী একটি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাতকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পাওয়ার ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এখন পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে একটি নীতিমালা করা প্রয়োজন। আর তাতে এই ধরণের কোনো অপরাধে কি শাস্তি হবে তা সুনির্দষ্ট করে দেয়া দরকার। কারণ অতীতে দেখা গেছে, একই অপরাধে ভিন্ন শাস্তি হয়েছে।’ উল্লেখিত পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তকারী কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, ‘তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’ 
জানা গেছে, গবেষণাপত্রে লেখা চুরির দায়ে ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আ জ ম কুতুবুল ইসলাম নোমানীকে পদাবনতি দিয়ে সহকারি অধ্যাপক করা হয়। পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নূর উদ্দিন আলোকে চাকরিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গবেষণা জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের আরেকজন শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবু বকর সিদ্দিক-এর বিরুদ্ধে ‘সংখ্যাতিরিক্ত’ শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ আছে। এছাড়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সালমা বেগমের বিরুদ্ধেও চুরির অভিযোগ ওঠে এক বছর আগে। 

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটনের সাথে আলাপ করে বাংলাদেশ খবর। তিনি বলেন, ‘এ পরিস্থিতি খুবই অনাকাঙ্খিত। বিশ্ববিদ্যালয়-প্রতিষ্ঠানটির পচনের লক্ষ্মণ। শিক্ষক নিয়োগের নামে ভোটার নিয়োগের প্রক্রিয়ার পরিণাম। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন-প্রক্রিয়া থেকে যাবতীয় ভোটাভুটি তুলে দেয়া প্রয়োজন। এ জিনিস বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বনাশ করছে। ভোটাভুটির বিকল্প হতে পারে বিভাগীয় চেয়ারপার্সনের মতো জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সমস্ত পদে দায়িত্ববণ্টন। সেই সাথে দরকার, বিভিন্ন পদে দায়িত্বের মেয়াদ যথাসম্ভব কমিয়ে আনা।’ তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে লেখা নকল করার অভিযোগ ঠিকঠাক মতো তদন্ত করে দেখা দরকার। দোষ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিদেরকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা উচিত।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে নিউটন বলেন, ‘গবেষণায় জালিয়াতির এসব ঘটনায় সাধারণভাবে আমাদের সম্পর্কে বাইরের ইম্প্রেশন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে ঢালাওভাবে আমাদেরকে খারিজ করার অবস্থা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। তবে এ রকম যদি চলতেই থাকে, তাহলে চরম বাজে পরিস্থিতিতে পড়ে যাব আমরা। যাবতীয় গ্রহণযোগ্যতা হারাতে হবে তখন আমাদের।’ অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজি বাংলাদেশ খবর-কে বলেন, ‘সমাজ বিজ্ঞান, বিশেষ করে গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় আমাদের এখানে গবেষণা বলে যা হয় তা নিয়ে বিশ্বের কোথাও কারও মাথাব্যথা আছে বলে আমার জানা নাই। সুতরাং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে এসব ঘটনার কোনো প্রভাব-প্রতিক্রিয়া থাকার কথা না।’

আলী আর রাজি বলেন, ‘এখন যাদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাদের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রশ্ন উঠলেই কাউকে দোষী বিবেচনা করা যায় না। কে, কার বিষয়ে, কখন প্রশ্ন তুলছে সে নিয়েও এ দেশে সন্দহ করার অবকাশ অনেক। কারণ নিবন্ধকারদের নিয়ে এ জাতীয় কোনো প্রশ্ন একাডেমির বাইরে আসার কথা না। তাদের নিবন্ধ, অন্তত দু জন রিভিউরার পরীক্ষা করার কথা। যিনি বা যারা সম্পাদনায় ছিলেন, তাদেরও তো দায়িত্ব ছিলো। তারা কেন কথিত চুরি ধরতে পারেন নি? তখনই তো তাদের সতর্ক করে দেয়া যেত, সেই নিবন্ধ না ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়া যেত।’ তিনি আরো বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে কিছু ছাপা হলে, সম্পাদককে-ই তার দায়িত্ব নিতে হয়। তারপর যারা সম্পাদনা সহকারী আছেন তাদের দায়িত্ব বিবেচনা করা হয়, সব শেষে লেখক বা সাংবাদিককের শাস্তির বিষয়টি অভ্যন্তরীণভাবে ঘটে থাকে। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটার কথা।’ 
‘সম্প্রতি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা সকেলই ঢাবির সদ্য বিদায়ী ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিকীর ঘনিষ্ট বলে জানা গেছে এর মেধ্য সামিয়া রহমানের খণ্ডকালীন কাজ চাকরির অনুমতির কোনো কাগজ নেই বলছে ঢাবির রেজিস্ট্রার দফতর। এই বিষয়টি কে কিভাবে দেখছেন?’- বাংলাদেশ খবর-এর এমন প্রশ্নের জবাবে রাজি বলেন, ‘সামিয়া রহমানের বাইরে কাজ নিয়ে আপত্তি করলে করবে বিভাগ। বিভাগ যদি মনে করে, বিভাগ তার যথাযথ সার্ভিস পাচ্ছে না, বা বাইরে কাজ করায় বিভাগ বঞ্চিত হচ্ছে, তাহলে বিভাগ তাকে বলতে পারে। সে গোপনে কোনো কাজ করেনি, সব প্রকাশ্যে করেছে, সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট কাজ করেছেন। বিভাগ তাতে বরং উপকৃত হওয়ার কথা।’
ঢাবির কোনো শিক্ষক কেবলমাত্র একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি পান। তবে শর্ত হচ্ছে, এক্ষেত্রে অবশ্যই তিনি নিজের বিভাগের নিয়মিত কাজকর্মের কোনও বিঘ্ন ঘটাবেন না। এছাড়া তাকে স্থায়ী চাকরি করতে হলে শর্তসাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমতি নিতে হবে। অভিযুক্ত সামিয়া রহমান বর্তমানে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদে চাকরি করছেন। এর আগেও তিনি আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেলের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এবং প্রোগ্রাম এডিটর হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু তার অন্যত্র চাকরির অনুমতি বিষয়ে কোনও চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে নেই জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তার হোসেন। 

সাংবাদিকদের মোক্তার হোসেন বলেছেন, ‘তিনি (সামিয়া) আবেদন লিখেছিলেন উপাচার্য বরাবর। তাই তিনি অনুমতির চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে আনলেও সেটি ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ফলে তার কাজে অনুমতির কোনও চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে নেই। তিনি যদি অন্যত্র কাজের অনুমতি পান তাহলে তৎকালীন উপাচার্যই তা দিয়েছেন। অনুমতি পেয়েছেন কিনা তার কোনও নথি বা এ সংক্রান্ত কোনও চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে নেই।’

পড়ুন : 
পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব নেবে কে?

সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বৈধ করেছে রাষ্ট্র!

মূলত সামরিক ফরমানে (১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ এর ২ তফসিল বলে) বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে প্রস্তাবণার আগে 'বিসমিল্লাহ’ সন্নিবেশিত হয়। পরের বছর এপ্রিলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে আইনসভা এর বৈধতা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২(ক) যুক্ত করা হয়। যাতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটিতে পরিবর্তন এনে লেখা হয় - ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ একইসঙ্গে মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাও ফিরিয়ে আনা হয়। 
সম্প্রতি ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। প্রথম বিজয় দিবসে, অর্থাৎ একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে তা কার্যকর করা হয়। পরবর্তী ৪৫ বছরে এটি সংশোধন করা হয়েছে মোট ১৬ বার। একই সময়ের মধ্যে দুই বার রাষ্ট্রপ্রধান হত্যা, দফায় দফায় সামরিক ক্যুসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেছে দেশ। এসব মাথায় রেখে সংবিধানের ৪৬ বছর উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের চতুর্থ পর্বে থাকছে বরিশালের তরুণ কবি রূমান শরীফের আলাপ। তার সাথেও কথা হয় ফেসবুক চ্যাটবক্সে ।

ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
রুমান শরীফ : এটা প্রত্যেক নাগরিককে অপমান করার মতো একটা বিষয়।কোন গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্র কখনোই একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না।

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
রুমান শরীফ : রাষ্ট্রের ধর্ম হয় কিভাবে! রাষ্ট্রধর্ম তো একটি হাস্যকর বিষয়।রাষ্ট্রের একটি ধর্ম থাকলে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা কি তবে রাষ্ট্রদ্রোহী! নাকি ধর্মদ্রোহী! তারা কি দেশের নাগরিক না! একটি গণতান্ত্রিক দেশে সব ধর্মের মানুষ; আস্তিক, নাস্তিক সবাই বাস করে। সেখানে রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ধর্ম থাকা মানে ওই ধর্মানুসারী বাদে বাকি নাগরিকদের অস্বিকার করা। 

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
রুমান শরীফ : সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বৈধ করে দেয়। নাগরিকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে।
আগুনে জ্বলছে বাড়ি, সামনে সংখ্যালঘু বৃদ্ধার আহাজারি। ১০ নভেম্বর,
হরকলি ঠাকুরপাড়া, রংপুর। ছবি: মঈনুল ইসলাম (দৈনিক প্রথম আলো)
ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
রুমান শরীফ : এই সরকারের সময়কালে প্রচুর পরিমানে সংখ্যালঘু নির্যাতিত হয়েছে। সেগুলো সংবাদপত্র, মিডিয়ায় উঠে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন মতামতে বলেছেন, এখানে তারা মোটেই নিরাপদ বোধ করেন না।এমনকি এই সরকারের সময়কালে সংখ্যালঘুদের ওপর নানান সময়ে হামলার ঘটনার কোনো বিচার হয়নি।ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীরা এর সাথে জড়িত এমন সংবাদও মিডিয়ায় এসেছে। এখন কিভাবে বলা যায় আওয়ামীলীগ সংখ্যালঘু বান্ধব সরকার!

ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
রুমান শরীফ : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতপোষণকারীরা মোটেই নিরাপদবোধ করেন বলে মনে হয় না।বাংলাদেশে লেখক, প্রকাশক, ব্লগারদের ওপর হামলার বা তাদের খুনের এখনো কোনো বিচার হয়নি। এমনকি সোস্যাল নেটওয়ার্কে, সংবাদপত্রে মতামত প্রকাশ করলেও ৫৭ ধারায় কারাদণ্ড হয়।

পরম্পরার অন্যান্য লেখা

০৯ নভেম্বর ২০১৭

সংখ্যালঘু নয় ক্ষমতাই বিষয়..

‘ভারতের ১৯৫২ সালের প্রথম সংবিধানের মূলনীতিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা বা সমাজতন্ত্রের কথা উল্লেখ ছিলো না। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের প্রথম সংবিধানের মূলনীতি থেকে  এই শব্দ দুটো আমদানি করেন ইন্দিরা গান্ধী।ভারতীয় সংবিধানে ৪২তম সংশোধনীতে, মানে ১৯৭৬ সালে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র ঠাঁই পায়। এর পেছনে ছিলো ১৯৭১ সালে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম এবং ভারতজুড়ে বামপন্থীদের উত্থান।’ সাম্প্রতিক এক ফোনালাপে বলছিলেন কলকাতার তরুণ কবি ও সাংবাদিক অতনু সিংহ। 
সম্প্রতি ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে জন্ম নেয়া এই রাষ্ট্রের সেই সূচনা সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রাহিম’ (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে) লেখা ছিলো না। ছিলো না রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধানও। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করা হয়। আর ১৯৮৮ সালে সাবেক সেনাশাসক এইচএম এরশাদের সময় সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযুক্ত হয়। পরবর্তীতে উচ্চ-আদালত ওই সংশোধনী দুটো বাতিল করলেও ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই দুটি জায়গা অপরিবর্তিত রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করে আইনসভা। 
সংবিধানের ৪৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে দুই তরুণ লেখক হামিম কামাল ও শ্মশান ঠাকুরের আলাপ। তাদের সাথেও মূলত ফেসবুক চ্যাটবক্সে কথা হয় ।
ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
হামিম কামাল : একবিন্দু স্বস্তিদায়ক নয়। 
শ্মশান ঠাকুর : রাজনীতি অন্ধ ক্ষমতায়নের দিকে যাচ্ছে, এখানে স্বস্তি থাকবার কথা নয়।

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
হামিম কামাল : বিষয়টি স্ববিরোধী। 
শ্মশান ঠাকুর : ইসলামকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, এই আর কি।

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
হামিম কামাল : রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্বের বড় দায় আছে। তবে এখানে সরল উত্তরের অবকাশ নেই। অল্প কথায়, এটা সুরক্ষিতা রাষ্ট্রস্বর্গে এমন এক ছিদ্রপথ যার ভেতর দিয়ে অনেক বড় বড় অকল্যাণসর্প প্রবেশ করে একের পর এক। এবং এরা নিয়ত সঙ্গমাচারি। সারাক্ষণ এমনভাবে জড়াজড়ি করে থাকে যে দায় বিচারের লাঠিতে পিটিয়ে আলাদা করা কঠিন।
শ্মশান ঠাকুর : উগ্রতা যখন অর্থের সাথে সম্পর্কিত তখন আইন অবশ্যই তার জন্য দায়ী, সংবিধানও।

ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
হামিম কামাল : নীতিগত দিক থেকে আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুবান্ধব। ঐতিহাসিক ভাবেও। তবে বর্তমানের প্রশ্নে দলটির নীতি, ইতিহাস; দুটোই সমাধিস্থ।
শ্মশান ঠাকুর : লীগ সরকার ক্ষমতার জন্য উন্মাদ। কোন সংখ্যালঘু তার কাছে বিষয় নয়, ক্ষমতাই বিষয়।

ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
হামিম কামাল : ভালো নেই। ধর্মবিচারে, অধিকারে অসাম্য আছে। একইসঙ্গে ধর্মাধর্ম নির্বিচারে অধিকারহীনতার আধিয়ারি জারি। দ্বিমুখী দায়। অধিকার কে কাকে দেবে।
শ্মশান ঠাকুর : অধিকার কি পাচ্ছে? মনে হয় না। সম অধিকারের বিষয়ই আসে না। ক্ষমতাধর আর সাধারণের মধ্যেই সম অধিকার নেই।
মূলত সামরিক ফরমানে (১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ এর ২ তফসিল বলে) বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে প্রস্তাবণার আগে 'বিসমিল্লাহ’ সন্নিবেশিত হয়। পরের বছর এপ্রিলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে আইনসভা এর বৈধতা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২(ক) যুক্ত করা হয়। যাতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটিতে পরিবর্তন এনে লেখা হয় - ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ একই সংশোধনীতে মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাও ফিরে এসেছে। 
বরিশালের এ দৃশ্য ২০০৬ সালের
পড়ুন :
অসাম্প্রদায়িক ছিলো বলা যাবে না!
..কিভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দাবি করবে..
কতটা স্বাধীন হয়েছে বিচার বিভাগ?
ধর্মের কল নড়ে রাষ্ট্রের বাতাসে..
সন্দেহপ্রবণ, বাঙালী মুসলমানের মন!
হুমকীতে ভারতবর্ষের সুফিভাব
দমনে দৃঢ় রাষ্ট্র কাঠামো
অস্ত্রবাজ সময় ও সমাজে ...
পুলিশ ছাড়া কেউ থাকবে না ...
ভয় পেও না, সাবধান থেকো ...
পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব নেবে কে?
ওই বেতনের কেতন উড়ে
হেফাজতের পথে ওলামা লীগ !
সানিকে ঠেকাবে হেফাজত !
নুরুলদ্বয়ের মহালোচিত পুত্রেরা
প্রবীর প্রকৃত প্রতিবাদী অগ্রজ
সময় হুমকী আর হত্যালীলার
মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...
সর্বোচ্চ সংকর জাতের সঙ্কট
ক্রিকেটের মওকায় সাম্প্রদায়িকতা !
সাংবিধানিক পিতা আইনে অনাত্মীয় !
রাষ্ট্রীয় শিশ্ন - ধর্ষন, খুন এবঙ ...
বাংলা জাগবেই জাগবে...
ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ
বর্ষবরণে বস্ত্রহরণ কী পরিকল্পিত !

০৮ নভেম্বর ২০১৭

অসাম্প্রদায়িক ছিলো বলা যাবে না!


সম্প্রতি ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। প্রথম বিজয় দিবসে, অর্থাৎ একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে তা কার্যকর করা হয়। পরবর্তী ৪৫ বছরে এটি সংশোধন করা হয়েছে মোট ১৬ বার। একই সময়ের মধ্যে দুই বার রাষ্ট্রপ্রধান হত্যা, দফায় দফায় সামরিক ক্যুসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেছে দেশ।
ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে জন্ম নেয়া এই রাষ্ট্রের সেই সূচনা সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রাহিম’ (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে) লেখা ছিলো না। ছিলো না রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধানও। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করা হয়। আর ১৯৮৮ সালে সাবেক সেনাশাসক এইচএম এরশাদের সময় সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযুক্ত হয়। পরবর্তীতে উচ্চ-আদালত ওই সংশোধনী দুটো বাতিল করলেও ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই দুটি জায়গা অপরিবর্তিত রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করে আইনসভা। সংবিধানের ৪৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে থাকছেন ভাষ্কর, চিন্তক ও গবেষক গোঁসাই পাহলভী । বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানকারী এই যুবক শিল্পীচর্চার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি এবং প্রামান্যচিত্র নির্মাণের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তার সাথেও ফেসবুক চ্যাটবক্সে কথা হয় ।
ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
গোঁসাই পাহলভী : সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংশয় আছে বলেই এই প্রশ্নের উত্থাপণ মনে হয়েছে। সংবিধান বাস্তবতা এবং ধর্মচর্চার বাস্তবতায় সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘুদের জীবন-যাপন সংস্কৃতির বিষয়ে ভাবা যেতে পারে।সংবিধানের বাস্তবতায় যে কোনও সচেতন নাগরিক আতংকিত হবেন, অস্বত্বিতে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম থাকবে আবার অপরাপর ধর্মগুলোও থাকবে, তাদের অধিকারও সমান হবে এমন নয়। সেটা হয়ওনি।যদি সমানভাবে চর্চিত হতে হয়, তবে সেটা রাষ্ট্র থেকেই হতে হবে। মানে রাষ্ট্র যদি ইদে তিন দিন ছুটি দেয় তাহলে পূজায়ও সেটা হতে হবে। পাঁচ দিনের পূজায় এক দিন ছুটি! এটা তো সাংবিধানিক আইন মানা হলো না, রাষ্ট্রকে কি এ বিষয়ে জবাবদিহি করা যায়? সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে ধর্মের উপর এই গুরু দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায়, বাংলাদেশের সংবিধান শুরুতেই অসাম্প্রদায়িক ছিলো এমন বলা যাবে না। কারণ, সাম্প্রদায়িকতাকে এখানে আইনের দ্বারা সিদ্ধ করা হয়েছে, উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। 

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
গোঁসাই পাহলভী : ২৭ অনুচ্ছেদ মতে. এই ধারাটি বিতর্কিত। আইনের দৃষ্টিতে সমান হলে আইনকে শুরুতেই সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করতে হবে। সম্পত্তির মতো গুরুতর বিষয়টি ধর্মের হাতে রেখে সংবিধান নিজেকে কীভাবে অসাম্প্রদায়িক ভাবে সেটাই প্রশ্ন। 

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
গোঁসাই পাহলভী : সংবিধানের চর্চা সাধারণ মানুষর ভেতর নেই। তারা সংবিধান বুঝে এ্যাক্ট কিংবা রিএ্যাক্ট করেন, এমন নয়। জনগণের কৌমচেতনার সাথে ধর্মীয় চেতনা, এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চয়ই উগ্রতার পেছনে দায়ী। আরো আছে আন্তজার্তিক ঘটনাবলীর প্রভাব। উপসাগরীয় যুদ্ধের পর ক্রমাগত মুসলমানদের মার খাওয়ার ইতিহাস, এবং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে তার উপস্থাপন এখানকার মুসলমানদের উগ্রবাদীতার সাপেক্ষে তৈরী করার মনোভাব দেখা যাচ্ছে! এ বিষয়ে ‘কাভারিং ইসলাম’ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
গোঁসাই পাহলভী : নিয়োগ প্রথায় সংখ্যালঘুরা এই সরকারের কাছ থেকে আনডু ফ্যাসালিটিস পাচ্ছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু জনগণের স্তরে তাকালে ইসলামিস্টদেরকে বিভিন্ন প্রকার ছাড় দেয়া নিঃসন্দেহে বিরোধাত্মক। গ্রাসরুট বা গ্রাস লেবেলে তাকালে সংখ্যালঘুদের ভূমিদখল, বাস্তুচ্যুত করার বিষয়ে যে সমস্ত সংবাদগুলো ছাপা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারী দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর লোকদের নামই এসেছে ঘুরেফিরে। 

ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
গোঁসাই পাহলভী : বাংলাদেশের লেখক বা চিন্তুকরাই হচ্ছেন এ দেশের প্রকৃত সংখ্যালঘু। তারা এখন মার খাচ্ছেন। দেশ থেকে পালাচ্ছেন, দেশের ভেতর গুম হচ্ছেন। অধিকারের বিষয়ে সম কিংবা অসমের প্রেক্ষাপটে অধিকার বিচার বিষয়ক ধারণা সংবিধান স্বচ্ছতার সাথে লিপিবদ্ধ নয়। অর্থাৎ অধিকারের মতো দার্শনিক ধারনাকে কনটেইনড করে গড়ে ওঠা ব্যবস্থার কথা এখানকার আইনবেত্তা বা বুদ্ধিজীবীরা ভেবেছেন বা ভাবতে পেরেছেন এমন উদাহরণ আমাদের হাতে নেই। অধিকারের বিষয়ে লোকায়ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা উহ্য রেখেই বলছি। ধর্ম কতটা অধিকার দেয় মানুষকে, রাষ্ট্র কতটা অধিকার কুক্ষিগত করেছে, কতটা অধিকার ছাড় দিয়েছে এ তো বিশদ প্রশ্ন। পাঁচটি মৌলিক অধিকার চিহ্নিত হলো, নির্দিষ্ট হলো, এই অধিকারগুলো কী জনগণের দ্বারা চিহ্নিত, নাকি রাষ্ট্র নিজেকে কর্তা ভেবে জনগণের অধিকারের বিষয়ে কেবল পাঁচটি ধারণাকেই সনাক্ত এবং সূত্রবদ্ধ করেছে। এটা প্রকৃতিগতভাবে একটি ব্যত্যয়। 

ছবিটি বাংলাদেশের, আমারই তোলা। 
আরো পড়ুন :

০৭ নভেম্বর ২০১৭

..কিভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দাবি করবে..

সম্প্রতি ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের সংবিধান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর দেশের সংবিধান প্রণীত হয়। প্রথম বিজয় দিবসে, অর্থাৎ একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে তা কার্যকর করা হয়। পরবর্তী ৪৫ বছরে এটি সংশোধন করা হয়েছে মোট ১৬ বার। একই সময়ের মধ্যে দুই বার রাষ্ট্রপ্রধান হত্যা, দফায় দফায় সামরিক ক্যুসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখেছে দেশ। 

ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে জন্ম নেয়া এই রাষ্ট্রের সেই সূচনা সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রাহিম’ (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে) লেখা ছিলো না। ছিলো না রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধানও। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করা হয়। আর ১৯৮৮ সালে সাবেক সেনাশাসক এইচএম এরশাদের সময় সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযুক্ত হয়। পরবর্তীতে উচ্চ-আদালত ওই সংশোধনী দুটো বাতিল করলেও ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই দুটি জায়গা অপরিবর্তিত রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করে আইনসভা।
সংবিধানের ৪৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ক ভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আলাপ হয়েছে বিভিন্ন পেশার তরুণ ও যুবকদের সাথে। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের প্রথম পর্বে থাকছেন ইসলামি মৌলবাদিদের প্রাণনাশের হুমকীর মুখে দেশ ত্যাগ করা যু্বক তুহিন দাস। তিনি মূলত কবি ও গল্পকার। মুক্তচিন্তার পক্ষে লেখালেখি, পত্রিকা প্রকাশ এবং গণজাগরণ মঞ্চে সক্রিয় থাকার কারণে ২০১৫ সালে আগস্টে ‘আনসারবিডি’ নামের এক সংগঠনের হুমকী পেয়ে ২০১৬ সালের এপ্রিলে দেশ ত্যাগ করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পেনসেলভিনিয়া রাজ্যের পিটসবুর্গে অবস্থানকারী সাহিত্যিক তুহিনের সাথে কথা হয় মূলত ফেসবুক চ্যাটবক্সে । 
ঈয়ন : দেশে বিদ্যমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক বলে আপনি মনে করেন?
তুহিন দাস : যে সমাজ বা দেশের মানুষ পরমতসহিষ্ণু, আস্থা, ভালবাসা ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করে সে সমাজ বা দেশে বিভিন্ন মতাবলম্বী মানুষেরা একত্রে মিলেমিশে আনন্দের সঙ্গে বৈচিত্র নিয়ে বসবাস করতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশ তার উদাহরণ। আর বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষদের উপর অত্যাচার ও নিপীড়নের ছবিগুলো দেখলে সহজেই অনুমেয় এরা কতটুকু আতঙ্কিত জীবন যাপন করছে। যেন তারা মানুষ নয়, নেহাত একটি প্রাণীবিশেষ। নাসিরনগরে হিন্দু পাড়ায় আক্রমণের মামলার প্রায় দু’শতাধিক আসামী জামিনে বেরিয়ে গেছে, তার মানে তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর তেমন জোর নেই। সংবিধানে ফাঁকফোকরগুলো তো ক্ষমতাধরদের চেনা, তারা এসব ধারার চর্চা করে। কয়েক দিন আগেও দেখলাম মৌলভীবাজারে আদিবাসী ২৭০ খাসিয়া পরিবারের জমি চা বাগান করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন স্থানীয় এক নেতাকে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ট্রাক ব্যবহার করা হয়েছিল গত বছর গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের জমি দখলের সময়-সেখানে আগুন দিয়েছিলো পুলিশ। সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়ে রমেল চাকমা হত্যা কিংবা ছাত্রনেতা বিপুল চাকমা গ্রেফতার; এসব আতঙ্কিত করছে সংখ্যালঘুদের।

ঈয়ন : উচ্চ আদালত বাতিলের পরও সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে সব ধর্মের সমান অধিকারের বিধান সংযুক্ত করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
তুহিন দাস : একটি দেশে বিভিন্ন ধর্মের ও মতের মানুষ বাস করে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান এই চারটি ধর্মের মানুষ এ দেশে বাস করে আসছে বাংলাদেশ জন্মের আগে থেকেই। এ দেশের জন্মলগ্ন থেকে যেখানে চারটি ধর্মের মানুষের কথা মাথায় রেখেই সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিলো। কি এমন দরকার হয়ে পড়েছিলো যে তিনটি ধর্মের মানুষকে প্রাধান্য না দিয়ে একটি মাত্র ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম’ ও রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ ঢোকানোর? বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার আগে মুসলিমরা কি কখনো ভিন্ন ধর্ম বা মতালম্বীর মানুষ দ্বারা কি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলো? ইসলামের নাম-নিশানা কি মুছে যাচ্ছিল বাংলাদেশ নামক ভূখ- থেকে? রাষ্ট্রের কাজ সকল ধর্মমতের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা; কিন্তু রাষ্ট্র একটি মাত্র ধর্মের মানুষকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। যেমন সরকারী ছুটির বিষয়টি যদি দেখি শুক্রবার জুম্মাবার, ওই দিন সরকারী ছুটি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ বা যে সব দেশের সাথে আমাদের বাণিজ্যিক লেনদেন আছে সেসব দেশ ওই দিন ছুটি নয়, ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে একটি ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে। সাহায্যের নামে অপেক্ষাকৃত গরীব দেশগুলোতে ধনী ধর্মপ্রধান দেশগুলোর রাজনৈতিক লিপ্সা মেটানোর সুযোগ থাকে। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান দেখি ঈদের ছুটি নয় দিন, কোরবানির ছুটি পাঁচ দিন, ২৭ রমজান একদিন, ঈদে-মিলাদুন নবী একদিন, শবে বরাত একদিন, শবে মেরাজ একদিন, মহররমে একদিন। বিপরীতে দুর্গাপূজায় ছুটি দুই দিন, জন্মাষ্টমীতে একদিন, বড়দিনে একদিন এবং বৌদ্ধ পূর্ণিমায় একদিন। সকল ধর্মের মানুষের অধিকার সমান হলে ইসলাম বাদে অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পালনীয় রাষ্ট্রীয় ছুটি মাত্র একদিন কিভাবে হয়?

ঈয়ন : সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতধারীদের ব্যাপারে এক শ্রেণীর বাঙালী মুসলমানের যে উগ্রবাদী মনোভাব দেখা যায়; তার পেছনে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক মুসলমানিত্ব কতটা দায়ী বলে আপনার মনে হয়?
তুহিন দাস : দায়ী যে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে কক্সবাজারে রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলা ও মহামূল্যবান প্রাচীন পুঁথি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, খ্রিস্টান গির্জাগুলোতে বোমা হামলা হয়েছে, গত বছরের নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে আর সাঁওতাল পল্লীর উপর রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে; তাদের বসতভিটা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে, তারপরে আর কি বলার থাকতে পারে! সংখ্যালঘুদের জমি দখল করা হল বাঙালী মুসলমানের একটি শ্রেণীর লক্ষ্য। তাছাড়া ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে প্রকাশ্যে যেভাবে অন্য ধর্মের প্রতি উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রদান করে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে দেয়া হয় তাতে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষেরাও ভেতরে ভেতরে উগ্রবাদী হয়ে ওঠে। প্রায়ই একটা কথা শোনা যায়, ‘হিন্দুরা মালাউন (অভিশপ্ত), বাংলাদেশ তাদের দেশ নয়, তাদের দেশ ভারত। তারা ভারত চলে যাক।’ এই ধরনের বর্ণবাদী কথা কেউ বললে বাংলাদেশের সংবিধানে কোনো আইনে তাকে বাধা দেয়া যায় না। অথচ এই একই কথা যদি কোন মানুষ একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বীকে বলে যে, ‘তুমি মুসলমান, তোমার দেশ সৌদি আরব; তুমি আরব দেশে চলে যাও।’ তবে কি ঘটতে পারে সহজে অনুমেয়! রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার ফলে এ ধর্মের অধিকাংশ মানুষেরা মনে করে, এ দেশটা শুধু তাদের এবং সবকিছুই তাদেরই অধিকার। আমরা পত্রিকার পাতায় দেখেছি ধর্ম অবমাননার দায়ে সারা বাংলাদেশের অসংখ্য হিন্দু শিক্ষকদের জেলে যেতে হয়েছে। জেল থেকে বেরনোর পরে তারা অনেকে চাকরী হারিয়েছেন। কেউ জায়গা-জমি বিক্রি করে নিরুদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের খবর কেউ রাখেনি। নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তির কথা মন পড়ছে, তাকে কিভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে! এমন কোন ঘটনা কি কোনো মুসলমানের সঙ্গে ঘটেছে হিন্দু ধর্ম অবমাননার অভিযোগে? ভার্চুয়াল জগতে টেকনোলজিতে অদক্ষ হিন্দু মানুষের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দিনের পর দিন এসব অসত্য অভিযোগে অভিযুক্ত করে সংখ্যালঘু মানুষদেরকে অত্যাচার ও নিপীড়ন করা হচ্ছে, ধর্মের নামে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। লালনের গান করার কারণে তাদের জানাজায় বাধা দেয়া হচ্ছে। ব্লগার, বিদেশী ও এ দেশের সাধারণ মানুষ রেহাই পায়নি উগ্রপন্থী ধর্মাবলম্বীদের হাত থেকে। কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, বিদ্বেষমূলক মনোভাব প্রকাশ করলে যথাযথ আইন ও শাস্তির প্রয়োগ থাকতো তবে হয়ত সংখ্যাগুরুর সাথে সংখ্যালঘুর ভাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠত। সংখ্যালঘুর প্রতিমাগুলো ভাঙা হতো না এবং ভাঙা প্রতিমাগুলো দ্রুত বিসর্জন দিয়ে দেয়ার জন্য প্রশাসন থেকে চাপ আসতো না।
ঈয়ন : আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কতটা সংখ্যালঘু বান্ধব?
তুহিন দাস : পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত খবরগুলোর দিকে তাকালে বলতে হয় বাংলাদেশের কোনো সরকারই সংখ্যালঘু বান্ধব নয়। কিন্তু সরকারগুলো বিদেশে গিয়ে বলে থাকে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। অবশিষ্ট ছয় শতাংশ সংখ্যালঘু আগামী ৫০ বছরে দেশত্যাগ করলে, অর্থাৎ সংখ্যালঘু শূন্য হলে কিভাবে নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করবে বাংলাদেশ?
ঈয়ন : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষ, বিশেষত লেখক-বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রতিক সময়ে, মানে ২০১১ পরবর্তী সময়ে কেমন আছেন? গত ছয় বছর ধরে কতটা সম অধিকার পাচ্ছে সব ধর্মের মানুষ?
তুহিন দাস : যেখানে মুসলিম সাহিত্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চলছে, সেখানে সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের লেখক বুদ্ধিজীবীদের স্থান কোথায় হতে পারে? হেফাজতে ইসলামের দাবীর মুখে পাঠ্যপুস্তক থেকে অনেক লেখকদের লেখা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের মতোই সংখ্যালঘু ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা একজন মুক্তবুদ্ধির লেখককেও নানাভাবে কোণঠাসা করে রাখা হয়। এ কাজটি করে থাকে মুখে মুখে প্রগতিশীল নামধারী লেখকেরা। কিন্তু তারা পেছন থেকে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন স্থানীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে থাকে পদক-অর্থ-যশ-রেশন প্রাপ্তির লোভে। ধর্ম ও রাজনীতি বিষয়ে আপনি আপনার বাক স্বাধীনতার প্রয়োগ করতে গেলে আপনার প্রাণ যেতে পারে নিমেষে। খোদ বাংলা একাডেমিতে গত বছর এক লেখকের মৃতদেহ ঢুকতে দেয়া হয়নি। অথচ তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন। বাংলা তার গৌরব হারাচ্ছে। প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিককে জেলে বন্দী করা হয়েছে, একাধিক প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করা হয়েছে, বই বাজেয়াপ্ত হয়েছে, চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি দেয়া হয়নি, রানা প্লাজা নিয়ে নির্মিত সিনেমা আটকে দেয়া হয়েছিলো, সুন্দরবনে কয়লা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পবিরোধী নাটকের শো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো, অনেক সাংবাদিককে ৫৭ ধারার ফাঁদে ফেলা হয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন করা এসেছে কোন গ্রন্থটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তাহলে নিকৃষ্ট গ্রন্থের অনুসারী কারা? না। বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার পাচ্ছে না। আইন সবার জন্য সমান নয়।

সমগোত্রীয় ভাব

কতটা স্বাধীন হয়েছে বিচার বিভাগ?
ধর্মের কল নড়ে রাষ্ট্রের বাতাসে..

০৩ নভেম্বর ২০১৭

কতটা স্বাধীন হয়েছে বিচার বিভাগ?

মাত্র দুই দিন আগে বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার এক দশক পূর্তি হয়েছে। ২০০৭ সালের পহেলা নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয় বিচার বিভাগ। ওইদিন সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধি কার্যকরের মাধ্যমে এই পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে আজও বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সম্প্রতি এ নিয়ে আলোচনা বাড়িয়েছে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ও নির্বাহী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক দল আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য বাহাস। সংবিধান ও আইন বিষয় সাংবাদিকরা বলছেন, এটা কারো জন্যই ভালো হচ্ছে না। 

১/১১-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ঠিক আগের দিন ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত চারটি বিধিমালা সাত দিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। যদিও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ, বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলাবিধান এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলী) বিধিমালা, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (পে-কমিশন) বিধিমালা সংক্রান্ত মামলা তখনও বিচারাধীন। পরদিন ক্ষমতা দখল করেই বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার ঘোষণা দেয় সেনা সমর্থিত নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এরপর ১৬ জানুয়ারি তারা ওই বিধিমালা চারটি জারি করে। এগুলো বলবৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগের সরকারের তৈরি করা বিধিগুলো বিলুপ্ত হবে বলে বিধান রাখা হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চ ১৭ জানুয়ারি ২০০৭ দিনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কাজ শুরু করেন। উপদেষ্টা পরিষদে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের পর ২৯ অক্টোবর ২০০৭ ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে ১৮ অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এম রুহুল আমিন ও সরকারের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করার জন্যে ১ নভেম্বর তারিখ ঘোষণা করেন। এরপর ৩১ অক্টোবর পত্রিকার সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সরকার প্রধান ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ তার সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন। 
তবে দশ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও পুরোপুরি স্বাধীন হতে পারেনি বিচারবিভাগ। এতগুলো বছরেও চূড়ান্ত করা যায়নি উল্লেখিত বিধিমালাগুলো। এ নিয়ে সংক্রান্ত মামলা এখনও বিচারাধীন। বিচার ও নির্বাহী বিভাগের বিরোধীতাও অব্যাহত রয়েছে। কিছুদিন আগেও বিচারপতি এসকে সিনহা প্রকাশ্য সভায় বলেছেন, ‘সব সরকারই বিচারবিভাগের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। প্রশাসন কখনো চায় না বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক।’ এরই প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘কোনো দেশে বিচারপতিরা বিচার কার্য্যরে বাইরে এত কথা বলেন না।’ এ নিয়ে দফায় দফায় বিপরীতমুখী বক্তব্য দিয়েছে বিচার ও নির্বাহী বিভাগ। 
অন্যদিকে আইন বিভাগের সাথেও সম্পর্ক ভালো নেই বিচার বিভাগের। গত এক দশকের দুই বার সংবিধান সংশোধন করেছে জাতীয় সংসদ। প্রস্তাবনা সংশোধন, ১৯৭২-এর মূলনীতি পূনর্বহাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, ১/১১ পরবর্তী দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নিয়ম বহির্ভুতভাবে ৯০ দিনের অধিক ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি ‘প্রমার্জ্জনা’, নারীদের জন্য সংসদে ৫০ টি সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আরো বেশ কিছু পরিবর্তন এনে ২০১১ সালের জুনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নবম সংসদ। এর আগে সংসদের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটি করে সংবিধান বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মতামত নেয়া হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতিদের সাথেও এক বৈঠক করেছিলো ওই কমিটি। তবে পঞ্চদশ সংশোধনীতেও টিকেছিলো জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তৈরী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। তার আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আমলের চতুর্থ সংশোধনীতে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে নেয়া হয়। এরপর জিয়াউর রহমান এসে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত করেন। 

এদিকে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ নিয়ে যাত্রা শুরু করা দশম সংসদ সেপ্টেম্বরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনে। এতে বাহাত্তরের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। চলতি বছরের জুলাইয়ে এই সংশোধনী বাতিল করে দেয় উচ্চ আদালত। এ বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ রায়ে বর্তমান সংসদের যোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হলে পর বিচার, নির্বাহী ও আইন বিভাগের দ্বন্দ্ব চরমাকার ধারণ করে। সর্বশেষ প্রধান বিচারপতিকে অসুস্থ ঘোষণা, তার ছুটির আবেদন, বিদেশ গমন, দুর্নিতীর অভিযোগসহ সরকার ও তার পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে সরগরম হয়ে আছে পরিস্থিতি। এ ব্যাপারে কলামিস্ট ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার সম্প্রতি লিখেছেন, ‘এবারের বিতর্কে যদি বিচার বিভাগের ক্রেডিবিলিটি নষ্ট হয়, তাহলে নির্বাহী বিভাগের ক্রেডিবিলিটিও নষ্ট হবে, তাহলে আইন বিভাগের ক্রেডিবিলিটিও রক্ষা পাবে না। বিচার বিভাগের মর্যাদা যতটা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে, তা উদ্ধারে বহু যুগ লাগবে।’ এনিয়ে আলাপকালে আইন বিষয়ক সাংবাদিক মিল্টন আনোয়ারও তার সাথে একমত পোষন করেনভ। তিনি বলেন, ‘দুই পক্ষই ভুল করছে।’
একাত্তর টিভির এই সিনিয়র রিপোর্টার আরো বলেন, ‘গত ১০ বছরে তেমন কিছুই আগায় নাই। বিচার বিভাগের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আগের মতোই আছে। স্বতন্ত্র নিয়োগ সংস্থা হলেও উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ এখনো রাজনৈতিক বিবেচানাই হয়। সুপ্রিম কোর্টও পুরোপুরিভাবে নিম্ন আদালতের নিয়ন্ত্রণভার পায়নি। বিচারকদের চাকুরিবিধি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বরং এখন একটা দ্বৈত ব্যবস্থা চলছে। মাজদার হোসেন মামলা আসলে শেষই হয়নি আজও।’ মিল্টন আনোয়ার বলেন, ‘বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হলে স্বাধীন প্রসিকিউটর লাগবে, স্বাধীন সচিবালয় লাগবে, স্বাধীন তদন্ত সংস্থাও লাগবে। এসব বাদ দিয়ে বিচার বিভাগ স্বাধীন হয় না।
মিল্টন আরো বলেন, ‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলী ও পদায়ন এখনো কার্যত সরকারের নিয়ন্ত্রণে। বলা হয় রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরমর্শক্রমে করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি আসলে তা করেন সরকারের ইচ্ছায়। সুপ্রিম কোর্ট এখনো আর্থিকভাবেও স্বাধীন হয়নি। এ বছর বাজেটে সুপ্রিম কোর্টের বরাদ্দ এক টাকাও বাড়েনি।’ ক্ষমতাসীনরা যতদিন দুবৃত্তায়ন বন্ধ না করবে ততদিন উত্তরণের পথ নাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মিল্টনের সাথে সহমত পোষন করেছেন প্রায় ২৩ বছর ধরে সংবিধান ও আইন বিষয়ে সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকা সাইদ আহমেদ। 
বাংলাদেশের খবর-এর এই প্রধান প্রতিবেদক বলেন, ‘কাগজকলমে স্বাদীন হয়েছে বিচারবিভাগ। সরকার আদতে তার নিয়ন্ত্রণ কমায়নি। বিএনপি আমলে যারা এই মাজদার হোসেন মামলার রায় কার্যকরের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার ছিলেন, আওয়ামী লীগের আমলে তারা আইনমন্ত্রী হয়ে আবার এর বিরোধিতা করেছেন। পুরো বিষয়টি আসলে রাজনৈতিক হয়ে গেছে।’ সাইদ আহমেদ আরো বলেন, ‘বিচারের সাথে নির্বাহী ও আইন বিভাগের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বটা মূলত স্বার্থের সংঘাত। সদিচ্ছা থাকলে এ সংকট কাটতে বেশী সময় লাগার কোনো কারণ নেই। সংবিধানেই সব সমাধান রয়েছে। 
১৯৭২ সালের সংবিধানের ২২ ধারায় বলা ছিলো ‘রাষ্ট্র নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিশ্চিত করবে’। কিন্তু স্বাধীন বিচার বিভাগ পেতে দেশকে অপেক্ষা করতে হয়ে আরো কয়েক দশক। ১৯৮৯ সালে সরকার বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কিছু পদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি করা হলে অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে অসঙ্গতি দেখা দেয়। সরকার এই অসঙ্গতি দূর করার জন্য ১৯৯৪ সালের ৮ জানুয়ারি জজ আদালতের বেতন স্কেল বাড়িয়ে দেয়। তবে প্রশাসন ক্যাডারের আপত্তির মুখে ওই বর্ধিত বেতন স্কেল স্থগিত করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাজদার হোসেনসহ ৪৪১ জন বিচারক ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৯৯৭ সালে হাইকোর্ট পাঁচ দফা সুপারিশসহ ওই মামলার রায় দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ১৯৯৯ সালে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পরবর্তী বিএনপি সরকার এই রায় বাস্তবায়নের জন্য বারবার সময় নিতে থাকে। তাই আওয়ামী লীগ তাদের প্রায় দেড় বছর সময়ে ও বিএনপির নেতৃত্বে চার দলীয় জোট পাঁচ বছর সময়ে রায় বাস্তবায়নে সেভাবে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

* মূল লেখাটি বাংলাদেশের খবর পত্রিকায় গত ১ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি আগামী ডিসেম্বরে বাজারে আসার কথা রয়েছে।
newsreel [সংবাদচিত্র]