Powered By Blogger

২৬ ডিসেম্বর ২০১৬

নিষিদ্ধ শ্রাবণ!

রাষ্ট্রীয় পণ্ডিতসভা
কিনে নিতে চায় মন
কিনে নিতে চায় প্রান
বিক্রি হয়নি সেথা
তাই নিষিদ্ধ শ্রাবণ
মানে রবীন আহসান

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শ্রাবণ প্রকাশনীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলা একাডেমি! খবরটা যতটা না অবাক করা, তার চেয়েও অধিক বেদনাদায়ক। বিকেলে মুখবই পড়েই জানলাম প্রকাশক, অর্থাৎ প্রকাশনীর মালিক (Robin Ahsan) ‘টকশোতে কথা বলায়’ (সম্ভবত বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে) খোদ সংস্কৃতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ কেমন বিচার, ঠিক বুঝলাম না। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ছড়াকার-প্রকাশক রবীন আহসান কেমন মানুষ, সে আলাপ আপাতত না হয় এখানে বাদ-ই দিলাম। শুধু টুকে রাখলাম তার অভিযোগ। মুখবইয়ে নিজস্ব পাতায় তিনি জানান, একজন প্রবীন প্রকাশক-লেখককে গ্রেফতার করায় টকশোতে ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি শাহবাগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখায় বইমেলায় তার প্রকাশনী ‘শ্রাবণ’ -কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ২০০৯ সালেও একবার তার বইমেলার স্টল বন্ধে উদ্যোগী হয়েছিলেন বলে রবীন উল্লেখ করেন।

০৮ ডিসেম্বর ২০১৬

সত্যও ঘেন্নায় লুকাই!

হায়রে অনলাইন, হায়রে সাংবাদিকতা ..
মাঝে মাঝে জেষ্ঠ্যদের ভয় লাগে তাই
বলে ফেলা প্রিয় সত্যও ঘেন্নায় লুকাই

বস্তুত লুকিয়ে ফেলছি প্রভাবশালী এক প্রতিবেদক বা গণমাধ্যমের পরিচয়। সদ্য প্রয়াত কবি ও রাজনীতিবিদ মাহবুবুল হক শাকিল সম্পর্কে যে বা যারা লিখেছিলো, ‘সাবেক এই ছাত্রনেতার কবিতা লেখার শখ ছিল।’ যারই প্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, ‘এ আচরণ নিঃসন্দেহে বিবিসির (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিঙ করপোরেসন) খালাতো ভাই সুলভ, হতাশাজনক।’ নেহাতই নির্মোহ ক্ষোভে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারির উদ্দেশ্যে আরো বলেছিলাম-

ওহে জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, আপনি কি জানেন না
কবি ও কবিতা শখ বা সৌখিনতা চোদে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমনটা লেখার কিছুক্ষণের মধ্যেই (৬ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকেলে) আলোচ্য এই প্রতিবেদক মোবাইল ফোনে কল করে আমায় রীতিমতো ধমক লাগান। পূর্বপরিচয়ের সুবাদে জেষ্ঠ্যতার অধিকার নিয়ে তিনি হয়ত এমনটা করতেই পারেন। কিন্তু বড় ভাই যখন জেরা শুরু করলেন - শাকিল ভাইকে কবে থেকে চেন? তার কয়টা কবিতা পড়েছ? তার কয়টা বই বের হয়েছে? - তখন রীতিমতো ভড়কে পেলাম। জানালাম আমি শুধু ফেসবুক আর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার লেখা পড়েছি। যে কারণে তিনি যে কবি সে ব্যাপারে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। এরপর ভাই যে স্বরে শুভকামণা জানালেন, তাতে বেশ দ্রুতই স্মরণে এলো তিনি কতটা প্রভাবশালী; আদতেই কতটা ক্ষমতাধরের সন্তান। যে কারণে তার কথাগুলোকে খুবই গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে লেখাটি সাথে সাথেই লুকিয়ে ফেলি। এরপর তাকে বার্তা পাঠিয়ে এ খবর জানাই। একইসঙ্গে ক্ষমা করার অনুরোধ জানিয়ে বলি, ‘ক্ষমতাশালীদের রাগকে আমি ভয় পাই।’ যদিও আদতে যতটা ভয় পেয়েছি তার চেয়ে ঘেন্নাই জেগেছে বেশি। পরিশেষে করুণা। ভদ্রলোক মনে হয়ত মনে করেন, কবিরা শখেই কবিতা লেখেন।
পরে অবশ্য বিতর্কিত ওই বাক্য সংশোধনও করেছে গণমাধ্যমটি। মূলত একাধিক কবির সক্রিয়তার কারণে। এসব নিয়ে ভাবতে চাইছিলাম না আর। কিন্তু পরে বুঝলাম না লেখা অবধি বিষয়টা মাথা থেকে তাড়াতে পারবো না। যে কারণে মেলা দিন পর ফের ব্লগের সরণাপন্ন হওয়া। এরই মধ্যে কবি ডাল্টন সৌভাত হীরার লেখা সূত্রে জানলাম, দেশের প্রভাবশালী আরো দৈনিক প্রথম আলো শাকিলের কবি পরিচয় বেমালুম ভুলে গেছে। সর্বত্র তার পেশাগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ই গুরুত্ব পেয়েছে। যে কারণে ডাল্টন লিখেছেন, ‘শাকিল ভাইয়ের পরিচয় "কবি'।দ্য ট্রু পোয়েট।এ পরিচয়কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা পৃথিবীর সমস্ত কবিতার অপমান।’ 
‘ধনী কৃষকের অবৈধ সন্তান ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো’ - গত ২৬ নভেম্বর 
কিউবার জাতির পিতার মৃত্যুর পর এমন শিরোনাম দিয়ে তাকে নিয়ে 
সংবাদ পরিবেশন করেছিলো বিবিসির বাংলা বিভাগ। মূল সংস্করণে-
 এ তথ্য যদিও এতটা গুরুত্ব পায়নি। তবুও সে সময় লিখেছিলাম, 
 সংবাদের ভেতরকার একটি সংবাদ শিরোনাম দেখে কি অবাক হচ্ছেন? 
আমি কিন্তু হচ্ছি না। কারণ অনেক আগেই কে জানি বলেছিলো 
‘বিবিসি’ মানে ‘বিলাতি বাঞ্চোত চুতিয়া’! তারই প্রমাণ ইহা।
মৃত্যুর আট দিন আগে শাকিল লিখেছিলেন, ‘মূলত আমি কেউ না, না রাজনীতিবিদ, না কবি, না গল্পকার, এমনকি নই তুমুল সংসারী| এক অভিশপ্ত চরিত্র যার কিছুই থাকতে নেই| সাধু কিংবা সন্ত নই, চোখ জ্বলজ্বল করে জীবনের লোভে| চন্দ্রাহত, বিষাদ এবং ভূতগ্রস্থ, বসে থাকি ব্রহ্মপুত্র ঘাটে, শেষ খেয়ার অপেক্ষায়..’। তার এ লেখাটির কথা স্মরণে এলো আরেক কবি ও সাংবাদিক সাঈফ ইবনে রফিকের লেখা দেখে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চাকরি করার পরও শাকিল কবি ছিলেন, রাজকবি ছিলেন না। রাজকবি হওয়ার বাসনা থাকলে তিনি মরতেন না। অমরত্বের চেষ্টা চালিয়ে যেতেন।’ 

গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে শাকিলের ভূমিকার কথাও এখন প্রকাশিত হচ্ছে অনেকের লেখায়। জানা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের উচ্চমহলে কথিত ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের একমাত্র আশ্রয়টি শেষ হয়ে যাওয়ার খবরও। তাকে ঘিরে নায়োকচিত বহু গল্প, গাঁথা প্রকাশিত হচ্ছে এখন। তবে আমার বন্ধু শিমুল সালাউদ্দিনের কথাটিই মনে ধরেছে। তার মতে, ‘শাকিল প্রকৃত কবির মতোই মারা গেছেন।’ মৃতদেহ উদ্ধারের মাত্র ১৬ ঘন্টা আগে ফেসবুকে পোস্ট করা তার শেষ লেখাটিও ছিলো একটি কবিতা। 

ছবিঃ ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)
এলা, ভালবাসা, তোমার জন্য

কোন এক হেমন্ত রাতে অসাধারণ
সঙ্গম শেষে ক্লান্ত তুমি, পাশ ফিরে শুবে।
তৃপ্ত সময় অখন্ড যতিবিহীন ঘুম দিবে।
তার পাশে ঘুমাবে তুমি আহ্লাদী বিড়ালের মতো,
তার শরীরে শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে, মাঝরাতে।
তোমাদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে এক প্রগাঢ় দীর্ঘশ্বাস,
আরো একবার তোমাদের মোথিত চুম্বন দেখবে বলে।
মৃতদের কান্নার কোন শব্দ থাকে না, থাকতে নেই,
নেই কোন ভাষা, কবরের কোন ভাষা নেই।
হতভাগ্য সে মরে যায় অকস্মাৎ বুকে নিয়ে স্মৃতি,
তোমাদের উত্তপ্ত সৃষ্টিমুখর রাতে।

প্রকাশক রবীন আহসানের কথা দিয়ে শেষ করছি। তিনি লিখেছেন, ‘এদেশে কিন্তু এখনো কবির দাম বেশি বই বিক্রি না হইলেও কবির কদর বেশি! তাই হাজার হাজার মানুষ কবিতার বই ছাপাইতে আসে ট্যাকাটুকা দিয়া! কত কত কবির জীবন নষ্ট হয়-কবিতা হয় না! কবিতা হয় না তারা পুরস্কার কেনে পয়সা দিয়া সভা-সমিতি করে বেরায়! এসবের মধ্যে দিয়া আবার ও প্রকৃত কবি আত্মহত্যা করে কবি হয়ে ওঠে এদেশের মানুষের প্রিয় কণ্ঠস্বর...’

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

Dance With Drums (Video)


Pohela/Poila Boishakh is the first day of the Bengali calendar, celebrated on 14 April or 15 April in Bangladesh and in the Indian states of West Bengal and Tripura by the Bengali people and also by minor Bengali communities in other Indian states, including Assam, Jharkhand and Orrisa. It coincides with the New Year's days of numerous Southern Asian calendars like Tamil new year Puthandu. The traditional greeting for Bengali New Year is "Shubhô Nôbobôrsho" which is literally "Happy New Year".

The Bengali New Year begins at dawn, and the day is marked with singing, processions, and fairs. Traditionally, businesses start this day with a new ledger, clearing out the old.

People of Bangladesh enjoy a national holiday on Poila Boishakh. All over the country people can enjoy fairs and festivals. Singers perform traditional songs welcoming the new year. People enjoy classical jatra plays.

Like other festivals of the region, the day is marked by visiting relatives, friends and neighbors. People prepare special dishes for their guests.

The festivities from the deep heartland of Bengal have now evolved to become vast events in the cities, especially the capital Dhaka.

In Dhaka and other large cities, the festivals begin with people gathering under a big tree. People also find any bank of a lake or river to witness the sunrise. Artists present songs to welcome the new year, particularly with Rabindranath Tagore's well-known song "Esho, he Boishakh". It is tradition to enjoy a meal of 'pantha bhaat and ilish maach'( fermented rice and hilsa fish) on this day. Now a days People Use To send Pohela Boishakh Special Sms To there nearest Friends And Family Member.

People from all spheres of life wear classic Bengali dress. Women wear saris with their hair bedecked in flowers. Likewise, men prefer to wear panjabis. A huge part of the festivities in the capital is a vivid procession organized by the students and teachers of Faculty of Fine Arts, University of Dhaka.

Of the major holidays celebrated in Bangladesh and West Bengal, only Pôila Boishakh comes without any preexisting expectations. Unlike Eid ul-Fitr and Durga Pujo, where dressing up in lavish clothes has become a norm, or Christmas where exchanging gifts has become an essential part, Pôila Boishakh is about celebrating the simpler, rural heartland roots of the Bengal.

Source: wikipedia.org

০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

স্মরণে আজ আলীর শাহাদাত

পারস্যের শিল্পীদের তুলিতে মাওলা আলী (রা.)
যে ব্যক্তির তরবারীর আঘাতে তিনি শহীদ হয়েছিলেন তার নাম ছিলো আব্দুর রাহমান ইবনে মুলযেম। উনিশে রমযানে তাকে আঘাত করা হয়, আর একুশে রমযানে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এর মধ্যবর্তী সময়টাতে তিনি ইচ্ছে করলেই এর প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা নেননি। কারণ প্রতিশোধের মতো ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে তিনি সবসময় দূরে থেকেছেন। তাই তরবারীর আঘাত খেয়েও অপেক্ষা করেছেন। এমনকী মুলযেমের যথার্থ যত্ন নেয়া হচ্ছে কিনা বা তার খাবার-দাবারের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা; সে খোঁজও নিয়েছেন। এমনকী শহীদ হবার আগে তিনি বলে গিয়েছিলেন- ‘আমি যদি মারা যাই, তাহলে মুলযেম আমাকে যেভাবে তরবারি দিয়ে একটিমাত্র আঘাত করেছে, ঠিক সেভাবে তাকেও একটিমাত্র আঘাত করবে, এর বেশি নয়।’

যার কথা বলছিলাম তিনি সুন্নী মুসলিম মতে ইসলামের শেষ খলিফা এবং শিয়া মুসলিম মতে ইসলামের একমাত্র বৈধ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ)। আজ ২১ রমজান, তার শাহাদাত দিবস। যদিও অনেক সুন্নী আলেম দাবি করেন তিনি ১৮ বা ২০ রমজান ইন্তেকাল করেছেন। তবে শিয়া-সুন্নী উভয় মতেই আলীর শাহাদাতের সাল ৪০ হিজরী। খ্রিস্টীয় পঞ্জিকা অনুসারে শিয়া মতে তার মৃত্যু হয়েছে ৬৬১ সালের ২৯ জানুয়ারি, আর সুন্নী মতে ২৬ বা ২৮ জানুয়ারি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৩ বছর। হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) তার জানাজায় ইমামতি করেন। কুফার নাযাফে তাকে দাফন করা হয়। যেখানে আজও তার মাযার রয়েছে।

হযরত আলী (রাঃ) সুন্নীদের চেয়ে শিয়াদের কাছে বহুগুন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিয়া মতবাদ গড়েই উঠেছে আলীকে কেন্দ্র করে। তিনি শিয়াদের ১২ ইমামের প্রথম ইমাম। গুরুত্বের দিক থেকে শিয়াদের কাছে রাসূলের পরেই আলীর স্থান। অনেক শিয়া মুসলিম আরো মনে করেন, গুরুত্বের দিক থেকে ইমাম আলীর স্থান মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) বাদে অন্যান্য নবীদের চেয়েও উপরে। বহুকাল আগে শিয়াদের মধ্যে এক চরমপন্থী মাঝহাব ছিলো। সেই মাজহাবের নাম ছিলো গুরাব্বিয়া। তাদের দাবি ছিলো, আল্লাহ আলী ইবনে আবু তালিবকে নিজের শেষ নবী বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জিব্রাইল ভুল করে মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহকে ওহী দিয়ে দেন। এই কারনে ওই শিয়ারা জিব্রাইলের সমালোচনা করতেন। এই মাঝহাব অবশ্য এখন আর নেই। সুন্নীরা যেমন কাদিয়ানী আহমাদিয়াকে কুফরী মাজহাব ও বাতিল ফিকরা মনে করে; শিয়ারাও তেমননি গুরাব্বিয়া মাজহাবকে কুফরী মাজহাব ও বাতিল ফিকরা হিসেবে গণ্য করে। এখানে আরো উল্লেখ্য, শিয়ারা আবু বকর, উমর ও উসমানকে মোটেই গুরত্ব দেয় না। তাদের সবকিছু রাসূল (সাঃ), আলী (রাঃ) ও বাকি ১১ ইমাম কেন্দ্রিক। তাদের প্রথম ইমাম আলী ও শেষ ইমাম মাহদী।

হযরত আলীর পিতার নাম আবু তালিব ও মাতার নাম ফাতেমা বিনতে আসাদ (রাঃ)। তিনি মহানবী (সাঃ) এর চাচাতো ভাই এবং সর্বকনিষ্ট কন্যা ফাতেমা জোহরার (রাঃ) স্বামী। শিশু বয়স থেকে রাসূলের সাথেই থাকতেন। দারিদ্রের কারনে চাচা আবু তালিবের পক্ষে যখন সন্তানদের ভরন পোষন করা সম্ভব হচ্ছিলো না বলে রাসূল চাচাতো ভাইদের মধ্যে আলীর দায়িত্ব নেন। এরই সুবাদে মহানবী (সাঃ)’র প্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজা (রাঃ) পর আলীই হন ইসলামের দ্বিতীয় এবং যুবকদের মধ্যে প্রথম মুসলমান। কৈশোরে (রাঃ) ইসলামে দীক্ষা নিয়ে তিনি এ আদর্শ প্রচারে ব্রতী হন। এ বিষয়ক এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘একদিন তিনি (আলী) সবিস্ময়ে দেখছিলেন, রাসুলে খোদা (সাঃ) ও খাদিজা (রাঃ) উপুড় হয়ে মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে আছেন। অবাক হয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? রাসুল (সাঃ) উত্তর দিলেন, ‘এক আল্লাহর ইবাদত করছি। আর তোমাকেও দাওয়াত দিচ্ছি।’ হজরত আলী (রা.) সে দাওয়াত কবুল করে মুসলমান হয়ে গেলেন। তখন তাঁর বয়স নয় থেকে ১১ বছরের মধ্যে।’

আলী (রাঃ) ছিলেন প্রবল সাহসী। যেই রাতে মহানবী (সাঃ) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেছিলেন, সেই রাতে নিহত হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তিনি নবীর বিছানায় শুয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন। ইসলামের পক্ষে অসি হাতে বীরত্বের জন্য মহানবী (সাঃ) তাকে ‘আসাদুল্লাহ’ (আল্লাহর সিংহ) উপাধি দেন। এছাড়া তাকে আমেরুন মুমেনীন নামেও ডাকা হতো। অনেকে নিশ্চয়ই জানেন, ইসলামে তাৎপর্যপূর্ন এক তলোয়ারের নাম জুলফিকার। এক সময় এটি ছিলো এক ‘কাফের’ -এর। তার নাম মুনাবা বিন হাজাজ। বদর যুদ্ধে তাকে মুসলমানেরা হত্যা করে। তখন জুলফিকার মুসলিম সেনাদের নিয়ন্ত্রনে আসলে রাসূল এটি নিজের কাছে রাখেন। ওই যুদ্ধেই আলী ৩৬ জন ‘কাফের’ হত্যা করলে মহানবী (সাঃ) বিশেষ তলোয়ারটি তাকে বিশেষ বীরত্বের জন্য উপহার হিসেবে দেন।

আরেক যুদ্ধ শেষে আলী নিজের জন্য রাসূলের মেয়ে ফাতেমা (রাঃ) কে চান। এর আগে আবু বকর এবং উমরও ফাতেমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) রাজি ছিলেন না। আলী প্রস্তাব দিলে তিনি ফাতেমাকে জানান। আলী ছিলেন অনেক সুদর্শন যুবক। ফাতেমা আলীকে পছন্দ করলে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় খাতুনে জান্নাতের বয়স ছিল ১৫ বছর পাঁচ মাস ১৫ দিন। আর হজরত আলীর বয়স হয়েছিল ২১ বছর পাঁচ মাস। কোনো কোনো লেখায় অবশ্য তাদের বিবাহকালীন বয়স যথাক্রমে ১৪ ও ২১ উল্লেখ করা হয়েছে।

শিয়া আলেমদের একাধিক লেখায় রয়েছে, তৎকালীন সময়ে সন্ধি স্থাপনের জন্য মেয়েদের উপহার হিসেবে দেয়া হতো। সে অনুযায়ি একবার আলীর সাথে সন্ধি করতে বিধর্মীদের এক প্রতিনিধি নিজের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেন। ফাতেমা এটা জানতে পেরে নিজের বাবার কাছে নালিশ দেন। তখন মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘ আলী যদি আল্লাহর শত্রুর মেয়েকে বিয়ে করে তবে সে যেনো মনে রাখে, যে আমার মেয়েকে কষ্ট দিবে সে আমাকে কষ্ট দিবে।’ এ কথা শোনার পর আলী আর সেই মেয়েটিকে বিয়ে করেন নি। আলী যে রাসূলের নির্দেশের বাইরে এক চুল নড়তেন না সেটাই এই ঘটনার মাধ্যমে ফুটে উঠে।

হযরত আলীর মোট ১১ সন্তান ছিলেন। এর মধ্যে হজরত ফাতেমা (রাঃ)-এর গর্ভে হাসান, হুসাইন ও মহসিন নামে হজরত আলীর তিন পুত্রসন্তান এবং জয়নাব ও উম্মে কুলসুম নামে দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেন। মহসিন (রাঃ) বাল্যকালেই ইন্তেকাল করেন। হজরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর বংশধররা সৈয়দ নামে পরিচিত ছিল। হজরত ফাতেমা (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর হজরত আলী (রাঃ) অন্যত্র বিয়ে করেন এবং তার ঔরসে আরো সন্তান জন্মগ্রহণ করেন।

কোনো কোনো সুন্নী আলেম দাবি করেন, হযরত আলীর খুবই ঘনিষ্ট ছিলেন উমর ও উসমান। ওনারা এত ঘনিষ্ট ছিলেন যে আলী নিজের দুই সন্তানের নাম রেখেছিলেন উমর ও উসমান। তবে মহানবীর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার (রাঃ) সাথে মেয়ের জামাই আলীর সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিলো না। আসছি সে গল্পে।

২৩ জুন ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রাঃ) শহীদ হওয়ার ঠিক পাঁচ দিন পেরিয়েছে। রাজনৈতিক উত্তেজনায় মদিনার সর্বত্র তখন তুমুল নৈরাজ্য আর বিশৃংখলা। এমন ডামাডোলের মাঝেই মিসরীয় বিদ্রোহীদের নেতা ইবনে সাবা রায় দেন, হযরত আলী (রাঃ) একমাত্র খলিফা হওয়ার অধিকারী। কারণ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার সপক্ষে একটি ওসিয়্যত করেছিলেন। অতঃপর ওসমান (রাঃ) এর মৃত্যুর ষষ্ঠ দিনে, ২৪ জুন আলী (রাঃ) কে চতুর্থ খলিফা নির্বাচিত করা হয়। মদিনার জনতা তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন।

খলিফা হওয়া পর তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী মদিনা থেকে ইরাকের কুফায় সরিয়ে নেন। এ সময় তার মাথার ওপরে ছিলো হযরত উসমান(রাঃ)’র হত্যাকারীদের দ্রুত শাস্তি দেয়ার দাবি। হযরত আলী (রাঃ) ঘোষণা করেন, তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রাষ্ট্রে শান্তি-শৃংখলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এরপর তিনি হযরত উসমান (রাঃ)’র হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখিন করতে পারবেন। আলী (রাঃ)’র এমন ঘোষণা মানতে নারাজ ছিলেন মহানবীর ঘনিষ্ট সাহাবি হযরত তালহা (রাঃ), হযরত যুবাইর (রাঃ)’সহ আরো অনেকে। তারা সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করা শুরু করেন। হযরত আয়েশা (রাঃ), যিনি আলীর প্রকৃত মনোভাব সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, তিনিও হযরত উসমানের হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে তালহা (রাঃ) ও যুবাইর (রাঃ)’র সাথে যোগ দেন। তিনজনে মিলে বসরার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী নিয়ে রওনা হন।

খবর পেয়ে আলী হযরত আলী (রাঃ) যুদ্ধ এবং রক্তপাত এড়ানোর যারপরনাই চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এক দুর্ভাগ্যজনক যুদ্ধ হয়। যদিও তালহা (রাঃ) ও যুবায়ের (রাঃ) যুদ্ধের পূর্বেই সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন। হযরত আয়েশার (রাঃ) সৈন্যরা পরাজিত হয়।তবুও আলী (রাঃ) তাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন এবং তার নিরাপত্তার খেয়াল রাখেন। তিনি তার ভাই মোহাম্মদ বিন আবু বকর (রাঃ)’র রক্ষাবেষ্টনীতে তাকে মদিনায় পাঠিয়ে দেন। এটি ‘উটের যুদ্ধ’ নামে খ্যাত। কারণ হযরত আয়েশা(রাঃ) যুদ্ধের সময় উটের উপর বসে সৈন্য পরিচালনা করেছেন। পরবর্তীতে হযরত আয়েশা (রাঃ) জীবনভর হযরত আলী (রাঃ)’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুতপ্তা ছিলেন। যুদ্ধে উভয় পক্ষে অংশ নেয়া ১০ হাজার সাহাবি শহীদ হন।

শিয়া মতে ‘মাওলা’ খ্যাত আলী (রাঃ)’র জন্য এই যুদ্ধটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক পরীক্ষা। আবু মরিয়ম (রাঃ) থেকে বর্নিত, ‘(ও আলী), তিনি (আয়েশা) রাসূলের দুনিয়া ও আখিরাতের স্ত্রী। আল্লাহ আপনাকে পরীক্ষা করছেন। আপনি কি আল্লাহকে মান্য করেন নাকি তাকে (আয়েশা)।’ বিভিন্ন সাহাবির বর্ণিত হাদিস মতে আলী সেই দশজন সৌভাগ্যশালীদের একজন মহানবী (সাঃ) নিজে যাদের জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন।

হজরত আলী (রাঃ) বাল্যকালে কিছু লেখাপড়াও শিখেছিলেন। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)’র ‘কাতেবে ওহি’ দলের অন্যতম সদস্য। তার মধ্যে অসাধারণ কাব্যপ্রতিভাও ছিলো। বিভিন্ন সময় তিনি অনেক কবিতা রচনা করেছেন। তার রচনায় মূলত দ্বীনে ইসলামের মহিমাই ফুটে উঠেছে। সিহাহ সিত্তার গ্রন্থাবলিতে তার কবিতার কিছু উদ্ধৃতি লক্ষ করা যায়। ‘দিওয়ানে আলী’ শিরোনামে হজরত আলীর কবিতাসংগ্রহকে আরবি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ মনে করা হয়। একইসঙ্গে আলী (রাঃ) ছিলেন একজনসুবক্তা । ‘নাহজুল বালাগা’ নামে তার বক্তৃতার একটি সংকলনও রয়েছে। যেখানে তার ভাষাজ্ঞান ও বাগ্মিতার প্রমাণ মেলে।

৪০ হিজরি রমজানের সেই ভোরে ফজরের নামাজ আদায়কালে সিজদারত আলী (রাঃ)’র ওপর তরবারীর আঘাত হানা হয়েছিলো। আঘাতকারী আব্দুর রাহমান ইবনে মুলযেম ছিলেন ইসলামের তৎকালীন চরমপন্থী ‘খারেজি’ গ্রুপের সদস্য। মূলযাম যখন তার তরবারী বসিয়ে দিচ্ছিলেন , তখন হযরত আলী মুখ থেকে যে শব্দকটি বেরিয়েছিলো, তা ছিলো-‘فزت و ربی الکعبه অর্থাৎ ‘কাবার রবের শপথ আমি সফলকাম হলাম।’ পরে গোপনেই দাফন করা হয় আলী (রাঃ)’কে, তা’ও মূলত ওই উগ্রপন্থীদের ভয়ে। খারেজীরা বলতেন, আলী মুসলমানই নন। তাই ভয় ছিলো তারা কবর থেকে তার লাশ বের করে অপমান করতে পারে। এই ভয়ের কারণে প্রায় একশ বছর নবী পরিবারের ইমামেরা ব্যতীত কেউই জানতেন না আলীকে কোথায় দাফন করা হয়েছে।

সেই ২১ রমযানের ভোরে কাউকে নকল লাশ সাজিয়ে কিছু ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হয়েছিলো মদিনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। যাতে লোকজন মনে করে আলী (রাঃ) কে মদিনায় দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু ইমাম আলীর সন্তানেরা ও কিছু সংখ্যক অনুসারী – যারা তার দাফনে অংশগ্রহণ করেছেন; তারা জানতেন তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে। বর্তমানে কুফার নিকটে নাজাফে যে স্থানে আলীর সমাধি রয়েছে সেখানে তারা গোপনে যিয়ারতে আসতেন। পরে খারেজীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং আলীর প্রতি অসম্মানের সম্ভাবনা রহিত হয়, তৎকালীন ইমাম সাদিক (আঃ) তার এক সাহাবী সাফওয়ান (রহঃ) কে সে স্থান চিহ্নিত করে গাছ লাগিয়ে দিতে বলেন। এরপর থেকে সবাই জানতে পারেন ইমাম আলীর মাযার সেখানে।

* লেখাটি গত ২৭ জুন (২১ রমজান) নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’এ প্রকাশিত হয়েছিলো।

৩০ আগস্ট ২০১৬

হিলারি ধনীদের নেত্রী, হাসিনা গরিবের

দৃশ্যত এই মুহুর্তে বিশ্বের সবচে ক্ষমতাধর ‘খ্রিস্টান নারী’ যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন, আর ‘মুসলিম নারী’ - নিঃসন্দেহে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কে প্রত্যাখ্যান করবেন এ কথা?

বস্তুত খ্রিস্টান, মুসলিম বা হিন্দু, বৌদ্ধ - এখানে আলোচনায় আসার কথা নয়। তবুও বিশ্ব রাজনীতির চেহারা স্পষ্ট করতে এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক ‘টার্ম’ বা বিশেষণ ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে লেখক সত্ত্বার পক্ষে পুরুষতান্ত্রিক হয়ে ওঠার লোভ সামলানোও বেশ কঠিন।
তবে এটুকু বলাই যায়, হিলারি ধনীদের নেত্রী আর হাসিনা গরিবের। পুঁজিহীনদের সুদের আওতায় আনার ফর্মূলা দিয়ে শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পাওয়া ড. মুহম্মদ ইউনুস আছেন দুই নেত্রীরই ভাবনায়। তিনিও ওনাদের নিয়ে ভাবেন নিশ্চয়ই।
দুর্নীতির ধোঁয়া তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণ সহায়তা বাতিল করলেও শুরু থেকেই অভিযোগটি ভিত্তিহীন দাবি করে শেখ হাসিনা বলে আসছেন, ড. ইউনূসই এ ঘটনার জন্য দায়ী। সরকার প্রধানের এই বক্তব্যে নতুন মাত্রা পায় বার্তা সংস্থা এপি'র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে।

গত ২৩ আগস্ট প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাংলাদেশ সরকার চাপ প্রয়োগ শুরু করলে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করে সাহায্য চান ড. ইউনূস। এ সময় সহকারীদের ইউনূসকে সাহায্য করার উপায় খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন হিলারি । একই সময়ে ডক্টর ইউনূসের অধীনে থাকা দু’টি প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশন’ কয়েক লাখ ডলার আর্থিক অনুদান পায় বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

এতে আবারো স্পষ্ট যে, ড. ইউনুস গরিব চুষে খাওয়া ধনীদেরই প্রতিনিধি। যিনি হাসিনা সরকারকে কিনতে বা টলাতে না পারার আক্ষেপাক্রান্ত। আজ একই আক্ষেপে পুড়ছেন মীর কাশেম আলী। তাকে ডিম খেতে দেয়া হোক, কমপক্ষে ছয় হালী ।

জয় বাংলা।

২৮ আগস্ট ২০১৬

হিংসুটে, অসৎ ও ধূর্তের ‘পেশাদার সখ্যতা’

খুব সরল দুটি প্রশ্ন রেখে শুরু করছি। সংশ্লিষ্ট বা অভিযুক্তদের বক্তব্য, তথা আত্মপক্ষসমর্থনের সুযোগ না থাকা সংবাদ কতটা বস্তুনিষ্ঠ? নেহাতই কোনো আলাপ বা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যাকে তাকে যে কোনো কিছু আ্খ্যা দেয়ার অধিকার কি সাংবাদিকদের আছে?
প্রতিদিনই এমন ভুরি ভুরি সংবাদের দেখা মেলে। যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী কর্মকর্তা, বিশ্বস্ত বা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন মানুষের চরিত্র হনন করা হয়। আর যার বা যাদের নামে বিভিন্ন তথ্য ছড়ানো হয়, তাদের কোনো ভাষ্য বা বক্তব্য দেয়া হয় না।

আসুন একটি নমুণা দেখি। ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড তথা বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ দাবি করেছে, সম্প্রতি যে ১১ উপসচিব নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে তার মধ্যে অন্তত চারজন সরাসরি বিএনপি মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তাই শুধু নয়, তাদের গোটা পরিবারের সদস্যরাও একই রাজনৈতিক আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। অর্থাৎ চার কর্মকর্তার গুষ্টির সবাই, জাতীয়তাবাদী দলের সৈনিক।

‘সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা’ -এর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আজ (২৮ আগস্ট, ২০১৬) ‘১১ জেলায় নতুন ডিসি, তিনজনকে নিয়ে আপত্তি’ শিরোনামে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সংবাদটিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরও কোনো ভাষ্যও নেননি প্রতিবেদক। অথচ তার প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করা হয়েছে।

তিনি লিখেছেন, ‘গত ২৩ আগস্ট রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১১ জন উপসচিবকে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এদের মধ্যে অর্থ বিভাগের উপসচিব মো. জহির রায়হান, অর্থমন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত উপসচিব মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব রাব্বী মিয়া সম্পর্কে সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা খাতুন সম্পর্কেও জানা গেছে একই তথ্য।’

এই ‘শাহিনা খাতুন’-কে ‘শাহিনা আক্তার’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনের আরেক অংশে বলা হয়েছে- ‘নাটোরের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শাহিনা আক্তার সম্পর্কে জানা গেছে, তিনিও বিএনপি মনোভাবাপন্ন এবং সুবিধাবাদী কর্মকর্তা।’
‘আমরা জনগণের পক্ষে’ শ্লোগান নিয়ে বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ কোনো ভূঁইফোড় পত্রিকা নয়। এখানে এভাবে চার কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চরিত্র হননের এ প্রচেষ্টার কি হেতু থাকতে পারে বা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে কার, কিসের স্বার্থে; এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা উচিত। কোথায় যে কিসের বীজ লুকিয়ে আছে, কে-ইবা বলতে পারে।
যদ্দুর জানি, দেশের সকল স্তরের মতো আমলা মহলেও ‘প্রফেশনাল জেলাসি’ বা পেশাগত হিংসা কতটা প্রকট তা জানে দেশের সাংবাদিক সমাজ। এমনকী জনগণও চেনে হিংসুটে আমলা, অসৎ গোয়েন্দা আর ধূর্ত সাংবাদিকদের ‘পেশাদার সখ্যতা’। আলোচ্য প্রতিবেদনটি নিঃসন্দেহে এমন হিংসা, অসততা আর ধূর্ততার বহিঃপ্রকাশ। যে পত্রিকায় নঈম নিজাম বা শাবান মাহমুদের মতো উঁচুমানের প্রথিতযশা সাংবাদিকরা আছেন, সেখানে কারা, কেন এর চর্চা করছেন তা খতিয়ে দেখা উচিত। 

তবে পত্রিকাটি ক্ষমা চাইবে কি’না, সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। কারণ বাংলাদেশী সাংবাদিকতা এ চর্চায় খুব একটা অভ্যস্ত নয়। দু’একটি বাদে দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমই ক্ষমা চাওয়ায় বা ভুল স্বীকারে অনভ্যস্ত।  তবু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ আশা করছি।

বিভিন্ন সভা-সম্মেলনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, ‘ওনারা (মানে দেশ বিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্রের সদস্যরা) সর্বত্র আছেন।’  তার এই বক্তব্যের কাঁধে বন্দুক রেখে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের যে কর্তারা আপন শত্রু খতমে বা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে তৎপর রয়েছেন; তাদেরকে বলছি- একটু সাবধান হন। কোনো না কোনো গোয়েন্দা সংস্থা আপনাদের তালিকাও প্রস্তুত করছে নিশ্চয়ই। কারণ আত্মস্বার্থসিদ্ধির তরে কারা সরকারকে বিব্রত করে তা প্রধানমন্ত্রীও বোঝেন।

১০ আগস্ট ২০১৬

তারা গুজব রটিয়েছে না চিহ্নিত করেছে?

হে মহান রাষ্ট্র আমার, ধরার তামাম নাগরিক কবির মতো আমিও ‘বিশেষ’ ভয় পাই কাঠােমাকে আপনার। তবু ভীরু মন নিয়ে এটুকু অন্তত বলতে চাই, গত রাতে (৭ আগস্ট) আপনার ‘বিশেষ’ বাহিনী র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) দ্বারা আক্রান্ত সংবাদমাধ্যম ‘বাংলামেইল২৪ডটকম’ গুজব রটিয়েছে না রটনাকারীকে চিহ্নিত করেছে তা দয়া করে পুনর্বিবেচনা করুন।

জানা মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের 'মিথ্যে মৃত্যুসংবাদ' প্রচারকারী ‌টুডেনিউজ৭১ডটকম’র সংশ্লিষ্ট খবরটি যে ‘ভিত্তিহীন, গুজব’ ছিলো - তা’ই জানিয়েছে বাংলামেইল। তাদের অবস্থা অনেকটা খুনীকে ধরিয়ে দিতে গিয়ে ফেঁসে যাওয়া বাংলা সিনেমার ট্র্যাজিক হিরোদের মতোই। শনিবার (৬ আগস্ট) প্রকাশিত টুডেনিউজ৭১.কম’র সংবাদ শিরোনাম ছিলো - ‘বিমান দূর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী পুত্র “জয়” নিহত’। আর রোববার (৭ আগস্ট) দুপুরে বাংলামেইল প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিলো ‘বিমান দুর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়ের মৃত্যুর গুজব!’
বাংলামেইল'র প্রতিবেদনে ওই ভুয়া খবরের সমালোচনার পাশাপাশি এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেনের বক্তব্যও ছিলো। তিনি বলেছেন, 'যারা জীবিত জয়কে মেরে ফেলেছে, তারা জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। এ ধরনের সংবাদে এটাই প্রমাণ হয়, এ চক্রটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করছে।' ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান ।
তথাপি গুজব রটনাকারী টুডেনিউজ৭১.কম’র কাউকে না ধরে র‌্যাব বাংলামেইল’র সাংবাদিকদের আটক করেছে। গুজব ছড়ানো গোষ্ঠীেকে ধরিয়ে দিতে গিয়ে কি বিপদেই না পড়েছে তারা! বাংলামেইল’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. সাহাদাত উল্যাহ খান, নির্বাহী সম্পাদক মাকসুদুল হায়দার চৌধুরী ও সহ-সম্পাদক প্রান্ত পলাশকে আটকের এ ঘটনায় আমি যারপরনাই উদ্বিগ্ন।

দেশ বিদেশের গণমাধ্যমে এ ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদগুলো পড়ছিলাম। দেশের একটি পত্রিকাতেই দেখলাম বাংলামেইলের এক সাংবাদিক বলেছেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক কর্মকর্তা সংবাদটি সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারা তা করেননি। পরে রাত ১১টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা অফিসে এসে ওই তিন জনকে নিয়ে যায় এবং যে কম্পিউটারে বসে সংবাদটি লেখা হয়েছিল, সেটি জব্দ করে। যাওয়ার আগে সব সাংবাদিক-কর্মচারিকে বের করে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান দরজায় তালা ঝুলিয়ে যায় তারা।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান দৈনিক সমকালকে বলেছেন, 'সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে একটি মিথ্যা খবর প্রকাশের অভিযোগে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে।' এর আগে র‌্যাব-০৩’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারওয়ার বিবিসি বাংলা’কে বলেছেন, 'অনলাইন নিউজ পোর্টালটিতে প্রকাশিত একটি খবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের 'মিথ্যে মৃত্যুসংবাদ' প্রচার করা হয়েছে।'

অভিযান চালানোর পর পত্রিকাটির কার্যালয় 'আপাতত' বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়ে সারওয়ার বলেেছন, 'অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই সিদ্ধান্ত হবে তাদের গ্রেফতার করা হবে, নাকি ছেড়ে দেয়া হবে।' পত্রিকাটির ব্যাপারেও জিজ্ঞাসাবাদের পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

এর আগে গত সপ্তাহে বাংলাদেশে সরকারের নির্দেশে ৩৫টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। যার মধ্যে বেশ কিছু ডানমনা সংবাদমাধ্যমও ছিলো। বাংলামেইল'র মালিক আজিম গ্রুপের কর্ণধার ফজলুল আজিম ওয়ান এলিভেনের সময় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত রাজনীতিক, সাবেক সংসদ সদস্য (হাতিয়া)। ২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিলো বাংলামেইল২৪ডটকম। জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদের মিডিয়া সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেছিলেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক আসাদুজ্জামান সম্রাটের বদৌলতে শুরুর দিকে আমিও কিছুদিন জড়িত ছিলাম এ উদ্যোগের সাথে। শুধু সে জন্য নয়, বেসিকালি বাংলামেইলকে অন্তত পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয়নি কখনো। তাই আবার বলছি হে মহান রাষ্ট্র, ‘বাংলামেইল২৪ডটকম’ গুজব রটিয়েছে না রটনাকারীকে চিহ্নিত করেছে তা দয়া করে পুনর্বিবেচনা করুন। প্রকৃত অপরাধীকে ধরুন।

আর একটা একান্ত অনুরোধ; পারলে ‘প্রকৃত’ সাংবাদিকদের ব্যাপারে আরেকটু সংবেদনশীল হোন। ছদ্মদের অপকর্মের দায় যেন - এদের না নিতে হয়।

[গত ৮ আগস্ট ফেসবুকে প্রকাশ করেছিলাম লেখাটি। সংরক্ষণের জন্য এখানে লিপিবদ্ধ করে রাখলাম।]

৩০ জুলাই ২০১৬

কাপ্তাই হ্রদের কুবের

কাপ্তাই হ্রদের কুবের
শৈশবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাছ ধরা আর ভেলা বা নৌকা চালানোটা কাউকে শিখিয়ে দিতে হয়নি। এমনকী সাঁতারও। কিভাবে কিভাবে যেন শিখে গিয়েছিলাম। এটা বোধকরি এলাকার গুনে। পুকুর, নদী, খালের শহর বরিশালের যে মহল্লায় আমি বেড়ে উঠেছি, সেখানেই ছিলো কমপক্ষে দেড় ডজন বিশালায়তনের পুকুর। আর বাসার ঠিক পেছনই ছিলো শহরের সুপ্রসিদ্ধ জীবন্ত জলাধার ‘জেল খাল’। নব্বইয়ের দশকেও  এ খাল ছিলো ছোট-বড় নৌকা, ট্রলার আর মিঠা পানির বিভিন্ন জাতের মাছের ঝাঁকের দাপুটে বিচরণে মুখরিত। এরই সুবাদে হরেক প্রকৃতির মাঝি  আর মৎস শিকারীর দেখা পেয়েছিলাম সেকালে। তারাই ছিলো আমার শৈশবের হিরো।
সেই যে তুস/কুড়া ফেরি করে বেরানো বড় নৌকার দাঁড়টানা পৌঢ় মাঝির নীল চোখের শূন্য দৃষ্টি,  পোক্ত পেশী বা ছোট ডিঙি নৌকায় সবজী ফেরি করে বেড়ানো যুবকের উচ্ছল উদ্যমতা,  কিছুই ভুলিনি আজও। ভুলিনি ছুটির দিনে ছই তোলা নৌকায় করে আমাদের শহরের বাড়ি থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে, মাঝিরা কুমির আর শুশুকের যে গল্প শোনাতেন, তা’ও।
একই গল্প বার বার পড়ার মতো শুনতে চাওয়ার বাতিকও আমার ছিলো। সবচেয়ে ভালো লাগতো মনে হয় খোয়াজ খিজিরের মিথ। মাছ শিকারীদের কথা আর খুব বেশী না-ইবা বলি। অজস্র দক্ষ শিকারী দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কেউ নদীতে, কেউ পুুকুরে, কেউ খালে, কেউবা কাঁদা পানিতে মাছ ধরার ব্যাপারে এক্সপার্ট । নানা পদের ছোট-বড় জাল, চাঁই, কোচ, বর্শি, আরো কত কী দিয়েই না মাছ ধরায় মাততেন তারা।
হারিয়েই গেছে আমার জলমগ্ন শৈশবের জলাভূমিগুলোর একাংশ। নদীগুলো কোনো মতে টিকে রইলেও সে খাল আজ ভাগার এবং নগরের ময়লার ভারে নিমজ্জিত। আর অধিকাংশ পুকুর কবর দিয়ে তার উপরে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনের সাম্রাজ্য। তবু মননে লুকানো কৈবর্ত স্বভাবে আজও জলজ ভাব। যে কারণে জলে বসবাসকারী বেঁদে বা বৈড়ালদের মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জীবনও আমায় আকৃষ্ট করেছে আশৈশব।
গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে সাংবাদিকতা শুরুর কালে এদের নিয়ে লেখার আগ্রহ ছিলো তুঙ্গে। ঘুরে বেড়িয়েছি নদী থেকে নদীতে। বিভিন্ন নদী মাঝি ও জেলেদের নৌকায় রাত কাটানো অভিজ্ঞতাও হয়েছে সেই দিন গুলোতে। ইলিশ শিকারীদের সাথে চলে গিয়ে ছিলাম সাগরেও ।


কত গল্প শুনেছি। তবুও সাধ মেটেনি। তার ওপরে সেই কবে থেকে মনে হচ্ছে জলের দেশের এমন গল্পের স্বাদ সারা দুনিয়াকে চেনানোও বেশ জরুরী। এই ভাবনার জেরেই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকার জলাভূমির শত শত মাঝি আর জেলেদের সাক্ষাতকার সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়েছি । এগুলোর ‘লুক এন্ড ফিল’ কেমন হবে – সহযোদ্ধাদের তা বোঝাতেই এই নাই কাজ তো খৈ ভাজ নির্মাণ। এমন টাইটেল দেয়ার কারণ, এটাকে সিরিয়াসলি নেয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা ।

প্রথম প্রকাশঃ বানান

১৬ জুন ২০১৬

দমনে দৃঢ় রাষ্ট্র কাঠামো

সরকারি দরকার না মানা নাগরিকরা মূলত ‘রাষ্ট্রীয় বখাটে’। আর এ সংজ্ঞা পৃথিবীর সকল দেশের জন্যই প্রযোজ্য বলা চলে। প্রত্যেক রাষ্ট্রই বখাটে দমনে সদা বদ্ধ পরিকর।  এই যেমন ধরুন, আমাদের দেশে তারহীন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের পরিচয় নিশ্চিতে সরকার নির্দেশিত আঙুলের ছাপ বা টিপসই সংগ্রহের অভিযানে অংশ নেননি যে নাগরিকরা; তারাও এখন ‘রাষ্ট্রীয় বখাটে’ হিসেবে চিহ্নিত। ইতোমধ্যে তাদের ‘সাইজ’ করাও হয়ে গেছে। এক রাতের মধ্যে কোমায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের কথাযন্ত্রগুলোর আড়াই কোটি হৃদয় (সিম)।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল, ৩১ মে দিবাগত রাতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বর্তমানে সারাদেশেই তোলপাড় চলছে। মূলধারা গণমাধ্যম ও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় বিভিন্ন মানুষের নানান মত প্রকাশিত হচ্ছে। বাদ দেই সে আলাপ।
আমাদের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, ‘প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতারক্ষার অধিকার থাকবে।’ তবে তা অবশ্যই ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ’ মেনে। অর্থাৎ কমপক্ষে চারটি অজুহাতে আপনার যোগাযোগ মাধ্যমের গোপনীয়তা খর্বের অধিকার বাংলাদেশ সরকারের আছে। আদতে ধরার তামাম রাষ্ট্রনীতি প্রাণের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
আদতে ধরার তামাম রাষ্ট্রনীতি প্রাণের স্বাধীনতার পরিপন্থী। তাদের পিতা – ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান’ মূলত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের ফাঁদে বন্দী। প্রাণীকূলের অন্য কোনো পশুপাখিকে তা তোয়াক্কাও করে না। তারাও অবশ্য পাত্তা দেয় না মেরুদণ্ড সোজা করে চলা দো পেয়ে জীবদের কোনো নিয়ম-কানুন। হয়ত ভয় পায় কিছুটা। কারণ মহাপ্রকৃতির সকল প্রাণই জানে, মানুষ নামক এ প্রাণীর চেয়ে হিংস্র কোনো জীব দুনিয়াতে অন্তত নেই। তার ওপরে এদের হিংস্রতা আবার ক্রমবর্ধমান।

অতীতে শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের আক্রোশে এরা নিজেদেরও বিলীন করেছে বহুবার। অন্যান্য প্রাণীদের জিনেও নিশ্চয়ই লেখা রয়েছে সেই নৃশংস ইতিহাস। বস্তুত মনুষ্যকূলের পোশাক ঢাকা শরীরের নাজুকতা, অন্তরের কঠোরতাকে আড়াল করতে পারে না। স্বভাবগত ঐতিহাসিকতার কারণেই তারা এমন। ব্যাতিক্রমও আছে। কারণ মানুষ বিচিত্রও বটে। বস্তুত মনুষ্যকূলের পোশাক ঢাকা শরীরের নাজুকতা, অন্তরের কঠোরতাকে আড়াল করতে পারে না।

মূল কথা হচ্ছে, নিজেকে নির্দিষ্ট সীমানায় ঘেরা একটি জনপদের মানুষ ভেবে দুনিয়াতে কেউ স্বাধীন ও মুক্তমনা হতে পারে বলে আমার অন্তত মনে হয় না। পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকই তা নন। প্রত্যেকেই নিয়ন্ত্রণাধীন। রাষ্ট্রগুলোর শাসক শ্রেণী আপনার, আমার নিয়ন্ত্রক। বাঙালের দেশে বসে এ বাস্তবতা বেশ প্রকটাকারেই টের পাচ্ছি আজ। তবে আশার কথা হচ্ছে দেশের রাষ্ট্রীয় বখাটেরা এখনো কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ন্ত্রিত সংযুক্তির জালে তারা আটকে আছেন, সম্ভবত ব্যবসায়িক কারণে।

গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ আবার তাদের এক বার্তাও পাঠিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে- ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল অনিবন্ধিত সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আপনার সংযোগ পুনরায় চালু করতে জিপি বায়োমেট্রিক পয়েন্টে চলে আসুন। চার্জ প্রযোজ্য নয়।’ ওদিকে সরকারি সংস্থার বরাত দিয়ে দেশের প্রভাবশালী একটি পত্রিকা বলছে – ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া সিম আবার চালু করতে নতুন সিম কেনার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। বর্তমানে বায়োমেট্রিক উপায়ে নতুন সিম কিনতে অপারেটরভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দাম রাখা হয়। এর মধ্যে সরকার সিমকর হিসেবে পায় ১০০ টাকা।’

এখানে বলে রাখি, বায়োমেট্রিক পরীক্ষায় অংশ না নেয়ায় আমিও এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত দুষ্ট নাগরিক, মুঠোফোন সংযোগ বিচ্যুত। ভুগছি আরো নানা শাস্তির শঙ্কায়। কারণ এটি এমনই এক জনপদ, যেখানে ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়ালও ভালো’ টাইপের কথাও প্রচলিত আছে।  বায়োমেট্রিক পরীক্ষায় অংশ না নেয়ায় আমিও এখন রাষ্ট্র স্বীকৃত দুষ্ট নাগরিক, মুঠোফোন সংযোগ বিচ্যুত।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান’ করা হয়েছে ঠিকই; তবে তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত- অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে ‘আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ’ মেনে।
অর্থাৎ সাংবিধানিকভাবে এই রাষ্ট্র আমাদের চিন্তা আর বিবেকেরও নিয়ন্ত্রক। সংবিধানের একই অনুচ্ছেদ বলে শর্তসাপেক্ষে ‘প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের এবং ‘সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা’ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে রাখা হয়েছে বাধা-নিষেধ অমান্যকারী বা শর্তভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ। এই সুযোগের ফাঁক গলেই চিন্তা, বিবেক, ভাব ও কথা নিয়ন্ত্রণকারী তামাম নিয়ম-কানুন, আইন তৈরী হচ্ছে, বিরাজ করছে এ বঙ্গে। এই সুযোগের ফাঁক গলেই চিন্তা, বিবেক, ভাব ও কথা নিয়ন্ত্রণকারী তামাম নিয়ম-কানুন, আইন তৈরী হচ্ছে, বিরাজ করছে এ বঙ্গে।

সামান্য ইস্যুতে এত কিছু বলা ঠিক হচ্ছে না সম্ভবত। যদিও জানি কোনো কিছুই সামান্য নয়। সামান্যেই অসামান্য নিহিত রয়। তবে আজকাল কখন যে গায়ে কোন সিল লেগে যায়, তা বোঝা দায়। এই লেখা পড়েই না আবার কেউ বলে ওঠে – ‘ব্যাটা বিএনপি-জামায়াতের দালাল নয়ত’। হয় না, এমনও হয়’তো। দমনে পোক্ত হয় রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো।

প্রথম প্রকাশঃ ১ জুন, ২০১৬
গণমাধ্যমঃ নিউজনেক্সটবিডি ডটকম

২০ মে ২০১৬

আফ্রিকায় যাচ্ছে ‘মাই বাইসাইকেল’

ফিল্ম, মিউজিক আর পারফর্মিঙ আর্টের সমন্বিত উৎসবের কারণে ইতোমধ্যে পূর্ব আফ্রিকার বৃহত্তম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তানজিনিয়ার জেডআইএফএফ, মানে জানজিবার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এ উৎসবের এবারের থিম ‘দিস জার্নি অফ আওয়ার্স।’ জানজিবারের স্টোন টাউনে আগামী ৯ থেখে ১৭ জুলাই এটি অনুষ্ঠিত হবে। আর এতে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘মাই বাইসাইকেল’। চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। সে ভাষায় সিনেমাটির নাম ‘মর থেংগারি’, যার বাংলা অর্থ ‘আমার বাইসাইকেল’।
উৎসবের ‘ফিচার ফিকসন’ বিভাগে প্রদর্শনের জন্য এটি ‘অফিসিয়ালি’ মনোনিত হয়েছে। দেশের জন্য আবারো সম্মান আনলো সেন্সর বোর্ডের, তথা সরকারি ছাড়পত্র না পাওয়া একটি চলচ্চিত্র। কিঙবা বলা যায় - এই সম্মান নিয়ে এলেন স্রোতের বিপরীতে চলতে জানা এক আত্মবিশ্বাসী নির্মাতা অং রাখাইন
অং রাখাইন শুধু চাকমা ভাষার প্রথম সিনেমার নির্মাতা নন, সম্ভবত
তিনি রাখাইন জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা একমাত্র বাংলাদেশী পরিচালক।
বাংলাদেশে এই চলচ্চিত্র বাণিজ্যিক ভাবে মুক্তি দেয়া না গেলেও ২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৩তম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও উন্মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবেই এটি প্রথম প্রদর্শিত হয়। এরপর প্রদর্শনী হয়েছিলো চট্টগ্রামে। গত বছর নভেম্বরে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয় ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়ার তাল্লিন ব্ল্যাক নাইট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ডিসেম্বরে রাশিয়ার সিলভার আকবুজাত অ্যাথনিক ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটি সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার জেতে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সুইডেনের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব গোটেবর্গ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও প্রশংসিত হয় এ সিনেমার গল্প ও নির্মাণ। এছাড়া ফিনল্যান্ডের স্কাবমাগোভ্যাট ইন্ডিজেনাস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরো কয়েকটি উৎসবে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।
‘মাই সাইকেল’ -এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কামাল মনি চাকমা, ইন্দ্রিরা চাকমা, ইউ চিং হলা রাখাইন, বিনাই কান্তি চাকমা, আনন্দ চাকমা, সুভাষ চাকমা, জোরাদান চাকমা। ছবির গল্প পরিচালকের নিজের। চিত্রনাট্য করেছেন নাসিফুল ওয়ালিদ। চিত্রগ্রহণে ছিলেন সৈয়দ কাসেফ শাহবাজী, আর সম্পাদনায় আরেফিন। মিউজিক করেছেন অর্জুন, সাউন্ড মিক্সিং রতন পাল। প্রযোজনা করেছেন মা নান খিং। স্রেফ শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতা বা অর্থায়নে নির্মিত স্বল্প বাজেটের এ ছবিটির পরিবেশক খনা টকিজ

ছবির গল্পে দেখা যায়, কামাল নামে একজন যুবক শহরে টিকতে না পেরে বাড়িতে ফিরে আসেন একটি বাইসাইকেল নিয়ে। এ সাইকেল দিয়ে একসময় এলাকায় মানুষসহ মালামাল পরিবহন শুরু করেন। আর তাতে তার সংসারের খরচ, ছেলের পড়ার খরচ চলতে থাকে। কিন্তু তার এই সুখ অন্যদের সহ্য হয় না। তিনি ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন। আর না, বাকীটা জানতে অবশ্যই দেখতে হবে পুরো সিনেমা।

১৩ মে ২০১৬

প্রফেসনাল নই, ইমোসনাল আমি

‘আপা আপনি শ্রদ্ধেয়, মহান। কিন্তু আপনার সাথে কাজ করাতো দূরের আলাপ, কথা বলার রুচিও আমার আর অবশিষ্ট নেই। টাকাটা কখনো দিতে ইচ্ছে হলে *** ভাইয়ের কাছে দিয়েন।’ – দেশের স্বনামধন্য এক নির্মাতাকে গত মঙ্গলবার (১০ মে, ২০১৬) বিকেলে এই ক্ষুদে বার্তাটা পাঠাতে হয়েছে। গত মার্চের শেষ সপ্তাহে - তার নির্মাণাধীন ধারাবাহিক নাটক / মেগা সিরিয়ালের দ্বিতীয় কিস্তির চিত্রায়ন পর্বে কাজ করতে ‍গিয়েই জেনেছিলাম, প্রথম কিস্তির চিত্রগ্রাহক টানা আট দিন কাজ করেও কোনো টাকাও পাননি। তখনই বেশ আঁতকে উঠেছিলাম যে শঙ্কায়, তা’ই সত্যি হলো। নয় দিন কাজ করিয়ে তিনি মাত্র দুই দিনের মজুরী দিলেন, তা’ও বহুবার চাওয়ার ফল। এরপর – ‘এ হপ্তায় না, ও হপ্তায়’ - টাকা দেয়ার কথা বলে বলে কালক্ষেপন শেষে সর্বশেষ আমায় জানানো হয়েছে, ওই সাত দিনের মজুরি কবে নাগাদ দেয়া হবে তা অনিশ্চিত। তবে চলতি মাসের শেষ হপ্তায় নির্মাতা ধারাবাহিক/সিরিয়ালটির তৃতীয় কিস্তির চিত্রায়ন পর্বের কাজ শুরুর পাশাপাশি আরেকটি খণ্ড নাটক নির্মাণ করবেন। ওই সময় তিনি আমার, মানে চিত্রগ্রাহকের দিনের মজুরী দিনেই দিতে পারবেন।
বকেয়া মজুরী দিতে না পারার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তার ধারাবাহিক/সিরিয়ালের প্রযোজক এখন ‘ঈদের নাটক নিয়ে প্যাঁচে আছেন’। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ক্রিকেট খেলা প্রচারের কারণে নাটকটির প্রচার আপাতত বন্ধ রাখায় তিনি প্রযোজককে ‘আগের টাকার জন্য চাপ দিতে’ পারছেন না। যদিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অনির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, ‘তারা পরিচালকের আগের দুই কিস্তির সমুদয় বেকয়া পরিশোধ করে দিয়েছেন।’
নিজেরই প্রায় বছর দশ/বারো বছর আগের দশা মনে পরছে। সম্ভবত মনে করাচ্ছে এ সময়ের দায়। সেই সময়ও প্রায় একইরকম হতাশায়, ভুগতে হয়েছে হায়। তখন অবশ্য নাটক-সিনেমার পরিচালক/প্রযোজক নয়, পত্রিকা-ম্যাগাজিনের সম্পাদক/প্রকাশকের সুমতির অপেক্ষায় থাকতাম রোজ। আহা, কে-ইবা নিতে চায় এমন অতীতের খোঁজ। তখনও দেখতাম তারা ঠিকই ওড়াচ্ছেন বিজয়ের কেতন, ওদিকে বকেয়া আমার ছয় মাসের বেতন। এখন পরিচালক/প্রযোজকদের মাঝেও একই চরিত্র দেখি। এদের যত বড় বড় কথা, মানুষের জন্য দরদ বা ব্যাথা; সবই লোক দেখানো – মেকি। মালিক সর্বত্র একই। মিডিয়ার বিভিন্ন সেক্টরের মালিকদের চরিত্র - পোশাকশিল্প বা জাহাজভাঙাশিল্পের মালিকদের চেয়ে অন্তত ভালো, এমনটা ভাবার কোনোই কারণ নেই।
আন্দাজ করি, এই লেখা বা ক্ষোভ প্রকাশকে হয় ‘ছেলেমানুষী’ - নয় ‘পাকনামি’ ভাববেন অসংখ্য বিজ্ঞ সহযোদ্ধা। এর আগেও আমার এমন আচরনের বহিঃপ্রকাশে তাদের অনেকে অবাক হচ্ছেন দেখে আমি অবশ্য খুব একটা চমকাইনি। কারণ জানি এই শ্রমবাজারে তারাই কথিত প্রফেশনাল। আর আমার মতো ইমোসনালরা বরাবরই মুতে দেয় নিরবতার নিক্তিতে পরিমাপ্য অমন প্রফেসনালিজমের ওপর। যে কারণে আমরা সব জায়গায় আনফিট। মিডিয়ায়তো আরো বেশী।
আরেকটা গল্প বলে শেষ করছি। এটা ছিলো ২০১১ সালের আগস্টের ঘটনা। তখন একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল আর সাপ্তাহিকের সংসদ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করছি। সরকারের মন্ত্রীদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করে বেশ আলোচনায় আসা প্রতিষ্ঠান দুটির সম্পাদক/প্রকাশককে মাসের ২১ তারিখে গ্রেফতার করা হয়। পরদিনই সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় তার নিউজ পোর্টাল আর সাপ্তাহিক। বিনা নোটিশে বেকার হয়ে যাই প্রতিষ্ঠান দুটির শতাধিক সাংবাদিকসহ সবগুলো বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। ওই সময় সাংবাদিকদের অনেকে আবার বেতন না পাওয়ার শঙ্কায় অফিস থেকে পাওয়া ল্যাপটপ/নোটপ্যাড জমা দেননি। আমিও একই শঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু অফিসের জিনিস আটকে বেতন আদায়ে বিবেক সায় দিচ্ছিলো না। অথচ আয়ের অন্য কোনো উপায়ও আমার জানা ছিলো না। অবশেষে কয়েকজন সাংবাদিক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে – কিছু টাকা ধার দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেই।

পরবর্তী সরকারের সাথে সমঝোতা হওয়ার পর সেই সম্পাদক/প্রকাশক কারামুক্ত হন। প্রতিষ্ঠান দুটোও আবার চালু করেন। কিন্তু সেই বেতন আর আমার চাওয়া হয়নি, পাওয়াও যায়নি। অথচ পাঁচ বছর আগের সেই এক মাসের বেতনের ঘাটতি আজও পোষাতে পারিনি। এর আগে পরে অজস্রবার অসংখ্য প্রতিষ্ঠান স্রেফ চাকরি ছাড়ার কারণে আমায় শেষ মাসের বেতন দেয়নি। এক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকতো ক্ষুদ্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে ল্যাপটপ চুরির অভিযোগও এনেছিলেন। যাক সে আলাপ। বস্তুত জীবনে ঘাটতি বাড়ছে। এরই সাথে তা পোষানোর সুযোগ বা সামর্থ্যও কমছে কী? – এই নিয়েই চিন্তায় আছি।

পুরানো পোস্টঃ
মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...

‘জার্নালিজম’ বনাম ‘ক্যাপিটালিজম’!
প্রতিক্রিয়া বা স্ব-শিক্ষিত সাংবাদিকতা...

৩০ মার্চ ২০১৬

অস্ত্রবাজ সময় ও সমাজে ...

ছবিঃ সংগ্রহিত
ধরায় মানুষ নয়, প্রাণ হন্তারক অস্ত্রই সবচেয়ে নিরাপদে রয়। দেশে দেশে তাদের প্রতিটি জমায়েত, তথা ‘অস্ত্রাগারগুলো’ ঘিরেই গড়ে ওঠে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়। এ বলয়গুলোকে সামরিক এলাকা, ঘাঁটি বা ক্যান্টনমেন্ট বলা হয়। সময়ের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন বিশেষায়িত ওইসব এলাকায় চলে অস্ত্রের পাহারা, পরিচর্যা এবঙ প্রাত্যহিক মহড়া। যুগ যুগ ধরে খোদ মানুষই নিয়োজিত আছে এই কাজে। অস্ত্রের বিবর্তনও আগাচ্ছে অজস্র মানুষেরই হাত ধরে। যে মানুষগুলোও আবার খুব দূরের কেউ নন। বেসামরিকদেরই ভাই, বন্ধু - স্বজন। কালের গণিতে যারা আজ সামরিক; তামাম অস্ত্রশাস্ত্র, বা অস্ত্রেরই সেবাদাস। নানা প্রত্যাশার মূলো ঝুলিয়ে তাদের ব্যবহার করা হয়। বস্তুত অস্ত্রেই স্থানীয়, জাতীয় ও বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত রয়। অস্ত্রবলেই গড়ে ওঠে প্রতিটি মনুষ্য রাস্ট্র, আইন। নির্ধারিত হয় সীমানা, শাসক। এবঙ যাবতীয় বিধান, নানাবিধ সম্মান। এমনকী আমার ইতিহাস পড়ুয়া তরুণী বোনের সম্ভ্রম হারানো ক্ষত-বিক্ষত তনু বা তার কেড়ে নেয়া জীবনের দামও আজ; নির্ধারণ করে দিতে চায় - এই অস্ত্রধারী সময় ও সমাজ। ময়নামতির পাহাড় হাউসে তবু কেউই কাঁদেনি ভয়ে। রাষ্ট্রের জলপাইরঙা দাপটে কেঁদেছে কান্দিরপাড় থেকে কারওয়ান বাজার; সমগ্র বাঙলা বা দুনিয়ার মানবাধিকার। তবে জানতে পারে নাই মন, কতটা কাঁদছে সুন্দরবন - এ বেলায়, ক্রমে পুড়ে ধ্বংসের খেলায়।


২৯ মার্চ, ২০১৬
পল্লবী, ঢাকা।

১৪ মার্চ ২০১৬

indo-gangetic evolution

ভিমরুলী - The Vimruli
Man, Metal & Fire 
You know, historically the first great civilizations all grew up in river valleys. The Indo-Gangetic Plain, also known as Indus-Ganga and the North Indian River Plain, is a 255 million hectare (630 million acre) fertile plain encompassing most of northern and eastern India, the most populous parts of Pakistan, and virtually all of Bangladesh.
the return 
The region is named after the Indus and the Ganga, and encompasses a number of large urban areas. The Indus-Ganga plain is bound on the north by the Himalayas which feed its numerous rivers and are the source of the fertile alluvial deposits across the region by the two river systems.
The region is known for the Indus Valley Civilization, which was responsible for the birth of ancient South Asian culture. The flat and fertile terrain has facilitated the repeated rise and expansion of various empires, including the Gupta empire, Kannauj, Magadha, the Mauryan Empire, the Mughal Empire and the Sultanate of Delhi – all of which had their demographic and political centers in the Indo-Gangetic plain.
liquefied
WomenInBangladesh
During the Vedic and Epic eras of Indian history, this region was referred to as "Aryavarta" (Land of the Aryans) which was bordered on the west by the Indus river, on the east by Anga region of present day easternmost part of Bihar and doorstep of Bengal and on the south by the Vindhya Mountain range. During the Islamic period, the Turkish, Afghan and Iranian rulers referred to this region as "Hindustan" (Land of the Hindus), deriving from the Persian term for the Indus River.
colour of life
Dhaka Metro - 2014
This term was later used to refer to the whole of India but even into the modern era, the dialect of Hindi-Urdu spoken in this region is called Hindustani, a term which is also used for the local music and culture.
residential area
Both British and independent India also had their demographic and political centers here (first in Calcutta and then Delhi). Many of the pillars (surveys of maurya dynasty) are present there in these plains. We think these Images will help next generation to recocnize the history of indo-gangetic evolution, or the History of biggest riverine civilization.

১১ মার্চ ২০১৬

জলরঙে বুঁদ শিশুশিল্পীরা

ক্যানভাসে মনোযোগ নুদারের
মায়ের হাত ধরে রঙ ও চিত্রাঙ্কন কর্মশালায় অংশ নিতে এসেছে শিশুশিল্পী নুদার। পুরো নাম দারিমি তাইয়েবা আহমেদ। তার গভীর মনোযোগ যখন ছবি আঁকায় ঠিক তখন নাম জানতে চাওয়ায়, কিছুটা বিরক্ত। তবুও আঁকা থামিয়ে দ্রুত জবাব দেয়। পরমুহুর্তেই ফের ডুব দেয় নিজের ছোট্ট ক্যানভাসে। তুলিতে তার সদ্য শেখা জলরঙের যাদু। চোখে সৃষ্টির দুরন্ত উচ্ছাস।

একই টেবিলে ছবি আঁকার চেষ্টায় বুঁদ রাবেয়া আক্তার বর্ষা, কাজী নক্ষত্র রহমানসহ বেশ কয়েকজন। ফয়সাল আমিন চৌধুরী, তুনাযজিনা মারিয়া আনসা, তাতানাসহ আরো কয়েকজন শিশুশিল্পী পাশের টেবিলে। কারো বয়সই চার-পাঁচ থেকে আট-নয়ের বেশী নয়। প্রত্যেকেই রঙ, তুলি নিয়ে মহাব্যস্ত। অবশ্য আঁকিবুকির ফাঁকেই চলছে গল্প, আলাপ আর দুষ্টুমি।

একইসঙ্গে শিশুদের অজস্র জিজ্ঞাসায় অবিরত জর্জরিত হচ্ছেন প্রশিক্ষকরা। বিরামহীন চিত্তে তারাও বুঝিয়ে চলেছেন। বলে বুঝিয়ে কাজ না হলে প্রয়োজনে হাত লাগিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন, কিভাবে কি করতে হবে। গুরু-শিষ্যদের যৌথ প্রচেষ্টায় চলতি সপ্তাহেও একের পর এক শিল্পকর্ম তৈরী হওয়া শুরু হয়েছে। ‘ক্যানভাস আর্ট ক্যাম্প ২০১৬’ - এর চতুর্থ বা শেষ সপ্তাহের প্রথম দিনের (১১ মার্চ, শুক্রবার) দুুপুরের চিত্রটা ছিলো এমনই।

আর্ট ক্যাম্পের একাংশের চিত্র
সেন্টার ফর এডভান্স নারচারিং এন্ড ভিজ্যুয়াল আর্ট স্টাডিজ (ক্যানভাস) এবং নেসন হাট লিমিটেডের উদ্যোগে চতুর্থবারের মতো আয়োজিত ক্যাম্পটি শুরু হয়েছে গত ২০ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর পল্লবীর ৩২ নম্বর সড়কে ‘ক্যানভাস’ -এর নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলমান এ ক্যাম্পে এই সপ্তাহে রঙ ও চিত্রাঙ্কন বিষয়ে হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন শিল্পী তাসফিক হোসাইন, তাহিয়া হোসাইন ও চলচ্চিচত্র নির্মাতা ফাহিম ফেরদৌস। এর আগের তিন সপ্তাহে তাদের - কারু ও মৃত্তিকা শিল্প, স্থির ও ছাপচিত্র এবং ভাস্কর্য ও সমন্বিত শিল্পকলা বিষয়ে শেখানো হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৭ মার্চ পল্লবীতে এক চিল্ড্রেন আর্ট ফেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। ওই উৎসবে শিশুদের তৈরী শতাধিক শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে। মূলত এরই অংশ হিসেবে চলছে কর্মশালা - ‘ক্যানভাস আর্ট ক্যাম্প ২০১৬’। কর্মশালা ও উৎসব সম্পর্কে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এর উদ্দেশ্য শিশুশিল্পীদের মনোজগতের মনন ও ভাবপ্রকাশের বিজ্ঞানকে একটুখানি উসকে দেয়া।
ক্যাম্পে শিশুদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন ফাহিম ফেরদৌস
‘ক্যানভাস আর্ট ফেস্ট ২০১৬’ শীর্ষক ওই উৎসবে অনুষ্ঠিতব্য উম্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে শিশুদের নাম নিবন্ধন করতে হবে। ‘ক্যানভাস’ - পল্লবী ক্যাম্পাস ছাড়াও উৎসবের ওয়েবসাইট canvasartfest.com - এ নিবন্ধন ফরম পাওয়া যাবে। এটি সংগ্রহ বা জমাদানের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না।

এদিকে - আর্ট ক্যাম্পে অংশগ্রহনকারী শিশুদের আজ (১১ মার্চ, শুক্রবার) বিকেলে সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিল্পী শাওন আকন্দের সলো এক্সিবিসন ‘দেখা, না-দেখা’ ঘুরে দেখে তারা। বিভিন্ন শিল্পকর্ম নিয়ে শিশুরা শিল্পী শাওনের সাথে আলাপেরও সুযোগ পায়।

আঁকিবুকির ফাঁকে চলছে গল্পও
এর আগে আর্ট ক্যাম্পের প্রথম সপ্তাহে কারু ও মৃত্তিকা শিল্প বিষয়ক কর্মশালা চলাকালে শিশুরা মাটির টেরাকোটা, পুতুল, ফুল ও গিফট কার্ড তৈরী করেছে। এ বিষয়ের প্রশিক্ষক ছিলেন শিল্পী শাহীন মোহম্মদ রেজা। পরের সপ্তাহে থেকে স্থির ও ছাপচিত্র বিষয়ক কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন শিল্পী নওরীন জাহান, মাহিন জয়েস এবং চলচ্চিচত্র নির্মাতা ফাহিম ফেরদৌস। ওই সপ্তাহে অর্ধশতাধিক ছাপচিত্র তৈরী করেছে অংশগ্রহনকারীরা। তুলেছে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো অজস্র স্থিরচিত্র। শিখেছে সেগুলো প্রিন্ট করার কলাকৌশল। তৃতীয় সপ্তাহে শিল্পী পলাশ চৌধুরী ও ফাহমিদা আফরোজ শিখিয়েছেন ভাস্কর্য ও সমন্বিত শিল্পকলা। এ সপ্তাহেও নতুন নতুন শিল্পকর্ম তৈরী হয়েছে ক্ষুদে শিল্পীদের হাতে।


প্রতিষ্ঠালগ্ন (২০১৩) থেকেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে এই উৎসব আয়োজন করে আসছে ‘ক্যানভাস’। এবারও এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন র্কাটুনিস্ট আহসান হাবীব, আনুশেহ আনাদিল, শিল্পী, কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর, মিডিয়াকর্মী এশা ইউসুফ, নির্মাতা সামির অহমেদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাসহ আরো অনেকে। পুরস্কার বিতরনী পর্ব শেষে গান গাইবেন শোয়েব, রিজভী, কুয়াশাসহ আরো অনেকে। এর আগে সকালে গোষ্ঠ গান করবে কুষ্টিয়া থেকে আগত শিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও থাকছে জলপুতলের পাপেট শো। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ক্যানভাসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজী মোস্তফা আলম (এফসিএ)।

উচ্ছল তাতানা ও আনসার দুস্টুমি
এই উৎসবের সাথে সাথে যুক্ত রয়েছে রেডিও এবিসি, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম। এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করবে চৌরাস্তা মার্কেটিং এন্ড কম্যুউনিকেশন, অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন করবে সেনাস্ত স্টুডিও। পেডিহোপ হসপিটাল থাকছে স্বাস্থ্য পরিচর্যা পার্টনার হিসেবে। এছাড়া গিফট পার্টনার হিসেবে থাকছে নাভানা।

পূর্ববর্তী পোস্টঃ
চলছে আর্ট ক্যাম্প, আসছে উৎসব

০৯ মার্চ ২০১৬

পথে পাওয়া প্রতিকৃতি


  যারা বইয়ের মতোই মানুষ পড়ার চেষ্টা করেন, পথে পথে মানুষই তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয়। পথের দৃশ্যাবলীর মধ্যে তারা সবচেয়ে আকৃষ্ট হয় মানুষের নানান চেহারা, অভিব্যক্তি ও কার্যাবলীতে। মূলত এমন আকর্ষন, বা আগ্রহের জায়গা থেকেই আমার ভালো লাগে - পথের মানুষদের প্রতিকৃতি ক্যামেরাবন্দী করতে, ক্ষেত্র বিশেষে কারো কারো জীবনের গল্প জানতে। আর জানেনই তো, আমার দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বৈচিত্র সারা দুনিয়ার কাছেই এক বিষ্ময়। বিষ্মিত আমিও। প্রতিদিনই অজস্র নতুন গল্পের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি - নতুন পথে, নতুন মানুষদের সাথে। এই দেখার বা জানার কতটুকু আর দেখিয়ে বা জানিয়ে যাওয়া যায়। তবু কিছু ছবি, গল্প থেকে যাক - সময়ের ভাঁজে।




[Those who try to read people like books, finds people on the way most magnetic. Different faces, expressions and activities of people seem most attractive to them among all the views around the street. Actually because of this admiration or interest, I like to - capture the portraits of persons I meet on my way. Sometimes I like to know the stories of their life. And you know, all the people around the globe are amazed to the population density and variety issue of this country. And I am amazed too while going through numerous stories everyday - on a new way, with new faces. How much of these experiences of seeing and knowing can be shared? Still let some pictures, some stories persist - in the folds of time.]

ক্লিক / Click || পুরো সংকলন / Full Album

২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

চলছে আর্ট ক্যাম্প, আসছে উৎসব

আর্ট ক্যাম্পে ছাপচিত্র তৈরী করছে শিশুরা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৭ মার্চ রাজধানীর পল্লবীতে শিশু কলাকারদের নিয়ে আর্ট ফেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। সেন্টার ফর এডভান্স নারচারিং এন্ড ভিজ্যুয়াল আর্ট স্টাডিজ (ক্যানভাস) এবং নেসন হাট লিমিটেডের আয়োজনে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য এই উৎসবে তিন থেকে পনেরো বছর বয়সী শিশুদের পাঁচশতাধিক শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে।
চলমান আর্ট ক্যাম্পের চিত্র
এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে কর্মশালা, ‘ক্যানভাস আর্ট ক্যাম্প ২০১৬’। পল্লবীর ৩২ নম্বর সড়কে ‘ক্যানভাস’ -এর ক্যাম্পাসে গত ২০ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া চার সপ্তাহের এই ক্যাম্পে অংশগ্রহনকারীরা চারটি বিষয় হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে - কারু ও মৃত্তিকা শিল্প, স্থির ও ছাপচিত্র, চিত্রাঙ্কন ও রং এবং ভাস্কর্য ও সমন্বিত শিল্পকলা।

আর্ট ক্যাম্পে মাটি দিয়ে টেরাকোটা তৈরী করছে শিশুরা
প্রথম সপ্তাহে কারু ও মৃত্তিকা শিল্প বিষয়ক কর্মশালা চলাকালে শিশু শিক্ষার্থীরা মাটির টেরাকোটা, পুতুল, ফুল ও গিফট কার্ড তৈরী করেছে। এ বিষয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন শিল্পী শাহীন মোহম্মদ রেজা। আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে স্থির ও ছাপচিত্র বিষয়ক কর্মশালা শুরু হয়েছে। এতে প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন শিল্পী নওরীন জাহান, মাহিন জয়েস এবং চলচ্চিচত্র নির্মাতা ও আলোকচিত্রী ফাহিম ফেরদৌস। প্রথম দিনে অর্ধশতাধিক ছাপচিত্র তৈরী করেছে অংশগ্রহনকারী শিশুরা।

‘ক্যানভাস আর্ট ফেস্ট ২০১৬’ শীর্ষক উৎসবটি শিশুদের জন্য নানা আয়োজনে সাজানো হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও সকাল থেকে শুরু হবে উম্মুক্ত শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সঙ্গে থাকছে একমাস আগে থেকে শুরু হওয়া কর্মশালার প্রদর্শনী। কর্মশালা ও এই উৎসব সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এর উদ্দেশ্য শিশুশিল্পীদের মনোজগতের মনন ও ভাবপ্রকাশের বিজ্ঞানকে একটুখানি উসকে দেয়া। উৎসবের দিন উম্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তবে এর কোনো ফি নেই।

আর্ট ক্যাম্পে মাটি দিয়ে টেরাকোটা তৈরী করছে শিশুরা
প্রতিষ্ঠালগ্ন (২০১৩) থেকেই ‘ক্যানভাস’ এই উৎসবটি আয়োজন করে আসছে। এবারও অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন র্কাটুনিস্ট আহসান হাবীব, আনুশেহ আনাদিল, শিল্পী, কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর, মিডিয়াকর্মী এশা ইউসুফ, নির্মাতা সামির অহমেদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাসহ আরো অনেকে। পুরস্কার বিতরনী পর্ব শেষে গান গাইবেন শোয়েব, রিজভী, কুয়াশাসহ আরো অনেকে। এর আগে সকালে গোষ্ঠ গান করবে কুষ্টিয়া থেকে আগত শিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও থাকছে জলপুতলের পাপেট শো। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ক্যানভাসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজী মোস্তফা আলম (এফসিএ)।

এই উৎসবের সাথে সাথে যুক্ত হয়েছে রেডিও এবিসি, বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম । এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করবে চৌরাস্তা মার্কেটিং এন্ড কম্যুউনিকেশন, অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন করবে সেনাস্ত স্টুডিও। পেডিহোপ হসপিটাল থাকছে স্বাস্থ্য পরিচর্যা পার্টনার হিসেবে। এছাড়া গিফট পার্টনার হিসেবে থাকছে নাভানা।

২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

পুলিশ ছাড়া কেউ থাকবে না ...

লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড
‘বইমেলায় মানুষ নাই -
খালি পুলিশ আর পুলিশ’
- অমর একুশে বইমেলায় অবস্থানরত এক কবিবন্ধু মাত্রই বললেন, মুঠোফোনালাপে। তল্লাশীর অতিরিক্ততায় বিরক্ত অনেকে মেলায় না ঢুকেই চলে যাচ্ছেন বলেও তিনি দাবি করলেন। আরেক অনুজ সাংবাদিকের অভিমত, ‘লেখক হত্যা আর প্রকাশক গ্রেফতারের বইমেলা আজ দৃশ্যতই নিরাপত্তার খোলসে বন্দী।’
মূহুর্তে মনে পরে যায় গত সন্ধ্যায় পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের মুখে শোনা কথাগুলো। তিনি অত্যন্ত বিনয় নিয়ে আমাদের বলেছিলেন, ‘আপনারা চলে যান। একটু পরই পুরো এলাকা পুলিশে পুলিশারণ্য হয়ে যাবে। আজ এখানে পুলিশ ছাড়া কেউ থাকবে না।’ অথচ বছরের পর বছর ধরে প্রতিটি ২০ ফেব্রুয়ারির বা মহান একুশের রাত আমরা - সমমনা বন্ধুরা টিএসসি এবঙ আশেপাশের এলাকায় কাটিয়েছি। গান, আড্ডা, শ্লোগান আর মানুষের দৃপ্ত মুখর থেকেছে পুরো এলাকা। এমনকী সেটা পাকিস্তানি ভাবাদর্শের ডানমনা (বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন) সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেও। এরপর সকালে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে, সারাদিন মেলায় কাটিয়ে রাতে বাসায় ফিরেছি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি - সে সাধ একদমই মিইয়ে দিলো।
পুলিশের সাথে তর্ক করতে ইচ্ছে হলো না। কারণ জানি সে রাষ্ট্রীয় নির্দেশের দাস মাত্র। অর্থাৎ এখন রাষ্ট্রই চাচ্ছে না একুশের রাতটা আমরা এভাবে উদযাপন করি। জানি না রাষ্ট্রের পরিচালকরা ভুলে গিয়েছেন কী’না, একুশ কেবলই আনুষ্ঠানিকতার বিষয় না। এর সঙ্গেই আছে জড়িয়ে আছে এ জাতির, মানে বাঙালের জাতীয়তা বোধের চেতনা।
বাসায় ফিরতে ফিরতে খুব মনে পরছিলো - শৈশবে কাদামাটি বা ইট, কাঠ দিয়ে গড়া শহীদ মিনার, আলপনা আঁকা, ফুল চুরি, খালি পায়ে ছুটোছুটি - আরো কত কী। শুধু বার বার ভুলতে চেয়েছি, এখন এ দেশ চালাচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘অফিসিয়ালি’ নেতৃত্বদানকারী দলটিই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই দল আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন ভাবাদর্শের ‘পারপাস সার্ভ’ করছে তা সত্যি, একদমই ভাবতে চাইনি। কারণ আজকাল ভাবতেও ভয় লাগে।
newsreel [সংবাদচিত্র]