Powered By Blogger
তথ্যচিত্র লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
তথ্যচিত্র লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

৩০ জুলাই ২০১৬

কাপ্তাই হ্রদের কুবের

কাপ্তাই হ্রদের কুবের
শৈশবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাছ ধরা আর ভেলা বা নৌকা চালানোটা কাউকে শিখিয়ে দিতে হয়নি। এমনকী সাঁতারও। কিভাবে কিভাবে যেন শিখে গিয়েছিলাম। এটা বোধকরি এলাকার গুনে। পুকুর, নদী, খালের শহর বরিশালের যে মহল্লায় আমি বেড়ে উঠেছি, সেখানেই ছিলো কমপক্ষে দেড় ডজন বিশালায়তনের পুকুর। আর বাসার ঠিক পেছনই ছিলো শহরের সুপ্রসিদ্ধ জীবন্ত জলাধার ‘জেল খাল’। নব্বইয়ের দশকেও  এ খাল ছিলো ছোট-বড় নৌকা, ট্রলার আর মিঠা পানির বিভিন্ন জাতের মাছের ঝাঁকের দাপুটে বিচরণে মুখরিত। এরই সুবাদে হরেক প্রকৃতির মাঝি  আর মৎস শিকারীর দেখা পেয়েছিলাম সেকালে। তারাই ছিলো আমার শৈশবের হিরো।
সেই যে তুস/কুড়া ফেরি করে বেরানো বড় নৌকার দাঁড়টানা পৌঢ় মাঝির নীল চোখের শূন্য দৃষ্টি,  পোক্ত পেশী বা ছোট ডিঙি নৌকায় সবজী ফেরি করে বেড়ানো যুবকের উচ্ছল উদ্যমতা,  কিছুই ভুলিনি আজও। ভুলিনি ছুটির দিনে ছই তোলা নৌকায় করে আমাদের শহরের বাড়ি থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে, মাঝিরা কুমির আর শুশুকের যে গল্প শোনাতেন, তা’ও।
একই গল্প বার বার পড়ার মতো শুনতে চাওয়ার বাতিকও আমার ছিলো। সবচেয়ে ভালো লাগতো মনে হয় খোয়াজ খিজিরের মিথ। মাছ শিকারীদের কথা আর খুব বেশী না-ইবা বলি। অজস্র দক্ষ শিকারী দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কেউ নদীতে, কেউ পুুকুরে, কেউ খালে, কেউবা কাঁদা পানিতে মাছ ধরার ব্যাপারে এক্সপার্ট । নানা পদের ছোট-বড় জাল, চাঁই, কোচ, বর্শি, আরো কত কী দিয়েই না মাছ ধরায় মাততেন তারা।
হারিয়েই গেছে আমার জলমগ্ন শৈশবের জলাভূমিগুলোর একাংশ। নদীগুলো কোনো মতে টিকে রইলেও সে খাল আজ ভাগার এবং নগরের ময়লার ভারে নিমজ্জিত। আর অধিকাংশ পুকুর কবর দিয়ে তার উপরে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনের সাম্রাজ্য। তবু মননে লুকানো কৈবর্ত স্বভাবে আজও জলজ ভাব। যে কারণে জলে বসবাসকারী বেঁদে বা বৈড়ালদের মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জীবনও আমায় আকৃষ্ট করেছে আশৈশব।
গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে সাংবাদিকতা শুরুর কালে এদের নিয়ে লেখার আগ্রহ ছিলো তুঙ্গে। ঘুরে বেড়িয়েছি নদী থেকে নদীতে। বিভিন্ন নদী মাঝি ও জেলেদের নৌকায় রাত কাটানো অভিজ্ঞতাও হয়েছে সেই দিন গুলোতে। ইলিশ শিকারীদের সাথে চলে গিয়ে ছিলাম সাগরেও ।


কত গল্প শুনেছি। তবুও সাধ মেটেনি। তার ওপরে সেই কবে থেকে মনে হচ্ছে জলের দেশের এমন গল্পের স্বাদ সারা দুনিয়াকে চেনানোও বেশ জরুরী। এই ভাবনার জেরেই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকার জলাভূমির শত শত মাঝি আর জেলেদের সাক্ষাতকার সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়েছি । এগুলোর ‘লুক এন্ড ফিল’ কেমন হবে – সহযোদ্ধাদের তা বোঝাতেই এই নাই কাজ তো খৈ ভাজ নির্মাণ। এমন টাইটেল দেয়ার কারণ, এটাকে সিরিয়াসলি নেয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা ।

প্রথম প্রকাশঃ বানান
newsreel [সংবাদচিত্র]