Powered By Blogger

২৮ আগস্ট ২০১৬

হিংসুটে, অসৎ ও ধূর্তের ‘পেশাদার সখ্যতা’

খুব সরল দুটি প্রশ্ন রেখে শুরু করছি। সংশ্লিষ্ট বা অভিযুক্তদের বক্তব্য, তথা আত্মপক্ষসমর্থনের সুযোগ না থাকা সংবাদ কতটা বস্তুনিষ্ঠ? নেহাতই কোনো আলাপ বা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যাকে তাকে যে কোনো কিছু আ্খ্যা দেয়ার অধিকার কি সাংবাদিকদের আছে?
প্রতিদিনই এমন ভুরি ভুরি সংবাদের দেখা মেলে। যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী কর্মকর্তা, বিশ্বস্ত বা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন মানুষের চরিত্র হনন করা হয়। আর যার বা যাদের নামে বিভিন্ন তথ্য ছড়ানো হয়, তাদের কোনো ভাষ্য বা বক্তব্য দেয়া হয় না।

আসুন একটি নমুণা দেখি। ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড তথা বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ দাবি করেছে, সম্প্রতি যে ১১ উপসচিব নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে তার মধ্যে অন্তত চারজন সরাসরি বিএনপি মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তাই শুধু নয়, তাদের গোটা পরিবারের সদস্যরাও একই রাজনৈতিক আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। অর্থাৎ চার কর্মকর্তার গুষ্টির সবাই, জাতীয়তাবাদী দলের সৈনিক।

‘সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা’ -এর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আজ (২৮ আগস্ট, ২০১৬) ‘১১ জেলায় নতুন ডিসি, তিনজনকে নিয়ে আপত্তি’ শিরোনামে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সংবাদটিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরও কোনো ভাষ্যও নেননি প্রতিবেদক। অথচ তার প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করা হয়েছে।

তিনি লিখেছেন, ‘গত ২৩ আগস্ট রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১১ জন উপসচিবকে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এদের মধ্যে অর্থ বিভাগের উপসচিব মো. জহির রায়হান, অর্থমন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত উপসচিব মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব রাব্বী মিয়া সম্পর্কে সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা খাতুন সম্পর্কেও জানা গেছে একই তথ্য।’

এই ‘শাহিনা খাতুন’-কে ‘শাহিনা আক্তার’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনের আরেক অংশে বলা হয়েছে- ‘নাটোরের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শাহিনা আক্তার সম্পর্কে জানা গেছে, তিনিও বিএনপি মনোভাবাপন্ন এবং সুবিধাবাদী কর্মকর্তা।’
‘আমরা জনগণের পক্ষে’ শ্লোগান নিয়ে বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ কোনো ভূঁইফোড় পত্রিকা নয়। এখানে এভাবে চার কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চরিত্র হননের এ প্রচেষ্টার কি হেতু থাকতে পারে বা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে কার, কিসের স্বার্থে; এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা উচিত। কোথায় যে কিসের বীজ লুকিয়ে আছে, কে-ইবা বলতে পারে।
যদ্দুর জানি, দেশের সকল স্তরের মতো আমলা মহলেও ‘প্রফেশনাল জেলাসি’ বা পেশাগত হিংসা কতটা প্রকট তা জানে দেশের সাংবাদিক সমাজ। এমনকী জনগণও চেনে হিংসুটে আমলা, অসৎ গোয়েন্দা আর ধূর্ত সাংবাদিকদের ‘পেশাদার সখ্যতা’। আলোচ্য প্রতিবেদনটি নিঃসন্দেহে এমন হিংসা, অসততা আর ধূর্ততার বহিঃপ্রকাশ। যে পত্রিকায় নঈম নিজাম বা শাবান মাহমুদের মতো উঁচুমানের প্রথিতযশা সাংবাদিকরা আছেন, সেখানে কারা, কেন এর চর্চা করছেন তা খতিয়ে দেখা উচিত। 

তবে পত্রিকাটি ক্ষমা চাইবে কি’না, সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। কারণ বাংলাদেশী সাংবাদিকতা এ চর্চায় খুব একটা অভ্যস্ত নয়। দু’একটি বাদে দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যমই ক্ষমা চাওয়ায় বা ভুল স্বীকারে অনভ্যস্ত।  তবু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ আশা করছি।

বিভিন্ন সভা-সম্মেলনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, ‘ওনারা (মানে দেশ বিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্রের সদস্যরা) সর্বত্র আছেন।’  তার এই বক্তব্যের কাঁধে বন্দুক রেখে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের যে কর্তারা আপন শত্রু খতমে বা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে তৎপর রয়েছেন; তাদেরকে বলছি- একটু সাবধান হন। কোনো না কোনো গোয়েন্দা সংস্থা আপনাদের তালিকাও প্রস্তুত করছে নিশ্চয়ই। কারণ আত্মস্বার্থসিদ্ধির তরে কারা সরকারকে বিব্রত করে তা প্রধানমন্ত্রীও বোঝেন।

কোন মন্তব্য নেই:

newsreel [সংবাদচিত্র]