Powered By Blogger

০১ নভেম্বর ২০১৫

ভয় পেও না, সাবধান থেকো ...

ফয়সাল আরেফিন দীপন
‘ভয় পেও না, তবে সাবধান থেকো।’ - লেখার সুবাদে পাওয়া হুমকীর খবর জেনে ঠিক এভাবেই আমায় অভয় দিয়েছিলেন, গত আগস্টে । সর্বশেষ কথা হয়েছিলো দিন পনেরো আগে। জানতে চেয়েছিলাম - কেমন আছেন? তার জবাব ছিলো - ‘খুব বেশি খারাপ।’ পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম - কেন? শরীর মুষড়েছে, না মন? নাকি প্রকাশনীর অবস্থা? কোনো জবাব পাইনি আর। গত রাতে ঘরে ফিরেই মৃত্যুর খবর পেলাম তার। বিদায় শ্রদ্ধেয় ফয়সল আরেফিন দীপন। যদিও আপনাকে এভাবে বিদায় দিতে চাইছে না মন।

বঙগে ধর্মের দোহাই দিয়ে চলতে থাকা সিরিয়াল কিলিঙ এর সর্বশেষ শিকার প্রকাশনা সংস্থা ‘জাগৃতি’ - এর মালিক দীপন। পবিত্র জুম্মাবারের ঠিক পরদিন গতকাল (৩১ অক্টোবর) তিনি ছাড়াও জখমের শিকার হয়েছেন প্রকাশনা সংস্থা ‘শুদ্ধস্বর’ মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুল। তারা দু’জনেই উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের লেখা বই প্রকাশ করেছিলেন। নিজ নিজ প্রকশনালয়েই খুন হন তারা। দুই জায়গাতেই হামলার পর কার্যালয়ের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যায় খুনীরা। লালমাটিয়ায় টুটুলকে হত্যা করতে গেলে তাঁর সঙ্গে থাকা দুই ব্লগার তারেক রহিমরণদীপম বসুকেও দুষ্কৃতকারীরা কুপিয়ে দরজা বন্ধ করে রেখে যায়।

গত বছর কবি মিছিল খন্দকারকে সাথে নিয়ে গড়া প্রকাশনী কাদাখোঁচা চালুর ব্যাপারে যাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা ও সার্বক্ষণিক উৎসাহ পেয়েছি তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফয়সল আরেফিন দীপন। আমাদের সবগুলো গ্রন্থের পরিবেশক তারই প্রকাশনী। শাহাবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়  দীপন ভাইয়ের পুরানো অফিসে গল্প করতে গিয়ে তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সাথেও দেখা হয়েছে বেশ কয়েকবার। জ্ঞানী এই মানুষটির সামনে এ দেশের মিডিয়া, মানুষ এখন কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝতেও ইচ্ছে করছে না।

ছেলে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ, হতাশ এই বাবা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি কোনো বিচার চাই না। চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক। যাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে রাজনীতি করছেন, যাঁরা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন, উভয় পক্ষ দেশের সর্বনাশ করছেন। উভয় পক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। এটুকুই আমার কামনা। জেল-ফাঁসি দিয়ে কী হবে।’ এমন পিতার সন্তানের রক্ত বৃথা যাবে না নিশ্চয়ই। কারণ এই বাঙালরা রক্ত দিয়ে মুক্তির গান লিখতে জানে।
ফেসবুকের ভেতরবাক্সে দীপন ভাইয়ের সাথে হওয়া কথোপকথন পড়ছিলাম রাতভর। কত কথা তার সাথে, কত না বিষয়ে। কখনো কখনো খুব সাধারণ কথাবার্তার মধ্যেও যে তিনি নানা ইশারা, ইঙ্গিত দিয়েছেন - তা এখন কিছুটা বুঝতে পারছি হয়ত। এই যেমন গত জুলাইয়ে কথা হচ্ছিলো -

- কেমন আছেন ভাই?
- চলছে। শরীর ভালো না।
- জ্বর নাকি?
- না। ব্লাড সুগার অনেক বেশি
- ওহ, এটা'তো ভালো না। হাঁটাহাঁটি করেন? খাওয়া-দাওয়া কন্ট্রোল?
- হয়ে ওঠে না। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে!
- তা’ও যত দিন আছেন সুস্থ থাকতে হবে’তো। তিনতলায় আপনার অফিস কত নম্বরে?
- ১৩১, একদম পেছনের সারিতে।
- হুমম, আইসা পরুমনে।
- অবশ্যই।
সেই কবে, তিন মাস আগে বলেছিলাম যাওয়ার কথা। কিন্তু নাহ, তার নতুন অফিসে আর যাওয়া হয়নি। হবে হয়ত কখনো। কিন্তু তার সেই সদাহাস্যজ্জল মুখটা আর দেখা হবে না।  তবুও মনের সাহস বাড়াতে তার সেই কথাই ফের নিজেকে বলছি আজ; বলছি সমমনা সহযোদ্ধাদেরও - ‘ভয় পেও না, তবে সাবধান থেকো।’
আগামী ৫ নভেম্বর শুরু হবে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির শাহবাগ শাখা
আয়োজিত হেমন্তের বইমেলা। শাহাবাগের পাবলিক লাইব্রেরির উন্মুক্ত চত্বরে অনুষ্ঠিতব্য এই
মেলার আহবায়কও ছিলেন দীপন ভাই, মানে ফয়সল আরেফিন দীপন।


কতিপয় সংবাদের সংযোগঃ
>
তিনজনকে কুপিয়ে দরজায় তালা দিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা
> স্বজনেরা উদ্ভ্রান্ত
> সরকার হতভম্ব
> দরজা খুলে বাবা দেখলেন ছেলের রক্তাক্ত দেহ
> ‘আমি কোনো বিচার চাই না’

০৮ অক্টোবর ২০১৫

ফেরে নাই অভিজিৎ দাস

হারানোর আগে এক রাতে ...
‘বন্ধু –
আবারও এসেছে বসন্ত
ফেরা হয় নাই ঘরে-
ভাঙা পথের রাঙা ধুলো
পদচিহ্নের ভারে-
কাঁপিয়া উঠিছে মন আমার
মন আমার... মন আমার..
থরে থরে ...
ফেরা হয় নাই ঘরে’

- গানটি গাইতে গেলেই খুব চেনা এক অসহনীয় অনুভূতি ভিতর থেকে উঠে এসে গলা চেপে ধরে। অথচ আমার বার বার মনে হয় গলা চেপে ধরছেন খোদ স্রষ্টা, মানে যিনি এ গানের গীতিকার ও সুরকার। তবুও গোঙানোর মতো করে গাইতে গাইতে ভাবি – তার ঘরে ফেরা হবে কবে?
০৮ অক্টোবর, ২০১৪ খ্রি.। খুব ভোরে, সম্ভবত ছয়টা বা সাড়ে ছয়টার দিকে সহোদর (ছোট ভাই) বিশ্বজিৎ দাসের শ্যামলীর বাসা থেকে বেড়িয়ে যান বাংলাদেশের তরুণ কবি ও গণসঙ্গীত শিল্পী অভিজিৎ দাস। এরপর থেকেই তিনি লাপাত্তা। দুই বাংলাতেই তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন বন্ধু, স্বজনরা। খোঁজার কথা জানিয়েছিলো পুলিশও। কিন্ত হদিস মেলেনি। বস্তুত গত বছরের ৭ অক্টোবরের পরই তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি। এমনকী ফেসবুকেও কোনো কার্যক্রম নেই তার। উধাও হওয়ার আগের রাতে ভাইয়ের পাশাপাশি বড় বোন চৈতালী দাসের সাথেও বেশ ঝগড়া হয়েছিলো অভিজিৎ’র। তাই পরদিন সকাল থেকেই অভিমানী ভাইকে খোঁজা শুরু করেন তারা। কিন্তু এক দিন, দুই দিন করে হপ্তা, মাস পেরিয়ে প্রায় বছর চলে গেলেও তার খোঁজ মেলেনি বরিশালে বেড়ে ওঠা এ কবির।
অভিজিৎ দাস নিরুদ্দেশ হওয়ার পরপরই ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করা হয়। পুলিশও ঘটনাটি দ্রুত আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। এ কবিকে খোঁজার জন্য তৎপর হয় তারা। তিন দিন পর, অর্থাৎ ২১ অক্টোবর অভিজিৎ দাসের পরিবারকে জানানো হয় দেশের সকল থানায় তার ছবি পাঠানো হয়েছে। এরপর পেরিয়ে গেছে মাসের পর মাস। আজও দাসের কোনো সন্ধান মেলেনি।

নিরুদ্দেশ হওয়ার আগের রাতে ভাইয়ের সাথে অভিজিৎ’র তর্ক হয়েছে মূলত তার দীর্ঘদিনের বোহেমিয়ান জীবনযাপন নিয়ে। মুঠোফোনে তীব্র বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে বোনের সাথেও। কারণ বোন তাকে বলেছিলেন, চুল-দাঁড়ি কেটে ভদ্রস্থ হতে। কিন্তু অভিজিৎ তার স্বকীয়তা ভাঙতে রাজি নন। তিনি ক্ষেপে গিয়েছেন। চিল্লাপাল্লা করেছেন। সেদিনের কথা বলতে বলতে বিশ্বজিৎ জানিয়েছিলেন, এর আগে দাদাকে অতটা বিক্ষিপ্ত হতে দেখেননি কখনো। এর আগে প্রায়ই তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার কথাও বলতেন । যে কারণে খবর দেয়া হয়েছে ওপার বাংলায়ও। বলা হয়েছে সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে। সেখানেও কেউ অভিজিৎ’র কোনো খোঁজ পাননি। সিনিয়র, জুনিয়র বা সমবয়সী বন্ধু, দূরের - কাছের স্বজন; কেউ না। তার আরেক ঘনিষ্ট বন্ধু বলেন, ‘কোলকাতায় যাওয়ার জন্য নতুন করে পাসপোর্ট করতে তিনি ক’দিন বরিশালে দৌঁড়ঝাপও করে ছিলেন। পরে অবশ্য আর পাসপোর্টটি করতে পারেন নাই।’

গত বইমেলা চলাকালে একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা ভেবেছিলেন বিশ্বজিৎ এবং আরো কয়েকজন। তা’ও পরে আর হয়নি। অভিজিৎ’র নিখোঁজ হওয়াটা যে নেহাতই কোনো বাজে রসিকতা নয়, বরং যথেষ্ট শঙ্কা জাগানিয়া তা প্রথম টের পেয়েছিলাম চৈতালীদির ফোন পেয়ে। পরে একই শঙ্কা টের পেয়েছি তার আরো অনেক শুভাকাঙ্খীর কণ্ঠ বা দৃষ্টিতে। শঙ্কিত সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের চায়ের দোকানদার দুলালও। রাতের পর রাত এই দুলালের দোকানেও কাটিয়েছেন কবি। ছবির হাট সংলগ্ন ওই এলাকাতেই আ্ড্ডা দিতেন তিনি ও তার বন্ধুরা। দুলালসহ ওখানকার আরো অনেকেই অবশ্য দাবি করেছেন, নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে অভিজিৎ প্রায়ই দুই-তিন মাসের জন্য উধাও হওয়ার কথা বলতেন। কিন্তু তিনি সত্যিই যে উধাও হয়ে যাবেন, এটা তারা কেউ আন্দাজও করতে পারেননি।
অভিজিৎ কি তবে তার প্রিয় অগ্রজ বিষ্ণু বিশ্বাসের মতোই স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করলেন? এম্নিতেই বিষ্ণুকে প্রচণ্ড পছন্দ করেন তিনি। তার দুটি কবিতায় সুরও দিয়েছেন। আর বিষ্ণুর মতো তিনিও ডোবেন আজব হ্যালুসিনেশনে। কাছের মানুষেরা তার ভীতিবিহবলতার মুখোমুখি হয়েছে বহুবার। ১৯৬২’র ২৯ মে ঝিনাইদহের বিষয়খালিতে জন্মানো বিষ্ণুও হ্যালুসিনেশনে ভীতচকিত হতেন। তিনি দেখতেন একটা সাদা গাড়ী অথবা ছুরি হাতে কেউ একজন তাকে তাড়া করে ফিরছে। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে আরো জানিয়ে রাখি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ করে ৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসেছিলেন বিষ্ণু। কিছুটা বাউন্ডুলে হলেও তার লেখালেখি, আড্ডা - সবই চলছিলো স্বাভাবিক। ছন্দপতন ঘটলো ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনায়। সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা প্রসূত হিংস্রতা কবিকে বিপর্যস্ত করে মারাত্মকভাবে। করে তোলে আতঙ্কগ্রস্ত। এই আতঙ্ক নিয়েই ১৯৯৩ সালে তিনি উধাও হন। এর প্রায় ১৮ বছর পর পশ্চিমবঙ্গে তার সন্ধান মেলে।
কয়েক বছর আগে অভিজিৎ জানিয়েছিলেন, বরিশালের জাগুয়া গ্রামের যে জমিতে তাদের আদি ভিটা ছিলো তা দখল করে সেখানে ক্লিনিক তৈরী করছেন এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। ভেঙে ফেলা হয়েছে তাদের পুরানো বাড়ি-ঘর, পূর্বপুরুষদের সমাধি। কোনো ভাবে এটা ঠেকাতে না পারার কারণে প্রচণ্ড হতাশ ছিলেন কবি। যদিও তার জ্ঞাতিদের কয়েকজন ক্ষতিপূরন বাবদ কিছু নগদার্থও পেয়েছেন। বয়সে খানিকটা বড় হলেও অভিজিৎ দাসের সাথে আমার অন্তরঙ্গতায় কোনো ঘাটতি ছিলো না সম্ভবত। যে কারণে তার নিপাট নির্লিপ্ত অভিমানের সাথেও আমি পরিচিত। আর এ কারণেই হয়ত ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, অভিমানী কবিকে লাপাত্তা হতে বাধ্য করিনি’তো আমরা; মানে পুঁজিবাদী চমকে মোহাবিষ্ট স্বজন, বন্ধু আর সমাজ? বা সেলফিজমের যমানাই গুম করেনি তো তাকে? নানা শঙ্কা উঁকি দেয় মনে।

এত শঙ্কার মাঝে দাঁড়িয়েও কেন যেন মনে হচ্ছে, শিগগিরই ফিরে আসবেন নিগ্রো পরীর হাতে কামরাঙা কেমন সবুজ, ভাঙা আয়নার প্রতিবিম্বগণ, মাটির চামচ মুখে, করপল্লবসঙ্গিনী এবং সারাটা আঁধার বেড়াবো মাতাল কুসুম বনে বনে -এর কবি। সাথে থাকবে তার নতুন কাব্যগ্রন্থ বা কোনো মহাকাব্যের পাণ্ডুলিপি। শূন্য দশকের কবিদের নিয়ে এক আলোচনায় পড়েছিলাম – “কবি নামের সঙ্গে নান্দনিক হতাশার যোগসূত্রতা সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই। পৃথিবীর তাবৎ কবি-শিল্পীর বহু মহিমান্বিত সৃষ্টির জন্য নান্দনিক হতাশার রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। বরং বলা চলে, কবিদের সত্ত্বার ভেতর এই নান্দনিক নামক জিনিসটি না থাকলে শিল্পের অনেক কিছুরই জন্ম হতো না। কবিতা বঞ্চিত হতো বহু বিস্ময়কর সৃষ্টি ও সৌন্দর্য থেকে। ঘটনাটা ঘটেছে কবি অভিজিৎ দাসের বেলাতেও। পৃথিবীর মহৎ শিল্পকর্মে এই সহজাত প্রক্রিয়া লক্ষ্য করি বেশ। অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের যে সংবেদন তার প্রতিটি মুহুর্তের অধিবিদ্যাকে কবি অনুভব করেন অতিসংবেদনশীলতা। যারা হতাশায় তাড়িত হয় তারা আসলে জীবনের পক্ষে যায়না। তারা আসলে এই বর্তমান হাইড্রোলিক হর্ণ সংবলিত জীবনধারাকে অস্বীকার করে এবং কাঙ্খিত, স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী স্রোতধারাময় জীবনের অপেক্ষায় থাকে। তাদের হতাশা আসলে এক নীরব প্রতিবাদ-এক নৈঃশব্দিক কাতরতার দ্বারা তারা একে একে প্রকাশ করে যায় নিজেকে। একটি কাঙ্খিত জীবনের জন্যে একটি কাম্য জীবনের জন্য তারা নিজেকে ধ্বংস করে যায়। অতএব লেখক হিসেবে তার এই cosmic pathos - আমরা বুঝি। কবি অভিজিৎ দাস-এর হৃদয় সম্ভবত জীর্ণবস্ত্রের মতো সুঁই হয়ে এ ফোঁড় ও ফোঁড় তোলে। তার আত্মপক্ষীয় লেখার মধ্যে সমুদ্র সমান অসন্তোষ আগ্নেয় উষ্ণতায় বিধৃত। সুষ্ঠু ও সুস্থ আত্মপ্রকাশের অক্ষমতা সম্পর্কে সচেনতা এবং ভয়াবহ অতৃপ্তি এর পরতে পরতে। এই গহীন অতৃপ্তি মানসিক যন্ত্রনা তার সৃষ্টিশীল নন্দন-মানসকে কুঁরে কুঁরে খায়। অতৃপ্তি অসন্তুষ্টি, নিরন্তর পরিবর্তনমানতা শিল্পসৃষ্টির ক্ষেত্রে উচ্চতর শুদ্ধির কাছে পৌঁছে দেয়। অনেক সময় স্রষ্টার অন্তরকে অক্টোপাশী প্রজননী-বেদনা ফালাফালা করে। তার অভ্যন্তরে সৃষ্টি অগ্নি আলোকিত করে। যে নিজের লাল রক্তকে কালো কালিতে রুপান্তরিত করে সেই তো কবি। আর অভিজিৎ সেই অস্থিরতার সংলাপে অম্লমধু ধারণ করে সেই পথটিকেই বেছে নিয়ে হাঁটছেন। কেননা তিনি রক্ত-মাংসের কবি।”

২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বাবা এবং তার আগে ২০০৭ সালের ১৬ মে মাকে হারান কবি অভিজিৎ । অবশ্য তাদের মৃত্যুর অনেক আগেই তিনি ভালোবেসে ফেলেছিলেন কাব্যিক উদাসীনতাকে। সংসারের দিকে তার খেয়াল ছিলো না কোনো। তবে জ্ঞাতসারে কখনো কারো ক্ষতির কারণ হননি আমাদের এই আত্মভোলা বন্ধু । তাই বিশ্বাস করি, তারও ক্ষতির কারণ হবেন না কেউ। যেখানেই আছেন, ভালো আছেন – সুস্থ আছেন কবি। যদিও অযন্ত-অবহেলায় তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব বেশী ভালো নেই জানি। তবুও আশা করতে দোষ কি?

নিখোঁজ হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় কবি অভিজিৎ’র নিয়মিত আয়ের কোনো সংস্থান ছিলো না। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিলো দৈনিক আমাদের সময়। পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে শিল্পপতি নূর আলী ও সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খানের দ্বন্দ্ব চলাকালে ছাঁটাই হওয়া কর্মিদের মধ্যে ছিলেন কবিও। এরপর আর কোথাও কাজ করেননি তিনি। তবে কর্মহীন ছিলেন না কখনো। কবি বা যন্ত্রী বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন সারাদিন। আর যেখানেই নিপীরনের খবর পেয়েছেন, ছুটে গিয়েছেন। খোলা গলায় গান ধরেছেন শোষিতদের পক্ষে - ‘দুধ ভাত শুধু তোমাদের - আর আমরা কেবলই - পাথর চিবুতে বাধ্য’। শোষকদের বিরুদ্ধে গানই তার শ্লোগান। এমন অজস্র গানের স্রষ্টা তিনি। কয়েক বছর ধরে ছবি আঁকার ভুতটাও মাথায় চেপেছিলো তার । এঁকেছেন এবং হারিয়েছেন অজস্র ছবি।
অভিজিৎ বলেছিলেন, প্রায় দেড় দশক আগে বরিশালের দৈনিক প্রবাসীতে তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ওস্তাদ ছিলেন সাংবাদিক শওকত মিল্টন। এছাড়াও যদ্দুর জানি অভি বরিশালের দৈনিক আজকের বার্তা, ঢাকার দৈনিক বাংলাদেশ সময়, আর্ট ম্যাগাজিন শিল্পরূপসহ আরো অগণিত পত্রিকায় কাজ করেছেন। বেসরকারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকাপন ইনিস্টিটিউট (আইআরআই) আর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সাথেও ছিলেন বেশ দীর্ঘ সময়। ধ্রুবতারা, শূন্য মাতাল, কালনেত্র, কাঠবিড়ালীসহ আরো অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনও বেরিয়েছে তার হাত দিয়ে।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা অর্ধদিবস হরতালকে সমর্থন জানাতে গিয়ে ২০১১ সালের জুলাইয়ে অভিজিৎ গ্রেফতারও হয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থানে তিনি লাঠিচার্জ ও ধাওয়ার সম্মুখীনও হয়েছেন বহুবার। তবুও রাজপথ ছাড়েননি কখনো। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত - পথেই কাটিয়ে দিয়েছেন। হয়ত আজও তিনি কোথাও কোনো পথেই আছেন; গাইছেন – ‘পথে পথেই পেরিয়ে যাচ্ছি ভোর / পথে পথে পেরিয়ে আসছি রাত / পথেই হারিয়ে ফেলেছি অচেনা মুখ / তোমার সঙ্গে - পথেই সাক্ষাত’।

পুরানো পোস্টঃ অভিজিৎ দাস নিরুদ্দেশ, না গুম?

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পত্রিকার চাহিদা কমেনি!

ফার্মগেট, আগস্ট ২০১৫
টিভি, অনলাইনের দর্শক, পাঠক দিন দিনই বাড়ছে; আর ক্রমশ কমছে কাগজে ছাপানো দৈনিক পত্রিকার আকার ও সার্কুলেশন। তবে ঢাকার পথবাসী মানুষের কাছে দৈনিক পত্রিকার চাহিদা আগের মতোই আছে। আজও ভরদুপুরে তারা নিশ্চিন্তে ঘুমায়, ভোরের পাতায়।

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পরবর্তী প্রজন্মের দায়িত্ব নেবে কে?

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এক শিক্ষালয়ের মাঠ
বাংলাদেশ, রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া একটি রাষ্ট্র। স্বাধীনতার চার দশক পরও এখানে পরবর্তী প্রজন্মের শারীরিক ও মানুসিক স্বাস্থ্য বিকাশের চেয়ে নগরের, তথা নগর কাঠামোর উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ । বিশ্বাস হচ্ছে না! লেখার সাথে সংযুক্ত ছবিটি কিন্তু তারই প্রমাণ। চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) প্রথম হপ্তায় তোলা এই ছবির মাজেজা বুঝতে একটু অতীত ঘাঁটতে হবে বৈকি। কারণ দৃশ্যত এখন কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই যে এটি দেশের রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী এক শিক্ষালয়ের মাঠ।
মাঠটি মূলত সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল এন্ড কলেজের। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণে জড়িত এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আড়াই বছরেরও বেশী সময় ধরে (২০১৩ সালের জানুয়ারী মাস থেকে) অবৈধভাবে এটি দখল করে রেখেছে। উচ্চ আদালতকে তোয়াক্কা না করে তারা নির্মাণ সামগ্রী রেখেই ক্ষান্ত হয়নি। নিষেধাজ্ঞা না মেনে নির্মাণ করেছে আধাপাকা স্থাপনাও। অথচ এক সময় উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থীর পাশাপাশি এলাকার শত শত শিশু-কিশোর এই মাঠেই নিয়মিত খেলাধুলা করতো।
যদ্দুর মনে পরে স্থানীয়দের জানাজা, এমনকী দুই ঈদের নামাজও অনুষ্ঠিত হতো এখানে। বিভিন্ন উৎসব, পার্বণে বসতো মেলা। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশও হতো মাঝে মাঝে। কখনো কখনো কনসার্টও। বহু প্রজন্মের অজস্র আড্ডা, স্মৃতি-বিস্মৃতির এই মাঠকে এভাবে মরতে দেখতে খারাপই লাগছে। বস্তুত খারাপ লাগছে আগামী প্রজন্মের ব্যাপারে আপন রাষ্ট্রের অসংবেদনশীলতা দেখে। যে কারণে এ নিয়ে লেখার তাগিদও অনুভব করেছি।

ঘাঁটাঘাঁটি করে জানলাম, ২০১৩ সালে জুন মাসে এই মাঠ দখলমুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলো হাইকোর্ট। ওই বছরের মার্চে সিদ্ধেশ্বরী অ্যাপার্টমেন্ট ও বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। কিন্তু আজও তা দখল হয়ে আছে। দখলদার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির নাম তমা গ্রুপ। এর মালিক আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক নোয়াখালীর ধনকুবের হিসেবে পরিচিত।

সার্চইঞ্জিনগুলোর সহায়তায় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা খবর থেকে আরো জানলাম, ওই রিটের প্রেক্ষিতে দেয়া তলবের আদেশে আদালতে হাজির না হওয়ায় সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকা যুবলীগ নেতা শোয়েব চৌধুরীকে গ্রেফতার করে হাজির করার নির্দেশ পেয়েছিলো রমনা থানার পুলিশ। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের এই আদেশ দেয়া হয়েছিলো। একইসঙ্গে তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলো আদালত। কিন্তু এই ঘটনার আর কোনো আপডেট খুঁজে পাইনি।

মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণের যন্ত্রপাতি রাখার কথা বলে দুই বছরের জন্য (২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি) ওই মাঠ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপকে ইজারা দেয়া হয়। অথচ বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পরিচালনা পরিষদের বিধি অনুসারে স্কুলের কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করার ক্ষমতা পরিচালনা পরিষদের কাউকে দেয়া হয়নি। যে কারণে ওই ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করেছিলো হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবি এ ব্যাপারে আদালতে বলেছিলেন - “ইজারা দেয়ার সময় কলেজের পরিচালনা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যের সম্মতি নেয়া হয়নি। পরে সরকার ‍ও সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেয়া হলেও এটি বাতিল হয়নি। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ” প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের শিক্ষা, যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার নিশ্চিত করা ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব’।
বিতর্কিত অবৈধ ইজারার মেয়াদও আরো আট মাস আগে শেষ হয়ে গেছে। তবুও মাঠটি দখল মুক্ত হয়নি। এর কারণ অনুসন্ধানে জানলাম আরো চমকপ্রদ তথ্য। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৭২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন খোদ প্রকল্প পরিচালক নাজমুল হাসান ।

অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নকশায় ত্রুটি ও পিলার স্থাপনের জটিলতার দেখিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়াতে বাধ্য করেছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে এক ঠিকাদার, তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান ‘মানিক গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমাদের কাজে কোনো ত্রুটি নেই। কোনো মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ উঠেনি।’ তার দাবি, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্লাই-ওভারের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে।
অনেকে নিশ্চয় জানেন, দেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বন্ধবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পরিবারের ইতিহাসও জড়িয়ে আছে সিদ্ধেশ্বরীর মৃত প্রায় ওই মাঠটির সাথে। ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু টি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তাঁর নামে সেগুনবাগিচায় একটি বাসা বরাদ্দ করা হয়েছিলো। কিন্তু ওই বছরই সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করেন এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সেগুনবাগিচার বাড়িটি তিন দিনের মধ্যে ছেড়ে দিতে বলা হয়। ১৫ অক্টোবর বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। এ সময় বেগম মুজিব সন্তানদের নিয়ে সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল এন্ড কলেজের মাঠের পাশে মাসিক ২০০ টাকা ভাড়ায় একটি বাড়িতে ওঠেন। কিছুদিনের মধ্যেই শেখ মুজিবের পরিবার যে ওই বাড়িতে থাকে তা জানাজানি হয়ে যায়। বাড়ির মালিক বেগম মুজিবকে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেন। একান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িটি ছেড়ে দিয়ে মুজিব পরিবার আবার সেগুনবাগিচার একটি বাসার দোতলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বাঙালীর মুক্তির প্রতীক হয়ে থাকা সেই নেতার, তথা বন্ধবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাই গত সাড়ে সাত বছর ধরে আমাদের রাষ্ট্রনায়ক (সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী)। তার শাসনামলে আগামী প্রজন্মের ব্যাপারে রাষ্ট্রের ঔদাসীন্য দেখে মেনে নিতে সত্যি কষ্ট হয়। যে দেশের প্রতিটি শিশু রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেয়া ১৩ হাজার ১৬০ টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্মায়, সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান আগামী প্রজন্মের ব্যাপারে কেন আরো সংবেদনশীল হবেন না? - এমন প্রশ্নও মনে জাগে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি -এর উপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, “এই যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমণ্ডিতে এক বিল্ডিংয়ে কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশানে এক ছাদের নিচে কয়েকটি। বড় বড় নাম, গাল ভরা বুলি। এদের কোনো একাউন্টিবিলিটি নেই।”
অথচ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে পরিচালিত ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। খোদ ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, পুরনো অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না দিয়েই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মান্নান আরো বলেছেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অডিট রিপোর্টও জমা দেয় না। ক্ষমতা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ইউজিসি কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারে না।’

নীতিনির্ধারকরা এসব বলে আসলে কার বা কাদের ওপর দায় চাপাতে চাইছেন তা বুঝতে পারছেন কি? না পারলে ভাবুন, ভাবার প্রাকটিস্ করুন। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নিজেই যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‘একাউন্টিবিলিটি নেই’ বলছেন, সে প্রতিষ্ঠানগুলো লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর সুযোগ কেন, কিভাবে পাচ্ছে? কার, কোন স্বার্থে? প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না করে বা না শুধরে, খোদ রাষ্ট্রই কি পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যত অনিশ্চিত ও ঘোলাটে করে তুলছে না? অথচ আমাদের রাষ্ট্রনায়করা কি এর দায় নেবেন? নচেৎ তারা কি স্রেফ এটুকু অন্তত বলবেন, এই দায়িত্বটা আসলে কার? দায়টা মূলত কে নেবেন? দেশের আগামীকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারা কাকে দিয়েছে?
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এক জরিপের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার করা এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে - “বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন এমন ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১০টি মান ‘ভালো’। ২৬টির ‘মোটামুটি’, বাকিগুলোর মান 'খুব খারাপ'। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এগুলোর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ক্ষেত্রে একক কোন কাঠামো নেই। মাত্র ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাস রয়েছে।” অবস্থাদৃষ্টে কারো কারো মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, রাষ্ট্রযন্ত্র সব বুঝে চুপ থেকে প্রতিনিয়ত কি দেশের নাগরিকদেরই অপমান করছে না?
যেহেতু সংবিধানের সাত নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।’ সেহেতু কেউ কেউ আবার জনগণের ওপরই তামাম দায় চাপাতে চাইতে পারেন। নিশ্চয়ই তারা বললেন, জনতার অজ্ঞতা প্রসূত বিবেচনা আর নীরবতাই রাষ্ট্রের এই পরিণতির জন্য দায়ী। জন-আস্কারায় রাষ্ট্র পরিচালনাকারী গোষ্ঠী আজ যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে। না হয় মানলাম সে কথা। 

কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালকরা কি ভুলে গেছেন সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা। যেখানে বলা রয়েছে, রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবে৷ মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করার পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিতের জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদানে রাষ্ট্রই কার্যকর ব্যবস্থা নেবে৷

বিগত সরকারের ঘাড়ে সকল দোষ চাপানোর একটা ট্রেন্ড আমাদের দেশে বেশ চালু আছে। ঠিক বুঝতে পারি না, বিগতদের দোহাই দিয়ে নতুনরা সমস্যা না মিটিয়ে যদি এড়িয়েই যেতে থাকেন তবে সরকার বদলেই বা লাভ কী! যাক সে কথা, আশার আলাপ দিয়েই শেষ করছি।  গণভবনে আজ শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যেন প্রতিটি শিশু শিক্ষায়-দীক্ষায় উন্নত হতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হতে পারে।’ জয় হোক তার এই ভাবনার।

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ওই বেতনের কেতন উড়ে

মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি রুটের
একটি লোকাল বাসের জানালায় সাঁটানো নোটিশ
সরকারি চাকুরেদের বেতন দ্বিগুণ হওয়ার এক দিন না যেতেই শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের ওপর রাষ্ট্রীয়বাহীনির গুলি বর্ষণের ঘটনা দুটি নোটিশের কথা মনে করিয়ে দিলো। রাজধানীর মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি রুটে চলাচলকারী একটি লোকাল বাসের জানালায় সাঁটানো ওই নোটিশদ্বয়ের প্রথমটিতে লেখা - ‘হাফ পাশ নেই’। অন্যটিতে - ‘সামনের চারটি সিট সিনিয়র কর্মকর্তা/শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত’। এখানে স্পষ্ট যে, সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সিনিয়রদের প্রতি ওই বাস মালিক যতটা সদয়, জুনিয়রদের প্রতি ততটা নন। কারণ ‘হাফ পাশ’ নেয়ার বা অর্ধেক ভাড়া দেয়ার বিষয়টি আসে মূলত শিশু ও শিক্ষার্থীদের বেলায়। বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রও আগামী প্রজন্মের সাথে ঠিক ওই বাস মালিকের মতোই ব্যবহার করছে। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতের বরাদ্দও আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছে। এ বছরে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা করা হয়েছে জনপ্রশাসন খাতে।
দেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য; কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷” এছাড়া ১৫ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের শিক্ষা নিশ্চিত করা ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব’ বলেও সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতনের সঙ্গে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার রামপুরার আফতাবনগর এলাকায় বিক্ষোভ করেন ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা । ওই সময় তাদের ওপরে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারসহ অন্তত ৩০-৫০ জন আহত হন বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। তবে গুলি ছোড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পুলিশ। আন্দোলনরতরা দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। এ ঘটনার মাত্র একদিন আগে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরকারি চাকুরেদের বহুল প্রত্যাশিত নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সর্বোচ্চ গ্রেডে বর্তমানের চেয়ে ৯৫ শতাংশ ও সর্বনিম্ন গ্রেডে শতভাগের বেশি মূল বেতন বাড়ানো হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো গত জুলাই থেকে কার্যকর করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। তবে এখন শুধু বেতন বাড়বে, ভাতা বাড়বে আগামী বছরের জুলাই থেকে। বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেয়া হবে। বৈশাখে নববর্ষের বোনাসও পাবেন তারা।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সরকারি চাকুরেদের মহার্ঘ ভাতাও (ডিএ) গতকাল (বুধবার) আরো ছয় শতাংশ বেড়েছে । কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১১৩ শতাংশ থেকে ওই ভাতা বাড়িয়ে ১১৯ শতাংশ করার বিষয়টি অনুমোদন করেছে। দেশটির প্রায় এক কোটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগী এই সুবিধা পাবেন। এ খবরটা পড়ে প্রথমেই স্মরণে এলো পুনের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া বা ‘এফটিআইআই’ - এর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা। সেখানকার চেয়ারম্যান পদে রাষ্ট্রটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এর সদস্য গজেন্দ্র চৌহানকে নিয়োগের প্রতিবাদে এবং তার অপসারণ দাবিতে গত ১২ জুন থেকে থেকে তারা একটানা আন্দোলন করছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজেপি সদস্যকে বসিয়ে এর গেরুয়াকরণ করা হচ্ছে। অপরপক্ষ আবার আন্দোলকারীদের ‘হিন্দু বিরোধী’ বলছে। সেখানেও চলছে দমন, গ্রেফতার। অতএব নিজস্ব চাকরদের বেতন বাড়ানোর পর সে দেশের সরকারও যে আন্দোলকারীদের উপর চড়াও হতে পারে, তেমন শঙ্কাতো জাগতেই পারে।
যাক সে কথা, একটু দেশের দিকেই নজর দেই। এখানে পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এই রাষ্ট্রের সাথে ছাত্র আর ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্ক বেশ গভীর। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৯ এর পটভূমিতে ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের চিন্তায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাজনীতিবিদদের চেয়ে কম ছিলো না।
ওই সময় শিক্ষার্থীরা একই ধারার বৈষম্যহীন অবৈতনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার জন্য লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী কোনো সরকারই ওই দাবি আর আমলে নেয়নি। ১৯৯০ এর পরে অবাধ মুক্তবাজার অর্থনীতির হাত ধরে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের পথ প্রশস্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এই কৌশলপত্রের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে।
বিগত ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র অর্থায়নে এবং তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ওই কৌশলপত্র প্রণয়ন করে যা মোট চারটি স্তরে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়। স্তরগুলো হচ্ছে প্রাথমিক পর্ব- ২০০৬-০৭, স্বল্পমেয়াদি ২০০৮-১৩, মধ্যমেয়াদি ২০১৪-১৯ এবং দীর্ঘমেয়াদি ২০২০-২৬। এই ধাপে ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মুলে ছিল ছাত্র আন্দোলনের ভয়। কৌশলপত্র প্রণয়নকারীরা বেশ বুঝেছিলেন যে হটাত করে সমস্ত জনবিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধি ও বেসরকারিকরণ করলে তীব্র আন্দোলন হতে পারে। তাই তারা কৌশলী হয়েছেন।
তবে আশার কথা হচ্ছে, বিতর্কিত ওই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের শুরু থেকেই বেশ ঝক্কি পোহাচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র। তাদের কৌশল কাজে লাগেনি। ঠিকই জেগে উঠেছে শিক্ষার্থী সমাজ। গড়ে তুলেছে একের পর এক আন্দোলন। যারই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ রাজপথে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও বিরুদ্ধে পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র আন্দোলন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে, এটাই কাম্য।

০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

হেফাজতের পথে ওলামা লীগ !

হেফাজতে ইসলামের পদাঙ্ক অনুসরন করছে আওয়ামী ওলামা লীগ। তারাও এবার ভারতীয় অভিনেত্রী আগমন প্রতিহত করতে বিমানবন্দর ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। তাদের কোপানলে পরেছেন বাঙালী অভিনেত্রী পাওলী দাম। নির্মাণাধীন একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য আগামী বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর ) থেকে টানা ১৪ দিন তার এ দেশে অবস্থানের কথা ছিলো।
একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্যে পাওলী
গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে অভিনয় শিল্পী পাওলি দামকে ‘বেহায়া’ আখ্যা দিয়ে গতকাল (৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেছেন - ‘পীর আউলিয়ার পূণ্যভূমি স্বাধীন বাংলাদেশে পাওলি দামের সফর যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে। স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে পাওলি দামের সফর অনভিপ্রেত।’ সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে ভারতীয় অভিনেত্রী সানি লিওনকে বাংলাদেশে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো হেফাজতে ইসলাম। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিতব্য সানির সফর ঠেকাতে রক্ত দিতে প্রস্তত আছে জানিয়ে গত মাসে (২১ আগস্ট) তারাও বলেছে, প্রয়োজনে বিমানবন্দর আক্রমন করা হবে। আলোচিত এই সংগঠনটির নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির, শহরের ডিআইটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়াল এক জুমার নামাজের খুতবার আগে বয়ানে এ হুমকি দিয়ে বলেছিলেন - ‘বাংলার জমিনে কোনো নর্তকীকে বেলাল্লাপনা করতে দেয়া হবে না।’
গত ক’দিন ধরে অবশ্য ওলামা লীগও বেশ আলোচনায় আছে। এর আগে, সম্ভবত গত পরশু (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন করে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে শহীদ ও শেষে রহমতুল্লাহি আলাইহি যোগ করার দাবি তুলেছে। সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ আখতার হুসাইন বুখারী এ দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘জাতির জনকের নামের আগে বঙ্গবন্ধু ব্যবহার করা হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে উনার নামের আগে জাতীয়ভাবে শহীদ শব্দ ব্যবহার করা হয় না। নামের শেষে রহমতুল্লাহি আলাইহি বলা হয় না। অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর নামের আগে জাতীয়ভাবে শহীদ ও নামের শেষে রহমতুল্লাহি আলাইহি বলতে হবে। একইসঙ্গে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবসের বদলে শাহাদাত দিবস ঘোষণা করতে হবে।’
মানববন্ধনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাফর ইকবালের বহিষ্কার চায় ওলামা লীগ। একইসঙ্গে বর্তমানে পাঠ্যপুস্তকে কট্টর ইসলামবিরোধী হিন্দু ও নাস্তিকদের লেখাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে তারা। এছাড়া তখন সানি লিওন আর পাওলী দামকে ‘পতিতা’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবিও জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, সানি লিওন ও পাওলী দাম ইতিপূর্বেও বাংলাদেশে এলেও তখন তাদের এ জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি।

পূর্বের পোস্টঃ সানিকে ঠেকাবে হেফাজত !

২৫ আগস্ট ২০১৫

মায়ের জন্য কবি হেলাল

ছবিটি মৃত্যুর বছর খানেক আগে, ২০০৬’র মার্চে তোলা।
ঘটনাটি ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের। নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক মনে পরছে না। জুন বা জুলাইয়ের কোনো এক সকালে বাসায় এসে ঘুম ভাঙিয়ে ঔষধ কোম্পানীর প্যাডের পৃষ্ঠায় লেখা একটি কবিতা আমার হাতে গুজে দিয়েছিলেন এক কবি। শৈশব থেকে চেনা এ মানুষটির এই সত্বার সাথেও সেদিনই প্রথম পরিচয় হয় আমার। এর আগে কখনো কল্পনায়ও আসেনি যে তিনি কখনো কবিতা লিখতে পারেন । জানালেন মায়ের জন্য লিখেছেন। কিন্তু মা বাসায় নেই, তাই তাকে শোনানো হয়নি। লেখাটি চেয়ে নিয়ে নিজেই একবার পড়ে শুনিয়ে আবার আমার হাতে দিলেন। এরপর দ্রুত বেড়িয়ে যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলেন - ‘এটা থাকুক তোমার কাছে।’ তিনি চলে যাওয়ার পর লেখাটি নিজে একবার পড়ে নিয়ে ডায়েরীর মধ্যে রেখে আমি আবারো ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
তখনও হিজরত করিনি। মাঝে মাঝে ঢাকায় এসে কাজ করলেও বেশীরভাগ সময় বরিশালেই থাকছি। তবে তখন চূড়ান্তভাবে ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। সেদিন সন্ধ্যার কিছু সময় বাদে কি এক কাজে বন্ধু অনুপ, মানে মার্শেল অনুপ গুদাকে নিয়ে বাসায় ফিরতেই বাবার কাছে জানলাম অদ্য প্রতুষ্যে আবিষ্কৃত সেই কবি সিলিঙ ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পরেছেন। তার কক্ষের দরজা ভাঙার চেষ্টা চলছে। শুনেই ছুটলাম। অনুপও ছুটলো সাথে। আমার বাসা থেকে ঘটনাস্থল ছিলো মাত্র তিন মিনিটের এক ছুটের দুরত্বে। গিয়ে দেখি কেবলই দরজা ভাঙা হয়েছে। কবি ফ্যানের সাথে নয়, সিলিঙে লাগানো আঙটার সাথে লাগানো ফাঁসে ঝুলছেন। সম্ভবত মৃত্যু সুনিশ্চিত করতে নিজেই ফ্যানটা খুলে পাশের বিছানার উপরে রেখে নিয়েছেন। পশ্চিম মুখো নিথর দেহ। হাত দুটো এহরাম বাঁধার মতো করে পরস্পরকে আলিঙ্গণ করে আছে। অবশেষে পুলিশ এসে তার ঝুলন্ত দেহ নামানোর উদ্যোগ নেয়। অনেকের মতো আমি আর অনুপও হাত লাগাই। মাথার মধ্যে তখন সকালে পড়া ও শোনা কবিতার লাইনগুলো স্মরণের প্রচণ্ড চেষ্টা চলছে। কিন্তু নাম ছাড়া একটি লাইনও মনে আসেনি কিছুতে। প্রায় আট বছর পর সেই লেখাটি কোনো রূপ সংশোধন বা পরিমার্জন ছাড়াই আজ হুবুহু তুলে দিলাম এখানে।
মা
গাজী মুশফিকুর রহমান (হেলাল)

বেঁচে থেকেও পাশে নেই আজ তার মাতা
       বুকে তার পাহাড় সমান ব্যাথা
চারিদিকে কেন এত জ্বালা?
       কেউ বুঝবে না কারো এই ব্যাথা
করো না কেউ মাকে অবহেলা
       যখন যাবে ছেড়ে মা
এই পৃথিবীর সমতূল্যেও ফিরে পারে না আর
       মা নেই যার কত ব্যাথা তার
আজ বহুদূরে থেকে বুঝি মায়ের সেই
অকৃত্রিম, নিঃস্বার্থ ভালবাসার কথা
তিনি এই জগৎ সংসারের সকল সন্তানদের
জন্য দ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা, আল্লাহর পড়ে
নেই তাঁর কোন তূলনা।
সেদিন লাশ নামিয়ে বাইরে বের হতেই দেখি আমার এক সিনিয়র সহকর্মি, মানে আজকের পরিবর্তন পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার এসএম সোহাগ এসে হাজির। তার সাথে আলাপ করতে করতে ওই বাসা থেকে অনুপকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখি দাওয়ায় উদাস হয়ে বসে আছেন সদ্য আত্মহত্যাকারী কবি হেলালের পিতা। ওই সময় তার পাশে কাকে যেন পেয়ে জিজ্ঞাসা করে জানলাম কবির মা নিজের মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। সন্তানের মৃত্যুর এই খবর এখনো দেয়া হয়নি তাকে।
বেশ প্রগাঢ় পোক্ত বন্ধুত্ব ছিলো প্রয়াত মোহম্মদ আব্দুস সামাদ গাজী আর এবিএম নূরুল হক শরীফের। বরিশাল শহরের কলেজ পাড়ার তালভিটা প্রথম ও দ্বিতীয় গলির বাসিন্দা ছিলেন এ দুজন। প্রথম গলির গাজী ভিলা আর দ্বিতীয় গলির শরীফ কটেজ তাদের স্মৃতিবহন করে আজও দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে আছেন তাদের উত্তরসূরীরা। পরম্পরাসূত্রে পাওয়া পারিবারিক বন্ধুত্বও সম্ভবত টিকিয়ে রেখেছেন তারা। গাজী দাদার সহধর্মীনিও এখনো বেঁচে আছেন। মূলত আজ হঠাৎ তার কথা মনে পরতেিই তড়িঘড়ি করে  এ লেখাটি লিখতে বসেছি। কেন জানি মনে হলো তার অন্তত জানা দরকার যে তাকে ভালোবেসে এমন একজন মানুষ কবিতাও লিখেছেন, যাকে তিনিই জন্ম দিয়েছিলেন। সম্ভবত এটি ছিলো তার সে সন্তানের লেখা প্রথম ও শেষ কবিতা। কিঙবা হতে পারে এটি ছিলো এক অভিমানী পুত্রের কাব্যিক সুইসাইড নোট।
সামাদ গাজীর কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন হেলাল, আর আমি হক শরীফের জেষ্ঠ্য নাতি। হেলাল কাকা বয়সে আমার চেয়ে ছয়-সাত বছরের বড় ছিলেন। তবুও শৈশবের কিছুকালে তিনিই ছিলেন আমার প্রধানমত বন্ধু। তালভিটা প্রথম গলির পূর্বপাশেই জেল বাগান। এক সময় বরিশাল কারাগারের কয়েদীদের দিয়ে এখানে নিয়মিত কৃষি কাজ করানো হতো। শৈশবে এই বাগানে গরু চড়াতে গিয়েই হেলাল কাকার সাথে আমার মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। দুর্দান্ত ডানপিটে এই কাকাই প্রথম ছিপ আর ছোট জাল, এমনকী কোনো কিছু ছাড়া স্রেফ হাত দিয়ে মাছ ধরার কৌশলও শিখিয়েছিলেন আমায়। শুকনো পাতা দিয়ে বিড়ি বানিয়ে খাওয়াসহ শিখেছিলাম আরো কত কী! তখন দেখেই দেখতাম হেলাল মা অন্তঃপ্রাণ। আর বাবার সাথে তার খালি খিটমিট। পরবর্তীতে তিনি অনেক ঘটনাবহুল সময় পার করেছেন।
বরিশালের শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়েছিলেন। তারপর নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী সংগঠন হিযবুত তাওহীদের আঞ্চলিক নেতা। আবার মৃত্যুর আগে আগে সব বাদ দিয়ে মশগুল হয়েছিলেন স্রেফ আল্লাহর ইবাদতে। তালভিটা জামে মসজিদের মুয়াজ্জীন হওয়ার বাসনাও প্রকাশ করেছিলেন। আসলে এত সংক্ষেপে লিখে হেলালের মাজেজা বোঝানো কঠিন। তাকে নিয়ে একটি আস্ত উপন্যাসও লিখে ফেলা যাবে অনায়াসে।
হেলাল কাকার মৃত্যুর এক বছর না ঘুরতে প্রায় একই কায়দায় সিলিঙের সাথে ঝুলে দেহত্যাগ করেছিলো আমার সেই বন্ধু, অনুপ। তার বছর দুয়েকের মধ্যে ক্যান্সারে মারা যান সেই সহকর্মি এসএম সোহাগও। তারা, মানে মৃতরা এ জাতীয় ইহলৌকিক লেখা পড়তে পারেন কিনা জানতে পারিনি আজও।  পড়তে পারুক বা না পারুক, তারা যেখানে আছেন - ভালো থাকুক; এই যা প্রত্যাশা।

২১ আগস্ট ২০১৫

সানিকে ঠেকাবে হেফাজত !

সানি লিওন
ভারতীয় অভিনেত্রী সানি লিওনকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেবে না হেফাজতে ইসলাম। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিতব্য সানির সফর ঠেকাতে রক্ত দিতে প্রস্তত আছে তারা। প্রয়োজনে বিমানবন্দরে আক্রমনের হুমকি দেয়া হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির, শহরের ডিআইটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়াল আজ (২১ আগস্ট) শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের খুতবার আগে বয়ানে এ হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলার জমিনে কোনো নর্তকীকে বেলাল্লাপনা করতে দেয়া হবে না।’ এর আগে গত মাসে প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে ‘মুরতাদ’ আখ্যা দিয়ে তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলো তারা। সে সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছিলেন - ‘মুরতাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড।’

তথ্যসূত্রঃ বিডিমর্নিং ডটকমঅন্যান্য

নুরুলদ্বয়ের মহালোচিত পুত্রেরা

নুরুলদ্বয়ের মহালোচিত পুত্রেরা
তাদের একজনের নাম নুরুল ইসলাম খান, অপরজনের খন্দকার নুরুল হোসেন নুরু মিয়া। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই নুরুলদ্বয় যথাক্রমে কুমিল্লা ও ফরিদপুরের প্রভাবশালী রাজাকার ছিলেন। মানবতাবিরোধী বহু অপরাধের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। তাদের পুত্রদ্বয়ও আজ বিভিন্ন অপরাধের অভিযুক্ত হয়ে মহালোচিত। প্রথম জনের পুত্র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান। আর পরের জনের পুত্র স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল বাণিজ্য নিয়ে ইদানীং এই নুরুল পুত্রদ্বয় প্রায় একই সুরে কথা বলছেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদকারী সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকেও তারা সমালোচনা করছেন একই তালে। তাদের এই দৃশ্যমান আঁতাত এবঙ ক্ষমতার প্রতিপত্তি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সাধারণ মানুষের মনে স্রেফ শঙ্কা জাগাচ্ছে, হয়ত হতাশাও। কারণ ওই পুত্রদ্বয়ের মধ্যে যিনি এখন মন্ত্রী - তিনি নিজেও পাকিস্তানী বাহীনির পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি আবার রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই (মেয়ের শ্বশুর)।
আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের স্বামী হওয়ার সুবাদে সেই ১৯৯০-৯১ সাল থেকে ব্যাপক পরিচিত পাওয়া এক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নাঈমুল ইসলাম খান। সাম্প্রতিক এক কলামে তিনি লিখেছেন - “বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক অ্যাক্টিভিজম করেন। দেখা উচিত, সাংবাদিকতা এটা অনুমোদন করে কি-না। এটা নিয়ে তো কোনো আইন নাই। সাংবাদিকতা কোনো আইন মেনে করা হয় না। কিন্তু আমি বুঝি যে, এটা সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। এটাকে বলে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট।” তাকে জিজ্ঞেস করতে মন চায়, সাংবাদিকরা অ্যাক্টিভিস্ট হলে কনফ্লিক্টটা মূলত কার ইন্টারেস্টে ঘটে? তিনি কি এটা একটু পরিস্কার করবেন? তার কি মনে হয় একজন সাংবাদিকের অন্য কোনো, বিশেষত প্রতিবাদী সত্ত্বা থাকা উচিত নয়? সাংবাদিক হওয়া মানেই কি প্রতিবাদের অধিকার হারিয়ে যাওয়া? প্রবীর সিকদারের যে স্ট্যাটাসটি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, লিখেছেন - ‘এটি কি জার্নালিস্টিক স্ট্যাটাস?’; সেই স্ট্যাটাসটি মূলত কোন ঘটনার পরম্পরায় দেয়া তা কি তিনি যথেষ্ঠ ঘেঁটে জেনেছেন? নিয়মিত টকশো’তে গিয়ে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে তিনি যে কথার খৈ ফোটান, তা কি এক্টিভিজম নয়?
কারো বেয়াদবী মনে হলে ক্ষমা করবেন। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, এই দেশে প্রকৃত সাংবাদিকরা সোচ্চার হলে সবচেয়ে বিপাকে পরে যান ধান্দাবাজ ‘সাংবাদিক সাহেব’ আর ‘সাংবাদিক নেতা’ গোষ্ঠী। তারা সব সময় চায় দেশের সকল সাংবাদিক তাদের মতো কারো না (লেওড়ার) ছায়াতলে থেকে উপর মহলের পারপাস সার্ভ করুক, নয়ত নিজেই সাংবাদিক সাহেব বা নেতা হয়ে উঠুক। বস্তুত যারা নেহাতই সাংবাদিকতার স্বার্থে সাংবাদিকতা করছেন, সোচ্চার হচ্ছেন বিভিন্ন অন্যায় ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে; ‘সাংবাদিক সাহেব’ আর ‘সাংবাদিক নেতা’ গোষ্ঠীই তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু।

এর আগে প্রাণনাশের শঙ্কায় সাংবাদিক প্রবীর শিকদার স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, “তিনি (সাংবাদিক প্রবীর) যে অভিযোগ আনতেছে এটাকে পাগলের পাগলামি ছাড়া আমি আর কিছুই মনে কারি না। তার সাথে আমার কনফ্লিক্টের কোন ইস্যুই নাই।”

মুক্তিযুদ্ধে পিতাসহ পরিবারের ১৪ সদস্যকে হারানো প্রবীর শিকদার মূলত ফরিদপুরের হিন্দু সম্পত্তি দখল এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে লেখালেখির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। এর জন্য ওই মন্ত্রীসহ আরো দুজনকে দায়ী করে ফেসবুকে লেখার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে গণদাবির মুখে তিন দিনের মাথায় রিমাণ্ড চলাকালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এ নিয়ে গত ক’দিন ধরে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে - মেইনস্ট্রিম ও সোস্যাল মিডিয়া। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার কথাও বলেছে ভিনদেশী বেশ কয়েকটি মিডিয়া। বিব্রত ঘোর আওয়ামী সমর্থকরাও।
এ লেখাটি প্রস্তুতকালে এক লেখক ও নাট্যনির্মাতা অগ্রজ ভেতরবাক্সে বার্তা পাঠিয়ে জানতে চাইলেন - ‘প্রবীর শিকদার নিয়ে এই আলোচনায় মন্ত্রীর দখলদারির বিষয়টা চাপা পরে গেল না’তো? তিনি কি পার পেয়ে যাবেন সংখ্যালঘুদের জমি-ভিটা জোড় করে অল্প টাকায় কিনে নিয়ে তাদের দেশ ছাড়া করার ঘটনায়?’ কোনো জবাব দিতে পারিনি তাকে। কিন্তু তার প্রশ্ন দুটো সাথে সাথেই নাঈমুল ইসলাম খান -এর লেখাটির শেষাংশ পুনরায় স্মরণে এলো।
স্বঘোষিত ওই রাজাকারপুত্র লিখেছেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নানা রকম নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার। এটা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়। এটার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো দল জড়িত নয়। তবে একটা পার্টিকুলার অভিযোগ সত্যও হতে পারে। একজন হয় তো সঠিকভাবে জমিটা কিনেছেন কিন্তু আমি যদি তাকে পছন্দ না করি সে তখন তার বিরুদ্ধে লেগে গেলাম। বলে যে হিন্দুর জমি জোর করে নিয়েছে। খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে, ওই লোকটাও ওই জমিটা কিনতে চেয়েছিলেন। না পেরে মিথ্যে অভিযোগ ছড়িয়ে বিষয়টাকে ভিন্নরূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন।”

সাংবাদিকতার লেবাসে অর্থ-আত্মসাতের বহু-অভিযোগে আক্রান্ত আলোচিত ওই ‘সাংবাদিক সাহেব’ মূলত কি বোঝাতে চেয়েছেন - তা সবাই যে একই মাত্রায় বুঝবেন, এমনটা আমি আশা করি না। তবে ওনার কথার সুরের সাথে অভিযুক্ত মন্ত্রীর কথার সুরে যে মিল আছে তা বোধকরি সকলেই টের পাবেন। ফরিদপুরের ভজনডাঙার অরুণ গুহ মজুমদারের মালিকানাধীন দয়াময়ী ভবন নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে তাদের স্বপরিবারে দেশছাড়া করার ব্যাপারে দেয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন - অন্যের উপকার করতে গিয়েই তিনি বিপদে পরেছেন!
যাকগে, আশার কথা হচ্ছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরে হিন্দু সম্পত্তি দখলের যে অভিযোগ করেছেন তার সত্যতা যাচাইয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কামরুজ্জামান সেলিমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অপর দুই সদস্য হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ও সদর উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার খলিলুর রহমান। এ বিষয়ে গত ১৭ অগাস্ট চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে কমিটি প্রধান সাংবাদিকদের বলেছেন, পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আরো একটি বিষয় উল্লেখ করছি এখানে। ২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারিয়েছিলেন দুই সন্তানের জনক প্রবীর শিকদার। তার অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে মুসার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ওই হামলা চালিয়েছিলো। এই মূসা আবার প্রধানমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর)। উল্লেখিত নুরুলদ্বয়ের দুই পুত্রের কর্মকাণ্ডের কল্যাণে তিনি কিন্তু আজ আর অতটা লাইম লাইটে নেই। মিডিয়ার ফোকাস ঘুরে গেছে। যদিও মুক্ত হয়ে এক সাক্ষাতকারে প্রবীর জানিয়েছেন তাকে নুলা মুসা অর্থাৎ বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের বিষয়েই বেশি প্রশ্ন করেছে পুলিশ।
মুক্তির পর পরিবার ও সমর্থকদের সাথে প্রবীর শিকদার

পূর্ববর্তী পোষ্টঃ
প্রবীর প্রকৃত প্রতিবাদী অগ্রজ

১৭ আগস্ট ২০১৫

প্রবীর প্রকৃত প্রতিবাদী অগ্রজ

২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি রূপে প্রকাশ করা করা 
এ চিত্রের ক্যাপসনে প্রবীর লিখেছিলেন - গত জুনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার
সফরসঙ্গী হিসেবে ৬ দিন চীনে ছিলাম। ছবিটি তারই একটি মুহূর্ত।
প্রবীর শিকদার, এক প্রকৃত যোদ্ধার নাম। যার প্রতিবাদের ভাষা আজও চুরি হয়ে যায়নি। যে মুহুর্তে তাকে নিয়ে এ লেখাটি তৈরী হচ্ছে সে মুহুর্তে তিনি পুলিশের, তথা রাষ্ট্রের হাতে বন্দী। তার অপরাধ - মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই রাষ্ট্র সৃষ্টির বিরোধীতা এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বহুল আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসেরকে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তূলনার প্রতিবাদ। যদিও মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাই এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়।

নিজ অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিনের ইন্দিরা রোডের কার্যালয় থেকে কাল (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা দিকে প্রবীরকে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রথমে তাকে একটি নীল রঙের পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়েছিল। পরে খামারবাড়ি এলাকায় ভ্যান থামিয়ে তাকে ধূসর রঙের একটি প্রাইভেটকারে তোলা হয়। এরপর তাকে গোয়েন্দা পুলিশের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। আটকের কয়েক ঘণ্টা পর তার বিরুদ্ধে ফরিদপুরে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

স্ক্রীনসট
প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ‘আপন বেয়াই’ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুনাম ক্ষুণ্ণের অভিযোগ তুলে রাত ১১টার দিকে বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ওই মামলা দায়ের করা হয়। বাদী স্থানীয় সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) স্বপন পাল।
স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, “জীবনহানির আশঙ্কা প্রকাশ করে তার জন্য মন্ত্রীকে দায়ী করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন প্রবীর শিকদার। এভাবে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে মন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।” এখানে উল্লেখ্য যে, মুসা বিন শমসেরের শেকড়ও কিন্তু এই ফরিদপুরে। আর তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর ফুপাতো ভাই ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর)।
এর আগে গত ১০ অগাস্ট ‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের একটি স্ট্যাটাসে প্রবীর লিখেছিলেন - “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”

ফেসবুকের কল্যাণে প্রবীর সিকদারের যে দুটি বইয়ের
প্রচ্ছদ দেখলাম তার একটির নাম আবার
‘আমার বোন শেখ হাসিনা’
এদিকে গত রাতে স্বামীর মুক্তির আশায় গোয়েন্দা পুলিশ দপ্তরের সামনে বসে থাকা প্রবীরের জায়া আনিকা শিকদার 'ক্রসফায়ার' -এর শঙ্কার কথা জানিয়ে বলছেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘'কোন ধরনের আপোষ করবো না, মেরে ফেলে মারুক, সে ঠিক কথাই লিখেছে। তবে সাথে আমাকে আর আমার দুই সন্তানকেও যেনো মেরে ফেলা হয়।' তার এ কথাগুলো পড়তে পড়তেই মনে হলো - আহা, এই না হলে সহযোদ্ধা। ঘরে এমন পার্বতী না থাকলে কী আর প্রকৃত শিব হওয়া যায়!
২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকার সময় সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারিয়েছিলেন দুই সন্তানের জনক প্রবীর। তার অভিযোগ, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণে মুসার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ওই হামলা চালায়। ওই সময় জনকণ্ঠের ‘সেই রাজাকার’ কলামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুসা বিন শমসেরের বিতর্কিত ভূমিকার বিবরণ তুলে ধরেছিলেন এই সাংবাদিক, যার পরিবারের ১৪ জন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।
সেবার পা হারিয়েও একফোটা দমে যাননি প্রবীর শিকদার। গ্রেফতারের আগ মুহুর্ত অবধি দৃঢ় চিত্তে লড়ে গেছেন রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্র পরিচালকদের অন্ধত্বের বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এর আগে তিনি সমকাল আর কালের কণ্ঠে’র প্রধান দপ্তরেও কাজ করেছেন। লেখার কারণে পাওয়া সাম্প্রতিক হুমকির কথা জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতেও গিয়েছিলেন প্রবীর সিকদার। এই মাসে নিহত ব্লগার নিলয় চক্রবর্তীর মতো তাকেও ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ফেইসবুকে তা নিয়েও তিনি লিখেছিলেন।
সর্বশেষ খবরে (১৭ আগস্ট দুপুরে) জানলাম, ফরিদপুরের কোনো আইনজীবি প্রবীর শিকদারের পক্ষে মামলা লড়তে আদালতে দাঁড়াবেন না। ফরিদপুর বারের এক নিয়মানুযায়ী কোনো আইনজীবি কারো বিরুদ্ধে মামলা করলে সেই আসামীর পক্ষে বারের অন্য কোনো আইনজীবি লড়তে পারবে না।’ 
এই ব্যাপারে দেশের আইনজীবি সমাজের মতামত জানতে চেয়ে ফেসবুকে লিখেছেন ডেইলি অবজার্ভার -এর সিনিয়র রিপোর্টার পুলক ঘটক। বহু পীড়নের শিকার হওয়া আরেক প্রতিবাদী অগ্রজ, সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মিল্টনের কথা দিয়েই লেখাটি শেষ করছি। তিনি লিখেছেন, “প্রবীর শিকদার আওয়ামী লীগ করে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখে এক পা রাজাকারদের দান করে, ক্র্যাচে ভর দিয়ে হেটে নিজ শহর ছেড়ে এখন আওয়ামী পুলিশের হেফাজতে। আমাদের তথাকথিত সুবিধাবাদী দালাল সাংবাদিক নেতারা কি করবেন? শালারা .. ”

প্রসঙ্গত, দেশের আরেক ধনকুবেরের মালিকানাধীন অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত একটি লেখাতেই ‘বিজনেস টাইকুন’ খ্যাত মুসা বিন শমসেরকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিলো। এরই প্রতিবাদ সরূপ প্রবীর মুসাকে নিয়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার লেখাগুলো পুনঃপ্রকাশ করতে থাকেন। পুলিশ আটকের কয়েক ঘণ্টা আগেও - ‘জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের'!’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি লেখা নিজের ফেইসবুক একাউন্ট থেকে শেয়ার করেন প্রবীর, সঙ্গে লেখেন- “যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ছে ! রেহাই নেই কারও !”

প্রবীরের আরেকটি ‘ফেসবুক স্ট্যাটাস’
কতিপয় পুরানো পোস্টঃ
সময় হুমকী আর হত্যালীলার
মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...

সর্বোচ্চ সংকর জাতের সঙ্কট

সাংবিধানিক পিতা আইনে অনাত্মীয় !

রাষ্ট্রীয় শিশ্ন - ধর্ষন, খুন এবঙ ...
দেশত্যাগ কি নভেরার প্রতিবাদ?
বাংলা জাগবেই জাগবে...
আহা কী অর্জন - কারচুপি, বর্জন ...
ইসলামে ‘বেপর্দা’ নারীও নিরাপদ
বর্ষবরণে বস্ত্রহরণ কী পরিকল্পিত !
জার্নালিজম’ বনাম ‘ক্যাপিটালিজম’!

এ কোন উগ্রবাদের মহড়া ...
যদি মনে শঙ্কা বিরাজে, সরকার লাগে কি কাজে ?
বিএম কলেজের একাংশে নারীরা নিষিদ্ধ !
বিশ্বের চেয়ে দেশের শান্তিরক্ষা কঠিন !

১২ আগস্ট ২০১৫

সময় হুমকী আর হত্যালীলার

© eon's photography / pap
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের পাশে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ঠিক পরদিন, ঘটনাস্থলের অদূরবর্তী ফুটপাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে গড়ে ওঠা ভাসমান বইয়ের দোকানের ছবি এটি। পাশাপাশি সাঁড়ির মুকুটরূপী এই বই তিনটি চিত্তাকর্ষক হোক বা না হোক, তাদের এ সহাবস্থানকে অর্থপূর্ণ ভাবাই যেতে পারে। আমার বিশ্বাসী মন অন্তত তেমনটাই ভাবে।  সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ছবিটি পুনরায় স্মরণ করালো। এমনিতেই আগস্ট এই পিতৃহন্তারক জাতির শোকের মাস। তার ওপরে চারিদিকে ধর্মের নামে যে হুমকী-ধামকি আর হত্যালীলা শুরু হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষ যে খুব বেশী স্বস্তিতে নেই তা বুঝতে মহাবিজ্ঞ হওয়ার কোনো দরকার নেই বোধকরি।
বরিশালের খবরটিও অনেকে জানেন নিশ্চয়ই। ‘জীবনানন্দ’ পত্রিকার সম্পাদক কবি হেনরি স্বপন, লিটল ম্যাগাজিন আরণ্যক, ক্যাম্পে ও অারক - এর সম্পাদক কবি তুহিন দাস, অগ্নিযুগ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদি হাসান এবং গনজাগরন মঞ্চ, বরিশালের মুখপাত্র নজরুল বিশ্বাসকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। এর মধ্যে সৈয়দ মেহেদি ছাড়া বাকি তিন ব্যক্তিই আমার সাবেক সহকর্মী। প্রিতম চৌধুরী আর চারু তুহিনের ব্যাপারে অবশ্য কোনো ধারনাই নেই আমার।
ইসলাম ধর্ম কায়েমের নামে "আনসার বিডি" - নামধারী যে গোষ্ঠী ওই ছয় জনকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছে - তাদের কাছে জানতে চাই, পবিত্র কোরআনের কোন আয়াতের বলে আপনারা তাদের ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে কতলের মিশনে নেমেছেন? আমি শুধু সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যেখানে পরম করুণাময় আল্লাহ বলছেন, “নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতিরেকে কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে রক্ষা করল।”

স্রষ্টা আপনাদের শুভ বুদ্ধি দিন, আমিন।

১০ আগস্ট ২০১৫

মুক্ত সাংবাদিকতা ও আত্মরক্ষার্থে ...

আমি ঈয়ন, দাপ্তরিক নাম শরীফ খিয়াম আহমেদ। জন্ম খুলনা হলেও শেকড় ও বেড়ে ওঠা বরিশালে। হিজরত বা কর্মসূত্রে বর্তমান আবাস কোটি মানুষের শহর ঢাকায়। পেশা লেখালেখি, চিত্রগ্রহণ ও মুক্ত সাংবাদিকতা। এর আগে ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি অবধি ‘মেইনস্ট্রিম’ সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলাম। এরই মাঝে ২০০৮ সালে সামহোয়্যার ইন ব্লগ দিয়ে আমি ‘ব্লগিঙ’ শুরু করি। অর্থাৎ স্বাধীন সাংবাদিকতা শুরুর বেশ আগেই ব্যক্তিগত ব্লগগুলোয় আমি বিভিন্ন সংবাদ ও নিজস্ব অভিমত প্রকাশ করে আসছি। পরবর্তীতে স্বাধীন সাংবাদিকতার মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ব্লগকেই বেছে নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৯ জুলাই দিবাগত রাতে আমি অশালীন সংবাদ প্রকাশকারী সাইট নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করি। যার জেরে গত ১০ জুলাই সন্ধ্যায় ‘আধাঘন্টার মধ্যে তোরে খুঁইজা বাইর কইরা মাইরা ফালামু’ – টাইপ অজস্র হুমকী পেতে হয় আমায়।
হুমকীদাতা চটি সংবাদ নির্ভর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। নিজেকে ভারতের কোলকাতা রাজের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ভাগ্নি জামাই পরিচয় দিয়ে তিনি প্রথমত দাবি করেছিলেন, আমি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিতে চেয়েছি। তার অভিযোগ, ব্যক্তিগত ব্লগ প্রেস এন্ড প্লেজারে -‘মাহে রমজানে চটি সাংবাদিকতা’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করে আমি এই চেষ্টা করেছি।
সম্ভবত আমার ফটোগ্রাফীর পেইজ থেকে আমার মোবাইল নম্বর +880 1715 ****** সংগ্রহ করে প্রথমে +8801672 ****** এবং পরে +880 447-800 **** নম্বর দিয়ে তিনি তার অভিযোগ ও হুমকী প্রকাশ করেন। দুপুর থেকে রাত অবধি বেশ কয়েক দফা আলাপের পরও তিনি শান্ত না হওয়ায় একসময়ে আমি লেখাটি মুছে ফেলে তার ক্ষোভ কমানোর চেষ্টা করি।

ওই রাতেই পুরো ঘটনা বর্ণনা করে একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি)’র খসড়া তৈরী করি। কিন্তু সেটি পড়ে নিজেরই মনে হয় লেখার ধরণ বা হুমকীদাতার অতিরঞ্জনে বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে যে, এটির কপি যদি সরকার বিরোধী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে যায় তবে পুরো ঘটনাটি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। এমনকী আমি নিজেও স্রেফ গুটিতে পরিণত হতে পারি। এমন চিন্তা থেকে বিষয়টি কয়েকজন সিনিয়র লেখক, ব্লগার ও সাংবাদিক বন্ধুকে জানিয়ে নীরব হয়ে যাওয়াই স্রেয় মনে করি। তবে এর আগে উল্লেখিত লেখাটি মুছে ফেলার জন্য আমার ব্লগের পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে সেখানে আরেকটি লেখা পোষ্ট করি। ‘পাঠক, ক্ষমা করবেন ... ’ - শিরোনামে ১৯ জুলাই প্রকাশিত ওই লেখায় নেপথ্যের কোনো ঘটনা উল্লেখ করা হয়নি। চেপে যাওয়া হয়েছে ওই অনলাইনের নামটিও। তবুও আবার হুমকী পেলাম। এবার কারণ - ব্লগ পাঠকদের কাছে ওই ‘ক্ষমা চাওয়া’।
গুম হওয়া লেখাটির শেয়ার করা সংযোগ
গত ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় সেই পুরানো হুমকীদাতা আমার মোবাইলে আবার ফোন করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি আবার ওই জায়গায় (ব্লগে) দুঃখ প্রকাশ করছেন। আমার ভাবতে ইচ্ছে করছে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আপনি, যে একটা দুঃখ প্রকাশ করলেন। বা আপনার ব্লগটা দেশের নাম্বার ওয়ান ব্লগ, আপনি সব ব্লগের সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু এইটা আসলে আপনি এখন নিজে একটু চিন্তা কইরা দ্যাখেন। আপনি আপনার ওয়েটটা চিন্তা করেন, আপনার ব্লগের মার্কেটিঙটা চিন্তা করেন, আপনার পপুলারিটি চিন্তা করেন। এই সবকিছু নিয়া আপনার যে পোস্টটা, সেটায় কয়টা লাইক, কয়টা কমেন্ট পরছে – সেটাও চিন্তা করেন। এইখানে দুঃখপ্রকাশ কইরা কি হইছে? আপনি কার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন?’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি একটু কষ্ট পাইলাম যে আপনি আবার ওইটা দিছেন। আপনার অনেক বড় ব্লগতো আসলে! আমরাও (*** বার্তা ডটকম) এমন দুঃখ প্রকাশ করি না। আমাগোও মাঝে মধ্যে একটু-আধটু ভুল হয়।’
এর আগে হুমকীদাতা জানান, কোনো একটি গোয়েন্দা সংস্থা তার নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। নির্দেশ পাওয়া মাত্র তারা আমাকে ‘সাইজ’ করে ফেলবে। এছাড়া তিনি আমাকে জামায়াত-শিবিরপন্থী আন্দাজ করে এটাও জানান যে, জামায়াত ও শিবিরের উচ্চমহলের সাথে তার খুবই ভালো যোগাযোগ আছে। তিনি চাইলে তারাই আমাকে একদম ‘ডলা’ দিয়ে দেবে।
১৯৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের দিকে ইঙ্গিত করে তার বক্তব্য- ‘যে কয়জনের ফাঁসি হইছে না, তার মধ্যে একজনের ছেলে আছে আমার বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। ভিতরে আছে এ রকম তিনজনের ছেলেও আমার বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড মানে কি জানেন? ওরা আমার বাড়িতে থাকে, আমার বাড়িতে খায়। আমি ওদের বাড়িতে থাকি, ওর বাড়িতে খাই। এরকম, বুজুম (bosom) ফ্রেন্ড। এমনকী আমি অনেক জায়গায় তাদের মিডিয়াপার্সন হিসাবেও কাজ করি। তাই ওদের নিয়া অনেস্টলি আমি ভয় পাইতেছি না।’ শিবিরের মাসুদ নামের কোনো এক ব্যক্তির সাথেও আমার ব্যাপারে আলাপ হয়েছে বলে তিনি জানান।

পরবর্তীতে এক চিত্রপরিচালকের স্ত্রীকে আমার ‘গডমাদার’ সন্দেহ করার কথাও জানান হুমকীদাতা। ওই পরিচালকের বউ তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে এসেছিলেন, কিন্তু তাকে চাকরি দেয়া হয়নি। এরই জেরে তার নির্দেশেও আমি - হুমকীদাতা এবঙ তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারি। তিনি আরো বলেন, ‘কালের কণ্ঠ পত্রিকার যে কোনো একজন আমাকে বলেছে, আমাকে নিয়ে করতে (লিখতে) তো সাহস পায় না। কারণ আমারে নিয়া করলে (লিখলে) তো জানে বসুন্ধরা গ্রুপের। আইনা যেখানে মাটি ভরাট করতেছে ওইখানে ফালাইয়া ভরাট কইরা দিবো।’
ব্লগিঙের কারণে এর আগেও আমি বহুবার হুমকী পেয়েছি। কখনো ভারতপন্থী দালাল, আবার কখনো পাকিস্তানপন্থী ছাগু আখ্যা দিয়ে আমাকে ভার্চুয়ালি আক্রমণ করা হয়েছে। বাস্তবিক হুমকী পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। অন্যকোনো ব্লগারকেও এভাবে দফায় দফায় ফোন করে হুমকী দেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যে কারণে পূর্বপর্তী (১০ জুলাই সন্ধ্যায় দেয়া) হুমকীর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোও আপনাদের, তথা আমার ব্লগের পাঠকদের জানিয়ে রাখা উচিত বলেই মনে করছি।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ অনলাইনটির সাথে বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী জড়িত জানিয়ে হুমকীদাতা বলেছিলেন- “খোদার কসম তোরে আমি জবই কইরা ফালামু কুত্তার বাচ্চা। এক্কারে জবাই কইরা ফালামু চোদানীর পোলা। তোর বউ, মা, বোন যা আছে তাগো সব ল্যাংটা কইরা ছবি তুইলা দিয়া দিমু খানকির পোলা। তুই চিনস আমারে? তরে এম্নেও ধরুম, অম্নেও ধরুম। তোর নয় বছরের জার্নালিজম গোয়া দিয়া ভইরা দিমু।” তার আগে কথা প্রসঙ্গে তাকে জানিয়েছিলাম আমি প্রায় নয় বছর মেইস্ট্রিম জার্নালিজম, মানে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা করেছি।

হুমকীদাতা আরো বলেছিলেন, “ভাই আমি আপনারে পরিস্কার কইরা কইলাম, খোদার কসম ঢাকা শহরে আপনি যে কোনায় থাকেন কুটি কুটি কুটি কইরা হালামু আমি আপনারে, পিটাইয়া। লোক দিয়া পিটামু না, প্রশাসন দিয়া পিটামু। আপনারে খুঁইজা কালকে সন্ধ্যার মধ্যে আপনারে আমি আমার হাতে লইয়া আমু। কাল ইফতারের আগে আপনি আমার হাতে থাকবেন এইটা আপনারে গ্যারান্টি দিয়া কইলাম।” এর আগে ব্লগের পোস্টটির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনি এটা লিখে প্রশাসনের নজরে চলে আসছেন। কারণ আমি একটা ‘ভাইটাল ইস্যু’ এ দেশে। গাঙ দিয়া ভাইসা আসি নাই। থানা, পুলিশ, মন্ত্রী, মিনিস্টার - সবই লবিঙ করা আছে আমার। আপনার ভিতর কি ভয় ডর নাই? চোখ বন্ধ কইরা একটু চিন্তা করেন তো আপনি একটা কি? কোন হ্যাডমডা?

minar & mandir | Barisal'06
হুমকীদাতা বলেছিলেন, “তোগো মতো বাল ছাড়া পোলাপান আমার কিছু করতে পারবো না খানকির পোলা। তোর চেহারা দেখলেই বোঝা যায় কি কইরা খাইতে পারবি। ফকিন্নির পোলা, বাপে বেঁচত আলু। আইছস ঢাকা শহরে, ধোন খুইলা খিঁচছস, ভাবছস ঢাকার প্রেসিডেন্ট। ফাজিল পোলাপান শালা। পুলিশের মাইর খাইলে কি বাঁচবি? তোর কি জীবন বাঁচব? তোর যা শরীর। চেহারা দেখলেই বোঝা যায় তুই ‘বাবাখোর। কাইলকা ইফতারের আগে আমি তোর সামনে আইতেছি। দেখুম তোর কত হ্যাডম হইছো। তুই কত লিখতে পারস, তোর ধোনে কত কালি হৈছে, আমি দেখুম।” এর আগে তিনি বলেন, “ভাই পাগলেও তো নিজের ভালো বোঝে। এত্ত মরার ইচ্চা থাকে গাড়ির তলে পইরা মইরা যান, ছাদ দিয়া পইড়া মইরা যান, পুলিশের মাইর খাইয়া মরনের দরকারডা কি?”
ক্ষিপ্ত হুমকীদাতা আরো বলেছিলেন, “এ্যাডাল্ট নিউজ তো আরো অনেকে দিতেছে। তাইলে বাইঞ্চোতের বাচ্চা তুই অন্যগুলোর কথা লেখছ নাই ক্যান? খানকির পোলা, *** বার্তা কি তোর মায়েরে চুদছে, না তোর বইনেরে রেপ করছে? তোর সোনা আমি আবার কাটুম। একবার কাটছে তর মন ভরে নাই। তুই আমারে চেনো শুয়োরের বাচ্চা? আরে খানকির পোলা তুই জানস বল্লার চাকায় ঢিল মারলে কি হয়? তুই নিজের পুটকি নিজেই মারছস। খালি *** বার্তা লইয়া নিউজ করছস। তার মানে এটা মার্কেট বুঝতে পারতেছে *** বার্তার লগে নিশ্চয়ই তোর কোনো কাহীনি আছে।” এরপর কি জানি একটা বলতে শুরু করতেই আমায় থামিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আরে ব্যাডা তুই তো জামাতের লোক, খানকির পোলা। তুই আবার কথা কস ব্যাটা, দাদা চোদাস আমারে। তরে সামনে যহন পামু তহন টের পাবি আমি কি জিনিস। তুই ডাইরেক্ট জামাতের লোক ফাজিল। আমি তোরে আধাঘন্টা সময় দিলাম, আধাঘন্টার মধ্যে তোর দোকান যদি আমি খুঁইজা পাই, তোরে আমি মাইরা ফালামু। তোর কোন বাপ আছে তারে লইয়া আইস।
এছাড়া নিজেকে পাশ্ববর্তী দেশের উল্লেখিত নেত্রীর (ভারতের কোলকাতা রাজের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর) নিকট স্বজন দাবি করে ওই হুমকীদাতা আরো যা বলেছেন, তা প্রকাশ্যে শেয়ার করতে আমার সাহসই হচ্ছে না। কারণ মূলত দুটি।
০১. অনাকাঙ্খিত সাম্প্রদায়িক সংঘাত তৈরী হতে পারে।
০২. আমার দেশের সার্বভৌমত্ত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
তবে জেনে রাখুন। দৃঢ় চিত্তে বুক ফুলিয়ে পর্ণোগ্রাফী আইন ভাঙা ওই মানুষটি, অর্থাৎ আমার হুমকীদাতা একজন দেশদ্রোহীও। কেউ চাইলে এর প্রমাণও আমি দিতে পারবো। লাল ফোনে কল আনানোর ক্ষমতাও আছে জানিয়ে তার দম্ভোক্তি কী ছিলো তা আজ না হয় নাই-বা বলি। তবে এখানে আরো কিছু বিষয় জানিয়ে রাখা উচিত।
প্রথম দফায় হুমকী দেয়ার সময়ই হুমকীদাতা বলেছিলেন, ইতিমধ্যেই তিনি আমার বিরুদ্ধে ঢাকার কোনো একটি থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরী) করেছেন। যদিও তিনি নিজে মামলা করার মতো কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। তবু কেন জানি ক্ষুদ্ধ হতে পারছি না। এত গালিগালাজ খেয়েও লোকটার কণ্ঠ শুনে বার বার বেশ করুণাই জেগেছে। কী ধরণের পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশে বেড়ে উঠলে একটা মানুষের অমন অসুস্থ চটিপন্থী মনন আর ভাষাভঙ্গী গড়ে ওঠে তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়। অবশ্য অবস্থাদৃস্টে এটাও মনে হয়েছিলো যে এই মুহুর্তে আমি ওর বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলেই আমায় হিন্দুবিদ্বেষী ও সরকারবিরোধী তমকা লাগিয়ে জামায়াতপন্থী, জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হতে পারে। আজীবন প্রগতিশীল আর সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলে এখন যদি তাদের বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত হতে হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিই-বা হতে পারে?

সবকিছু মিলিয়ে নিজের ওপরও রাগ লাগছে। এরচেয়ে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ছিলো। বস্তুত তেমন কাজের মধ্যেই ছিলাম। হুট করে ফেসবুক নোটিফিকেশন চেক করত গিয়ে ওই চটিসাইটের নিউজগুলো দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়েছিলো । আসলে গত পহেলা বৈশাখের সেই টিএসসি’র ঘটনার পর থেকে যৌন পীড়নের উৎসাহদানকারী যে কোনো কর্মকাণ্ডই আমার মাথা গরম করেছে। যে কারণে ওই দিনও আমি সামলাতে পারিনি নিজেকে। তার ওপর ওই সময়ে আবার পাকিদের ৭১’র ধর্ষনচিত্র নিয়ে পুরানো লেখা পড়ছিলাম।​ যাকগে, আপনারা বুঝতেই পারছেন - হুমকীদাতার সাথে কথোপকথনের কিয়দাংশের অডিও রেকর্ড আমার হাতে রয়েছে। তবুও আমি এখন কোনো মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে আমার চলমান কাজগুলোর মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে চাচ্ছি না। 
যে দেশে ছয় মাসের মধ্যে চারজন ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, সে দেশে কোনো ব্লগারকে কারো এভাবে মারধর বা হত্যার হুকমী দেয়ার ঘটনা হয়ত ‍খুবই নৈমিত্তিক এবঙ স্বাভাবিক। তবু গত ৮ আগস্ট কাফরুল থানায় একটি জিডি করলাম। আর আজ (১০ আগস্ট) ব্লগের মাধ্যমেই ঘটনাটি সবাইকে জানিয়েও রাখলাম। আরো একটি বিষয় জানিয়ে রাখি। যদি বেঁচে থাকি তবে আত্মজৈবনিক এ ঘটনার অবলম্বনে একটি ডকুফিল্ম তৈরী হবে, নাম - ‘আত্মরক্ষার্থে’।
এই লেখায় আরেকটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। উল্লেখিত ঘটনা চলাকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক সিনিয়র, জুনিয়র সাংবাদিক বন্ধুর কথা শুনে মনে হয়েছে আমি আদতে এখন আর তাদের বন্ধু নাই, স্রেফ পূর্বপরিচিততে পরিণত হয়েছি। বিচ্ছিন্নতায় বা যোগাযোগচর্চার অভাবে আমি তাদের হারিয়ে ফেলেছি, কিঙবা হারিয়ে গেছে আমার অজস্র পুরানো সম্পর্ক।  আরো খেয়াল করলাম, অনেকেই মুক্ত সাংবাদিকতাকে স্রেফ ‘সৌখিনতা’ ভাবতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। শুভাকাঙ্খীদের অনেকে আমাকে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হওয়ারও পরামর্শও দিয়েছেন।  কেন আমি কখনো ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) -এর সদস্য হইনি, তা নিয়েও আক্ষেপ করেছেন। তাদের এসব কথা শুনদে শুনতে আমার বার বার মনে পরেছে, হুমকীদাতাও আমাকে বহুবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে সামান্য ব্যক্তি হয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখা আমার মোটেই উচিত হয়নি।

হে অপ্রিয় হুমকীদাতা, পুরো লেখাটি আপনিও যে পড়বেন তা আমি নিশ্চিত। এবঙ নিশ্চয়ই খেয়াল করবেন এর কোথাও আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ করা হয়নি। ভুলেও ভাববেন না হুমকীতে ভয় পেয়ে এভাবে লেখা হয়েছে।  মূলত আপনার বালক সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমি এখনো চাচ্ছি না আমার কারণে আপনার কোনো ক্ষতি হোক। তবে সকলকে আপনার মতো ব্যক্তিদের সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেয়ার তাগিদ অনুভব করেছি।  কারণ আপনারা শুধু মিডিয়াকে না সমগ্র সমাজকেই কলুষিত করছেন। 
এই লেখা পড়ার পরও যদি আপনার বোধদয় না ঘটে, আপন ক্ষমতা প্রদর্শনের স্বাদ জাগে - তবে আমার মোবাইলটা খোলাই আছে।  আবার ফোন করুন। গালাগালি করে আমার চৌদ্দগুষ্ঠীকে উদ্ধার করুন। নয়ত এবার খুনটা করিয়েই ফেলুন।  শুধু একটাই অনুরোধ, খুনটা করার বা করানোর আগে নীচের পদ্যটি একবার পড়ে নেবেন। আশাকরি তাতে আমারে হত্যার ইচ্ছা আরো তীব্র হবে। আমেন।
- স্মরণে কৈবর্ত বিদ্রোহ

নিশ্চিত অনার্য আমি আদি কৈবর্তের ছেলে
সহস্র জনমে ছিলেম - মিঠে জলের জেলে
বার বার ফিরেছি বঙগে, ফিরিয়েছে মোহ
- মননে অনিবার্য আজও বরেন্দ্রী বিদ্রোহ।

অহিঙস ধর্মের নামে ক্ষিপ্ত সহিঙসতা-
রুখেছিলো যে কৌশলে এই নদীমাতৃকতা
যুগ-যুগান্তর ধরে যাচ্ছিলাম লিখে তারে
সেই অপরাধেই খুন হয়েছি বারে বারে।

গায়ের রঙটা কালো, গাই স্রোতস্বিনী সুরে
মোর রক্তে কত প্রাণ জানে পাল অন্তুপুরে।

মনে পরে সেবার - ছিলেম গঙ্গার উত্তরে
স্বর্ণকলসে বশীভূত লোভাতুর স্বীয়জাত
কী জলদি মিলিয়ে রামপালের হাতে হাত
প্রকাশ্যেই মদদ দিয়েছে আমার হত্যারে।

আরো কতবার মরেছি স্বজাতি সূত্রে ইস!
কখনো পলাশী, কখনো বা ধানমণ্ডি বত্রিশ
তবু ফিরেছি ফের কূটরুধির করতে হিম
আমি দিব্য, আমিই সেই রুদোকপুত্র ভীম।

[কবিতাটি গাধার গয়না পরম্পরা থেকে নেয়া]

পুরানো লেখাঃ
>> ‘জার্নালিজম’ বনাম ‘ক্যাপিটালিজম’!
>> ‘সাংবাদিক মারলে কিচ্ছু হয় না’
>> খোলা চিঠি বা প্রতিক্রিয়া এবং স্ব-শিক্ষিত সাংবাদিকতা...
newsreel [সংবাদচিত্র]