আবুল কাশেমের বয়স ৭০, আর আবুল হোসেনের ৬৪। পেশীবহুল পেটানো শরীরে তাদের পরিশ্রমের সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা সুষ্পষ্ট। পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রাখতে সেই আট বা নয় বছর বয়স থেকে তারা হাতুড়, বাটালি আর বাবলা কাঠের সাথে জড়িয়ে নিয়েছেন নিজেদের জীবন। প্রথম জন ৬২, আর পরের জন প্রায় ৫৫ বছর ধরে কাঠের চাকা তৈরীর কাজ করছেন। নিজ নিজ পিতার কাছ থেকেই কাজ শিখেছেন পাশাপাশি গ্রাম কালী চকভবানীপুর ও পাড়কৃষ্ণ গোবিন্দপুরের এই দুই চাকা শিল্পী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার সীমন্তবর্তী ওই এলাকাটি শত শত বছর ধরে চাকা শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। প্রায় নয় মাস আগে গিয়েছিলাম ওখানে, মূলত অন্য এক কাজে। কিন্তু চাকা শিল্পীদের সাক্ষাত পেয়ে আলাপের লোভ সামলাতে পারিনি। তাদের ছবি তোলার অনুমতিও মিলেছিলো সহজে। আহা, কী অদ্ভুত সহজ মানুষ তারা!
‘কাঠমিস্ত্রী আর চাকা শিল্পী এক নয়। কাঠের কাজ জানলেই চাকা বানানো যায় না’ – কাজ করতে করতেই বলছিলেন আবুল কাশেম। তার এ বক্তব্যে জড়িয়ে আছে শিল্পের গৌরব। যদিও তিনি জানেন, সেই দিন আর বেশি দূরে না যেদিন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ি শুধু জাদুঘরেই দেখা যাবে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে সুপ্রাচীন এসব দেশী বাহন। তাই’তো তিনিও বলেছেন, ‘আর কিছু দিন পর হারিয়ে যাবেন চাকার কারিগররাও।’ কাশেমের নয় সন্তানের মধ্যে চার জন ছেলে। তাদের কেউই চাকা শিল্পী হতে চায়নি কখনো। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, ‘হয়ত বেশী খাঁটুনিতে কম পয়সা দেখে ওরা এ কাজ করতে চায় না।’ জানা গেছে, তার ছেলেরা রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।
এদিকে, আবুল হোসেনেরও চার ছেলে। তারাও কেউ চাকা শিল্পের প্রতি আগ্রহী নন। একজন অবশ্য বাবার সাথে থেকে কাজ শিখেছিলেন। সে আবার বিদেশে চলে গেছে। হোসেনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, একটি চাকা বানাতে কমপক্ষে তিন দিন থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। এর আগে বাবলা গাছের কাঠ চেরাই করে এক মাস রোদে শুকিয়ে কাজের উপযোগী করতে হয়। আর একটি চাকা তৈরীতে বর্তমান (২০১৪ সালের আগস্টের) বাজার দর অনুযায়ী ১৬’শ টাকার বাবলা কাঠ লাগে। প্রতিটি চাকা বিক্রি হয় ২৮’শ থেকে তিন হাজার টাকায়। এক একটি চাকা প্রায় ১০ বছর গাড়িতে চলার জন্য উপযুক্ত থাকে।
আবুল কাশেম, আবুল হোসেনসহ দু’জনার গ্রামের আরো একাধিক চাকা শিল্পী জানান, তাদের এলাকায় এখনো কমপক্ষে দেড়শ চাকা শিল্পী আছেন। বারো মাস ধরেই চাকা তৈরির কাজ চলে। তবে এই শিল্পীদের সকলের বয়সই পঞ্চাশোর্ধ্ব। অতএব আগামী পঞ্চাশ বছর পর সম্ভবত এদের একজনও থাকবেন না। বিলুপ্ত হবে ওই এলাকার চাকা শিল্পও। দেশের অন্যান্য এলাকার চিত্রও বোধকরি খুব বেশী আলাদা হবে না। কারণ, চাকা শিল্পীদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কাঠের চাকার উপযোগিতা কমার বিষয়টি অনেক আগেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছে।
চাকা শিল্পী আবুল হোসেন (৬৪)
ফিরে দেখা মানবসভ্যতার ইতিহাসে চাকার আবিষ্কারকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসাবে ধরা হয়। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ৫০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে চাকা আবিষ্কৃত হয়। শুরুতে কুমোরদের কাজে এটির ব্যবহার ছিলো। ককেশাসের উত্তর দিকে বেশ কিছু কবর পাওয়া গেছে যাতে ৩৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ হতে ঠেলাগাড়িতে করে মৃতদেহ কবর দেয়া হয়েছে। ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে তৈরি করা একটি মাটির পাত্র দক্ষিণ পোল্যান্ডে পাওয়া গেছে, যাতে চার চাকার একটি গাড়ির ছবি আছে। এটিই এ পর্যন্ত প্রাপ্ত চাকাযুক্ত গাড়ির ছবির সবচেয়ে পুরানো নিদর্শন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ সহস্রাব্দ নাগাদ চাকার ব্যবহার ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু সভ্যতায় চাকার ব্যবহার শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দের দিকে। চীনে চাকার ব্যবহার দেখা যায় ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, যখন চাকাযুক্ত গাড়ির প্রচলন হয়। তবে বারবিয়েরি-লো (২০০০) এর মতে আরো পূর্বে খ্রিষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের দিকে চীনে চাকার প্রচলন ছিলো। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন সভ্যতায় চাকার ব্যবহার দেখা যায়না। তবে অলমেক ও অন্যান্য কিছু আমেরিকার সভ্যতার নিদর্শনের মধ্যে শিশুদের খেলনা হিসাবে চাকাযুক্ত গাড়ি পাওয়া গেছে। প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের এসব খেলনাতে চাকার ব্যবহার থাকলেও আমেরিকার সভ্যতাগুলোতে যানবাহনের যন্ত্রাংশ হিসাবে চাকার প্রচলন ছিলো না। প্রাচীন নুবিয়াতে চাকা ব্যবহার করা হতো মাটির হাড়ি ও পাত্র তৈরীতে, এবং পানি উত্তোলনে। নুবিয়ার পানি উত্তোলনে ব্যবহৃত চাকাগুলো ঘুরানো হতো গবাদিপশু দিয়ে। নুবিয়ার অধিবাসীরা মিশর থেকে আনা অশ্বচালিত রথ ব্যবহার করতো।
চাকা ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত সমতল বা মসৃন রাস্তা না থাকায় চাকার প্রচলন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। যেসব এলাকায় রাস্তা ছিলোনা এবং অসমতল ভূমির উপর দিয়ে চলতে হয়েছে, সেসব এলাকায় চাকা-যুক্ত যানবাহনের বদলে মানুষের কিংবা পশুর পিঠে করে মাল বহন করা হতো। এমনকি বিংশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্বের অনুন্নত এলাকাগুলোতে ভালো রাস্তাঘাটের অভাবে চাকাযুক্ত যানবাহনের ব্যবহার কম ছিলো।
শুরুতে চাকা নির্মাণ করা হতো কাঠের চাকতি দিয়ে, যার কেন্দ্রে অক্ষদণ্ডের জন্য একটি গর্ত করা হতো। স্পোকযুক্ত চাকা অনেক পরে উদ্ভাবিত হয়। এই রকমের চাকার ব্যবহার গাড়ির ওজন কমিয়ে আনে, যার ফলে দ্রুতগতির বাহন তৈরি করা সম্ভব হয়। প্রায় ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের সমকালীন আন্দ্রোনভ সংস্কৃতিতে স্পোকযুক্ত চাকার ব্যবহার পাওয়া যায়। এর অল্প পড়েই ককসশাস এলাকার অধিবাসীরা অশ্বচালিত বাহনে স্পোকযুক্ত চাকা ব্যবহার করে। মূলত যুদ্ধে ব্যবহৃত রথে এধরণের চাকা তারা ব্যবহার করতো। এখান থেকে স্পোকযুক্ত চাকার ব্যবহার গ্রিক উপদ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে। চাকাযুক্ত বাহনের ব্যবহার গ্রিক সভ্যতার বিকাশে সহায়তা করে। খ্রিষ্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দ নাগাদ কেল্টিকদের রথগুলোতে এমন চাকা ব্যবহার করা যেতো, যার পরিধি বরাবর লোহার বেষ্টনি দেয়া থাকতো। ফলে এ ধরণের চাকাগুলো অনেক মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হতো। স্পোকযুক্ত চাকা এভাবেই প্রায় অপরিবপর্তিত অবস্থাতে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ব্যবহৃত হয়ে আসে। ১৮৭০ খ্রিঃ এর দিকে চাকায় নিউম্যাটিক টায়ার ব্যবহার করা শুরু হয়।
আনুমানিক ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের প্রাচীন যুদ্ধপতাকায় চাকাবিশিষ্ট গাড়ির ছবি - উইকিপিডিয়া
সামগ্রিক ভাবে চাকার আবিষ্কার কেবল পরিবহন ব্যবস্থাই নয়, বরং প্রযুক্তির নানা দিকে নতুন নতুন যন্ত্র উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। চাকা ব্যবহার করে জল চক্র (পানি তোলার এবং পানি হতে শক্তি আহরণের চাকা), গিয়ার চাকা, চরকা, ইত্যাদি তৈরি করা হয়। সাম্প্রতিক কালের প্রপেলার, জেট ইঞ্জিন, জাইরোস্কোপ, এবং টারবাইন—এর সবই চাকারই পরিবর্তিত রূপ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে আমার কিংবা তোমারও আত্মীয়। দেশের সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ১৯৭৫ (১৯৭৫ সনের ২নং আইন) এর ধারা ৩৪ এর দফা (খ) দ্বারা তিনি জাতির পিতা হিসাবে স্বীকৃত। অর্থাৎ আমরা, এ দেশের সকল নাগরিক ওই মহান নেতার আদর্শিক বা সাংবিধানিক সন্তান। অথচ তারই ঔরসজাত সন্তানের নেতৃত্বে থাকা সরকার নতুন আইন করে এ সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আইনটি অসাংবিধানিক কি’না সে প্রশ্নও হয়ত তোলা যেতে পারে। যে আইন আরো ছয় বছর আগে কোটি কোটি সন্তানের সাথে এক পিতার অনাত্মীয়তা তৈরী করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে তাদের তৈরী করা জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইনে স্পস্ট করে বলেছে, শেখ মুজিবের "পরিবার-সদস্য" অর্থ ‘জাতির পিতার জীবিত দুই কন্যা এবং তাঁহাদের সন্তানাদি’। অর্থাৎ সাংবিধানিকভাবে পুরো দেশ তার পরিবার হলেও আইনত দেশের সকল জনগণ এখন তার অনাত্মীয়। এ নিয়ে অনেক আগেই লেখার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের ১৯টি বিশেষ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা সম্বলিত প্রজ্ঞাপন জারির ঘটনায় এই প্রসঙ্গ ফের স্মরণে এলো। রাষ্ট্রপতির আদেশে গত সোমবার (২৫ মে,২০১৫) জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান এ প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
এ ব্যাপারে প্রকাশিত সংবাদে জানানো হয়েছে, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৬৩ নং আইন) এর ধারা ৪ এর উপ-ধারা (৩) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের জন্য এসব সুবিধাদি প্রদানের ঘোষণা দিল। জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, জাতির পিতার জীবিত দুই কন্যা এবং তাঁদের সন্তানেরা এই সুবিধা পাবেন।
প্রজ্ঞাপনের প্রথম অংশে জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তায় যেসব ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্য অন্যতম হলো, তাঁদের আবাসস্থলে সুরক্ষিত ও নিরাপদ বেষ্টনীর ব্যবস্থা করা, আবাসস্থলের কাছে কোনো ভবন বা স্থাপনা হুমকি সৃষ্টির মতো অবস্থায় থাকলে সেগুলো পরিবর্তন কিংবা অপসারণ করা, আবাসস্থলের পাশে উঁচু ভবনে বসবাসকারীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা। এ ছাড়া তাঁদের আবাসস্থলের কাছে নিরাপত্তাকর্মীদের কৌশলগত অবস্থান নেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য আরও কিছু ব্যবস্থার নেওয়ার কথা বলা হয়। দ্বিতীয় অংশে জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়। সেগুলোর মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো, তাঁদের জন্য বরাদ্দ কিংবা মালিকানাধীন বাড়ির প্রয়োজনীয় মেরামত, সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিবার-সদস্যদের জন্য একজন করে ড্রাইভার ও পেট্রলসহ গাড়ি প্রদান। এ ছাড়া সরকারি খরচে টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান, দেশে এবং প্রয়োজনবোধে বিদেশে সরকারি খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি সরকারি খরচে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, দুজন বেয়ারা, একজন করে বাবুর্চি, মালি ও ঠিকাদার প্রদানের ব্যবস্থা করা।
প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ফেসবুক, গুগল প্লাসের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো প্রচুর শেয়ার হওয়ায় খবরটি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অনেকের। যাদের মধ্যে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন - বাংলার ১৬ কোটি মানুষের করের টাকায় আপন পরিবারের সদস্যদের বিশেষ সুবিধা নিতে দেখলে খোদ বঙ্গবন্ধুই কি বিব্রত হতেন না?
“চেনা যায়, শিশ্নোত্থিত রাষ্ট্র আর তার ব্যবস্থাপনাকে? চেনা যায়?”-সময়ের এ প্রশ্নটির উত্থাপক বন্ধু বাঁধন অধিকারী।
লেখাটি শুরু করেছিলাম এক দিন আগে (১০ মে, ২০১৫)। মূল ফোকাস ছিলো – যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের চালানো নিষ্পেষনে। মূলত ব্যক্তিগত নানা কারণেই এটি শেষ হয়নি। এরই মধ্যে সামনে নতুন ইস্যু। কিঙবা নতুন নয়, এটাকে পুরানোও বলা যায়। আজ (১২ মে, ২০১৫) আরেক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় খুন হয়েছেন। অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর বাবুর মতো তাকেও প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে হত্য করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত তিন মাসের মধ্যে তৃতীয় নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখলো বাংলাদেশ। যৌন পীড়নের ঘটনার পুনুরাবৃত্তির দু’দিন পরই ব্লগার হত্যার পুনুরাবৃত্তি একই সুঁতোয় গাঁথতে চায় না মন। কিন্তু পরিস্থিতির প্রয়োজনে কখনো কখনো এমন প্রশ্ন’তো মনে জাগতেই পারে – এই রাষ্ট্রই কি নিপীড়ক বা এই রাষ্ট্রই কি খুনি? নাহ, পুরানো প্রসঙ্গে ফিরি। নতুন ইস্যুতে পুরানো ইস্যুরে চাপা দেয়ার ফাঁদে পা না দেই। কারণ এম্নিতেই ব্লগার হত্যা নিয়ে আলাদা করে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
“আপনাকে সমর্থন করি মানে সবকিছুতেই সমর্থন করতে হবে তা কিন্তু নয় প্রিয় প্রধানমন্ত্রী.. পহেলা বৈশাখে নারীর সম্ভ্রমহানীর ঘটনা ঘটেছে.. আপনি তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা না নিলে প্রতিবাদ হবেই.. ওরা বাসে পেট্রলবোমা মারেনি.. ওরা পুলিশের মাথা গুড়িয়ে দেয়নি.. ওরা নারীর সম্মানহানীর প্রতিবাদে নেমেছে.. আপনি বিশ্বের সবচেয়ে নারীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী.. এই প্রতিবাদে আপনিও সামিল জানি.. আপনার পুলিশ যে আঘাত করেছে সে আঘাত আপনার গায়েও লাগার কথা.. আপনি অনুভব করতে পারছেন না কেনো?” –এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্যকার মাসুম রেজার সাম্প্রতিক (১০ মে, ২০১৫) ফেসবুক স্ট্যাটাস। নিউজ ফিডে গত ৪৮ ঘন্টা যাবত এ জাতীয় স্ট্যাটাসের আধিক্য যে হারে বেড়েছে, তাতে আমি শঙ্কিত। কারণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ‘ডিজিটাল’ সরকারের আমলেই সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো নিষিদ্ধ বা বন্ধ করে দেয়ার নজির রয়েছে। অবশ্য আজকের ব্লগার হত্যাকাণ্ডের পর নিউজ ফিডের চেহারা দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে।
ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী ইসমত জাহানের সেই পাল্টা আঘাত
লেখাটি শুরু করতে গিয়ে আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নারী মরহুমা দাদী মরহুমা সৈয়দুন্নেছা বেগমকে মনে পড়লো খুব। দাদীর জন্ম হয়েছিলো রাজনৈতিক পরিবারে। তিনি ছিলেন ঝালকাঠীর বারৈয়ারা গ্রামের মীর মমতাজ উদ্দিনের জেষ্ঠ্য কন্যা। এই মমতাজ উদ্দিন একাধারে একজন জনপ্রিয় শিক্ষক এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন । তিনি এক নাগাড়ে ২৬ বছর নথুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন আবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ‘প্রেসিডেন্ট’ বলা হত। পরে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে পদটির নাম ‘চেয়ারম্যান’ হয়ে যায়। সে যাকগে, মূল প্রসঙ্গে আসি। স্মৃতি হাঁতড়ে দেখি – দাদীর কাছেই প্রথম শুনেছিলাম ‘শ্যাখের বেটি’ -এর গল্প। তার কাছেই জেনেছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্ব-পরিবারে নিহত হওয়ার সেই নারকীয় কাণ্ড। খেয়াল আছে, জায়নামাজে বসেই দাদী আমার কৌতূহলী মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। আর একটু পরপরই ঘোমটার প্রান্ত চেনে মুছে নিচ্ছিলেন সজল হয়ে ওঠা আঁখি। নিহত বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার এবং বেঁচে যাওয়া দুই কন্যার জন্য দাদীর সে আবেগ, আজও ভুলতে পারিনি। হয়ত এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের সামনে অজস্র বিশেষন যুক্ত করার সুযোগ থাকলেও আমার সবচেয়ে প্রিয় হয়ে রয়ে গেছে সেই ‘শ্যাখের বেটি’ উপমাটি।
প্রিয় দাদীর সেই ‘শ্যাখের বেটি’ গত ছয় বছর যাবৎ আমাদের প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ আজ আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান একজন নারী। তবুও আজ রাষ্ট্রই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় নারী নিপীড়ক! নাহ - নিপীড়ন, অত্যাচার, বস্ত্রহরণ, পাষবিক আচরণ বলে এই অপরাধকে আর হালকা করবো না। আজ থেকে এ জাতীয় ঘটনাকে শুধু যৌন সন্ত্রাস বা ধর্ষনই বলবো। দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনও আমায় সে অধিকার দিয়েছে। সেখানে বলা রয়েছে – “যদি কোনো ব্যক্তিঅবৈধভাবে যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোন বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানী করেন, তাহলে তার এ কাজ হবে যৌন পীড়ন।” তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সব কিছু বাদ দিয়েও সর্বাগ্রে একজন নারী; যিনি কন্যা, জায়া, জননী – এ তিনটি স্তরই চেনেন। সেহেতু নিশ্চয়ই জানেন, নারীকে শুধু পুরুষাঙ্গ দিয়েই যৌন পীড়ন বা ধর্ষন করা হয় না। একজন কামুক পুরুষ তার প্রতিটি অঙ্গ ব্যবহার করে। অনেক সময় শুধু লোলুপ দৃষ্টিও যে কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে – তা বোধকরি দেশের প্রতিটি মেয়েরই জানা আছে।
ইসমতের উপর পুলিশী পীড়নের আরো চিত্র
বঙ্গাব্দ বরণ, তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি চত্ত্বর সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে নারীদের বস্ত্রহরণ ও শ্লীলতাহানির যে ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পায়নি জাতি। এর আগের ও পরের প্রায় সকল ঘটনায় তিনি প্রেস সচিবদের মাধ্যমে কখনো শোক আবার কখনো শুভেচ্চা বার্তা, অর্থাৎ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনার ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও ঠিক পরের দিনই এ নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে অনলাইন পত্রিকা আমাদের বুধবার – এ প্রকাশিত একটি লেখায় শাহাদত হোসেন বাচ্চু বলেছেন, “বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে সফল, সুখী ও পরিতৃপ্ত মানুষটি কে? উত্তর হতে পারে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার পার করছে ষষ্ঠ বছর। গত বুধবার, বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে গণভবনে কলামিষ্ট, লেখক, টক শো’র আলোচক, সঞ্চালকসহ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তাঁর হাস্যোজ্বল চেহারায় ছিলো না কোন উদ্বেগ-উৎকন্ঠার ছাপ, ঠিকরে পড়ছিল গভীর আত্মবিশ্বাস। ওই মতবিনিময়কালে এবারের পয়লা বৈশাখ পালনের কথা বলছিলেন, টেলিভিশনে তিনি দেখেছেন। বিশদ উল্লেখ না করে ‘বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট’ বলে প্রসঙ্গান্তরে চলে গেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা অনেকেই বুদ্ধিমান নই কিম্বা বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাও করি না। ফলে আমরা আম-জনতা ইশারায় অনেক কিছুই হয়তো বুঝতে পারি না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে সকল বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারাটি করেছেন, তারা হয়তো বুঝে গেছেন অনেক কিছুই।” শাহাদত হোসেন বাচ্চু আরো লিখেছেন, “আম-জনতা ইশারায় কিছুই বুঝতে চায় না। চাই একটু স্বস্তি-শান্তি আর জীবনের নিরাপত্তা। স্বস্তি-শান্তির বদলে জুটছে আতঙ্কিত জীবন-যাপন। আসলে জনগন ইশারায় কিছুই বুঝতে চায় না। তারা চায় সত্যিকার জনকল্যাণকর রাষ্ট্রাচারসম্মত গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার। প্রধানমন্ত্রী ইশারায় যদি সেটি বোঝাতে চেয়ে থাকেন, তাহলে জনগন তা অবশ্যই বুঝে নেবে।”
বৈশাখের সংঘবদ্ধ সেই যৌনসন্ত্রাসের প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলনরত ছাত্র ইউনিয়নের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য ইসমত জাহানের সাথে পুলিশ, মানে আইনের রক্ষকরা যে আচরণ করেছে, সেটা আইনানুযায়ীই ‘যৌন পীড়ন’। অর্থাৎ পুলিশ ভাইয়েরা পুনরায় প্রমাণ করলেন, তারা অর্থাৎ এ রাষ্ট্র শুধু যৌন পীড়নের সমর্থকই নয়, ক্ষেত্র বিশেষে নিজেই পীড়ক, ধর্ষক। অবস্থাদৃষ্টে আপন রাষ্ট্রকেই আজ যৌনসন্ত্রাসী বা ধর্ষক ভাবতে হচ্ছে হায়। শুধু আমাদের মা, বোনকে নয়; দেশমাতৃকাকেই ধর্ষন করছে রাষ্ট্রযন্ত্র। এতে অবাক হতাম না। কারণ হাজার বছর ধরে শোষণযন্ত্রের স্বভাবই যে এমন, তা সচেতন সকলেরই জানা আছে। কিন্তু ওই যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের চাবি এখন যার আঁচলে বাঁধা, তিনি সেই ‘শ্যখের বেটি’। তাকে বা আমাদের পুলিশ বাহীনিকে বিব্রত করার কোনো বাসনা নিয়ে এ্ই লেখা লিখতে বসিনি। শুধু রাষ্ট্রীয় প্রধানের কাছে আমার প্রশ্ন – পহেলা বৈশাখ ইস্যুতে আপনার ‘আনুষ্ঠানিক নিরাবতা’ কি নিপীড়কদের মানুসিক শক্তি বাড়ায়নি? এর পরবর্তী পুলিশী পীড়নের জন্যও কি পরোক্ষভাবে আপনিই দায়ী নন? এই দুটো প্রশ্নকে কারো বেয়াদবি মনে হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
চলতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “নারী সমাজের উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন। তাই তার সরকার নারী সমাজের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। যারা ইসলামের নামে নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারা ইসলামের অনুশাসন মানে না।” একইসঙ্গে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেশের নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এটি গত ৮ মার্চ, ২০১৫ - একটি অনলাইন পত্রিকার খবর। এটা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর উন্নয়ন’। ওই অনুষ্ঠানের আরেকটি খবরে বলা হয়েছে - নারী সমাজের উন্নয়নে নিজ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে আসে নারীদের কল্যাণে কাজ করে। এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাংলাদেশের নারীদের কর্মস্পৃহা, দক্ষতা, ত্যাগের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নারীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। সরকারের নারী উন্নয়নমুখী নীতির কারণে এখন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, জাতীয় সংসদের উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, অনেক বিচারক, সচিব, এমনকি ভিসিও হচ্ছেন নারী। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩টি সংরক্ষিত আসন সৃষ্টির মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে নারী নেতৃত্ব বিকাশে ফলপ্রসূ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়নসহ নারী সমাজের উন্নয়নে ৬ বছরে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।” বাংলাদেশের সাউথ-সাউথ পুরস্কার ও নারী সাক্ষরতায় ইউনেস্কো ‘শান্তি বৃক্ষ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার অর্জনের কথা ও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়াও বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মান বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসব ভুলে যাইনি। শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীও ভুলে যাননি নিশ্চয়ই। কারণ আমরা জানি তার সরকারই নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩, ডিএনএ আইন ২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করেছে। মাতৃত্বকালীন ছুটিও ছয় মাসে উন্নীত করেছে এ সরকার। সেই সাথে মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করেছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোও এখন জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করছে। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, এসব কি তবে শুধুই কাগজপত্রে হচ্ছে? নাহ, এমনটা আমি অন্তত মনে করতে চাই না। তবে মনে পরে যায় শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদকে। কমপক্ষে ১০ বছর আগে নিজের “১০,০০০ এবং আরো একটি ধর্ষণ” উপন্যাসের মুখবন্ধে তিনি লিখেছিলেন - ‘বাঙলাদেশ এখন হয়ে উঠেছে এক উপদ্রুত ভূখণ্ড; হয়ে উঠেছে ধর্ষণের এক বিশাল রঙ্গমঞ্চ, ৫৬,০০০ বর্গমাইলব্যাপী পীড়নের এক বিশাল প্রেক্ষাগার। ধর্ষিত হচ্ছে মাটি মেঘ নদী রৌদ্র জোৎস্না দেশ, নারীরা।’
আন্দোলনরতদের ওপরে পুলিশের লাঠিচার্জের বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ গত ক’দিনে ঘেঁটে দেখলাম। পুলিশের লাঠিচার্জে আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলের অজস্র ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবেই। ওগুলো একটু খেয়াল করে দেখলেই দেখবেন - ক্ষুব্ধ ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী ইসমত জাহান জলকামানধারী দাঙ্গাগাড়ির গায়ে ঢিল ছুড়ে মারার সাথে সাথে তাকে পিছন থেকে এসে এক থাপ্পরে ফুটপাতে শুইয়ে ফেলে একজন সুঠার দেহের পুরুষ পুলিশ। তিনি কোনো মতে উঠে পাশে দাঁড়ানো এক আলোকচিত্রীর পেছনে লুকিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে – পুলিশ সদস্যরা তাকে ধটেনে হিঁচরে বের করে লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে ধাওয়া করে। এরপর তিনি দৌড়ে গিয়ে একটি গাছের আড়ালে গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখান থেকেও তাকে চুলির মুঠি ধরে বের করে এনে পিটাতে পিটাতে আবারো শুইয়ে ফেলা হয়।
জানা হয়নি ওই পুলিশ সদস্য জানতেন কি’না, সেদিন ছিলো বিশ্ব মা দিবস। আর এই দিনে তিনি বা তারা যাকে পেটাচ্ছিলেন, তিনিও মায়েরই জাত। যে কি’না নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষার দাবিতেই আজ রাজপথে, নিপীরকদের শাস্তির দাবিতে। ওই সদস্য না জানুক, তার কর্তারা তো জানতেন- বৈকি। এ কারণেই সেদিন ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলাম। চিঠিটি এখানেও সংযুক্ত করছি -
হে মহান বিজ্ঞ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), এ কথাগুলো সম্ভবত আপনার কান অবধি পৌছাবে না। তবুও বলছি, বিশ্ব মা দিবসে মায়ের জাতকে পিটানোর জন্য নারী পুলিশ ব্যবহারে আপনার গদি খুব একটা নরবরে হয়ে যেত না হয়ত। যৌনসন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন দমাতে নারী পুলিশদের কি ওপর ভরসা রাখতে পারছিলেন না? আন্দোলন দমাতে এসে তাদেরও প্রতিবাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিলো কি’না সে আলোচনা আপাতত উহ্য রাখছি। শুধু একটু জানিয়ে রাখছি, নিজ বাহীনির নারী সদস্যদের ওপর আপনার এই আস্থাহীনতা, তথা নারীদের শায়েস্তার জন্য পুরুষ পুলিশ ব্যবহার এই জাতিকে ফের সেই শামসুন্নাহার হলের ঘটনাকে মনে করিয়ে দিয়েছে। তবুও দেশের সুবোধ নাগরিকের মতো আমরা ট্যাক্সের পয়সায় আপনাদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করবো নিশ্চয়ই। পুনশ্চঃ পরে জেনেছি - “সেখানে পুলিশের নারী সদস্য থাকলেও তাঁরা নীরব ছিলেন।” লিখেছে দৈনিক প্রথম আলো।
খবরে দেখলাম নারী লাঞ্ছনার বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কনস্টেবলের নাম আনিস। গতকাল (১১ মে, ২০১৫) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখা থেকে সাংবাদিকদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একই দিনে ডিএমপি কার্যালয় থেকে পাঠানো আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা কীভাবে ব্যারিকেড পার হয়ে মিন্টো রোডের স্পর্শকাতর মন্ত্রিপাড়ায় এসে পুলিশের ওপর ‘হামলা চালিয়েছেন’ এবং পুলিশ কোন প্রেক্ষাপটে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করেছে তা ‘যাচাইয়ে’ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি)। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) বেলালুর রহমানকে। কমিটির দুই সদস্য হলেন ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) কৃষ্ণ পদ রায় ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখিত সংবাদ ভাষ্যগুলো পড়তে পড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আরো কিছু কথা মনে পরলো। এ দেশে অপরাধীদের মারা হলে মায়াকান্না করা হয় উল্লেখ করে ক’দিন আগেই তিনি বলছিলেন - “পুলিশের অধিকার আছে নিরপরাধ মানুষের জানমাল বাঁচানো। মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, বাসে-রেলে আগুন দেয়া হচ্ছে, রেললাইন তুলে ফেলছে, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে, কিছু করা যাবে না! কিছু করলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। এ হতে পারে না।”
সম্ভবত অনেকেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সেই বক্তব্য ভুলে যাননি। তিনি বলেছিলেন, “কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ পেলে পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। যে ফুটেজ পাওয়া গেছে, তাতে বিবস্ত্র করার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, “ পহেলা বৈশাখের এ ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটানো হয়েছে। যদি কারও কাছে কাঙ্ক্ষিত ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য থাকে তাহলে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে তা পুলিশের কাছে জমা দিন।” এনিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ঘাঁটলেই জানবেন, সেদিনও পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিলো স্মারকলিপি নিয়ে সচিবালয়মুখী আন্দোলনকারীদের সাথে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলামের সেই সংবাদ সম্মেলনের কথাও নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, “নারীকে বিবস্ত্র করে যৌন হয়রানি করার কোন ঘটনা ঘটেনি, এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে বিবস্ত্র করে তার ছবি মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার করানো হচ্ছে।” তবে টিএসসির আশপাশের এলাকায় ঠেলাঠেলি হয়েছে বলে স্বীকার করে মনিরুল ইসলাম বলেন, “এখানে ঠেলা-ধাক্কা, হাতাহাতি হয়েছে। একেবারেই কিছু বিকৃতমনা যুবক এবং যারা অপুরুষসুলভ, তারাই হয়ত এ কাজটি করেছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ চলছে।”
বর্ষবরণ উৎসবে যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে লজ্জা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘সব নারীর কাছে’ ক্ষমা চেয়েছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। পুলিশের ‘লোক দেখানো’ ভূমিকা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, “নববর্ষের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানি ও এ ঘটনা আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- কী হিংস্রতা ও নগ্নতা আমাদের মনের গহিনে বাসা বেঁধেছে। কী ঘৃণ্য মানসিকতা আমাদের পেয়ে বসেছে।” এবার তিনি কী বলেন তা দেখারও অপেক্ষায় আছি।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। নগর নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগদ খালেদা জিয়ার ওপর সরকার সমর্থকদের দফায় দফায় আক্রমণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই শুধু নন, তার সন্তান ও অবৈতনিক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা’ও সকলের মনে আছে আশাকরি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘৬৬৫ জন বিএনপি নেতা পেট্রোলবোমাসহ ধরা পড়েছে। ৭০ জনের মতো সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়েছে এবং তারা গণপিটুনির শিকার হয়েছে। বোমা বানাতে গিয়ে নিজেদের নেতাও মারা গেছে। বহু মায়ের বুক খালি করেছেন। বহু বোনকে বিধবা করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) এখনো প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তার কথায় আমি অবাক হয়ে যাই। এখন যদি সাধারণ মানুষ তার ওপর প্রতিশোধ নেয় তা হলে তিনি কী করবেন। তিনি দেশের মানুষকে এতো বোকা মনে করেন কেন?’ আর তার পুত্র জয় ফেসবুকে লিখলেন – “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে মানুষ আবারও পাথর এবং লাঠি নিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনাগুলোতে আসলে আওয়ামী লীগের তেমন কিছু করার নেই। দেশের মানুষ, বিশেষ করে ঢাকার মানুষ গত তিন মাসে বাস এবং গনপরিবহনে বিএনপির দ্বারা অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছেন। বিএনপি ১৬০ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, বহু মানুষ আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে শুয়ে আছেন। ক্ষোভটা সহজেই বোধগম্য।”
ক্ষমতার চূড়ান্তে থাকা এক মা বা তার ছেলের এমন বক্তব্য প্রতিহিংসায় আস্কারা দেয় কি’না – সে প্রশ্ন এখানে তুলবো না। কারণ এটা আমি মনে করি না যে ওনারা ভুলে গিয়েছিলেন যে বেগম খালেদা জিয়াও সর্বাগ্রে একজন নারী, দেশের এক সম্মানিত নাগরিক। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া একজন নারীর কতটা সম্মান পাওয়া উচিত, তা’ও বোধকরি ওনাদের অজানা নয়। এমন একজন নারীর ওপর হামলার পর অমন বক্তব্য আরো কতটা ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিতে পারে – সে শঙ্কায়ও ছিলাম। হয়ত ছিলেন আরো অনেকে। ক’দিনের মধ্যেই প্রমাণ পেলাম – শঙ্কা ভুল ছিলো না। নগর নির্বাচনের দিন সারা ঢাকাতেই সরকার বিরোধী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা যে পরিমাণ নিগ্রহের স্বীকার হয়েছেন, তার মধ্যে নারীর সংখ্যাও এক্কেবারে কম ছিলো না।
বেগম জিয়াও এই ইস্যুতে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ২৬ এপিল, ২০১৫ – এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন যৌন পীড়নের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। খালেদা জিয়া বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের যে বোনেরা ও মেয়েরা ন্যাক্কারজনকভাবে নির্যাতিত ও সম্মানহানির শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি। এসব ঘৃণ্য অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।” তিনি আরও বলেন, 'যে সরকার ও প্রশাসন কোনো সামাজিক উৎসবে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে পারে না এবং এমন ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিকার করতে পারে না, তাদের লজ্জিত হওয়া উচিৎ। ক্ষমা চেয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিৎ।'
একই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রী আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। তাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উত্তরা, কারওয়ান বাজার, ফকিরেরপুলের কাছে ও বাংলামোটরে আমার গাড়িবহরে পরপর চারদিন হামলা করেছে। বাংলামোটরে আমাকে বহনকারী গাড়ির উপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেয় এবং হামলাকারীদের পুলিশ পুরোপুরি সহযোগিতা করে। সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে কারওয়ানবাজারে। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। বহরের অনেকগুলো গাড়ি ভেঙ্গে ফেলে। হামলার সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানো হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, 'সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আমি তখন সবেমাত্র গাড়িতে উঠে বসেছি। আমি যে-পাশে বসা ছিলাম, সেই পাশেই গাড়ির জানালার কাঁচে গুলি লাগে। এতে গাস ভেদ না করলেও তা ফেটে যায়। আলাহর রহমতে অল্পের জন্য আমার জীবন রক্ষা পায়। কতটা মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করলে বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ ফেটে যায়, তা সবাই বোঝে। এটা যে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সুপরিকল্পিত হামলা ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।” প্রতিটি হামলার জন্য তিনি এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে বলেন, “প্রতিটি হামলার ঘটনাই প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সরাসরি উস্কানির ফল এবং সুপরিকল্পিত। এসব হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অংশ নেয়।”
এদিকে যৌন সন্ত্রাস বিরোধী ‘পাল্টা আঘাত’ শীর্ষক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে যখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে দেশের সচেতন সমাজ, ঠিক তখনই ফের ব্লগার হত্যার মতো ইস্যুও তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একই দিনে নিখোঁজ এক জাতীয় নেতার (বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ) সন্ধান লাভ ও ফের ভূ-কম্পনের ঘটনাও এলোমেলো করে দিচ্ছে অনেক ভাবনার গতি-প্রকৃতি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মানসিক হাসপাতালে অবস্থানরত ওই নেতা বা নেপালে জন্ম নেয়া ভূমিকম্পের প্রভাব জনমনে কেমন হতে পারে তা বোধকরি সহজেই অনুমেয়।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এবারের বৈশাখে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছিলো জগন্নাথ আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়ায় টিএসসি’র ঘটনাতেও এই সংগঠনের নেতাকর্মিদের জড়িত থাকার গুজব ছড়িয়ে পরে। মূলত বিগত বছরগুলোতে তাদের এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের নজিরই এটি ছড়াতে সাহায্য করেছে। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মিদের মাধ্যমে পুলিশের হাতে আটক হওয়া নিপীড়কদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনা – এ গুজবকে আরো শক্তিশালী করেছে। এতে হাওয়া দিয়েছে খোদ ছাত্রলীগও। এনিয়ে ২২ এপ্রিল এক সংবাদ পরিবেশন করে দৈনিক মানবকণ্ঠ। “ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়ন : সপ্তাহ পেরুলেও কর্মসূচিহীন ছাত্রলীগ : কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারণায়” শিরোনামের ওই সংবাদে বলা হয়, রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। ঠিক তেমনি বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে নারী ও শিশুদের ওপর সংঘটিত বর্বরোচিত যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যেখানে একের পর এক কর্মসূচি পালন করছে, সেখানে প্রায় নিশ্চুপ ছাত্রলীগ। ঘটনার সাতদিন পেরুলেও নেই কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যস্ত আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগে। এ নিয়ে সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভেতরেও বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এ ধরণের সংবাদ এসেছে আরো একাধিক গণমাধ্যমে। ওইসব সংবাদে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বর্বর ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে নামমাত্র একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। তাও আবার তিনদিন পর। বিবৃতিতে ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ‘বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে গত মঙ্গলবার বিকেলে ৩০-৩৫ জনের একদল বখাটে যুবক বেশ কয়েক নারীকে যৌন হয়রানি করেছে। তারা আগন্তুকদের সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করে। জাতির জনকের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ হীন ও ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। অতি দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতেই দাবি শেষ! এরপর নেই কোনো দৃশ্যমান কর্মসূচি। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে। প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগ মনোনীত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের গণসংযোগে ব্যস্ত।
প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে আরেকটি অনলাইন। ‘ছাত্রলীগকে জড়ানো হচ্ছে গোষ্ঠীস্বার্থে : প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, “পহেলা বৈশাখের ঘটনায় দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নামে কুৎসা রটানোর অপপ্রয়াস রুখতে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন।” তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসটিও এখানে তুলে ধরা হলো -
গরু ঘাস খায় / আমি গরু খাই। সুতরাং আমি ঘাস খাই ... যুক্তি বিদ্যার যুক্তিগুলো এইরকমই। যা অবশেষে ভুল প্রমাণিত হয়। "যেহেতু সুশীলদের কাছে সব দোষের দোষী ছাত্রলীগ হয়। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতনের যে ঘটনা এটা ছাত্রলীগই করেছে।" কিছু অশিক্ষিত/অর্ধ শিক্ষিত মানুষ এই রকম যুক্তি দিয়েই ছাত্রলীগের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে কিছু পেইড পেশাজীবীও রয়েছেন। কারণ সামনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, সরকার সমর্থক প্রার্থীদের হারানোর জন্য এটা খুব বার্নিং ইস্যু। যেমন গত নির্বাচনে ছিল হেফাজত ইস্যু। অথচ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী, যিনি মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে দুস্কৃতিকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন তিনিও কিন্তু প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠন এর নাম বলেননি। নিশ্চয় দুস্কৃতিকারী কুলাঙ্গারগুলো ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক হলে তার জানার কথা। কারণ উদ্ধারকারীরাও ৭/৮ বছর ধরে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছেন। সুতরাং প্রতিপক্ষকে চেনার কথা। যারা কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া ছাত্রলীগকে দোষারোপ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা কি জানেন, আপনিও যে ওই "কুলাংগারদেরই একজন।" কারণ আপনি, আপনার গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে আসল কুলাঙ্গারদের বাঁচিয়ে দিচ্ছেন।
অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষের রাতে শাওন আকতার বাঁধন নামে এক নারীকে বিবস্ত্র করা হয়েছিলো। তখনও যে সোনার ছেলেরা এই অপকর্ম করেছিলো তারা ক্ষমতার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। আর তখনও বর্তমান ক্ষমতাসীনরাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো। পুলিশ ছিলো নীরব। এ নিয়ে মামলা হলেও আসামিরা সবাই মুক্তি পেয়েছিলো। তাছাড়া প্রবল চাপের কারণে সেই বাঁধন নিজেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। ২০১৪ সালের এক খবরে বিবিসি বলছিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ওই বছরে কমপক্ষে ২০টি যৌন হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। বিগত ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল অবধি এ জাতীয় শত শত ঘটনার জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে গণমাধ্যমেও এসেছে খুব কম সংখ্যক ঘটনা। তবে যেগুলো এসেছে, ব্যাপক আলোচিত হয়েছে - সেগুলোয় ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্টদের জড়িত থাকার প্রমাণই মিলেছে বার বার।
কার জানি এক লেখায় পেয়েছিলাম, সেই সুদূর অতীতে - বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেই (১৯৭৩ সালে) শহীদ মিনারে ছাত্রীদের ওপর হামলে পড়ার মতো ঘটনার সাথে ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে আছে। তাদের বর্তমান উত্তারাধিকারীরা সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রেখেছে। এই ছাত্রলীগ তৈরি করেছিলো সেঞ্চুরিয়ান ধর্ষক। তাদের এ জাতীয় অনাচার নিঃসন্দেহে ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতিয়ার।
অনেকের হয়ত প্রাসঙ্গিক মনে না’ও হতে পারে। তবুও সাংবাদিক ও ব্লগার কল্লোল মুস্তফার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস এখানে হুবহু উল্লেখ করছি।
>> অভিজিৎ রায়ের খুনিরা এখনও ধরা পড়েনি/চিহ্নিত হয়নি, ওয়াশিকুর বাবুর খুনিরা জনগণের তৎপরতায় ঘটনাচক্রে ধরা পড়লেও পেছনের ব্যাক্তি বা সংগঠন এখনও ধরা পড়ে নি। হুমায়ুন আজাদ হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে নাস্তিক অভিযোগে যাদের উপরই হামলা হয়েছে, সেসবের কোন তদন্ত কাজেই সন্তুষ্ট হওয়ার মত কিছু দেখি না। ক্ষমতাবানরা বিপন্ন বোধ করলে যেভাবে পুলিশ কিংবা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী মাঠে নামে, অন্যান্য আরও ঘটনার মতো এই হত্যাকান্ডগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে মূল হোতা সনাক্ত করার ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ নেই। যে কারণে পেছনের মূল শক্তি তো দূরের কথা রেদোয়ান রানা কিংবা মাসুম ভাইদের মতো সামনের সারির সমন্বয়করা পর্যন্ত ধরা পড়েনা। এ রকম একটা বাস্তবতাই লেখক অনন্ত বিজয় দাসকে কুপিয়ে হত্যার পরিসর তৈরি করে দিয়েছে।
>> নাস্তিকতার কারনেই একের পর এক হত্যা কারা হচ্ছে বলে মনে হলেও নাস্তিকতাকে পুঁজি করে হত্যার পেছনে অন্য কোন মোটিভ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। ইতিহাস বলে, নাস্তিক আস্তিক হিন্দু মুসলিম ইত্যাদি বিভিন্ন দাঙ্গা হামলা আক্রমণ ইত্যাদির পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারলৌকিক বিষয়ের চেয়ে ইহলৌকিক নানান বিষয় কাজ করে। নাস্তিকতা বিষয়টি তো বাংলাদেশে নতুন নয় কিন্তু এভাবে চাপাতি সহ হামলা তুলনামূলক নতুন। কি এমন ঘটলো যে কিছু লোক ব্লগারদের উপর চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে? মাদ্রাসা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধর্মপ্রাণ কিশোর বা তরুণটি হামলা করছে, সে হয়তো ধর্ম রক্ষা করছে ভেবেই হামলাটি করছে, কিন্তু যারা তার ভেতরে থাকা ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাকে উসকে দিচ্ছে, চাপাতি সর্বরাহ করছে, ভিকটিমের নাম ঠিকানা ছবি হাতে ধরিয়ে হামলায় উদ্বুদ্ধ করছে- তারা স্রেফ ধর্মরক্ষার জন্য করছে এরকম আমার মনে হয় না। এর পেছনে ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর একেবারেই ইহজাগতিক স্বার্থসিদ্ধির বিভিন্ন কার্যকারণ থাকতে পারে।কিন্তু মূল হোতারা চিহ্নিত না হলে আসলে এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত কিছু বলা মুশকিল।
>> জঙ্গিবাদের উত্থানে সরকারের মুখের কথা আর কাজের মধ্যে কন্ট্রাডিকশান স্পষ্ট।মুখে জঙ্গিবাদ দমণের কথা বললেও এবং জঙ্গিবাদ বিরোধীতার কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা লূটলেও- প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানান উপায়ে নিজেরাই ধর্মের রাজনৈতিক ব্যাবহার করে, বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করে- যা ধর্মীয় জঙ্গিবাদ উত্থান ও লালন পালনের বাস্তব পরিসর তৈরী করে।
পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে নারীদের ওপর সংঘবদ্ধ যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে চার-পাঁচ জন যুবকের দুষ্টামির ছলে ঘটা ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এ ঘটনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেতা লিটন নন্দী ধূম্রজাল সৃষ্টি করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। আজই দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ জাতীয় মন্তব্য করেন। আইজিপি বলেছেন, ‘বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে হাজার হাজার মানুষ ছিল। তাদের মাধ্যে মাত্র চার-পাঁচ জন যুবক ওরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সময় জনগণ কী করেছে? একজনও কেন তাদের ধরতে পারল না। জনগণেরও তো ক্ষমতা রয়েছে। দুষ্টামির ছলে চার-পাঁচ জন যুবক কী করেছে তা জনগণই প্রতিহত করতে পারত। এ ঘটনা নিয়ে লিটন নন্দী বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। এসব তথ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে আল-কায়েদা প্রসঙ্গে তিনি বলেনে, ‘বাংলাদেশে আল-কায়েদার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশের কোনো সংগঠন তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ একের পর এক ব্লগার হত্যা প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, কিছু ব্যক্তি ব্লগারদের হত্যার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে। কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না। ফলে হত্যাকাণ্ডের পর তাদের গ্রেফতারে নতুন করে কৌশলী হতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
যারা ভাস্কর নভেরা আহমেদের অবদানের চেয়ে তার আত্মগোপনের লাভ-ক্ষতি নিয়ে বেশী নিয়ে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন - তাদের কাছে জানতে চাই; একজন শিল্পী বা স্রষ্টার নিজের বেছে নেয়া জীবনপ্রণালীকে কটাক্ষ করার অধিকার আপনারা কোথায় পেলেন? এ কী জ্ঞানের অহমিকা! নিজেদের জ্ঞান বা অনুধাবনকে কতটা চূড়ান্ত ভেবে আপনারা এর বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন? লাভ-ক্ষতির বাইরে গিয়েও যে ভাবা যায়, তা কি কখনো উপোলদ্ধি করেছেন? আমার এই আচরণও নিঃসন্দেহে বেয়াদবি। কিন্তু এ কালে বেয়াদবদের সাথে বেয়াদবি করা জায়েজ মনে হচ্ছে বলেই বলছি - এ নেহাতই পাতি বূ্র্জোয়াগিরি। সবই পুঁজির খেল। আপনারা কবে যে - কোথায় বিক্রি হয়ে গেছেন - তা হয়ত টেরও পাননি, বা পেয়েছেন। আর এখন সবাইকে বিক্রি হতে দেখতে চাচ্ছেন। পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রের তথা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি না হয়ে যারা নিরবিচ্ছিন্নভাবে নিজস্ব দর্শন/ভাবের জগতে ডুবে থাকতে চাচ্ছেন, তাদের ‘ক্ষতিকর/অস্বাভাবিক’ ভাবাও আপনাদের স্বাভাবিক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। থাক, বাদ দেই। তবে আজ এটুকু অন্তত ভাবুন, নভেরার এই আত্মগোপন বা দেশত্যাগ কি কোনো প্রতিবাদ ছিলো?
শাকুর মজিদের নতুন মন্তব্য
এখানে একটি সংবাদ ভাষ্য উল্লেখ করছি।
“১৯৫৮ সালে সামরিক আইনজারি হলে শহীদ মিনারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শহীদ পাক-হানাদার বাহিনী শহীদ মিনার সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর যখন আবার শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় তখন মূল নকশার অনেক কিছু বাদ পড়ে। বাদ পড়ে যায় নভেরা আহমেদের ভাস্কর্য দুটি।” তথ্য সূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ (১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)
- তার অভিমানের তরে আর কোনো উপলক্ষ কী দরকার আছে !! এই রাষ্ট্রই কি তাকে অভিমানী হওয়ার সুযোগ করে দেয়নি। জনকণ্ঠের ওই প্রতিবেদন থেকেই জেনেছিলাম, নভেরা আহমেদের বাবা সৈয়দ আহমেদ বনবিভাগের কর্মকতা হিসেবে যখন সুন্দরবনে অবস্থান করছিলেন, সেই সময় ১৯৩০ সালে এই তার জন্ম। শৈশব কেটেছে কলকাতায় এবং সেখানে ‘লরেট’ থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। স্কুল জীবনে তিনি ভাস্কর্য গড়ার দক্ষ হয়ে উঠেন। ১৯৪৭’র দেশ বিভাগের পর কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে গিয়ে নভেরা ১৯৫১ সালে ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস এ্যান্ড ক্র্যাফটসের ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইনের মডেলিং ও স্কাল্পচার কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৫৫ সালে কোর্স শেষ করে ডিপ্লোমা ডিগ্রী লাভ করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি বিবিসিতে অনুষ্ঠান করতেন। বিবিসির অনুষ্ঠান পরিচালক ছিলেন নাজির আহমদ। শহীদ মিনারের রূপকার হামিদুর রহমান লন্ডনে পড়তে গেলে ভাই নাজির আহমেদের মাধ্যমে নভেরা আহমেদের সাক্ষাত, পরে বন্ধুত্ব।
নভেরা ছিলেন ভাস্কর আর হামিদুর রহমান ছিলেন অঙ্কনশিল্পী। দুজনেই ছিলেন শিল্পানুরাগী। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে এই দুই বন্ধু মিলে ইউরোপের বড় বড় জাদুঘরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। তাঁরা উভয়ে লিয়োনাদ্রো ভেঞ্চির মোনালিসা ছবি দর্শন করতে প্যারিসের ‘লুভ‘ গ্যালারি পরিদর্শন করেন। লেখক হাসনাত আবদুল হাইর লেখা ‘নভেরা’ উপন্যাসে দুই বন্ধুর প্রগাঢ় বন্ধত্ব ও শিল্পানুরাগের বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য শিল্পীদের কাছে নকশা আহ্বান করলে শিল্পী হামিদুর রাহমান সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকায় আসেন এবং শহীদ মিনারের জন্য এমন একটি নকশা প্রণয়ন করেন যেটাকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ‘আমার মায়ের মুখ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। নির্বাচন মণ্ডলির সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ শুরু করেন হামিদুর রহমান। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে শিল্পী উপলব্ধী করেন যে শহীদ মিনারের সঙ্গে ভাস্কর্য স্থান পেলে তা পূর্ণতা পাবে। তাই তারই উদ্যোগে শিল্পী নভেরা আহমেদ ঢাকায় আসেন এবং শহীদ মিনারের মূল বেদীতে ভাস্কর্য তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৯৫৫ সালের দিকে এই দুই শিল্পী যখন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন তখন এদেশে শিল্প অনুরাগী খুব একটা ছিলো না। হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদ শূলত ভাষা শহীদদের স্মরণে কিছু একটা করার তাড়নায় জন্মভূমিতে ফিরে এসেছিলেন।
শাকুর দর্শনের নগদ প্রভাব
দয়া করে স্মরণ করুন তার এসব অবদানের কথা। আর আমার একটা অনুধাবনের কথা বলে যাই - মানুষের বিস্মৃতিপ্রবণ চিন্তার দৈন্যতা, দর্শনের দুর্বলতা, সার্বোপরী - আত্মজ্ঞানের সংকট প্রসূত সুবোধের অভাব এ দুনিয়ায় আজও অতটাই প্রকট যতটা সত্তর হাজার বছর আগেও ছিলো।
নভেরার প্রবাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত আসলে আজও রহস্যাবৃত। প্রবাস জীবনে দেশের যে মানুষটির সাথে তার সবচেয়ে ঘনিষ্টতা বা সখ্যতা ছিলো তিনি হচ্ছেন চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের স্ত্রী আনা ইসলাম। তিনি লিখেছিলেন, “বহুদিন ধরেই নভেরা আছেন নিজস্ব আড়ালে। দেশত্যাগের এক অজানা ধোঁয়াটে অধ্যায়, তারপর স্বেচ্ছা-নির্বাসনের দীর্ঘ অন্তরাল। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, মৃদু হাসিতে বুঝিয়েছেন – অন্তরালে থাকাটা তাঁর নিজস্ব জীবনচর্যার ব্যাপার। মানুষের কোলাহল, স্তুতি, প্রশংসা থেকে আগলে রাখা তাঁর ভুবন।”
প্রয়াত ভাস্কর নভেরা আহমেদের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ জাগানোর চেষ্টা করেছেন স্থপতি শাকুর মজিদ । ফেসবুকে উইমেন চ্যাপ্টার সম্পাদক সুপ্রীতি ধরের দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ প্রয়াস চালিয়েছেন। ঘন্টা তিনেক আগে, অর্থাৎ বুধবার (৭ মে) দিনগত রাতে নভেরাকে স্মরণ করে সুপ্রীতির দেয়া ওই স্ট্যাটাসে শাকুর প্রশ্ন ছোঁড়েন - “যে দেশ ছেড়ে চলে যায় তাঁর জন্য আহাজারি কিসের?”
শাকুরের দুটি মন্তব্য দেখুন ...
দেশের ভাস্কর্য শিল্পের অগ্রদূত নভেরাকে নিয়ে এমন মন্তব্য পড়ে মেজাজ কী করে ঠিক রাখি বলুন! তার ওপরে যদ্দুর জানি এই মন্তব্যকারী, অর্থাৎ শাকুর মজিদ প্রায় অর্ধশত দেশ ঘুরেছেন। লিখেছেন অজস্র ভ্রমণকাহীনি। দৈনিকের কল্যাণে তার এ জাতীয় কয়েকটি লেখা পড়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছে। এমন মহান বিদ্বান নিশ্চয়ই জানেন - মূলত কার কোন স্বার্থে দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত আজও বিভক্ত এবং সমাজের কোন শ্রেনী এই বিভাজনে হাজার হাজার বছর ধরে লাভবান হচ্ছেন। শোষকরাই কি এই সীমানার স্রষ্টা নয়? যুগে যুগে এদের লিঙ্গলেহনকারীও এক্কেবারে কম ছিলো না, এখনো আছে। কেউ বুঝে, আবার কেউ না বুঝেই ওই শোষকদের মুখপাত্র বনে গেছেন, যাচ্ছেন। যে কারণে শাকুর সাহেবের মন্তব্যে আর বিষ্ময় নয়, রাগই জেগেছে। এরাই আবার কী উদার, মুক্তমনা মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়! এমন মননের একটি লোকের কথাকে এত গুরুত্ব দেয়াও হয়ত ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু কিছু বিষয় - না বললেই নয়। এই যেমন - শাকুর সাহেবের কথার যে শ্রী - “উনি এতোদিন কি বেঁচে ছিলেন? ৫২’র পর তো আর কোনও আওয়াজ ছিলো না।” আমাদের আরো অনেকের মতো প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম (সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাথিউরা) থেকে ঢাকায় উঠে আসা এই ভদ্রলোক হয়ত ভুলে গেছেন যে - হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয়েছিলো ১৯৫৭ সালে। আর ১৯৭৩ সালে দেশত্যাগ করে ফ্রান্সে চলে যান নভেরা।
সুপ্রীতির সেই স্ট্যাটাস
একজন পেশাদার স্থপতি হিসাবে এসব ব্যাপারে তারই ভালো জানার কথা ভেবে যারা শাকুর মজিদের দেয়া তথ্যে বিভ্রান্ত হতে পারেন, বস্তুত তাদের জন্যই এতগুলো কথা লেখা। আপনারা আরো একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন। কলোনিয়াল ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে - অস্তিত্বের সঙ্কট কাটাতে খুব ভদ্রলোকি শেখা এ জাতীয় অগ্রজ চুতিয়ারা আজও এক মহাসমস্যা রূপে আমাদের এই বাঙালি সমাজে ঘাঁপটি মেরে আছে। এরা না মরা অবধি দেশে স্বস্তি ফিরবে না। কথাটি হয়ত একটু রূঢ়, মানে অমানবিক হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ, এমন বেকুবদের কখনোই কেউ বোঝাতে পারবেন না যে - পুরো পৃথিবীর উপর প্রত্যেকটি প্রাণেরই অধিকারে আছি।
শাকুর মজিদ
কে এই শাকুর
পেশায় স্থপতি হলেও তিনি লেখেন, ছবি তোলেন এবং নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র। আহসানউলাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন। জন্ম ১৯৬৫ সালের ২২ নভেম্বর, সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার মাথিউরা গ্রামে। পড়াশুনা করেছেন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। টেলিভিশনের জন্য অজস্র নাটক-টেলিফিল্ম লিখেছেন, নিজে পরিচালনাও করেছেন। শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে কমপক্ষে এক কুঁড়ি পুরস্কার পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশের ওপর তার করা প্রায় দেড়শ প্রামাণ্যচিত্র দেশীয় চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে বারোটি ভ্রমণকাহিনী। বাউল শাহ আবদুুল করিমের জীবন ও দর্শন নিয়ে লিখেছেন মঞ্চনাটক ‘মহাজনের নাও’। এছাড়া তার জীবন নিয়ে বানিয়েছেন তথ্যচিত্র ‘ভাটির পুরুষ’। এছাড়া মঞ্চনাটকের আলোকচিত্র নিয়ে ২০০৩ সালে প্রকাশ করেছেন ফটোগ্রাফি অ্যালবাম ‘রিদম অন দ্যা স্টেজ’। তার আরো দুটি প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রীতা ও দুঃসময়ের গল্পগুলো’ এবং আত্মজৈবনিক উপাখ্যান ‘ক্লাস সেভেন ১৯৭৮’। শাকুরের স্ত্রী ড. হোসনে আরা জলী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক। তাদের দুই সন্তানের নাম- ইশমাম ও ইবন।
কি হবে এখন? দেশে কি তবে তুমুল অরাজকতা আসন্ন? নাকি এই আওয়ামী লীগ সরকার এবারও সব বিতর্ক সামলে উঠতে পারবে? সকাল থেকেই প্রশ্নগুলো ঘোরপাক খাচ্ছে মনে। অনুভব করছি - এই মুহুর্তে আরো অনেকের মাথায় একই চিন্তা দৌড়াচ্ছে। মূলত বিভিন্ন সংবাদপত্রের অন্তর্জালিক সংস্করণে ঘুরতে ঘুরতেই আমার এ ভাবনা, অনুভবের উদ্রেক। কারণটা ব্যাখার চেয়ে আজকের (পহেলা মে, ২০১৫) কিছু সংবাদ ভাষ্য উপস্থাপনই বোধকরি শ্রেয়।
একটি অনলাইনের সংবাদে জানানো হয়েছে - খোদ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না।’ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে সদ্য সমাপ্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আরেকটি প্রভাবশালী দৈনিকের সংবাদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমিশনের অধীনে থাকলেও এই বাহিনীর ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’ এর আগের দিনের আরেকটি খবরও এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। ওই সংবাদে জানানো হয়, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের ভাতা নিয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আনসারের কয়েক সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার বিকেলে মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’ দৃশ্যত বোঝাই যাচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেই চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নগর নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের জেতানোর লক্ষ্যে প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন দল যে ভোটসন্ত্রাস চালিয়েছে, তা নিয়ে ওঠা সহস্র প্রশ্নের জবাব সহসাই পাওয়া যাবে না হয়ত। তবে এই ঘটনার পর থেকে দেশের পরিস্থিতি এখন থমথমে বললেও বোধকরি ভুল হবে না। আগে থেকেই বিদ্যমান ভূমিকম্পাতঙ্কের সাথে এ নব্য রাজনৈতিক অস্বস্তি মিলে - যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, তাতে জনগণের হাঁপিয়ে উঠতে আর বেশী সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে না। এটাকে আমার পর্যবেক্ষণ নয়, বিশ্বাস ভাবুন। জনমনে এমন কত বিশ্বাসই না খেলা করে। অতএব - গুরুত্বপূর্ণদের এসবে কান দেয়া মানেই সময় নষ্ট করা।
শুধু বাংলাদেশ নয়, আজ ভূমিকম্পাতঙ্কে কাঁপছে পুরো দক্ষিণ এশিয়া। বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় দ্রুতই বদলাতে শুরু করেছে মানুষের সমকালীন মনস্তত্ত্ব। পর পর দু’দিনের ভূকম্পনে শুধু ভবন নয়, ফাঁটল ধরেছে অনেক চিন্তা, দ্বন্দ্ব ও বিশ্বাসে। কিন্তু এ দূর্যোগ আমাদের দেশের প্রধান দুই নেত্রীর বৈরীতায় কোনো ফাঁটল ধরাতে পারেনি। ভূমিকম্পের দ্বিতীয় দিনে (২৬ এপ্রিল) পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বতর্মান প্রধানপন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু সেদিনও তারা কোনো সৌহার্দের গান শোনাতে পারেননি? বরং আগের মতোই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, পরস্পরের প্রতি বিষোদগারে ফের গরম করলেন ঢাকাই মিডিয়া।
সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বলে লাভ নেই। তাদের কানে কিছুই পৌঁছাবে না। বাংলার বুড়োরাও আমার এ কথায় কান দিয়েন না। শুধু হে তরুণ, আপনি শুনুন। একটু ভাবুন। অন্তত এটুকু যে - এই দেশটা কার? কারা চালাচ্ছে? আর আপনি এ দেশের কে? উত্তর পেয়ে গেলে ভালো - না পেলেও জানবেন, একদিন আপনিও ভাববেন - এ বাংলা জাগবেই জাগবে।
জাগো বঙ্গ।
প্রধান
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন
হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না।
তাই ষাটভাগ জেলায় আমরা কোর্ট বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারছি না। প্রশাসনকে বলব
আপনারা আমাদেরকে সহায়তা করুন।
তিনি বলেন, প্রশাসনের কারণে আমরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার বিচারকদের বসতে জায়গা দিতে পারছি না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি
এসব কথা বলেন। - See more at:
http://tazakhobor.org/bangla/law-court/45516-2015-04-30-20-28-17#sthash.d3aFpVGR.dpuf
প্রধান
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন
হলেও আমি বলব বাস্তবে আমরা স্বাধীন নই। প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে না।
তাই ষাটভাগ জেলায় আমরা কোর্ট বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারছি না। প্রশাসনকে বলব
আপনারা আমাদেরকে সহায়তা করুন।
তিনি বলেন, প্রশাসনের কারণে আমরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার বিচারকদের বসতে জায়গা দিতে পারছি না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি
এসব কথা বলেন। - See more at:
http://tazakhobor.org/bangla/law-court/45516-2015-04-30-20-28-17#sthash.d3aFpVGR.dpuf