Powered By Blogger

৩০ জানুয়ারী ২০১৮

৩২ ধারা নিয়ে কেন উদ্বিগ্ন সাংবাদিকরা!

আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভয়াবহ অস্ত্রগুলো সেই ব্রিটিশরা দিয়ে গেছে। অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩ এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি গোপনে কোনো সংবাদ পেয়ে থাকলে সেই সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না। কোনো সংবাদপত্র যদি কোনো গোপন সংবাদ প্রকাশ করে তবে প্রতিবেদক, সম্পাদক, মুদ্রাকর এবং প্রকাশক অপরাধী হবেন। এসব কাজে সহায়তা করা অপরাধ বলে গণ্য হবে।’ একই আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘নিষিদ্ধ স্থানে যদি কেউ যায় বা যেতে উদ্যত হয় কিংবা ওই স্থানের কোনো নকশা বা স্কেচ তৈরি করে বা কোনো গোপন তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করে তবে সে অপরাধী হবে।’ ৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘নিষিদ্ধ স্থানের কোনো ফটো, স্কেচ বা নক্সা কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো বিদেশী এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর সংগ্রহ করা যাবে না।’ 
আবার আদালত অবমাননা আইন-১৯২৬ অনুযায়ী বিচারাধীন মামলার নিরপেক্ষ বিচারকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে কোনো প্রকাশনা প্রকাশিত হলে তা আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় মন্তব্য যদি দায়িত্বহীনভাবে নিরপেক্ষ সমালোচনার সীমা অতিক্রম করে এবং নির্দেশিত ও পরিকল্পিত পন্থায় বিচারকাজের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বিনষ্ট করে এবং বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমে বিচারকদের বাধাগ্রস্ত করে এবং মৌলিক অধিকার বলবৎ করার পথে বাধা প্রদান করে বা সংবিধান পরিপন্থী কর্মের মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করে, তবে তা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। যদি কোনো ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতিকে আক্রমণ করে অযৌক্তিকভাবে কোনো প্রবন্ধ লেখে ও প্রকাশ করে তাহলে সে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী হবে। যদি দেখা যায় যে প্রবন্ধটি আদালতের মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তাহলে তা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। তবে, জনস্বার্থে বিচার কার্যের নিরপেক্ষ ও যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা আদালত অবমাননা নয়। আদালত অবমাননার শাস্তি কারাদন্ড, যার মেয়াদ ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে অথবা জরিমানা, যার পরিমাণ দুই হাজার টাকা হতে পারে অথবা উভয়ই। ক্ষমা প্রার্থনা করলে অবমাননার আসামীকে মুক্তি দেওয়া যায়।
এদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৯ (ক) (খ) (গ) (ঘ) (ঙ) (চ) ধারায় সংবাদপত্র বিষয়ে সরকারকে কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সরকারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতামূলক বা বিদ্রোহের উসকানিমূলক বা নাগরিকদের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী বা ধর্মবিশ্বাসের প্রতি অবজ্ঞামূলক কোনো লেখা যদি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়, তবে সরকার তার প্রত্যেকটি কপি বাজেয়াপ্ত করতে পারে এবং যে স্থানে ঐগুলি থাকে সেই স্থানে ম্যাজিস্ট্রেটের পরওয়ানামূলে পুলিশ যেতে পারে; তবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এ বিষয়টি হাইকোর্ট বিভাগের গোচরে আনতে পারে।’ ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ম্যাজিস্ট্রেট সেইসব ব্যক্তিকে মুচলেকা দেবার আদেশ দিতে পারেন যারা রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক বা শ্রেণীর সংঘর্ষ সৃষ্টিকারক বা বিচারককে ভীতি প্রর্দশনমূলক বা অবমাননাকর কোনো কিছু প্রকাশ করতে উদ্যোগ নিয়েছেন।’ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিককে তার নির্দেশিত স্থানে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেন।
এসব আইন নিয়ে আমার সহযোদ্ধা সাংবাদিকরা কোনো কথা বলছেন না। তারা সরব হয়েছেন সদ্য (২৯ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ৩২ ধারা নিয়ে। অথচ আলোচিত এ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি ‘বেআইনিভাবে প্রবেশ করে’ কোনো ধরনের তথ্য উপাত্ত, যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে।এতে সাংবাদিকরা ভয় পাচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। তারা কিন্তু কোথাও অবৈধভাবে প্রবেশ করেন না। খোদ সরকারও তথ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের প্রবেশপত্র (অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড) দেয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তাগত গুরুত্ব বিবেচনায় অনেক দপ্তর ও স্থাপনায় যেতে অবশ্য ওই প্রবেশপত্রের পাশাপাশি আলাদা নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। মোদ্দা কথা হচ্ছে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বেআইনি নয়, রাষ্ট্র স্বীকৃত। অতএব তাদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহকে গুপ্তচরবৃত্তি হিসাবে গন্য করার সুযোগ নেই। তবে সাংবাদিকতার আড়ালে যে কেউ কেউ গুপ্তচরবৃত্তি করছে না, তা কি আমরা (সাংবাদিকরা) জোর গলায় বলতে পারি? সাংবাদিক সেজে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বহু কেচ্ছা অন্তত সব্বাই জানি। রাষ্ট্র-ব্যবস্থা এ জাতীয় অনাচার রুখতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রকৃত সাংবাদিকতাকে বাঁধা দেয়ার শক্তি কোনো বিধানের নেই। নানা আইনের বিবিধ ধারা সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশের চ্যালেঞ্জটা সামান্য বাড়াবে হয়ত।
জাতীয় সংসদে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বহুল আলোচিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে এ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধগুলো নতুন আইনের কয়েকটি ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে নীতিগতভাবে অনুমোদিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ধারা ১৯-এ মানহানি, মিথ্যা ও অশ্লীল, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ধারা ২০-এ শত্রুতা সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতিসংক্রান্ত বিধান রাখা হয়েছিলো। এসব বিষয় একই সঙ্গে দণ্ডবিধির ধারা ৪৯৯ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ধারা ৫৭-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় এ সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তিগুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে।
খসড়ার ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শনমূলক তথ্য প্রেরণ করে, অন্য ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারে এমন তথ্য প্রকাশ করে, মিথ্যা তথ্য জানার পরও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তথ্য প্রকাশ বা সম্প্রচার করে তাহলে সেটা অপরাধ হবে। প্রথম দফায় এ অপরাধের শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। এসব অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।’ ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করার জন্য ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কিছু প্রকাশ করে তাহলে সেটা অপরাধ হবে। প্রথম দফায় এ ধরনের অপরাধ করলে সাত বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।’
আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইটে পেনাল কোডের সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত অপরাধ করে তাহলে তার তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। এ অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।’ আর ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা বিভিন্ন শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তাহলে তা অপরাধ হবে। এ অপরাধের জন্য সাত বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। দ্বিতীয়বার বা বারবার এ অপরাধ করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। এ ধারাটিকে অজামিনযোগ্য করা হয়েছে।’
এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৬ সালের ২২ জুলাই এ আইনের প্রাথমিক খসড়াটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করে। সে খসড়ায় জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণার মদদ দেয়ার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিলো। কিন্তু যাবজ্জীবনের মতো কঠোর শাস্তির বিধান রাখায় সংশ্লিষ্ট সবাই একমত হতে পারেনি। সেই কঠোর অবস্থান থেকে এবার নমনীয় হয়েছে সরকার। ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি ও কারাবিধি অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ হল ৩০ বছর কারাদণ্ড। এ অবস্থায় খসড়া আইনে অপরাধের শাস্তি কমিয়ে অনধিক ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

১৯ জানুয়ারী ২০১৮

নৌ মন্ত্রী খবর পেয়েছিলেন ১৩ ঘন্টা পর!


এটি মূলত বাংলাদেশের খবর পত্রিকার জন্য প্রস্তুতকৃত, গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।
তবুও ব্লগের পাঠকদের জন্য লেখাটির অসম্পাদিত সংস্করণ টুকে রাখলাম।
শ্যালা নদীতে তেলের ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের ৩শ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক লিটার ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পরার ৩ বছর পর জলে নিসৃত তেল অপসারন উপযোগী জাহাজ (স্পিলড অয়েল রিমুভ ভেসেল) কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। একটি সংসদীয় কমিটিকে এ খবর জানিয়ে এবার খোদ নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান দাবি করেছেন, এমন জাহাজের অভাবেই তখন তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়নি। এর আগে অপর এক সংসদীয় কমিটিও দাবি করেছিলো- এ ধরনের দুর্ঘটনার পর তেল অপসারণের জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বা মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত ছিলো না।

সম্প্রতি সংসদ ভবনে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুন্দরবনে ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনাটি ফের আলোচনায় আসে। গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পর পর দুটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে কমিটির নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলাদেশের খবর-কে জানিয়েছে। অপর একটি সূত্র বলছে, ট্যাঙ্কার ডুবির দূর্ঘটনার দিন ১৩ ঘন্টা পর খবরটি জেনেছিলেন মন্ত্রী শাজাহান। এই ঘটনায় আলোচনায় থাকা মংলা-ঘাষিয়াখালি চ্যানেলের খনন কাজও সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে সম্প্রতি কমিটি জানতে পেরেছে। 
সংসদীয় নথি মতে গত ২৩ নভেম্বরের নৌ পরিবন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির ৪৮তম বৈঠকে সদস্য এম আবদুল লতিফ বলেন, দেশে বিদ্যমান ক্লিনার ভেসেল শ্যালা নদীতে ভাসমান তৈল অপসরণ করতে সক্ষম হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনে তৈলবাহী জাহাজের নিঃসরিত তেল নদীতে ভাসমান অবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিদ্যমান ক্লিনার দিয়ে তা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। নদীর ভাসমান তেল অপসারণ সাধারণ ক্লিনার ভেসের দিয়ে সম্ভব নয়। এর জন্য ভাসমান তৈল অপসারণ উপযোগী ভেসেল প্রয়োজন। তাই স্পিলড অয়েল অপসারণযোগ্য নৌ-যান সংগ্রহের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিস্কারক নৌ-যানটি যাতে পরিবেশবান্ধব হয় বৈঠকে সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে খেয়াল রাখতে বলেছেন কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা। কমিটির ২১ ডিসেম্বরের ৪৯তম বৈঠকে বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। এই দিন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর ফারুক হাসান কমিটিকে জানান, তাদের বন্দরের জন্য নিসৃত তেল অপসারণকারি জলযান সংগ্রহের প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এ জলযানটি আসলে কোনো তেলবাহী ট্যাঙ্কার দূর্ঘটনায় পড়ে নদীতে তেল নিঃসরণ করলে তা অপসারণ করা সম্ভব হবে। বন্দরে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লানট স্থাপনের কথাও জানান চেয়ারম্যান। 
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের খবর-কে বলেন, এর সাথে সমস্যা সমাধানের কোনো সম্পর্ক নাই। কেনাকাটার ব্যাপারে এমনিতেই সরকারের মধ্যে নানা রকম গোষ্ঠী খুব আগ্রহী। এখন তারা তৎপর হয়েছে জাহাজ কেনা বাণিজ্যটা করার জন্য। এখানে কমিশন একটু ভালো পাওয়া যাবে বা অন্য কিছু। তাই জাহাজটা কিনতে হবে। এটা হলো কেনা-কাটার বাণিজ্য, আর কিছু না। ওইখানে কেনার জন্য কিছু লোক হয়ত বসে আছে, আর ওখানে বিক্রি করার জন্য কেউ বসে আছে। ওই কেনাবেচার সমঝোতা করতে এখন একটা যুক্তি দাঁড় করিয়েছে আরকি। বাংলাদেশের খবর-এর প্রশ্নের জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন, ওখানে যে তেল পড়েছিলো তা অপসারনে সরকারের কোনো উদ্যোগ ছিলো না। কমপক্ষে ১০ বছর আগে এডিবি (এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক) বহু কোটি টাকার একটি প্রজেক্টে অনেকগুলো সুপারিশ ছিলো। সুন্দরবনে এ ধরণের দূর্ঘটনা হলে কি কি করতে হবে তা-ও সেখানে উল্লেখ ছিলো। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই করা হয়নি। ওই প্রজেক্টের নামে তখন অনেক কনসালটেন্ট, আমলা সরকারি পয়সায় বিদেশ সফর করছেন, আরো নানান কিছু করছেন। তবে কোনো কাজ হয়নি। আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, সুন্দরবনে সাধারণ মানুষই ক্ষতি কমিয়েছে। সরকার কিছুই করেনি। অনেক ধরণের উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ ছিলো। সরকারের লোকজন কিন্তু সেখানে যায়ও নাই ঠিক মতো। হয়ত তাদের মাথার মধ্যে আছে সুন্দরবন তো এমনিতেই থাকবে না, সুতরাং এটা নিয়ে এত মাথা ব্যাথ্যার কি আছে। 
এর তিন বছর আগেই সাবেক পরিবেশ ও বন মন্ত্রী এবং এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ভাসমান তেল অপসারণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে একটি বিশেষ জাহাজ ছিলো। কিন্তু সুন্দরবনের দুর্ঘটনায় এ জাহাজটিকে ঘটনাস্থলে আনা হয়নি। পরে কমিটি জানতে পেরেছে জাহাজটিকে ঘটনাস্থলে আনতে হলে সমুদ্রপথে আনতে হবে। কিন্তু এ জাহাজটিরও সমুদ্রপথে চলাচলের ছাড়পত্র নেই।
বিগত ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের ট্যাঙ্কারটি দেখে এসে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, ডুবে যাওয়া জাহাজের তেলে সুন্দরবনের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এরই ধারাবাহিকতায় আলোচ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং মংলা-রামপাল সংসদীয় আসনের সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেকও দাবি করেন, এ ঘটনায় পরিবেশের যতটা ক্ষতি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে ততটা হবে না। তবে বাংলাদেশের খবর-এর হাতে থাকা বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির একাধিক বৈঠকের আলোচনা ও সুপারিশ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ট্যাঙ্কার ডুবির এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রীসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের উদ্বেগ কখনোই কম ছিলো না। 

খুলনার সংবাদিকদের সাথে ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বরের সেই আলোচিত প্রেস ব্রিফিংয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আমরা বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে এতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। তিনি আরো বলেন, তেল বনের ভেতর বিস্তৃত হয়নি। খালের মুখে জাল দিয়ে বাধা দেয়ায় তেল বনে ঢুকতে পারেনি। ভাসমান তেল চলে যাচ্ছে, তাছাড়া স্থানীয়রা তেল উঠিয়ে নেয়ায় আস্তে আস্তে তেলের প্রভাব কমছে। পাঁচ দিনের মাথায় ১৮ ডিসেম্বর এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির জন্য নৌ মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। তারা বলে, মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এ কমিটি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করে। কমিটির সভাপতি বলেন, ট্যাংকারটি ডুবের যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি এর চারপাশে বুম বা ভাসমান বেরিকেড তৈরি করা যেত তাহলে তেল এত বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ত না। তিনি আরো জানান, একই দিন গণমাধ্যমকে তৎকালীন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী (বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রী) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা উপেক্ষা করে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচল করছে। সুন্দরবনে তেলের দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বলেও তিনি জানান। এরপরই ২৪ ডিসেম্বর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৯ম বৈঠক শেষে মংলা-রামপাল সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, তেল ট্যাঙ্কারডুবির ঘটনায় পরিবেশের ক্ষতি হবে কিছুটা। তবে মিডিয়াতে যেভাবে বলা হচ্ছে অতটা ক্ষতি হবে না। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ নিয়ে তিনি আরো বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে তেল ট্যাঙ্কারডুবি ও তেল ছড়িয়ে পড়ার পর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় যথাযথ কার্যক্রম নেয়নি। তাদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি যদি বলি, সুন্দরবনের পরিবেশ দূষণের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ই বেশি দায়ী। ট্যাঙ্কার ডুবির পর নৌ মন্ত্রণালয় না হয় যথাযথ ব্যবস্থা নেইনি। কিন্তু তারা কি করেছেন?

সংসদে উত্থাপিত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রথম প্রতিবেদনে উল্লেখিত ওই ৯ম বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের দূর্ঘটনা না ঘটে বা ঘটলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে সে ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে নৌ পরিবহন মন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করেছিলো কমিটি। এর আগে আলোচনাকালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. মো. শামছুদ্দোহা খন্দকার কমিটিকে জানান, সুন্দরবনে দূর্ঘটনা ঘটে ভোর ৪টায় আর তিনি খবর পান দুপুর ২টায়। এরপর মন্ত্রী শাজাহান খান জানান, তিনি খবরটি জেনেছিলেন বিকেল ৫টায়। বিষয়টি এত দেরিতে জানার কারন তদন্তের প্রয়োজনীতার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, মংলা-ঘষিয়াখালি নৌপথে পলি জমার কারণে জাহাজগুলো ৯০ কিলোমিটার ঘুরে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে চলাচল করে। দুই দিক থেকেই পানি প্রবেশ করার কারণে মংলা-ঘষিয়াখালি নৌপথের মাঝামাঝি স্থানে স্রোত কমে যাওয়ায় পলি জমে। এই নৌপথ খননের পর রক্ষণাবেক্ষণ দরকার ছিলো। কিন্তু গত ৪৩ বছরেও তা করা হয়নি। এর ফলে ২০০৩ সালেই এটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পরে সাংবাদিকদের এমপি খালেকও বলেছিলেন, বৈঠকে সুন্দরবনের শেলা নদীর এই নৌ-রুটটি বন্ধ করে ঘাষিয়াখালী-মংলা নৌ-রুটটি চালুর বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ নৌ-রুটের খনন কাজ শুরু হয়েছে বলেও কমিটিকে জানানো হয়েছে। কমিটির নভেম্বরের বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএ-ও বর্তমান চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক জানান, মংলা-ঘাষিয়াখালি চ্যানেলের খনন কাজও সম্পন্ন হয়েছে। 

এর আগে ২০১১ সালে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে তেলবাহী ট্যাংকারসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার সুপারিশ করে নবম সংসদের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। তারাও তখন সুন্দরবনের বিকল্প হিসেবে মংলা-ঘসিয়াখালী-মোরেলগঞ্জ চ্যানেল পুনঃখনন করে এ পথে নৌ চলাচলের নির্দেশনা দেয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ সুপারিশের আলোকে তখন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় তখন জানিয়েছিলো, ২০১৪ সালের মধ্যে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করা হবে। মূলত এরই জেরে দশম সংসদের একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এত বড় দুর্ঘটনার পরও যদি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের টনক না নড়ে তাহলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। এই কমিটির বৈঠকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় দাবি করেছিলো, ডুবে যাওয়া ট্যাংকারের ৩ লাখ ৫৭ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েলের মধ্যে স্থানীয় পদ্ধতিতে মাত্র ৬০ হাজার লিটার সংগ্রহ করা হয়েছে। সুন্দরবনের ৩০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল পর্যন্ত তেল ছড়িয়ে পড়েছে। নদী থেকে এই তেল অপসারনে নৌ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা মুখ্য হওয়া প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তারা সে ভূমিকা রাখেনি। বৈঠকের পরে কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনার পর তেল অপসারণের জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বা মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পূর্বপ্রস্তুতি ছিলো না।
অবশেষে ঘটনার ৩ বছর পর সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন হচ্ছে। কমিটির গত ডিসেম্বরের বৈঠকে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন ১৩শ ৫০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানী সরবরাহে পশুর চ্যানেলের ১৩ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৩৮.৮১ লক্ষ ঘনমিটার মাটি ড্রেজিং করা হবে। এই কাজ শেষ হলে বাংলদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড নির্বিঘ্নে বছরে প্রায় ৪৫ লক্ষ মেট্টিক টন কয়লা আনতে পারবে। 
অন্যদিকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বছর জুড়ে এই কয়লাবাহী জাহাজ চলাচলের কারণে গোটা সুন্দরবনের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে দাবি করেছেন পরিবেশবাদীরা। এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামীতে যে পরিমাণ সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ধূলা ও পারদ নিঃসরণ করবে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে উল্লেখ করে তারা এটি স্থাপনের বিরোধীতাও করছেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে লং মার্চ, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিও। তবু রামপালে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ থামেনি। এখানে আরো উল্লেখ্য, চালুর প্রথম ৪০ বছরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ব্যবহৃত কয়লা থেকে ১০ হাজার কিলোগ্রাম পারদ নির্গত হবে যা এর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্রকে হুমকির মুখে ঠেলে দিবে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। 

বাংলাদেশের খবর প্রতিবেদককে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, সুন্দরবনে ডেজ্রিংয়ের একটা ইনভরমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (পরিবেশগত প্রভাব যাচাই) হওয়ার কথা। ড্রেজিংয়ের কারণে বনের আরো ক্ষতি হবে। কারণ ইতোমধ্যে ড্রেজিংয়ের কারণে দাকোপসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। তার দাবি, ড্রেজিং-ই সুন্দরবনের ক্ষতিটা ত্বরান্বিত করবে। তারপর অন্যান্য পরিবহন, আরো যা যা হচ্ছে - তাতো হবেই। আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, ড্রেজিং করতে গিয়ে অনেক বিপর্যয় হবে। শুধু সুন্দরবন নয়, সর্বত্রই ড্রেজিং একটা সমস্যা তৈরী করে। ড্রেজিং করে মাটি নদীর পারেই রেখে দেয়। কোনো কাজ হয় না। সব জায়গায় ভেজাল। সুন্দরবনে ড্রেজিং না করলে জাহাজ ঢুকতে পারবে না। আবার ড্রেজিং করতে গেলে যে ক্ষতিগুলো হবে, তা-ও সামাল দেয়া যাবে না।

০৩ জানুয়ারী ২০১৮

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৫০ বছর

সহযোদ্ধা বেষ্টিত বঙ্গবন্ধু
বহুল আলোচিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সুবর্ণ জয়ন্তী আজ। এটি মূলত পাকিস্তান আমলে দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। তৎকালীন পাকিস্তানি সেনা সরকার আওয়ামী লীগ নেতা ও পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি এই মামলা দায়ের করেছিলো। 
মামলার অভিযোগ ছিলো যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এটির পূর্ণ নাম ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবর রহমান গং মামলা। তবে তা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসাবেই বেশি পরিচিতি পায়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে কথিত ষড়যন্ত্রটি শুরু হয়েছিলো বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়। মামলাটি নিষ্পত্তির চার যুগ পর ২০১১ সালে প্রকাশিত ‘সত্য মামলা আগরতলা’ বইতে ২৬ নম্বর আসামী ক্যাপ্টেন এম শওকত আলী (পরবর্তীতে কর্ণেল, অব.) এটিকে ‘সত্য মামলা’ বলে দাবি করেন। 
১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণসর্মথন লাভ করে। সামরিক বাহিনীতে বিদ্যমান বৈষম্যের কারণে সশস্ত্রবাহিনীর কিছু সংখ্যক বাঙালি অফিসার ও সিপাহি অতি গোপনে সংগঠিত হতে থাকেন। পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে থেকে বাঙালিদের স্বার্থ রক্ষা কখনও সম্ভব নয় বুঝতে পেরে তারা সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এ লক্ষ্যে অতি গোপনে কাজ করে যেতে থাকেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতার কারণে এ ষড়যন্ত্র প্রকাশ পায়। শুরু হয় সরকারের গ্রেফতারি তৎপরতা। আইয়ুব সরকারের গোয়েন্দাবাহিনী সারা পাকিস্তানে প্রায় দেড় হাজার বাঙালিকে গ্রেফতার করে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি এক প্রেসনোটে ঘোষণা করে যে, সরকার ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এক চক্রান্ত উদ্ঘাটন করেছে। এ ঘোষণায় ২ জন সিএসপি অফিসারসহ ৮ জনের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ পায়। এতে অভিযোগ করা হয় যে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা ভারতীয় সহায়তায় এক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াসে লিপ্ত ছিলো। স্বরাষ্ট্র দফতর ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি অপর এক ঘোষণায় শেখ মুজিবুর রহমানকেও এ ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত করে। পরবর্তীতে ৯ মে আসামীদেরকে ‘দেশরক্ষা আইন’ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু ‘আর্মি, নেভি অ্যান্ড এয়ারফোর্স অ্যাক্টে’ তাদের পুণরায় গ্রেফতার করে সেন্ট্রাল জেল থেকে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রথমে কোর্ট মার্শাল করার সিদ্ধান্ত নিলেও সরকার সত্তর সালের সাধারণ নির্বাচনের কথা মনে রেখে পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও উচ্চপদস্থ বাঙালি অফিসারদের বেসামরিক আইনে অভিযুক্ত করে। মামলার বিচারের জন্য ফৌজদারি দন্ডবিধি সংশোধন করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন ৩৫ জনকে আসামি করে পাকিস্তান দন্ডবিধির ১২১-ক ধারা এবং ১৩১ ধারায় মামলার শুনানি শুরু হয়। মামলায় শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করা হয় এবং ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং’ নামে মামলাটি পরিচালিত হয়। 

ঢাকার কুর্মিটোলা সেনানিবাসে একটি সুরক্ষিত কক্ষে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মোট ১০০টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। সরকার পক্ষে মামলায় ১১ জন রাজসাক্ষীসহ মোট ২২৭ জন সাক্ষীর তালিকা আদালতে পেশ করা হয়। তন্মধ্যে চার জন রাজসাক্ষীকে সরকার পক্ষ থেকে বৈরী ঘোষণা করা হয়। এর আগে ব্রিটিশ আইনজীবী ও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য টমাস উইলিয়াম ১৯৬৮ সালের ৫ আগস্ট শেখ মুজিবের পক্ষে ট্রাইব্যুনাল গঠন সংক্রান্ত বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন পেশ করেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনায় তাঁর সহযোগী ছিলেন আবদুস সালাম খান, আতাউর রহমান খান প্রমুখ। সরকার পক্ষে প্রধান কৌশুলী ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী মঞ্জুর কাদের ও অ্যাডভোকেট জেনারেল টিএইচ খান। তিন সদস্য বিশিষ্ট ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি এসএ রহমান। তিনি ছিলেন অবাঙালি। অপর দুজন এম আর খান ও মুকসুমুল হাকিম ছিলেন বাঙালি। মূলত এই সময় সরকারি নির্দেশে মামলাটিকে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে আখ্যায়িত হয়। মামলার এ শিরোনামের পেছনে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল; মামলার এ নামকরণ করে শেখ মুজিবকে দেশের জনগণের কাছে ভারতীয় চর ও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলে জনসমর্থন সরকারের পক্ষে যাবে এবং শেখ মুজিবকে কঠোর সাজা দেয়া সম্ভব হবে। কিন্তু সরকারি সাক্ষীরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সরকারের বিপক্ষেই বিষোদ্গার করতে থাকেন। সাক্ষীরা বলেন, সরকার তাদের নির্যাতন করে এ মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছে, অথচ এ মামলা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। ফলে দেশবাসীর কাছে এটি সরকারের একটি ষড়যন্ত্র হিসাবে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ততোদিনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সরকারি এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে এবং মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবসহ সকল বন্দির মুক্তির দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। প্রবল গণ-আন্দোলন তথা উত্তাল ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানের সরকার পিছু হটতে শুরু করে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে একান্ত বাধ্য হয়। সরকার প্রধান হিসেবে আইয়ুব খান সমগ্র পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করতে বাধ্য হন। এই গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের পতন ঘটে। 

ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে..
এসব কারণে ঐতিহাসিকরা এই মামলা এবং মামলা থেকে সৃষ্ট গণ-আন্দোলনকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পেছনে প্রেরণাদানকারী অন্যতম প্রধান ঘটনা বলে গণ্য করে থাকেন। এমনি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঢাকা সেনানিবাসে মামলার ১৭ নম্বর আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ খবর প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুদ্ধ জনতা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনসহ বেশকিছু সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় অতিথি ভবনে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এস এ রহমান ও সরকার পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মঞ্জুর কাদের অবস্থান করতেন। তারা উভয়েই পালিয়ে যান এবং সেখানে মামলার কিছু নথিপত্র পুড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে এবং শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবর রহমানসহ মামলায় অভিযুক্তদের এক গণসম্বর্ধনা দেয়া হয় এবং শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। 

ট্রাইব্যুনালে বঙ্গবন্ধু
মামলা প্রত্যাহারের পরও সরকারের রোষানলে ছিলেন অভিযুক্তরা পরেও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ভোরে মামলার দুই নম্বর আসামী নৌ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেমকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী । সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী সংসদেও ঘোষণা করেছিলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্রের ঘটনা পুরোপুরি সত্য ছিলো। তার ‘সত্য মামলা আগরতলা’ বইয়ের ভূমিকায় তিনি বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমরা যাঁরা মামলাটিতে অভিযুক্ত ছিলাম, ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি তাদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক। কারণ আমরা ষড়যন্ত্রকারী ছিলাম না। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর সম্মতি নিয়ে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠন করেছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, একটি নির্দিষ্ট রাতে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা বাঙালিরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি ক্যান্টনমেন্টে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অস্ত্র কেড়ে নেব, তাদের বন্দী করব এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করব।” শওকত তার বইতে আরো জানান, ১৯৬১ সাল থেকেই কতিপয় দেশ প্রেমিক বাঙালি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অফিসার বাংলাদেশকে সশস্ত্র পন্থায় স্বাধীন করার জন্য রীতিমত গোপন সংস্থা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছিলো।

ক্রমানুযায়ী সব আসামীর : শেখ মুজিবুর রহমান, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান, প্রাক্তন এলএস সুলতান উদ্দিন আহমেদ, এলসিডি নূর মোহাম্মদ, আহমেদ ফজলুর রহমান সিএসপি, ফ্লাইট সার্জেন্ট মাহফিজউল্লাহ, কর্পোলাল মোহাম্মদ আবদুস সামাদ, প্রাক্তন হাবিলদার দলিল উদ্দিন, রুহুল কুদ্দুস সিএসপি, ফ্লাইট সার্জেন্ট মোহাম্মদ. ফজলুল হক, ভূপতিভুষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী, বিধানকৃষ্ণ সেন, সুবেদার আবদুর রাজ্জাক, প্রাক্তন হাবিলদার ক্লার্ক মুজিবুর রহমান, ফ্লাইট সার্জেন্ট মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, সার্জেন্ট জহুরুল হক, লেফটেন্যান্ট এ জি মোহাম্মদ খুরশিদ, খান এম শামসুর রহমান সিএসপি, রিসালদার এ কে এম শামসুল হক, হাবিলদার আজিজুল হক, এসসি মাহফুজুল বারী, সার্জেন্ট শামসুল হক, মেজর শামসুল আলম, ক্যাপ্টেন মো. আবদুল মোতালেব, ক্যাপ্টেন এম শওকত আলী মিয়া, ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা এএমসি, ক্যাপ্টেন এএনএম নুরুজ্জামান, সার্জেন্ট আব্দুল জলিল, মোহাম্মদ মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী, ফাস্ট লে এম এস এস রহমান, সুবেদার এ কে এম তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী রেজা, ক্যাপ্টেন খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং ফাস্ট লেফটেন্যান্ট আব্দুর রউফ।

সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
প্রত্যাহার করে এবং শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়

০২ জানুয়ারী ২০১৮

স্মরণে সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার
সিরাজ সিকদার নিহত হয়েছেন। আজ থেকে ঠিক ৪৩ বছর আগের এই দিনে, অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি সরকারি এক প্রেসনোটে এভাবেই এ বামপন্থী বিপ্লবী নেতার মৃত্যুর খবর দিয়েছিলো রাষ্ট্র। এ ঘটনার ১৭ বছর পর ১৯৯২ সালের ৪ জুন এই বিষয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়, যা ২৫ বছর ধরে ঝুলে আছে। তবে এত দিনেও মানুষের মন থেকে বিস্মৃত হননি সিরাজ। আজও বিভিন্ন আলোচনায় সগৌবরবে তার নাম উচ্চারিত হয়। বিশেষত রাষ্ট্রের দ্বারা পরিচালিত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে অবধারিতভাবেই তার কথা চলে আসে। 

সিরাজ সিকদার গ্রেফতার হন ১৯৭৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তিনি ধরা পড়েছিলেন পুলিশের হাতে। পরে রক্ষী বাহিনীর হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সিরাজ সিকদার পরিষদের সভাপতি শেখ মহিউদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে ৯২ সালে যে মামলা দায়ের করেন সেখানে মোট ৭ জনকে আসামী করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন বর্তমান সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম। অন্যান্য আসামিরা হলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, সাবেক পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, সাবেক পুলিশ প্রধান আইজিপি ই এ চৌধুরী এবং সাবেক রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক কর্নেল (অব.) নূরুজ্জামান। 

বিএনপির শাসনামলে দায়ের করা ওই মামলার আর্জিতে বলা হয়, ‘আসামিরা মরহুম শেখ মুজিবের (জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সহচর ও অধীনস্থ কর্মী থেকে শেখ মুজিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও গোপন শলা-পরামর্শে অংশগ্রহণ করতেন এবং আসামিরা আসামি তৎকালীন সময়ে সরকারের উচ্চপদে থেকে অন্য ঘনিষ্ঠ সহচরদের সঙ্গে শেখ মুজিবের সিরাজ সিকদার হত্যার নীলনকশায় অংশগ্রহণ করেন। তারা এ লক্ষ্যে সর্বহারা পার্টির বিভিন্ন কর্মীকে হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি করতে থাকেন। সিরাজ সিকদারকে গ্রেফতার ও হত্যার ঘটনা বর্ণনায় আর্জিতে বলা হয়, মরহুম শেখ মুজিব ও উল্লেখিত আসামিরা তাঁদের অন্য সহযোগীদের সাহচর্যে সর্বহারা পার্টির মধ্যে সরকারের চর নিয়োগ করেন। এদের মধ্যে ই এ চৌধুরীর একজন নিকটাত্মীয়কেও চর হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এভাবে ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকা থেকে অন্য একজনসহ সিরাজ সিকদারকে গ্রেফতার করে ওই দিনই বিমানে করে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকার পুরনো বিমানবন্দরে নামিয়ে বিশেষ গাড়িতে করে বন্দিদের পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মালিবাগের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিরাজ সিকদারকে আলাদা করে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর বিশেষ স্কোয়াডের অনুগত সদস্যরা ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গণভবনে মরহুম শেখ মুজিবের কাছে সিরাজ সিকদারকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যায়। সেখানে শেখ মুজিবের সঙ্গে তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলীসহ আসামিরা, শেখ মুজিবের পুত্র মরহুম শেখ কামাল এবং ভাগ্নে মরহুম শেখ মনি উপস্থিত ছিলেন। প্রথম দর্শনেই শেখ মুজিব সিরাজ সিকদারকে গালিগালাজ শুরু করেন। সিরাজ এর প্রতিবাদ করলে শেখ মুজিবসহ উপস্থিত সবাই তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ সময় মামলার এক নম্বর আসামি এসপি মাহবুব তার রিভলবারের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সিরাজ সিকদার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শেখ কামাল রাগের মাথায় গুলি করলে সিরাজ সিকদারের হাতে লাগে। সব আসামি শেখ মুজিবের উপস্থিতিতেই ওই সময় সিরাজের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিল, ঘুষি, লাথি মারতে মারতে তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলেন। এরপর শেখ মুজিব, মনসুর আলীসহ দুই জন অভিযুক্ত সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং এসপি মাহবুবকে নির্দেশ দেন। তিনি ও অন্য আসামীরা বন্দি সিরাজ সিকদারকে শেরে বাংলানগর রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যান। এরপর তার ওপর আরো নির্যাতন চালানো হয়। অবশেষে ২ জানুয়ারি আসামিদের উপস্থিতিতে রাত ১১টার দিকে রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তরেই সিরাজ সিকদারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে এসপি মাহবুবের সাথে থাকা বিশেষ স্কোয়াডের সদস্যরা পূর্বপরিকল্পনা মতো বন্দি অবস্থায় নিহত সিরাজ সিকদারের লাশ সাভারের তালবাগ এলাকা হয়ে সাভার থানায় নিয়ে যায়। সাভার থানা পুলিশ পরের দিন ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩ সালের ১১ জুলাই ‘রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা’ নামের একটি বই প্রকাশিত হয়। এটি লিখেছেন আনোয়ার উল আলম। তিনি ছিলেন রক্ষী বাহিনীর একজন উপ পরিচালক। এই বইতে বলা হয়- ‘আসলে পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও কিছুটা নারীঘটিত কারণে সিরাজ সিকদার ধরা পড়েন।’ এর আগে একাত্তরে পর সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “পূর্ব বাংলার বীর জনগণ, আমাদের সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি, পূর্ব বাংলার অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার মহান সংগ্রাম চালিয়ে যান”। এ সময় তিনি একটি রাজনৈতিক দলিল হাজির করেন। যেখানে আওয়ামীলীগকে জাতীয় বিশ্বাস ঘাতক ও বেঈমান হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে ভারতের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৬ ডিসেম্বরকে কালো দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয়। সিরাজের আহবানে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের এই দিনে দেশব্যাপী হরতাল পালন করার কালে মাওলানা ভাসানীও বিবৃতি দিয়ে তা সমর্থন করেছিলেন। সবমিলিয়ে শেখ মুজিবকে তখন বেশ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিলো সিরাজ সিকদার ও তার সর্বহারা পার্টি। তাকে হত্যার তার বোন ভাস্কর শামীম সিকদার বেশ কয়েকবার শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। 

সিরাজ সিকদারের পিতার নাম আবদুর রাজ্জাক সিকদার। তিনি ১৯৫৯ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (বর্তমান এসএসসি) পাশ করেন। এরপর ১৯৬১ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে তিনি প্রকৌশলবিদ্যায়ের পড়াশোনা শেষ করেন । ছাত্র অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত তিনি ১৯৬৫ সালে মিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির কংগ্রেসে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ১৯৬৭ সালে ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ওই বছরই তিনি সরকারের নির্মাণ (সিঅ্যান্ডবি) বিভাগের কনিষ্ঠ প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। মাত্র তিন মাসের মাথায় সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে টেকনাফের ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি বেসরকারী কোম্পানীতে যোগদান করেন। 

সিরাজ সিকদার ১৯৬৮ সালের ৮ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে উপস্থিত করেন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের এক খসড়া থিসিস। এই থিসিসে তিনি পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ বলে অভিহিত করেন। একই বছরের শেষের দিকে তিনি ঢাকা শহরে মাও সেতুং গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। আইয়ুব সরকার এটি পরবর্তীকালে বন্ধ করে দেয়। মওদুদীর জামায়াতে ইসলামীও প্রথম থেকে তাদের বিরোধীতা করে আসছিলো। এরপর ১৯৭০ সালে সিরাজ সিকদারের বিপ্লবী পরিষদ বিভিন্ন জেলায় পাকিস্তানী প্রশাসন ও শ্রেণি শত্রুর বিরুদ্ধে গেরিলা অপারেশন চালায়। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি তারা ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও ময়মনসিংহে স্বাধীন পূর্ব বাংলার পতাকা ওড়ায়। পরে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ এই বিপ্লবী পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখে, যা লিফলেট আকারে সারাদেশে প্রচার করা হয়। এর চার নম্বর দফাটি ছিল, ‘পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে জাতীয় মুক্তি পরিষদ বা জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গঠন করেন।’ পরে ৩০ এপ্রিল তিনি বরিশালের সরূপকাঠীর পেয়ারাবাগানে গড়ে তোলেন জাতীয় মুক্তিবাহিনী। এরপর ৩ জুন পার্টির নতুন নাম দেয়া হয় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি। ওই কংগ্রেসে সিরাজ সিকদারকে সভাপতি করে একটি অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়।

০১ জানুয়ারী ২০১৮

যেভাবে এসেছে পহেলা জানুয়ারি

আজ পহেলা জানুয়ারি। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন। ঔপনিবেশিকতার বদৌলতের দুনিয়া জুড়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা এই পঞ্জিকাঅনুযায়ী চলে অধিকাংশ হিসাব। ইতিহাস মতে মধ্যযুগ অবধি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিন এই বছর শুরু হতো। পরে অবশ্য ১৬০০ সালের মধ্যে পশ্চিম ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ ১ জানুয়ারিকে অব্দের প্রথম এবং ৩১ ডিসেম্বরকে শেষ দিন ধার্য করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সর্বত্র আজ নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিকতার প্রভাবে যার ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। প্রায় দুইশ বছর ব্রিটিশ শাসনে থাকা বাঙালীরাও নানা আয়োজনে বেশ ধুমধামের সাথেই দিনটি পালন করছে। দেশের বহু প্রতিষ্ঠান, সংগঠনের বার্ষিক কর্মসূচি শুরু হবে আজ। এ উপলক্ষে এই ব্লগের নিয়মিত-অনিয়মিত সকল পাঠককে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা। 
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী গ্রেগোরিয়ান, পাশ্চাত্য, ইংরেজি বা খ্রিস্টাব্দ বর্ষপঞ্জী হিসেবেও সমধিক পরিচিত। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় সর্বত্র স্বীকৃত এটি। পোপ ত্রয়োদশ গ্রোগোরির এক আদেশানুসারে ১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এই বর্ষপঞ্জীর প্রচলন ঘটে। সেই বছর কিছু মুষ্টিমেয় রোমান ক্যাথলিক দেশ এই বর্ষপঞ্জী গ্রহণ করে। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশগুলোয়ও এটি গৃহীত হয়। এই অব্দের সাথে বিশেষভাবে জড়িয়ে আছেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রিস্ট বা ঈসা মসীহ। মুসলমানরা তাকে ঈসা নবী বলে থাকেন। সাধারণভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে যে, খ্রিস্টের জন্মগ্রহণের বছর থেকে এই অব্দের গণনা শুরু হয়েছে। যদিও পহেলা জানুয়ারি বা প্রথম খ্রিস্টাব্দেই যিশুর জন্ম হয়েছিলো, এমন তথ্যেও ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই। মূলত খ্রিস্টাব্দ হলো যিশু খ্রিস্টের স্মরণে প্রবর্তিত একটি প্রতীকী অব্দ। যে কারণে অনেকই মনে করেন- আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই অব্দটিকে সিই (কমন এরা) বলা উচিত। 
এই অব্দের সূচনা হয় প্রাচীন মিশরে। মিশরীয় পঞ্জিকাকে মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপীয় অঞ্চলের মাতৃ-পঞ্জিকা বা অন্যান্য পঞ্জিকার আদি উৎস বলা যেতে। গোড়ার দিকে প্রাচীন রোমান পঞ্জিকা ছিলো গ্রিক ভাবনা-প্রসূত মিশরীয় পঞ্জিকার একটি সংস্করণ মাত্র। রোমানদের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ অব্দের দিকে রোমের স্থপতি রোমুলাস সৌরবৎসরের হিসাবে রোমান পঞ্জিকা প্রবর্তন করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ অব্দ পর্যন্ত এই পঞ্জিকাই নানাবিধ পরিবর্তন করে নতুন একটি পঞ্জিকা প্রবর্তন করেন রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার। এরপর থেকে পঞ্জিকাটি ‘জুলিয়ান পঞ্জিকা’ নামে খ্যাত। এর পাশাপাশি বাইবেলের সূত্রে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ভিতরে পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্যের বিতর্কের সূত্রে গড়ে উঠেছিল এএম (এননো মুনডি) অব্দ বা বিশ্ববর্ষ গণন পদ্ধতি। এই সূত্রে তৈরি হয়েছিলো ধর্মভিত্তিক ইহুদী পঞ্জিকা ও খ্রিষ্টান পঞ্জিকা। তারই সূত্র ধরে জুলিয়ান পঞ্জিকার সাথে খ্রিষ্টানদের ভাবনার সংমিশ্রণে তৈরি হয় বাইজেন্টেনিয়ান বর্ষপঞ্জি। পূর্বাঞ্চলীয় অর্থডক্স চার্চ ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে এবং ১৭২৮ সাল অবধি এটি অনুসরণ করে। রাশিয়াতেও এই পঞ্জিকা ১৭০০ অব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এর আগে এই বাইজেন্টেনিয়ান পঞ্জিকাকে ভিত্তি করেই ৪১২ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়েছিলো আলেকজান্দ্রিয়ান পঞ্জিকা। 

জানুস
জানুয়ারি মাস থেকে বছর শুরু কারণ নিয়ে রোমান ইতিহাসগ্রন্থে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা খ্রিস্টপূর্ব ৪৯ অব্দের। ওই সময়ই রোম সাম্রাজ্যের পূর্ণ দখল পেয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রর্তন করেছিলেন জুলিয়াস সিজার। তিনিসহ মূর্তি উপাসনায় বিশ্বাসী রোমানরা তখন বহু দেবদেবীর সঙ্গে পুজো করতেন দরজার দেবতা জানুসের। তাদের ধারণা ছিলো দুমুখ বিশিষ্ট জানুসের সামনের মুখটি ভবিষ্যতের দিক নির্দেশক, আর পিছনের মুখটি অতীতের দিকে লক্ষ্য রাখে। জানুয়ারি মাসের নামটি ওই দ্বারদেবতার নাম থেকেই এসেছে। নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির সময় সিজারের মনে হয় দ্বারদেব জানুসের নামাঙ্কিত মাস জানুয়ারিই যে কোনও বছরের প্রারম্ভ মাস হওয়ার যোগ্য। তাই জানুয়ারির প্রথম দিনকে নতুন বছরের শুরুর দিন ঘোষণা করেন রোমান স¤্রাট। তৎকালীন রোমানরা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে অনবগত থাকলেও মূলত ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে নির্ধারণ করেন। পরবর্তীকালে অবশ্য গবেষণায় জানা যায়, বছরের এই সময়টায় পৃথিবী সূর্যের সব থেকে কাছে থাকে। এর আগে উত্তর গোলার্ধে দিন ছোট থাকে। সূর্যের দক্ষিণায়নের ফলে ডিসেম্বরের ২২ তারিখ থেকে তা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং জানুয়ারির শুরু থেকে দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়।

[লেখাটি মূলত বাংলাদেশের খবর পত্রিকার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিলো।]
newsreel [সংবাদচিত্র]