Powered By Blogger
বর্ষপঞ্জী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বর্ষপঞ্জী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

০১ জানুয়ারী ২০১৮

যেভাবে এসেছে পহেলা জানুয়ারি

আজ পহেলা জানুয়ারি। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন। ঔপনিবেশিকতার বদৌলতের দুনিয়া জুড়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা এই পঞ্জিকাঅনুযায়ী চলে অধিকাংশ হিসাব। ইতিহাস মতে মধ্যযুগ অবধি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিন এই বছর শুরু হতো। পরে অবশ্য ১৬০০ সালের মধ্যে পশ্চিম ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ ১ জানুয়ারিকে অব্দের প্রথম এবং ৩১ ডিসেম্বরকে শেষ দিন ধার্য করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সর্বত্র আজ নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিকতার প্রভাবে যার ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। প্রায় দুইশ বছর ব্রিটিশ শাসনে থাকা বাঙালীরাও নানা আয়োজনে বেশ ধুমধামের সাথেই দিনটি পালন করছে। দেশের বহু প্রতিষ্ঠান, সংগঠনের বার্ষিক কর্মসূচি শুরু হবে আজ। এ উপলক্ষে এই ব্লগের নিয়মিত-অনিয়মিত সকল পাঠককে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা। 
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী গ্রেগোরিয়ান, পাশ্চাত্য, ইংরেজি বা খ্রিস্টাব্দ বর্ষপঞ্জী হিসেবেও সমধিক পরিচিত। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় সর্বত্র স্বীকৃত এটি। পোপ ত্রয়োদশ গ্রোগোরির এক আদেশানুসারে ১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এই বর্ষপঞ্জীর প্রচলন ঘটে। সেই বছর কিছু মুষ্টিমেয় রোমান ক্যাথলিক দেশ এই বর্ষপঞ্জী গ্রহণ করে। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশগুলোয়ও এটি গৃহীত হয়। এই অব্দের সাথে বিশেষভাবে জড়িয়ে আছেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রিস্ট বা ঈসা মসীহ। মুসলমানরা তাকে ঈসা নবী বলে থাকেন। সাধারণভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে যে, খ্রিস্টের জন্মগ্রহণের বছর থেকে এই অব্দের গণনা শুরু হয়েছে। যদিও পহেলা জানুয়ারি বা প্রথম খ্রিস্টাব্দেই যিশুর জন্ম হয়েছিলো, এমন তথ্যেও ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই। মূলত খ্রিস্টাব্দ হলো যিশু খ্রিস্টের স্মরণে প্রবর্তিত একটি প্রতীকী অব্দ। যে কারণে অনেকই মনে করেন- আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই অব্দটিকে সিই (কমন এরা) বলা উচিত। 
এই অব্দের সূচনা হয় প্রাচীন মিশরে। মিশরীয় পঞ্জিকাকে মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপীয় অঞ্চলের মাতৃ-পঞ্জিকা বা অন্যান্য পঞ্জিকার আদি উৎস বলা যেতে। গোড়ার দিকে প্রাচীন রোমান পঞ্জিকা ছিলো গ্রিক ভাবনা-প্রসূত মিশরীয় পঞ্জিকার একটি সংস্করণ মাত্র। রোমানদের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ অব্দের দিকে রোমের স্থপতি রোমুলাস সৌরবৎসরের হিসাবে রোমান পঞ্জিকা প্রবর্তন করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ অব্দ পর্যন্ত এই পঞ্জিকাই নানাবিধ পরিবর্তন করে নতুন একটি পঞ্জিকা প্রবর্তন করেন রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার। এরপর থেকে পঞ্জিকাটি ‘জুলিয়ান পঞ্জিকা’ নামে খ্যাত। এর পাশাপাশি বাইবেলের সূত্রে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ভিতরে পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্যের বিতর্কের সূত্রে গড়ে উঠেছিল এএম (এননো মুনডি) অব্দ বা বিশ্ববর্ষ গণন পদ্ধতি। এই সূত্রে তৈরি হয়েছিলো ধর্মভিত্তিক ইহুদী পঞ্জিকা ও খ্রিষ্টান পঞ্জিকা। তারই সূত্র ধরে জুলিয়ান পঞ্জিকার সাথে খ্রিষ্টানদের ভাবনার সংমিশ্রণে তৈরি হয় বাইজেন্টেনিয়ান বর্ষপঞ্জি। পূর্বাঞ্চলীয় অর্থডক্স চার্চ ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে এবং ১৭২৮ সাল অবধি এটি অনুসরণ করে। রাশিয়াতেও এই পঞ্জিকা ১৭০০ অব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এর আগে এই বাইজেন্টেনিয়ান পঞ্জিকাকে ভিত্তি করেই ৪১২ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়েছিলো আলেকজান্দ্রিয়ান পঞ্জিকা। 

জানুস
জানুয়ারি মাস থেকে বছর শুরু কারণ নিয়ে রোমান ইতিহাসগ্রন্থে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা খ্রিস্টপূর্ব ৪৯ অব্দের। ওই সময়ই রোম সাম্রাজ্যের পূর্ণ দখল পেয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রর্তন করেছিলেন জুলিয়াস সিজার। তিনিসহ মূর্তি উপাসনায় বিশ্বাসী রোমানরা তখন বহু দেবদেবীর সঙ্গে পুজো করতেন দরজার দেবতা জানুসের। তাদের ধারণা ছিলো দুমুখ বিশিষ্ট জানুসের সামনের মুখটি ভবিষ্যতের দিক নির্দেশক, আর পিছনের মুখটি অতীতের দিকে লক্ষ্য রাখে। জানুয়ারি মাসের নামটি ওই দ্বারদেবতার নাম থেকেই এসেছে। নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির সময় সিজারের মনে হয় দ্বারদেব জানুসের নামাঙ্কিত মাস জানুয়ারিই যে কোনও বছরের প্রারম্ভ মাস হওয়ার যোগ্য। তাই জানুয়ারির প্রথম দিনকে নতুন বছরের শুরুর দিন ঘোষণা করেন রোমান স¤্রাট। তৎকালীন রোমানরা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে অনবগত থাকলেও মূলত ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে নির্ধারণ করেন। পরবর্তীকালে অবশ্য গবেষণায় জানা যায়, বছরের এই সময়টায় পৃথিবী সূর্যের সব থেকে কাছে থাকে। এর আগে উত্তর গোলার্ধে দিন ছোট থাকে। সূর্যের দক্ষিণায়নের ফলে ডিসেম্বরের ২২ তারিখ থেকে তা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং জানুয়ারির শুরু থেকে দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়।

[লেখাটি মূলত বাংলাদেশের খবর পত্রিকার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিলো।]
newsreel [সংবাদচিত্র]