Powered By Blogger
তেল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
তেল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

১৯ জানুয়ারী ২০১৮

নৌ মন্ত্রী খবর পেয়েছিলেন ১৩ ঘন্টা পর!


এটি মূলত বাংলাদেশের খবর পত্রিকার জন্য প্রস্তুতকৃত, গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।
তবুও ব্লগের পাঠকদের জন্য লেখাটির অসম্পাদিত সংস্করণ টুকে রাখলাম।
শ্যালা নদীতে তেলের ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের ৩শ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক লিটার ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পরার ৩ বছর পর জলে নিসৃত তেল অপসারন উপযোগী জাহাজ (স্পিলড অয়েল রিমুভ ভেসেল) কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। একটি সংসদীয় কমিটিকে এ খবর জানিয়ে এবার খোদ নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান দাবি করেছেন, এমন জাহাজের অভাবেই তখন তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়নি। এর আগে অপর এক সংসদীয় কমিটিও দাবি করেছিলো- এ ধরনের দুর্ঘটনার পর তেল অপসারণের জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বা মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত ছিলো না।

সম্প্রতি সংসদ ভবনে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুন্দরবনে ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনাটি ফের আলোচনায় আসে। গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পর পর দুটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে কমিটির নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলাদেশের খবর-কে জানিয়েছে। অপর একটি সূত্র বলছে, ট্যাঙ্কার ডুবির দূর্ঘটনার দিন ১৩ ঘন্টা পর খবরটি জেনেছিলেন মন্ত্রী শাজাহান। এই ঘটনায় আলোচনায় থাকা মংলা-ঘাষিয়াখালি চ্যানেলের খনন কাজও সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে সম্প্রতি কমিটি জানতে পেরেছে। 
সংসদীয় নথি মতে গত ২৩ নভেম্বরের নৌ পরিবন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির ৪৮তম বৈঠকে সদস্য এম আবদুল লতিফ বলেন, দেশে বিদ্যমান ক্লিনার ভেসেল শ্যালা নদীতে ভাসমান তৈল অপসরণ করতে সক্ষম হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনে তৈলবাহী জাহাজের নিঃসরিত তেল নদীতে ভাসমান অবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিদ্যমান ক্লিনার দিয়ে তা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। নদীর ভাসমান তেল অপসারণ সাধারণ ক্লিনার ভেসের দিয়ে সম্ভব নয়। এর জন্য ভাসমান তৈল অপসারণ উপযোগী ভেসেল প্রয়োজন। তাই স্পিলড অয়েল অপসারণযোগ্য নৌ-যান সংগ্রহের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিস্কারক নৌ-যানটি যাতে পরিবেশবান্ধব হয় বৈঠকে সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে খেয়াল রাখতে বলেছেন কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা। কমিটির ২১ ডিসেম্বরের ৪৯তম বৈঠকে বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। এই দিন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর ফারুক হাসান কমিটিকে জানান, তাদের বন্দরের জন্য নিসৃত তেল অপসারণকারি জলযান সংগ্রহের প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এ জলযানটি আসলে কোনো তেলবাহী ট্যাঙ্কার দূর্ঘটনায় পড়ে নদীতে তেল নিঃসরণ করলে তা অপসারণ করা সম্ভব হবে। বন্দরে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লানট স্থাপনের কথাও জানান চেয়ারম্যান। 
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের খবর-কে বলেন, এর সাথে সমস্যা সমাধানের কোনো সম্পর্ক নাই। কেনাকাটার ব্যাপারে এমনিতেই সরকারের মধ্যে নানা রকম গোষ্ঠী খুব আগ্রহী। এখন তারা তৎপর হয়েছে জাহাজ কেনা বাণিজ্যটা করার জন্য। এখানে কমিশন একটু ভালো পাওয়া যাবে বা অন্য কিছু। তাই জাহাজটা কিনতে হবে। এটা হলো কেনা-কাটার বাণিজ্য, আর কিছু না। ওইখানে কেনার জন্য কিছু লোক হয়ত বসে আছে, আর ওখানে বিক্রি করার জন্য কেউ বসে আছে। ওই কেনাবেচার সমঝোতা করতে এখন একটা যুক্তি দাঁড় করিয়েছে আরকি। বাংলাদেশের খবর-এর প্রশ্নের জবাবে আনু মুহাম্মদ বলেন, ওখানে যে তেল পড়েছিলো তা অপসারনে সরকারের কোনো উদ্যোগ ছিলো না। কমপক্ষে ১০ বছর আগে এডিবি (এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক) বহু কোটি টাকার একটি প্রজেক্টে অনেকগুলো সুপারিশ ছিলো। সুন্দরবনে এ ধরণের দূর্ঘটনা হলে কি কি করতে হবে তা-ও সেখানে উল্লেখ ছিলো। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই করা হয়নি। ওই প্রজেক্টের নামে তখন অনেক কনসালটেন্ট, আমলা সরকারি পয়সায় বিদেশ সফর করছেন, আরো নানান কিছু করছেন। তবে কোনো কাজ হয়নি। আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, সুন্দরবনে সাধারণ মানুষই ক্ষতি কমিয়েছে। সরকার কিছুই করেনি। অনেক ধরণের উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ ছিলো। সরকারের লোকজন কিন্তু সেখানে যায়ও নাই ঠিক মতো। হয়ত তাদের মাথার মধ্যে আছে সুন্দরবন তো এমনিতেই থাকবে না, সুতরাং এটা নিয়ে এত মাথা ব্যাথ্যার কি আছে। 
এর তিন বছর আগেই সাবেক পরিবেশ ও বন মন্ত্রী এবং এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ভাসমান তেল অপসারণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে একটি বিশেষ জাহাজ ছিলো। কিন্তু সুন্দরবনের দুর্ঘটনায় এ জাহাজটিকে ঘটনাস্থলে আনা হয়নি। পরে কমিটি জানতে পেরেছে জাহাজটিকে ঘটনাস্থলে আনতে হলে সমুদ্রপথে আনতে হবে। কিন্তু এ জাহাজটিরও সমুদ্রপথে চলাচলের ছাড়পত্র নেই।
বিগত ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের ট্যাঙ্কারটি দেখে এসে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, ডুবে যাওয়া জাহাজের তেলে সুন্দরবনের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এরই ধারাবাহিকতায় আলোচ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং মংলা-রামপাল সংসদীয় আসনের সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেকও দাবি করেন, এ ঘটনায় পরিবেশের যতটা ক্ষতি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে ততটা হবে না। তবে বাংলাদেশের খবর-এর হাতে থাকা বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির একাধিক বৈঠকের আলোচনা ও সুপারিশ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ট্যাঙ্কার ডুবির এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রীসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের উদ্বেগ কখনোই কম ছিলো না। 

খুলনার সংবাদিকদের সাথে ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বরের সেই আলোচিত প্রেস ব্রিফিংয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আমরা বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে এতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। তিনি আরো বলেন, তেল বনের ভেতর বিস্তৃত হয়নি। খালের মুখে জাল দিয়ে বাধা দেয়ায় তেল বনে ঢুকতে পারেনি। ভাসমান তেল চলে যাচ্ছে, তাছাড়া স্থানীয়রা তেল উঠিয়ে নেয়ায় আস্তে আস্তে তেলের প্রভাব কমছে। পাঁচ দিনের মাথায় ১৮ ডিসেম্বর এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির জন্য নৌ মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। তারা বলে, মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এ কমিটি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করে। কমিটির সভাপতি বলেন, ট্যাংকারটি ডুবের যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি এর চারপাশে বুম বা ভাসমান বেরিকেড তৈরি করা যেত তাহলে তেল এত বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ত না। তিনি আরো জানান, একই দিন গণমাধ্যমকে তৎকালীন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী (বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রী) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা উপেক্ষা করে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচল করছে। সুন্দরবনে তেলের দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বলেও তিনি জানান। এরপরই ২৪ ডিসেম্বর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৯ম বৈঠক শেষে মংলা-রামপাল সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, তেল ট্যাঙ্কারডুবির ঘটনায় পরিবেশের ক্ষতি হবে কিছুটা। তবে মিডিয়াতে যেভাবে বলা হচ্ছে অতটা ক্ষতি হবে না। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ নিয়ে তিনি আরো বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে তেল ট্যাঙ্কারডুবি ও তেল ছড়িয়ে পড়ার পর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় যথাযথ কার্যক্রম নেয়নি। তাদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমি যদি বলি, সুন্দরবনের পরিবেশ দূষণের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ই বেশি দায়ী। ট্যাঙ্কার ডুবির পর নৌ মন্ত্রণালয় না হয় যথাযথ ব্যবস্থা নেইনি। কিন্তু তারা কি করেছেন?

সংসদে উত্থাপিত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রথম প্রতিবেদনে উল্লেখিত ওই ৯ম বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের দূর্ঘটনা না ঘটে বা ঘটলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে সে ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে নৌ পরিবহন মন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করেছিলো কমিটি। এর আগে আলোচনাকালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. মো. শামছুদ্দোহা খন্দকার কমিটিকে জানান, সুন্দরবনে দূর্ঘটনা ঘটে ভোর ৪টায় আর তিনি খবর পান দুপুর ২টায়। এরপর মন্ত্রী শাজাহান খান জানান, তিনি খবরটি জেনেছিলেন বিকেল ৫টায়। বিষয়টি এত দেরিতে জানার কারন তদন্তের প্রয়োজনীতার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, মংলা-ঘষিয়াখালি নৌপথে পলি জমার কারণে জাহাজগুলো ৯০ কিলোমিটার ঘুরে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে চলাচল করে। দুই দিক থেকেই পানি প্রবেশ করার কারণে মংলা-ঘষিয়াখালি নৌপথের মাঝামাঝি স্থানে স্রোত কমে যাওয়ায় পলি জমে। এই নৌপথ খননের পর রক্ষণাবেক্ষণ দরকার ছিলো। কিন্তু গত ৪৩ বছরেও তা করা হয়নি। এর ফলে ২০০৩ সালেই এটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পরে সাংবাদিকদের এমপি খালেকও বলেছিলেন, বৈঠকে সুন্দরবনের শেলা নদীর এই নৌ-রুটটি বন্ধ করে ঘাষিয়াখালী-মংলা নৌ-রুটটি চালুর বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ নৌ-রুটের খনন কাজ শুরু হয়েছে বলেও কমিটিকে জানানো হয়েছে। কমিটির নভেম্বরের বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএ-ও বর্তমান চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক জানান, মংলা-ঘাষিয়াখালি চ্যানেলের খনন কাজও সম্পন্ন হয়েছে। 

এর আগে ২০১১ সালে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে তেলবাহী ট্যাংকারসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার সুপারিশ করে নবম সংসদের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। তারাও তখন সুন্দরবনের বিকল্প হিসেবে মংলা-ঘসিয়াখালী-মোরেলগঞ্জ চ্যানেল পুনঃখনন করে এ পথে নৌ চলাচলের নির্দেশনা দেয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ সুপারিশের আলোকে তখন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় তখন জানিয়েছিলো, ২০১৪ সালের মধ্যে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করা হবে। মূলত এরই জেরে দশম সংসদের একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এত বড় দুর্ঘটনার পরও যদি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের টনক না নড়ে তাহলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। এই কমিটির বৈঠকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় দাবি করেছিলো, ডুবে যাওয়া ট্যাংকারের ৩ লাখ ৫৭ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েলের মধ্যে স্থানীয় পদ্ধতিতে মাত্র ৬০ হাজার লিটার সংগ্রহ করা হয়েছে। সুন্দরবনের ৩০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল পর্যন্ত তেল ছড়িয়ে পড়েছে। নদী থেকে এই তেল অপসারনে নৌ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা মুখ্য হওয়া প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তারা সে ভূমিকা রাখেনি। বৈঠকের পরে কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনার পর তেল অপসারণের জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বা মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পূর্বপ্রস্তুতি ছিলো না।
অবশেষে ঘটনার ৩ বছর পর সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন হচ্ছে। কমিটির গত ডিসেম্বরের বৈঠকে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন ১৩শ ৫০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানী সরবরাহে পশুর চ্যানেলের ১৩ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৩৮.৮১ লক্ষ ঘনমিটার মাটি ড্রেজিং করা হবে। এই কাজ শেষ হলে বাংলদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড নির্বিঘ্নে বছরে প্রায় ৪৫ লক্ষ মেট্টিক টন কয়লা আনতে পারবে। 
অন্যদিকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বছর জুড়ে এই কয়লাবাহী জাহাজ চলাচলের কারণে গোটা সুন্দরবনের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে দাবি করেছেন পরিবেশবাদীরা। এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামীতে যে পরিমাণ সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ধূলা ও পারদ নিঃসরণ করবে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে উল্লেখ করে তারা এটি স্থাপনের বিরোধীতাও করছেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে লং মার্চ, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিও। তবু রামপালে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ থামেনি। এখানে আরো উল্লেখ্য, চালুর প্রথম ৪০ বছরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ব্যবহৃত কয়লা থেকে ১০ হাজার কিলোগ্রাম পারদ নির্গত হবে যা এর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্রকে হুমকির মুখে ঠেলে দিবে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। 

বাংলাদেশের খবর প্রতিবেদককে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, সুন্দরবনে ডেজ্রিংয়ের একটা ইনভরমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (পরিবেশগত প্রভাব যাচাই) হওয়ার কথা। ড্রেজিংয়ের কারণে বনের আরো ক্ষতি হবে। কারণ ইতোমধ্যে ড্রেজিংয়ের কারণে দাকোপসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। তার দাবি, ড্রেজিং-ই সুন্দরবনের ক্ষতিটা ত্বরান্বিত করবে। তারপর অন্যান্য পরিবহন, আরো যা যা হচ্ছে - তাতো হবেই। আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, ড্রেজিং করতে গিয়ে অনেক বিপর্যয় হবে। শুধু সুন্দরবন নয়, সর্বত্রই ড্রেজিং একটা সমস্যা তৈরী করে। ড্রেজিং করে মাটি নদীর পারেই রেখে দেয়। কোনো কাজ হয় না। সব জায়গায় ভেজাল। সুন্দরবনে ড্রেজিং না করলে জাহাজ ঢুকতে পারবে না। আবার ড্রেজিং করতে গেলে যে ক্ষতিগুলো হবে, তা-ও সামাল দেয়া যাবে না।
newsreel [সংবাদচিত্র]